প্রণয় আসক্তি সিজন ২ পর্ব ১১

প্রণয় আসক্তি সিজন ২ পর্ব ১১
লেখিকাঃ মাহযাবীন

“আমি এহসানুল মাহমুদ।নিক নেইম এহসান।আপনাদের নতুন আইসিটি টিচার।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করেছি সবেই।এখন পড়াশোনা শেষে নিজের ব্যবসা শুরু করার চিন্তা করছি।পেশা হিসেবে চাকরি টাকে আমি প্রেফার করি না তাই ব্যবসা।আপনাদের ইমদাদ স্যারের চাকরি হয়ে যাওয়ায় তিনি আর পড়াবেন না তাই আজ থেকে আমিই আপনাদের আইসিটি পড়াবো।আমার পড়ানো যদি ভালো না লাগে তাহলে অবশ্যই নিজেদের অভিযোগ জানাবেন।কোচিং এর কতৃপক্ষরা আপনাদের আরো বেটার টিচার দেওয়ার চেষ্টা করবে।ঠিক আছে?”

ঠোঁটে হাসি টেনে রেখে নিজের পরিচয় ও মনোভাব প্রকাশ করে থামলো এহসান।সে থামতেই উপস্থিত শিক্ষার্থীরা ঠোঁট হাসি ফুটিয়ে সম্মতি জানাতে লাগলো।তাদেরকে দেখতে দেখতে একজনের দিকে নজর আঁটকে গেলো এহসানের।এক মেয়ে চোখে বিস্ময় নিয়ে তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
মেয়েটাকে ভালো করে দেখে নিয়ে ঠোঁটে বাঁকা হাসি ফুটালো এহসান।নিজের দৃষ্টি সরিয়ে তাকালো হোয়াইট বোর্ডে।বড় বড় অক্ষরে লিখলো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“চ্যাপ্টারঃ০৩”
অতঃপর সে বলে উঠলো,
-আজ আমরা আইসিটি বইয়ের চ্যাপ্টার ০৩ অর্থাৎ সংখ্যা পদ্ধতি ও ডিজিটাল ডিভাইস সমন্ধে জানবো।
এহসান তার বাক্য শেষ করতেই শিক্ষার্থীরা চেচিয়ে উঠলো।বললো,
-ভাইয়া এই চ্যাপ্টারের সংখ্যা পদ্ধতিসহ প্রায় ৮০% পড়া তো ইমদাদ স্যার পড়িয়ে ফেলেছেন।
ঠোঁটে হাসি বজায় রেখে এহসান উত্তরে বলে উঠলো,
-বেশ তো।বাকি ২০% আমার দায়িত্ব।তবে তার আগে আমি একটু দেখতে চাই ঐ ৮০% আপনারা কতটুকু পারেন।প্রশ্ন করি?উত্তর দিতে পারবেন?

ক্লাসের অধিকাংশই চেচিয়ে উত্তর দিলো “পারবো”। এহসান সবার দিকে চাইলো না অবশ্য। তার চোখ একটি মেয়েতেই নিবদ্ধ।সেই সাথে চোখে তার দুষ্টুমি, ঠোঁটে বাঁকা হাসি।
আর্শির বিস্ময় কাটলেও গতদিনের কাহিনি মনে পড়তেই পূর্বের রাগ ফিরে এলো তার।অনতিবিলম্বে দৃষ্টিও সরিয়ে নিয়েছিলো সে এহসানের থেকে।অতঃপর চুপচাপ নিজের দৃষ্টি আবদ্ধ করে রেখেছে নিজের খাতায়।কিছু লেখায় গভীর মনোযোগ নিবেশ করে আছে সে।
এহসান শুরু করলো তার প্রশ্ন পর্ব।ক্লাসের সামনের দিকের এক বেঞ্চ থেকে এক মেয়েকে দাঁড়াতে বললো সে।তাকে প্রশ্ন করলো,

-মৌলিক গেট গুলোর নাম কী?
প্রশ্ন সহজ হওয়ায় মেয়েটারও ঝটপট উত্তর হাজির।
-এন্ড গেইট,অর গেইট,নট গেইট।
-গুড।
এহসান ধীরে ধীরে এগোলো পিছনের দিকে।মাঝের সারির এক মেয়েকে দাঁড় করিয়ে প্রশ্ন করলো,
-৪ টা সংখ্যা পদ্ধতির নাম বলো।
-দশমিক বা ডেসিমেল সংখ্যা পদ্ধতি,বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতি,অক্টাল সংখ্যা পদ্ধতি,হেক্সাডেসিমেল সংখ্যা পদ্ধতি।
-গুড।

