প্রণয় আসক্তি সিজন ২ পর্ব ৯

প্রণয় আসক্তি সিজন ২ পর্ব ৯
লেখিকাঃ মাহযাবীন

“আপনি ডক্টর নাহ?”
“হু”
“ডক্টরের দায়িত্ব কী?”
হটাৎ আর্শির এমন অদ্ভুত সব প্রশ্নের কারণ বুঝলো না বিহান।ব্রু কুঁচকে আছে তার।তবুও অকারণে করা অপ্রয়োজনীয় প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে মন্দও লাগছে না তার।সে ভেবে উত্তর দিলো,

-উম,রোগীর রোগ নিরাময়ের চেষ্টা।
-কারেক্ট।
উচ্ছ্বাসিত হলো আর্শি।ঠিক এই উত্তরটাই চাচ্ছিলো সে।
বিহানের মনে কৌতূহল থাকলেও সে প্রশ্ন করলো না।সাধারণ উত্তর দিলো,
-হু।
আর্শি এবার তার মূল বক্তব্য প্রকাশ করলো।বলে উঠলো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-আমার এক ভয়ংকর অসুখ ধরা পড়েছে বিহান।এর কোনো নিরাময় নেই।কত চেষ্টা করলাম কিন্তু ফলাফল শূন্য।এর নিরাময় কোথাও নেই, কারো কাছে নেই।শুধু আপনার কাছেই আছে এই অসুখের প্রতিষেধক।এখন বলেন,আপনার কী উচিৎ না এই অসুখ থেকে আমাকে মুক্ত করার চেষ্টা করা?
অবাক হলো বিহান,উত্তেজিত ও হলো খানিক।কি হয়েছে মেয়ের?কোনো বড় অসুখ?কিছু না ভেবেই তৎক্ষনাৎ প্রশ্ন ছুড়লো সে।জিজ্ঞেস করে উঠলো,

-কি অসুখ?
-আপনিময় অসুখ।এর লক্ষণ টা খুব বিরক্তির জানেন?ক্ষণে ক্ষণে কেন আপনার কথা মনে পড়তে হবে?আপনাকে ঘিরে এতো কেনো কল্পনা-জল্পনা?ভাবনার সম্পূর্ণটা জুড়ে কেন আপনাকেই থাকতে হবে?এ কেমন মানসিক ব্যাধি?
এতোটুকুন লিখে থামলো আর্শির হাত।হৃদয় জ্বলছে কেন?চোখে কেন জ্বালাপোড়া?আর্শি দ্রুত গতিতে পলক ফেললো বার কয়েক।দুঃখ সংবরন করে নিলো নিজের।এক লম্বা নিশ্বাস নিজের মাঝে টেনে নিয়ে সে পুনরায় লিখতে আরম্ভ করলো।লিখলো,

-আপনার পরিবর্তনগুলো এতো পোড়ায় কেন আমাকে বিহান?খুব কী দরকার ছিলো এভাবে বদলে যাওয়ার?
খুদে বার্তা গুলো পৌঁছালো বিহানের কাছে।অনুভূতি কী পৌঁছায় এই ডিজিটাল ডিভাইসগুলোর মধ্য দিয়ে?
এবার বিহান বুঝলো কেনো এ অসুখের প্রতিষেধক কেবল তার কাছেই আছে!মুহুর্তেই ছেলেটার হৃদয় সাড়া দিলো যেনো।হৃদয়ের কোনো এক কোণে তারও যেনো সূক্ষ্ণ জ্বালাপোড়া উঁকি দিলো।মেয়েটাকে কী সত্যিই সে খুব বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলছে? হয়তো!

কিন্তু কী করবে সে?এই প্রেম-ভালোবাসাটা যে বড্ড বিষাক্ত লাগে তার।ঘৃণা কাজ করে প্রচুর।যে অনুভূতির উপর চার আনার বিশ্বাস তার নেই সে অনুভূতির জোরে কীভাবে একটা মেয়েকে স্বপ্ন দেখাবে সে?তাও সেই মেয়েটাকে যে কিনা ভীষণ আত্মসম্মানবোধের অধিকারী হবার পরও তার জন্যে বেহায়া হয়ে যায় বারংবার,যে শত অবহেলা উপেক্ষা করেও তাকে অগ্রাধিকার দিয়ে যায় শতবার,আহ্লাদী মেয়েটা তার রুক্ষ ব্যবহারও চুপচাপ সহ্য করে যায় প্রতিবার,

অধৈর্য্য এই মেয়েটাই তাকে পাওয়ার অপেক্ষায় কী দারুণ ধৈর্য্য জাহির করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত!যেনো এ অপেক্ষার ইতি টানা বারণ।এমন গাঢ় প্রেমে নিজেকে জড়াতে ভয় হয় বিহানের।এমন প্রেম প্রত্যাখ্যান করে দূরে যাওয়া সহজ কিন্তু প্রতারণা করে এই নারীর ভেঙে-চূরে চূর্ণবিচূর্ণ হওয়ার নিদারুণ দৃশ্য দেখার সাহস সঞ্চয় করা অসম্ভব।
নিজের অনুভূতি চেপে বিহান শ্বাস নিলো কয়েক দফা।হাত চালিয়ে লিখলো,

