এক ফালি রোদ্দুর পর্ব ৪০ || লেখনীতে: তানজিল মীম

এক ফালি রোদ্দুর পর্ব ৪০
লেখনীতে: তানজিল মীম

“টপ টপ শব্দে পানি পরছে,পানিতে ভিজে একাকার হয়ে যাচ্ছে রিয়াদ – তানজু’!!তানজু তো এখনও চোখ বন্ধ করে আছে হয়তো চোখ খোলার সাহস হচ্ছে না তার’!!রিয়াদের এমন হুট করা এর্ট্যাকের জন্য একদমই প্রস্তুত ছিল না তানজু,,তাই তো তার শরীর কাঁপছে সাথে ভয়ও হচ্ছে’!!
“এদিকে…

“রিয়াদ তাকিয়ে আছে তানজুর দিকে,,তানজুর কাঁপা কাঁপা চোখ,সাথে ভিজে যাওয়া মুখের দিকে’!!রাগ হচ্ছে তার,ভীষণ রাগ কিন্তু তানজুর ওপর সে তার রাগ দেখাতে পারছে না,,যার কারনে আরো রাগ হচ্ছে রিয়াদের’!!তানজুর মায়াবী ফেস দেখলেই তো তার রাগ কমে যায়,,সাথে বুকের স্পন্দনও বেড়ে যায়,বুকের বাম পাশে দক দক করছে রিয়াদের,রিয়াদ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তানজুর দিকে তার ভয়ংকর কিছু করতে ইচ্ছে করছে এই মুহুর্তে,কিন্তু সে করবে না!’হঠাৎই কি হলো রিয়াদ শক্ত করে জড়িয়ে ধরল তানজুকে,,হয়তো সে আর তার ইমোশনকে ধরে রাখতে পারে নি,,
“রিয়াদের আচমকা জড়িয়ে ধরাতে অনেকটা চমকে উঠলো তানজু’!!আস্তে আস্তে চোখ খুললো সে’!!রিয়াদ তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু কিছু বলছে না’!!তাই তানজু নিজেই কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠলঃ

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

—“সরি…
“তানজুকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে তানজুকে জড়িয়ে ধরেই বলে উঠল রিয়াদঃ
—“তুই খুব খারাপ তানজু,,আমায় খুব কষ্ট দিয়েছিস তুই,তুই জানিস কতদিন হলো আমি ঠিক মতো ঘুমাতে পারি না,,এত কষ্ট দেওয়ার কি খুব দরকার ছিল তানজু, দীর্ঘ আট মাস ধরে মানসিক যন্ত্রনায় ভুগছি আমি,,তোর কি একবারও মায়া হয়নি আমার জন্য,,তোর জন্য কতরাত কেঁদেছি আমি,কতরাত নির্ঘুমে কেটেছে আমার,,
মাঝে মাঝে ইচ্ছে করতো দৌড়ে চলে আসি তোর কাছে,,তুই কি করে ভাবলি তানজু আমি তোর জায়গায় অন্যকাউকে মেনে নিবো!’আমাকে তো একবার বলতে পারতি সবটা আমি না হয় বোঝাতাম রুহিকে,,রুহিকে ভালো রাখতে গিয়ে আমায় যে তুই বড্ড বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলেছিস তুই,,

“রিয়াদের কথাগুলো শুনতে শুনতে তানজু নিজেও রিয়াদকে জড়িয়ে ধরে’!!কষ্ট হচ্ছে তার,এমনটা তো নয় যে সে কষ্ট পায় নি এতদিন, সেও তো পেয়েছে,রিয়াদ তো তাও তাকে ভালোবাসি বলে কষ্ট পেয়েছে আর সে তো ভালোবেসেও বলতে পারে নি রিয়াদকে,…ভালোবাসি বলার পর কষ্টটা একরকম হয় আর ভালোবাসি বলতে না পারার যন্ত্রণাটা অন্যরকম হয়!’রিয়াদের কথার মাঝখানেই তানজু বলে উঠলঃ

