মন পাথরে হঠাৎ ঝড় সিজন ২ পর্ব ২৬
Tahrim Muntahana
গভীর রাত হলেও বোঝার উপায় নেই। চৌধুরী বাড়ি গমগম করছে খুশিতে। হৃদানকে এখনো কেউ কিছুই জিজ্ঞাসা করে নি। আদরের জ্ঞান ফিরে এসেছে অনেকক্ষণ হলো। সেই যে হৃদান কে জাপটে ধরে বসে আছে ছাড়ার কোনো নাম ই নেই। প্রচন্ড বিরক্ত হৃদযা-সুবাহ। জামাই কি তাদের নেই।
এদিকে নিজেরা যে প্রশ্নের সাগরে সাঁতার কাটছে সেদিকে কোনো খেয়াল ই নেই। হৃদান একটু পর পর আতইয়াবের দিকে তাকাচ্ছে আর হাসছে। আতইয়াব আদরের খুশী দেখে শান্তি পেলেও হৃদানের অসভ্যতায় রাগ হচ্ছে তার। হৃদান আদর কে জড়িয়ে ধরেই হৃদযা ওদের সাথে কথা বলছে। আতইয়াব কিছু একটা ভেবে বাঁকা হাসলো। হুট করে হৃদযা কে কোলে নিয়ে হাঁটা ধরলো। হকচকিয়ে গেল হৃদান রা। আতইয়াব দরজা দিয়ে বেরোনের আগে খানিক টা জোরেই বলল,
আমার বউকে এখন লাগবে। বড্ড বেশী প্রেম প্রেম পাচ্ছে। দুই ঘন্টার মধ্যে কেউ ডিস্টার্ভ করবে না। একদম গরুর ইনজেকশন ঢুকিয়ে দিবো শরীরে।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
আর এক মুহূর্ত সময় ও ব্যয় করলো না। হৃদযা চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে আছে সেদিকে তার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। মনোযোগ দিয়ে হাঁটছে সে। হৃদান কটমট চোখে দরজার দিক তাকিয়ে রইলো। এসব মৃহান হ্যাবলার মতো তাকিয়ে দেখছিলো। ছি ছি কি লজ্জা কি লজ্জা। সে যে এখানে বয়োজ্যেষ্ঠ ভুলেই গেছে নির্লজ্জ রা। চরম হতাশ সে। হতাশা নিয়ে নিজেও সুবাহ কে কোলে তুলে নিলো। হৃদানের চোখ কপালে। মৃহান দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো,
তোরা কি প্রমাণ করতে চাস পালোয়ান হয়ে গেছিস। নির্লজ্জের মতো একজন বউকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে। আরেকজন বউকে কোলে নিয়ে চলে গেল। এখন আমি যদি বউকে কোলে না নিই বউ আমার পুরুষত্বে আঙুল তুলতে পারে। বেঁচে থাকতে এটা হতে দেওয়া যায় না। খবরদার আমার বোনের সাথে যদি উল্টাপাল্টা কিছু করছিস। আগে চাচা হবি তারপর বাবা। নাহলে এমন ব্যবস্থা করবো এক মাসেও বউয়ের দেখা পাবি না!
হনহন করে চলে গেল মৃহান। হৃদান তাজ্জব হয়ে তাকিয়ে রইল সেদিকে। মুহূর্তেই রেগে বোম হয়ে যায়। সাহস কতবড় তার ভাইয়ের! বলে কিনা একমাসেও বউয়ের দেখা পাবোনা। দাঁড়া তোর ব্যবস্থা আমি করছি। কথাগুলো বিড়বিড় করে আদরের দিকে তাকালো হৃদান। এখনো চুপটি করে মেয়েটা বুকের সাথে লেপ্টে আছে। স্বাভাবিক করতে হবে ভেবে আরেকটু মিশিয়ে নিলো নিজের সাথে। ঈষৎ কেঁপে উঠলো আদর। হৃদান ভাবালেশ বলে উঠলো,
এখনি এত কাঁপাকাঁপি করছো কেন? বাবা ডাক আদোও শুনতে পারবো তো? বিয়ে করেছি কয়মাস হলো অথচ বাসর করতে পারিনি। এই দুঃখে বনবাসে চলে যেতে ইচ্ছে করছে আমার। এ মুখ লোক সমাজে দেখাবো কি করে। সবাই ভাববে দোষ টা হয়তো হৃদান চৌধুরীর। কি জ্বালা! কি জ্বালা!
