এক মুঠো কাঁচের চুরি পর্ব ৩৩

এক মুঠো কাঁচের চুরি পর্ব ৩৩
Fabiha bushra nimu

ঘড়ির কাটায় রাত বারোটা ছুঁই ছুঁই।হঠাৎ করে কলিং বেল বেজে উঠলো।রিয়াদ সবে মাত্র ঘুমোনোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল।এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠলো।রিয়াদের ভ্রু কুঁচকে গেল।তার স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলল।

–এতরাতে আমাদের বাসায় কে আসলো?
–ইফাদ ভাইয়া এসেছো হয়তো।
–তোমার মাথা খারাপ,ইফাদ কেনো এত রাতে আমাদের বাসায় আসতে যাবে।
–ইফাদ ভাইয়া সব পারে।ভাইয়ার একবার অনেক কষ্ট হয়েছিল।তোমার মনে আছে।রাত তিনটার সময় আমাদের বাসায় চলে আসছিল।কথা না বলে গিয়ে দেখো,ইফাদ ভাইয়া না-ও হতে পারে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

–কিন্তু ইফাদের তখন বউ ছিল না।এখন ইফাদের বউ আছে।এখন আবার ইফাদের কিসের কষ্ট।আর বউ মানেই তো’ প্যারা।দেখি আমার আমার কলিজার কি হলো।রিয়াদের কথা শুনে,রিয়াদের বউ রিয়াদের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকালো।রিয়াল হেসে মানে মানে কেটে পড়ল।দরজা খুলে দিতেই ইফাদ রিয়াদের বুকে ধা*ক্কা* দিয়ে সরিয়ে দিয়ে ভেতরে আসলো।সামনের রুমের দিকে তালা ঝুলানো দেখে বলল।

–এই রুমে তালা দেওয়া কেনো?চাবি নিয়ে এসে তাড়াতাড়ি রুমটা খুলে দে’।
–ঐ’ শা*লা* আমার বাসায় এসে,আমাকে-ই ধা*ক্কা* দিয়ে বাসার মধ্যে প্রবেশ করলি।এখন আবার আমার ওপরেই হুকুম চালাচ্ছিস।
ইফাদ শান্ত দৃষ্টিতে রিয়াদের দিকে তাকিয়ে আছে।ইফাদের তাকিয়ে থাকা দেখে রিয়াদ বলল।
–ওভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো?যাচ্ছি,যাচ্ছি।এই রুমটা আমি তোর জন্য বানিয়েছি।আমার কত কষ্টের টাকা।তুই ছাড়া এই রুমে কারো প্রবেশ নিষিদ্ধ।তাই তালা বন্ধ করে রেখেছি।বলেই রিয়াদ নিজের রুমে গেল।ইফাদ গম্ভীর মুখ করে,দাঁড়িয়ে রইল।

–শা*লা* আমার বাড়ি আমার ঘর আমাকেই সন্মান করে না।রাত করে এসে মহারাজ আমাকেই হুকুম করছে।বউয়ের রাগ আমার ওপরে ঝাড়ছে।সকাল হতে দে,তোর সব রাগের প্রতিশোধ নিব।আমার বউয়ের রাগ তোর ওপরে গিয়ে ঝাড়বো।
–কে এসেছে?

–তুমি ঠিকি বলেছো।ইফাদ এসেছে।খুব রেখে আছে।মনে হয় অনেক কষ্ট পেয়েছে।আজকে আমি ওর সাথে ঘুমাবো।তুমি কষ্ট পেয়ো না।এই অল্প বয়সে বড্ড ক্লান্ত ছেলেটা।সবার কথা ভাবতে গিয়ে,নিজের পুরো জীবন টাই শেষ করে ফেলছে।আমি চাই না ও’ আমার থেকে কোনো রকম কষ্ট পাক।শুনো রুপা ইফাদ আমার শুধু বেস্ট ফ্রেন্ড না।ইফাদ আমার ভাই।

তোমার কাছে আমার একটাই চাওয়া।ইফাদ আমাদের বাসায় আসলে,কখনো তার সাথে খাবার ব্যবহার করবে না।ইফাদ কষ্ট পায়।এমন কোনো কথা বলবে না।এটা তোমার কাছে আমার অনুরোধ বলতে পারো।ছেলেটা খুব বেশি কষ্ট পেলে,আমার কাছে আসে।নিজের কষ্ট গুলোকে হালকা করতে।তাই আমি চাই না আমার পরিবারের কেউ ইফাদের কষ্ট কমিয়ে দেওয়ার বদলে বাড়িয়ে দিক।আব্বু-আম্মুকে-ও বলে রাখছি।ওনার-ও ইফাদকে অনেক ভালোবাসে,ইফাদের মতো ছেলে হতে হলে,ভাগ্য নিয়ে জন্মাতে হবে।

