এক মুঠো প্রণয় পর্ব ২০

এক মুঠো প্রণয় পর্ব ২০
লেখনীতে একান্তিকা নাথ

কাটল আরো দুই সপ্তাহ। এই কয়েকটাদিন প্রত্যেকটা রাত আমার নির্ঘুমই কাটল। অসহনীয় যন্ত্রনায় তপ্ত হৃদয় যেন দগ্ধ হয়ে আছে।জীবন্ত প্রাণ এখন আর জীবন্ত বোধ হয় না আমার কাছে।নির্জীব!নিজেকে কোন এক নির্জীব, অনুভূতিহীন, যন্ত্রমানবী বোধ হয়।যার ব্যাথা নেই, দুঃখ নেই, কষ্ট নেই। আছে শুধু নিঃশ্বাস!যে নিঃশ্বাস বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত আমি বাদবাকি সকল মানুষের কাছে তাদের মতোই জীবন্ত মানুষ, জীবন্ত প্রাণী!আসলেই কি আমি জীবন্ত?

মনের ভেতর উদ্ভট প্রশ্নটা জেগে উঠতেই চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম।টিনের জানালাটা মেলে দিতেই চোখে পড়ল কি ভীষণ ঘনকালো অন্ধকার।ওপাশ থেকে ঝি ঝি পোকার আওয়াজও ভেসে আসছে।সেদিক পানে তাকিয়েই আমি নিশ্চুপে কাঁদলাম। এই সময়টা আমার কান্না করার উপযুক্ত সময়।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

আশপাশে কেউ নেই, কোন কোলহল নেই, কোন প্রশ্নও নেই।নেই দুঃখ প্রকাশ পাওয়ার ভয়ও।আমি নিশ্চিন্তে কাঁদতে পারি এ সময়টায়।কিয়ৎক্ষন সেভাবেই ঠাঁই দাঁড়িয়ে অশ্রুতে চোখ ভিজালাম।পরমুহুর্তেই দরজার আওয়াজ হলো। এই সময়টায় অন্যদিন সাধারণত মেহেরাজ ভাই খাবার নিয়ে আসেন।কিন্তু যতদূর জানা উনি আজ আসবেন না।

মেহেরাজ ভাই বা মেহু আপু কেউই আর শহরে ফিরেননি। মেহু আপু সারাদিন এখানে কাঁটালেও রাতে উনাদের বাড়িতে ঘুমানোর বিষয়টা অনেক কষ্টেই বুঝাতে সক্ষম হয়েছিলাম। কিন্তু মেহেরাজ ভাইকে বুঝানো দায়!এই দুই সপ্তাহে প্রত্যেকটা দিন নিজেদের বাড়িতে রান্না করে রোজ রোজ খাবার দিয়ে যাওয়া হতে নির্ঘুম রাত্রিতে আমায় সঙ্গ দেওয়া কোনটাই বাদ দেননি।

মাঝে মাঝে অবাক হই মেহেরাজ ভাইয়ের অস্পষ্ট যত্নে অথবা দায়িত্বে৷ মাঝে মাঝে ভাবি, আসলেই কি সবটা কেবল মেহেরাজ ভাইয়ের দায়িত্ব? দায়িত্বের জন্য কেউ এতটুকু করে?আবার দায়িত্বের থেকে বেশিকিছু ভাবার ও সম্ভাবনা নেই। হতে পারে সহানুভূতি। কিংবা হতে পারে শুধুই দায়িত্ব। ছোটশ্বাস ফেলে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালাম।অন্যদিন খাবার নিয়ে এই সময়টায় মেহেরাজ ভাই আসলেও আজ তার সম্ভাবনা ক্ষীণ।

দুপুরে মেহেরাজ ভাইয়ের পরিবর্তে আজ মেহু আপু খাবার নিয়ে এসেছিলেন। বলেছিলেন মেহেরাজ ভাই আজ সকালেই বাসায় ফিরে গিয়েছেন।মেহেরাজ ভাই নেই দেখে রান্নাটাও নাকি চাচীই করেছিলেন আজ।তাই মনে মনে ধরেই নিয়েছিলাম মেহেরাজ ভাই আজ রাতে আসবেন না খাবার নিয়ে।চোখের জল মুঁছে ধীর পায়ে গিয়ে দরজা খুললাম।সঙ্গে সঙ্গে মেহেরাজ ভাইকে দেখে কিঞ্চিৎ অবাক হলাম।সকালে বাসায় গিয়ে আবার আজই গ্রামে ফিরে এসেছেন?অস্ফুট স্বরে প্রশ্ন ছুড়লাম,

