শহর জুড়ে সন্ধ্যা নামুক পর্ব ১২

শহর জুড়ে সন্ধ্যা নামুক পর্ব ১২
তাসনিম জাহান রিয়া

হলে ফিরেই শ্রেয়সী হেলাল সরকারকে ফোন দেয়। দুইবার রিং হওয়ার পর হেলাল সরকার ফোন রিসিভ করে।
আসসালামু আলাইকুম জেঠু।
ওয়ালাইকুম আসসালাম। আম্মা কোনো সমস্যা হয়েছে? এই অসময়ে ফোন দিলে যে?
সমস্যা অনেক বড় সমস্যা। এই সমস্যার সমাধান একমাত্র তুমিই করতে পার।

কী হয়েছে?
তুমি যে প্রফেসারের কথা বলেছিলে তাকে বিয়ে করতে আমি রাজি।
আমি ইমিডিয়েটলি বিয়ে করতে চাই। তুমি যত দ্রুত সম্ভব আমার বিয়ের ব্যবস্থা কর। দুদিনের মাঝে বিয়ের ব্যবস্থা করতে পারলে আরো ভালো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তুমি না কাকে পছন্দ করো। তাহলে এখন ঐ প্রফেসারকে বিয়ে করতে চাইছো কেনো?
আমি কাউকে পছন্দ টছন্দ করি না। তখন বিয়ে করতে ইচ্ছে করছিল না। তাই তোমাকে মিথ্যা বলেছিলাম। কিন্তু এখন আমার বিয়ে করতে ইচ্ছে করছে। তুমি তাড়াতাড়ি বিয়ের আয়োজন করো। আমার মুড চেইঞ্জ হয়ে গেলে কিন্তু আর বিয়ে করবো না।

তুমি অদ্ভুত কথা বলছো। এভাবে হুট করে বললেই তো আর বিয়ের আয়োজন করা যায় না। ওদের ফোন করে বলতে হবে।ওরা আমাদের বাসায় আসবে। তোমাকে দেখবে। আমরাও ওদের বাসায় যাব। সবশেষে দুই পরিবারের মানুষ একসাথে বসে বিয়ের দিন তারিখ করতে হবে। সকল আত্নীয় স্বজনকে দাওয়াত দিতে হবে। ডেকোরেশনের ব্যাপার স্যাপার আছে। বিয়ে সাদির ব্যাপার নিয়ে এতো তাড়াহুড়ো করতে নেই আম্মা।

আমি অতশত বুঝি না। আমি দুইদিনের মাঝে বিয়ে করতে চাই মানে দুইদিনের মাঝেই। বিয়ে করবো আমি এতো আত্নীয় স্বজন দাওয়াত দিয়ে কী হবে? বিয়ে তো উনারা করবেন না। বিয়ে করবো আমি আর ঐ প্রফেসার। এসব দেখাদেখির দরকার নেই। যা দেখার একদম কাজি অফিসে গিয়ে দেখবে। ফোন করে লাভ নেই তুমি বরং ঐ প্রফেসারের বাড়ি চলে যাও আর বিয়ে ফিক্সড করে আসো। আমি দুইদিনের মাঝে নিজেকে ঐ প্রফেসারের বউ হিসেবে দেখতে চাই। ডেকোরেশন-ফেকোরেশনের দরকার নেই বিয়ে হবে কাজি অফিসে। আমি ঠাস করে কবুল বলে ঠুস করে শ্বশুর বাড়ি চলে যেতে চাই। যা করার দ্রুত কর সময় হাতে খুব কম। এখন আমি রাখছি। আসসালামু আলাইকুম।

হেলাল সরকারকে আর কোনো কথা বলতে না দিয়ে ঠাস করে ফোন রেখে দেয় শ্রেয়সী। ফোনটাকে টেবিলের ওপর রাখে ঠাস করে বিছানায় শুয়ে পড়ে শ্রেয়সী। শ্রেয়সী মনে মনে এক কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে। সেই ঐ প্রফেসারকে বিয়ে করে ম্যাজিস্ট্রেটের চোখের সামনে দিয়ে ঘুরঘুর করবে। প্রফেসারকে বিয়ে করে ঐ বাসায় গিয়ে উঠবে। ম্যাজিস্ট্রেটকে দেখিয়ে প্রফেসারকে চুমুও খাবে বলে মনস্থির করে ফেলেছে।

