মন পাথরে হঠাৎ ঝড় সিজন ২ শেষ পর্ব
Tahrim Muntahana
সুখ সবসময়ের সাথি নয় তেমনি দুঃখও সবসময়ের সাথি নয়। দুজনের উত্থান পতনই জীবনের বাঁক। চৌধুরী পরিবার এতদিন দুঃখের সাগরে ভাসছিলো। এখন দুঃখকে অতিক্রম করে সুখের দেখা পেয়েছে। কাজ, আড্ডা, হাসিমজা করেই একটা সপ্তাহ পাড় করে দিলো। সবাই চৌধুরী বাড়িতেই অবস্থান করছে। রাজীব আহমেদ ভাই, ছেলে-বউমা, মেয়ে নিয়ে আহমেদ বাড়িতে চলে যেতে চেয়েও পারেনি।
নাবিল চৌধুরী নাওয়া খাওয়া বাদ দিয়েছিলো। তার কথা বুড়ো বয়সে কাজ নেই, তিন বুড়োর বউ নেই; সারাদিন আড্ডায় থাকবে। না পেরে সবার অনুরোধেই রাজীব আহমেদ রাজী হয়েছে। এতে অবশ্যই হৃদান-আতইয়াবের অবদান বেশী ছিলো। সাফিন-রাফিন সিডনি ফিরে যেতে চেয়েছিলো। চাকরী ফেলে এতদিন থাকলো; তাদেরও যাওয়া হয়নি।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
আদরের কোম্পানির দেখাশুনার কাছে লাগিয়ে দিয়েছে। সামনে আদরদের ফাইনাল পরীক্ষা; অফিসের কাজ সব সাফিন-রাফিন কে দিয়ে আদর পড়াশুনায় ব্যস্ত থাকে। কিন্তু আজ সকাল থেকে চৌধুরী বাড়ি থমথমে। রাজীব আহমেদ রেগে বোম হয়ে আছে। সকাল সকাল এতটা রেগে থাকার মানে শুধু হৃদান ই জানে। তাই সে ড্রয়িং রুমের ধারে কাছেও আসছে না।
বেয়া* দব ছেলে। আজ সব সীমা অতিক্রম করে ফেলছে।
এমন কথা নিম্নে দশ মিনিট থেকে বলে যাচ্ছে। সবাই তার চুপ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। একসময় রাজীব আহমেদের রাগ কমে এলে নাবিল চৌধুরী বলে,
কি হয়েছে এত রাগ করে আছো কেন?
তোমার বেয়াদব ছেলে কে ডাক দাও। ওর পিঠের চামড়া যদি আজ না তুলেছি।
এবার বিরক্তি সবাই। কি করেছে না বলে বকেই যাচ্ছে। রামিয়া বিরক্ত হয়ে বলে উঠে,
তুমি আগে বলবা তো জিজু কি করেছে?
কি করেছে মানে? আমার বিয়ে করার বয়স আছে? অসভ্য ছেলে বলে আমাকে নাকি বিয়ে করাবে।
রাজীব আহমেদের কথায় ফিক করে হেসে দেয় সবাই। বেশীক্ষণ সেই হাসি স্থায়ী হতে পারে না। রাজীব আহমেদের চোখ রাঙানি তে চুপ হয়ে যায়। আদর চোখ রাঙিয়ে পিলারের পেছনে লুকিয়ে থাকা হৃদানের দিকে তাকায়। হৃদান দাঁত কেলিয়ে হাসতেই আদর তেড়ে গিয়ে বলে উঠে,
আপনি দিন দিন লাগাম ছাড়া হয়ে যাচ্ছেন। আপনার শশুড় হয় আপনি ভুলে গেছেন।
হৃদান ভয় ভয় নিয়ে পিলারের পেছন থেকে বের হয়। বুকে ফু দিয়ে সাহস সঞ্চার করে। সবার দিকে একপলক তাকিয়ে বলে উঠে,
এর জন্যই বলে লোকের ভালো করতে নেই। সেখানে আমার বড়শশুড়ের মতো ত্যাড়া লোক থাকলে তো কথাই নেই।
রাগে কটমট করতে থাকে রাজীব আহমেদ। আর সবাই মুখে হাত চেপে হাসছে। হৃদান আবার বুঝানোর মতো করে বলে উঠে,
এতদিন তাও নকল বউ নিয়ে ছিলো। এখন বেচারা কে সিঙ্গেল দেখে আমার বুকটা খা খা করে। তাই ভাবলাম বুড়ো বয়সে একটা বুড়ি যোগাড় করে দিই। তোমার উচিত ছিলো আমাকে ধন্যবাদ দেওয়া তা না করে নাটক করছো।
রাজীব আহমেদের মনে হচ্ছে মাথা ফেটে আগুন বের হবে। হৃদান ব্যাপার টা বুঝতে পেরে আদরের পেছনে চলে গেল। আতইয়াব বাবার পাশে গিয়ে বসলো।কিছুটা নরম সুরে বলল,
বাবা বলছিলাম কি মি মডেল ঠিকই বলেছে। আমি উনার সাথে একমত।
এবার সবাই বিষ্ময়ে হতবাক। রাজীব আহমেদ তো ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। রাগ করবে না কি করবে সে ভেবে পাচ্ছে না। আতইয়াব আবার বলল,
পুষ্পিতা আন্টিকে মনে আছে? তোমার ফ্রেন্ড ছিলো। উনি তোমাকে ভালোবাসতো বাবা। তুমি অন্যকাউকে ভালোবাসতে দেখে আর বলার সাহস পায়নি। মা মারা যাওয়ার পর তোমার সাথে দেখা করার কথা ভেবেছিলো। মধ্যে আয়েশা চলে আসে। এখন পর্যন্ত অবিবাহিত আছেন বাবা। শুধু মাত্র তোমার জন্য। কত লাঞ্ছনা সহ্য করেছে, তোমাকে বলার অপেক্ষা রাখে না। তোমার উচিত শেষ সময়টুকুও তার পাশে থাকা। আমি জানি আমার বাবা জেনে বুঝে কাউকে কষ্ট দিবে না।
আতইয়াবের কথায় সবার মজার মুড চলে যায়। তারাও চায়ছে রাজীব আহমেদ রাজি হোক। রাজীব আহমেদ কিছু বলছে না, মাথা নিচু করে বসে আছে। সে তার স্ত্রী কে খুব ভালোবাসতো; আবার ফ্রেন্ডের ভালোবাসাও তাকে আপ্লুত করছে। আদর অবাক হয়ে বলে উঠে,
এটা কি আমাদের ভার্সিটির ম্যাম?
