এলোকেশী কন্যা সিজন ২ গল্পের লিংক || নূরজাহান আক্তার

এলোকেশী কন্যা সিজন ২ পর্ব ১+২+৩
লেখনীতে:- নূরজাহান আক্তার (আলো)

_________ ফজরের আজান শুনে আলোর ঘুমটা ভেঙে যায়!ঘুম ঘুম ভাব নিয়েই চোখ টিপ টিপ করে খুলে।আর মন দিয়ে আজান টা শুনে!তারপর আলো আড়মোড়া ভেঙে বিছানা থেকে উঠে আর অযু টা সেরে নামাজে বসে!নামাজ শেষ করে কুরআন নিয়ে এসে জায়নামাজের উপর বসে আর সুরেলা কন্ঠে কোরআন তেলাওয়াত করে….

রাতের অন্ধকারকে বিদায় জানিয়ে আলো ফুটে কেবল সকাল হচ্ছে______
পূর্ব দিকে সূর্যটা কেবল লাল আভা ছাড়িয়ে উঁকি দিচ্ছে উঠার জন্য! আলো কোরআন পড়ে জায়নামাজ টা সুন্দর করে গুছিয়ে রাখে! তারপর রুম থেকে বের হয়! খালি পায়ে ওদের বাড়ির বড় উঠানে এসে দাড়ায়ে! খালি পা তার উপরে ঠান্ডা মাটি শরীরে শিরশির করে উঠে!আলো মুচকি হেসে দুই হাত বাড়িয়ে প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নেয়।চারদিকে নীরব একটা পরিবেশ শুধু পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ আর সকালে মন ভালো করার মত ফ্রেশ মৃদু বাতাস। আলো চোখ বন্ধ করেই প্রান ভরে নিঃশ্বাস নিচেছ আর মন দিয়ে পরিবেশটাকে উপভোগ করছে। আলো বেশ কিছুক্ষন চোখ বন্ধ করেই সকালটা উপভোগ করে! তারপর রোজকার দিনের মত আজকেও ওর কাজে লেগে পড়ে!!

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

______হুমম আপনাদের অনুমান ঠিক আলোই হচ্ছে আমার গল্পের এলোকেশী কন্যা!আলোর নামটাই শুধু আলো কিন্ত জীবনটা অদ্ভুত কিছু নিয়মের মাঝেই সে সীমাবদ্ধ!আলো একটা ছোট গ্রামের বাস করে আর গ্রামটির নাম আনন্দপুর গ্রাম!মা, আর দীদাকে নিয়েই তার পারিবার।আলো গ্রামের সহজ সরল একটা মেয়ে যার মাঝে এখনো আধুনিক যুগের কোন ছোঁয়াই লাগেনি!গ্রামের সাধারণ একটা স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করছে অনেক কষ্টে!আর কষ্টে বলার কারন সারাদিন বাসার সব কাজ করে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়াটা মোটেও সহজ কথা না।হুমম আলোকেই বাসার সব কাজ করতে হয়! আলো থাকে তার সৎ মায়ের সাথে! কারন আলোর নিজের মা ওই দুর আকাশে পাড়ি জমিয়েছে।আলোর মা মারা যাওয়ার ৯ মাস পর আলোর বাবাও মারা যায়।এজন্য আলো ওর সৎ মায়ের সাথেই থাকে!আলোদের কোনরকম চলার মত জমিজমা আছে!ওই জমিগুলোতে অন্য মানুষকে দিয়ে আবাদ করানো হয়! ওই আবাদ বিক্রি করে যা টাকা পাওয়া যায়!সেগুলো দিয়েই ওদের সংসার চলে।আলোর দীদা আলোকে খুব ভালবাসে আর কিন্তু আলোর ছোট মা আলোকে সহ্য করতে পারে না। সৎ শব্দটি সৎ হলেও সৎ মা আসলে কেমন হয় !এটা নিয়ে হয়তো আপনাদেরও কিছু ধারণা আছে!আর বাকিটা পরে বলবো..!!

