এক রক্তিম শ্রাবণে পর্ব ৫+৬

এক রক্তিম শ্রাবণে পর্ব ৫+৬
লেখিকা মালিহা খান

চোখের পাতায় নেমে এসেছে একরাশ প্রশ্নেভরা তীর্যক চাহনী।হাতে থাকা ওড়নাটায় চোখ বুলিয়ে এক কদম এগিয়ে যায় তোহা।
গলার স্বর নামিয়ে প্রশ্ন করে,
—“আপনি কি করে জানলেন আমি বারান্দায় ছিলাম?”
—“আমার প্রশ্নের উওর না দিয়ে তুই পাল্টা প্রশ্ন করছিস তিহু?ভেরি ব্রেভ!”ব্যঙ্গাত্তক কন্ঠে কথাটা বলে রুম থেকে বের হওয়ার জন্য পা বারাতেই অগোছালো হাতে তিহানের বাহু আঁকড়ে ধরে তোহা।বলে,
—“আমাকে আপনি রুমে এনেছিলেন?”
তিহান ঘাড় ঘুরিয়ে তার হাতের দিকে তাকায়।।তোহা হাত নামায়না,একইভাবে ধরে রাখে।বরং আরেকটু শক্ত হয় তার বাঁধন।
তিহান ফুঁস করে শ্বাস ছাড়ে।জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে মাথা ঝুঁকিয়ে অনেকটা কাছে আসে।তোহার চোখের দিকে তাকিয়ে তীক্ষ্ণ সুঁচালো কন্ঠে বলে,

—“এখনো সন্দেহ আছে তোমার?”
মাথাটা ঘুরে উঠে তোহার।কন্ঠনালি শুকিয়ে কাঠ!গোলমেলে দৃষ্টি,অস্থিরময় মুখশ্রী।তিহানের এই “তুমি” সম্মোধনটা খুব বেশি মারাত্মক একটা বস্তু তার কাছে।কেমন সম্মোহনী একটা ডাক।মূহুর্তেই যেন তাকে এলোমেলো অনুভূতির অসীম সাগর স্রোতে ডুবিয়ে দিতে সর্বদা সক্ষম।তাকে এভাবে হাবুডুবু খাওয়ানোটা কি খুব বেশি প্রয়োজন?
দৃষ্টি নামিয়ে ধীরগতিতে নিচের ঠোঁটটা কাঁমড়ে ধরলো তোহা।হাতের দৃঢ় শক্তপোক্ত বাঁধনটা আপনাআপনিই ছুটে গেলো।নিশ্চুপ নির্বিকার ভাবে মাথা নুইয়ে এক পা পেছাতেই গটগট শব্দ তুলে বাইরের দিকে হাঁটা ধরলো তিহান।তার চোখমুখ স্বাভাবিকের চেয়েও অতিস্বাভাবিক।তবে শুধুমাত্র গভীরতম দৃষ্টিতে লক্ষ্য করলেই তার ঠোঁটের কোঁণের সুক্ষ্ণ হাসির রেখাটা চোখে পরবে কারো।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ভারি ভারি কানের দুলগুলো কানে ঝুলতেই “উহ্” বলে আর্তনাদ করে উঠলো তোহা।পার্লারের মহিলাটা দাঁত বের করে হাসলো।বললো,
—“আপনার মনে হয় অভ্যাস নেই।সুন্দর দেখানোর জন্য একটু কষ্টতো করতেই হবে”
তোহা প্রচন্ড বিরক্তবোধ করলো।কালের দুলগুলো হাত দিয়ে ধরে নিশার উদ্দেশ্য বললো,
—“আমি এটা পরতে পারবোনা আপু।ট্রাস্ট মি,কান ছিঁড়ে যাবে আমার।”
নিশা তখন চোখ বন্ধ করে বসে আছে।তার চোখে আঠা দিয়ে নকল ভারি ঘন পাপড়ি লাগানো হয়েছে।না শুকানো পর্যন্ত চোখ খোলা মানা।তোহার উদ্দেশ্যে বিরবির করে সে বলে,
—“ক্যাঁচাল করিসনা তোহা।এখান থেকে সোজা সেন্টারে যাবো আমরা। তোর জন্য নতুন দুল কই পাবো?একটা দিনই তো।কষ্ট করে পরে নে।”
তপ্ত নি:শ্বাস ফেলে তোহা।এমনেই গায়ে এতো ভারি একটা লেহেঙ্গা পরিয়ে দিয়েছে তার উপর এই দুল।যদিও জামাটা খুব সুন্দর তবুও গরমে যাচ্ছেতাই অবস্থা তোহার।
সবার প্রায় সাজগোজ শেষ।
পার্লারের মহিলাটা একটা পাপড়িতে আঠা নিয়ে তার দিকে এগিয়ে আসতেই সে আৎকে উঠে বলল,”এটা লাগবেনা।আমার সাজা শেষ।দয়া করে আর কিচ্ছু লাগাবেন না।”
মহিলা থেমে গেলো।বিরক্তিকর দৃষ্টি নি:ক্ষেপ করে পাপড়িটা রেখে দিলো।হাঁফ ছাড়লো তোহা।
পার্লারে তারা পাঁচজন মেয়ে এসেছে।সে,নিশা,স্বর্ণালি,আর বাকি দুইজন নিশার খুব কাছের বান্ধবী।
সারাক্ষণ তাদের মুখে তিহানের এট্রাকটিভনেসের ব্যাপারে কথা শুনতে শুনতে কান পঁচে যাচ্ছে তোহার।
মেজাজ বিগড়ে যাচ্ছে অকারণেই।