প্রথম সারি ও মাঝের সারি শেষ।এবার এহসান এসে পৌঁছালো তার কাঙ্ক্ষিত সারিতে।আর্শিকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
-তুমি দাঁড়াও।
আর্শি শুনলো না এ বাক্য।সে এক ধ্যানে খাতায় কিছু লিখছে।এহসান আর বাক্য ব্যয় করলো না।এক টানে আর্শির খাতা নিজের হাতে নিলো।চমকে আর্শি তাকালো তার দিকে।এহসান অগ্নি চোখে চেয়ে আছে তার পানে।ঢোক গিললো আর্শি।খাতায় বড় বড় অক্ষরে লেখা,
” আর্শি+বিহান”

এ লেখায় যদি চোখ পড়ে যায় এহসানের তাহলে?যদি তাকে বাজে কথা শুনিয়ে বসে এ নিয়ে?ক্লাসে সবার কাছে হাসির পাত্রীতে পরিণত হতে হবে তাকে!
আর্শির এসব চিন্তেকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এহসান খাতার দিকে না তাকিয়েই তা রাখলো হাইবেঞ্চে।কর্কশ কন্ঠে বলে উঠলো,

-এসব করতে আসেন ক্লাসে?হ্যাঁ?ক্লাসে মনোযোগ না দিয়ে খাতায় আঁকাআকি করেন?নিজেকে কী খুব ব্রিলিয়ান্ট মনে হয়?সবই কী পারেন যে আর পড়ার প্রয়োজনবোধ মনে করছেন না?
এহসানের জায়গায় অন্য কেউ হলে হয়তো আর্শি অপরাধী কন্ঠে ক্ষমা চেয়ে নিতো। কিন্তু এখন কেনো যেনো রাগে তা পারছে না সে।শুধু চুপচাপ মূর্তির ন্যায় দাঁড়িয়েই রইলো মেয়েটা।
আর্শির জায়গায় অন্য কেউ হলে হয়তো এতোটা রাগ দেখাতো না এহসান।কিন্তু পূর্বের রাগ ঝাড়ার জন্যে এমন উপযুক্ত সুযোগ হাত ছাড়া করলো না সে।থেমে যাওয়ার বদলে সে আর্শিকে প্রশ্ন করে উঠলো,
-সো মিস ব্রিলিয়ান্ট বলেন দেখি, বুলিয়ান স্বতঃসিদ্ধ কী?

আর্শি নিরব।রাগ, অস্বস্তির মতো অনুভূতিগুলো যেনো গলা চেপে ধরে রেখেছে তার।শত চেষ্টায়ও যেনো তার ভোকাল কর্ড কাজ করতে পারছে না।এতে এহসান সুযোগ পেলো আরো চারটে কথা শুনিয়ে দেওয়ার।সে তাচ্ছিল্যের স্বরে বলে উঠলো,
-এই হচ্ছে ব্রিলিয়ান্টের নমুনা।ক্লাসে মনোযোগী না হয়ে হাবিজাবি করলে ঠিক এমন ব্রিলিয়ান্টই হতে হয়।যাকে ইংলিশে বলা হয়, “গুড ফর নাথিং”।

কথাখানা বলে তাচ্ছিল্যের হাসি ঠোঁটে টেনে স্থান ত্যাগ করতে উদ্ভূত হতেই এক কন্ঠ কর্ণকুহর অব্দি এসে পৌঁছায় এহসানের।থেমে যায় সে।দৃষ্টি ঘুড়িয়ে তাকায় আর্শির পানে।চোখ বুঁজে দৃঢ় গলায় আর্শি বলে উঠলো,
-বুলিয়ান অ্যালজেবরায় সকল কাজ যৌক্তিক যোগ, গুণ ও পূরকের সাহায্যে করা হয়। এই যৌক্তিক যোগ,গুণ ও পূরকের নিয়মগুলোকে বুলিয়ান স্বতঃসিদ্ধ বলে।
অবাক চাহনি নিয়ে তাকিয়ে রইলো এহসান আর্শির দিকে।এমন অনন্য এক প্রশ্নের উত্তর মেয়েটা পারলো কীভাবে?সে শতভাগ নিশ্চিত ছিলো এ প্রশ্নের উত্তর সহজ হলেও সব শিক্ষার্থীদের এটা জানার কথা না।তাই আর্শিকে ছোট করতেই মূলত তার এ প্রশ্ন টা করা।কিন্তু মেয়েটা তার উদ্দেশ্য সফল হতে দিলো না।বিজয়ী হতে হতেও হেরে গেলো সে।

পেটটা এখন উঁচু হয়েছে খানিক।মাতৃত্বের অনুভূতিও ধীরে ধীরে হচ্ছে জোরালো।হাতে ফিতা নিয়ে একটু একটু করে নিজের সন্তানের বেড়ে ওঠা মেপে দেখার এক অসাধারণ অনুভূতির সাথে পরিচিত হচ্ছে এক মা।অনুভব করছে,মাতৃত্ব এক অতুলনীয় সুখের নাম।এ সুখের গভীরে ধীরে ধীরে তলীয় যাচ্ছে মিয়ামি, ডুবে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত।আরো যেনো ডুবতে চাচ্ছে সে।এ ডোবায় প্রাণ হারানোর ভয় নেই বরং নতুন করে বাঁচার তীব্র স্পৃহা আছে।
মিয়ামি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আলতো হাতে নিজের পেটে হাত বুলচ্ছে।ঠোঁটের হাসি ধীরে ধীরে প্রশস্ত হচ্ছে তার।হটাৎ নিজের আনন্দটুকু আর্শের সাথে ভাগাভাগি করে নেওয়ার ইচ্ছে জাগলো তার।বিলম্ব না করে ফোন খুঁজার উদ্দেশ্যে আয়না থেকে নিজের চোখ সরিয়ে পেছনে ফিরতেই ভুত দেখার মতো চমকে উঠলো সে।বিস্মিত চোখে চেয়ে রইলো নিজের সামনে বরাবর।