______আলোর মাঝে একটি নজরকাড়া জিনিস আছে!আর সেটা একবার দেখাতেই যে কারো নজর কেড়ে নিতে পারে! আর সেটা হলো আলোর চুল।আলোর চুল গুলো অনেক লম্বা আর হাটুর নিচে পযর্ন্ত পড়ে!আর চুল গুলো যেমন ঘন আর তেমনি কুচকুচে কালো।আলোর দুধে আলতা গায়ের রং, বোচা একটা নাক,মায়াবী চোখ আর হাসলে দুই গালেই টোল পড়ে! আর আলোর একটা বাঁকা দাঁত আছে! যখন হাসে সেই বাঁকা দাঁতটি দেখা যায়।যত কষ্ট, আর যতই মন খারাপ থাকুক না কেন আলোর মুখে হাসিটা সবসময় থাকে!দুঃখ আর কষ্ট লুকানোর জন্য আলো ওর মুখের হাসিটাকে সব সময় অস্ত্র হিসেবে কাজে লাগায়!যাতে কেউ তার মনের কষ্টটাকে ধরতে না পারে।আর আল্লাহ যখন যাকে সৌন্দর্য দেয় তখন দুই হাত ভরেই দেয়! আল্লাহ আলোকেও সৌন্দর্য দিয়েছে দুই হাত ভরে!!!শুধু জীবনটাই দান করেছে অগোছালো ভাবে..!!

______আলোর সঙ্গী পারু আর পুটি(ছাগল ছানা)!পারু আর পুটি আলোর সব সময়ের সঙ্গী! যাদের কাছে আলো ওর মনের সব গল্প বলে!আরো একজন আছে আর সে হলো ধবলি (গরুর বাছুর)। ওদের সাথেই বকবক করতে করতে ওর দিন কাটে!পারু, পুটি আর ধবলির সাথে মনের সব কথা না বললে আলো মনে হয় শান্তিও পায় না..!!

সকাল বেলা আলো নামাজ আর কোরআন পড়ে উঠে! তারপর পুটি আর পারু কে গোয়ালঘর থেকে বের করে! ঘর উঠান ঝাড়ু দিয়ে রান্নার কাজে লেগে পড়ে!আলো রুটি আর আলুর ভাজি করার জন্য আগে আলু গুলো ভাজি করার জন্য কেটে নেয়! তারপর চুলায় উপরে কড়াই বসিয়ে তেল দেয়! তারপর পেঁয়াজ, চেরা কাচা মরিচ, হলুদ গুঁড়া, লবণ, দিয়ে আলু ভাজিগুলো কড়াইয়ে দিয়ে নাড়াচাড়া করে চাকনা দিয়ে ঢেকে দেয়! যাতে আলু গুলো তারাতারি সেদ্ধ হয়ে যায়!তারপর ময়দা মাখিয়ে রুটি বেলতে শুরু করে!আলো রুটি বেলতে বেলতে গুনগুন করে গান গাইতে থাকে!আলোর এখন আর খারাপ লাগে না বরং ভালোই লাগে কাজ গুলো করতে! তাই আলো মন দিয়েই ওর কাজ গুলো করে…!!

______ মেঘ মেহবুব আর রোদ মেহবুব দুই ভাই দাড়িয়ে আছে কানাডার এয়ারপোর্টে!রোদের এক আঙুল ধরে মেঘ ঘুরে ঘুরে চারপাশটা দেখছে!মেঘ এটা ওটা দেখছে আর রোদকে প্রশ্ন করছে! আর রোদ সেটার উওর দিচ্ছে!মেঘ একবার এয়ারপোর্টের নামটাতে চোখ বুলালো!এই এয়ারপোর্টের নাম winning James Armstrong Richardson International Airport…..এই এয়ারপোর্ট টা দেখতে স্বর্ণের তৈরী বিশাল ম্যানশনের মত! যেন উজ্জ্বল কোন সোনালী আভা ছড়াচ্ছে!অনেক সুন্দর এয়ারপোর্ট টি!
মেঘ সব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে..!!

_______রোদ মেহবুব আর মেঘ মেহবুব কানাডা এসেছে ওদের অফিসের কাজের জন্য! রোদ মাস্টার্স করছে আর মেঘ ক্লাস থ্রি তে পড়ে !রোদ দের অফিস দেখা শোনা করে রোদের বাবা।রোদের বাবার কানাডা আসার কথা ছিলো কিন্ত হঠাৎ উনি অসুস্থ হয়ে পড়ার কারনে রোদকে আসতে হয়েছে!আর রোদের আসার কথা শুনে মেঘ আসার জন্য জেদ ধরেছিলো।এজন্য রোদের বাবা দুই ভাইকে একসাথে কানাডা পাঠিয়েছিলো!কাজটাও হবে আর দুই ভাইয়ের একসাথে বেড়ানোও হবে এজন্য ।রোদ আর মেঘ চারদিন আগে কানাডা এসেছে! ওরা ওদের কাজ শেষ করে আজকে ওরা বাংলাদেশে ফিরে যাচ্ছে!!যেদিন ওরা কানাডাতে এসেছিলো সেদিন মেঘ ঘুমিয়েছিলো এজন্য সেদিন এয়ারপোর্ট টা দেখতে পায় নি! এজন্য আজকে মনোযোগ দিয়ে দেখছে..!!

