এক ফালি রোদ্দুর পর্ব ৩৮ || লেখনীতে: তানজিল মীম

এক ফালি রোদ্দুর পর্ব ৩৮
লেখনীতে: তানজিল মীম

—“আপি তোমার উডবির নাম কি….
“যখন পার্লারের একটা মেয়ে তানজুকে মেহেন্দি পড়াতে ছিল তখন ওই কথাটা জিজ্ঞেস করেছিল তাকে’!!তখন তানজু রিয়াদের ভাবনায় মগ্ন ছিল,আর ভাবনার জন্যই হয়তো আনমনে তখন তানজু বলে ফেলে রিয়াদ যার পরিনতি তার হাতের রিয়াদের নাম….

“খাটের পাশে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে কথাগুলো ভাবলাম আমি,নিমিষেই নিজের ভুলের জন্য এমনটা হওয়াতে আরো বেশি খারাপ লাগছে সাথে রাগও হচ্ছে, উফ!কেউ যদি এখন আমার এই হাত দেখে ফেলে তখন কি হবে,তার থেকেও বড় কথা যদি রুহি দেখে তখন,উফ তানজু কি ভুল করে বসলি তুই,,তোকে ভুলতে হবে রিয়াদকে,কাল বাদে পরশুই রিয়াদ চিরতরে রুহির হয়ে যাবে,,এখনই যদি তোর এমন অবস্থা হয় তখন কি করবি,,মেহেদীর রঙ এতোটাই গাড়ো হয়েছে যে সাবান দিয়ে হাজার ঘসলেও কালকের ভিতর রিয়াদের নাম মুছবে না,এখন কি করবে তানজু,নানা কিছু ভেবে শেষমেশ কিছু খুঁজে না পেয়ে ব্যর্থ হয়ে ঘুমিয়ে পরলো সে!’ঘুমানোর আগে এতটুকু ভেবে রেখেছে তানজু কাল কোনো মতেই তার এই হাত কাউকে দেখানো যাবে না!’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“লাল টুকটকে বেনারসি শাড়ি পড়ে বিয়ের জন্য তৈরি হচ্ছে তানজু,ভাড়ি গহনায় সঞ্চিত সে’!!মাথা টিকলি,হাতে ভাড়ি চুড়ি,চোখে মোটা করে আইলাইনার,মাসকারা সমৃদ্ধ ভাড়ি মেকাপে তৈরি সে’!!এরই ভিতর শোনা গেল জামাই এসেছে,জামাই এসেছে শুনেই বুকের ভিতর দক করে উঠলো তানজুর!’আজ পুরোপুরি ভাবে না হলেও লিগেলি অভ্রের ওয়াইফ হয়ে যাবে সে’!!তানজু আধও জানে না তার সাথে অভ্রের সম্পর্কটা ঠিক কেমন হবে?’ভালো তো সে কোনোদিনও বাসতে পারবে না অভ্রকে,আজ চাইলেও তানজু কিছু করবে না কারন আর যাইহোক তার বাবার একটা সম্মান আছে,নিজের জন্য না হলেও পরিবারের জন্য বিয়েটা তাকে করতেই হবে,,নানাবিদ চিন্তা ভাবনায় মগ্ন সে,এমন সময় তার রুমে এসে হাজির তরী আর আফরিন তাকে নিয়ে যেতে এসেছে তারা’!!তরী খুশি হয়ে বললো তানজুকেঃ

—“তানজু আপু অভ্র দুলাভাই চলে এসেছে, আজকে তোমার বিয়ে আমার যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না…
“বিনিময়ে তানজু কিছু বললো না নীরবে রইলো সে’!!তানজুকে চুপ থাকতে দেখে তরী আর কিছু বললো না’!!আফরিন মুচকি হেঁসে তানজুর হাত ধরে নিয়ে যেতে লাগলো’!!তানজুও স্তব্ধতার নীরবে চলে যেতে লাগলো আফরিনের সাথে,মুখে কোনো কথা নেই তাঁর!”

