প্রণয় আসক্তি সিজন ২ পর্ব ১০

প্রণয় আসক্তি সিজন ২ পর্ব ১০
লেখিকাঃ মাহযাবীন

“প্রতি নিশ্বাসে যাকে পাশে চাই তাকে ছাড়া সুস্থ হতে পারবো আমি?”
এ প্রশ্নে ফোন কানে চেপে ধরে রেখেই নিরব হাসলো মিয়ামি।মিথ্যে রাগ দেখিয়ে বলে উঠলো,
-এটাই উচিৎ শাস্তি তোমার।যাও যাও আরও খাও ছাইপাঁশ।
এবার চোখমুখে অসহায়ত্ব ফুটে উঠলো আর্শের।চরম বিরক্তিতে এক লম্বা শ্বাস ছেড়ে সে বলে উঠলো,
-অন্য কিছু বলা যেতো না?এই “আর্শ যতদিন পুরোপুরি সুস্থ না হয় ততদিন আমি এ বাড়িতেই থাকবো” বলাটা কী খুব জরুরি ছিলো?
-ছিলো তো।নাহয় শাস্তি পাইতা?

-নিজের চোখে নিজে ছোট হওয়া,বাবা-মাকে লজ্জিত হতে দেখা,তাদের দুশ্চিন্তার কারণ হওয়া এসব কম কী?
খারাপ লাগলো মিয়ামির।বিষয়টা সে উপলব্ধি করতে পারেনি এমনটা নয়।আর্শের বাবা-মাকে সে কখনো শশুর-শাশুড়ি ভাবেনি।দেখেছে নিজের বাবা-মা হিসেবেই।সেখানে তাদের লজ্জিত মুখশ্রী মিয়ামির হৃদয়েও আঘাত করেছে ভীষণ।
মিয়ামি বলে উঠলো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-এমনটা না বললে বাবা রাজি হতেন না।তাই বলতে হয়েছে।
এটুকু বলে থামলো মিয়ামি।আর্শ নিরুত্তর।মন চাইলো না কিছু বলতে।নিরব রইলো।
হটাৎ নিজের পেটে হাত গেলো মিয়ামির।তার পানে তাকিয়ে বলে উঠলো,

-আমার কি খুব মজা লাগতেছে তোমার বাচ্চা একা পালতে?তোমার ছোট বদের হাড্ডিটা আমাকে কিচ্ছু খাইতে দেয় না।শুধু বমি আর বমি। আবার হুটহাট ফাউল সব ক্রেভিং উঠায়।এসব একা সহ্য করতে ভাল্লাগে আমার?তুমি ঐখানে সিঙ্গেল সেজে মজ মারবা আর এদিকে তোমার বদ বাচ্চা আমাকে জ্বালায়ে মারবে তা কী আমার জন্য খুব শান্তির?হুহ্হহহ!
এবার ক্ষীণ শব্দে হেসে উঠলো আর্শ।নিরাশ হৃদয় মুহুর্তেই উত্তেজিত হয়ে উঠলো তার।বলে উঠলো,

-খবরদার বদ বলবা না।আমার কলিজা ও।আর আমার কলিজা কখন কী খাইতে চায় শুধু বলবা আমাকে।হাজির করার দায়িত্ব আমার।এর জন্য যদি হিটলার শশুর আব্বাজানের মাইরও খাইতে হয় তাতেও রাজি আমি।
শেষ বাক্যে শব্দ করে হেসে উঠলো মিয়ামি।হাসছে আর্শও।ক’মাসের এই বিচ্ছেদের বিরহে দুজনেরই সমান হারে মন খারাপ তবুও দু’জনেই তা লুকিয়ে নিলো খুব গোপনে।

কোচিং শেষে নিজ গন্তব্যের পথে হাঁটছে আর্শি।শরীর টা এ রাস্তায় থাকলেও মনটা এখানে অনুপস্থিত।মন তো তার মনের মানুষের কাছে।তার মনে আধিপত্য লাভকারী পুরুষটার ভাবনাতেই বিভোর সে।
এমন বেখেয়ালি হাঁটার মাঝেই কারো সাথে সংঘর্ষ ঘটলো তার।নিজের বাহুর উপর হাত রেখে ‘আহ’ শব্দ করে উঠলো মেয়েটা।তাকালো নিজের সামনে বরাবর।এক ২৩-২৪ বছর বয়সের ছেলে তার দিকে ব্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে।মেজাজ খারাপ হলো এবার আর্শির।উচ্চ গলায় বলে উঠলো,

