নীড়ের খোজে পর্ব ১২

নীড়ের খোজে পর্ব ১২
জান্নাতুল বিথী

আমি লোকটার দিকে ড্যাবড্যাব করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ভালো আছি বললাম!এখনো মনে করতে পারছিনা যে আসলে লোকটাকে কোথায় দেখেছি।সবার সাথে দু একটা কথা বলে ভেতরে যেতে যেতে শৈবাল কে বললাম,
‘আচ্ছা আপনার ছোট মামা কে কি আমি আগে কোথাও দেখেছি?’
উত্তরে সে নিচের ঠো*ট কামড়ে ধরে বললো,

‘আমি কিভাবে জানবো?আমি কি ছোট বেলা থেকে তোমার আচঁলে আচঁলে ঘুরেছি নাকি?’
তার ত্যাড়া জবাবে আমি চোখ মুখ মুচকে তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে আগে আগে ভেতরে চলে আসি!পেছন থেকে তার কথা ভেসে আসছে,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘আরে দাড়াও তুহা!তোমার বর টাকে একা ফেলে এভাবে চলে যাচ্ছো কেনো?নট ফেয়ার তুহা!’
তার কথা শুনেও আমলে না নিয়ে আমি আমার মতো করে ভেতরে গিয়ে বড় আম্মুর আচঁল ধরে তার পেছনে দাড়িয়ে থাকি।বড় আম্মুরা আমাদের আগেই পৌছে গেছিলো।চারদিকে তাকিয়ে দেখলাম চেনা অচেনা মিলিয়ে কতো গুলো মুখ।যাদের মধ্যে আমাদের বাড়ির সংখ্যা একেবারেই নগন্য,একটু পর শৈবাল এসে পাশে দাড়াতেই সবাই আমাদের দিকে ন*জর দেয়!শৈবালের আন্টি বললো,

‘বড় আপা এটা বুঝি আমাদের রেখা আপার আগের সংসারের শয়তানটার মেয়ে?’
বড় মা মাথা নেড়ে হ্যা বলতেই আব্বু কিছুটা তেজী স্বরে বললো,
‘আগের সংসারের বলছেন কেনো আপা?তুহা মামনি আমারই মেয়ে।বর্তমানে যেহেতু সে আমার কাছে আছে সেহেতু সে আমার মেয়ে!আশা করছি দ্বিতীয় বার ভদ্র বলবেন।’
‘রিমা আপা ভদ্র ভাবে বললেই তো আর মেয়েটার জন্ম পরিচয় মিথ্যা হয়ে যাবেনা তাইনা?এটা তো আর অস্বীকার করা যায় না যে,ওর শরীরে একটা কুলা*ঙ্গারের র*ক্ত বইছে।’

পাশ থেকে শৈবালের ছোট মামি কথাটা বলে উঠলো।কথাটা শুনে আমার চোখ ছল*ছল করে উঠে।আপনি যত ভালো পরিবেশেই থাকুন না কেনো,যতো অতীত ভুলতে চাইবেন এই সমাজ ততো আপনাকে আপনার অতীত মনে করিয়ে দিবে সমাজের কিছু মানুষ।মনে করিয়ে দিবে সেই তি*ক্ততায় ভরা দিন গুলোর কথা।আপনি ভালো হয়ে কি করবেন?যদি সমাজ বারংবার আপনার চৌদ্দগোষ্ঠী তে কে খারাপ ছিলো তার কথা মনে করিয়ে দেয়?আমার বুঝা হয়ে গেছে আমাকে সব জায়গাতেই এসব জবাবদীহি করতেই হবে।নিচের দিকে তাকিয়ে নিরবতা পালন করছি আর আরেকটা তিক্ত কথার অপেক্ষায় আছি!এর মাঝেই হঠাৎ একটা হাত এসে আমাকে এক পাশে থেকে জড়িয়ে ধরে বললো,

‘ওর আগে কি পরিচয় ছিলো,আগে কার মেয়ে ছিলো সেসব এখন ধোয়াসা!তার বর্তমান পরিচয় সে ফাহাদ পাটওয়ারীর একমাত্র বউ এবং দুলাল পাটওয়ারীর একমাত্র মেয়ে।তাকে এখন আর একটাও যদি বা*জে কথা বলা হয়,তাহলে মেঝো চাচ্চু কি করবে জানিনা,তবে আমি বড় ছোট কিছু মনে করে ছেড়ে কথা বলবো না কাউকে,কথাটা সবাই মনে রেখো!’
তারপর একটু থেমে আবার বললো,
‘ওর অতীত নিয়ে যদি কেউ আর একটা প্রশ্নও তুলে তাহলে আমি ঠিক সেই মুহূর্তেই এই বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বাধ্য হবো।’