হৃদানের কথায় কিছুটা কাজ হলো। লজ্জা কুঁকড়ে গেল আদর। হৃদানের বুকে মুখ গুঁজে দিয়ে বসে রইলো। হঠাৎ করেই আদরের শরীর কাঁপতে দেখে হৃদানের বুঝতে বাকি রইলো না আদর কাঁদছে। হৃদানের মুখটাও মলিন হয়ে যায়। আদরের একেকটা কাঁপুনি যে তার অনুতাপকে আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। আদর ফিসফিসিয়ে বলে উঠে,
আমাকে ছেড়ে যাবেন না হৃদ। আমি মরে যাবো। আপনি বার বার আমার কল্পনায় এসে চলে যান।
কি আশ্চর্য এই মেয়ে তাকে ভূত মনে করছে না তো? হৃদান উপায় না পেয়ে আদরের কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে উঠলো,
আমি সত্যি সত্যিই ফিরে এসেছি আদর। আজ একটু ভালোবাসি না? দুজনের অস্তিত্বের আরেকটু জোরালো মিলন হোক। রাতটা ভালোবাসার সাক্ষী হয়ে থাকুক না।
আদর কিছু বলে না শুধু নিবিড় ভাবে আকড়ে ধরে। হৃদান বুঝে যায়। মুখ ডুবিয়ে দেয় গলায়। নিঃশ্বাস ভারি হতে থাকে দুজনের। মনের সাথে দুটো শরীরের মিলনের সাক্ষী হয়ে থাকে বদ্ধ ঘর। রাত বাড়ার সাথে সাথে বদ্ধ ঘরের নিঃশ্বাসের শব্দও ভারী হতে থাকে। পবিত্র সম্পর্কে বাঁধা পড়ে ভালোবাসার সুধা পান করতে থাকে দুজন। ডুবে যায় ভালোবাসার গভীরতায়।
ভোর পাঁচটা বেজে পনেরো মিনিট। পিটপিট করে চোখ খুলে আদর। নিজেকে কারো বুকে আবদ্ধ দেখে ব্যাথার মাঝেও এক চিলতে হাসি ফুটে। হালকা নড়েচড়ে উঠতেই হৃদান আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তাকে। আদর লজ্জায় চুপটি করে পড়ে থাকে হৃদানের বুকে। ইশ লোকটাকে মুখ দেখাবে কি করে! হৃদান খানিকটা শব্দ করে হাসে। ফিসফিস করে বলে উঠে,
আজকের রাত টা আমার জীবনে শ্রেষ্ঠ রাত মনের রাজরানী। নির্ঘুম রাত ও যে এতটা সুখ দিতে পারে জানতাম না। আমার জীবনে শুভ্র ফুল হয়ে আসার জন্য এক বুক ভালোবাসা।
আদর মায়া মায়া চোখে হৃদানের দিকে তাকায়। হৃদানের ঠোঁটে বিরাজমান তৃপ্তির হাসি। আদর কিছু বলে না। শুধু তাকিয়ে থাকে। অপলক!
কিছু সময় এভাবেই অতিবাহিত হয়। ঘড়ির কাটা সাড়ে পাঁচটায় যেতেই আদর কে কোলে তুলে নিয়ে হাঁটা ধরে ওয়াশরুমের দিকে। আদর শুধু লাজুক হাসে। গোসল সেরে দুজনই আল্লাহ’র দরবারে হাজিরা দেয়। চোখের পানি ফেলে শুকরিয়া আদায় করে। হৃদানকে ঘুমে ঢুলতে দেখে আদর তাকে ঘুমাতে বলে নিচে যাওয়া ধরতেই হৃদান আটকে দেয়। আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে ঘুমের দেশে তলিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর আদর ও ঘুমিয়ে পড়ে। কতদিন পর আজ শান্তির ঘুম দিচ্ছে সে!