“অবশেষে সেই সময় চলেই আসলো কাজী তানজুকে কবুল বলতে বললো’!!তানজু চুপ করে আছে, কি করবে সে বুঝতে পারছে না বুকের ভিতর দক দক করছে তার,আশেপাশে কোথাও রিয়াদকে দেখা যাচ্ছে না,কিন্তু রুহি তার পাশেই বসে,মুখে তার মিষ্টি হাসি,,তানজু বুঝতে পারছে না রুহি যখন এখানে তাহলে রিয়াদ গেল কই!’কাজী আবারো তাড়া দিলো তানজুকে কবুল বলার জন্য,তানজু ঘেমে অস্থির হয়ে যাচ্ছে, আশেপাশে সবাই তাকে কবুল বলার জন্য তাড়া দিচ্ছে,,শেষমেশ চোখ বন্ধ করে তানজু কবুল বলে দিলো, বিয়ে হয়ে গেল তাঁর!’ধীরে ধীরে ভরা সভা নিস্তব্ধতায় ঘিরে ধরলো’!!একে একে তানজুকে রেখেই বেরিয়ে যাচ্ছে সবাই কারো মুখে কথা নেই,সবার এমন কাজে ঘাবড়ে যায় তানজু,,সে চেঁচিয়ে ডাকছে সবাইকে বাট কেউ তার ডাকে সারা দিচ্ছে না’!!

পুরো বাড়ি নিমিষেই কুটকুটে নীরবতায় ভর করলো!’ আলোকিত পরিবেশ নিমিষেই সন্ধ্যা হয়ে আসলো মনে হয়’!!কনে বসে নিজের বিছানায় মাথা নিচু করে বসে আছে তানজু,,এমন সময় ড্রিংক হাতে তার রুমের দরজা খুললো রিয়াদ,,চোখ তার রক্ত বর্ন ধারণ করেছে,দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে অসম্ভব রেগে আছে,,তানজু রিয়াদকে দেখে অনেক ঘাবড়ে যায় সাথে ভিষণ অবাকও হয় তার জানা মতে এই মুহুর্তে অভ্রের আসার কথা তার রুমে কিন্তু রিয়াদ কেন?’তানজু ভয়ার্ত চেহারায় তাকিয়ে আছে রিয়াদের দিকে,রিয়াদের লাল চোখ দেখে ভয়ে বুক কেঁপে উঠল তার’!!
“এদিকে রিয়াদ ড্রিংক হাতে ঢুলতে ঢুলতে প্রবেশ করল তানজুর রুমে,তারপর তানজুর দিকে তাকিয়ে এগিয়ে চললো সে তার দিকে….

“রিয়াদ হাঁটতে হাঁটতে গিয়ে বসলো একদম তানজুর পাশে!’রিয়াদ বিছানায় বসতেই ছিঁটকে দু’কদম পিছনে চলে যায় তানজু’!!তারপর কাঁপা কাঁপা গলায় বলে সেঃ
—“ভাইয়া তুমি কেন অভ্র কোথায়?’
“তানজুর কথা শুনে আরো রেগে যায় রিয়াদ’!!তানজুর কাঁধ শক্ত করে চেপে ধরে বলে সেঃ
—“কেনো রে অভ্রকে লাগবে কেন তোর আমি আছি না…
—“কিসব বলছো তুমি ভাইয়া…
“রিয়াদ তানজুর চোখের দিকে তাকিয়ে ওর বাহু শক্ত করে চেপে ধরে রাগী কন্ঠে বলে উঠলঃ
—“কি করে পারলি তুই আমায় ছেড়ে অভ্রকে বিয়ে করতে,তোর একটুও কষ্ট হলো না…
“তানজু চুপ!’

—“তানজু চুপ থাকবি না কথা বল (ধমক দিয়ে)
“রিয়াদের ধমকে কেঁপে উঠল তানজু’!!কিন্তু কিছু বললো না’!!হঠাৎই রিয়াদের চোখ যায় তানজুর হাতের দিকে মেহেদী রাঙানো হাতে অভ্রের নাম দেখে আরো রেগে যায় সে’!!তানজুর হাত শক্ত করে চেপে ধরে বলল সেঃ
—“তোর সাহস কি করে হলো আমার নামের জায়গায় অভ্রের নাম লিখতে,,আজ তোর এই হাত আমি রাখবো না…
“রিয়াদের কথা শুনে পুরোই ঘাবড়ে যায় তানজু,,এই রিয়াদকে তানজু চেনে না,আজ রিয়াদ পুরোই চেঞ্জ, আজ রিয়াদের চোখে তানজু তার প্রতি কোনো ভালোবাসা দেখতে পাচ্ছে না যেটা দেখতে পাচ্ছে তা হলো তার প্রতি ঘৃনা আর রাগ!’তানজু তার হাত ছাড়াতে ব্যস্ত হয়ে পরলো’!!কিন্তু রিয়াদ তার হাত এতটাই শক্ত করে ধরেছে যে তার পক্ষে রিয়াদের হাত ছাড়ানো সম্ভব নয়’!!

