নীড়ের খোজে পর্ব ১৩

নীড়ের খোজে পর্ব ১৩
জান্নাতুল বিথী

ছাদে বসে আড্ডা তে মেতে আছে বাড়ির জোয়ান সব সদস্য। আম্মু আমাকে কোথাও বের হতে দেয়নি,একজন এক কথা শোনাবে কারনে!শেষে হিমেলের কাছে হার মেনে আমাকে যেতে বলে ছাদে,হিমেল তড়িগড়ি করে এসে আমার হাত টেনে ধরে বললো,

‘আপু জানো ছাদে সবাই মিলে বসে কত্তো আনন্দ করছে,আর আম্মু তোমাকে তার কাছে জোর করে বসিয়ে রাখছে!তুমি সব কিছু মিস করছো!
এসব আড্ডাতে আমার অতো ইন্টারেস্ট নেই,ছোট বেলা থেকেই কখনো আমাকে জন বহুল কোনো জায়গায় যেতে দিতো না সৎমা।আমাকে কেউ নিতে চাইলে সৎমা তাকে চোখ রাঙ্গিয়ে থামিয়ে দিতো,আর বলতো ওইসব জায়গায় যাওয়ার মতো যোগ্যতা নাকি আমার নেই!

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আর এখন আমার এমন দিন আসছে যে,আমার জন্য তাদের আনন্দ স্থগিত করে রাখে!আমি যেতে পারবো না কারনে তাদের যাওয়া পেছানো হয়।কথা গুলো ভাবতে ভাবতেই ঠোটের কোণে তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে উঠে।সৎমা কে চোখে আঙ্গুল দিয়ে আমার এখন কার কাটানো দিন গুলো দেখিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে।
‘ওই দেখো শৈবালের বউ চলে আসছে।আসো আসো এখানে তোমারই কমতি ছিলো।’

বলতে বলতেএকটা মেয়ে শৈবালের পাশ থেকে উঠে আমার জন্য জায়গা করে দেয়।আমি কিছু না বলে মুচকি হেসে তার পাশে বসে পড়ি।এতক্ষন সবাই কোনো একটা বিষয় নিয়ে খুব হাসি-ঠাট্টা করতেছিলো।আমি আসতেই সবাই চুপ হয়ে যায়।আমি চারদিকে একবার চোখ ঘুরিয়ে একবার দেখে নিলাম,পাঁচ-ছয়টা ছেলে,মেয়ে আছে কম করে হলেও সাত-আট জন।যার মধ্যে আমি সৈকত ভাইয়া,হিমেল,শৈবাল আর শৈবালের ছোট মামা ছাড়া কাউকেই ছিনি না।সবাই যে যার মতো করে হাসি ঠাট্টা করছে।হঠাৎ পাশ থেকে ওই মেয়েটা বলে উঠলো,

‘এভাবে নিরামিষ ভাবে আড্ডা না দিয়ে চলো আমরা কিছু খেলি।’
বলতে না বলতেই সবাই হৈ-হৈ করে রাজি হয়ে যায়।শৈবালের বড়ো মামার ছেলে রাফি বললো,
‘কি খেলা যায় সেটা সাজেস্ট করো।চাচ্চু তুমি করো!’
শেষে কথাটা ছোট মামা কে ইশারা করে বললো।সেও সাথে সাথে মাথা নেড়ে বলে দিলো তার মাথায় কিছু আসছে না।তার পাশ থেকে মিহা নামের একটা মেয়ে বললো,

‘চলো আমরা সবাই দলগত ভাবে গানের কলি খেলি,সেটা মজা হবে অনেক!’
সবাই হাত তালি দিয়ে উঠলো কথাটা শুনে,তার মানে দাড়ায় তারা এটাই খেলবে!সৈকত ভাইয়া বললো,
‘কিন্তু এটা খেলবো কি করে,