মেঘআশে পাশে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবলো! তারপর রোদকে উদেশ্য করে বললো…
মেঘঃ দাভাই একটা কথা বলার ছিলো??
রোদঃ এই নিয়ে তুমি কয়টা কথা বললে!১ মিনিটের জন্য কি তুমি চুপ করছো??
মেঘঃ তাহলে আর একটা বলি?বলছি যে দাভাই একটা কাজ করলে কেমন হয়??
রোদঃ কি কাজ??
মেঘঃ এই জায়গাটা অনেক সুন্দর! আমার আর বাংলাদেশে ফিরতে ইচ্ছে করছে না।চলো তুমি আর আমি এখানেই বিয়ে করে সারাজীবনের জন্য থেকে যায়।
রোদঃএই এয়ারপোর্ট টা আমার কিংবা তোমার বাবা বানায় নি যে এখানে আমাদের থাকতে দিবে!!আর এটা কেউ শুনলে তোমার সাথে আমাকেও মেরে ভর্তা বানিয়ে দিবে।
মেঘঃদাভাই আমাদের বাবা বানাইনি মানলাম! কারো না কারো বাবা তো বানিয়েছে! যে বানিয়েছে সেই বাবাটাকে পটালেই তো!! (বিশ্বজয় করা হাসি দিয়ে)
রোদঃ আর কিছু বলার বাকি আছে তোমার??
মেঘঃহুমম আর একটা কথা বলার বাকি আছে??এটা শেষ কথা!
রোদঃ বলো!!
মেঘঃওইদিকে তাকিয়ে দেখো!উনারা হাতে ওইসব কি নিয়ে দাড়িয়ে আছে??(আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে)
রোদঃ ওদের হাতে যেটা আছে ওটাকে প্ল্যাকার্ড বলে!
মেঘঃ প্যাক কার্ড (মাথা চুলকিয়ে)
রোদঃওটাকে প্যাক কার্ড না ওটাকে বলে প্ল্যাকার্ড!!(দাঁতে দাঁত চেপে)
মেঘঃ থাক আমার আর এই শব্দটা বলার দরকার নাই!এটা বলতে গেলে আমার যদি সব দাঁত ঝুরঝুর করে পড়ে যায়! তখন আবার আরেক সর্বনাশ।
রোদঃ……

মেঘঃ আচ্ছা দাভাই এরা প্যাক কার্ড হাতে নিয়ে হাবলার মত নিয়ে দাড়িয়ে আছে কেন?? (পাশের কয়েক জনকে উদেশ্য করে)
রোদঃ উনাদের চেনা মানুষগুলো নাম লিখা আছে প্ল্যাকার্ডে। যারা এখন ফ্লাইটে আসলো তারা যাতে খুব সহজে ওনাদের চেনা মানুষ গুলোকে খুঁজে পায়!এজন্য এরা হাতে প্ল্যাকার্ড হাতে দাড়িয়ে আছে।এবার বুঝলে…
মেঘঃ ওহহ!! এবার বুঝেছি!!আসলে আসল কাহিনী হলো চোখ থাকতেও অন্ধর মত ব্যাপার স্যাপার!
রোদঃ মানে?? (ভ্রু কুচকে)
মেঘঃ চেনা মানুষ গুলোকে আবার চিনার জন্য প্যাক কার্ড নিতে হবে।আসল কথা কি জানো দাভাই এদের আসলে কাজ নাই এজন্য এমন করে দাড়িয়ে আছে।
রোদঃ তোকে কিছু বোঝানোই উচিত না!আসলেই তুই একটা গরু!!!
মেঘঃ দাভাই তুমি ভুল বললে!আমি এখনো গরু হয়নি আমি তো কেবল বাছুর।(দাঁত বের করে)
রোদঃ…..
মেঘঃ দাভাই আমি ঠিক কথা বলছি না!হুমম আমি জানি তো আমি সবসময় যা বলি ঠিকই বলি।

