নীড়ের খোজে পর্ব ১৪

নীড়ের খোজে পর্ব ১৪
জান্নাতুল বিথী

সকাল সকাল মাথার দু পাশে হাত রেখে বারান্দায় বসে আছি,প্রচুর মাথা ব্যাথা করছে!কাল সারা রাত আমি ঘুমাতে পারিনি,যেখানে ছোট বেলা থেকে একা ঘুমিয়ে অভ্যস্ত আমি সেখানে একে তো শৈবাল ঘুমিয়েছে তার উপর সারা রাত এভাবে জাপটে ধরে ঘুমাইছে,একটু নড়াচড়াও করতে পারিনি।সে আমাকে শক্ত করে ধরে রেখেছে।তার করা এসব পাগলামী দেখে মাঝে মাঝে ভাবনায় পড়ে যাই আমি।কেনো করছে লোকটা আমার সাথে এমন পাগলামী?সে কি কোনো মতে আমাকে ভালোবেসে ফেলেছে?কিন্তু কিভাবে?মাত্র দু তিন মাসে ভালোবাসা হয়?তার করা এতো কেয়ার,পাগলামী দ্বারা সে কি বুঝাতে চাইছে?সে কি সত্যিই আমাকে ভালোবাসে?

কই আমি তো আগে এমন ছিলাম না,কখনো কারো সাথে প্রয়োজন ছাড়া কথা বলিনি।সেখানে এই মানুষটার সাথে প্রয়োজন ব্যাতীত ও কথা বলি আমি।তাকে সামনে পেলেই কথার ঝুড়ি নিয়ে বসি যেনো আমি,তার সাথে অযথা তর্ক করা এসব কেনো করি আমি?এমন হাজারো প্রশ্ন মাথায় উকি ঝুকি দিতে থাকে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

মাথা প্রচুর ব্যাথা করছে তাই এসব ভাবনা এক পাশে রেখে রুমের দিকে চললাম,শৈবাল এখনো ঘুমিয়ে সে আমাকে সারা রাত শান্তিতে ঘুমাতে না দিয়ে এখন নিজে মরার মতো পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে।ইচ্ছে করছে তার গায়ে এক জগ পানি ঢেলে দেই।ভাবতে ভাবতেই রুমে এসে তো আমি পুরাই অবাক,শৈবাল বেডে হেলান দিয়ে বসে আছে!তার এক হাত দিয়ে কপাল ম্যা*সাজ করছে তো আরেক হাত দিয়ে একটু পর পর চুল গুলো টেনে টেনে দিচ্ছে।তার এ অ*বস্থা দেখে আমি কিছুটা থতমত খেয়ে যাই।তাই তার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বললাম,

‘কি হয়েছে আপনার?মাথা ব্যা*থা করছে?’
চমকে উঠে শৈবাল আমার দিকে তাকায়,তার চোখ মুখ দেখে আমি আরেক দফায় অবাক হই!চোখে চশমা নেই,আমার দিকে তাকাতেই খেয়াল হলো তার চোখ গুলো অসম্ভব লা*ল হয়ে আছে!দেখে মনে হচ্ছে সারা রাত ঘুমায়নি।কতো গুলো চুল এসে ভ্রু থেকে প্রায় চোখ ঢেকে দিয়েছে।আমার আওয়াজ শুনে সে পাশ থেকে চশমা নিয়ে পরতে পরতে বললো,
‘হু বউ প্রচুর মাথা ব্যা*থা করছে।’
কথাটা বলতেই আমি তার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে কিছুটা নিচু হয়ে তার চোখের উপর পড়ে থাকা চুল গুলো মুঠো বন্ধি করে বললাম,

‘মাথা ব্যা*থা কেনো করছে?কাল সারা রাত তো শান্তিতে ঘুমাইছেন।কিন্তু বড় আম্মু যে বললো আপনি ঘুমাতে না পারলে নাকি মাথা ব্যাথা করে?এখন এটা বলবেন না যে আপনি সারা রাত জেগে ছিলেন।’
কথাটা শুনে সে কিছুটা অসহায় সুরে বললো,
‘তুমি এমন একটা নে*শা দ্রব্য যা পান করা তো দূরে থাক তার আশে পাশে ঘেসলেই আমি নে*শাক্ত হয়ে পড়ি আর সেই নে*শা দ্রব্য যদি সারা রাত আমার বুকে ঠাই পায় তাহলে আমি ঘুমাই কি করে?’
তার কঠিন কঠিন কথা গুলো শুনে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বললাম,

‘তো আপনাকে কে বলছে আমাকে আপনার বুকে ঠাই দিতে?’
কথাটা বলতেই সে বিরবির করে কি জানি বললো বুঝিনি আমি,তাই তাকে পুনরায় জিজ্ঞেস করি,
‘ভূতের মতো কি বিরবির করছেন আপনি?’
‘কিছুনা,ও বউ আমার মাথাটা একটু ম্যা*সাজ করে দাও না প্লিজ!’