“এদিকে রিয়াদ ভয়ংকর লুকিং এ তাকিয়ে আছে তানজুর দিকে,কি করবে সে ভাবতেই তার হাতে থাকা ড্রিংকের বোতলটার উপর চোখ গেল’!!রিয়াদ বিছানার পাশে থাকা টেবিলের উপর বোতলটাকে মারলো এক বারি সাথে সাথে কাঁচের বোতল ভেঙে গুড়ো গুড়ো হয়ে গেল’!!রিয়াদের কাজে আরো ভয় পায় তানজু’!!তানজু কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠলঃ
—“এটা দিয়ে করবে….
—“তুই আমায় যতটা না পুড়িয়েছিস তানজু তার থেকেও বেশি যন্ত্রণা তোকে দিবো আমি,তোর সাহস কি করে হলো অভ্রের নামে মেহেন্দি পড়ার,আজ তার হাতের কি করি আমি, তুই শুধু দেখ,,
—“প্লিজ ভাইয়া এমন করো না,
—“তোর কোনো কথাই শুনবো না আমি,,
“বলেই রিয়াদ তানজুর হাতে ভিতর কাঁচের টুকরো ঢুকিয়ে দিল!’

“সাথে সাথে তানজু এক চিৎকার দিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে বসলো,ভয়ে হাত পা কাঁপছে তার,ঘেমে পুরো একাকার হয়ে গেছে তানজু,তানজুর চিৎকার শুনে তার রুমে ঢুকলো তার মা’!!দৌড়ে গিয়ে বসলো তানজুর পাশে তারপর বললো সেঃ
—“কি হয়েছে কি হয়েছে??’
“তানজু কিছু না ভেবেই শক্ত করে তার মাকে জড়িয়ে ধরলো’!!প্রচন্ড ভয় পেয়েছে সে,তানজু বুঝে গেছে এতক্ষণ সে স্বপ্ন দেখতে ছিল,জোরে জোরে শ্বাস ফেললো সে’,রিয়াদের চোখ দুটোর কথা ভাবতেই আরো ভয় লাগছে তানজুর’!!

“তানজুর এমন অবস্থা দেখে তানজুর মা বুঝে গেছে তানজু ভয়ংকর কোনো দুঃস্বপ্ন দেখেছে’!!মেয়ের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে উঠল তার মাঃ
—“কি হয়েছে ভয় পেয়েছিস কোনো ভুলভাল স্বপ্ন দেখেছিস ….
“মায়ের কথা শুনে মাথা নাড়ায় তানজু’!!তানজুর কপালে চুমু একে বলে উঠলঃ
—“ভয় পাস না নিছোকি স্বপ্ন ছিল,,আর তুই তো জানিস স্বপ্ন কখনো সত্যি হয় না!’
“কিন্তু তানজু শান্ত হতে পারলো রিয়াদের রাগান্বিত ফেসের কথা ভাবলেই ভয়ে শরীর কাঁপছে তার’!!কিভাবে তার হাতে ভাবতেই নিজের হাত দেখলো তানজু,,কই নাতো তার হাতে অভ্রের নাম নেই তো সে কাল রাতেই দেখে ছিল তার হাতে রিয়াদের নাম চকচক করছে,,জোরে নিশ্বাস ফেললো তানজু…..

