এক ফালি রোদ্দুর পর্ব ৩৭ || লেখনীতে: তানজিল মীম

এক ফালি রোদ্দুর পর্ব ৩৭
লেখনীতে: তানজিল মীম

“জোৎসা ভরা রাতে,খোলা চুলে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছি আমি!’কিছু ভালো লাগছে না,সবটা কেমন যেন ঘোলাটে হয়ে গেছে,এমনটা তো হওয়ার কথা ছিল না!’আমি তো শুধু রিয়াদ আর রুহির বিয়ে দিতে চেয়েছিলাম’!!তাহলে মাঝখানে এই অভ্র কেন আসলো,কেন যে সেদিন বাবার কথা শুনে বিয়ে তে রাজি হলাম,নিজের ওপর নিজেরই রাগ হচ্ছে এখন,সবকিছু হাতের বাহিরে চলে যাচ্ছে মনে হচ্ছে,আমি কিভাবে রিয়াদের সাথে রুহির বিয়েটা মেনে নিবো’!!

কিছু ভালো লাগছে না মাথার চুল শক্ত করে চেপে ধরে দাড়িয়ে রইলাম,কাল থেকে একবারও রিয়াদ ভাইয়া আমার সাথে কথা বলে নি,রেস্টুরেন্টে বসেও বলে নি,হয়তো আর বলবেও না,সেদিন তাকে অনেক বড় আঘাত করে ফেলেছি আমি,আচ্ছা আমার কি উচিত ভাইয়াকে একবার সরি বলা!’না থাক ঘৃনা করুক আমায়,আমায় ঘৃনা করলেই রুহিকে খুব সহজেই মেনে নিতে পারবে’!!রুহি অনেক ব্যাথা পেয়েছে জীবনে,কখনো জানা হয়নি ছেলেটি কে ছিল যাকে রুহি পাগলের মতো ভালোবাসতো,রুহি তো কখনো ছেলেটার নাম পর্যন্ত বলে নি আমাদের,নানা কিছু ভেবে দীর্ঘ শ্বাস ফেললাম আমি,কিছু ভালো লাগছে না,রিয়াদ ভাইয়ার রুমটাও কুটকুটে অন্ধকারে ঘেরা,কে জানে আধোও ভাইয়া রুমে আছে কিনা!’কিছুক্ষন রিয়াদ ভাইয়ার রুমের দিকে তাকিয়ে….

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“আস্তে আস্তে বেলকনি ছেড়ে চলে আসলাম ভিতরে,আজ নিজের ওপর নিজেরই বিরক্ত লাগছে,মনে হচ্ছে আমি যেটা করছি সেটা ভুল হচ্ছে,, গায়ে কাঁথা মুড়ি দিয়ে নিশ্চুপে চোখ জোড়া বুঝিয়ে নিলাম আমি,জানি না সামনে কি ঘটতে চলেছে?’আচ্ছা অভ্র তো ভালো ছেলে বিয়েটা করে নিলে কি হবে,হয়তো ভালোবাসাটা হবে না কিন্তু,আর ভাবলাম না,সবটাই যেন মাকড়সার জালের মতো পেঁচিয়ে গেছে!’নানা কল্পনা জল্পনা করতে করতে ঘুমের দেশে পাড়ি জমালাম আমি!’

“এদিকে নিজের রুম থেকেই এতক্ষন তানজুকে দেখছিল রিয়াদ’!!রিয়াদ তানজুর ফ্রেস দেখেই বুঝে গেছে কোনো কারনে তানজু চিন্তিত’!!তানজু তার রুমের তাকিয়ে ছিল অনেকক্ষণ তাও দেখেছে রিয়াদ,রিয়াদ এখনও জানে তানজু তাকে ভালোবাসে,কিন্তু এখনও বুঝতে পারছে না তানজু যখন তাকে ভালোবাসে তাহলে বলছে না কেন?আর তার সাথে রুহির বিয়েটাও বা কেন মেনে নিচ্ছে সে’!!রিয়াদ অসম্ভব রেগে আছে তানজু ওপর,রিয়াদ তো এটাও ভেবে নিয়েছে যদি রুহির সাথে তার বিয়ে হয়ে যায় আর কখনো ফিরবে না সে দেশে’,,সে কি করে মেনে নিবে তানজুর সাথে অভ্রকে!’আজও সেই দিনগুলি মিস করে রিয়াদ,যে দিনগুলিতে শুধুমাএ সে আর তানজু ছিল,মুগ্ধ করা প্রকৃতি আর তানজুর খুনশুঁটি….