‘প্রথমে দুই দলে ভাগ হবো সবাই,তারপর একদল একটা অক্ষর দিবে সেই অক্ষর দিয়ে অপরপক্ষ একটা গান গাইবে,তারপর তারা একটা অক্ষর দিবে এভাবেই খেলা কন্টিনিউ হবে।যে দল হার মেনে নিবে মানে গান পারবে না তখন অপর পক্ষ দলে পয়েন্ট এক করে বাড়বে।’

আমি গালে হাত দিয়ে সবার তামাশা দেখছি।এবার সবাই মিলে দল ভাগ করায় মনোযোগ দেয়,এক দলের লিডার হলো ছোট মামা অন্য দলে হলো সৈকত ভাইয়া।আমি ছোট মামার দলে পড়ি,আমার সাথে শৈবাল সহ আরো একটা ছেলে রবি আর তিনটা মেয়ে তিথি,মিহা আর সিমু পড়ে।ওই দলে হিমেল সহ আরো কয়েকজন পড়ে।দল ভাগ হওয়ার সময় শৈবাল কাঠকাঠ গলায় জানিয়ে দিয়েছে,

‘আমি আমার বউয়ের দলে না পড়লে খেলবো না।’
কথাটা বলার সাথে সাথে সবাই ওওও বলে চিৎকার করে উঠে,ল*জ্জায় আমার ইচ্ছে করছে মাটির সাথে মিশে যেতে!অতঃপর উপায় না পেয়ে তার হাতে জোরে একটা চিমটি কাটি।সে ‘উফ’ বলে হালকা ছেচিয়ে উঠতেই সবাই তার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই সে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে হালকা হেসে বললো,

‘ক-কিছুনা এমনি একটা মশা কামড়েছে!’
বলতে বলতে সে আড় চোখে আমার দিকে তাকায়।আমি চোখ গরম করে তার দিকে তাকিয়ে আছি,শেষ পর্যন্ত কি না আমাকে মশা বানিয়ে দিলো?অতঃপর সবাই আবারো হেসে উঠে!

খেলা শুরু হইছে আধ ঘন্টা হইছে,এর মাঝে আমাদের ৪ পয়েন্ট আর তাদের জিরো পয়েন্ট।এটা নিয়ে আমাদের দলের সবাই একটু পর পর তাদের খোচা দিচ্ছে।আর ওই দলের সবাই মুখ ঘোমড়া করে বসে বসে সব কিছু মুখ বুঝে সহ্য করছে!এখন পর্যন্ত শৈবাল একটা গান ও গায়নি।সে যদি কোনো গান পারে তাহলে তার ওই পাশে বসা ছেলে টাকে বলতো।ছেলেটা গানটা গাইতো।এখনো অবশ্যই আমারো একটা গানও গাইতে হয়নি।সব ওরাই পারে,বেশির ভাই সিমু,মিহা আর তিথি এই তিনজন।এর মাঝেই আমাদের আরো এক পয়েন্ট যোগ হয়,এতে ছোট মামা হালকা ঠেস মেরে ওদের বললো,

‘আহারেহ কারা জানি বলেছিলো এই খেলাতে তারাই জিতবে।কই কচুও তো পারেনা!’
ওই দল থেকে একজন বলে উঠলো তোমাদের পয়েন্ট যতোই বাড়ুক না কেনো আমরা তোমাদের জিততে দিবো না।’
‘কেনো?’
আমার পাশে বসা ছেলেটা বললো,

‘তোমাদের দলের এই টুনি এখনো একটা গানও গায়নি,তাই!’
আমি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছি!আমাদের দলের সবাই বলছে আমাকে গান গাওয়ার জন্য,আমি কি করবো উপায় না পেয়ে শৈবালের দিকে তাকাতেই সে বললো,
‘তুমি যদি কম্পোর্ট ফিল না করো তাহলে গাইতে হবে না।এদের জিততেই হবে এমন কোনো কথা নেই।’
ছোট মামা বললো,

‘তোর কথাতেই সব হবে নাকি রে শৈবাল?তুহা গান গাইবে আর আমরা জিতবোই।’
শৈবাল কিছু বলতে যেতেই আমি তাকে চোখ দিয়ে ইশারা করে কিছু বলতে না করলাম!অতঃপর তাদের দিকে তাকিয়ে বললাম,
‘যেকোনো অক্ষর দিতেই গাইতে পারবো?’
সবাই হ্যা বললো।আমি কিছু না বলে চোখ বন্ধ করে জোরে একটা নিশ্বাস ফেলে গাইতে শুরু করলাম,