আলো সকালে খাবার সব রেডি করে ফেলে! তারপর সবাইকে খেতে দেয়।সকালের কাজ শেষ করে আলো পানি নিয়ে পারু আর পুটির কাছে যায়! ওদের পানি খাওয়ানোর জন্য। আলো পুটি আর পারুকে পানি খাইয়ে ওদের সাথে গল্প জুড়ে দেয়__!!
.
.
আলোঃএই পুটি তোরা পেট পুরে ঘাস খাইয়া ল!হ আমিও এহনই পেট পুইরা পান্তা ভাত কাঁচামরিচ দিয়া খাইয়া আসলাম!ছোট মা কইলো পান্তা ভাত গুলান খাইতে!শুধু শুধু খওন নষ্ট করা ভালা না! এজন্য ছোট মা কথা শুইনা আমি পান্তা খাইলাম আর ছোট মা রুটি খাইলো।হ দীদাও খাইছে! এখন তোরাও পেট পুরে খাইয়া ল! না হলে পরে আমারেও কইলেও কিন্ত আমি তোগোরে খওন দিতে পারুম না।(পুটিতে কোলে নিয়ে)

#এলোকেশী_কন্যা২
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_2

আলো পারু আর পুটির সাথে গল্প শেষ করে!তারপর আলো পারু আর পুটিকে মাঠে নিয়ে একটা গাছের নিচে বেঁধে দেয়! যাতে পারু আর পুটির গায়ে রোদ না লাগে।আলো পারু আর পুটির গায়ে হাত বুলিয়ে বাড়ি চলে যায়! তারপর ধবলির কাছে যায়!আলো ধবলি কাছে গিয়ে দেখে ধবলির হাম্বা হাম্বা করে ডাকছে!আলো দৌড়ে ধবলির কাছে যায় কারন ধবলিকে বেঁধে রাখা হয়েছে ওর মায়ের কাছে যেতে পারছে না।আলো ধবলির গায়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে তাও ধবলি থামছে না!পেট খুধা লাগলে কি আর হাত বুলালে খুধা কমে!ধবলির এভাবে ডাকা দেখে আলো কয়েকদফা গোয়ালাকে গালি দেওয়া শুরু করলো!কারণ এখন গোয়ালা না আসা পর্যন্ত ধবলিকে ছাড়া যাবে না!আর এখন ধবলিকে ছাড়লে ওর মায়ের কাছে গিয়ে সব দুধ খেয়ে নিবে!!
.
.
.
আলো ধবলির সাথে কথা বলতে বলতেই গোয়ালা ওর ভাঙা সাইকেল নিয়ে এসে হাজির হলো!তারপর ধবলির মায়ের কাছে গিয়ে দুধ দোয়ানো শুরু করলো!আলো মনে থেকে দোয়া করছে যাতে ধবলির মা গোয়ালাকে এক লাথি ছুঁড়ে! কারন এই উজবুক গোয়ালাটার জন্য ধবলিকে এতক্ষণ কষ্ট করতে হলো।আলোর মনে মনে বলা এই কথাটা যেন ধবলির মা সত্যি শুনতে পেল!এই কথা বলতেই ধবলির মা সত্যি সত্যি গোয়ালাকে দিলো এক লাথি!আর গোয়ালা ধপাং করে গোবরের উপরে বসে পড়লো!আলো ওড়না দিয়ে মুখটা ঢেকে মুখ টিপে হাসছে!গোয়ালা কল পাড়ে গিয়ে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে আবার এসে দুধ দোয়ানোর কাজে লেগে পড়ে।গোয়ালা দুধ দোয়ানো শেষ করে
আলোকে আধাকেজির মত দুধ দিয়ে বাকিটা নিয়ে চলে গেল!আলো দুধের পাতিলটা রান্না রেখে ধবলিকে ছেড়ে দিলো!আর ধবলি এক ছুটে গিয়ে ওর মায়ের দুধ খাওয়া শুরু করলো!