“সবকিছু কেমন যেন খাপছাড়া হয়ে গেছে’!!কিছু ভালো লাগে না রিয়াদের কিছু না,,রিয়াদের কি বিয়েটা ভেঙে দেওয়া উচিত,কারন আর যাইহোক সে চায় না রুহিকে ঠকাতে,কিন্তু এখন কি করে বলবে সে?’সময় যে তার সাথে অনেক আগেই বেঈমানী করে চলে গেছে,সেদিনই যদি বিয়েটা ভেঙে দিত তাহলে আজ এসব কিছুই হতো তানজুর ওপর রাগ করে রাগের মাথায় ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে রিয়াদ,,বেশি ভাবতে পারছে না সব কিছু কেমন যেন ঘোলাটে আর অগোছালো হয়ে গেছে,,মনে হচ্ছে শত শত প্যাঁচের ভিড়ে আঁটকে গেছে সে’!!আর এই প্যাঁচ ছেড়ে বাহিরে আসতে পারবে না রিয়াদ….

“কতদিন হলো রিয়াদের ঠিক ভাবে ঘুম হয় না’!!আজও হয়তো ঘুম আসবে না তার….
“অন্ধকার রুমে বসে নানা কিছু ভাবছে রিয়াদ’!!সে জানে না কি হবে তার ভবিষ্যৎ’কিন্তু এতটুকু জানে সে আর তানজুকে পাবে না!…
“ভাবতেই দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে আসছে রিয়াদের’!!
“আগের রিয়াদ আর এখনকার রিয়াদের মধ্যে কত পার্থক্য ভাবতেই হাসি পায় রিয়াদের’!!আগের রিয়াদ রাগী ছিল,সাহসী ছিল, একটা অন্যরকম এটিটিউড ছিল,অন্যরকম পারসোনালিটি ছিল তার আর এখনকার রিয়াদ একদম ভীতু, কিছুই করতে পারে সে ভিতর থেকে একদম ভেঙে গেছে রিয়াদ,কখনো কি ঠিক হবে না সে,হয়তো হবে বহুত বছর পর হয়তো ক্ষীপ্ত মেজাজের হয়ে যাবে সে’,,,,

“পরেরদিন বিকেল_৪ঃ০০টা…..
“শপিং মলে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে সবাই,সাথে আমায়ও তাঁরা দিচ্ছে,এসব একদম ভালো লাগছে না কিন্তু তারপরও কিছু বলতে পারছি না আমি’!!একটা সুন্দর ওয়াইট রঙের জর্জেট থ্রি-পিচ পড়ে নিলাম বেশি সাজ ভালো লাগছে না তাই হাল্কা পাতলা সাজে সামনের দিয়ে চুলে ক্লিপ দিয়ে চুলগুলো খুলে তৈরি আমি,,তারপর একে একে সবাই মিলে চললাম শপিং মলের উদ্দেশ্যে’!!আজকে সবাই যাবে বিয়ের শপিং করতে সাথে অভ্ররাও আসবে,