প্রিয়ন্তি আর নিতু ভার্সিটিতে। শ্রেয়সী বিছানা থেকে ওঠে একটা স্লিপিং পিল খেয়ে কাথা মুড়ি দিয়ে ঘুমানোর প্রস্তুতি নেয়। শ্রেয়সীর ঘুমের বারটা বাজিয়ে তীক্ষ্ম শব্দ ফোনটা বেজে ওঠে। বিরক্তিতে শ্রেয়সী মুখ ‘চ’ এর মতো শব্দ করে। বিছানায় শুয়ে থেকে টেবিল হাতড়ে ফোনটা হাতে নেয়। ফোনের স্কিনে ‘ শান্তা আপু দা বিবাহিত মহিলা’ নামটা ভাসতেই শ্রেয়সী ফস করে একটা নিশ্বাস ছাড়ে। ঘুমের ডিস্টার্ব করার জন্য শ্রেয়সীর ইচ্ছে করছে শান্তা নামক বিবাহিত মহিলাকে গোবরের পানিতে চুবিয়ে রাখতে। ফোনটা রিং হতে হতে কেটে গেলো। শ্রেয়সী ফোনটা রাখতে নিলেই আবার বেজে ওঠে। শ্রেয়সী ফোনটা রিসিভ করে অপেক্ষা করতে থাকে শান্তার কথা শোনার জন্য।

হ্যালো। শ্রেয়সী তুই এতো পাষাণ কী করে হতে পারিস? তোর কাছ থেকে এটা আমি একদম আশা করিনি। তুই আমাকে ভুলে গেলি? তোর শান্তা আপুকে? কীভাবে পারলি এমনটা করতে? আমার বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর তুই আমাকে একটা মিস কল পর্যন্ত দিসনি।
আমি দেইনি তো কী হয়েছে? তুমি তো দিতে পারতে।

আমি কীভাবে কল দিবো? তোর দুলাভাই তো আমাকে ফোনই ধরতে দেয় না। আমার ফোনে একটা টাকা ফেক্সি করে দেয় না। আমি নাকি আমার চৌদ্দ গোষ্ঠীকে কল করে করে তাকে ফকির বানিয়ে দিচ্ছি।
আপু প্লিজ নাটক অফ করো।
তোর কাছে আমার ইমোশনকে নাটক মনে হচ্ছে? তোর দুলাভাই যে আমাকে এতো বড় অপবাদ দিল তার বিচার তুই করবি না।

আপু সপ্তাহ দুয়েক হলো তোমার সাথে আমার কথা হয় না। আমি আয়াত ভাইয়াকে চিনি। আজাইরা কথা শেষ হলে ফোন রাখো। আমি ঘুমাবো।
আমার কথা তোর আজাইরা মনে হচ্ছে? তোর সাথে আমি কতো ইম্পর্টেন্ট কথা বলছি। তুই আমাকে পাত্তাই দিচ্ছিস না। আমার সাথে কথা বলার থেকে তোর কাছে ঘুমটা বেশি ইম্পর্টেন্ট হয়ে গেলো?
অবিয়েসলি। আমি সবকিছু নিয়ে আপস করলেও ঘুম নিয়ে আপস করি না। যা বলার দ্রুত বলে ফোন রাখ। আমার ভীষণ ঘুম পাচ্ছে।

শান্তা স্লান স্বরে বলে,
তোকে কতদিন দেখি না। একবার আসবি আমার কাছে? বাসায় একা একা আর ভালো লাগে না। আয়াত আজকাল প্রচুর ব্যস্ত থাকে। আমাকে সময় দেওয়ার যথেষ্ট চেষ্টা করে। বুঝি ওর ভীষণ কষ্ট হয়ে যায়। সারাদিন কাজ করে রাতে এসে আমার জন্য বিশ্রামও নিতে পারে না। আজকাল রাতে ঘুমাতে পারি না। আমার সাথে ও জেগে থাকে। মুখে না বললেও বুঝি ওর ওপর ভীষণ প্রেসার পড়ে যাচ্ছে। আসবি আগামীকাল?