বেলকনিতে বসে আছে আতইয়াব-হৃদযা। দুজনই চুপচাপ সূর্যের আগমনী সময় টা উপভোগ করছে। অনেক দিন পর অনেকটা সময় দুজনে গল্প করেছে। নামাজ পড়েই বেলকনিতে টেনে নিয়ে এসেছে হৃদযাকে। প্রথমে খানিকটা রেগে গেলেও আতইয়াবের হাসি খুশি মুখ দেখে নিজেও মন দেয় ভোরের সৌন্দর্য দেখায়। হৃদযার একহাত শক্ত করে ধরে আছে আতইয়াব। নিরবতা ভেঙে হৃদযা বলে উঠে,
দুঃখের প্রহর গুলো রাতের আঁধারেই বিদায় দিয়েছি বলো?
প্রেয়সীর কথায় আতইয়াব মিষ্টি করে হাসলো। এক হাতে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো,
উমম হামম আজকের দিন টা একটু কষ্ট করো সোনা। কালকের ভোর হবে অন্যরকম। সুখের এক রাজ্য ফিরে পাবো আমরা।
হৃদযা জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে তাকায়। বিনিময়ে আতইয়াব মুচকি হাসে। হৃদযার হাত ধরে ঘরের বাইরে চলে যায়। অনেকটা সময় হয়ে গেছে। সকাল হতে না হতেই আবার সমাগম শুরু হবে। নিজেদের মতো গুছিয়ে নিতে হবে তো!
অন্যদিকে মৃহান কে সমানে ঠেলে চলছে সুবাহ। উঠার নাম নেই তার। সূবাহ’র রাগে শরীর মৃদু কাঁপছে। এই লোকের জন্য তাকে এত সকালে গোসল করতে হবে! শেষমেষ না পেরে জোরে ধাক্কা দিয়ে উঠে দাঁড়ালো সে। মৃহান গিয়ে পড়লো ফ্লোরে।
ঘুমের মধ্যেই আচমকা এমন হওয়ায় ঘাবড়ে যায় মৃহান। চিৎকার করে উঠে জোরে। ততক্ষণে সুবাহ ওয়াশরুমে গিয়ে নিজের কাজে ব্যস্ত। আতইয়াব-হৃদযা সেদিক দিয়েই যাচ্ছিলো। চিৎকার শুনে তড়িঘড়ি করে এসে দরজা ধাক্কাতে লাগে। মৃহানের মাথায় হাত চলে যায়। হৃদযা বলেই যাচ্ছে বারবার ‘কি হয়েছে ভাইয়া’। এখন তো আর বলা যায় না বউ কে আদর করার অপরাধে বউ ধাক্কা দিয়ে বিছানার বাইরে ফেলে দিয়েছে! মান-ইজ্জত সব ধুলোয় গড়াগড়ি খাবে। কোনোরকম উঠে দাঁড়িয়ে কেশে গলা ঝেড়ে বলে উঠে,
কিছুই হয়নি। আমার ঘরে এক শাকচুন্নী থাকে তো। তার ভয়েই অতিষ্ট হয়ে গেছি।
ব্যাপার টা বুঝতে পেরে আতইয়াব-হৃদযা হেসে কেটে পড়ে। সুবাহ কেবল ই ওয়াশরুম থেকে বের হয়েছে। মৃহানের কানে যেতেই চোখ গরম করে তাকালো সে। চোখ দিয়েই যেন গিলে খাবে। মৃহান শুকনো ঢোক গিলে ওয়াশরুমে দৌড় দেয় এই বয়সে বউয়ের হাতে মাইর খেলে সম্মান থাকবে না।
বিড়বিড় করে মৃহানের গোষ্ঠী উদ্ধার করে নিচে যায় সুবাহ। অনেকগুলো মানুষের ব্রেকফাস্ট বানাতে হবে। রান্না ঘরে যেতেই আতইয়াব-হৃদযা কে দেখে অবাক হয়। হৃদযা চা বসিয়ে ময়দা মাখাচ্ছে, আতইয়াব বসে আছে। সুবাহ কে দেখে আতইয়াব রান্না ঘর থেকে চলে আসে। হৃদযা কে টুকিটাকি কাজ করতে বারণ করে নি সে। কয়েকদিন যাক তখন না হয় বসে বসে কাটাবে নাহলে নিজের মধ্যেই বোর হয়ে যাবে মেয়েটি। এখন টুকিটাকি কাজ করলে তেমন কিছুই হবে না। বাড়ির সবাই আতইয়াবের কথা মেনে নিয়েছে। ডক্টর স্বামী তো ভুল কিছু বলেনি!