রাত_৮ঃ০০টা…..
“নিজের রুমে পায়চারি করছে রুহি, কোনোকিছুই বুঝতে পারছে না সে’!!কাল রাত থেকেই তার চোখে ঘুম নেই,সবকিছু এলেমেলো হয়ে গেছে তার’!!এমন সময় রুমে ঢুকলো শিফার মা’!!রুহিকে পায়চারি করতে দেখে বললেন উনিঃ
—“কি হলো তুই এইভাবে পায়চারি করছিস কেনো?’
—“হ্যা না কিছু না তো মা কি কিছু বলবে…
—“হুম এখনই তৈরি হোস নি কেনো কিছুক্ষন পরই তো তোদের গায়ে হলুদ…
—“ওহ,ঠিক আছে….
—“হুম তাড়াতাড়ি শাড়িটা পড়ে নিচে আয়….

“বলে চলে যায় রুহির মা’!!রুহির মা বের হতেই শিফা ঢুকে পরলো রুমে ভিতর,পরনে তার হলুদ শাড়ি,চুলগুলো খোলা আর সামান্য মেকাপ’!!এতেই সুন্দর লাগছে তাকে,রুহির দিকে তাকাতেই শিফা অবাক হয়ে বললোঃ
—“তুই এখনো তৈরি হোস নি কেনো,তানজুও তৈরি হয়ে গেছে আর তুই কিনা…
—“আচ্ছা শিফা তোকে একটা কথা বলি…
—“কি কথা?’
—“আচ্ছা তুই যে আহানকে ভালোবাসিস তা বুঝলে কিভাবে….?’
“রুহির কথা শুনে শিফা অবাক হয়ে বললোঃ
—“মানে?’
—“মানে আবার কি তুই যে সত্যি আহানকে ভালোবাসিস তা বুঝলি কিভাবে..?’
—“এটা কোনো কথা…
—“কথা না ঘুরিয়ে সুন্দর ভাবে বল…

—“আচ্ছা ভাবতে দে প্রথম মতো আহানকে আমার ভালো লাগে,কেনো লাগে তা তো বলতে পারবো না,ওর হাঁটা চলা,মুহুর্তেই সবার সাথে মিশে যাওয়া সবকিছুতেই মুগ্ধ আমি এসবের জন্যই ওহ আর একটা বিষয় আছে ওর সাথে কোনো মেয়েকে সহ্য হয় না আমার আর এসবেই জন্যই মনে হলো আহানকে আমি ভালোবাসি…..
—“আচ্ছা তোর যদি কখনো মনে হয় তুই আহানকে নয় অন্য কাউকে ভালোবাসিস তখন…
—“এক্ষেত্রে আমি বলবো সবার প্রতি ভালোবাসা হয় না!’
—“মানে….

—” মানে এটাই কখনো কখনো আমরা আমাদের ভালোলাগাকে ভালোবাসা মনে করি!’ভালোলাগা আর ভালোবাসা এক নয়,ভালোবাসা হলো এমনটা একটা জিনিস যেটা তুই কাউকে বলতে পারবি না কিন্তু ফিল করতে পারবি,তাকে হারানোর ভয় থাকবে তোর,,আরো অনেককিছু,,,আর আহানকে আমি ফিল করি প্রতিটা মুহূর্তে, তাই ওর জায়গায় অন্য কাউকে আমার ভালো লেগেও থাকে তবে সেটা ভালোবাসা হবে না হয়তো ভালোলাগা বা এট্রাকশন’!!এর বেশি কিছু নয়,,কিছু তুই হঠাৎ এসব কেনো ভাবছিস বল তো…

—“হুম না কিছু না বুঝে গেছি আমি,,
—“কি বুঝেছিস…
—“তোর মাথা…
“এতটুকু বলে শাড়ি হাতে ঢুকে পরে রুহি ওয়াশরুমে’!!