–তুমি চিন্তা করো না।আমাকে তোমার এতটা খারাপ বউ মনে হয়।তোমাদের বন্ধুত্ব দেখে আমার আফসোস হয়।আমার জীবনে কেনো?তোমাদের মতো বন্ধু নেই।যাকে সবকিছু খুলে বলতে হবে না।চোখ দেখেই বুঝে যাবে।
–তোমার জন্য আমি আছি।তোমার আর কাউকে লাগবে না।ইফাদ অনেকক্ষন ধরে দাঁড়িয়ে আছে।আমি রুমটা খুলে দিয়ে আসি।বলেই বেড়িয়ে আসলো।

রিয়াদ রুমটা খুলে দিতেই ইফাদ রুমে ডুকে দরজা লাগিয়ে দিতে যাবে।তখনই রিয়াদ বাঁধা হয়ে দাঁড়াল।
–আমি’ও ঘুমাবো তোর সাথে,তুই একা একা ভয় পাবি।
–এই আমাকে তোর ছোট বাচ্চা মনে হয়।বিরক্ত করা বন্ধ কর।নিজের রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়।
–এটা আমার বাসা আমি যেখানে খুশি ঘুমোতে পারি।রিয়াদের কথা শুনে,ইফাদ আশেপাশে চোখ বুলিয়ে নিল।তারপরে গম্ভীর মুখ করে রিয়াদের দিকে তাকালো।

–আশেপাশে তাকিয়ে কি দেখছিস।
–আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম কোথাও তোর নাম লিখা আছে কি না।খুঁজে পেলাম না।কালকে বাসার দললি নিয়ে দেখা করবি।বলেই রিয়াদের মুখের ওপরে দরজা লাগিয়ে দিল।রিয়াদ বোকার মতো দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রইল।
–ইফাদ তুই ভালো করেই জানিস।তুই দরজা না খুললে,আমি সারারাত এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবো।তাই অযথা চোখের পানি লুকানোর চেষ্টা করিস না।রক্তে মিশে আছিস তুই আমার,তোর মুখ দেখে এতটুকু বুঝতে পারবো না।

ইফাদ ভালো করেই জানে,আজকে ইফাদকে ছেড়ে এক মুহুর্ত রিয়াদ সরবে না।যত রকমে অদ্ভুত কথা আছে।সব ইফাদের ওপরে প্রয়োগ হবে।জীবন এমন বন্ধু পেতে হলে-ও ভাগ্য লাগে।একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে দরজা খুলে দিল।রিয়াদ রুমে প্রবেশ করে,ইফাদের উদ্দেশ্যে বলল।
–কি তুই একা একটা ছেলে হয়ে,আমাকে রুমের মধ্যে ঢুকিয়ে নিলি।তোর ভয় লাগছে না।তোর সাথে যদি উল্টা পাল্টা কিছু হয়ে যায়।

রিয়াদের কথায় ইফাদ মলিন হাসলো।ইফাদের দু-চোখ টলটল করছে।এখনই বুঝি বৃষ্টিতে রুপান্তরিত হবে।ইফাদের দিকে তাকিয়ে,রিয়াদের বুকটা কেঁপে উঠলো।ইফাদ আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না।রিয়াদকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিল।ছেলে মানুষের চোখে পানি,বিষয়টা বড্ড বেমানান।খুব বেশি আঘাত না পেলে,তারা খুব সহজে কাঁদে না।ইফাদের ভাই মারা যাওয়ার পরে,ইফাদ কখনো কান্না করেছে,বলে মনে হয় না।আজকে ইফাদের হলোটা কি’।তবে আঘাতটা কি একটু বেশিই লেগেছে।কে করলো আঘাত।কার এত সাহস।তাকে আমি ভেঙে গুড়িয়ে ফেলবো।

ইফাদের অসহায়ত্ব রিয়াদের বুকে হাহাকার পড়ে গেছে।পৃথিবীতে এই মানুষটাকে একটু বেশি ভালোবাসে রিয়াদ।মানুষটার কষ্ট যে,সহ্য করতে পারছে না।ইফাদ রিয়াদকে ছেড়ে দিয়ে,দু-চোখের পানি মুছে নিল।কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে বলল।
–রিয়াদ প্লিজ যা।আমার ভালো লাগছে না।আমাকে একা থাকতে দে।