—“সরি ভাইয়া,ভুল হয়ে গেছে আর কখনো এমন ভুল হবে না,আমি আর তোমায় কোনোদিন কষ্ট দিবো না,,সত্যি ভুল হয়ে গেছে,আমার হয়তো তোমায় সবটা আগেই বলা উচিত ছিল,বিশ্বাস করো এমনটা নয় যে তোমায় কষ্ট দিয়ে আমি খুব খুশি ছিলাম,আমারও তো কষ্ট হতো,,আমিও যে তোমায় খুব ভালোবাসি…
“বলতে বলতে কেঁদে উঠলো তানজু’!!একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো দুজনেই’!!দুজনেরই কষ্ট হচ্ছে, আজ নিজেদের ইমোশন নিজেদের ভালোবাসা সব একত্রে বেরিয়ে আসছে দুজনের,, ঝর্ণার পানিতে ভিজে গেছে দুজনেই কিন্তু সেদিকে তাদের কোনো হুস নেই, তারা তো তাদের মতো একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে ব্যস্ত,,
“অনেক কষ্ট পাওয়ার পর হঠাৎ যখন ভালোবাসার মানুষটিকে পেয়ে যায় তখন হয়তো এতটাই ইমোশনাল হয়ে যায় দুজনেই,যেমনটা রিয়াদ – তানজু হয়েছে!’

“আধ ঘন্টা পর…..
“হঠাৎই রিয়াদ তানজুকে ছেড়ে দিলো,,তারপর স্টিট কন্ঠে বলে উঠলঃ
—“তুই যদি ভেবে থাকিস একটু ইমোশনাল হয়ে গেছি বলে তোকে আমি ক্ষমা করে দিয়েছি তাহলে তুই ভুল ভাবছিস তোকে আমি কোনোদিনও ক্ষমা করবো না তানজু’…
“বলেই রিয়াদ বেরিয়ে যায় ওয়াশরুম থেকে আর তানজু চুপটি করে তাকিয়ে রইলো রিয়াদের যাওয়ার পানে’!!তারপর মুচকি হেঁসে বলে উঠল সেঃ

—“আমি জানি আমার গুলুমুলু জামাই তোমার আমার উপর বড্ড অভিমান জমেছে কিন্তু এই অভিমান বেশিদিন থাকবে না আমি সেটাও জানি,,তুমি যতই বলো তুমি আমায় ক্ষমা করতে পারবে না ক্ষমা তো তুমি কখনই করে দিয়েছো,তোমার চোখই সব বলে দিয়েছে আমায়,, ভেবেই মুচকি হাসলো তানজু….
“হঠাৎই তানজুর মনে পরলো সে তো ভিজে একাকার হয়ে গেছে,,আর পরনের মতো কিছুই নেই এখানে তাহলে এখন কি পরে বের হবে সে’!!

“কিছুক্ষণ পর…
“আস্তে আস্তে ওয়াশরুমের দরজা খুলে উঁকি ঝুঁকি মারতে লাগলো তানজু,,রিয়াদ ততক্ষণে চেঞ্জ করে ফেলেছে,,বিছানার উপর আরাম করে বসে চুল মুছছে রিয়াদ,,সে জানে তানজু তাকে ডাকবে আর সে এটাও বুঝতে পেরেছে তানজু ওয়াশরুমের দরজা খুলে উঁকি ঝুঁকি মারছে,,রিয়াদের ভাবনার মাঝেই বলে উঠল তানজুঃ
—“এই যে শুনছো…
“তানজুর এমন কথা শুনে কাশি উঠে যায় রিয়াদের সাথে হাসিও পাচ্ছে,রিয়াদ তার হাসি থামিয়ে রাগান্বিত কন্ঠে বলে উঠলঃ
—“কি হইছে চেচাচ্ছিস কেনো…?’