“বাড়ি থেকে টোটাল তিনটে গাড়ি যাবে এখন,একটায় আমি,দিহান ভাইয়া আম্মু আব্বু, আর আফরিন আপু,আর আপির বেবি’!!আরেকটায় রিয়াদ ভাইয়া,আহান ভাইয়া,সায়ান দুলাভাই,খালামনি আর খালু’!!আর লাস্টের টায় রুহি শিফা আর মেজো খালামনি,খালু সাথে আহান ভাইয়ার আম্মু আব্বু’!!একে একে সবাই তাদের গাড়ি নিয়ে এগিয়ে চললো’!!গাড়ির জানালার দিকে মুখ করে চুপচাপ বসে আছি আমি,আগে দিনের বেলা বাসা থেকে বের হলে বাচ্চাদের হুল্লোড় শোনা যেত এখন আর তাও শোনা যায় না,এটাও আমার দোষে!’এতদিন যা যা উল্টো পাল্টা জিনিসপএ ঘটতো তাও আমার জন্য,আর যা কিছু হচ্ছে না তাতেও আমার দোষ’!!সত্যি সময় মানুষকে কতোটা বদলে দিতে পারে’!!

“বেশকিছুক্ষন পর…..
“আমাদের গাড়ি এসে থামলো একটা বড় শপিং মলের সামনে’!!একে একে সবাই আমরা গাড়ি থেকে বের হলাম,,তারপর চললাম শপিং মলের ভিতরে…
“শপিং মলের ভিতরে ঢুকতেই অভ্ররা হাজির’!!আব্বু ওনাদের সাথে মিষ্টি করে কথা বললেন’!!ওনারাও বললেন তরপর সবাই একত্রে চললাম একটা বড় শাড়ির দোকানের ভেতরে’!!
“চুপচাপ একটা চেয়ারে বসে আছি আমি!’কোনোকিছুই যেন সহ্য হচ্ছে না’!!আর আমার থেকেই কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে রিয়াদ ভাইয়া মোবাইল টিপছে সে’!!রুহি শিফাও আমার পাশে বসে আছে,,দিহান ভাইয়া,আহান ভাইয়া আর অভ্র এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে কেউই তেমন কোনো কথা বলছে না’!!হঠাৎ আম্মু বলে উঠলঃ

—“যা তো তানজু এই শাড়িটা ট্রাই করে আয়!’
—“আম্মু পড়তেই হবে…
—“হুম…
“কিছুটা বিরক্ত নিয়েই শাড়ি হাতে নিলাম আমি,আমার সাথে শিফা রুহিও চললো ওদেরও শাড়ি ট্রাই করবে হবে কিনা….
“আধ ঘন্টা পর….
“তানজু,রুহি আর শিফা শাড়ি পড়ে বের হলো তিনজনই লাল টকটকে বেনারসি শাড়ি পড়ে এসেছে,তিনজনেরই খোলা খুল,,আহান শিফার দিকে,অভ্র রুহির দিকে,রিয়াদ তানজুর দিকে তাকিয়ে আছে, তিনজনকেই অসম্ভব সুন্দর লাগছে,,বাড়ির প্রতিটা সদস্যই ওদের দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছে…

“সবাই যেভাবে তাকিয়ে আছে দেখেই বোঝা আমাদের এই শাড়িতে খুব ভালো লাগছে,শিফা আহানের দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় বললো ‘কেমন লাগছে আমায়’!!আহান শিফার চোখের ইশারা বুঝতে পেরে মুচকি হাসলো’!!শিফার তার উওর পেয়ে গেছে,রুহি প্রথমে অভ্রের দিকে তাকালেই পরক্ষণেই চোখ নামিয়ে রিয়াদের দিকে তাকালো,রিয়াদের তেমন কোনো রিয়েকশন দিলো না,রুহিও কিছু ভাবলো না,রুহি এ কদিনে একটা জিনিস লক্ষ করেছে সেটা হলো এখন পর্যন্ত রিয়াদ তার সাথে বিয়ে নিয়ে কোনো কথাই বলে নি,,কেন বলেনি সেটাও বুঝতে পারছে না রুহি,,,আরেকদিকে তানজু চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে কারো দিকেই তাকাচ্ছে না সে,চুপচাপ মাথা নিচু করে আছে,এমন সময় অভ্রের মা তানজুর থুতনিতে হাত দিয়ে মুখটা উচু করলো তারপর বললো সেঃ

