হারিয়েছি নাম পরিচয় পর্ব ২২

হারিয়েছি নাম পরিচয় পর্ব ২২
লেখিকাঃ দিশা মনি

মেঘলা কোমা থেকে সেরে উঠল। টানা একমাস কোমায় থাকার পর অবশেষে চোখ মেলে তাকালো মেঘলা। রিফাতের কাছে খবরটা আসতেই সে দৌড়ে চলে আসে। মেঘলাকে সুস্থ দেখে খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায় রিফাত। উত্তেজিত হয়ে কাছে এসে মেঘলাকে জড়িয়ে ধরে। মেঘলা রিফাতকে দেখে খুশি হলো কিন্তু সেটা প্রকাশ করল না। রিফাত কাছে এসে জড়িয়ে ধরতেই মেঘলা তাকে দূরে সরিয়ে বলে,

‘কে আপনি? আমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরছেন কেন?’
রিফাত অবাক হয়ে যায় মেঘলার কথা শুনে। মেঘলা তাকে চিনতে পারছে না এটা কোনভাবেই বিশ্বাস করতে পারছে না সে। রিফাত মেঘলাকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে,
‘তুমি আমাকে চিনতে পারছ না মেঘলা? আমি রিফাত।’
মেঘলা ভালো করে রিফাতের দিকে তাকিয়ে বলে,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘কে রিফাত? আর আপনি আমাকে মেঘলা বলছেন কেন? আমার নাম কি মেঘলা?’
রিফাত কিছু বুঝতে পারে না মেঘলার কথা। রিফাতের মনে হয় মেঘলা বোধহয় স্মৃতি হারিয়ে ফেলেছে। রিফাতের মুখের এমন ভাব দেখে মেঘলা হেসে ফেলে।

‘আমি মজা করছিলাম রিফাত। জানেন আজ সকালে আমার জ্ঞান ফিরেছে। মেহের আন্টি, মুন্নি সবাই আমার সাথে দেখা করতে এলো। শুধু আপনি এলেন না। দেরি করার আসার শাস্তি এটা।’
রিফাত এবার যেন একটু স্বস্তি পায়। মেঘলার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,
‘এমন মজা আর কখনো করিও না। তুমি জানো না মেঘলা আমি কত ভয় পেয়ে গেছিলাম। তোমার কিছু হয়ে গেলে,,’
মেঘলা রিফাতকে আশ্বস্ত করে।

‘এবার আমি সুস্থ হয়ে গেছি। আপনার কাছে ফিরে এসেছি। আর আপনাকে ছেড়ে যাবোনা। সেদিন যেভাবে আপনি নিজের কথা না ভেবে আমাকে বাচাতে এগিয়ে আসলেন তাতেই আমি বুঝে গেছি কত ভালোবাসা আমার প্রতি আপনার।’
রিফাত ও মেঘলা আজ অনেকদিন পর এক হলো। তাদের এই মিলনে প্রকৃতিও বোধহয় খুশি হলো। তাইতো বৃষ্টি এসে ছুয়ে গেল প্রকৃতির বুকে।

রোদেলা মেঘলার সুস্থতার খবর পেয়ে ছুটে এসেছে। নিজের বোনের সুস্থতার জন্য এই ক’দিন কত দোয়া করেছে। আজ অবশেষে আল্লাহ সুস্থতা দান করল মেঘলাকে। রোদেলা ছুটে এসে সোজা মেঘলার কক্ষে যায়। মেঘলাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
‘কেমন আছিস মেঘ? কত শুকিয়ে গেছিস৷ আমি তোকে নিয়ে কত টেনশনে ছিলান জানিস? ভালো হয়েছে তুই সুস্থ হয়েছিস।’
মেঘলা রোদেলাকে দেখে খুব খুশি হয়,

‘তুই কেমন আছিস রোদ? তোকে দেখে অবশ্য ভালোই মনে হচ্ছে। স্বামীর সাথে খুব ভালো আছিস। মুবিন খুব ভালোবাসে তোকে তাইনা?’
‘মজা করছিস আমার সাথে? এতদিন পর আমাদের দেখা সাক্ষাৎ হলো৷ আর তুই,,,’
মেঘলা রোদেলাকে বলে,