আলো দাড়িয়ে দাড়িয়ে ধবলির দুধ খাওয়া দেখছে!ধবলি প্রাণ ভরে দুধ খাচ্ছে আর ওর মুখে দুইপাশে ফেনা জমে যাচ্ছে!ধবলি দেখতে খুব সুন্দর! ধবলির পুরো শরীর সাদা পশম আর চোখ গুলো দেখে মনে হয় কেউ যত্ন করে কাজল দিয়ে দিয়েছে। আলো ওখান থেকে সরে এসে ওর ছোট মায়ের কাছে গেল!
আলোঃ ছোট মা আইজ দুপুরে কি তরকারী রান্না করতে হইবো??
পারুল বেগমঃ এইসবও কি আমাকে কইয়া দেওয়ন লাগবো নাকি?(খিটমিট করে তাকিয়ে)
আলোঃ সব্জি আর ডাইল রান্না করবো নাকি মাছ!
পারুল বেগমঃ জলিল মিয়ারে কইছি মাছ দেওনের লাইগা! আইজ মাছ দিয়া যাইবো একটু পর।বেগুন দিয়া আর মাছ ঝোল করবি আর করলা ভাজি করবি!আর রান্না যদি খারাপ হইছে! তাহলে আইজ তোর পিঠে চ্যালাকাঠ ভাংবো আগেই কইয়া দিলাম।
আলোঃ আচ্ছা!!

রোদ আর মেঘ কেবল বাসায় ঢুকলো!মেঘকে ঢুকতে দেখে রকি তো ঘেউ ঘেউ করে বাড়ি মাথায় তুলেছে!রোদ সবার সাথে কথা বলে ফ্রেশ হতে ওর রুমে চলে যায়!মেঘ তো গল্প জুড়ে দিয়ে ওখানে কি করছে,কি খেয়েছে,কি দেখেছে এইসব।মেঘ গল্প শেষ করে ওর রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রকিকে সাথে নিয়ে বাগানে চলে যায়!রোদ ফ্রেশ হয়ে শুধু একটা থ্রিকোয়াটার প্যান্ট পড়ে উপুড় হয়ে পড়ে শুয়ে পড়ে!কারন জার্নি করে আসার পর একটু ঘুমালে শরীরটা বেশ হালকা লাগে।রোদ একটা সময় ঘুমিয়ে পড়ে!!

বেশকিছু ক্ষন পর মেঘ রোদের রুমে উঁকি মারে!তারপর রুমের চারপাশে চোখ বুলিয়ে রোদের ফোনটা খুঁজে!মেঘ যখনই দেখলো রোদের ফোনটা চার্জে দেওয়া তখন মেঘের মুখে হাসি ফুটে!মেঘ গুটি গুটি পায়ে রোদের ফোনটা হাতে নিয়ে বেডের উপর উঠে!মেঘ রকির দিকে তাকিয়ে ইশারা করে বলে যাতে কোন শব্দ না করে!রকি মেঘের কথা বুঝতে পেরে রকিও মেঝেতে শুয়ে পড়ে!মেঘ রোদের পিঠের উপর শুয়ে ফোনের সাইন্ড কমিয়ে গেম খেলতে শুরু করে!মেঘও গেম খেলতে খেলতে ঘুমিয়ে যায়!!

রোদের ঘুম ভেঙে যায়!ঘুম ঘুম চোখ না খুলেই আগে পেছন দিকে হাত বাড়িয়ে মেঘকে ধরে! তারপর রোদ ঘুরে মেঘকে বেডের উপর শুইয়ে দেয়!এটা মেঘের পুরনো অভ্যাস! রোদকে ঘুমাতে দেখলেই মেঘ হয় রোদের বুকের উপর ঘুমাবে! আর না হয় পিঠের উপর ঘুমাবে। আগে যখন মেঘ রোদের পিঠের উপর ঘুমাতো আর রোদ ঘুমের ঘোরে পাশ ফিরে ঘুরতেই মেঘ ঠাস করে মেঝেতে পড়ে যেত!মেঝেতে পড়ে মেঘের মাথায় আব উঠে যেত! আর সাথে তো আছে মেঘের গলা ফাটানো চিৎকুর।এভাবেই দিন দিন রোদেও অভ্যাস হয়ে গেছে তাই ঘুমালেও চোখ না খুলেই আগে পেছন হাত দিয়ে আগে মেঘকে ধরে…!!

রোদ মেঘকে ভালো করে শুইয়ে দিয়ে ফ্রেশ হয়ে বাইরে যাওয়ার জন্য রেডি হয়!রোদের পছন্দের রং কালো!এজন্য রোদ কালো জিনিসই বেশি পড়ে!এখন রোদ কালো শার্ট, কালো জিন্স, হাতে কালো একটা ওয়াচ,চুল গুলো ঠিক করে বডি স্পে মেরে ড্রেসিং টেবিলে নিজেকে দেখে নেয়! তারপর রোদ মেঘের মাথায় হাত বুলিয়ে ওর ফোনটা নিয়ে নিচে যায়!রোদ নিচে গিয়ে হালকা কিছু খেয়ে বাইক নিয়ে বের হয়!!