এবড়োথেবড়ো ভাঙা রাস্তা।দুহাতে লেহেঙ্গা উঠিয়ে কোনরকমে পার্লারের সামনে দু তিনটে সিঁড়ি ভেঙে নেমে এলো তোহা।বাইরে অপেক্ষা করছে পাশাপাশি দুইটা গাড়ি।একটার বাইরে দাড়িয়ে আছে সাইফ।আর আরেকটায় পাশে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে তিহান।অন্যদিকে তাকিয়ে ফোনে কথা বলছে সে।পরণে কালো রংয়ের ইন করা শার্ট আর কালো প্যান্ট।ব্লেজারটা হাতে ঝোলানো।কালো জুতোজোড়া চকচক করছে।হাতে সেই সিলভার স্টীলের ঘড়িটা।চুলগুলো আঁচরানো সুন্দরকরে।
তারা কাছে যেয়ে দাড়াতেই তিহান গাড়ি থেকে সরে দাড়ায়।ফোনটা কেটে দিয়ে তোহার দিকে না তাকিয়েই সামনের সিটের গেট খুলে দিয়ে বলে,

—“তিহু,আমার সাথে যাবে।বাকিরা সবাই সাইফের গাড়িতে যা।”
অন্যকেউ কিছু না বললেও নিশার বান্ধবীগুলো একসঙ্গে বললো,”কেন?”
তিহান নিখুঁতভাবে হেসে বললো,
—“ওর আসলে বমি টমির অভ্যাস আছে খুব।এত গাদাগাদি করে বসলে তোমাদের গা ভরিয়ে বমি করতে দুইমিনিটও লাগবেনা ওর।আশা করি বুঝতে পারছো?”
নাক সিঁটকালো ওরা দুজনই।তোহা আপত্তি করে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো তার আগেই তিহান তাকে গম্ভীর কন্ঠে বললো,
—“চুপচাপ ভেতরে গিয়ে বস।”