আতইয়াব মাথা নাড়ায়। আদর তো খুশিতে লাফ মেরে উঠে। দারুণ হবে তো। হৃদান রাজীব আহমেদের দিকে তাকিয়ে বলে,
আমার বাবা কে ভালোবেসে কেউ যদি অপেক্ষা করতো আমি বাবা কেউ বিয়ে করাতাম। যদিও আয়েশা আছে; তাও বিধবা। এখন তুমি যদি তোমার ই নকল বউকে বন্ধুর বউ হিসেবে দেখতে চাও আই ডোন্ট মাইন্ড! এখনি বিয়ের ব্যবস্থা করছি। বাকি রইলো আমার শশুড়। রাবেয়ার আত্মা কে খুঁজে পেলে বিয়ে দিয়ে দিবো। চিন্তা করার কোনো কারণ নেই আমি আছি তো!
হাসিতে ফেটে পড়ে সবাই। রাজীব আহমেদ উঠে নিজের ঘরে চলে যায়। এবার সবাই আতইয়াব-হৃদান কে চেপে ধরে। পুষ্পিতার সম্পর্কে জানলো কেমন করে সেটাই জানার বিষয়।
বড়আব্বুর থেকে সব শুনে আমি তার ফ্রেন্ডসার্কেল সবারই খুঁজ নিই। সেখান থেকেই জানতে পারি। দুই দিন আগে মি. ডক্টর কে জানাই। তার পর দুজন গিয়ে দুই ঘন্টা বুঝিয়ে রাজি করিয়েছি। জামাই আদর খেতে হলেও ত্যাড়া লোকটাকে বিয়ে করাবো। আর বাবা তোমার মেয়ের জামাই তো এখনি মা মা শুরু করেছে। ডং দেখলে বাঁচিনা।
কে যেন শাশুড়ি শাশুড়ি বলে পায়ে ধরলো; থাক সেসব আর বললাম না।
হৃদানের কথায় আতইয়াবে পাল্টা জবাব শুনে আবার সবাই হেসে উঠলো। রাজীব আহমেদ উপর থেকে সবই শুনছিলেন। ছেলে যেহেতু মা পেয়েছে তার অমতের কারণ নেই। শেষ বয়সে গুটি কয়েকজন কে ভালো রাখতে পারলেই শান্তি তে মরতে পারবে সে। তাই বলে এখনি তো বলা যায় না; অ* সভ্য ছেলে টা আবার ক্ষেপাবে। তাই নিজের ঘরে বসে রইলো।
এত হাসাহাসি শুনে একা বসে থাকা যায়? গম্ভীর মুখ করে নিচে নেমে এলো সে। আমতা আমতা করে কিছু বলবে তার আগেই আদর চিৎকার করে বলে উঠলো,
আধা টাকু পান্চু কাকু গাড়ি বের করো বড়আম্মুকে আনতে যাবো।
রাজীব আহমেদ চোখ ছোট ছোট করে তাকালেন। আদরের ভাবাবেগ হলো না। সে হৃদযা সুবাহ পিয়ানি কে নিয়ে ইতিমধ্যে দরজার কাছে চলে গেছে। হৃদান ভ্রু নাচাচ্ছে আর হাসছে। আর সবাই যে যার কাজে লেগে পড়লো। পাত্তায় দিলো না কেউ। রাজীব আহমেদ হা করে কিছু ক্ষণ দেখে ঘরে চলে গেল।
পাগল দের সাথে বাস করতে করতে সেও পাগল হয়ে গেছে।
তিনঘন্টার মধ্যে চৌধুরী বাড়ি খুব সুন্দর করে সাজানো হয়ে গেছে। মিস পুষ্পিতাকে অনেক আগেই এ বাড়িতে আনা হয়েছে। এখন তাকে সাজানো হচ্ছে। অন্যদিকে সাফিন-রাফিন একপ্রকার যুদ্ধ করছে রাজীব আহমেদের সাথে। সে কিছুতেই কালারফুল এসব শেরওয়ানি পড়বে না। তার মাথা তো আর খারাপ হয়নি। কিন্তু হৃদানের অর্ডার ; সাফিন রাফিন পড়িয়েই ছাড়বে। না পেরে রাজীব আহমেদ কে পড়তেই হলো। বেশ লজ্জা লাগছে তার।