—“এত লজ্জা পেলে চলে নাকি,তোমায় কিন্তু খুব সুন্দর লাগছে,সাথে তোমাদেরও…(শিফা রুহির দিকে তাকিয়ে)
“অভ্রের মায়ের কথা শুনে তিনজনই মুচকি হাসলো’!!অভ্রের মা তার হাতের এক জোড়া সোনার চুড়ি বের করে তানজুর হাতে পরিয়ে দিল’!!তারপর বললোঃ
—“এখন তোমাকে একদম আমার অভ্রের বউয়ের মতো লাগছে…
“রিয়াদের সহ্য হলো না অভ্রের মায়ের কথাটা তারপরও কিছু বলতে পারলো না সে’!!আর রুহিরও ভালো লাগে নি বিষয়টা!’সে কোনোভাবেই তানজুকে সহ্য করতে পারছে না অভ্রের সাথে’!!
“তারপর সবাই আবার ব্যস্ত হয়ে পরলো কেনাকাটায়’!!চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে তানজু’!!এমন সময় অভ্র এসে পাশে দাঁড়ালো তার’!!তারপর বললোঃ

—“তোমায় কিন্তু সুন্দর লাগছে…
“উওরে জবাব দিলো না তানজু,অভ্রের দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে চলে যায় সে’!!এরই ভিতর রুহি এসে সামনে দাঁড়ালো অভ্রের সামনে’!!অভ্র রুহিকে দেখে চলে আসতে নিলে বলে উঠল রুহিঃ
—“অভ্র….
“সাথে সাথে দাঁড়িয়ে পরলো অভ্র’!!বুকের ভিতর চিনচিনে ব্যথা শুরু হয়ে গেল তার’!!রুহি অভ্রকে দাঁড়িয়ে পরতে দেখে আস্তে ওর সামনে দাঁড়িয়ে বললোঃ
—“আমার তোমার সাথে কিছু কথা আছে অভ্র…
“অভ্র কিছুটা বিস্ময় নিয়ে বললোঃ

—“এখন আর কথা বলে কি লাভ রুহি,তেমারও বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে আর আমারও, তবে আমার ভাগ্যটা কি দেখো তোমার আমার বিয়ে একি দিনে, একি সময়ে হবে কিন্তু তুমি কবুল বলবে অন্য কারো জন্য,আর আমি অন্য কারো জন্য,যাগ গে ওসব বাদ দেও,তুমি ভালো থাকলে আমিও ভালো থাকবো…
—“তুমি কি আজও আমায় ভালোবাসো অভ্র…?’
“বিনিময়ে উওর দিল না অভ্র’!!উল্টো বললো সেঃ
—“তুমি ভালোবাসো আমায়?’….
“রুহি কিছু বলতে পারলো না’!!রুহিকে চুপ থাকতে দেখে অভ্র হাল্কা হেঁসে বলে উঠলঃ
—“ভালো থেকো!’
“চলে যায় অভ্র!”রুহি তাকিয়ে রইলো অভ্রের যাওয়ার পানে,,মাথায় বাজছে তার অভ্রের বলা কথাঃ
—“তুমি ভালোবাসো আমায়?’

—“তোমায় কিন্তু খুব সুন্দর লাগছে শিফা…
“সবার আড়ালে দাঁড়িয়ে কথাটা বলে উঠল আহান শিফাকে’!!শিফা হাল্কা হেঁসে বললোঃ
—“ধন্যবাদ…
“মুচকি হাসে আহান!’
“রিয়াদ দাঁড়িয়ে আছে মোবাইল হাতে’!!এমন সময় তার মা তার দিকে একটা সেরোয়ানি এগিয়ে দিয়ে বললোঃ
—“এটা পরে আয় রিয়াদ…
“রিয়াদ তেমন কোনো উওর না দিয়ে সেরোয়ানি হাতে নিয়ে চলে যায়’!!