তুলনামূলক ধীরগতিতে ড্রাইভ করছে তিহান।সাইফদের গাড়িটা আগে চলে যেতেই আরো একটু কমে এলো স্পিড।তোহা থম ধরে বসে আছে।তার কোলের উপর রাখা তিহানের ব্লেজারটা।
গাড়িতে এসি ছাড়া বিধায় তেমন গরম লাগছেনা।তবে কানের ব্যাথাটা বেড়ে চলেছে।দাঁতে দাঁত চেপে সেটা সহ্য করছে তোহা।দুহাতে কানের দুল দুটো ধরে রেখেছে সে।যেন বেশি চাপ না পরে।
সাইফদের গাড়ি যেইনা মোড় ঘুরে চোখের আড়াল হয়ে যায় তখনই তাদের গাড়ি থেমে যায় ।
—“কি হয়েছে?”জিজ্ঞাসু কন্ঠ তোহার।
নিজের সিটবেল্টটা খুলে ফেলে তিহান।একটু উঠে তোহার উপর ঝুঁকে যেতেই মাথা পিছিয়ে ফেলে তোহা।তিহান তার চুলগুলো আঙ্গুলের স্পর্শে ঘাড়ের পিছে দিয়ে দেয়।ঠান্ডা হাত কাঁধ ছুঁয়ে যায় কয়েকবার।তোহা শুকনো কন্ঠে বলে,
—“তিহান ভাই কি..করছেন?”
তিহান রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকায়।মুখে কাঠিন্য ভাব।জ্বালাময়ী গাঢ় ধূসর চোখ।সে কানের দুলদুটো খুলে নিতে নিতে উচ্চস্বরে ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে,

—“ব্যাথা পাচ্ছিস তাও পড়ে আছিস কেনো?ইডিয়ট!”
বলে কানের দুলের হুক খুলে তা খোলার জন্য আস্তে করে টান দিতেই “আহ্” বলে চেঁচিয়ে উঠে তোহা।চোখমুখ কুঁচকে যায় তীক্ষ্ণ ধাঁরালো ব্যাথায়।তিহান লক্ষ্য করে হাল্কা রক্ত বেরিয়ে আসছে তার কান থেকে।
দুআঙ্গুলের ডগা দিয়ে জায়গাটা চেপে ধরে সে।রক্তটুকু মুছে দিয়ে হাতের মুঠোয় থাকা কানেরদুল জোড়া সজোরে গাড়ির সামনের জায়গাটায় রাখে।তোহার চোখ বন্ধ।তিহানের রাগের মাত্রাটা আন্দাজ করতে বিন্দুমাত্র কষ্ট হচ্ছেনা তার।
খানিকবাদে পিটপিট করে তাকায় সে।
—“ব্যাথা কমেছে?”নরম কোমল শোনায় তিহানের কন্ঠ।
তোহা আড়চোখে একবার তাকিয়ে ছোট্ট করে উওর দেয়,
—“কমেছে।”
গাড়ি স্টার্ট দেয় তিহান।হঠাৎই বলে,
—“নিজেকে আঘাত করে,কষ্ট দিয়ে অন্যের জন্য নিজেকে আকর্ষনীয় করবিনা আর কখনো।ভারি ভারি দুল পরে কান থেকে রক্ত বের করে সুন্দর সাঁজতে হবেনা তোর।তারপর একটু থেমে ধীর কন্ঠে বলে,
“তুমি যা আছো,যেমন আছো তাই আমার জন্য যথেষ্ট।”
শেষের কথাটা শুনতেই একমূহুর্তের জন্য কেঁপে উঠে তোহার হৃদস্পন্দন।স্হির দৃষ্টিতে জানালার বাইরে চেয়ে রয় সে।