হৃদান কাজিকে নিয়ে বসে আছে। নাবিল চৌধুরী আর রাতাফ আহমেদ বসে বসে শুধু দেখছে। বুড়োর মতিগতির ঠিক নেই; বেঁকে বসলে ঝামেলা তাই হৃদান এক মুহুর্ত সময় ব্যয় করেনি। শুভকাজ যত তাড়াতাড়ি করা যায়। আত্মীয় স্বজন বলতে সুবাহ’র বাপের বাড়ির লোক এসেছে। সবাই ইতিবাচক ধারণাই নিয়েছে তাই হাতে হাতে কাজ ও করছে। দুজন কে নিচে নামিয়ে একসাথে বসিয়ে দেওয়া হলো। আড়চোখে রাজীব আহমেদ একপলক দেখলেন। কতদিন পর প্রিয় বান্ধবী কে দেখছে! এমন সময় হৃদান বলে উঠলো,
দেখছো তোমরা? বিয়ে করবে না করবে না বলে শেরওয়ানি’ও পড়ে এসেছে আবার আড়চোখে বউ কে দেখাও হচ্ছে। একেই বলে বুড়ো বয়সে ভিমরতি। ছ্যাহ ছ্যাহ; মুখ দেখাবো কি করে? সবাই বলবে হৃদান চৌধুরীর শশুড় মেয়ে তুলে এনে বুড়ো বয়সে বিয়ে করছে। মান সম্মান একটুও অবশিষ্ট থাকলো না।
রাজীব আহমেদ মাথা নিচু করেই রইলো। এত মানুষের সামনে সে রাগারাগি করতে চায় না। কিন্তু আতইয়াব তো আছে। বাবার হয়ে সে ধমকে উঠলো,
দিন দিন ফালতু হয়ে যাচ্ছেন। এত কথা বলে কেমনে এই লোক। কাজ না থাকলে কি করবে; সারাদিন বউকে জ্বালাতন আর আড্ডা দিয়ে বেড়ানো।
হৃদান বেশ অপমানিত হলো। সে কাজ করে না? তার বদৌলতে বাবার বিয়ে দেখতে পাচ্ছে অথচ তাকেই গুনছে না। এ তো হতে দেওয়া যায় না। আতইয়াবের পাশে বসে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো,
বউকে জ্বালাতনের প্রমাণ তো দেখলাম। বাচ্চা বোন টাকে বাচ্চার মা বানিয়ে দিয়েছেন অথচ আপনার বোন কে দেখেন।
আতইয়াব মন চাইলো এই লোকটাকে ধরে কিছুক্ষণ পেটাতে পারলে। রাগ হলেও চুপ রইলো। কাজি বিয়ে পড়ানো শুরু করেছে। হৃদান এদিক ওদিক তাকিয়ে আদর কে না দেখে ভ্রু কুচকালো। এই মেয়ে আজ তাকে পাত্তায় দিচ্ছে না। এমন সময় আদর এলো হৃদযা কে নিয়ে। হা হয়ে গেল সে; মেয়েটা কি তাকে সত্যিই মেরে ফেলবে নাকি। হৃদযা কে দেখে আতইয়াব এগিয়ে এসে সোফায় বসিয়ে দিলো। কিছুক্ষণ উপর নিচ পরখ করে মৃদু হাসলো। দিন দিন এই মেয়ের প্রতিটা লুকে সে প্রেমে পড়ছে। হৃদান আদরের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো তবে কিছু বললো না। আদর ভ্রু কুঁচকে তাকেই দেখছে। কিছু টা ধীরে বলল,
কি হয়েছে? এমন মুখ করে আছেন কেন?
বউ যদি বর কে পাত্তা না দেয় সেক্ষেত্রে বরের কি করা উচিত? নাচবো?