-চোখে দেখেন না?
-অন্যের চোখের খবর না নিয়ে নিজের চোখটাকে কাজে লাগালেই পারেন।
-নূন্যতম ভদ্রতা নেই আপনার? স্যরি না বলে তর্ক করে যাচ্ছেন।
-বিনা দোষে স্যরি বলি না আমি।আর ফ্রীতে এডভাইস ও দেই না।তবে নিজের একটা প্রেডিকশন বলতে চাচ্ছি।নিজের চলাফেরা ঠিক না করতে পারলে আপনি নির্ঘাত কোনো এক বাস বা ট্রাকের নিচে পরে মরে যাবেন।বি কেয়ারফুল।

বলে আর দাঁড়ালো না এ যুবক।হনহনিয়ে হাঁটা শুরু করলো সামনে বরাবর।আর্শি রাগি দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো সেই পথ পানে।মনে মনে গালিগুলোকে সান্ত্বনা দিলো।বেচারা গালিগুলো প্রস্তুত ছিলো বেরিয়ে আসার জন্য কিন্তু মাঝ পথেই ফিরে যেতে হলো তাদের।অন্যায় হলো না তাদের সাথে?এ অন্যায়ের জন্য হলেও এই পুরুষের কঠিন শাস্তি হওয়া উচিৎ।

এসব ভাবতে ভাবতে গরম মেজাজে নিজ বাড়ির পথ ধরলো আর্শি।কথা ছিলো মিয়ামির বাড়ি যাবে।তবে নাহ আজ আর মিয়ামির বাড়ি যাবে না সে।মিয়ামি যেহেতু কলেজে উপস্থিত থাকতে পারে না তাই আর্শিই দায়িত্ব নিয়েছে তাকে প্রতিদিন ক্লাস নোটস পৌঁছে দেওয়ার।আজ আর সে দায়িত্ব পালন করা হবে না।আগে মগজ ঠান্ডা করে নিতে হবে তার।

সব মায়েদের হাতে এক অন্য রকম জাদু থাকে।সে হাতের রান্না, সে হাতের আদর, সে হাতের মাইর টাও যেনো ভীষণ বিশেষ।সেই হাতের প্রতিটা স্পর্শ স্বর্গীয় প্রশান্তির।এই স্বর্গীয় প্রশান্তির মাঝে দিন কাটছে মিয়ামির।প্রতিদিন মায়ের হাতের রান্না,কারণে- অকারণে মায়ের হাতে খেতে পারা, হুটহাট বায়না করা আর বকাঝকার সাথে আদর ফ্রীতে লুফে নেওয়া প্রতিনিয়তই চলছে তার।

এইযে প্রায় ১ বছরের বিবাহিত জীবন তার।এই ১ বছরের মাঝে এই ক’টা দিন একদম অন্য রকম। সুন্দর আবার শূন্যতায় ভরপুরও বলা চলে।পরিপূর্ণতা তখন পেতো যখন তার দুই মাকেই সমান ভাবে পাশে পেতো সে।বিয়ের আগের জীবন আর বিয়ের পরের জীবনের মাঝে তফাৎ হয়তো এখানেই।বিয়ের পর পরিবার বড় হয়,দায়িত্ব যেমন বাড়ে তেমন ভালোবাসার মানুষের তালিকাটাও বৃদ্ধি পায়।দুই পরিবারকে সাথে নিয়েই পরিপূর্ণ হয় মেয়ে জীবন।

দুপুরের খাবারটা মায়ের হাতেই খেলো মিয়ামি।খাবার শেষে মেহরিন বেগম কক্ষ ত্যাগ করতেই নিজের ফোন হাতে তুললো মেয়েটা।আর্শের দু’বার কল দেওয়া শেষ ততক্ষণে।মিয়ামি অনতিবিলম্বে ডায়াল করলো ছেলেটার নাম্বার।কল রিসিভ করেই আর্শ প্রশ্ন করে উঠলো,

-ঠিক আছো?
-আছি তো।
-ফোন কই ছিলো তোমার?
-কাছেই।আম্মু ছিলো রুমে।
-ওহ।দুপুরে খাইছো?
-হ্যাঁ,তুমি?
-হু।বেশি করে খাবা।আমার কলিজা টার যেনো পুষ্টির অভাব না হয়।
-উফ! দেখো এখন কিন্তু আমার হিংসা হচ্ছে।
-মানে?

-তুমি কী আমার থেকে আমাদের বাচ্চাকে বেশি ভালোবাসতেছো?
এহেন প্রশ্নে বোকা বনে গেলো আর্শ।মানে কিসের সাথে কী? পান্তা ভাতে ঘিঁ?
আর্শ আমতাআমতা করে বলে উঠলো,
-তুলনা করা উচিৎ হবে?
-হবে।আগে বলো তুমি।
-কঠিন হয়ে গেলো না প্রশ্ন টা?