‘পাগল হয়ে আছি তোরই কারন
সাথে করে এনেছি নে এই মন,
তোর হাসির ছল তোর চুলের উতল
আমাকে কেড়ে নেয়..
তোর চোখের জিল জানি পেরোনো মুশকিল মানি
তাও পারি না যে এগিয়ে গিয়েছে
আমার এই দুটো পা
তোকে একা রে দেখার লুকিয়ে কি মজা
সে তো আমি ছাড়া কেউ জানে না
তোকে চাওয়ার আর পাওয়ার আ নয়রে সোজা
সে তো আমি ছাড়া কেউ জানে না….’
{বাকীটা নিজ দায়িত্বে শুনে নিবেন}

ডিনার করে গুটি গুটি পায়ে এসে রুমের দরজার সামনে দাড়াই আমি,আমাকে আর শৈবালকে এক রুমে থাকতে দিয়েছে!তার সাথে সারা দিনে যতোই ঝগড়া করি না কেনো এখন ভয় করছে তার সাথে এক রুমে থাকার কথা শুনে!একবার দরজা খুলতে হাত এগিয়ে নেই তো দশবার পিছিয়ে আনি।হঠাৎ করে দরজা খুলে যায় রুমের,সামনে বুকে দুই হাত গুজে শৈবাল দাড়িয়ে আছে।তাকে এভাবে সামনে দাড়িয়ে থাকতে দেখে একটা ফাকা ঢোক গিলে বললাম,

‘সামনে থেকে সরুন আমি ভেতরে যাবো।’
সে ভদ্র ছেলের মতো সামনে থেকে সরে যায়,তাকে এতো ভদ্র ভাবে সরে যেতে দেখে আমি ভ্রু কুচকে তার দিকে তাকাই।সে ভ্রু নাচিয়ে কি জিজ্ঞেস করতেই আমি মাথা নাড়িয়ে না বলে তড়িগড়ি করে রুমে ঢুকে যাই।অতঃপর কোনো দিকে না তাকিয়ে চুপচাপ বেডে উঠে কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়ি।আমাকে এভাবে শুতে দেখে শৈবাল নিঃশব্দে হাসে।
প্রায় দশ মিনিট পর শৈবাল আমার পাশে এসে শুয়ে পড়ে।কম্বল টেনে নিজের দিকে নিতে যেতেই আমি আতকে উঠে বললাম,

‘আমি একা গায়ে দিবো এটা,আপনি আরেকটা নিন!’
‘এই রুমে তো আমি এই একটাই কম্বল দেখতে পাচ্ছি।’
বলতে বলতে সে কম্বলের ভেতরে ঢুকে পড়ে।আমি আর কিছু না বলে অন্য পাশে ঘুরতেই পেছন থেকে দুইটা হাত এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে,হঠাৎ এভাবে জড়িয়ে ধরায় কেঁপে উঠি আমি।
‘এভাবে জাপটে ধরে আছেন কেনো ছাড়ুন আমাকে।’

নীড়ের খোজে পর্ব ১২

নড়েচড়ে উঠে তাকে বলি কথাটা,সে বিরক্ত হয়ে আমার ঘাড়ে তার মুখে রাখে।তার গরম নিশ্বাস আমার ঘাড়ে আচড়ে পড়ছে,চোখ বন্ধ করে এক হাতে কম্বল ধরে রাখি শক্ত করে!
‘শৈবাল ছাড়ুন আমাকে,এভাবে ঘুমাতে পারিনা আমি।’
‘এখন থেকে অভ্যাস করে নাও।’
বলতে বলতে ঘাড়ে ঠোটের স্পর্শ একে দেয়,তারপর ওইভাবে জড়িয়ে রেখেই চোখ বন্ধ করে নেয়।

নীড়ের খোজে পর্ব ১৪