—“শুনো না জামাই তুমি তো রেগেমেগে আমায় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকিয়ে ভিজিয়ে দিয়ে চলে গেলে,এখন আমি কি পড়ে বাহিরে বের হবো শুনি,,গায়ের লেহেঙ্গা তো ভিজে অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে,এখন তুমি কি আমায় একটা ড্রেস দিবে যেটা পরে আমি বের হবো…
“তানজুর কথা শুনে ভিতরে ভিতরে হাসি পাচ্ছে রিয়াদের কিন্তু এই মুহুর্তে সে তার হাসি চাপিয়ে রেখে বলে উঠলঃ
—“আমি পারবো না তোর টা তুই নিজে নিয়ে নে…
—“এমন করছো কেন আমার গুলুমুলু জামাই,নাগ করে না জানু,এমনিতেই এতরাতে ভিজেছি তারওপর ভেজালো অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছি এরপর আমার ঠান্ডা লেগে গেলে তো তোমারই কষ্ট হবে তাই না, তাই প্লিজ জামাই আমার একটা জামা নিয়ে আসো পিনিজ…

“তানজুর কথা শুনে কিছুক্ষন চুপ থাকলো রিয়াদ’!!তারপর বিরক্ত নিয়ে বললো সেঃ
—“কোথায় আছে তোর জামা…
“রিয়াদের কথা শুনে হেঁসে উঠলো তানজু’!!তারপর বললোঃ
—“এই তো আমার গুলুমুলু ভালো জামাই,দেখো আশেপাশেই আমার একটা ব্যাগ আছে ওখান থেকে কিছু একটা নিয়ে আসো…
“তানজুর কথা শুনে রিয়াদও আর উপায় না পেয়ে খুঁজতে লাগলো তানজুর ব্যাগ’!!কারন আর যাই হোক সে চায় না তানজু অসুস্থ হয়ে পরুক….
“৩ মিনিট পর…..

“রিয়াদ তানজুর ব্যাগ থেকে একটা সুন্দর ব্লাক শাড়ি বের করে নিয়ে গেল তানজুর কাছে’!!তারপর তানজুর দিকে এগিয়ে দিয়ে বললোঃ
—“নে এটা পর….
“রিয়াদের কথা শুনে তানজুও ওয়াশরুমের দরজা খুলে তার হাত বের করে রিয়াদ কাছ থেকে তার জামাটা নিলো, শাড়ি দেখে অবাক হয়ে বললো সেঃ
—“তুমি কি আর কিছু পেলে না জামাই এতরাতে শাড়ি পরবো…
—“অতশত জানি না ওটা সামনে ছিল তাই নিয়ে এসেছি পরলে পর না পরলে ওইভাবেই ভেজালো অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাক!’
“বলেই চলে আসে রিয়াদ ওয়াশরুমের সামনে থেকে!’
“আর এদিকে বেচারি তানজু শেষমেশ কোনো উপায় না পেয়ে বাধ্য হয়ে শাড়ি পড়তে ব্যস্ত হয়ে পরলো!’

“বিছানায় চুপটি করে বসে আছে রিয়াদ!’ঘড়ির কাটায় দুটো বেজে দু’মিনিট!’এমন সময় ওয়াশরুমের দরজা খুলে বের হলো তানজু,ব্লাক শাড়ি পড়ে চুলগুলো মুছতে মুছতে বের হলো সে,,ঘন কালো লম্বা চুল,সদ্য গোসল করে আসার ফলে একদম ফুরফুরে আর সতেজ লাগছে তানজুকে,,আবারো সেই আগের মতো এক অদ্ভুত ঘোরে আঁটকে গেল রিয়াদ,,চোখ যেন সরছেই না তার,এক অদ্ভুত মায়া আছে তানজুর ভিতর সেটা বারবার আকৃষ্ট করে রিয়াদকে,তাড়াতাড়ি চোখ নামিয়ে নিলো সে’!!