আদর মুচকি হাসলো মধ্যের ফাঁকটাকে গুচিয়ে দিয়ে বলল,
আমার মন সবসময় আপনার কাছেই পড়ে থাকে।
হৃদান মিষ্টি করে হেসে আদর কে নিয়ে এগিয়ে যায়। ততক্ষণে বিয়ে পড়ানো শেষ: রেজিস্ট্রেশন বাকি। হৃদান ভাব নিয়ে বলে উঠে,
শশুড়ের বিয়ের প্রথম সাক্ষী আমি আর আমার বউ হবো। আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করলেই কোর্টে তুলবো।
আদর কিছু টা ইতস্তত করলেও হৃদানের জোরাজুরি তে সাইন করে দিলো। হৃদযাও বায়না ধরেছে সেও সাক্ষী দিবে। মেনে নিলো। এই প্রথম হয়তো বাবার বিয়েতে স্বয়ং ছেলে সাক্ষী হলো।
সন্ধ্যা সাতটা বাজে। কিছুক্ষণ হলো চৌধুরী পরিবার আদরের মায়ের কবর জিয়ারত করে এসেছে। কিছুটা ক্লান্ত থাকলেও বিয়ে বিয়ে আমেজে ক্লান্ত ভাবটা ধরা দিচ্ছে না। এর মধ্যে হৃদানের কাজে আদর প্রচন্ড বিরক্তি। এখন নাকি শশুড়ের বাসর সাজাবে। মানে যা তা একটা ব্যাপার। আদর মানতে নারাজ; তার তো বাবা হয়। কিন্তু হৃদান ও জেদ ধরে বসে আছে তাই আধা ঘন্টা ধরে আদর কে কোলে বসিয়ে মানানোর চেষ্টা করেও ক্ষান্ত হয়নি।
টপাটপ কয়েকটা চুমু খেয়ে নিয়েছে। তার ভাষ্যমতে বউয়ের চুমু রক্ত চলাচলে সাহায্য করে। চুমু ছাড়া থাকলেই রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে আর সে অক্কা নিবে। শেষমেষ বিরক্ত হয়ে আদর রাজী হতেই হৃদান কে আর পায় কে। এক ছুটে রাজীব আহমেদের ঘরে চলে গেছে। রাজীব আহমেদের ঘর সে তালা দিয়ে রেখেছিল; পান্চু কে ফোন করে আসতে বলতেই হাজির মৃহান-সাফিন-রাফিন। আতইয়াব পান্চুর থেকে কাহিনী শুনেই হসপিটাল চলে গেছে। বিয়ে পর্যন্ত ঠিক আছে তাই বলে বাসর! দৃষ্টিকটু লাগে ব্যাপার টা।
সময় পেরিয়ে নয়টার ঘরে যেতেই ডাক পড়লো ডিনারের জন্য। হৃদানদের সাজানো অনেক ক্ষণ শেষ হয়েছে। হৃদান তো অপেক্ষা করছে রাজীব আহমেদের ঘরে আসার সময়টার জন্য। সবাই একসাথে ডিনার করলেও সাফিন-রাফিন-পিয়ানি হাওয়া। কোথায় আছে কে জানে? তাই নিজেদের মতো খেয়ে যার যার ঘরে চলে গেছে। ভাইয়ের ইশারায় নিজের কাজ করে বুক ফুলিয়ে হাঁটছে হৃদযা।
যেন অসাধ্য সাধন করেছে। রাজীব আহমেদ কে ফেলেই হৃদান রা উপরে চলে গেছে। ব্যাপার টা না বুঝে রাজীব আহমেদ নিজেও ঘরে যাওয়ার জন্য হাঁটা ধরে। এবার একটু বিশ্রাম না নিলেই নয়। ঘুম ও পেয়েছে তার। কিন্তু নিজের ঘরের দরজায় হৃদান, হৃদযা, মৃহান, সুবাহ, সাফিন, রাফিন, পিয়ানি, পান্চু কে দেখে ঘুম ছুটে যায়। তার বুঝতে বাকি থাকে এদের দাঁড়ানোর মানে। প্রচন্ড বিরক্ত হয় সে। এর মধ্যেই হৃদযা চেঁচিয়ে বলে উঠে,
শশুড়ড়ড়ড় টাকা দাও পঞ্চাশ হাজার তারপর বউ পাবে।
চমকে উঠে রাজীব আহমেদ। মগের মুল্লুক পেয়েছে? পঞ্চাশ হাজার কম টাকা নাকি? কামাই করতে ঠেলা লেগেছে। কিছু বলবে তার আগেই হৃদান বলে উঠে,
তাড়াতাড়ি টাকা দাও। পাক্কা একঘন্টা সময় ব্যয় করে বাসর সাজিয়েছি। হৃদান চৌধুরীর সময়ের মূল্য অনেক। নাহলে এখনই ভাইরাল করে দিবো খবরটা।
ভ্রু কুঁচকে তাকায় রাজীব আহমেদ। এই ছেলেকে দিয়ে বিশ্বাস নেই। দেখা যাবে রসিয়ে রসিয়ে সত্য মিথ্যা এড করে নেটে ছেড়ে দিলো। মানসম্মান যতটুকু ছিলো ততটুকুও যাবে। অগত্যা নিজের ক্রেডিট কার্ড বের করে দিয়ে ঘরে ঢুকলো। হৃদানদের মুখের উপর দরজা অফ করে দিয়েই হাসলো সে। এতক্ষণে মনমতো একটা কাজ করতে পেরেছে। শশুড়ের এমন কাজে হৃদযা অবাক হয়ে বলে উঠে,
দেখছো শশুড়ের বাসর করার কত তাড়া?
হেসে উঠে সবাই। হৃদান কিটকিটিয়ে হেসে বলে উঠে,
দাঁড়া একটু পরেই তো আসল মজা!