–তোকে কে কষ্ট দিয়েছে।আমাকে একবার তার নাম বল।তাকে ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়ার দায়িত্ব আমার।
–তাকে ভেঙে দিলে,আমি নিজেই শেষ হয়ে যাব।প্লিজ তুই এখানে থেকে যা।আমাকে একা থাকতে দে।
–খুব বেশি কষ্ট পেয়েছিস।
–জানিস রিয়াদ।যারা শান্ত ভাবে সহ্য করে।তারা গভীর ভাবে আহত হয়।

–ভাবির সাথে কিছু হয়েছে।আরে বাবা সংসার থাকলে,এমন টুকটাক ঝামেলা হবে।তাই বলে এভাবে কষ্ট পেতে হবে।আমার আর তোর ভাবির কত ঝামেলা হয়।আমাকে কখনো দেখেছিস।তোর মতো এভাবে কষ্ট পেয়েছি।
–তার মুখে অন্য ছেলের নাম।আমার বুকে পাহাড় সমান ব্যথা।
ইফাদের কথা শুনে,রিয়াদ নিস্তব্ধ হয়ে গেল।কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলছে।হয়তো কোনোদিন একদিন সে-ও ইফাদের মতো ব্যথা অনুভব করেছে।রিয়াদ ইফাদ কাঁধে হাত রাখলো।

–আজকে আমি তানহার চোখে আক্ষেপ দেখেছি রিয়াদ।ওর উচ্চ বিলাসিতার জীবন চাই।যা আমি ওকে দিতে পারছি না।আজকে আমি অর্থের কাছে হেরে গিয়েছি।আবির ভাইয়ের অনেক টাকা-পয়সা।সে,তার বউকে নিয়ে বিলাসবহুল জীবন-যাপন করছে।বউকে নিয়ে নামি দামি জায়গায় ঘুরতে যাচ্ছে।বউকে দামি উপহার দিচ্ছে,ফেসবুক ছবি আপলোড দিচ্ছে।

বউকে স্বাধীনতা দিয়েছে।তাতে আমার কোনো আক্ষেপ নেই।কিন্তু আজকে আমি আমার বউয়ের চোখে আমার জন্য আক্ষেপ দেখেছি।আমি হয়তো তার সকল চাহিদা পূর্ণ করতে পারি না।কিন্তু বিশ্বাস কর।আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে তাকে ভালো রাখার চেষ্টা করি।কি সে ভালো থাকবে।কি সে খারাপ থাকবে।সবদিকে খেয়াল রাখি।রাগ হলে ওর সাথে কথা বলি না।

রাগের মাথা যদি বাজে কথা বলে ফেলি।ও কষ্ট পাবে বলে,দাঁতের ওপরে দাঁত চেপে রাগ নিয়ন্ত্রণ করি।আজকে আমাকে কি কথা শোনালো জানিস,আমাকে বিয়ে না করে,ওর আবির ভাইকে বিয়ে করলেই ভালো হতো।নিজেস্ব স্বাধীনতা পেত।নিজের সকল ইচ্ছে পূর্ণ হতো।আমি আর ওকে কোনো কিছুতেই নিষেধ করবো না রে’।সে,তার মতো ভালো থাকুক।কথা গুলো বলছিল।আর এক হাতে দু-চোখের পানি মুছছিল।

–পাগল ভাবি বুঝতে পারে নাই।হয়তো ভাবি কথাটা বলতে চায় নাই।রাগে বশীভূত হয়ে,বলে ফেলছে।ভাবি ছোট মানুষ।তুই বড় মানুষ হয়ে,এমন পাগলামি করছিস।তুই একটু বুঝিয়ে মানিয়ে নিবি।দেখবি ভাবি তোর কাছে ঠিক ক্ষমা চাইবে।
–তাকে কষ্ট দিব না জন্যই তোর কাছে চলে আসলাম।এখন আমাকে একা থাকতে দিবি।
তানহা চৈতালিকে ডেকেই যাচ্ছে।চৈতালি ঘুম ঘুম চোখে এসে দরজা খুলে দিলো।তানহাকে দেখে বলল।