কিছুক্ষণ পর অসচেতনতায় আলতো করে তিহানের বাহুতে মাথা রাখে তোহা।অবচেতন,আচ্ছন্ন মনে ভাবে,
“তিহান ভাই”…মানুষটা যেন আগাগোড়াই আস্ত এক প্রহেলিকা!
ছোট ছোট মরিচবাতি দিয়ে সাজানো বিশাল কমিউনিটি সেন্টার।চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য্য।
গাড়ি থামে সেন্টারের সামনে।তখনো তিহানের বাহুতে তোহার মাথা ঠেকানো।চোখজোড়া বন্ধ।
তিহান বেশ বুঝতে পারছে তন্দ্রাঘোরে আছে মেয়েটা।
হাল্কা করে সেই হাতটা নাড়িয়ে সে বলে,
—“গাড়ি ঘুরাই তাহলে?বাসায় যেয়ে ঘুমা।বিয়েতে আর যাওয়া লাগবেনা।”
তিহানের কথাগুলো কানে যেতেই ধরফরিয়ে সরে যায় তোহা।সে তো ঘুমায়নি।কেবল চোখ বন্ধ করে ছিলো।কিন্তু তিহানের বাহুতে মাথা রাখলো কখন?মনে পরছে না।
সে সরতেই বেরিয়ে গেলো তিহান।অত:পর তাকেও বের করে ধীরপায়ে সামনে এগিয়ে গেলো।

সেন্টারে এদিক ওদিক ছুটে বেরাচ্ছে তোহা।আশেপাশের সবাই ই বর পক্ষের।তাদের বাসার কেউ নেই কেনো?
উপায় না পেয়ে সিঁড়ি বেয়ে একেবারে নিচে নেমে যায় তোহা।
বাবুর্চিরা যেখানে রান্না করছে সেখানেই তিহানকে দেখতে পায় সে।একটু পরেই খাবার সার্ভ করা হবে।মেহমানদারিতে যেন কোনোরকম কমতি না হয় তার জন্যই সেখানে দাড়িয়ে তদারকি করছে সে।
দ্রুতপায়ে হেঁটে যেয়ে পেছন থেকে তিহানের হাতের তালু আঁকড়ে ধরে তোহা।হাতে টান পরতেই তিহান ফিরে তাকায়।তোহাকে দেখে তেজী কন্ঠে বলে,
—“সমস্যা কি?টানাটানি করছিস কেনো?”
তোহা একটু এগিয়ে তিহানের গা ঘেঁষে দাড়ায়।চোখেমুখে ঘোর অসস্তি।এত অচেনা মানুষের ভিড়ে প্রচন্ড অসস্তি হচ্ছে তার।উপরন্তু বাসার কাউকে আশেপাশে পাচ্ছেনা।
তোহার আড়ষ্ট চেহারা দেখে এবার নিজেই তাকে একটু কাছে টেনে নেয় তিহান।আঙ্গুলের ভাঁজে আঙ্গুল গলিয়ে শক্ত করে তার হাতটা ধরে রাখে।বলে,

—“তুই একা কেন?স্বর্ণারা কোথায়?”
—“আমাদের বাসার কাউকে খুঁজে পাচ্ছিনা।”
ভ্রু কুঁচকায় তিহান।সন্দিহান কন্ঠে বলে,
—“খুঁজে পাচ্ছিসনা মানে?নাকি তুই ই হারিয়ে গেছিস?”
উওরে তোহা বোকা হেসে বলে,
—“ওই আরকি।সেন্টারটা অনেক বড়তো।তালগোল পাচ্ছিনা।”
মুখ ফুলিয়ে শ্বাস ছাড়ে তিহান।বাবুর্চিদের কিছু নির্দেশনা দিয়ে সেখান থেকে একটু সরে দাঁড়ায়।চুলার আগুনের উত্তাপে জায়গাটা গরম হয়ে গেছে।দাড়ানো যাচ্ছেনা।নিজের হাতের মাঝে আবদ্ধ তোহার ঘেমে যাওয়া হাতটা ঠি কই অনুভব করতে পারছে সে।
একপলক তাকিয়ে তোহার কপালের বেঁকে যাওয়া টি কলিটা সোজা করে দিয়ে পকেট থেকে নিজের ফোনটা বের করে তিহান।স্বর্ণার নাম্বারে ডায়াল করে রিসিভ হতেই ঝাড়ি দিয়ে বলে,
—“কই তুই?তিহুকে একা ছেড়েছিস কেনো?”
ওপাশ থেকে স্বর্ণার মিনমিনে কন্ঠ শোনা যায়,
—“ও তো আমার সাথেই ছিলো ভাইয়া।কখন যেনো…”
—“এখন কোথায় তুই?”
—“দোতালায়…স্টেজের পাশে।”
“আচ্ছা,ওখানেই থাক।আমি দিয়ে যাচ্ছি তিহুকে।”বলে ফোনটা খট করে কেটে দেয় তিহান।স্বর্ণার কাছে তোহাকে দিয়ে নিজের ফোনটা তোহার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে,”রাখ তোর কাছে।মার ফোনটা আমার কাছে আছে।কোনো দরকার হলে ওই নাম্বারে কল দিবি।”
তোহা মাথা কাত করে সম্মতি দিতেই আবারো ব্যস্ত পায়ে নিচে নেমে যায় তিহান।সে পথে মুগ্ধ নয়নে কিছুক্ষণ চেয়ে দৃষ্টি নামিয়ে ফেলে তোহা।