আর্শ ঠোঁটে মৃদু হাসি টেনে রেখে বুকে দু’হাত গুঁজে দেওয়ালে ঠেক দিয়ে দাঁড়িয়ে তার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।মিয়ামি অবাক কন্ঠে প্রশ্ন করে উঠলো,
-কখন আসলা?
আর্শ সোজা হয়ে দাঁড়ালো এবার।ধীর কদম ফেলে এগিয়ে গেলো মিয়ামির কাছে।খুব কাছে গিয়ে আঁকড়ে ধরলো মেয়েটার কোমর।কেঁপে উঠলো মিয়ামি।আর্শ আলতো স্পর্শ আঁকলো তার কোমল গালে।নিম্ন স্বরে বলে উঠলো,
-যখন তুমি খুব মনোযোগে নিজের সন্তানের বেড়ে ওঠা মাপছিলে।
হাসলো মিয়ামি।দু’হাতে আর্শের গলা আঁকড়ে ধরে জিজ্ঞেস করে উঠলো,

-আসলে কী করে?বাবা-মা ঘুম?
-হু।বাড়ির দারোয়ান থেকে বাড়ির কাজের মেয়েসহ সবাইকে হাত করে নিয়ে রাখছি।এখন থেকে শশুর আব্বার নাকের নিচ দিয়েই চলবে আমাদের প্রণয়।
কথাখানা বলেই চোখ মারে আর্শ।হেসে ওঠে মিয়ামি।মিয়ামিকে আয়নার দিকে ঘুরিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে তাকে।কাপড় ভেদ করে হাত রাখে মেয়েটার পেটে।কানের পেছনে এঁকে দেয় চুমু।শিহরণে মৃদু কেঁপে কেঁপে উঠছে মেয়েটা।চোখ বুঁজে নিজের ভর ছেড়ে দিয়েছে আর্শের উপর।আর্শ আলতো করে ঠোঁট বুলিয়ে চলছে মিয়ামির গলায়।ছোট্ট ছোট্ট চুমু এঁকে আদরে লেপ্টে নিচ্ছে নিজের স্ত্রীকে।

অনেকটা আদর শেষে মিয়ামিকে বিছানায় বসালো আর্শ।মেয়েটাকে নিজের বুকে টেনে নিয়ে জিজ্ঞেস করে উঠলো,
-দিন কেমন যাচ্ছে তোমার?কোনো কষ্ট হয়?কোনো কিছুর প্রয়োজন আছে?
আর্শের বুকে মুখ গুঁজে মিয়ামি বলে উঠলো,
-তোমাকেই প্রয়োজন,তোমার জন্য মন খারাপ হয়,কষ্ট হয়।মা-বাবা, আর্শিকেও মিস করি।এখানে একা থাকতে হয় কিন্তু ও বাড়িতে থাকলে আর্শির সঙ্গ পেতাম সারাক্ষণ।

আর্শ উত্তর দিলো না।নিরবে নিভৃতে জড়িয়ে রাখলো মেয়েটাকে নিজের বুকের সাথে।
অতঃপর খানিকটা সময় পাড় হবার পর আর্শ নিম্ন স্বরে প্রশ্ন করে উঠলো,
-পড়াশোনা করতে পারছো একটুও?নাকি পড়াশোনা নাই জীবনে?
-আছে তো।কিন্তু বেশিক্ষণ পড়ায় মন বসে না।

ঠোঁট উল্টে মন খারাপের স্বরে কথাটা বলে ওঠে মিয়ামি।আর্শ রাগী কন্ঠে বলে ওঠে,
-বলেছিলাম না এখন পড়াশোনায় মন দেও,বেবি পরেও নেওয়া যাবে।শোনোনি কেন?
-উফফো,পরিক্ষা তো এবার না দিয়ে পরের বারও দিতে পারবো।

প্রণয় আসক্তি সিজন ২ পর্ব ১০

রাগ উঠলো আর্শের।মেয়েটার নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে এমন উদাসীনতা মেনে নেওয়া অনুচিত।এমনটা ভেবে কঠোর হলো আর্শ।কঠিন কন্ঠে বলে উঠলো,
-এখনই পড়তে বসবে তুমি।

প্রণয় আসক্তি সিজন ২ পর্ব ১২