“বাড়ির সামনের বড় কম্পাউন্ডে আয়োজন করা হলো রুহি,শিফা,তানজু,অভ্র,আহান আর রিয়াদের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান’!!আজকে পুরো বাড়ি জুড়ে মানুষের আনাগোনা,গ্রাম থেকেও নানাভাই,নানু,মামা, মামী তরী শিউলি আপু,দুলাভাই সবাই এসেছে,,সবাই বেশ অবাক তানজুর বিয়ে যাচ্ছে এটা ভেবে….
“তেমন কোনো জামেলা ছাড়াই ওদের গায়ে হলুদ হয়ে গেল’!!আজ রুহি,শিফা,আর তানজু তিনজনই হলুদ রঙের শাড়ি পড়েছে,আর গায়ে গাধা ফলের তৈরি জুয়েলারি, তিনজনকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে, আর রিয়াদ আহান অভ্র পড়েছে ওয়াইট রঙের পাঞ্জাবি তাদের তিনজনকেও খুব সুন্দর লাগছে’!!
“স্টেজের বসে আছি আমি বিরক্ত লাগছে এখন হলুদ দেওয়া হয়ে গেছে এখন কেন বসে থাকবো?এটা ভেবে আস্তে আস্তে স্টেজ থেকে নেমে পরলাম আমি তারপর চললাম নিজের রুমের দিকে,,কিছু ভালো লাগছে না তাই আনমনেই হাঁটছি আমি….

“সবার আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে আহান আর শিফা’!!আহানের হাতে রয়েছে হলুদ সে লাগিয়ে দিতে চায় শিফার গালে হলুদ’!!আহান হাল্কা হেঁসে বলে উঠলঃ
—“আজকে কিন্তু তোমায় একদম হলুদ পরীর মতো লাগছে শিফা…
“আহানের কথা শুনে মুচকি হাসলো শিফা’!!আহান তার হাতের হলুদ শিফার গালে লাগাতে যাবে এর আগেই শিফা এক মুঠো হলুদ লাগিয়ে দিলো আহানের দু’গালে!’আহান তো পুরো ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল’!!চোখ বড় বড় করে বললো সেঃ
—“এটা কি হলো?’
—“সারপ্রাইজ এটা বলে শিফা দিলো দৌড়,কারন সে জানে আহানের হাতেও হলুদ আছে আর সে যেভাবে আহানকে ভূত বানিয়েছে তাকে না ভূত বানিয়ে দেয় এই ভেবে সে দিল দৌড়…..
“শিফার কাজ দেখে আহান বলে উঠলঃ

—“তবে রে আজ তোমায় একবার হাতে পাই…
“বলে সেও পিছু নিলো শিফার’!!এদিকে শিফা আহানকে দৌড়াতে দেখে হাসতে হাসতে বলে উঠলঃ
—“আগে আমায় হাতে পাবে তারপর তো…
—“তোমায় ভূত বানিয়ে ছাড়বো শিফা…
—“হুম বললেই হলো শিফাকে ধরা এত সহজ নাকি…
“বলেই ফুল স্পিডে দৌড়াতে লাগলো সে’!!এমন সময় আহানের দিকে তাকাতে তাকাতে দৌড়াতে গিয়ে শিফা ধাক্কা খেলো তানজুর সাথে,,হুট করে ঘটনাটা হয়ে যাওয়াতে তানজু তাল সামলাতে না পেরে পড়ে যায় নিচে তার সামনেই ছিল রিয়াদ,, গিয়ে পরলো সে রিয়াদের উপর,,ঘটনাটা এতটাই দ্রুত হয়ে গেল কেউ কিছুই বুঝতে পারলো না,
“তারপর আর কি যা হওয়ার তাই হলো রিয়াদ নিচে আর তানজু তার উপরে পরে গেছে,আর তানজুর গালে হলুদ লেগে গেল রিয়াদের গালে আর রিয়াদের গালের হলুদ তানজুর গালে….
“উপস্থিত সবাই বেশ হতভাগ হয়ে গেল ঘটনাটার জন্য,

“এদিকে রিয়াদ তানজু তাকিয়ে আছে একে অপরের দিকে,,কেউ ঘটনার জন্য প্রস্তুত ছিল না’!!মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে রিয়াদ তানজু দিকে,আর তানজুও তাকিয়ে আছে রিয়াদের দিকে,দুজনেই এক ঘোর লাগানো মুহূর্তে মধ্যে হারিয়ে গেছে,,রিয়াদ তো মনে মনে চাইছে সময়টা এখানেই থেমে যাক আর তাঁরা দুজন এভাবেই থাকুক সবসময়!’
“হঠাৎই তানজুর ধ্যান ফিরলো তাড়াতাড়ি রিয়াদের ওপর থেকে উঠে পরলো সে’!!আশেপাশে না তাকিয়েই দ্রুত চলে গেল’!!
“বেশিক্ষণ এখানে থাকলে তার চোখের পানি যে দেখে ফেলতো রিয়াদ…..