রোদের সব বন্ধু গুলো একটা লেকের পাশে আড্ডা দিচ্ছে!রোদ পড়াশোনা করে তার পাশাপাশি মিউজিসিয়ানও।রোদের ইচ্ছে গান নিয়েই কিছু করার।রোদ অনেক জায়গায় প্রোগ্রামও করে!রোদের বন্ধুরা হলো আবির,আবৃতি,সিয়াম,আকাশ,রিদি,আশা,! আরো বন্ধু আছে বাট রোদের সব চেয়ে কাছের বন্ধু হলো এরা ছয়জন।রোদ বাইক পার্ক করে লোকের পাড়ে গিয়ে বসে পড়ে!!রিদি রোদকে বলে উঠে…
রিদিঃ কিরে হিরো!আবার এই কিলার লুকে বের হয়েছিস??
রোদঃ কেন তোর হিংসে হচ্ছে নাকি??(তেডি স্মাইল দিয়ে)
রিদিঃ তা তো একটু একটু হিংসে হচ্ছেই!
রোদঃ উফফ! আহারে (তেডি স্মাইল দিয়ে)
আবৃতিঃহা হা হা
সিয়ামঃ রিদি তোর জন্য আমারও খুব আপসোস হয় জানিস??
রিদিঃ কেন রে??
আকাশঃ আমারো খুব কষ্ট হয় তোর জন্য রিদি!খুব খারাপ লাগে!! (রিদিকে রাগানোর জন্য)
রিদিঃ আমার জন্য তোদের এত খারাপ লাগে কেন পুরো কথা টা তো বলবি??? (ভ্রু কুচকে)
সিয়ামঃ এই যে তুই, ১০ টা ভাষার ১০ বার রোদকে প্রপোজ করলি বাট ফলাফল শূন্য। হা হা হা
রিদিঃ তাই বলে তুই হাসবি কুওা!আজকে তোরে আমি!!!!!
রোদঃ এই তোরা থামবি!ঝগড়া করিস না তো!
আশাঃ রোদ একটা গান শোনা তো!তোর গান ছাড়া আড্ডা টা ঠিক জমছে না!
রিদিঃ হুমমম একটা গান শোনা!আর এমন একটা গান শোনাবি যাতে মনটা চাঙ্গা হয়ে যায়!!
সিয়ামঃ রিদি তোর মনটা এভাবে চাঙ্গা হবে না!তুই এক গ্লাস গোবরের জুস করে খেয়ে নে! দেখবি মনটা চাঙ্গা হয়ে যাবে!!
আশাঃ ওর পেছনে তোরা লাগিস না তো!এই রোদ শুরু কর না!!ফাগুনী পূর্ণিমা রাতে গান টা আমার খুব পছন্দ রোদ এটাই তুই গাইতে শুরু কর।
আকাশঃ এই আশা তোর পছন্দ এত খারাপ কেন??ইয়াক থু!
রোদঃ এই তোরা ঝগড়া করিস না!তোদের সবার পছন্দের গান গাইবো আজকে!এখন রিমিস্ক চলবে কেমন….(তেডি স্মাইল দিয়ে)

যেন ঢাক আছে আর কাঠি নাই
তোরে ছাড়া আমার হালটা যে তাই
ভাবুক যে যা খুশি সবাই
চল ফাগুনী পূর্ণিমা রাতে
চল পলায়ে যা!!!!
(বাকিটা নিজ দায়িত্বে শুনে নিবেন)

রোদ একটার পর একটা গান এড করে রিমিস্ক গাইতে শুরু করলো!রোদের গান শুনে ওখানেই একটা জটলা বেঁধে গেল!রোদও হাতে গিটার আর মুখে হাসি রেখে একটার পর একটা গাইতে থাকলো…!তারপর রোদ রা লোকের পাড়ে থেকে চলে গেল!সবাই রাস্তায় হাটছে আর গল্প করছে !তখন রোদ মনে মনে একটা কথায় ভাবছে…