” আপনি?”
মেহেরাজ ভাই টিফিন বক্স হাতে করে ঘরে ডুকলেন।একপাশে কাঠের চেয়ার টেনে বসে বললেন,
” কেন? অন্য কেউ আসার কথা ছিল? ”
আমি ছোট ছোট চোখে তাকালাম।মৃদু গলায় বললাম,
” না, আপনার তো আজ এই সময়ে আসার কথা ছিল না। ”
মেহেরাজ ভাই ভ্রু কুঁচকালেন।বললেন,

” প্রতিদিনই তো এই সময়ে আসি।আজ কথা নয় কেন তাহলে?”
” বাসায় ফিরে গিয়েছেন বলেছিল মেহু আপু। তাই আপনাকে এই সময়ে আশা করিনি।”
মেহেরাজ ভাই মাথা নাড়ালেন। গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলেন,

” এত দেরিতে দরজা খুললি কেন?”
আমি মুহুর্তেই একটা মিথ্যে বলে বসলাম,
” ঘুমাচ্ছিলাম।খেয়াল করিনি তাই। ”
মেহেরাজ ভাই এবারও মাথা নাড়ালেন।জিজ্ঞেস করলেন,

” কাল শেষ না পরীক্ষা?”
” হ্যাঁ।”
” দুপুরে খেয়েছিস?”
” খেয়েছি। মেহু আপু খাবার দিয়ে গিয়েছিল।”
মেহেরাজ ভাই হাতের টিফিন বক্সটা এগিয়ে ধরলেন আমার দিকে।বলে উঠলেন,
” গুড। এখনও খেয়ে নে দ্রুত।”

আমি এগিয়ে নিলাম না উনার হাতের টিফিন বক্সটা।কিয়ৎক্ষন উনার দিকে স্থির তাকিয়ে থাকলাম।উনার চোখেমুখে ক্লান্তির চাপ স্পষ্ট। চুলের একাংশ কপালে ঝুঁকে আছে।স্থির চাহনীতে আরো কিছুক্ষন সেভাবে তাকিয়ে থাকাতেই মেহেরাজ ভাই ভ্রু উঁচিয়ে প্রশ্নময় দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন।আকস্মিক আমি সেই দৃষ্টির বিনিময়ে বলে উঠলাম,

” আমার জন্য এতকিছু কেন করছেন মেহেরাজ ভাই?এই যে আজ বাসায় গেলেন, আবার ফিরে এলেন।এতোটা জার্নি করে ফিরে আসার তো দরকার ছিল না আজ।আমার জন্য রোজ রোজ কষ্ট করে খাবার রান্না করে খাবার আনার ও তো দরকার নেই৷ এত কষ্ট করে নিজেদের বাসা ছেড়ে এখানে থাকারও কি দরকার আছে?নেই।তবুও বাসায় না ফিরে আমার জন্য আপনারা ভাইবোন দুইজনই গ্রামে পড়ে আছেন, রান্না করে দিয়ে যাচ্ছেন, জোর করে খাওয়াচ্ছেন।কেন করছেন এতসব?”

মেহেরাজ ভাই গম্ভীর চাহনীতে চাইলেন। বললেন,
” তুই হলে কি কি করতি?পাশে না থেকে ছেড়ে চলে যেতি এমন একটা সময়ে?”
শান্ত গলায় উত্তর দিলাম,
” জানা নেই।”
মেহেরাজ ভাই গলা ঝাড়লেন।একদম শীতল দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলতে লাগলেন,