আমি শৈবালের মুখের দিকে তাকিয়ে আছি,চোখের পলক ফেলতে মনে হচ্ছে ভুলে গেছি আমি!অন্য দিকে যারা এসব বলছে তাদের মুখ ততক্ষনে চুপসে গেছে। শৈবাল আর কথা না বাড়িয়ে আমাকে ওই ভাবে ধরেই এক হাতে লাগেজ নিয়ে রুমে চলে আসে।পেছন থেকে একজন বলছে,

‘আহা তোমরা কি শুরু করলে এসব?ওরা আসতে না আসতেই শুরু করছো তোমরা!এসব কি হুম?চুপ করবে তোমরা?’
কথাটা কে বললো জানিনা,তবে তার কথায় মুহূর্তেই হাসি হাসি পরিবেশটা গম্ভীর হয়ে যায়।আমি শৈবালের দিকে তাকিয়ে মিনমিন করে বললাম,
‘আপনি তাদের সাথে এভাবে কথা বলতে গেলেন কেনো?তারা তো আপনার বড় তাই না?’
সে আমার দিকে রা*গী লুকে তাকিয়ে বললো,

‘বউ যদি তাকে করা অ*পমার গুলো মুখ বুঝে সহ্য করে নেয় তাহলে আমাকে তো উত্তর দিতেই হবে তাই না?বড় হয়েছে বলে কি মাথা কিনে নিয়েছে নাকি যে যা ইচ্ছে তাই বলবে?
শৈবাল একটু থেমে রুমে ঢুকতে ঢুকতে বললো,

‘ওদের জন্য মেঝোমা এবাড়িতে এসে একটু শান্তি পায়না,কথায় কথায় তাকে আগের সংসারের কথা বলে খোটা দেয়!যেখানে আমার দাদা দাদির কোনো সমস্যা ছিলো না সেখানে ওদের এতো সমস্যা মানায় না।আমি জাস্ট সহ্য করতে পারিনা,ওদের এসব আচরনের জন্য ওদের কে।একারনেই এবাড়িতে আসতে চাইনা আমি,মানুষ গুলোকেই সহ্য হয়না।’
আমি আম্মুর ব্যাপারে কিছু না বলে বললাম,

‘উনারা আমার ব্যাপারে যা বললো তা তো সত্যিই!সত্যকে মানতে এতো সমস্যা কিসের?’
সে আমার দিকে রা*গী লুকে তাকিয়ে বললো,
‘আমাকে রা*গীও না তুহা,খুব খারাপ হবে কিন্তু!’
আমি কিছু না বলে মুখ বাকিয়ে তোয়ালে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যাই!সে রা*গে ফুসতে ফুসতে বারান্দায় চলে যায়।

ফ্রেস হয়ে বারান্দায় যেতেই ফুলের গন্ধ নাকে এসে বাড়ি খায়,চারদিকে তাকিয়ে শৈবালকে কোথাও খুজে পাইনি!নিচের দিকে তাকিয়ে দেখি রজনীগন্ধা ফুলের বাগান।রজনীগন্ধা ফুল দেখে আনমনেই আমার মুখে হাসি খেলে যায়।তড়িগড়ি করে রুম থেকে বের হয়ে বাগানের দিকে চলে যাই!বাগানে গিয়ে আমি মুগ্ধ হয়ে চারদিকে দেখছি।এক পাশে বেলী ফুলের বাগান অন্য পাশে রজনীগন্ধা ফুলের বাগান!বিস্ময়ে খুশিতে আমি চারদিক দেখছি!

‘পছন্দ হয়েছে ম্যাম?’
চমকে উঠে পাশে ফিরে দেখি শৈবাল দাড়িয়ে,সে পকেটে দু হাত গুজে ঠোটে মুচকি হাসির দেখা!আমি তার দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে আবারো চারদিকে দেখতে থাকি!

নীড়ের খোজে পর্ব ১১

‘আমি এখানে আসতে চাইতাম না কখনো,যদিও বা কখনো আসি আসা হতো তখন আমি বেশির ভাগ সময় এখানেই কাটাতাম।মাঝে মাঝে মম বলতো তুই এখানে বিয়ে করে সংসার কর,এখান থেকে তো বের হতে চাইছিস না,তখন এসব শুনে হাসতাম!’
শৈবালের শেষ কথাটা শুনে আমি হেসে ফেলি।

নীড়ের খোজে পর্ব ১৩