–কি হয়েছে ভাবি।এতরাতে ডাকছো কেনো?কোনো সমস্যা হয়েছে।
–তোমার ফোনটা একটু দিবে।
–ভেতরে এসো।কি হয়েছে তোমার এভাবে কান্না করছো কেনো?বলতে বলতে চৈতালির ফোনটা তানহার হাতে দিল।তানহা বারবারের মতো এবার-ও ইফাদের ফোন বন্ধ পেল।তানহা চৈতালির বিছানায় বসে কান্না করছে।চৈতালি হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

–ভাবি তোমার কি হয়েছে।এভাবে কান্না করছো কেনো?ভাইয়া কি তোমাকে কিছু বলেছে।
–আমি ওনাকে কষ্ট দিয়ে ফেলছি চৈতালি।উনি রাগ করে বাসা থেকে বের হয়ে গেছে।ফোন বন্ধ করে ফেলছে।প্লিজ ওনাকে এনে দাও।আমি আর কখনো ওনাকে কষ্ট দিয়ে কথা বলবো না।বলেই হাউমাউ করে কান্না করে দিল তানহা।চৈতালি হতাশ হয়ে তানহার মাথায় হাত রেখে বলল।

–চিন্তা করো না ভাবি।ভাইয়া রিয়াদ ভাইয়ার বাসায় গিয়েছে।রাগ কমে গেলে আবার বাসায় চলে আসবে।দাঁড়াও আমি রিয়াদ ভাইয়াকে ফোন দিচ্ছি।বলেই রিয়াদের নাম্বারে ফোন দিল।রিয়াদের বউ সরে মাত্র দু-চোখ এক করেছে।তখনই রিয়াদের ফোনটা বেজে উঠলো।চৈতালির নাম্বার দেখে রিসিভ করল।চৈতালি সালাম দিয়ে বলল।

–রিয়াদ ভাইয়া।ইফাদ ভাইয়া কি তোমার কাছে গিয়েছে।
–আমি তোমার ভাইয়া না।তোমার ভাবি বলছি।
–ভাবি ভাইয়া কি আপনাদের ওখানে গিয়েছে।
–হ্যাঁ তোমার ভাইয়া আসছে।

–আচ্ছা ভাবি এটা জানার জন্যই এতরাতে বিরক্ত করলাম।আরো কয়টা কথা বলে,রেখে দিল।
–হয়েছে আর কান্না করতে হবে না।শুনেছো ভাইয়া রিয়াদ ভাইয়ার বাসায় গিয়েছে।তানহা কোনো উওর দিল না।সব হয়েছে ফোনের জন্য বলেই ফোনটা ছুরে ফ্লোরে ফেলে দিয়ে, চৈতালির রুম থেকে চলে গেল।
ইফাদের গায়ের ওপরে পা তুলে দিয়ে শুইয়ে আছে’ রিয়াদ।

–আমি যদি মেয়ে হতাম।তাহলে তোকেই বিয়ে করতাম রে ইফাদ।তোর মতো সুন্দর ছেলে আমার স্বামী হতো।তোর ওপরে শুধু আমার অধিকার থাকতো।রিয়াদের দুঃখী দুঃখী মুখ দেখে ইফাদ মলিন হাসলো।ইফাদকে হাসানোর জন্যই রিয়াদ এমন করছে।ইফাদ রিয়াদকে সরিয়ে দিয়ে,অন্য পাশ ফিরে শুইয়ে পড়ল।

আজকে সাতদিন হয়ে গেল।ইফাদ বাসায় আসছে না।এই কয়দিনে তানহা অনেক চেষ্টা করেছে,ইফাদের সাথে যোগাযোগ করার।রোকেয়া বেগম অনেক বার বাসায় আসতে বলছে।কিন্তু আসে নাই ইফাদ।তানহার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেছে।আজকে যতই যাই হয়ে যাক না কেনো?আজকে সে রিয়াদের বাসায় যাবে।বোরকা পরে তৈরি হয়ে রিয়াদের বাসার উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়ল।চৈতালির থেকে রিয়াদের বাসার ঠিকানা জেনে নিয়েছে।