“আয়নায় নিজেকে দেখতে ব্যস্ত তানজু,,তার দিকে যে কেউ গভীর ভাবে তাকিয়ে ছিল এতক্ষণ তার দিকে তার কোনো হুস নেই,সে তো তার মতো তার কাজে ব্যস্ত!’তানজু তার চুল মুছে মুখে হাল্কা একটু পাউডার দিয়ে অগ্রসর হলো রিয়াদের দিকে’!!রিয়াদের দিকে তাকিয়ে বললো সেঃ
—“কি হলো আজ রাতে কি আর ঘুমাবে না নাকি,,
—“হুম ঘুমাবো তো…
—“তাহলে ঘুমাচ্ছো কেনো?’
—“আমার মাথাটা প্রচুর ব্যাথা করছে তুই এখন টিপে দিবি তাই…
—“কি…
—“কানা নাকি…
—“কানা হবো কেন…

—“তাহলে চেচাচ্ছিস কেন তাড়াতাড়ি টিভি আর রুমের লাইট অফ করে চলে আয়…
”বিনিময়ে তানজুর আর কিছু বললো না,চুপচাপ টিভি আর রুমের লাইট অফ করে এসে বসলো সে রিয়াদের পাশে’!!তানজু বসতেই রিয়াদ তানজুর কোলে মাথা দিল,,তারপর বললোঃ
—“যতক্ষণে আমি না ঘুমাবো ততক্ষণ তুই আমার মাথা টিপে দিবি বুঝেছিস…
“উওরে মাথা নাড়ায় তানজু!’রিয়াদ দু’পলক তানজুর দিকে তাকিয়ে থেকে তানজুর কোলে মাথা দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো,আজ বহুদিন পর রিয়াদ শান্তিতে ঘুম দিবে,,সে আজ খুব খুশি সেও ভাবেনি লাস্ট মোমেন্টে এসে এসব কিছু হবে,আর তার সাথে তানজুর বিয়ে হবে,,বড্ড খুশি সে,,আনমনেই হাল্কা হেঁসে চোখ বন্ধ করে নিলো রিয়াদ,,আর তানজু রিয়াদের চুলে বিলি কাটতে লাগলো,,সেও খুশি…..

“জোৎসা ভরা রাত,জানালার কার্নিশ দিয়ে সাদা পর্দা ভেদ করে রাতের শীতল মেশানো ঠান্ডা বাতাস আসছে,,আর সেই বাতাস এসে লাগছে রিয়াদ তানজুর গায়ে’!!রুমে কোনো লাইট জ্বলছে না তারপরও জোৎসা ভরা রাতের আলো এসে রুমে পরায় সবকিছুই পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে….
“আধ ঘন্টা পর….
“তানজু তাকিয়ে আছে রিয়াদের মুখের দিকে!’এক অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করছে তার ভিতর!’আনমনেই মুচকি হাসলো তানজু তারপর রিয়াদের কপালে হাত দিয়ে বলে উঠল সেঃ

—“আমি জানি তুমি আমায় খুব ভালোবাসো প্রিয়,হয়তো তোমায় একটু বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলেছি আমি,কিন্তু বিশ্বাস কর এমনটা করার একদমই ইচ্ছে ছিল না,রুহির জন্যই এমনটা করা লাগলো, আমি চাই নি ওহ আবার কষ্ট পাক!কিন্তু কি এক কান্ড দেখো শেষ পর্যন্ত রুহিও তার ভালোবাসার মানুষকে পেয়ে গেল আর আমিও আমার ভালোবাসার মানুষকে,,সত্যি বলতে ভাগ্য যার জন্য যাকে বানিয়েছে সে তারই হবে,,তবে হা আমি সত্যি ভাবি নি শেষ পর্যন্ত তোমার সাথে আমার বিয়ে হবে,,আমি খুব খুশি প্রিয়,তার সাথে তোমায় এটাও কথা দিচ্ছি এই তানজু তোমায় আর কোনোদিন কষ্ট দিবে না,,কারন আমিও যে তোমায় খুব খুব ভালোবাসি প্রিয়..

