নীড়ের খোজে পর্ব ১৫

নীড়ের খোজে পর্ব ১৫
জান্নাতুল বিথী

শৈবাল আমার হাতটা শক্ত করে ধরে কোলাহল থেকে কিছুটা দূরে চলে আসে!হাত ছেড়ে ধ*মক দিয়ে বললো,
‘কি সমস্যা তোমার?’
হাত ছাড়া পেয়ে বুকে দুই হাত গুজে গা ছাড়া ভাব নিয়ে বললাম,
‘কই কি সমস্যা হবে?’
আমাকে এতো গা ছাড়া ভাব নিয়ে কথা বলতে দেখে শৈবাল রেগে গেলো!রেগে দু বাহু শক্ত করে ধরে বললো,
‘শাড়ি পরতে কে বলছে তোমাকে?আর এসব কি হ্যা এতো সাজলে কেনো?’

কথাটা বলতে বলতে সে তার পকেট থেকে ট্যিসু নিয়ে আমার চোখের উপরের আইসেড মুছে ফেলে,এর পর আইলেনার মুছে কপাল থেকে টিপ টা খুলে ফেলে দেয়,টিস্যু দিয়ে ঘষে ঘষে আমার ঠোট থেকে লিপিস্টিক মুছতে মুছতে বললো,
‘আমি তোমাকে সাজার অনুমতি দিয়েছি?এতো সাজলে কেনো হ্যা?ছেলেদের দেখাতে ইচ্ছে করছে বুঝি নিজের চেহারা?আমি দেখি তাই কি যথেষ্ট নয়?’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

শৈবালের এসব কথায় রা*গে আমার শরীর জ্ব*লে উঠে,সে আমার সব সাজ মুছে ফেলেছে তাতে আমার কোনো দুঃখ নেই কিন্তু তার হঠাৎ এই কথা গুলো খুব বাজে ভাবে আঘাত করে আমার বুকে!তাই নিচের দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করি,চোখ বন্ধ করতেই বন্ধ চোখ দিয়ে এক ফোটা পানি গাল বেয়ে নিচে গড়িয়ে পড়ে।আমি কোনো কথা না বলে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকি,আমাকে চুপ থাকতে দেখে শৈবাল আরো রেগে যায়,
‘এ্যাই মেয়ে কথা বলছো না কেনো তুমি?এখনি রুমে গিয়ে শাড়ি চে*ঞ্জ করে থ্রি-পিচ পরবে,কথাটা যেনো দ্বিতীয় বার বলা না লাগে।’

তার শেষ কথাটা শুনে রাগে অভিমানে আবারো চোখ ছল*ছল করে উঠে,আমি তার মুখের দিকে এক পলক তাকিয়ে দৌড়ে বাড়ির মধ্যে ডুকে যাই।তার হঠাৎ এমন আচরনের কোনো কারন খুজে পাচ্ছি না আমি।ওই আন্টি টাকে কথাটা বলে সে আমার হাত ধরে এখানে নিয়ে এসে আমার সাথে রাফ ব্যবহার করতে থাকে।তার কাছ থেকে এমন আচরন প্রত্যাশার বাহিরে ছিলো আমার!রুমে এসে শ*ব্দ করে দরজা বন্ধ করে দেই আমি,অতঃপর মেঝেতে দুই হাটু একসাথে করে বসে তার উপর মাথা রেখে ডু*করে কেদে উঠি আমি!

আজ প্রথম আম্মু আমাকে এতোটা যত্ন,ভালোবাসার সহিত শাড়ি পরিয়ে দিয়েছে।কতো খুশি ছিলাম আমি তা নিয়ে,মিহা আপু নিজে জো*র করে আমাকে সাজিয়ে দিয়েছে।আমি কি তাকে বলছি নাকি আমাকে এভাবে সাজিয়ে দিতে?এখানে আমার দো*ষ কোথায়?সে কেনো আমার সাথে এভাবে কথা বললো?আমি যে দুনিয়াতে সবার বা*জে কথা হ*জম করতে পারলেও তার একটা ধ*মক ও সহ্য করতে পারিনা।সে কি বোঝে না এটা?কথা গুলো ভাবতেই আরো জোরে কান্না আসে।

প্রায় ত্রিশ মিনিট পর নিজেকে সামলে লাগেজ থেকে একটা থ্রি-পিচ নিয়ে চেঞ্জ করে নেই।অতঃপর বাহিরে এসে রান্না ঘর থেকে একটা দেয়াশলাই নিয়ে পুনরায় রুমে এসে হলুদ শাড়ি টা নিয়ে বাড়ির পেছন দিকে চলে যাই।বাড়ির এদিকে একটা মাঝারি আকারের পুকুর আছে।সিড়িও বাধাই করা আছে।এদিক অনেকটা জন*মানবশূন্য,তবে এদিকেও লাইটিং করা আছে।আমি এগিয়ে গিয়ে একটা সিড়িতে বসে শাড়িটা নিচে ফেলে তাতে দেয়াশলাই দিয়ে আগুন জ্বা*লিয়ে দেই।আগুনের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করি,

‘জীবনে বেচে থাকতে আর কখনো এই শরীরে কোনো শাড়ি প্যাচাবো না।’
কথাটা মনে মনে ভেবে উঠে চোখ মুছতে মুছতে আবারো রুমে চলে আসি।পুরো রুমের লাইট অফ করে অন্ধ*কারাচ্ছন্ন বারান্দায় দাড়িয়ে আছি আমি।বাগান থেকে মানুষের হাসাহাসি নাচ গানের শব্দ ভেসে আসছে,আবারো কান্না আসছে কারনে ঠোট কামড়ে কা*ন্না আটকানোর বৃথা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি!এতো হাসি আনন্দের মাঝেও আমার মুখে হাসির লেশ মাত্রও নাই।