-এসব আবেগ ছাড়ো।এইচএসসিতে দেখো পাস টাস আসবে কিনা তোমার!পড়াশোনা তো নাই সারাদিন-রাত মাথায় শুধু প্রেম চলে, রেজাল্ট ভালো আসবে?আর সামনে জীবনের শেষ বোর্ড পরিক্ষা। তাই তাতে মন দেও।
বিহানের উত্তরে খানিক অপমানিতবোধ করলো আর্শি।তার অনুভূতি অনুভব করা তো দূর মানুষটা উল্টো ছোট করলো তাকে।আত্মসম্মানে তীব্র আঘাত পেলো মেয়েটা।চোখ জ্বলজ্বল করে উঠতেই নিজেকে সামলে নিলো সে।মনে মনেই প্রতিজ্ঞা করে বসলো,
“এটাই শেষ! এরপর আর কখনো আমার অনুভূতি প্রকাশ করবো না আপনার কাছে।একটুও না।”

দুই পরিবার মুখোমুখি আজ।মিয়ামির বাবার বাড়িতে এসে উপস্থিত হয়েছেন সানিয়া বেগম, আরহান সাহেব ও আর্শ।বড়রা সবাই সোফা দখল করে বসে আছে।ছোটরা বলতে শুধু আর্শ ও মিয়ামি উপস্থিত। আর্শিকে এখানে আনা হয়নি।যেহেতু বৈঠক মিয়ামির বাসায় আর এখানে গুরুত্বপূর্ণ কথোপকথনের চলবে সেহেতু দল বেঁধে সবার আসাটার প্রয়োজনবোধ মনে করেননি সানিয়া বেগম।

ছেলেমেয়েরা নিজেদের কর্ম দ্বারা যেমন বাবা-মায়েদের মস্তক গর্বে উঁচু করাতে পারে তেমনই তাদের করা ভুলগুলো বাবা-মায়েদের মাথা নুইয়ে নিতে বাধ্য করে।ঠিক যেমন এখন লজ্জিত এক অপরাধী দম্পতির ন্যায় মাথা নুইয়ে বসে আছেন সানিয়া বেগম ও আরহান সাহেব। তাদের ভেতরে কী ঝড় চলছে,কী তান্ডব চলছে তা বাইরে বুঝার সাধ্য নেই কারো।নিজেদের খুব শক্ত রাখতে ব্যস্ত এই দম্পতি।
মেহরিন বেগম ও তার স্বামী বসে আছেন সানিয়া বেগম ও আরহান সাহেবের সামনে বরাবর।অনেকটা সময় নিরবতার পর কথা শুরু করলেন মিয়ামির বাবা,

-ভাইসাব,আর্শ হয়তো আপনাদের পুরো ব্যাপার টা খুলে বলেছে?
মাথা ঝাঁকালেন আরহান সাহেব। আমতাআমতা করে বললেন,
-জ্বি ভাই,বলেছে।আমি আর সানিয়া আসলে কী বলব আপনাদের তা বুঝতে পারছি না।শুধু ক্ষমা চাইব।আর্শ যেমন আমাদের সন্তান, মিয়ামিকেও আমরা আলাদা চোখে দেখি না।বিয়ের আগে যদি জানতাম আর্শের বিষয়টা তাহলে এই বিয়ে আমরা দিতামই না।

কথাগুলো বলে থামলেন আরহান সাহেব।ভীষণ অস্বস্তি অনুভব করছেন তিনি।তার সন্তানের কর্মে এভাবে কারো সামনে তাকে ছোট হতে হবে কখনো তা কল্পনাও করেননি তিনি।
আরহান সাহেবের কথা শেষ হতেই মিয়ামির বাবা এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে ওঠেন,
-জানি ভাইসাব।আমাদের দুই পরিবারের মাঝে কতটুকু মিল মহব্বত আছে তা সবার জানা।কিন্তু ভাইসাব এখন প্রশ্ন আমার মেয়ের জীবনের।তাই সিদ্ধান্ত আমি আবেগ দিয়ে নিতে চাইছি না।

মিয়ামির বাবা কথাগুলো বলে থামতেই নড়েচড়ে বসলেন সানিয়া বেগম ও আরহান সাহেব।তাদের বুঝতে অসুবিধে হলো না যে সিদ্ধান্ত টা কী হতে পারে।সানিয়া বেগম অনুভব করলেন তার হৃদয়ের ধরফরানি।ভয় হচ্ছে তার।এই একটা সিদ্ধান্ত তিন তিনটা জীবনের উপর গভীর প্রভাব ফেলবে,প্রভাব ফেলবে দুটো পরিবারের মানুষগুলোর উপর ও।
নিজের মনের ভয় লুকোতে ব্যর্থ হলেন সানিয়া বেগম।বলে উঠলেন,