“বলেই তানজু রিয়াদের কপালে আর দু’গালে চুমু কাটলো,,তারপর রিয়াদের দু’হাত জড়িয়ে ধরে বলল সেঃ
—“বড্ড ভালোবাসি তোমায়,জানি না কখন কিভাবে এতটা ভালোবেসে ফেলেছি আমি,সত্যি বলতে আমি তো কখনো ভাবি নি আমি কাউকে ভালোবাসবো,,,তোমায় এওতো এওতো ভালোবাসি প্রিয়’!!
“এতটুকু বলে রিয়াদের হাতেও চুমু কাটলো তানজু!’জোৎসা ভরা রাতের আলো এসে পরছে রিয়াদের মুখে,,চকচক করছে তার মুখ,,তানজু মুচকি হাসলো,,,
“খুশিতে পাগল হয়ে যাওয়ার উপক্রম তার,,অতিরিক্ত খুশি হলে মানুষ যেমন পাগল হয়ে যায় তানজুও তেমন পাগল হয়ে গেছে,যার ফলস্বরূপ রিয়াদের দু’গালে কপালে আর হাতে চুমু দেওয়া…..

“বেশকিছুক্ষন পর….
“রিয়াদের মাথা টিপতে টিপতেই ঘুমিয়ে পরল তানজু’!!তানজু ঘুমিয়ে পড়েছে বুঝতে পেরে আস্তে আস্তে তানজুর কোল থেকে মাথা উঠালো রিয়াদ,,এমনটা নয় তানজু যা যা বলেছে আর যা যা করেছে তা কিছু বুঝতে বা শুনতে পাই নি রিয়াদ,সবকিছুই শুনেছে সে তার সাথে তানজুর ঠোঁটের স্পর্শেও হাল্কা কেঁপে কেঁপে উঠেছে সে!’আনমনেই মুচকি হাসলো রিয়াদ,,তারপর সুন্দর করে তানজুকে বালিশে শুয়ে দিলো সে’!!কিছুক্ষন তানজুর মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে তানজুর কপালে চুমু কাটে রিয়াদ’!!তারপর বলে সেঃ

—“পাগলী একটা…
“আনমনেই হেঁসে তানজুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরল রিয়াদ!’এতদিনের কষ্ট, এত দিনের যন্ত্রণা নিমিষেই চলে গেছে রিয়াদের প্রিয় মানুষটিকে জড়িয়ে ধরতে পেরে!’
“আকাশের চাঁদটাও যেন আজ খুব খুশি রিয়াদ তানজুর আনন্দে…
“আলোকিত জোৎসাতে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে রিয়াদ-তানজু,একরাশ মুগ্ধতা,একরাশ সিদ্ধতা আর হাজারো ভালোবাসা ঘিরে ধরেছে তাদের!’যেন এক অন্যরকম ভালো লাগা,সাথে এক অন্যরকম অনুভূতি….

“সকালের ফুড়ফুড়ে সতেজতা মেশানো আলোতে ঘুম ভাঙল তানজুর’!!নিজেকে রিয়াদের বাহুডোরে দেখে মুচকি হাসলো সে’!!তারপর কিছুক্ষণ রিয়াদকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থেকে উঠে বসলো তানজু!’ঘড়ির কাঁটায় দশটা বাজে,,এত বেলা করে ঘুমিয়ে ছিল সে বুঝতেই পারে নি,,ছিঃ ছিঃ নতুন বউ এত সকাল পর্যন্ত ঘুমায় নাকি ভাবতেই কেমন কেমন লাগছে তানজুর,,আর বেশি কিছু না ভেবে তাড়াতাড়ি রিয়াদকে ছাড়িয়ে চলে যায় সে ওয়াশরুমের দিকে…..