“চেঞ্জিং রুমে বিরক্ত নিয়ে দাড়িয়ে আছি আমি,,কারন আমার শাড়ির সাথে মাথার ক্লিপ আঁটকে গেছে, এমন ভাবে প্যাঁচিয়েছে যে আমি খুলতে পারছি না’!!কেউ নেই ও যে আমায় সাহায্য করবে,,এখন কি করি,,এমন সময় হতভম্ব হয়ে চেঞ্জিং রুমের ভিতরে ঢুকে পরলো রিয়াদ ভাইয়া,,হুট করে ঘটনাটা হয়ে যাওয়াতে ভয়ে আঁতকে উঠলাম আমি’!!ঘাবড়ে গিয়ে চেঁচাতে নিলেই রিয়াদ ভাইয়া আমার মুখ চেপে ধরলো’!!তারপর বললো সেঃ

—“বয়েজ রুমে কি করছিস তুই….
“রিয়াদ ভাইয়া কথা শুনে চোখ বড় বড় হয়ে গেল আমার,তাহলে কি আমি তখন রাগের মাথায় এই রুমে ঢুকে পরেছিলাম,,হায় রে এখন কি হবে,একি তো শাড়ি ক্লিপে আঁটকে যাচ্ছে তাই অবস্থা তারওপর….
“এদিকে রিয়াদ তাকিয়ে আছে তানজুর চোখের দিকে,আজ বহুত দিন পর তানজুর কাছাকাছি, এক অন্যরকম ঘোরে আঁটকে গেছে সে’!!হঠাৎ কি হলো রিয়াদ ছিঁটকে দূরে সরে গেল’!!তারপর নিজেকে স্বাভাবিক করে রাগী কন্ঠে বললো সেঃ

—“ট্রায়াল রুমে ঢুকলে দরজা বন্ধ করতে হয় জানিস না নাকি,আর তার থেকেও বড় কথা কোনো মেয়েদের কোনটা ছেলেদের পড়তে পারিস না নাকি….
—“সরি ভাইয়া আসলে তাড়াতাড়ি ঢুকতে গিয়ে খেয়াল করি নি…
—“ঠিক আছে বের হ এখন,,
“রিয়াদ ভাইয়ার কথা শুনে শাড়ি প্যাঁচাতে লাগলাম আমি’!!আমার কান্ডে রিয়াদ ভাইয়া বলে উঠলঃ
—“কি হলো যাচ্ছিস না কেন?
—“আমার একটু হেল্প লাগবে…
“রিয়াদ গম্ভীর আওয়াজে বললোঃ

—“কি হেল্প…
“রিয়াদের কথা শুনে ফট করেই বলে উঠল তানজুঃ
—“দেখো না ভাইয়া আমার ক্লিপের সাথে শাড়ি আঁটকে গেছে কিছুতেই খুলতে পারছি না,…(রিয়াদকে তার মাথা দেখিয়ে)
“রিয়াদ কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে উঠলঃ
—“তুই দাঁড়া আমি রুহি বা শিফাকে ডেকে দিচ্ছি….
—“ঠিক আছে ভাইয়া…
“রিয়াদ উওরে কিছু না বলে আস্তে চেঞ্জিং রুমের দরজা খুললো দরজা খুলেই দেখতে পেলো দুটো ছেলে দাঁড়িয়ে আছে হয়তো তারাও ভিতরে ঢুকবে, রিয়াদ আবার দরজা আঁটকে দিলো,এখন কি করবে সে, তানজু আর সে এক রুমে উফ!’এই রকম একটা বাজে পরিস্থিতিতে পরতে হবে রিয়াদকে এটা ভাবেই নি রিয়াদ,,

—“কি হলো ভাইয়া যাচ্ছো না কেন?’
“আর কিছু বলার আগেই রিয়াদ তানজুর মুখ চেপে ধরলো তারপর বললোঃ
—“হুস,এত জোরে কথা বলিস না বাহিরে কেউ শুনলে,,
“আচমকা রিয়াদের এমন কাজে চোখ বড় হয়ে যায় তানজুর’!!পরক্ষণেই রিয়াদ কি বললো তা বুঝতে পেরে ভয় লাগছে তার’!!ওদিকে ট্রায়াল রুমের বাহিরে একটা ছেলে বললোঃ