ঠিকানা মতো পৌঁছে গেল তানহা।বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।পাঁচ তলার উঁচু বিল্ডিংয়ের দিকে একবার তাকিয়ে নিল।এতবড় বাসায় কি করে খুঁজবে তাদের।নিচ তলার দরজার সামনে গিয়ে কলিং বেলে চাপ দিল।একজন মহিলা এসে,দরজা খুলে দিল।তানহা সালাম দিয়ে রিয়াদের কথা জানতে চাইলে,মহিলাটি বলল তারা দ্বিতীয় তলায় থাকে।তানহা দ্বিতীয় তলায় এসে,কলিং বেলে চাপ দিল।এবার রিয়াদ এসে,দরজা খুলে দিল।রিয়াদকে হসপিটালে দেখেছিল।তাই চিনতে খুব একটা অসুবিধা হলো না।কিন্তু তানহা বোরকা পড়ে থাকায় রিয়াদ তানহাকে চিনতে পারলো না।তানহা সালাম দিয়ে বলল।

–ভাইয়া আমি তানহা।ইফাদ আছে।
–আরে ভাবি আপনি।ভেতরে আসুন।ইফাদ আমার কাছেই আছে খুব যত্ন করেই রেখেছি।
তানহা ভেতরে এসে সবার সাথে কুশল বিনিময় করল।মনটা ইফাদকে দেখার জন্য ছটফট করছে।কেমন অস্থির হয়ে উঠেছে।সবার সাথে কিছুক্ষণ গল্প করল।
–ভাবি আসেন ইফাদের রুমে নিয়ে যাই।বলেই তানহাকে ইফাদের রুমে সামনে দিয়ে রিয়াদ চলে গেল।
ইফাদ বাহিরে আসছিল।তানহাকে রুমের মধ্যে প্রবেশ করতে দেখে উল্টো দিকে ঘুরলো।তানহা ইফাদের পেছনে দাঁড়িয়ে থেকেই বলল।

–কথা বলবে না আমার সাথে।ইফাদরে থেকে কোনো উওর আসলো না।তানহা ইফাদকে পেছনে থেকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিল।
–প্লিজ আমাকে মাফ করে দাও।আমি তোমাকে আঘাত করতে চাই নাই।আমার বিলাসবহুল জীবন লাগবে না।আমার তোমাকে লাগবে।তুমি আর কষ্ট পেয়ো না।তোমার কষ্ট আমি সহ্য করতে পারছি না।তোমার যা শাস্তি দেওয়ার।আমাকে বাসায় থেকে দিও।এভাবে দূরে দূর থেকেো না।তোমাকে ছাড়া থাকতে আমার অনেক কষ্ট হয়।দম বন্ধ হয়ে আসে।আমি তোমাকে ছাড়া ভালো থাকতে পারছি না।প্লিজ ফিরে চলো।আর রাগ করে থেকো না।

ইফাদ নিজের থেকে তানহাকে ছাড়িয়ে দিল।তানহা ইফাদকে সামনে থেকে জড়িয়ে ধরলো।দু’জন ধস্তাধস্তি করতে করতে এক পর্যায়ে তানহা নিস্তেজ হয়ে নিজেই,ইফাকে ছেড়ে দিল।ইফাদ কোনো কথা না বলে রুম থেকে বেড়িয়ে গেল।ইফাদকে দেখে রিয়াদ কিছু বলতে যাবে।তার আগেই ইফাদ রিয়াদের বাসা থেকে বেড়িয়ে গেল।রিয়াদ দৌড়ে ইফাদের রুমে আসলো।তানহা ফ্লোরে বসে কান্না করছে।

–ভাবি প্লিজ আপনি এভাবে কান্না করবেন না।ইফাদ রাগ করে আছে।তাই এমন করছে।রাগ কমলে ঠিক হয়ে যাবে।স্বামীর সামনে অন্য ছেলের কথা বলবেন না।স্ত্রীরর মুখে অন্য ছেলের নাম পুরুষ জাতিকে বড্ড পোড়ায় ভাবি।আর কখনো কোনো ছেলের নাম ইফাদের সামনে নিবেন না।উঠুন আমি ইফাদকে সবটা বুঝিয়ে বলবো।

এক মুঠো কাঁচের চুরি পর্ব ৩২

তানহা উঠে দু-চোখের পানি মুছে নিল।সবার থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় চলে আসলো।নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হচ্ছে,আজকে তার জন্য ইফাদ কতটা কষ্ট পাচ্ছে।কোনদিকে কমতি রেখেছিল ইফাদ তাকে,সে ইফাদকে এত বড় কথা শুনিয়ে দিল।রান্না করছে আর চোখের পানি ফেলছে।হটাৎ করে কলিং বেলে বেজে উঠলো।তানহা দু-চোখের পানি মুছে দরজা খুলতে চলে গেল।

এক মুঠো কাঁচের চুরি পর্ব ৩৪