“আচমকাই লাইট অফ হয়ে গেল’!!হঠাৎ করে এমনটা হওয়াতে সবাই বেশ হট্টগোল করতে শুরু করে দিলো’!!স্টেজের পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল অভ্র এমন সময় তার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো কেউ’!!অভ্র এমন কিছুর জন্য একদমই তৈরি ছিল না!’কিছুটা অবাক হয়ে বললো সেঃ
—“কে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো আমায়…
—“হুস সব পড়ে বলবো আগে চলো আমার সাথে…
“এতটুকু বলে রুহি অভ্রের হাত ধরে নিয়ে গেল’!!অভ্রও ভয়েসটা রুহির বুঝতে পেরে আর কিছু বললো না’!!একটা ফাঁকা রুমে দাঁড়িয়ে আছে অভ্র আর রুহি’!!অভ্র রুহির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলঃ

—“আমাকে এখানে কেনো নিয়ে এসেছো?’
—“সরি অভ্র….
—“আর কত সরি বলবে রুহি,, আর এখন সরি বলে কি লাভ বলো তোমার তো বিয়ে ঠিক হয়ে…
“আর কিছু বলার আগেই রুহির অভ্রের ঠোঁটে আঙুল দিয়ে বললোঃ
—“চাইলে অনেক কিছু করা যায় অভ্র,আমি মানছি আমার ভুল হয়ে গেছে, আমি অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি,কিন্তু আমি আজও তোমায় ভালোবাসি অভ্র,,
—“এখন এসব বলে কি লাভ রুহি,,কাল তোমার বিয়ে…
—“অভ্র চলো আমরা সবাইকে সত্যিটা বলে দেই,,,
—“তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে…
—“তুমি কি আমায় ভালোবাসো না অভ্র…
—“খুব বাসি রুহি,
—“তাহলে চলো সবাইকে সত্যিটা বলে দেই….
—“আমি বলি তুমি আগে রিয়াদের সাথে কথা বলো রুহি,অনেকে অনেক প্রশ্ন করবে..
—“আমি সবকিছুর জন্য প্রস্তুত অভ্র,

“অবশেষে সময়ের সাথে সাথে চলে আসলো অভ্র-তানজু,শিফা-আহান আর রিয়াদ-রুহির বিয়ের দিন’!!সময়টা যেন একটু আগে আগেই চলে গেল সবার,,পুরো বাড়িতেই বিয়ে বিয়ে গন্ধ ছড়িয়েছে,,বাচ্চাদের হুল্লোড় সাথে নানান মানুষের আনা গোনা!’ আজকে তানজুর পিচ্চি বন্ধুরাও আসবে,,ওরা সবাই খুব মিস করে তানজুকে আজ খুব করে বকে দিবে তারা তানজুকে,,হুট করে কেন পাল্টে গেলো সে’!!

“আয়নার সামনে বসে আছে তানজু,বুকের ভিতর দক দক করছে তার, কি হবে না হবে কিছুই বুঝতে পারছে না সে,,কষ্ট হচ্ছে ভয়ও লাগছে এখনও তানজু কালকের স্বপ্নের কথা আজও ভুলতে পারে নি,আজকে তানজু একটা গোল্ডেন রঙের ভাড়ি লেহেঙ্গা পড়েছে,চুলগুলো খুব সুন্দর খোপা করে,মাথায় ওড়না আটকানো, হাতে গলায় ভাড়ি জুয়েলারি সাথে ভাড়ি মেকাপে বধূ বেসে অপূর্ব লাগছে তাকে,,তানজুর দিকে তাকিয়ে পার্লারের একটা মেয়ে বললোঃ

–“আপি তোমায় কিন্তু খুব সুন্দর লাগছে…
“বিনিময়ে তানজু কোনো উওর দিলো হাল্কা মুচকি হাসলো’!!এমন সময় তার রুমে ঢুকলো রনি,জেরিন,সিফাত,বাচ্চু,রিফাত,রিয়া,তওহিদ,, তানজু সবাইকে দেখে এক্সাইটিং হয়ে বললোঃ
—“তোরা…
“তানজুর কথা শুনে সবাই দৌড়ে গিয়ে তানজুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিল’!!তানজু ওদের কান্না দেখে নিজেও কেঁদে দিল তারপর বললোঃ