—“এতক্ষন সময় লাগে নাকি জামা পরতে,,তাড়াতাড়ি বের হন যেই ভিতরে আছেন…?’
“ছেলেটির কথা শুনে রিয়াদ তানজু দুজনেই চমকে উঠলো’!!রিয়াদ তানজুর দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে বললোঃ
—“তোর জন্য এমন একটা পরিস্থিতিতে পরতে হলো চোখে দেখিস নাকি…
“তানজু চুপ করে রইলো’!!
“ওদিকে বাহিরে ছেলেটি দরজা ধাক্কাছে এখন কি করবে রিয়াদ’!!হঠাৎই রিয়াদের মাথায় একটা বুদ্ধি সে বলে উঠলঃ

—“ভিতরে দরজা আঁটকে গেছে আপনারা শপিং মলের কর্তৃপক্ষকে ডেকে আনুন…
“রিয়াদের কন্ঠ শুনে ছেলেগুলো কতক্ষণ বকবক করে চলে গেল’!!বাহিরের আওয়াজ কমে আসতেই রিয়াদ তানজুর দিকে তাকিয়ে বললোঃ
—“দরজা খুলতেই সোজা লেডিস ট্রায়াল রুমে ঢুকে যাবি…
“উওরে মাথা নাড়ায় তানজু…
“রিয়াদ দরজা খুলতে গিয়েও আবার দাঁড়িয়ে পরলো’!!তারপর তানজুর দিকে এগিয়ে যেতে নেয় সে’!!আচমকা রিয়াদের এমন কান্ডে ঘাবড়ে যায় তানজু’!!পিছনে এগোতে এগোতে আমতাআমতা করে বলে সেঃ

—“কি হলো ভাইয়া,,
“রিয়াদ চুপ’!!
—“তুমি এগোচ্ছো কেন ভাইয়া…
—“কেনো ভয় হচ্ছে বুঝি…
—“ভ…য় হ..বে কে…ন
—“তাহলে কাঁপছিস কেনো?’
—“কই কাঁপছি না তো…

“এক পর্যায়ে তানজু দেয়ালের সাথে আঁটকে যায়’!!রিয়াদ একদম লেগে গেছে তানজুর সাথে,তানজুর চোখের দিকে তাকায় সে,চোখ ছলছল করছে তানজুর,রিয়াদ বেশিক্ষণ তাকালো তানজুর দিকে আস্তে তানজুর মাথায় হাত দিয়ে তানজুর ক্লিপের সাথে আঁটকে যাওয়া শাড়িটা টেনে ছাড়িয়ে করে দিলো সে’!!
“রিয়াদের কাজে ভয়ে চোখ বন্ধ করে নেয় তানজু’!!১০ সেকেন্ড পর…
—“হয়ে গেছে এখন বের হ তাড়াতাড়ি….
“রিয়াদের ডাকে দু’মিনিট দাঁড়ালো না তানজু তাড়াতাড়ি রুম থেকে বেরিয়ে পাশের লেডিস রুমটায় ঢুকে পড়ে সে’!!তারপর জোরে জোরে শ্বাস ফেললো সে’!!
“রিয়াদ তাড়াতাড়ি সেরোয়ানিটা পরে বেরিয়ে যায়’!!কেউ আসার আগে….

“আজকে রুহি- রিয়াদ,অভ্র- তানজু আর আহান শিফার মেহেন্দির অনুষ্ঠান!” পুরো বাড়ি খুব সুন্দর সাজানো হয়েছে,সবটা কেমন তাড়াতাড়ি হয়ে গেল,এতটাই তাড়াতাড়ি হয়ে গেল যে অভ্র তানজু কোনোভাবেই বিয়েটা আঁটকাতে পারলো না’!!আর রিয়াদ রুহির সাথে কথা বলতে চেয়েও কিছু বলতে পারলো না’!!
“জ্বলজ্বল করছে মেহেন্দির সন্ধ্যা’!!শিফা, রুহি,তানজুকে একসাথে মেহেদী পড়াতে ব্যস্ত হয়ে পরলো পার্লারের মেয়েরা!’পুরো সন্ধ্যা জুড়ে নাচ, গান, আর হুল্লোড়ে কেটে গেল সবার…
“রাত_১০ঃ০০টা….