চুপচাপ সবগুলো নিচে বসে পড়ে। রাজীব আহমেদ একপলক নববধূর দিকে তাকায়। কপালে ভাজ পড়ে তার। পুষ্পিতা এতো মোটা? এগিয়ে গিয়ে বিছানায় বসে। ঘোমটা টা খুলে দিতেই বাহাদুরের চাঁদবদন মুখটা বের হয়ে আসে। রাগে অগ্নিশর্মা রাজীব আহমেদ। পায়ের স্লিপার টা খুলেই বাহাদুর কে মারতে থাকে। বাহাদুর তো বাঁচার জন্য বিছানাতেই এদিক ওদিক করতে থাকে। একসময় মোটা দেহ টা খাট না নিতে ধপ করে ভেঙে যায়। বিষ্ময়ে কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে যায় রাজীব আহমেদ। এক ছুটে বেরিয়ে আসে বাহাদুর। হৃদান ব্যাপারটা বুঝতে পেরেই হো হো করে হেসে দেয়। চিৎকার করে বলে উঠে,
কে আছো দেখে যাও আমার বড়শশুড় বিয়ে করবে না বলে বলে বাসর ঘরের খাট ই ভেঙে ফেলেছে।
কথাটা বলতে দেরী রাজীব আহমেদ কে চোখ মেরে দৌড় দিতে দেরী হয়নি। রাজীব আহমেদ কিছুসময় চুপ করে বসে থেকে নিজেও হেসে দেয়। পাগল সব! পান্চু তৎক্ষণাৎ নতুন খাট এনে গোছগাছ করে দেয়। হৃদান আগেই ম্যানেজ করে রেখেছিলো। হৃদান নিজের ঘরে গিয়ে একদম হা হয়ে যায়। এত বড় একটা চমক পাবে বুঝতেও পারেনি। তার জন্যও বাসর সাজানো হয়েছে। দরজাতেই দাঁড়িয়ে থাকে সে। এমন সময় পেছন থেকে মৃহান বলে উঠে,
কেমন লাগলো সারপ্রাইজ? আঙ্কেলের মতো তুই ও আবার খাট ভাঙিস না সাবধান!
হৃদান ঘুরে মৃহানের গালে চুমু খায়। খুশিতে তার নাচতে ইচ্ছে করছে। উল্লাসের সহিত বলে উঠে,
এর জন্য আমার তরফ থেকে তোদের জন্য গিফট পাওনা রইলো। এখন দূর হো আগে বউকে দেখবো। ইশ কতটা রোগা লাগছে আমাকে। বউ কে না দেখলে এবার হাড্ডি বেরিয়ে যাবে!
ঘরে ঢুকেই দরজা বন্ধ করে বেলকনিতে ছুটে হৃদান। পায়ের শব্দে আদর নড়েচড়ে বেলকনির সোফায় বসে পড়ে। লজ্জা লাগছে এবার। আজ সে শুভ্র শাড়িতে নিজেকে সাজিয়েছে। যেটা হৃদান তাদের বিয়ের সময় কিনেছিলো। আদরের এমন আবেদনময়ী রূপ দেখে থমকে যায় হৃদান। টিপটিপ করে উঠে বুকের ভেতর। এতটা স্নিগ্ধ তার বউ না হলেও পারতো। একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে এগিয়ে যায় আদরের কাছে। ততক্ষণে আদর নিজেও লজ্জা কে ছুড়ে ফেলে হৃদান কে দেখছে। শরম পেলে গরম ভাত পাওয়া যায় না!
হৃদান ঘোরের মধ্যে চলে গেছে। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আদরকে। বুকটা যেন শিতলতায় ভরে যায়। দশমিনিট সময় এভাবেই অতিবাহিত হয়ে যায়। ব্যস্ত ভঙ্গিমায় কোলে তুলে নেয় আদর কে। নেশালো চোখ দুটোয় হারিয়ে গেছে আদর। সেও খুব করে চাইছে আজ মিশে যাক দুটো দেহ। ফুল দিয়ে সাজানো বিছানায় হৃদান তার ফুল কে শুয়িয়ে দেয়। গলায় মুখ গুঁজে দিয়ে কিছু টা শব্দ করে কেঁদে দেয় সে। চমকায় না আদর; তার ও চোখ ছলছল করে। না বললেও চোখের পানির কারণ সে ভালো করে জানে। তাই কিছু বলল না শুধু নিজ উদ্যোগে অধরে অধর মিশিয়ে দিলো। শুরু হলো ভালোবাসার প্রহরের সূচনা। মিশে গেল একে অপরের সাথে। দ্বিতীয় বারের মতো অনন্য সুখের রাজ্যে বিরাজ করতে লাগলো দুটো মানব-মানবি! চলতে থাকুক কিছু সময় ভালোবাসাবাসিতে!
ছাদে বসে আছে সাফিন। এত এত ভালোবাসার জুটি দেখে নিজেরও ইচ্ছে করছে কেউ তাকে ভালোবাসুক। একটু আগলে রাখুক, একটু বকুক, অতিরিক্ত ভালোবাসুক। যে ভালোবাসা তাকে অতিতের কষ্ট ভুলিয়ে দিবে। নতুন করে বাঁচতে শেখাবে। সিগারেট ফুঁকছিলো আর এসব ভাবছিলো। এমন সময় মেয়েলি কন্ঠ শুনে থেমে যায় সে,
মি. খান; মিসেস খান হওয়ার একটা সুযোগ দিবেন?