—“আরে তোরা কাঁদছিস কেন?
“তানজুর কথা শুনে জেরিন বলে উঠলঃ
—“আপি তুমি আমাদের ছেড়ে চলে যাবে…
“তানজু কি বলবে বুঝতে পারছে না’!!কষ্ট হচ্ছে তার কতদিন পর ওরা আসলো তার কাছে এর আগেও এসেছিল কিন্তু তানজু তেমন কথা বলে নি!’

—“কোথাও যাবো না আমি,আমি কথা দিচ্ছি সপ্তাহে একদিন তোদের সবার সাথে ক্রিকেট খেলবো,,
—“সত্যি বলছো আপু…
—“হুম…
—“তুমি হঠাৎ পাল্টে কেনো গেলে আপি, তোমায় ছাড়া ভালো লাগছিল না কোনো কিছু…
—“আমি আবার আগের মতো হয়ে যাবো,তোদের জন্য হলেও আমি আগে মতো হয়ে যাবো…
“বলেই তানজুর ওদের সবাইকে জড়িয়ে ধরে!’
“এদিকে পার্লারের মেয়েটি জাস্ট হা হয়ে তাকিয়ে গেছে তার চোখেও অটোমেটিক পানি চলে আসে!’

“নিজের রুমে পায়চারি করছে রুহি,টেনশন হচ্ছে তার, কাল হাজার চেষ্টা করেও রুহি কথা বলতে পারে নি রিয়াদের সাথে,কিন্তু আজকে সে বলেই ছাড়বে,সে এটা না করতে পারলে একসাথে চারটে জীবন নষ্ট হয়ে যাবে যেটা একদমই চায় না সে’!!আজকে রুহিও সেজেছে খুব সাদা লাল রঙের মিশ্রিত লেহেঙ্গা শাড়ি পড়েছে সে’!!চুলগুলো খোলা,সাথে ভাড়ি সাজে ভাড়ি মেকাপে অসাধারণ লাগছে তাঁকে’!!কিন্তু টেনশনে মেকাপ মনে হয় উঠে যাবে তার,ভয় লাগছে তার বুকের ভিতর দক দক করছে,,রুহি বেশি কিছু না ভেবেই রুম থেকে বেরিয়ে গেল,যে করেই হোক তাকে রিয়াদের সাথে কথা বলতেই হবে,,কিছুতেই এই বিয়ে করতে পারবে না সে….

“হাতের সেরোয়ানিটা এক জাটকায় বিছানার উপর ছুঁড়ে মারলো রিয়াদ,কোনোকিছু ভালো লাগছে না তার,কষ্ট হচ্ছে,এমন সময় আহান রিয়াদের কাঁধে হাত রাখলো’!!রিয়াদ আহানের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলঃ
—“আমি আর পারছি না দোস্ত, কি করে আমি মেনে নিবো অভ্রের সাথে তানজুকে,আমি জানি তানজু আমাকে ভালোবাসে তাহলে কেন ও এমন করছে আমার সাথে,ও কি বুঝতে পারছে না আমার যন্ত্রণাটা…
“আহান রিয়াদের দিকে সেরোয়ানিটা এগিয়ে দিয়ে বললোঃ

—“তোকে আমি কিছু বলতে চাই রিয়াদ,হয়তো আমার আগেই বলা উচিত ছিল কিন্তু তানজুর জন্য বলতে পারে নি তোকে…..
“আহানের কথা শুনে রিয়াদ অবাক হয়ে বললোঃ
—“মানে…
—“প্লিজ রিয়াদ আমায় ভুল বুঝিস না,আমি চাই নি এমনটা করতে শুধুমাএ তানজুর জন্য এমনটা করেছি,,
—“স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে বল আহান আমি কিছু বুঝতে পারছি না…
—“বলছি শোন….