-কঠিন?মানে তুমি আমার থেকেও বেশি ভালোবাসো তোমার বাচ্চাকে?আমার থেকেও বেশি?আমাকে কম বাসো?
মৃদু হাসি ফুটে উঠলো আর্শের ঠোঁট জুড়ে।এ কেমন বাচ্চামি?মেয়েটা যে ভীষণ হিংসুটে তা অজানা ছিলো না তার।কিন্তু এর পরিমাণ যে এতোটা তা আজই জানলো সে।ঠোঁটে হাসি টেনে রেখেই আর্শ বলে ওঠে,
-তুমি হৃৎপিণ্ড হলে হৃৎস্পন্দন আমাদের সন্তান। এখন বলো এখানে বেশি-কম আছে?কাকে বেশি ভালোবাসি সে উত্তর টা কঠিন না?

হাসি ফুটে উঠলো মিয়ামির ঠোঁটেও।হৃদয় হলো প্রসন্ন।ঠোঁটে হাসি টেনে রেখে তারা উভয়ই নিরবতায় কালক্ষেপণ করলো খানিক।হৃদয়ে হৃদয়ে অনুভূতির সন্ধিও ঘটলো।
অনুভবে আর্শকে রেখে মৃদু কন্ঠে গুনগুনিয়ে উঠলো মিয়ামি।সুর তুললো,
“ও একটু নয় অনেক বেশি ভালোবাসি তোকে………….”
মুগ্ধতায় ঠোঁটের হাসি বৃদ্ধি পেলো আর্শের।আহা ভালোবাসা!

রাত ধীরে ধীরে গভীর হচ্ছে,নিস্তব্ধ হচ্ছে পরিবেশ। এইতো এটাই শ্রেষ্ঠ সময় মনোযোগ দিয়ে পড়ার।তাইতো এ রাত দুপুরে পড়ার টেবিলে বইয়ে মুখ গুঁজে বসে আছে আর্শি।সামনে বোর্ড পরিক্ষা।খুব পড়তে হবে।একটা ভালো ফলাফল করতেই হবে তাকে।নাহয় বিহান হয়তো বলবে,
“মাথায় প্রেম নামক গোবর ভরা থাকলে পড়াশোনা হয়?”

নাহ এসব শুনতে চায় না সে।তার প্রেমকে এভাবে বদনাম হতে দিতে চায় না সে।একদম চায় না।চেষ্টা টা অন্তত করবে সে,বাকিটা স্রষ্টা দেখে নিবেন।এসব ভেবে বইয়ে গভীর মনোযোগ নিবেশ করলো মেয়েটা।তবে তা দীর্ঘক্ষণ স্থায়ী হলো না।ফোনে ম্যাসেজের শব্দ হতেই মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটলো তার।নিশির খুদে বার্তা এসেছে।খুদে বার্তা খানা,
“কাল থেকে কোচিং এ আমাদের আইসিটি সাবজেক্ট পড়ানোর জন্য নতুন এক ভাইয়া আসবে।জানিস তা?”
ম্যাসেজটা দেখে ব্রু কুঁচকালো আর্শি।এর উত্তরে লিখলো,

“ইমদাদ স্যার আর পড়াবেন না?”
“নাহ।এখন থেকে এহসান ভাইয়া পড়াবেন আইসিটি।”
“এহসান?চিনিস নাকি?”
“নাহ,অন্য একজনের থেকে শুনলাম।”
“ওহ!কালই আসবে এই নতুন টিচার?”

প্রণয় আসক্তি সিজন ২ পর্ব ৯

“হ্যাঁ,শুনলাম ভাইয়া নাকি আজ কোচিং এ আসছিলো আমাদের ছুটি হয়ে যাওয়ার পর।”
“ওহ আচ্ছা।হইছে ব্যাটারে কাল দেখা যাবে।এখন যা তো পড়তে যা।”
“এহহ্ ঘুম বাদ দিয়ে পড়বো?খেয়ে বসে কাজ নাই আমার?তুই পড়,পইড়া বিদ্যাসাগর হ।”
উত্তরে আর কিছু লিখলো না আর্শি,হাসলো শুধু।অতঃপর কথোপকথন শেষে সে আর ভাবলো না এ বিষয় নিয়ে।কে আসলো, কে গেলো তাতে তার কী!

প্রণয় আসক্তি সিজন ২ পর্ব ১১