আদর নিজেও ফ্রেস হয়ে নিচে নেমে আসে। ঠোঁটের কোণে সুক্ষ্ম হাসি, মুগশ্রীতে আলাদা এক দ্যোতি দেখা যাচ্ছে। বোন কে এভাবে দেখে আতইয়াবের বুকে প্রশান্তি বয়ে যায়। আদর গিয়ে ভাইকে জড়িয়ে ধরে। একেএকে সবাই নিচে নেমে আসে। হৃদান এসেই আতইয়াবের অপজিটে বসে পড়ে। মুখ বেঁকিয়ে সাফিনের সাথে কথা বলায় মন দেয়। আতইয়াব জাস্ট ইগনোর করে রাফিনের সাথে কথা বলতে থাকে। আর সবাই এদের দুজনের ভঙ্গিমা দেখে মিটিমিটি হাসতে থাকে। হৃদযা চা এনে সবাই কে দিতেই হৃদান আতইয়াব কে ঠেস দিয়ে বলে উঠে,
আমার বোন কে দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। সার্ভেন্ট রাখার মুরোদ নেই নাকি?
সবাই হাসি মুখেই দুজন কে পর্যবেক্ষণ করে। হৃদান আদর কে উদ্দশ্যে করে বলে উঠে,
আমার জন্য নিজের হাতে কফি বানিয়ে নিয়ে এসো।
আদর উঠতে চাইলেও আতইয়াব উঠতে দিলো না। কটমট করে বলে উঠলো,
আমার বোন অসুস্থ। রান্না ঘরে যাবে না। এত মুরোদ সার্ভেন্ট নিয়ে আসুক।
নিজের কথায় নিজে ফেঁসে গিয়ে হৃদান আমতা আমতা করতে লাগলো। তা দেখে আদর মুচকি মুচকি হাসছে। হৃদান হৃদযা কে ডেকে বলে উঠে,
হৃদু কফি দাও
খবরদার আমার বউকে ফরমায়েশ করবেন না। বউ আমার এত হাঁটাচলা করতে পারবে না।
এবার সরাসরি চোখ রাঙিয়ে তাকায় হৃদান। আতইয়াব গা জ্বালানো হাসি দিয়ে কফিতে চুমুক দিতে নিবে, কেড়ে নেয় হৃদযা। আতইয়াব থতমত খেয়ে যায় বউয়ের অগ্নিরূপ দেখে। কি জ্বালা; বউ বরের সাপোর্ট না নিয়ে ভাইয়ের সাপোর্ট নিচ্ছে। হৃদযা ভাইকে যত্ন নিয়ে কফি বানিয়ে দেয়।
ভাইয়ের অপমান কিছুতেই মেনে নিবে না আদর। এরা দুই ভাই-বোন কি পেয়েছে তার ভাইকে। হৃদান সবে মাত্র কফিতে এক চুমুক দিয়েছে আদর ও কেড়ে নেয় কাপটা। শব্দ করে হেসে উঠে আতইয়াব। এবার বুঝ। হৃদান অসহায় চোখে আদরের দিকে তাকায়। এভাবে বউ তার সম্মান আকাশে উড়িয়ে দিলো? আদর সোফায় আয়েশ করে বসে হৃদানের জন্য আনা কফিতে চুমুক দেয়। হৃদান দুষ্টু হেসে বলে উঠে,
বললেই হতো তুমি আমার খাওয়া কফি টা খেতে চাও। আমি খুশি মনে দিয়ে দিতাম। এভাবে কেড়ে নিতে হবে কেন? আমার সবই তো তোমার।
চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে আদর। নাবিল চৌধুরী বিষম খেয়ে যায়। রাজীব আহমেদ হৃদানের দিকে খাইয়া ফালামু লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে। আদর না পেরে ছুটে চলে যায় রান্না ঘরে। হৃদযাও মানে মানে কেটে পড়ে। সেও আতইয়াবের কফিটাই খাচ্ছিলো। অন্যদিকে যার জন্য এমন পরিবেশ সৃষ্টি সে ভাবালেশ ফোন টিপে যাচ্ছে যেন কিছুই হয়নি। সাফিন-রামিয়া ওরা বহু কষ্টে হাসি থামিয়ে রেখেছে। রামিয়ার হাসির শব্দে নিজেরাও হো হো করে হেসে উঠে। ওদের হাসিতে হৃদানের ঠোঁটের কোণেও হাসি ফুটে। আর দুঃখ পেতে দিবে না কাউকে। অনেকটা দিন এমন ভাবে হাসে নি কেউ!