“অনুষ্ঠান প্রায় শেষের দিকে!’রুহি,শিফা,তানজুর হাতের মেহেন্দিও শুকিয়ে গেছে অনেকক্ষণ হলো’!!এমন সময় দিহান আর আয়রা মাইক হাতে বলে উঠল’!!আয়রা হলো দিহানের গার্লফ্রেন্ড,দিহানও চেয়েছিলো তানজুর সাথে বিয়েটা করে ফেলতে কিন্তু আয়রা রাজি হয় নি,আর সবাই একসাথে বিয়ে করে নিলে বিয়েতে মজা করবে কারা’!!
—“লেডিস এন্ড জেন্টেল ম্যান আমাদের অনুষ্ঠান প্রায় শেষের দিকে,তাই আমরা দুজন মিলে ঠিক করেছি আমাদের লাস্ট কাপল ড্যান্স দিয়েই শেষ হবে আজকের অনুষ্ঠান’!!আর ড্যান্স করবে আমাদের অনুষ্ঠানের মূল তিন কাপল, রিয়াদ রুহি,অভ্র-তানজু সাথে আহান-শিফা!”
“দিহানের কথা শুনে ছয়জনেরই চোখ বড় বড় হয়ে গেলো’!!এরই ভিতর আয়রা বলে উঠলঃ

—“তবে আমাদের একটা রুলস আছে…
“আয়রার কথা শুনে একটা ছেলে বলে উঠলঃ
—“কি রুলস…
—“রুলস টা হলো ক্যাপলদের শুধু নিজেদের পার্টনারদের সাথে নাচলে হবে না সবার সাথে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নাচতে হবে….
—“এটা আবার কেমন রুলস,বর বউ একে অপরকে ছেড়ে অন্যদের সাথে কেনো নাচব?'(আহান)
—“কেনো প্রবলেম কোথায় এমনিতেও কালই তো যার যার বউ তার তার হয়েই যাবে আর একটা দিন অন্য কারো নাচের পার্টনার হলে ক্ষতি কি..(দিহান)
—“ভাইয়া আমি কোনো নাচ ফাচ করতে পারবো না…
—“তা বললে তো শুনছি না তানজু নাচতে তো তোকে হবেই….
—“আমি নাচবো না মানে নাচবো না…
“বলেই চলে আসতে নিলাম আমি এমন সময় আয়রা আপি এসে ধরলো আমায়’!!আর বললোঃ
—“চলে গেলে তো চলবে না তানজু..
—“দেখো আপি আমি নাচতে পারি না,,

—“যা পারো তাতেই চলবে আর এখানে তো বড়রা কেউ নেই তানজু, তাই নো প্রবলেম তুমি যা পারো তাতেই চলবে…
—“কিন্তু আপি…
—“কোনো কিন্তু নয় তানজু…
“এতটুকু বলে আয়রা তানজুর হাত ধরে নিয়ে গেলো’!!তারপর চেঁচিয়ে বললো সেঃ
—“মিউজিক…
“সাথে সাথে “ওহ হামছাফার” গানটা বাজতে শুরু হলো’!!
“এদিকে গান শুরু হতেই রিয়াদ চলে যেতে নিলো’!!সাথে দিহান ধরলো তাকে’!!তারপর আর কি তিন কাপল নিয়ে দিহান চলে যায় স্টেজে!’
“শুরুতে রিয়াদ-রুহি,অভ্র-তানজু আর আহান-শিফা শুরু করলো’!!রুলস অনুযায়ী একজনের সাথে একমিনিটের বেশি নাচা যাবে না’!!প্রথম বার তানজু চলে যায় অভ্রকে ছেড়ে আহানের কাজে,শিফা রিয়াদের কাছে আর রুহি অভ্রের কাছে’!!আহান নাচতে নাচতে বলে উঠলঃ