” হিসেব মতো তোর আর আমার বিয়েটা হয়েছে।চাই বা না চাই আমরা একটা বন্ধনে জড়িয়েছিলাম জ্যোতি।এটা ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতই হোক,তবুও দিনশেষে এটা সত্য।একজন স্বামী কখনো তার স্ত্রীকে এমন দুর্দশায় ছেড়ে যায় না।স্ত্রীর পাশে থাকাটা স্বামীর দায়িত্ব, রাইট?দ্বিতীয়ত স্বামী না হলেও, একজন মানুষ হিসেবে হলেও আমার মনে হয়েছে এটা আমার দায়িত্ব জ্যোতি।একজন মানুষ হিসেবেই হোক কিংবা একজন স্বামী হিসেবেই হোক, তোকে এই মুুহুর্তে এভাবে একা রেখে ছেড়ে গেলে নিজেকে মনুষ্যত্বহীন বোধ হবে।আমি অতোটা মনুষ্যত্বহীন নই।”

মেহেরাজ ভাইয়ের উত্তরে আবারও দায়িত্ব শব্দটাই উঠে আসল দৃঢ় ভাবে৷ উত্তরটা হয়তো আমার জানাই ছিল।তবুও কেন জানি না মেনে নিতে পারলাম না।ভেতরে ভেতরে কষ্ট অনুভব করলাম।এতগুলো দিনের যত্ন, শাসনে একটু হলেও বোধহয় আমার মন অন্য ধারণা পুষে নিয়েছিল। যদিও মস্তিষ্ক জানত এই ধারণা মিথ্যে। তবুও কেন জানি না আমি সহ্য করতে পারলাম না কথাগুলো।থম মেরে চুপ করে থাকলাম আরো কিছুক্ষন।তারপর স্বাভাবিক হয়ে মেহেরাজ ভাইয়ের হাত থেকে টিফিন বক্সটা নিয়ে স্পষ্ট কন্ঠে বললাম,

” একটা অনুরোধ রাখবেন মেহেরাজ ভাই?দায়িত্বের জন্য আমায় মায়া দেখাবেন না। আমার জীবনে বহুবার মায়া ভেঙ্গেছে। বহুবার আমি মানুষ হারিয়েছি।বহুবার আমি একা অনুভব করেছি। তাই এখন আর মানুষের মায়া জড়াতে চাই না।আসলে মানুষের মায়ায় জড়াতে ভয় পাই।ভয় পাই কাউকে অভ্যাসে পরিণত করতে।এই ধরুন, দাদী।দাদী তো আমার সকাল হতে রাত হওয়া পর্যন্ত প্রত্যেকটা মুহুর্তের সঙ্গী ছিল, অভ্যাস ছিল।দিনশেষে সেই অভ্যাসও ভেঙ্গেছে।

তাই আজকাল নতুন করে কাউকে পাশে পেলে ভয় হয়। তাই অনুরোধটা রাখবেন দয়া করে। মিথ্যে মায়ায় জড়াতে চাই না। পুনরায় এই মায়া ভাঙ্গার কষ্ট কিংবা মানুষ হারানোর কষ্ট সইতে চাওয়াটা আমার জন্য বেমানান।আমি সে কষ্টটা পুনরায় চাই না।কখনোই না।আপনি বরং ফিরে যান। ”

মেহেরাজ ভাই শুনলেন সবগুলো কথা।তারপর শান্তস্বরে বললেন,
” তোর পরীক্ষা শেষ হলে পরশুই ফিরব। তুই, মেহু, আমি তিনজনই।”
” আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়াটাও তো আপনার দায়িত্ব।”
মেহেরাজ ভাই ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন ছুড়লেন,
” মানে?”
ছোট শ্বাস ফেললাম।উত্তরে বললাম,

” আমার ফেরাটা জরুরী নয়।কিন্তু আপনাদের ফেরাটা জরুরী মেহেরাজ ভাই।মেহু আপুর ভার্সিটি। আপনার চাকরীর ইন্টার্ভিউ, পড়া সবকিছুতেই আমার জন্য ব্যাঘাত ঘটছে।আমার জন্য অতোটা ভাববেন না।আমি এই ঘরে থাকতে সে ছোটকাল থেকেই অভ্যস্ত। এই বাড়িটাও আমার ছোটকাল থেকে চেনা। এখানে আমার একা থাকাটা খুব বেশি ভয়ানক কিছু নয়। আমি ছোটকাল থেকে রান্নাও করতে পারি মেহেরাজ ভাই।দাদীর আর আমার রান্নাটা কিন্তু আমিই করতাম এতকাল।তাই খাবার নিয়েও চিন্তা করবেন না।আমি ভালো থাকব। আপনি ফিরে যেতে পারেন।”
মেহেরাজ ভাই বোধ হয় বিরক্ত হলেন।কপাল কুঁচকে নিলেন। ভ্রু উঁচিয়ে বললেন,