“রান্নাঘরে কাজ করছিল খালামনি!’এমন সময় লাল টুকটুকে শাড়ি পড়ে নতুন বউ সেজে রান্না ঘরের এসে দাঁড়ালো তানজু,তারপর মিষ্টি হেঁসে বললো সেঃ
—“মামুনি…..
“আচমকা তানজুর কন্ঠ শুনে পিছন ঘুরে তাকালো রিয়াদের মা,,তানজুকে নতুন সাজে দেখে মুচকি হাসলেন উনি’!!তারপর বললোঃ
—“হুম বল,,,
—“আমাকে কেমন লাগছে?’
—“একদম ফুলকুমারীর মতো…
“হাসলো তানজু’!!তারপর পিছন থেকে রিয়াদের মাকে জড়িয়ে ধরে বলল তানজুঃ
—“তুমি আমার উপর রেগে নেই তো মামুনি…
—“হুম রেগেছিলাম তো কিন্তু সকাল সকাল তোর মুখ আর তোর মুখে মামুনি ডাক শুনেই সব রাগ চলে গেছে আমার….
“রিয়াদের মায়ের কথা শুনে তানজু ওনার গালে চুমু কাটে তারপর বললোঃ
—“এওতোগুলো থ্যাংকু মামুনি….
“মুঁচকি হাসলেন মুক্তা বেগম!'” তারপর বললেন উনিঃ
—“পাগলী একটা….

“পরেরদিন খুব বড় করেই রিয়াদ-তানজু,অভ্র-রুহি আর শিফা আহানের বৌ-ভাতের অনুষ্ঠান পালন করা হয়!’আজ সবাই খুশি যে যার ভালোবাসার মানুষকে পেয়ে গেছে!’খুনশুঁটি, রাগ অভিমান সবকিছু মিলিয়েই কাটছে রিয়াদ তানজুর দিন,,
“রিয়াদের রাগ গলে অনেক আগেই পানি হয়ে গেছে!’শুধু প্রকাশ করা বাকি….
“বিকাল_৫ঃ০০টা…..
“সোফায় আরাম ছে বসে টিভি দেখছে সাথে পপকন খাচ্ছে তানজু’!!এমন সময় কলিংবেল বাজালো কেউ তানজু বুঝে গেছে কারা এসেছে!’তানজু টিভিটা অফ করে দৌড়ে গিয়ে দরজা খুললো’!!সামনেই তার পিচ্চি বন্ধুদের দেখে খুশি হয়ে বললো সেঃ

—“তোরা চলে এসেছিস,,,
—“হুম তানজু আপু…
—“তাহলে দেরি কিসের চল তাড়াতাড়ি…
“বলেই তানজু গো!’ওহ তোমাদের তো একটা কথা বলতে ভুলেই গেছি তানজু এখন আবার আগের ফরমে চলে গেছে!’সবাই খুশি বিষয়টায়,সবাই আবার তাদের হারানো তানজুকে ফিরে পেয়েছে বলে….

“এলাকায় থাকা সেই খোলা মাঠটায় বসে ক্রিকেট খেলছে তানজু আর তার পিচ্চিরা!’সাথে অনেক মজা,,আজকে আবার কুচুটে বুড়ি চেঁচিয়ে উঠলো তানজুর উপর,,এতদিন সেও মিস করতো তানজুকে, তানজুর সাথে চিল্লাতে তারও ভালো লাগতো,,কুচুটে বুড়ির বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে তানজু আর পিচ্চিরা কারন আজকে খেলা শুরু করার আগেই তানজু বল মেরে কুচুটে বুড়ির জানালা ভেঙে ফেলেছে!’দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলে উঠল সিফাতঃ
—“কি হবে তানজু আপু বুড়ি কি বল দিবে আমাদের…
—“টেনশন নিস না আমি আছি তো….
“দরজায় নক করতেই দরজা খুললো কুচুটে বুড়ি, ওনার ভালো নাম হলো শর্মিলা বেগম,,একটা লাল রঙের শাড়ি পড়ে বেরিয়েছে উনি,,তানজু ওরা তো ওনাকে দেখে হা হয়ে তাকিয়ে রইল!’ তানজু হা হয়ে বলে উঠলঃ
—“ওরে বুড়ি তোমায় তো সেই লাগছে আমি তো তোমায় দেখেই ক্রাশ খাইছি,আমি যদি ছেলে হতাম তোমার সাথে বিয়া পাক্কা….