চমকে ঘুরে তাকায় সাফিন। পিয়ানি কে দেখে খুব একটা অবাক হয় না তবে কথাটা শুনে থমকে যায় সে। মেয়ে টা কি বললো? মিসেস খান হবে? জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই পিয়ানি মুচকি হাসলো। পা কাঁপছে তার। রিজেক্ট হওয়ার ভয়ে! হাস্যকর হলেও ব্যাপারটা তার সাথে ঘটছে। সামনেও এগোতে পারছে না। পাছে না সাফিন তার কাঁপাকাঁপি টের পেয়ে যায়। দাঁড়িয়ে থাকতেও পারছে না। মনে হচ্ছে পড়ে যাবে এখনি। এভাবে পড়ে গেলে মানসম্মান সব যাবে। অসহায় কন্ঠে বলে,
আমাকে একটু ধরবেন মি. খান? দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না।
সাফিনের হাসি পায়। সে পিয়ানির কাঁপুনি টের পেয়েছে আগেই। তবে বুঝতে দিলো না। পিয়ানির হাত ধরতেই পিয়ানি আরেক পা এগিয়ে সাফিনের বুকে মাথা গুঁজে দিলো। কিছু না বললেও সাফিন শকড হয়েছে। পিয়ানির চাহনি সে আগেই টের পেয়েছিলো। তবে কি তার মনেও মেয়েটার প্রতি অনুভূতি জন্ম নিয়েছে? নাহলে মেয়েটা বুকে থাকায় এতটা ভালো লাগছে কেন? এর মধ্যেই পিয়ানি নরম সুরে বলে উঠলো,
এই বুক থেকে আর সরছি না আমি; এটা আমার ওকে?
সাফিন ঘোরের মধ্যেই শুধু ওকে বললো। পিয়ানি চোখ বড়বড় তাকিয়ে চিৎকার করে দূরে সরে গেল। চোখ কচলিয়ে ভালো ভাবে দেখে উল্লাস নিয়ে বলে উঠে,
ওকে? সত্যি? আল্লাহ, খবরটা আগে দিয়ে আসি দাঁড়ান।
এক ছুটে নিচে চলে গেল সে। কি হলো ব্যাপার টা বুঝতেই পারলো না সাফিন। যতক্ষণে বুঝেছে ততক্ষণে পিয়ানি বাড়ির সবাইকে বলে দিয়েছে। সাফিন হেসে দিলো। সুখ সুখ ফিল হচ্ছে।
অন্যদিকে রামিয়া মুখ ফুলিয়ে বসে আছে। তার সামনে একের পর এক পড়া মার্ক করে যাচ্ছে রাফিন। সে শুধু এই লোকটাকে বলেছিলো সেও বিয়ে করবে। এর জন্য এত কষ্ট পোহাতে হবে কস্মিনকালেও টের পায় নি। সামনে এসএসসি পরীক্ষা রাফিনের মতে সে একটুও পড়তে বসে না। তাই আজ নিজ উদ্যোগে পড়াতে এসেছে। অধ্যায় মার্ক করা হতেই রাফিন রামিয়ার দিকে গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকালো। নড়েচড়ে উঠলো রামিয়া। অসহায় তার দৃষ্টি। উঠে দাঁড়ালো রাফিন। কিছুটা দম নিয়েই বলে উঠলো,
ফেইল করা ছাত্রী কে কখনোই মিসেস রাফিন খান বানাবো না! সো বিয়ে করতে হলেও পড়তে হবে।
আর দাঁড়ায় না। দরজা ঠেলে বাইরে চলে যায়। রামিয়ার চোখ একদম বড়বড় হয়ে যায়। লোকটা কি বললো? মিসেস রাফিন খান বানাবে না? তাকে পড়তে হবে? মানে লোকটা তাকে বিয়ে করবে যদি পাশ করে! আর বিয়ে করবে মানে ভালোবাসে!
খুশিতে নেচে উঠতে গিয়েও বই নিয়ে বসে রামিয়া। তাকে পড়তে হবে। পাশ করতে হবে। দরজার আড়াল থেকে রামিয়ার রিয়েকশন দেখছিলো রাফিন। সেও হেসে নিজের ঘরে চলে যায়। পিচ্চি একটা মেয়ের ভালোবাসা কতটা প্রখর! তাকেও ভালোবাসতে বাধ্য করলো!
হসপিটাল থেকে এসেছে আতইয়াব পাঁচমিনিট হলো। তবে সে ভেতরে যায়নি। বাইরে গাড়িতে অপেক্ষা করছে হৃদযার জন্য। মেয়েটা আজ বায়না ধরেছে লং ড্রাইভে যাবে। বাচ্চার মায়ের আবদার সে ফেলতে পারেনি। হৃদযা ঘর থেকে বের হচ্ছে এদিক ওদিক তাকিয়ে। কেউ দেখে ফেললে ক্ষেপাবে আবার। আস্তে আস্তে সিঁড়ি ভেঙে নিচে নেমেই জোরে শ্বাস ফেলল সে। যাক বাবা কেউ দেখেনি।
হৃদযা কে আসতে দেখেই আতইয়াব তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে আসে। ধরে সুন্দর করে বসিয়ে দিয়ে সিট বেল্ট লাগিয়ে দেয়। হৃদযার ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসি। আতইয়াবও হাসে। হৃদযা উল্লাস নিয়ে বলে উঠে,
জানো আমার শশুড় বাসর রাতে খাট ভেঙে ফেলেছে।
বিব্রত বোধ করে আতইয়াব। এরা তিন ভাই বোন ই পাগল। কোথায় কি বলতে হয় জানে না! ছেলের সামনে বাবার বাসরের কাহিনী বলছে। কেমনে পারে এরা? কথা টা ভেবেই অপ্রসন্ন কন্ঠে বলে উঠে,
হৃদু, কিসব বলছো? বাবা হয় আমার!