ঘন্টা খানেক পরে রুমের দরজা ঠেলে রুমে আসে শৈবাল,পুরো ঘুর অন্ধকার দেখে আপনা আপনি ভ্রু যুগল কুচকে যায় তার।লাইট জ্বালিয়ে রুমে তুহাকে না দেখে নিজের মাঝে একটা অপরাধ বোধ কাজ করে,অবশ্যই এই অপ*রাধ বোধটা তুহার সাথে খারাপ আচরনের পর থেকেই অনুভব করছে!তার সাথে একটু বেশিই খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছে,কিন্তু এতে তার দোষ কি?সে তখন ওই কথা গুলো স*হ্য করতে না পেরে সেই রাগ তুহার উপর ঝেড়েছিলো।ভেবেই এক হাত দিয়ে চুল টেনে বারান্দায় এসে তুহার পাশে দাড়ায়।

পাশে কারো উপস্থিতি অনুভব করতেই তার দিকে তাকাই,শৈবাল কে দেখে চোখ ফিরিয়ে আবারো সামনের দিকে তাকাই।শৈবাল হয়তো কিছু বলতে চাইছে বুঝেও না বুঝার ভান করে বাহিরেই তাকিয়ে থাকি।মিনিট খানেক পরে শৈবাল গলা ঝেড়ে পরিষ্কার করে বললো,
‘অনুষ্ঠানে আর যাওনি যে?’
কথাটা শুনে তা*চ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললাম,
‘অনুষ্ঠানে যাওয়ার ইচ্ছে মরে গেছে তাই।’
কাঠকাঠ গলায় জবাব পেয়ে শৈবাল কিছুটা থতমত খেয়ে যায়।পরক্ষনেই নিজেকে সামলে বললো,
‘তুহা…’

তাকে কথা শেষ করতে না দিয়ে আমি বারান্দা থেকে রুমে চলে আসতে নিতেই সে আমার হাত টেনে ধরে।বারান্দার রেলিংয়ে হেলান দিয়ে আমাকে তার বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে পেছন থেকে কোমড় জড়িয়ে ধরে।অতঃপর কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলো,
‘আ’ম স্যরি বউ,খুব বেশি হার্ট হয়েছো?সত্যিই এত্তো গুলা স্যরি।’

কানের কাছে ঠোট নিয়ে কথা বলার সময় বারবার তার ঠোটের স্প*র্শ কানে লাগতেই কেপেঁ উঠি আমি।কিন্তু তা মনে না এনে জেদকেই প্রশ্রয় দেই।তার কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে করতে বললাম,
‘আপনার স্যরি আপনার কাছেই বস্তা ভরে রেখে দিন লাগবেনা আমার।ছাড়ুন আমাকে এতো আ*হ্লাদ করতে হবেনা।’
কথাটা শুনে মুচকি হাসে শৈবাল,আরো একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,

‘তুমি তখন ওইভাবে শাড়ি পরে সেজেগুজে বের হওয়াতে সব ছেলেরা তোমার দিকে হা করে তাকিয়ে ছিলো,তাকিয়ে থাকা অব্দি সীমা*বদ্ধ ছিলো না,ওরা তোমাকে নিয়ে বা*জে মন্তব্য করা শুরু করে।তোমাকে নিয়ে কেউ একটা খা*রাপ কথা বললেও আমার মাথা ঠিক থাকেনা সেখানে ওই ছেলে গুলোর এতো বা*জে মন্তব্যে আমি হিতাহিত জ্ঞা*ন শূন্য হয়ে পড়ি।বিশ্বাস করো তুমি যদি ওইসব কথা শুনতে ম*রে যেতে ইচ্ছে করতো তোমার,সেখানে আমি নিজেকে অনেক কষ্টে ক*ন্ট্রোল করে তোমার কাছে যাই!তারপর ওই আন্টিটার কথা সব মিলিয়ে মাথা ঠিক ছিলো না।আমি সত্যিই স্যরি বউ।আর জীবনেও এমন হবে না!প্রমিস করছি তোমাকে!’

শৈবালের কথা শুনে অবাক হয়ে যাই আমি,তার মানে লোকটা এইজন্য আমার সাথে এভাবে কথা বলেছে ভাবতেই মনের সব মান অভিমান হাওয়ায় মিশে যায়!তার মধ্যে স্থান করে নেয় একরাশ ভালোলাগা,ইশশ লোকটা আমার কতো দিকে খেয়াল রাখে আর আমি কি না এতোসব ভেবে বসে আছি!মনে মনে এসব ভাবতে ভাবতে নিজের গালে একটা থাপ্পড় বসাই।কিন্তু এতো সহজে তার কাছে হার মানবো না,তাকে আমার রাগ এতো সহজে ভাঙ্গতে দিবো না ভেবে নেই।তাই চুপচাপ তার থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকি!

নীড়ের খোজে পর্ব ১৪

[সাজ গোজের ব্যাপারে কোনো ধারনা নেই আমার,তাই কি কি দিয়ে সাথে তার নামও জানিনা,কোনটার নাম কি তাও জানিনা,কোনো কিছু ভুল হলে এই অ’ধমকে ক্ষমা করে দিবেন।]

নীড়ের খোজে বোনাস পর্ব