শহর জুড়ে সন্ধ্যা নামুক পর্ব ১১

শহর জুড়ে সন্ধ্যা নামুক পর্ব ১১
তাসনিম জাহান রিয়া

শ্রেয়সী আর অনুপম মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে। অনুপম শ্রেয়সীর দিকে বিরক্তিকর ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে। অনুপম শ্রেয়সীকে তাড়া দিয়ে বলে,
যা বলার দ্রুত বল। আমার হাতে সময় নেই।
আপনি আমার সাথে এমনটা কেনো করলেন?
অদ্ভুত কথা বলছো তো। আমি আবার তোমার সাথে কী করলাম?

আপনি তো জানতেন আমার অনুভূতি সম্পর্কে। আপনি বুঝতেন আমি আপনাকে ভালোবাসি। জেনে শুনে কেনো আমার অনুভূতি নিয়ে মজা করলেন?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

দেখো তোমার বয়স খুব কম। তুমি আমার ছোট বোনের মতো। এই বয়সে মেয়েদের আবেগটা একটু বেশি কাজ করে। আবেগের কাছে বিবেকবোধ হেরে যায়। তোমাকে বুঝতে হবে আমি বিবাহিত। আমার ওয়াইফ আছে। কিছুদিনের মাঝেই আমি বাবা হতে চলেছি। আমি আমার ওয়াইফকে যথেষ্ট ভালোবাসি। এই যে তুমি আমার কাছে ভালোবাসা প্রকাশ করছো সেটা আমার কাছে মূল্যহীন। তোমার সামনে তোমার উজ্জ্বল ভবিষ্যত কড়া নাড়ছে। নিজের লক্ষ্যের দিকে ফোকাস করো। আমার থেকে ভালো কাউকে নিছের লাইফ পার্টনার হিসেবে পাবে।

আমি তো আপনার থেকে ভালো কাউকে চাইনি। আমি তো আপনাকে চেয়েছিলাম ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব।
শ্রেয়সীর কথা যে আর তার ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবের শোনা হলো না। তার আগেই দৃষ্টি সীমানার অদূরে চলে গেলেন।

হইচই করা বন্ধুমহলটা আজকে নিরব নিস্তব্ধ। মিহান শ্রেয়সীর দিকে টিস্যু এগিয়ে দিয়ে বলে,
চোখের জলটা মুছে ফেল। তোর চোখের জল এতো সস্তা হয়ে যায়নি যে যার তার জন্য জড়াবি। যার কাছে তোর চোখের মূল্য নেই তার জন্য চোখের জল জড়ানো অর্থহীন।

আমি যে অনেক বড় পাপ করে ফেলেছি। এই পাপের শাস্তিই বোধহয় আল্লাহ্ আমাকে দিচ্ছেন। আমি এমন একজনকে ভালোবাসলাম যে অন্য একজনের স্বামী, অন্য একজনের অনাগত সন্তানের বাবা। যার দিকে তাকানোও আমার জন্য পাপ তাকেই আমি মনে মনে চেয়ে বসলাম, তাকে নিয়ে স্বপ্নে সংসার সাজালাম। নিজেকে দেখে নিজেরই ঘৃণা হচ্ছে। আমার মরে যেতে ইচ্ছে করছে।
ইভা শ্রেয়সীর চিবুক ধরে বলে,

একদম উল্টা পাল্টা কথা বলবি ন। উল্টা পাল্টা কথা বললে ঠাস করে একটা থাপ্পড় মারবো। এখানে তোর একার অন্যায় নেই, ঐ ম্যাজিস্ট্রেটও অন্যায় করেছে। দুজনেই যেখানে সমান অপরাধী তাহলে তুই কেনো একা অপরাধবোধ ভুগবি?
এখানে উনার অন্যায় নেই। উনি তো বলেছিলেন উনি অন্য কারো ব্যক্তিগত পুরুষ। আমিই বুঝতে ভুল করেছিলাম। আমি ভেবেছিলাম উনি আমাকে মিন করে বলেছেন যে, উনি আমার ব্যক্তিগত পুরুষ। বাট আই ওয়াজ রং।