তার কথার ধরনে আমি ফিক করে হেসে উঠি।সে যেভাবে ইনোসেন্ট ফেস করে আছে দেখতে একদম বাচ্চাদের মতো মনে হচ্ছে।আমিতো একটুর জন্য ভবলাম কোনো ছোট বাচ্চা তার আম্মুর কাছে খেলনা কিনে দেওয়ার জন্য আবদার করছে।আমাকে এভাবে হাসতে দেখে সে গাল ফুলিয়ে ফেলে,এটা দেখে আমি আবারো হেসে উঠি।আমাকে হাসতে দেখে সেও মৃদু হাসলো।অতঃপর আমি তাকে এটা সেটা হাজার টা প্রশ্ন করতে করতে তার মাথা ম্যাসাজ করে দিতে থাকি।আর সে ক্লান্তহীন ভাবে আমার প্রশ্ন গুলোর উত্তর দিয়ে যাচ্ছে।

সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার বেশি বাজে,আজ শৈবালের ছোট মামা ইসমাইলের গায়ে হলুদ!বাহিরে সবাই তোড়জোড় করছে।বাগানে হলুদের অনুষ্ঠান হচ্ছে,বলা বাহুল্য আজ সারা দিনেও আমি শৈবালের দেখা এক বারের জন্যও পাইনি।বাড়ির বড় ছেলে হিসেবে সব কাজের দায় ভার তার উপর পড়েছে এবং সে সেসব নিয়েই ব্যাস্ত!আমি সারাদিন বড় আম্মুর সাথে হালকা পাতলা কাজ করছি আর আমার সমবয়সী দুইটা মেয়ে আছে ওদের সাথে বসে আড্ডায় মেতে ছিলাম।মনে মনে অবশ্যই তাকে অনেক বার খুজেছিলাম তবে বারবারই হতাশ হতে হয়েছে,তাই আর খুজিনি তাকে।

একটা রুমে আমি সহ পাঁচ ছযটা মেয়ে বসে বসে সাজছি।আম্মু আমাকে বাঙালিয়ানা স্টাইলে একটা কাঁচা হলুদ রঙের শাড়ি পরিয়ে দিয়েছে।এখন অন্যদের পরিয়ে দিচ্ছে,যেহেতু ছেলের বাড়ি তাই পার্লার থেকে কোনো লোক আনা হয়নি!যাদের পার্লারের সাজ দরকার তারা পার্লারে গেছে।যারা পার্লারে যায়নি আমি তাদের সাথেই আছি।মিহা আপু আমাকে সাজিয়ে দিচ্ছে।সাজতে চাইনি কারনে আম্মু চোখ রাঙিয়ে বললো,
‘একটু সাজলে ক্ষয় হয়ে যাবেনা।চুপচাপ বস এখানে।’

তার চোখ রাঙানো দেখে আমার আর কিছু বলার সাহস হয়নি।তাই চুপটি করে বসে আছি আর মিহা আপু আমাকে সাজাচ্ছে,প্রায় ৩০ মিনিট পর আপু শেষ করে বললো এবার আয়না দেখো।আমি আয়নার দিকে তাকিয়ে মাথা ঘুরিয়ে উঠার মতো অবস্থা।এতো গর্জিয়াস করে আমি জীবনেও সাজিনি,আপুর দিকে তাকাতেই আপু বললো,
‘হালকার উপর এই সাজটাই তোমাকে স্যুট করেছে।’

‘একটাকে হালকা সাজ বলে?’
অবাক হয়ে জানতে চাইলাম আমি।আপু হেসে বললো,
‘পার্লার থেকে যারা আসবে তাদের দেখার পর বুঝবে হালকা নাকি গর্জিয়াস।’
বলেই অন্যদের সাজাতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে।এদিকে আমাকে তিথী আর সিমু বাহিরে নিয়ে আসে আর একজন এক কথা বলছে।হঠাৎ সিমু মৃদু চেছিয়ে বললো,

‘তুহা দেখো সবাই কেমন তোমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।’
কথাটা শুনে চমকে উঠে আশে পাশে তাকিয়ে দেখলাম সত্যি সত্যি কতো গুলো ছেলে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।তা দেখে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে তাদের হাত ধরে বললাম,
‘চলো আমরা এখান থেকে যাই।’
বলতে বলতে সামনে আগাতে যেতেই কোথা থেকে জানি বড় আম্মু এসে সামনে দাড়ালো।আমাকে দেখে মুচকি হেসে থুতনি হালকা উচু করে বললো,

‘মাশাআল্লাহ আমার মেয়েটাকে কি সুন্দর লাগছে।’
আমি বড় আম্মুর কথা শুনে মুচকি হাসি।পাশ থেকে একজন মধ্যবয়স্ক মহিলা বললো,
‘মেয়েটা কে আপা ছিনো নাকি তুমি?ওর মা বাবা কে বলোতো?তাদের সাথে একটু কথা ছিলো!’
বড় আম্মু কিছুটা অবাক হয়ে বললো,
‘কেনো কথা বলতে চান?’

‘ওমা এমন সুন্দর সংসারী একটা মেয়েই তো আমি আমার বাড়ির বউ করতে চাই,কি সুন্দর কাল থেকে খেয়ার করছি তাকে সবার হাতে হাতে কাজ করছে দেখতেও মাশাআল্লাহ্।’
তার কথাটা শুনে আমার মুখ ফ্যাকাসে হয়ে যায়,বড় আম্মু কিছু বলতে যাবে তার আগেই পেছন থেকে হঠাৎ শৈবাল বলে উঠলো,

নীড়ের খোজে পর্ব ১৩

‘আপনার মাশাআল্লাহ্ দেখতে মেয়েটা আপাত বুকট হয়ে গেছে আন্টি।আপনি বরং অন্য কোথাও সিরিয়াল ধরেন।আমার বউকে নিয়ে নো টানা নো হ্যাচরা।’

নীড়ের খোজে পর্ব ১৫