রোদঃ বেশ কয়েকদিন ধরে আমি অদ্ভুত একটা স্বপ্ন দেখছি!নিজেকে কেন জানি শান্ত করতেই পারছি না।বার বার ওই স্বপ্নে দেখা খোলা চুলের ওই মেয়ে কে?আমাকে কেন ইশারায় বার বার ডাকছে?কেন বার বার তার নূপুরের শব্দ আমার মনটাকে উতলা করে দিচ্ছে। উফফ আমি আর ভাবতে পারছি না আমার মাথা হ্যাং হয়ে যাচ্ছে। আচ্ছা মেয়েটার মুখটা কেন আমি দেখতে পারি না? বার বার তার অগোছালো চুল গুলো উড়ে এসে মেয়েটার মুখটা ঢেকে দেয়!
কে এই #এলোকেশী_কন্যা যে ধরা দিয়েও দিচ্ছে না ধরা..!! (মনে মনে)

#এলোকেশী_কন্যা২
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_3

_____জলিল মিয়া আলোকে মাছ দিয়ে গেল!আলো মাছগুলোকে কেটে, ধুয়ে রান্না করলো।ছোট মা বাইরে গেছে আর দীদা গেছে পাশের বাসায় বেড়াতে।আলো ওর রান্না শেষ করে! তারপর রান্না ঘর ঝাড়ু দিয়ে রান্নাঘরের সবকিছু গুছিয়ে রাখলো!একটুপর ছোট মা বাসায় এসে গোসল সেরে বসে!আলো গুটি গুটি পায়ে ছোট মায়ের কাছে গেল তারপর ছোট মাকে উদ্দেশ্য করে বললো…!!
আলোঃ ছোট মা আমার শ্যাম্পু লাগবে! যদি টাকা দিতে তাহলে নিয়ে আসতাম (মাথা নিচু করে)
ছোট মাঃদুইদিন পর পর এত শ্যাম্পু করা লাগে ক্যান?জমিদারী কম করেন! আর আপনার মরা মা আইসা তো টাকা দিয়ে যাই না।যে যখন তখন যা ইচ্ছা চাইবেন আর পাইয়া যাবেন!!!
দীদাঃ আচ্ছা তুমি মাইয়ার লগে সব সময় এমন কইরা কথা কও কেন??তোমার মুখে কি তিল পরিমান রস কস নাই..!!
ছোট মাঃএত টুকু মাইয়ার এত বড় চুল রাখার কি দরকার বাপু আমি তো বুঝি না। আম্মা আপনি একদম আমারে ধমকাবেন না কইয়া দিলাম।
দীদাঃমাইয়া মানুষের চুলেই সৌন্দর্য! আর তোমার এত কথা কিসের শুনি!একদম বেশি কথা কইবা না আমার লগে..!! বেশি কথা কইলে ঘর থেইকা বাহির কইরা দিমু! ভুইলা যাইও না এই বাড়িটা আমার..!
ছোট মাঃআমি যা বলি তাতে তো আপনি চেইতা যান!
দীদাঃএই ছেরি এইহানে না দাড়াইয়া! যা এইহান থেইকা। আমার ঘরে শ্যাম্পু আছে লইয়া তারাতারি গোসল কইরা নে।

আলো দীদার রুম থেকে শ্যাম্পু নিয়ে কল পারে চলে যায় গোসল করতে!ছোট মায়ের এসব কথায় আলোর আর খারাপ লাগে না!আলো হাসি মুখেই সব মেনে নিয়েছে।আলো বালতিতে পানি তুলে দাদীকে ডাক দেয়! কারন আগে আলোর মা ওর চুলে শ্যাম্পু করে দিতো আর এখন দীদা করে দেয় কারন একা একা আলো চুল সামলাতে পারে না।তবে চুল সামলাতে না পারলেও আলোর কখনও ভাবে না চুল কেটে ফেলার কথা! কারন আলো দূবল পয়েন্ট ওর চুল!আলো খুব যত্ন করে ওর চুলের…!!

ওই দিকে রোদের আম্মু রোদকে ফোন করে বাসায় ডেকে নেয়!রোদ বাসায় আসে আর জিজ্ঞাসা করে এত জুরুরী ভাবে আসতে বলছে কেন?রোদের আম্মু বলে..
রোদের আম্মুঃ রোদ আমি আনন্দপুর যাবো!
তোমার খালামনির বাসায় যাবো!তোমার খালামনির নাকি অসুস্থ।
রোদঃ কখন যাবে আম্মু??
আম্মুঃ আমি এখুনি বেরিয়ে পড়বো!অনেক দুরের রাস্তা! আমার এখন আর মন বসবে না বাসায়। তুমি কি যাবে আমার সাথে নাকি বাসায় থাকবে??
রোদঃ আমি বাসায় থাকি তুমি মেঘকে নিয়ে যাও!আর আমি ড্রাইভার কাকাকে বলছি গাড়ি বের করতে।
আম্মুঃ আচ্ছা আমি এখুনি রেডি হয়ে আসছি।