‘তুই যেভাবে কাদছিলি আমার তো ভয় করছিল। তাই একটু হাসানোর চেষ্টা,,’
রোদেলা মেঘলাকে জিজ্ঞেস করে,
‘ডাক্তার ম্যাডাম অনেক কিছুই শিখে গেছেন। আমার অবশ্য সুবিধাই হলো। এখন অসুখ বিসুখ হলে আমার বোন বিনা পয়সায় আমার চিকিৎসা করে দেবে।’
মেঘলা মুখ বাকিয়ে বলে,
‘ফ্রি তে চিকিৎসা আমি করব না। তুই তো আমার বোন তোর থেকে তো আরো বেশি ফি নিতে হবে। আমাকে একটু বেশি করে টাকা দিয়ে উপকার করিস।’

রোদেলা রাগী মুখ করে নেয়। মেঘলা বরাবরই বেশ চুপচাপ ছিল। প্রয়োজনের থেকে বেশি কথা বলতো না৷ হঠাৎ করে মেঘলা এত কথা বলছে যে রোদেলা রীতিমতো অবাক হয়ে যাচ্ছে।
‘আচ্ছা একটা কথা বল মেঘলা তুই কি কোমা থেকে উঠে পাগল হয়ে গেছিস? এত বেশি কথা তো তুই বলতি না।’
মেঘলা কিছু একটা লুকাচ্ছে। তার চোখ মুখ দেখেই সেটা বোঝা যাচ্ছে। মনের কথা মনে লুকিয়ে রেখেই মেঘলা বলে,

‘আরে না। আমি তো এমনিই এমন করে বলছিলাম।’
‘বুঝেছি। তোর মনে রং লেগেছে। রং লাগারই কথা। রিফাত কত ভালোবাসে তোকে।’
মেঘলা মৃদু হাসে।
‘জিবনে মজা খুব কমই করেছি। সবসময় পড়াশোনার মধ্যেই ডুবে ছিলাম। এখব অন্তত তোদের সাথে মজা করে নেই। নাহলে তো আফসোস থেকে যাবে। মৃত্যুকে অনেক কাছ থেকে দেখে এসেছি। তাই জিবনের মূল্য এখন আমি বুঝতে পেরেছি।’

রিফাত আচমকা রুমে চলে আসে। মেঘলাকে আর রোদেলাকে কথা বলতে দেখে কিছুটা বিব্রত হয়।
‘মেঘলা। তোমার সাথে কিছু কথা ছিল।’
রোদেলা রুম থেকে চলে যেতে চাচ্ছিল তখন রিফাত বলে,
‘তেমন জরুরি কিছু না। আসলে মেঘলা তো চট্টগ্রাম মেডিকেলে পড়ে এমনিতেই অনেকদিন ক্লাস মিস হয়েছে। এখন ওর একটু রেস্ট প্রয়োজন। ভাবছি পরের সপ্তাহে ওকে চট্টগ্রামে নিয়ে যাবো। আমি ওখানে একটা ফ্ল্যাট ভাড়া করে নিয়েছি। মেঘলা ডাক্তারি পড়াশোনা যতদিন পূরণ না হয় ততদিন ওখানেই থাকবে।’

মেঘলা মাথায় হাত দিয়ে বলে,
‘আমার জন্য ফ্ল্যাট কেন কিনতে গেলেন? আমি তো হোস্টেলেই ভালো ছিলাম।’
‘হোস্টেলে গিয়ে তো আমি আর থাকতে পারব না। ফ্ল্যাটে হলে সপ্তাহে একদিন হলেও গিয়ে থাকতে পারব।’
রোদেলা মেঘলাকে বলে,

‘দেখেছিস তোর স্বামী তোকে কত ভালোবাসে।’
মেঘলা মাথা নামিয়ে নেয়। রিফাত বলে,
‘আরো একটা কথা। আমাদের প্রথম বিয়ে যেমন তেমন ভাবে হয়েছে। তাই চারদিন পর আমরা সত্যিকারের বিয়ে করব। রোদেলা তুমি তো এখানে মেঘলার একমাত্র আত্মীয় তাই তোমাকে সব কাজ করতে হবে। আর পারলে তোমার আব্বু আম্মুকেও আসতে বলিও।’

