নীড়ের খোজে পর্ব ১১

নীড়ের খোজে পর্ব ১১
জান্নাতুল বিথী

চারদিকে সবাই তোড়জোড় করে জামা কাপড় গুটাচ্ছে,তিন দিন পর শৈবালের ছোট মামার বিয়ে!সেই উপলক্ষে সবাই তাড়াহুড়ো করে মার্কেট করছে।একটু পরই সবাই মিলে বের হবে!শুধু ছোটমা আর চাচ্চু বাদে।ছোটমা তার বাপের বাড়ি আর চাচ্চু ব্যবসায়ের কাজে শহরের বাহিরে গেছে।এরই মাঝে আমি অনেকটা সুস্থ হয়ে গেছি।শৈবাল সহ বাড়ির প্রত্যেক সদস্যদের মাঝে কেউই আমার সেবা করতে পিছুপা হয়নি।এতে আমি তাদের উপর অনেক সন্তুষ্ট।অনেক আগেই তাদের বিয়ে বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিলো তবে আমি অসুস্থ ছিলাম বিধেয় কেউ যাওয়ার কথা মুখে আনতে পারেনি!শৈবালকে একবার জিজ্ঞেস করতেই সে কাঠ*কাঠ ভাবে জানিয়ে দিয়েছে,

‘তুহা পুরোপুরি সুস্থ হওয়া ছাড়া আমি বাড়ি থেকে এক পাও নড়বো না।তোমাদের ই*চ্ছে হলে তোমরা যেতে পারো।তাছাড়া বিয়ের এখনো যথেষ্ট দেরি আছে!’
এভাবে আমাদের দুজনকে একা রেখে তাদের যাওয়ার সা*হস হয়নি।আমিও যাওয়ার ব্যাপারে হ্যা বা না কিছুই বলিনি।এখন একটু সুস্থ হতেই সবাই সব কিছু গুছিয়ে নিচ্ছে।আমি বসে বসে রেডি হচ্ছি।ব্যাগ শৈবালই প্যা*ক করে নিচ্ছে।আমি গুছানোর কথা মুখে বলতেই আমাকে একটা ধ*মক দিয়ে বসিয়ে রাখছে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আমি ড্রেসিংটেবিলের সামনে একটা চেয়ারে গা*লে হাত দিয়ে বসে বসে তার কা*ন্ড কারখানা গুলো দেখছি।সে তার টি-শার্ট নিয়েছে তিনটা,তিনটার মাঝে একটাও না গুছিয়ে লাগেজে রেখে প্যান্ট হাতে নিয়েছে,তারও না গুছিয়ে রেখে দিচ্ছে,পান্জাবি দিয়েছে দুইটা,একটাও গুছিয়ে নেয়নি।একটু পর আমার জামা কাপড়ে হাত দিতে যেতেই আমি বলি,
‘আমার জামা কাপড় আপনার গুলোর সাথে নিচ্ছেন কেনো?’

শৈবাল আমার দিকে ত্রু কুচকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে গম্ভীর মুখে জবাব দিলো,
‘তোমাকে ছাড়া একা ভালো লাগছে না।তাই নানু বাড়ি গিয়ে এক সাথে থকবো।আর একসাথে যেহেতু থাকবো সেহেতু জামা কাপড়ও এক সাথেই নিতে হবে।’
তার জবাব শুনে আমি ফি*ক করে হেসে দেই।আমাকে হাসতে দেখে তার গম্ভীর মুখটা আরো গম্ভীর করে বললো,
‘হাসার মতো কিছু বলিনি,যা সত্যি তাই বলছি!’

‘ওহ তাই বুঝি?তো আপনার আমার সাথে থাকতে হলে আপনার নানু বাড়ি গিয়ে থাকতে হবে কেনো?আপনি কি আমাকে পালিয়ে বিয়ে করছেন,নাকি চু*রি করে?’
‘সেসব তুমি বুঝবে না,তোমার এই ছোট্ট মাথায় আছে শুধু কেউ অত্যাচার করলে বা ক*টু কথা বললে তা মুখ বুঝে সহ্য করার ক্ষমতা,এছাড়া আর কিছুই নেই।’
‘আপনি আমাকে এভাবে হ্যা*রাচ করতে পারেন না।’

উনি আমার দিকে একবার তাকিয়ে আবার জামা কাপড় নেওয়ায় মনোযোগী হতে হতে বললো,
‘তাই বুঝি?তো কি করতে পারি?চু*মু খেতে পারি?’
শৈবালের কথাটা শুনে আমি চোখ বড় বড় করে তার দিকে হা করে তাকিয়ে আছি।সিরিয়াস কথার মাঝে সে এসব কি বলছে?এই মানুষটা দিন দিন কেমন জানি লা*গাম ছাড়া হয়ে যাচ্ছে।আমি তাড়াতাড়ি চোখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে বললাম,

‘আপনি দিন দিন চ*রম লেভেলের অ*সভ্য হয়ে যাচ্ছেন।’
‘যাহ বাবা অ*সভ্যের কি হলো?এমনিও আমি যথেষ্ট সভ্য ছেলে!শুধু তুমি বাদে সবাই জানে।’
আমি তড়িগড়ি করে এসে তার হাত থেকে আমার ওড়না টা খপ করে নিয়ে তাকে টেনে রুম থেকে বের করতে করতে বললাম,

‘আপনার সভ্যতা আপনি জনগন কে দেখান।আমার সামনে এসব লা*গাম ছাড়া কথা বলবেন না খবরদার।’
‘আরেহ এই অপরাধে তুমি আমাকে রুম থেকে বের করে দিবে নাকি?’
‘এখানে থাকলে আমার মাথা চি*বিয়ে খাবেন।আমি রেডি হবো এখন।’
বলে তার মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দেই।দরজা বন্ধু করতেই সে বিরবির করে বললো,
‘আজকাল বউ ও পাত্তা দেয় না।ফোকাস শৈবাল এমন ভাবে চলতে থাকলে দেখবি একসময় পিচ্চি রাও তোকে পাত্তা দিচ্ছে না।তার চেয়ে বরং সময় থকতে সময়ের মূল্য দিতে শিখ তুই!’