তো কি হইছে? আমার তো খুব ইন্টারেস্টিং লাগছে ব্যাপারটা। ধরো এখন তোমার একটা ভাই বা বোন আসলো। হাউ কিউট হবে?
আতইয়াবের মাথায় হাত। এ মেয়েকে সে কি করে বোঝাবে। একটা উপায় ই সে খুঁজে পেলো। তাই জোরে শ্বাস নিয়ে বলে উঠলো,
ইন্টারেস্টিং ব্যাপার টা আরো মজাদার হবে কখন জানো? একটা তো পেটে; বের হোক। বছরে বছরে ডাউনলোড করবো।
হৃদযা এবার চুপ হয়ে গেল। লোকটার লজ্জা নেই। আতইয়াব হাসলো। কাজে দিয়েছে তাহলে। ছুটে চলল গাড়ি। মৃদু বাতাস, নিস্তব্ধ প্রকৃতি উপভোগ করতে করতে দুজন প্রেমিকযুগল ভালোবাসায় হারিয়ে গেল।
সুবাহ’র পেছনে ঘুরঘুর করছে মৃহান। আজ সুবাহ তাকে পাত্তায় দিচ্ছে না। মৃহানের কথা ছোট ভাইয়ের বাসর সাজিয়ে এসেছে এখন তার ও বাসর করার শখ জেগেছে। সুবাহ চাচ্ছে রাতের বেলা কোথাও ঘুরতে যেতে। মৃহানের মনে তো অন্য কিছু চলছে। শেষমেষ অপারগ হয়ে মৃহান কিছুটা চেঁচিয়ে বলেই উঠলো,
আরে আমার ভাই আমাকে চাচা বানানোর আগে আমি ওকে চাচা বানাবো। বুঝতে পারছো না কেন তুমি?
সুবাহ এখন হেসে দিলো। লোকটা সত্যিই পাগল। সুবাহ’র হাসি দেখে মৃহান যেন সাহস পেল। এক ছুটে কোলে তুলে নিয়ে ডেবিল হাসি দিয়ে ভ্রু নাচালো। সুবাহ লজ্জা পেয়ে মৃহানের বুকে মুখ গুঁজলো।
মৃহান মুখ টিপে হেসে বলে উঠলো,
এবার তোমাকে কে বাঁচাবে রূপসী? আজ সারারাত তোমার আমার!
নতুন ভোরের আগমনের সাথে সাথেই চৌধুরী পরিবার নতুন ছন্দে জেগে উঠেছে। সবার মুখেই খুশির এক ছিটে হাসি। একে অপরের খুশির মাধ্যম হয়ে জড়িয়ে আছে জীবনের সাথে। মিসেস পুষ্পিতা অল্প সময়ের মধ্যেই সবার সাথে মিশে গেছে। রাজীব আহমেদ ও বেশ খুশি। কিন্তু তিনি মন খুলে হাসতে পারছে না। তার একমাত্র কারণ হৃদান। সামনে বসে জহুরির চোখ দিয়ে তাকে দেখছে। হাসলেই হয়তো কিছু একটা বলে লজ্জায় ফেলবে। কিন্তু হৃদান তো এক পিস ই! তার কাছে অনেক কারণ আছে শশুড় কে লজ্জায় ফেলার।
আদর, হৃদযা, সুবাহ, শাশুড়ি রেডি হয়ে নাও; হানিমুনে যাবো।
কেশে উঠলো রাজীব আহমেদ। মিসেস পুষ্পিতা রান্না ঘরে চলে গেছে। কাল ই সে টের পেয়েছে ছেলের ঠোঁট কাটা স্বভাব। মৃহান তো খুশিতে চার লাফ দিয়েছে। নাবিল চৌধুরী ছেলের কাজে বিরক্ত। এমন করার কোনো মানেই হয়না। একটু সময় ও লোকটাকে শান্তি তে থাকতে দিচ্ছে না।
অতিরিক্ত করছো হৃদান। তোমাদের ইচ্ছে হয় তোমরা যাও ওদের যাওয়ার বয়স আছে?
তোমার যদি হিংসে লাগে বলো বড়শশুড়ের নকল বউকে ধরে আনবো। তাও রাগ করো না; তোমার কষ্ট আমি বুঝি তো!
চুপ হয়ে গেলেন নাবিল চৌধুরী। এই মুহূর্তে হৃদান কে তার কষিয়ে এক থাপ্পড় দিতে ইচ্ছে করছে। পারবে না বলেই চুপ রইলো। রাজীব আহমেদ বেঁকে বসতেই হৃদান খানিক টা গম্ভীর মুখে বলল,
আমার হানিমুনের প্যাকেজ তুমি দিবে। নানু ডাক শোনানোর দায়িত্ব আমার। তোমার হানিমুনের প্যাকেজ আমি দিবো উমম উমম ঘুরার দায়িত্ব তোমার।
না করার আর রাস্তা খুঁজে পেলো না। সবাই হৃদান কেই সাপোর্ট করছে। কি আর করার! চার যুগল ছুটলো দেশ ভ্রমণে নিজেদের অর্ধাঙ্গিনী কে নিয়ে। ভালোবাসার কিছু মুহূর্ত স্মৃতিতে ধারণ করতে!