মুহিবও ইভার কথায় সায় জানিয়ে বলে,
আমিও ইভার সাথে সহমত। উনি তো তোর অনুভূতি সম্পর্কে আন্দাজ করেতে পেরেছিলেন। তাহলে উনি যে বিবাহিত সেটা
তোকে ক্লিয়ার করে বলে দিলেই পারতেন। কিন্তু উনি সেটা করলেন না। উনি তোর অনুভূতি নিয়ে মজা করলেন। উনি তোকে যেভাবে বলতেন উনি অন্য কারো ব্যক্তিগত পুরুষ।

এই কথা আমাকেও কেউ বললে আমি মনে করতাম সে আমাকে লাইক করে। উনি যে তোকে পছন্দ করেন সেটা উনার চোখের ভাষায় প্রমাণ করে দিতো। উনি যদি তোকে ভালো নাই বাসবে তাহলে তোকে কেনো ফুলের গাছের চারা কিনে দিল? উনি অস্বীকার করতে পারবেন না যে চারাগুলো উনি দেননি। কারণ আমি নিজের চোখে উনাকে ফুল গাছের চারা কিনতে দেখেছি। উনার নজর তোর দিকে ছিল বলেই এসব করেছেন। তোকে নিজের প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে নিজেই পাল্টি খেয়ে নিল। তুই এসব নিয়ে একদম মন খারাপ করবি না।

প্রিয়ন্তি শ্রেয়সীকে জড়িয়ে ধরে বলে, মুহিব ঠিকই বলেছে একদম মন খারাপ করবি না। তোকে এই গম্ভীর মুখে মানায় না। তুই তো জানিস তুই কান্নাকাটি করলে আমাদের একদম ভালো লাগে না। যা হয়েছে সব ভুল যা। আগের মতো নিজের লাইফটা গুছিয়ে নে। তোর উজ্জ্বল ভবিষ্যত তোর জন্য অপেক্ষা করছে। অনুপম নামক চাপ্টারটা এখানেই ক্লোজ করে দে। যে তোকে ভেঙে গুড়িয়ে দিতে চেয়েছিল তাকে দেখিয়ে দে শ্রেয়সীকে ভাঙা এতো সহজ না। একই বিল্ডিংয়ে যেহেতু থাকিস। তাহলে দেখা হওয়াটা স্বাভাবিক। দেখালে হলে একদম ইগ্নোর করবি।

তন্ময় কিছুক্ষণ ভেবে বলে,
শ্রেয়সী আমার মনে হয় তোর ঐ বাসা ছেড়ে দেওয়া উচিত। উনাকে সবসময় চোখের সামনে দেখলে তুই উনাকে ভুলতে পারবি না। উনার থেকে দূরে গেলেই উনাকে ভুলা সহজ হবে।
আমি কোথায় যাব? আমি বললেই কী বাসা থেকে যেতে দিবে?
নিতু চট করে উত্তর দেয়,

তুই আমার আর প্রিয়ন্তির সাথে হলে ওঠে যা। বাসা থেকে যেতে দিতে না দিলে বলবি,বাসায় পড়ালেখা হচ্ছে না। তাতে কাজ নাহলে অনশন ডাকবি। আমরা সব রকম সাপোর্ট করবো। আংকেলকে বুঝানোর আপ্রাণ চেষ্টা করবো আমরা।

কেটে গেলো সপ্তাহ খানেক। শ্রেয়সী হলে ওঠেছে আজকে তিনদিন। হলে উঠার রাস্তা সহজ ছিল না। খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিয়ে অনশন করে হলে ওঠেছে। শ্রেয়সীর ভাগ্য ভালো যে ঠিক সময় হলে সিট পেয়ে গিয়েছিল।
যে চারদিন শ্রেয়সী বাড়ি ছিল সেই চারদিন শ্রেয়সী ভুলেও অনুপমের সামনে পড়েনি।