একটু আগেই নিশাকে গাড়িতে উঠিয়ে দেয়া হয়েছে।বরযাত্রী চলে গিয়েছে।
কেঁদেকেটে ভাসিয়ে ফেলেছে তোহা।এখনো আফিয়ার বুকে মাথা রেখে অনবরত কেঁদে চলেছে সে।চোখের সাজ নষ্ট হয়ে একাকার অবস্থা।বাকিরাও কাঁদছে।স্বর্ণালি আর ওদের ছোটখালা তোহার মাকে সামলাচ্ছে।
সব কাজ শেষ করে তিহান সেদিকে এগিয়ে এলো।আফিয়াকে উদ্দেশ্য করে চাপা স্বরে বললো,
—“মা,তুমি খালামনির কাছে যাও।আমি বরং তিহুকে বাসায় নিয়ে যাই।এত কাঁদলে অসুস্থ হয়ে যাবে।”
আফিয়া তোহার মাথায় হাত বুলিয়ে উঠে দাড়ায়।বলে,
—“তুই তিহানের সাথে বাসায় যা মা।যেয়ে রেস্ট নে।আমরা একটু পরেই ফিরছি।”
সিক্ত চোখে তাকায় তোহা।নাক টেনে বলে,
—“আমিও তোমাদের সাথেই যাবো।”
আফিয়া কিছু বলার আগেই তিহান তোহাকে টেনে নিজের পাশে দাড় করিয়ে বললো,
—“তুমি যাও মা।আমি নিয়ে যাচ্ছি ওকে।”

গাঢ় অন্ধকারে ঢাকা রাত।আকাশে চাঁদ নেই।অন্ধকারও অন্ধকারকে গ্রাস করছে।মাঝে মধ্য রাস্তার সোডিয়াম লাইটের আলোয় অন্ধকারটা মিইয়ে গেলেও গাড়ি এগিয়ে যেতেই তা আবারো আগের রুপের ফিরে আসছে।ছিমছাম পরিবেশ।শো শো করে শাব্দিক বেগে গাড়ি চলছে।জানালা দিয়ে মাথা বের করে রেখেছে তোহা।তার খোলা চুলগুলো এলোমেলোভাবে তিহানের মুখের উপর আছড়ে পরছে।তিহান একবারো সরায়নি চুলগুলো।
সে অবস্থাতেই ড্রাইভ করছে।
খানিকবাদে মাথা ভিতরে ঢুকায় তোহা।কান্না থেমেছে অনেকক্ষণ আগেই।গাড়ি ডানদিকে মোড় ঘুরে।এই রাস্তাটা হাল্কা আলোকিত।আশেপাশের বেশিরভাগ দোকানে খোলা।তাই অতটা অন্ধকার নেই।
হঠাৎই তোহার চোখ যায় গাড়ির সামনে জায়গাটায়।কিছু একটা ভেবে সে বলে,
—“কানের দুল দুটো কই?”
—“ফেলে দিয়েছি।”তিহানের শান্ত শীতল কন্ঠ।
—“কিহ্?কেনো?”
—“ওটাতো আর পরবিনা।আর পরতে চেলেও আমি পরতে দিবোনা।..রেখে কি লাভ?”
—“তাই বলে ফেলে দিবেন?”
তিহান এবার চিরচেনা গম্ভীর কন্ঠে বলে,
—“দিবো এক চড়।একদম বেশি কথা বলবিনা।”
ব্যাস!চুপ করে যায় তোহা।তিহানের প্রতি রাগ ঝাড়তে থাকে তার কোলের উপর রাখা তিহানের ব্লেজারটার উপর।
দুহাতে দুমড়েমুচরে আয়রন করা ব্লেজারটার যাচ্ছেতাই অবস্থা করে ফেলে সে।