🌺পরিশিষ্ট
শশুড়ড়ড়ড়ড় এই শশুড়ড়ড়!
আট মাসের ভরা পেট নিয়ে চিৎকার করে রাজীব আহমেদ কে ডাকছে হৃদযা। প্রেগন্যান্সির সময়টিতে বউ রা তাদের স্বামীদের জ্বালায়। এদিকে হৃদযা সমান তালে তার দুই শশুড় ও স্বামী কে জ্বালাচ্ছে। ইচ্ছে করেই এমন করে সে। বুড়ো বয়স টাই তারা নিজেদের খুব একা ফিল করে। তাই তো হৃদানের কথায় সেও হৃদানের সাথে বাড়িটা মাতিয়ে রাখছে। নাবিল চৌধুরী কে জ্বালানোর জন্য তো আদর-সুবাহ আছেই।
হৃদযার ডাকে হুড়মুড় করে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামলো রাজীব আহমেদ। হৃদযা আড়ালে হেসে বলে উঠলো,
আমার খিদে পেয়েছে খাইয়ে দাও।
রাজীব আহমেদ ও হাসলেন। মিসেস পুষ্পিতা খাবার এনে দিতেই যত্ন নিয়ে খাইয়ে দিলেন তিনি।
আদর সুবাহ যথাক্রমে চার মাস ও পাঁচ মাসের প্রেগন্যান্ট। ভরা পরিবারে সুখ যেন উপচে পড়ছে। এভাবেই হাসি মজায় কেটে গেল চারটা মাস। হৃদযার ফুটফুটে এক ছেলে বাবু হয়েছে। নাম রেখেছে হৃয়াত। দুজনের নাম মিলিয়েই। কিছুদিন পর সুবাহ’র ডেলেভারি। আদরের পেট ফুলে গেছে এ নিয়ে আদরের আফসোসের শেষ নেই। তাকে নাকি কেমন কেমন লাগে। আজ সকাল থেকে সে একটু পর পর মন খারাপ করেই যাচ্ছে।
হৃদান এত প্রশংসা করেও তার লাভ হয়নি। শেষমেষ শশুড়ের পরামর্শে পেটে বালিশ চেপে নিজেও পেট ফুলিয়ে রেখেছে। এরপর আদরের হাসি যে শুরু হয়েছে থামার নাম নেই। একটু পর পর তাকে দেখেই উচ্চ শব্দ হেসে যাচ্ছে। হৃদান নিজেও খুশি প্রেয়সীর মুখে হাসি ফুটাতে পেরে। কয়েকটা ছবিও তুলে রেখেছে বাবুরা বড় হলে দেখাবে। ওদের বাবু হয়ে গেলেই সাফিন পিয়ানির বিয়ে। মূলত ওদের সুবিধার্থেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া। রামিয়া কে তো রাফিন ঝারির উপর রেখেই পড়াশোনা করাচ্ছে। সে চায় প্রেমে পড়ে মেয়েটার ভবিষ্যত নষ্ট হোক।
এভাবেই ভালোবাসা গুলো সব কষ্ট কে ছাপিয়ে, দুর্গম পথ অতিক্রম করে সুখের দেখা পায়। হাসতে থাকে একসাথে। ভালোবাসায় দুঃখ, কষ্ট, ভয়, অভিমান থাকবেই কিন্তু সবচেয়ে বেশীর প্রভাব হলো অনুভূতির। অনুভূতি স্বচ্ছ তো ভালোবাসাটাও স্বচ্ছ-স্নিগ্ধ। সুন্দর জীবন দানে ভালোবাসায় প্রথম সমর্থক। যার প্রমাণ আজকের চৌধুরী বাড়ি! ভালোবাসার এক অনন্য নিদর্শন হৃদান-আদর। তারা বাকিটা জীবন যেন এভাবেই হাসি-খুশিতে থাকে। ভালোবাসার এই গল্পটার লেখনী সমাপ্তি হলেও গল্পটার ছোঁয়া রয়ে যাবে কিছু মানুষের হৃদয়ে! আদি ও অন্ত একে অপেরের জন্যই!
সমাপ্ত
(সাইলেন্ট রিডার্স দের কেও অনুরোধ আজকে অন্তত মন্তব্য করবেন। জানিনা কতটা পরিমাণ ভালো লিখতে পেরেছি। তবে চেষ্টা করেছি। এতদিন পাশে থাকার জন্য হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে ভালোবাসা। এভাবেই পাশে থাকবেন। দোয়া করবেন আমার জন্য। ফি-আমানিল্লাহ! আসসালামু আলাইকুম)
One of the best love story ❣️❣️ waiting for next new awesome love story ❣️❣️
খুব খুব খুব খুব ভালো হয়েছে। আমার তো দুটো সিজেনই খুব খুব ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ আপনাকে এতো গুলো ধন্যবাদ।
গল্পটা পড়ে মন ভালো হতে বাধ্য। আমার তো সবথেকে ফেবারেট ক্যারেকটার হলো হৃদান ও আতায়াব।
যাষ্ট অসাধারণ 🤗💝😍