চৌধুরী বাড়ির বাগানে মানুষের আনাগোনা। রিপোর্টার রা এসেছে কিছুক্ষণ হলো। সার্ভেন্ট রা তাদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা করছে। পান্চু বাহাদুর সব কিছু সামাল দিচ্ছে। নিজের মধ্যেই হৃদান গুছিয়ে নিচ্ছে সবকিছু। চৌধুরী পরিবারের কেউ ই জানে না কিছু। তারাও অপেক্ষা করছে সময়ের। হৃদান সবাই কে নিয়ে বাগানে যায়। কারোর প্রশ্ন করতে হয় না। হৃদান নিজেই বলতে শুরু করে,
সেদিন এক্সিডেন্টের পর আমাকে নদী থেকে উদ্ধার করে আমার বন্ধু পিয়াস। আগে থেকেই আমরা বুঝতে পেরেছিলাম যখন তখন হামলা হতে পারে তাই এ ব্যবস্তা। চিকিৎসার প্রায় এক সপ্তাহ পর আমার জ্ঞান ফিরে। প্রপার সুস্থ হতে সময় লেগে যায় দেড় মাস। ততদিনে পিয়াস খোঁজ খবর শুরু করে। আমি শত্রু পক্ষকে বোঝাতে চেয়েছিলাম তাদের উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। তাই হয়েছে; তারা এতটা খুশি হয়েছিলো যে তাদের অস্তিত্বই ভুলে গিয়েছিলো। আমি তাদের খুঁজে বের করতে সক্ষম হয়েছি। কালকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করবো।
কথাগুলো বলে রহস্য গুলো খোলাসা করে বলে সবাই কে। রাজীব আহমেদ নির্দোষ, রাতাফ আহমেদ বেঁচে আছে সব ই সবার সামনে তুলে ধরে। দেড় ঘন্টার মতো একের পর এক প্রশ্নের উত্তর দিয়ে ভেতরে চলে আসে সে। প্রথম দিকে সে কিছুটা লুকিয়েছে। না হলে আবার তার বউ কে পুলিশে নিয়ে যাবে। রিপোর্টার রা চলে যেতেই আদর চেপে ধরে হৃদান কে। হৃদান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
আমি আগেই জানতাম আয়েশা দোষী কিন্তু সে একা এতসব করতে পারতো না। তাই সামনে না এসে সবাই কে খোঁজার চেষ্টা করেছি। আমার কাজ কে পিয়ানি সহজ করে দিলো। আদর তুলে নিয়ে আসলো পিয়ানির বাবাকে। জানতে পারলাম সেও দোষী। সাথে জানতে পারলাম আরমান আয়েশার স্বামী সেও এসবের সাথে যুক্ত। আমি চলে যায় সিঙ্গাপুর। গিয়ে আরমান কে পাইনা। ভেবেছিলাম লুকিয়ে আছে। পরে পিয়াস খবর দেয় আদর তুলে নিয়েছে তাকে। আমি খুঁজা শুরু করি রাতাফ বাবাকে। অনেক খুঁজেও পাইনি। তাই ফিরে এলাম। এসেই শো তে চলে গেছি। ভেবেছিলাম একেবারে বাবা কে নিয়ে সামনে আসবো তার আগেই আদর চিনে ফেললো। এখন আমাদের আরমানকে ধরতে হবে। ওই বলতে পারবে বাবা কোথায়!
আদর আর এক মুহূর্তও দেরী করে না। সবাই কে নিয়ে চলে যায় নিজের গোপন ডেরায়। আজই এসব আবর্জনা ছেটে ফেলবে। কাল নতুন ভোরের সূচনা হাসি মুখেই করতে চায়!