শ্রেয়সী কিছুক্ষণ ভেবে বলে,
আসবো। আয়াত ভাইয়াকে বলো ছুটি নিতে। উনার একমাত্র শালিকা আসছে অফিসে ছুটলে হবে না কিন্তু।
আচ্ছা বলবো। চেকাপ করাতে যাব এখন রাখি।
আচ্ছা।

শ্রেয়সী ভার্সিটি শেষেই শান্তাদের বাড়ি চলে আসে। গরমে ঘামে শ্রেয়সীর অস্থির অবস্থা। টিস্যু দিয়ে কপালের ঘাম মুছে নিচ্ছে বার বার। অধৈর্য হয়ে তৃতীয় বারের মতো কলিংবেলে চাপ দেয় শ্রেয়সী। সেকেন্ডের মাঝেই দরজা খুলে দেয় শান্তা। শ্রেয়সী শান্তাকে ভালো করে লক্ষ্য করে দেখে শান্তা একটু কালো হয়ে গেছে আর অনেকটা মোটাও হয়ে গেছে। পেট খানিকটা ফুলে ওঠেছে। শ্রেয়সীকে দেখেই শান্তা জড়িয়ে ধরতে চাইলে শ্রেয়সী সরে যায়। শ্রেয়সী বিরক্ত হয়ে বলে,
আপু তোমার কী কান্ড জ্ঞান নেই? কবে নিজের যত্ন নিতে শিখবে বলো তো? নিজের জন্য না হোক যে আসছে তার জন্য তো নিজের যত্ন নিতে পারো। দেখছো আমার শরীর ঘামে ভিজে চ্যাট চ্যাট করছে আর বাইরে থেকে এলাম কতো জীবাণু শরীরে তার

মাঝে তুমি জড়িয়ে ধরতে চাইছো? আমার চ্যাম্পের প্রতি এমন অনাদর, অবহেলা মেনে নিব। আমার চ্যাম্প একটু কষ্ট পেলে কিন্তু তোমার খবর আছে।
হইছে ম্যাডাম আর পাকনামি করতে হবে না। আসেন গোসল করবেন।
গোসল করে পড়বো কী? জামাকাপড় নিয়ে আসিনি।
সমস্যা নাই। আমার শাড়ি পড়ে নে।

অসম্ভব। তুমি জানো না আমি শাড়ি পড়ে কারো সামনে যাই না। আর তুমি বলছো শাড়ি পড়ে আমি এখন তোমার বাড়ি ঘুরঘুর করবো। আয়াত ভাইয়ার সামনে পড়ে গেলে কেমন লজ্জাজনক কান্ড হবে।
আচ্ছা যা বইন গোসল করতে যা। আমি তোর জন্য থ্রি-পিছ নিয়ে আসছি। আমি তো শুধু অপেক্ষা করছি তোর বিয়ের। বিয়ের পর জামাই যখন শাড়ি পড়তে বলবে তখন তুই কী করিস আমিও দেখবো।

শ্রেয়সী শান্তার কথায় পাত্তা না দিয়ে ব্যস্ত ভঙ্গিতে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়। কিয়ৎক্ষণের মাঝে শ্রেয়সী মাথায় টাওয়াল পেছিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে। শান্তা পেটে হাত রেখে আস্তে আস্তে হেঁটে এসে বিছানার ওপর বসে। শ্রেয়সী মাথার টাওয়াল খুলে বারান্দায় মেলে দেয়।

আপু আয়াত ভাইয়া কোথায়? একমাত্র শালিকা আসছে আর উনি অফিসে। দিস ইজ নট ফেয়ার আপু। শালিকার জন্য একদিন ডিউটি ফিউটি বাদ দিতে পারলেন না।
এর মাঝে তীক্ষ্ম শব্দে কলিংবেল বেজে ওঠে। শান্তা মুচকি হেসে বলে,
তোর আয়াত ভাইয়া চলে আসছে। আমার কাছে অভিযোগ না করে তার কাছেই গিয়ে কর।

শহর জুড়ে সন্ধ্যা নামুক পর্ব ১১

আজকে আয়াত ভাইয়ার খবর আছে।
শ্রেয়সী দরজা খুলে দিয়ে বলে,
আসসালামু আলাইকুম। এটা কিন্তু ঠিক না আয়াত ভাইয়া। আমি
শ্রেয়সী কথা বলতে বলতে থেমে যায় আয়াতের পাশের মানুষটাকে দেখে।

শহর জুড়ে সন্ধ্যা নামুক পর্ব ১৩