” তোর সব কথা শুনব এমনটাই বা ভাবছিস কেন?”
” মানে?”
মেহেরাজ ভাই কন্ঠে শীতল রাগ মিশিয়ে বলে উঠলেন,
” মানে পরশু ফিরব। তুইও ফিরবি সাথে। ”
” আপনি খুব দায়িত্ববান পুরুষ মেহেরাজ ভাই। এটা আমি নিঃসন্দেহে বিশ্বাস করি।আমি নই শুধু, সবাই বিশ্বাস করে। কিন্তু তার জন্য…”

আমি বাকিটা বলতে পারলাম না। তার আগেই মেহেরাজ ভাই বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলেন,
” তুই খুব বেশি কথা বলিস জ্যোতি।বিরক্তিকর লাগে। চুপচাপ খেয়ে নে। আমি আসছি বাইরে থেকে।”
কথাটা বলেই মেহেরাজ ভাই বসা ছেড়ে উঠে বুক টানটান করে সোজা হয়ে দাঁড়ালেন।পা বাড়িয়ে টিনের দরজাট পেরিয়ে বাইরে চলে গেলেন খুব কম সময়ে। আমি একনজর তাকিয়েই টিফিন বক্স খুলে খাবার নিলাম থালায়। কিয়ৎক্ষন পর খেয়ে হাত ধুঁয়ে উঠতেই মেহেরাজ ভাই হাজির হলেন আবারো। ভ্রু কুঁচকে টিফিন বক্সের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন,

” প্রতিদিন খাবার থেকে যায় কেন? ”
” মানে?”
মেহেরাজ ভাই মুখটা গম্ভীর করে তাকালেন। ভরাট কন্ঠে রাগসমেত বলে উঠলেন,
” কষ্ট করে রান্না করি। তুই খাবার এভাবে রেখে দিস কেন বক্সে?পুরোটা খাওয়ার জন্য নিয়ে আসিনি?”
উত্তরে কি বলব বুঝে উঠলাম না আমি।মেহেরাজ ভাই আগের মতোই গম্ভীর স্বরে বললেন,

” কাল থেকে খাবার রেখে দিলে খাবারই আনব না বলে দিলাম।”
মৃদু স্বরে বললাম,
” আমি তো আপনাকে খাবার আনার জন্য জোর করিনি মেহেরাজ ভাই।”
মেহেরাজ ভাই থমথমে চাহনীতে তাকালেন। কিছু না বলে সোজা হেঁটে চলে গেলে খাটের সামনে। মুহুর্তেই সটান হয়ে খাটের একপাশে গা এলিয়ে দিলেন। কপালে হাত রেখে চোখ ও বুঝে নিলেন। আমি কেবল তাকিয়ে থাকলাম।

পরীক্ষা দিয়ে যখন ফিরলাম তখন ফুফু ডেকেছিলেন।গোসল সেরে তাই ফুফুদের ঘরে গিয়েছিলাম ফুফুকে খুঁজতে।না পেয়ে আরমান ভাইকে জিজ্ঞেস করতেই বললেন ফুফু মিনার ভাইয়ের ঘরে আছেন।আমিও কথামতো মিনার ভাইয়ের ঘরে গেলাম।দেখলাম ফুফু মিনার ভাইয়ের আলমারির কাপড়চোপড় গুলো গুঁছিয়ে রাখছে।খাটের এককোণায় বসে সেই দৃশ্যই পর্যবেক্ষন করতে লাগলাম আমি।