বেশী সময় লাগেনি গন্তব্যে পৌঁছাতে। আদরের চোখমুখে আকুলতা। বাবা কে ফিরে পাওয়ার আকুলতা। রামিয়া তো বাবা কে কখনো দেখেনি তাই তার একটু কম ই পুড়ছে। ভেতরে ঢুকেই লাইট জ্বালিয়ে দেওয়া হলো। এতো ভূমিকা করার সময় নেই।
আয়েশা নিজের পাশে আরমান কে দেখেই চমকে উঠেছে। কতদিনের সংসার। একসাথে থাকতে থাকতে ভালোবাসাও জন্মে গেছে। কিন্তু আরমান অজ্ঞান তাই হয়তো পরিস্থিতি সম্পর্কে তার কোনো ধারণা নেই। পান্চু আদরের ইশারায় আরমানের জ্ঞান ফেরাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। রাজীব আহমেদ কে ধরে রেখেছে সাফিন। দেখে মনে হচ্ছে একবার ছাড়া পেলে দুটোকে খুন করে বসবে। তা তো হতে দেওয়া যায় না। আগে জানতে হবে সবকিছু!
প্লে বয়দের ও মনে প্রেম আসে! রাবেয়া কে না দেখলে বুঝতাম ই না। প্রথমে বুঝতে না পারলেও পরে ঠিক ই বুঝেছিলাম। কিন্তু সবকিছু প্রকাশ করার আগেই রাবেয়া আত্মহত্যা করে বসলো। মাথা ঠিক ছিলো না। কি করতাম? কিছুদিন শান্ত হয়ে বসলেও তোদের এত এত সুখ দেখে মাথা বিগড়ে যেতো। আয়েশাও প্রিয় বোনকে হারিয়ে পাগল প্রায়। বিয়ে করি দুজন। ভরসা হই; কিন্তু মনের মধ্যে প্রতিশোধ যে বসে গিয়েছিলো। প্ল্যান মতোই সব করেছি। সফল হয়েছি। কিন্তু আফসোস সবশেষেও তোরা জিতে গেলি।
আরমানের কথায় রাজীব আহমেদ থরথর করে কেঁপে উঠে রাগে। সাফিন কোনোরকম সামলে রেখেছে তাকে। আদর তেমন কিছু বলে না। ছোট্ট করে একটা প্রশ্ন করে,
আমার বাবা কোথায়?
আরমান কুলুপ এঁটে বসে থাকে। হৃদান চেয়ারে পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে। বাহাদুর কে ইশারা দিতেই হিয়া কে আনা হয়। আতকে উঠে আরমান। মেয়ে অন্ত প্রাণ! বুঝার বাকি থাকে না আটঘাট বেঁধেই নেমেছে এরা। আয়েশা বেগম মিনমিন কন্ঠে বলে,
আহমেদ বাড়ির গেস্ট রুমের মধ্যে ছোট্ট একটা ঘর আছে সেখানে।
কথাটা বলার সাথে সাথেই আদর হিয়াকে থাপড়াতে থাকে। হৃদান কিছু বলে না। প্রেয়সী তার জেলাস! আরমান মেয়ের কষ্টে ছটফট করতে থাকে। তৃপ্তির হাসি হাসে সবাই। রাজীব আহমেদ আয়েশা কে পরপর ছয়টা থাপ্পড় দিয়ে শান্ত হয়। অনেক বছরের খায়েশ তবুও আশ মিটিয়ে হচ্ছে না। পরিবেশ একটু বেশীই গুমোট।
হৃদান তা দেখে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বলে উঠে,
মন পাথরে হঠাৎ ঝড় সিজন ২ পর্ব ২৫
আয় হাই বড়শশুড়। বউকে মারছেন কষ্ট হচ্ছে না? নকল হোক, বউ তো! এতদিন তাও মিঙ্গেল ছিলেন এখন তো সিঙ্গেল হয়ে গেলেন। আমার আপনার জন্য কষ্ট হচ্ছে।
ফিক করে হেসে উঠলো সবাই। রাজীব আহমেদ হৃদান কে মারার জন্য ধাওয়া করতেই দৌড়ে বেরিয়ে যায় সে। আবার ছুটতে থাকে গাড়ি করে আহমেদ বাড়ির উদ্দেশ্যে! কতবছর পর আপনজনের দেখা মিলবে!