“তানজুর কথা শুনে হাসলো বুড়ি!’তারপর বললেন উনিঃ
–“উম,টুনটুনির শক কতো শর্মিলা বেগমকে বিয়ে করবে…
“বুড়ির কথা শুনে হেঁসে উঠলো সবাই!’ তানজু তার হাসি থামিয়ে মিনমিন কন্ঠে বললোঃ
—“বলছিলাম কি বুড়ি আজকে আর রাগ করো না বলটা দিয়ে দেও পিনিজ…
“বুড়ি কিছুক্ষন ভেবে বলে উঠলঃ
—“দিতে পারি তবে আমার একটা শর্ত আছে…
“ওনার কথা শুনে তানজু অবাক হয়ে বললোঃ
—“কি শর্ত? ‘
—“আমিও খেলবো তোদের সাথে…
“সাথে সাথে সবাই চেঁচিয়ে বললোঃ
—“কি…
—“তোরা কানা নাকি…
—“তুমি সত্যি খেলবে বুড়ি…
—“হুম….
—“ঠিক আছে চলো তবে….

এক ফালি রোদ্দুর পর্ব ৩৯

“তারপর আর কি সবাই মিলে একসাথে ক্রিকেট খেললো এই প্রথম বার তানজুদের সাথে ক্ষেট ক্ষেট করা বুড়িও খেলছে ভালো লাগছে সবার,আনন্দ আর হুল্লোড়ে কাটছে সবার দিন…
“হাসি আনন্দ আর হুল্লোড়ে কেটে গেল পুরো এক বছর!?
“এই এক বছরে কোনো কিছু না পাল্টালেও পাল্টে গেছে রিয়াদ তানজুর জীবন কাহিনি,,পাল্টে গেছে আহান আর শিফার জীবন কারন ওরা এখন আমেরিকায় থাকে,,রিয়াদও যেতে পারতো কিন্তু তানজু রাজি হলো না কারন আর যাই হোক সে তার পিচ্চি ফেমিলিদের ছেড়ে কোথাও যাবে না,তবে হা সে কথা দিয়েছে আহান শিফাকে,কোনো এক সময় তারা সবাই মিলে যাবে আমেরিকা অনেকটা সময় কাটাবে তাদের সাথে অনেক মজা করবে,অভ্র আর রুহিকেও নিবে তাদের সাথে,তাদের জীবনও কাটছে খুব আনন্দে,অভ্র তো আজও তানজুর সেই রাগান্বিত রূপের কথা ভুলতে পারে নি…

“দুপুর তিনটে…..
“হসপিটালে নিজের চেম্বারে বসে আছে রিয়াদ,,এমন সময় ফোন বাজলো রিয়াদের, উপরে তানজুর নাম দেখে ফোনটা তুলে বললো সেঃ
—“হ্যালো….
“তানজু রিয়াদের হ্যালোর উওর না দিয়ে বলে উঠলঃ
—“ডক্টর সাহেব, তাড়াতাড়ি নিচে চলে আসুন আমরা বের হবো…
“তানজুর কথা শুনে রিয়াদ অবাক হয়ে বললোঃ
—“এখন…
—“হুম,,আমি তোমার জন্য গাড়ি নিয়ে নিচে অপেক্ষা করছি তাড়াতাড়ি চলে আসো…
—“কিন্তু মিসেস রিয়াদ,,এখন তো আসা সম্ভব নয়…
—“অতশত জানি না তুমি পাঁচ মিনিটের মধ্যে আসছো মানে আসছো….
“বলেই ফোনটা কেটে দেয় তানজু,,এদিকে রিয়াদ হ্যালো হ্যালো বললো দু’বার, তারপর বাধ্য হয়ে চেম্বার থেকে বেরিয়ে যায় সে…..
“গাড়িতে বসে আছে তানজু আজকে অনেক বড় সারপ্রাইজ দিবে সে রিয়াদেরকে….

এক ফালি রোদ্দুর শেষ পর্ব