গাড়িতে বসে আছি আমি,হিমেল আর সৈকত ভাইয়া।উনি ড্রইভিং সিটে বসে ফোন ঘাটছে আর আমার পাশে হিমেল!হিলেম বায়না ধরছে বড়রা একসাথে যাওয়ার জন্য আর আমরা ছোটরা একসাথে যাওয়ার জন্য।তার কথা রক্ষার্থে বড় আম্মু,বড় আব্বু,আব্বু আর আম্মু একসাথে গেছে আর আমরা আলাদা।শৈবাল বড় মা দের সব কিছু বুঝিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দিতে গেছে!আমরা এখানে এসে জায়গা দ*খল করে বসে আছি।দশ মিনিটের মাথায় শৈবাল এসে হাজির হয়!হিমেলের পাশে এসে গাড়ির দরজা খুলে বললো,

‘গাড়ি থেকে নেমে সামনে গিয়ে বস,আমি আমার বউয়ের পাশে বসবো।’
শৈবালের এরুপ কথায় বিষম খাই আমি।হিমেল মুখ বাকিয়ে আমার পাশ থেকে উঠে ফ্রন্ট সিটে গিয়ে বসে পড়ে,আর শৈবাল আমার পাশে।সে বসতেই সৈকত ভাইয়া গাড়ি স্টার্ট দেয়।আমি তার দিকে চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে গলার স্বর কিছুটা নামিয়ে বললাম,

‘আপনার কি লজ্জা-শরম বলতে কিছু নাই?এমন বউ বউ করছেন কেনো?’
সেও আমার মত একই ভাবে বললো,
‘তো বউ বউ করবো না তো কি জামাই জামাই করবো?’
আমি চোখ বন্ধ করে এদিক ওদিক তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে তার দিকে আঙ্গুল তুলে বললাম,
‘আপনি…আপনি একটা নির্লজ্জ।’

সে মেকি হেসে বললো,
‘তুমি নির্লজ্জের বউ!’
‘আপনি আমার সাথে কথা বলবেন না!’
‘ঠিকাচে শুধু আমার বউয়ের সাথে বলবো।’
আমি আবারো এদিক ওদিন তাকিয়ে আবার তার দিকে দু হাত দিয়ে গলা চেপে ধরে দেখানোর মতো করে বললাম,
‘আপনাকে আমি খু*ন করে ফেলবো।’
কথাটা শুনে শৈবাল হো হো করে হেসে উঠে।তার হাসি দেখে আমার রা*গে পিত্তি জ্বলে যাওয়ার মতো অবস্থা।আমি ফোস করে একটা নিশ্বাস ফেলে জানালার দিকে মুখ করে বসে থাকি।

গাড়ি থেকে নেমে একটা বিশাল বাড়ির সামনে দাড়িয়ে আছি!আমার এক পাশে সৈকত ভাইয়া অন্যপাশে শৈবাল,হিমেল গাড়ি থেকে নেমেই দৌড়ে ভেতরে চলে যায়।আমি একবার শৈবালের দিকে তাকাই আরেক বার সৈকত ভাইয়ার দিকে তাকাই।সৈকত ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি সে আমার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে।সব কিছুই হইছে এই শৈবালের কারনে!

সে আমার সাথে পুরো রাস্তা ঝ*গড়া করতে করতে আসছে।আমি চুপ করে গেলেও আমাকে খো*চা দিয়ে আবার ঝগড়া শুরু করতো!সেসব মনে করেই হয়তো সৈকত ভাইয়া হাসছে।আর উনাকে দেখো দিব্যি পকেটে হাত গুজে সেন্টারফ্রুট চিবুচ্ছে।তাকে এতো ডেম কেয়ার ভাব দেখে আমার আবারো রা*গ উঠে।

রেগে তাকে কিছু বলতে যেতেই সে চোখ দিয়ে ইশারা করে সামনে দেখালো।আমি সামনে তাকিয়ে দেখি একজন বয়স্ক মহিলা এগিয়ে আসছে।তার পাশেই ত্রিশোর্ধ একজন পুরুস আসছে!পুরুষ টাকে দেখে আমার মনে হলো আমি তাকে কোথাও দেখেছি।কিন্তু কোথায় দেখেছি তা মনে করতে পারছি না।সে আমাদের সামনে এগিয়ে এসে বললো,

নীড়ের খোজে পর্ব ১০

‘কেমন আছো তুহা?তোরা কেমন আছিস?’
আমি লোকটার দিকে হা করে তাকিয়ে আছি!এই লোকটা আমার নাম জানলো কিভাবে?’

নীড়ের খোজে পর্ব ১২