“তারপর আহান সেদিন রাতের ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর কথা বললো রিয়াদকে’!!প্রপোজ করার দিন রাতে ঘটে যাওয়া পর পর সব ঘটনা খুলে বললো আহান রিয়াদকে,সব শুনে রিয়াদ কি করবে বুঝতে পারছে না,চরম প্রকার রেগে গেছে সে,,এখনই সে তানজুর কাছে যাবে…..
“হাতের সেরোয়ানিটা বিছানার উপর রেখেই পরনে ব্লাক শার্ট পরা ছিলো রিয়াদের!’ সেটা পরেই রুম থেকে বেরিয়ে যেতে নেয় সে…
“দরজার কাছে আসতেই দেখলো রিয়াদ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে রুহি’!!রুহিকে দেখে আরো মাথা গরম হয়ে যায় রিয়াদের’!!অসম্ভব রেগে গেছে রিয়াদ,শুধুমাএ এই রুহির জন্য তানজু এমনটা করলো….
“রুহি আস্তে গিয়ে রিয়াদের সামনে দাঁড়ালো তারপর বললোঃ

—“বিশ্বাস করো ভাইয়া আমি এসবের কিছুই জানতাম না!’
“রুহির কথা শুনে আহান রিয়াদ দুজনেই অবাক হয় তার মানে রুহি তাদের সবকথা শুনে ফেলেছে’!!
“রুহি অনেক আগেই দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল!’ যখন রিয়াদ সেরোয়ারটা বিছানার উপর ছুঁড়ে মারে,তারপর প্রথমে আহান রিয়াদের কথা শুনে চরম অবাক হয় সে’!পরেই আহানের মুখ থেকে সব শুনে নিজের উপর নিজেরই রাগ হয়!’ তার জন্যই রিয়াদ-তানজুর ভালোবাসাও ব্যাঘাত ঘটলো,সেদিন রাতে এক্সাইটিং এ তানজুকে ফোন করে ভুল করেছে সে’!!তাই মনে মনে ভাবলো রুহি সে যখন ভুল করেছে তখন ভুলের জন্য প্রায়শচিত্ত সেই করবে….
“রুহির রিয়াদের হাত ধরে বললঃ

—“চলো আমার সাথে….
—“কোথায় যাবো…
—“আমার জন্য যখন তোমার আর তানজুর জীবন ওলোট পালোট হয়ে গেঋে,তখন আমি সব ঠিক করে দিবো ভাইয়া…..
“উওরে রিয়াদ আর কিছু বললো না,
“চললো সে রুহির সাথে,,আহানও চললো ওদের পিছন পিছন…

“আয়নার সামনে চুপচাপ বসে আছি আমি,,রুমে কেউ নেই আমার পিচ্চি বন্ধুগুলোও সুন্দর সুন্দর গিফট দিয়ে চলে গেছে,,রিয়াদ ভাইয়ার কথা ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে খুব,চোখের কোনে জমেছে পানি,,এমন সময় হতভম্ব হয়ে রুমে ঢুকলো রুহি আর রিয়াদ ভাইয়া’!!দুজনকে একসাথে এমন সময় এখানে দেখে অবাক হলাম আমি,,কিছু বলতে যাবো এর আগেই রুহি বলে উঠলঃ

এক ফালি রোদ্দুর পর্ব ৩৭

—“একটা কথাও বলবি না তুই….
“এতটুকু বলে আমার হাত ধরে নিয়ে যেতে লাগলো রুহি’!!রুহির কাজে আমি অবাক হয়ে বললামঃ
—“কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস আমায়….
—“তুই একদম চুপ থাকবি তানজু,না হলে খুব খারাপ হয়ে যাবে বলে দিলাম…
—“ঠিক আছে তা নয় চুপ থাকলাম কিন্তু কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস আমায় আর রিয়াদ ভাইয়াও তো আছে কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস আমাদের….

“উওরে আর কোনো কথা বললো না রুহি….
“রুহির রিয়াদ আর তানজুর হাত ধরে নিয়ে গেল সোজা তার বাবার সামনে, অনেকেই ছিল সেখানে,রুহি কোনোকিছু না ভেবেই সবার সামনে বলে উঠলঃ
—“বাবা এই বিয়ে হবে না…..

এক ফালি রোদ্দুর পর্ব ৩৯