এক রক্তিম শ্রাবণে পর্ব ৩+৪

বাড়ি ফিরে তাকে রুমে দিয়ে নিজেদের ফ্ল্যাটে চলে গিয়েছে তিহান।ক্লান্ত ভঙ্গিতে বিছানায় বেশ কিছুক্ষণ পরে থেকে তারপর উঠে দাড়ায় তোহা।লেহেঙ্গা বদলে শাওয়ার নিয়ে হাল্কা কাপড়ের থ্রিপিস পরে বের হয়।ভেজা চুলগুলো ঝেড়ে তোয়ালে মেলে দেয়ার জন্য বারান্দায় যেতেই লক্ষ্য করে পাশের বারান্দায় তিহান দাড়িয়ে রয়েছে।তার ঘরের লাইট জ্বালানো বিধায় সবকিছুই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।তিহানের কানে ফোন।উল্টোদিকে ফিরে ব্যস্ত ভঙ্গিতে কথা বলছে সে।তবে কিছুই স্পষ্ট শোনা যাচ্ছেনা।কেন জানি মনটা আবারো খারাপ হয়ে গেলো তোহার।তোয়ালেটা মেলে দিয়ে রুমে এসে বারান্দার দরজাটা সজোরে আটকে দিলো সে।
হঠাৎ শব্দে ঘাড় বাকিয়ে তাকায় তিহান।বিষয়টা বোধগম্য হতেই হাল্কা হেসে উঠে সে।

ঘরে এসে লেহেঙ্গাটা ঢোকানোর জন্য কাবার্ডের বড় অংশটা খোলে তোহা।তখনই তার চোখ আটকে যায় একপাশে রাখা বেশ বড়সড় একটা সাদা রংয়ের কাগজে মোড়ানো প্যাকেটের উপর।একপাশে গাদাগাদি করে লেহেঙ্গাটা ঢুকিয়ে সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্যাকেটটা বের করে সে।আয়েশি ভঙ্গিতে বিছানার ওপর বসে
মোড়ক খুলতেই একের পর এক বেরিয়ে আসে প্রায় ছাব্বিশ ডজন চুড়ি।
সেদিন যে সে চুড়ির দোকানে বিরবির করে বলেছিলো”সবইতো ভালোলাগছে।”।গুণে গুণে সেই সবগুলো চুড়িই এখানে আছে।
বিস্মিত নয়নে বিছানায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা চুড়িগুলোতে আরো একবার চোখ বুলাতেই এতক্ষনের ভারি বিষাদ হৃদপিন্ডটা অগাধ খুশিতে লাফিয়ে উঠে।মুখ প্রসস্ত হাসিতে চেহারা উজ্জ্বল হয়ে উঠে।হুট করেই তার মন ভালো হয়ে যায়।একেবারে হুট করেই…..

এক রক্তিম শ্রাবণে পর্ব ৭+৮