কিছুক্ষন পর ফুফুর সাথে অল্প কথা বলে চলে আসতে নিতেই মিনার ভাইয়ের টেবিলের সাথে ধাক্কা খেলাম ভয়ানকভাবে।মুহুর্তেই মিনার ভাইয়ের টেবিলের কিনারা ঘেষা বইগুলো সব মাটিতে পড়ে গেল।সঙ্গে পড়ল একটা সাদা কাগজ আর কলম।ধাক্কা খাওয়ার কারণে ব্যাথায় পা টনটন করে উঠাতে হাত দিয়ে পা চেপে ধরলাম সঙ্গে সঙ্গেই।

অন্য হাতে কাগজটা সামনে নিতেই চোখে পড়ল কাগজটার উপর দিকে আমার নাম।আমি ভ্রু কুঁচকালাম।মিনার ভাই কি আমার নামেই চিঠি লিখেছেন বা লিখছিলেন?কিন্তু কেন?আগ্রহ নিয়ে কাগজটা ওড়নার এককোণায় লুকিয়েই বইগুলো টেবিলের উপরে আগের মতোই তুলে রাখলাম। পরমুহুর্তেই দ্রুত পা চালিয়ে নিজের ঘরে গেলাম।কাগজখানা মেলে ধরলাম চোখের সামনে। মুহুর্তেই চোখে পড়ল গুঁটি গুঁটি অক্ষরে লেখা,

জ্যোতি,
তোকে সম্বোধন করার মতো নির্দিষ্ট কোন শব্দ আমার কাছে নেই জ্যোতি।থাকলেও এখন আর সেসব সম্বোধন তোর সাথে দেওয়া যায় না।বড্ড বেমানান ঠেকবে যে তাহলে।তোর প্রতি আমার ভালোলাগা, ভালোবাসা কবে তৈরি হয়েছিল আমার সত্যিই জানা নেই।শুধু জানতাম আমি তোকে আগলে রাখার চেষ্টা করতাম।তুই যাতে কষ্ট না পাস সে চেষ্টা করতাম। একটা সময় পর উপলব্ধি করলাম সে আগলে রাখার নাম ভালোবাসা।

এই ভালোবাসার কথাটা প্রকাশ করার সাহস কোনকালেই আমার মাঝে ছিল না।সেই সাহস না থাকার কারণেই বোধহয় তোকে নিরবে অন্যের হয়ে যেতে দেখতে হলো।চোখের সামনে থেকে দূরে যেতে দেখতে হলো।তোকে এড়িয়ে চলতে শুরু করাটা মূলত তখন থেকেই।সেদিন যখন বললি আমি বদলে গেছি?আমি এখন এড়িয়ে যাই তোকে? অপরাধবোধে জর্জরিত হচ্ছিলাম কেবল। তবুও এর পেছনে কারণটা আর বলা হলো না।বলতে পারলাম না।পারলাম না দাদীর চলে যাওয়ার কারণে কষ্টে জমে থাকা তোকে আগের মতো ভাঙ্গতে,আগলে নিতে।

পারলাম না আগের মতো তোর দুঃ এরপর আর কিছু লেখা নেই।বোধহয় ব্যস্ততায় আর লিখেনি।কিংবা কোন কারণে লেখাটা থামাতে হয়েছিল। আমি লেখাগুলোর দিকে আরো একবার তাকালাম। স্পষ্ট বোধ হলো এগুলো মিনার ভাইয়েরই লেখা ।

এক মুঠো প্রণয় পর্ব ১৯

অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে থাকলাম আরে অনেকক্ষন।মিনার ভাই আমায় ভালোবাসতেন?যাকে ছোট থেকে ভাই হিসেবে দেখে এসেছি, এত এত আপন ভেবেছি সে আমায় অন্য নজরে দেখতেন এমনটা ভাবতেই পারলাম না।কপাল কুঁচকে এল।ঠিক সে সময়েই চোখের সামনে মেহেরাজ ভাইকে ঘরে ডুকতে দেখলাম।কাগজটা দ্রুত টেবিলের ড্রয়ারে লুকাতে গিয়েই সম্মুখীন হলাম মেহেরাজ ভাইয়ের কড়া প্রশ্নের,
” এতোটা তাড়াহুড়ো করে কি লুকোচ্ছিস তুই?”

এক মুঠো প্রণয় পর্ব ২১