-ভাই,সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আমাদের নাতির কথাটাও একবার ভাববেন,অনুরোধ।
সানিয়া বেগম নিজের কথা শেষ করতেই মেহরিন বেগম বলে উঠলেন,
-মিয়ামির জায়গায় আর্শি হলে তুই কী করতি সানিয়া?তোর সিদ্ধান্ত কী হতো?
সানিয়া বেগম তৎক্ষনাৎ উত্তর দিলেন,

-ওদের আলাদা করে দেখছি না আমি।তোরা যে সিদ্ধান্ত নিবি তা মাথা পেতে নিবো আমরা।শুধু ঐ ছোট্ট জানটার কথা একটু মাথায় রাখিস এতোটুকুই অনুরোধ।
উত্তরে চুপ হয়ে গেলেন মেহরিন বেগম,প্রতিত্তোর করলেন না।মুখ খুললেন মেহরিন বেগমের স্বামী।নিরাশ কন্ঠে বলে উঠলেন,

-আমরা আর্শ ও মিয়ামির তালাক চাচ্ছি।শুনতে খারাপ শোনা গেলেও ভাইসাব একজন নেশাখোরের সাথে নিজের মেয়েকে সংসার করতে দিতে পারবো না আমরা।একটাই মেয়ে আমাদের, খুব আদরের।বুঝতেই পারছেন?
নিজের ভয়কে সত্য হতে দেখে প্রতিক্রিয়া দেখাতে ভুলে গেলেন সানিয়া বেগম।লজ্জিত বাবা প্রতিবাদের ভাষা খুঁজে পেলেন না।মুহুর্তেই নিস্তব্ধতা ছেয়ে গেলো চারপাশে।

আর্শের চোয়াল শক্ত হয়ে এলো।সে জানে অপরাধ তার, যেকোনো শাস্তি পেতেও রাজি সে কিন্তু এই শাস্তি টা নাহ।কারণ এটা শাস্তি নাহ এটা জুলুম।আর্শ প্রতিবাদী কন্ঠে কিছু বলতেই যাবে তার আগেই এক বজ্র ধ্বনি কানে এসে লাগলো সবার।
এক নারীকণ্ঠ তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলে উঠলো,
-জীবন আমার,সংসার টাও আমার তাহলে সিদ্ধান্ত আমার হওয়া উচিৎ নাহ?
আমার মতামত কেউ কেনো জিজ্ঞেস করছো না?
মিয়ামির প্রশ্ন শেষে মেয়েকে ধমকে উঠলেন মেহরিন বেগম। বলে উঠলেন,

-চুপ করো মিয়ু,বড়দের মাঝে কথা বলো নাহ।
-এখানে আমার জীবন নিয়ে কথা হচ্ছে মা।আমার পুরো অধিকার আছে নিজের সিদ্ধান্ত নেওয়ার।তোমরা কেনো আমাকে আমার সিদ্ধান্ত নিতে দিচ্ছ না?
আমি তালাক দিবো না।এটাই আমার শেষ সিদ্ধান্ত।
বলে খানিক থামলো মিয়ামি।পুনরায় বলে উঠলো,

-তোমাদের এতোটুকুই তো সমস্যা যে আর্শ ড্রাগস নেয়?ও যদি ড্রাগস ছেড়ে দেয় তাহলে তো সমস্যা নেই,আছে?
মা,বাবা তোমাদের আমি কথা দিচ্ছি, আর্শ যতদিন পুরোপুরি সুস্থ না হয় ততদিন আমি এ বাড়িতেই থাকবো।যেদিন আর্শ সুস্থ হয়ে যাবে সেদিন তোমাদের সম্মতি নিয়ে আমি আমার বাড়িতে ফিরবো।দয়া করে তালাকের ভুত নামাও মাথা থেকে।প্লিজ?

নিরবতা ভাঙলো বেশ অনেকটা সময় পরে।এতোটা সময় থম মেরে বসেছিলেন সবাই।মিয়ামির বাবা নড়েচড়ে উঠে এক দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।বলে উঠলেন,
-আর্শ,তুমি কী মনে করো তুমি সুস্থ হতে পারবা?
বাবা নিজের বুকে হাত রেখে সত্য টাই বইলো।আজ প্রশ্ন আমার মেয়ের জীবনের।কাল তুমিও বাবা হবা, তোমার মেয়ে হতে পারে তার কথা ভেবে হলেও এই বাবাকে সত্য টা বলো?
আর্শ নিজের বুকে হাত রাখলো।দৃষ্টি অবনত তার।সে বলে উঠলো,
-পারবো আব্বু।নিঃসন্দেহে পারবো।

প্রণয় আসক্তি সিজন ২ পর্ব ৮

[পাঠক মহল, একটু চমকে দেই?
বাস্তবে কিন্তু একটা বিহান আর আর্শি আছে।তাদের কাহিনিই কিন্তু আমি গল্পে লিখছি।পুরোটাই বাস্তব নাহ।৯০% বাস্তব আর ১০% কল্পনা।
কিন্তু আজকের পর্ব থেকে আগামী পর্বগুলো হয়তো কাল্পনিকই হবে কারণ বাস্তবে এখনো এই প্রেম পরিণতি পায়নি।]

প্রণয় আসক্তি সিজন ২ পর্ব ১০