মুন্নি রিয়্যালিটি শো এর মূল মঞ্চে অংশগ্রহণ করেছে। যেখানে সে এখনো অব্দি টিকে আছে। আরিয়ানও টিকে আছে। এখন তারা অনেক দূর এগিয়ে গেছে। খুব শীঘ্রই প্রতিযোগিতার ফাইনাল হবে। যখন একজনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হবে।
এই ক’দিনে বেশ ভালো বন্ধুত্ব হয়েছে মুন্নি ও আরিয়ানের। মুন্নি আরিয়ানকে প্রায় সব কথাই শেয়ার করে। আরমানের প্রতি তার ফিলিংস এর কথাও শেয়ার করেছে। তবে আরিয়ানের কেন জানিনা মুন্নির মুখে আরমানের কথা শুনে একটুও ভালো লাগে না। এর কারণ সে বুঝতে পারে না। আজকেও তার ব্যতিক্রম নয়। রিয়্যালিটি শো অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর মুন্নি আরিয়ানকে বলে,

‘আজকে আরমানকে খুব সুন্দর লাগছিল তাই না? কত সুন্দর জাজের আসনে বসে ছিলেন। উফ আজ আবার নতুন করে ক্রাশ খেলাম।’
আরিয়ানের ভালো লাগছিল না জন্য সে প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে বলে,
‘মেঘ,,,মানে তোমার ভাবি এখন কেমন আছে?’
‘ভাইয়ার কাছে শুনলাম ভাবির জ্ঞান ফিরেছে। ভাবছি কাল একবার দেখা করে আসব।’
‘কোমা থেকে সেরে উঠেছে ভালো খবর তো।’

‘আরো একটা ভালো খবর আছে। চারদিন পর ভাইয়া আর ভাবির বিয়ে। আগের বিয়েটা তো রোদেলা হিসেবে করেছে এবার মেঘলা হিসেবে বিয়ে করবে। আমার বন্ধু হিসেবে আমি তোমাকে বিয়ের দাওয়াত দিলাম। তুমি কিন্তু অবশ্যই আসবা।’
আরিয়ানের মেঘলার বিয়ের খবরটা শুনে একটু মন খারাপ হয়। যাই হোক না কেন, মেঘলা তো তার প্রথম ভালো লাগা। আরিয়ানকে ঘোরের মধ্যে দেখে মুন্নি বলে,

‘কি যাবে তো?’
‘না আসলে সেদিন আমার জরুরি কাজ আছে। বাইরে যেতে হবে।’
মুন্নি বিরক্তিতে মুখ দিয়ে ‘চ’ জাতীয় শব্দ উচ্চারণ করে। এমন সময় আরমান খানকে দেখতে পায় মুন্নি৷ তাকে দেখেই তার দিকে ছুটে যায়। আরিয়ান বেশ জেলাস হয় ব্যাপারটা নিয়ে। নিজেকেই নিজে বলে,
‘এই মেয়েটাও না সারাদিন শুধু আরমান, আরমান আর আরমান। কিন্তু আমার এত খারাপ লাগে কেন ওকে আরমানের সাথে দেখলে?’

মুন্নি আরমানের কাছে যায়। আরমান মুন্নিকে দেখে মৃদু হাসে।
‘তুমি তো অনেক ভালো গান গাও মুন্নি। তোমার গানই এখানকার প্রতিযোগীদের মধ্যে আমার সবথেকে ভালো লাগে। গাইতে থাকো অনেক ভালো কিছু করতে পারবা।’
আরমানের মুখে নিজের প্রশংসা শুনে মুন্নি খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়। নিজের অনুভূতি লুকিয়ে রাখতে না পেরে বলে দেয়,
‘জানেন আমি না আপনাকে অনেক পছন্দ করি।’
আরমান হাসি প্রসস্থ করে,

‘জানি তো। অনেক মেয়েই আমাকে পছন্দ করে। আমার কাছে প্রতিদিন এই নিয়ে কত মেইল আসে।’
‘আমি আসলে আপনাকে ভালোবাসি।’
আরমান এবার বেশ জোরে শব্দ করে হাসে।
‘তুমি এখনো অনেক ছোট। ভালোবাসার কি বোঝ?’

হারিয়েছি নাম পরিচয় পর্ব ২১

‘আমি কোথায় ছোট? অনার্স ফাস্ট ইয়ারে পড়ি। ১৯ বছর বয়স আমার।’
আরমান কিছু না বলে বাকা হেসে চলে যায়। মুন্নি আরমানের কথাই ভাবতে দেখে। দূরে দাড়িয়ে আরিয়ান এসব দেখছিল আর জেলাস হচ্ছিল।

হারিয়েছি নাম পরিচয় পর্ব ২৩

1 COMMENT

Comments are closed.