—“তুমি কাজটা ঠিক করছো তানজু,রিয়াদকে খুব কষ্ট দিচ্ছো তুমি…
—“কি করবো ভাইয়া তুমি তো সবটাই জানো….
“এদিকে অভ্র আর রুহি কাছাকাছি’!!দুজনেই এক অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে, অভ্র বলে উঠলঃ
—“আজকে তোমায় কিন্তু খুব সুন্দর লাগছে….
—“সরি অভ্র…
“রুহির কথা শুনে অভ্র অবাক হয়ে বললোঃ
—“কেনো?’
—“আমি সবকিছু না জেনেই তোমায় ভুল বুঝেছি,ওহ তোমার বোন ছিল….
“আহান জোরে নিশ্বাস ফেলে বললোঃ
—“এখন আর সরি বলে কি লাভ রুহি এখন তুমি অন্যকারো….
“এতটুকু বলে অভ্র ছেড়ে দেয় রুহিকে’!!এবার রুহি যায় আহানের কাছে,আর শিফা অভ্রের কাছে,আর রিয়াদ তানজু একসাথে..

“আহান রুহির সাথে প্রথমে কিছু বললো না’!!দু’মিনিট পর বললো সেঃ
—“তুমি রিয়াদকে ভালোবাসো রুহি,,
“রুহি আনমনে বলে উঠলঃ
—“আমি বুঝতে পারছি না ভাইয়া সবকিছু এলেমেলো হয়ে গেছে কেমন?’
“রিয়াদ তানজু কাছাকাছি দুজনেই দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে, দুজনেই চোখ ছলছল করছে রিয়াদ নীবরে বলে উঠলঃ
—“তুই আমায় সত্যি ভালোবাসিস না তানজু…

এক ফালি রোদ্দুর পর্ব ৩৬

“সাথে সাথে তানজর বুকের ভিতর ছ্যাত করে উঠল’!!এখন কি বলবে সে’!!বার বার না বলতে যে তার খুব কষ্ট হয়’!!তানজু কোনো উওর দিলো না রিয়াদকে’!!তানজু চুপ থাকায় রিয়াদ আর কিছু বললো না’!!একের পর এক ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কাপল ড্যান্স করলো ওরা অবশ্য এটাকে কাপল ড্যান্স বলা যায় না’!!দ্বিতীয় বার তানজু রিয়াদের কাছে যেতেই আর বেশিক্ষণ নাচতে পারলো না তাড়াতাড়ি ওখান থেকে চলে যায়’!!তার যে খুব কষ্ট হয় বারবার রিয়াদের মুখোমুখি হতে…তাই আর সহ্য করতে না পেরে চলে যায় সে…..

“রুমে ঢুকে দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে যায় তানজু’!!সাওয়ার সেরে নিচে বসে কেঁদে উঠলো সে, আর সহ্য করতে পারছে না তানজু,,বুকের ভিতর যন্ত্রনা হচ্ছে তার,,যতই রিয়াদের থেকে দূরে থাকতে চায় সে ততই যেন কাছে চলে যাচ্ছে তানজু’!!এমন হলে কি করে সে মেনে নিবে রিয়াদ আর রুহির বিয়েটা!’
“পাক্কা এ ঘন্টা সাওয়ার নিয়ে একটা ওয়াইট টিশার্ট আর প্লাজু পড়ে বেরিয়ে আসল তানজু’!!চোখ জ্বলছে তার,,হঠাৎই চোখ যায় তার হাতের দিকে,নিজের হাতে রিয়াদের নাম দেখে আঁতকে উঠল সে,,
“এটা কি করে হলো…..

এক ফালি রোদ্দুর পর্ব ৩৮