একদিন সিঁড়িতে চোখাচোখি হতেই শ্রেয়সী দ্রুত চোখ সরিয়ে নেয়। অনুপম কথা বলার চেষ্টা করেছিল কিন্তু শ্রেয়সী একদম ইগ্নোর করে। এরপর শ্রেয়সী টুটালি বাইরে বের হয় না। পড়ছি বাহানায় ঘন্টার পর ঘন্টা
রুমের দরজা বন্ধ করে রুমের এক কোণে পড়েছিল। ভুলেও ছাদে যায়নি। শ্রেয়া বেগম ছাদ থেকে কাপড় তুলতে বললে পড়ছি বাহানায় শ্রেয়সী কথাটা এড়িয়ে গেছে।।

মুহিব আর শ্রেয়সী লাইব্রেরি গিয়েছিল কিছু বই কেনার জন্য। শ্রেয়সী মুহিবকে রাগ দেখিয়ে বলে,
তুই বই দিবি না? তোর কষ্ট হচ্ছে তো।
না দিব না। এই কয়েকটা বই নিতে নাকি আমার কষ্ট হবে। আমার মতো শক্তপোক্ত পুরুষ তোর পাশে থাকার পরও যদি তোর এই পাতকাঠির মতো শরীর নিয়ে যদি বই নিয়ে যাস। তাহলে সেটা আমাদের পুরুষ জাতির জন্য অপমান।
কীসের অপমান? আসছে আমার শক্তপোক্ত পুরুষ। একটা ঘুষি দিলেই তো উড়ে যাবে।
শ্রেয়সী।

অনুপমের কন্ঠস্বর কর্ণগোচর হতেই দুজনেই দাঁড়িয়ে যায়।
শ্রেয়সী আমার কিছু কথা ছিল তোমার সাথে। একটু আমার কথা শুনবে?
আপনার সাথে আমার কোনো কথা নেই। প্লিজ আপনি চলে যান।
আমি তোমার সাথে যাস্ট একটু কথা বলবো।

অনুপম শ্রেয়সীর কাধে হাত রাখতে গেলে মুহিব ধাক্কা দিয়ে অনুপমকে সরিয়ে দেয়। এতো অনুপম একটু অপমানবোধ করে। কিন্তু কিছু বলে না। শ্রেয়সী এবার পূর্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে অনুপমের দিকে। শ্রেয়সীর কাছে অনুপমকে একটু এলোমেলো মনে হলো। মুহিব খানিকটা অনুপমের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে,

আমি আপনাকে একজন ভালো মানুষ ভাবতাম। বাট আই ওয়াজ রং। আপনি ঐসব চরিত্রহীন পুরুষদের দলেই পড়েন যারা ঘরে বউ থাকতেও বাইরে বাইরে ছোঁকছোঁক করে বেড়ায়। সময় থাকতে ভালো হয়ে যান।
অনুপম মৃদু চিৎকার করে বলে, মুহিব।
মুহিব বিরক্ত হয়ে বলে,

একদম চিৎকার করবেন না। সত্যি বললে সবারই গায়ে লাগে। এটা কারো পৈতৃক বাড়ি নয় যে চিৎকার চেঁচামেচি করবে।
তুমি আমার চরিত্রে নিয়ে কথা বলছো। ডিরেক্ট আমাকে চরিত্রহীন বলে দিলে। কীসের ভিত্তিতে তুমি আমাকে চরিত্রহীন বলছো?
এতক্ষণ শ্রেয়সী মুখ খুলে। খুব মৃদু স্বরে অনুপমকে উদ্দেশ্যে করে বলে,

সত্যিটা জানার পর অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়েছি। বার বার আমার সামন এসে এভাবে আমাকে ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করবেন না প্লিজ। আপনি আপনার বিবাহিত জীবন নিয়ে সুখে থাকুন। আপনি আপনার স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে ভালো থাকুন।

শহর জুড়ে সন্ধ্যা নামুক পর্ব ১০

প্লিজ আপনি আমাকে ডিস্টার্ব করবেন না। আপনি এখন আসতে পারেন। আপনার মুখটাও আমার দেখতে ইচ্ছে করছে না।
অনুপম ছাড় দেয় কিন্তু ছেড়ে দেয় না।।
অনুপম আর এক মুহূর্তও দাঁড়ায় না। দ্রুত পা ফেলে চলে যায়।

শহর জুড়ে সন্ধ্যা নামুক পর্ব ১২