রোদের আম্মু আর মেঘ চলে গেল।রোদের বাবা অফিসে এজন্য রোদ বাসায় থাকলো।রোদ সোফাতে হেলান দিয়ে বসে চোখ বন্ধ করতেই আবার সেই এলোকেশীকে দেখতে পেলো।রোদ হুড়মুড়িয়ে সোফা থেকে উঠে চুল মুঠো করে ওয়াশরুমে গিয়ে চোখে মুখে পানির ঝাপটা দিলো।তারপর গিটার হাতে নিয়ে বারান্দায় চলে গেল! আর গিটারে টুংটাং শব্দ করতে থাকলো! তারপর রোদ চোখ বন্ধ করে গানের কয়েক লাইন গেয়ে উঠলো…
!!_____মন ভাবে তারে এই মেঘলা দিনে…
শীতল কুয়াশাতে তার স্পর্শে
তার রুমঝুম নূপুরের সাজে..
বাতাসে যেনো মৃদু সুবাসে..
নিটোল পায়ে রিনিক ঝিনিক পায়েল খানি বাজে..
মাদল বাজে সেই সঙ্গেতে শ্যামা মেয়ে নাচে___!!

মেঘ আর ওর আম্মু তিন ঘন্টার রাস্তা অতিক্রম করে রোদের খালামনির বাসায় গেল!তারপর যথারীতি ফ্রেশ হয়ে রাতের খাওয়া দাওয়া সেরে নিলো।রোদের খালামনির কোন বাচ্চা নেই! এজন্য উনি আর উনার হাজবেন্ড থাকে শুধু এখানে।রোদের আম্মু বলেছিলো ঢাকাতে চলে যাওয়ার জন্য বাট রোদের খালামনি রাজি হয় নি।ওই দিকে মেঘ তো উশখুস করছে ওর সময় কাটছে না আর এখানে নেটও পাচ্ছে না।রাস্তায় আস্তে আস্তে গেম খেলে ফোনের চার্জও শেষ করে ফেলছে! এজন্য ফোনটাও এখন চার্জে দিসে।মেঘ একটা রুমে শুয়ে বিরবির করে বলছে__

মেঘঃ ঝামেলা আসলে সব দিক থেকেই আসে!ইসসস রে কি যে বিরক্ত লাগছে। মন চাচ্ছে উপর দিকে পা তুলে! মাথা নিচে করে শুয়ে থাকি।অশান্তি আর অশান্তি চারদিকে শুধু অশান্তিতে ছড়াছড়ি।ওহহ এবার বুঝেছি দাভাই কেন আসে নি! কিন্তু আমাকে ঠিকই পাঠিয়ে দিল।দাভাই আমারে আসতে দাও তোমার ওয়ালেট ফাঁকা না করতে পারলে আমার নামও মেঘ না। ধুব জীবনডাই প্যারা…!!
তারপর মেঘ বকবক করতে ঘুমিয়ে পড়ে!

______পরেরদিন সকালে…!!!
মেঘ ঘুম থেকে উঠে নাস্তা সেরে আশে পাশে ঘুরতে বের হলো!মেঘ হাটতে হাটতে যাচ্ছিলো ঠিক তখনই কোথা থেকে একদল এক হাঁস এসে মেঘকে দৌড়ানি দিলো!মেঘ মনে করছিলো এক পাশ দিয়ে চলে যাবে! বাট রাজ হাঁস ওকে তাড়া দিলো আর মেঘ প্রাণপণে দৌড় দিলো!আলো তখন পারু আর পুটির কে নিয়ে মাঠে যাচ্ছিলো!মেঘ দৌড়াতে দৌড়াতে এসে আলোর পায়ের কাছে হুমড়ি খেয়ে পড়লো।আলো তারাতারি মেঘকে মাটি থেকে উড়ালো।মেঘ মুখ তুলে একবার আলোর দিকে আবার তাকালো…!!

আলো মেঘের দিকে তাকিয়ে দেখে! এই বাচ্চা ছেলেটি ওর দিকেই তাকিয়ে আছে!আলো মেঘকে ভালো করে দেখলো বাচ্চাটি গাল দুটো গলুমলু অনেক কিউট!বাচ্চাটার ড্রেস দেখেই বোঝা যাচ্ছে ভালো পরিবারের ছেলে।বাচ্চা হলে কি হবে স্টাইলিশও আছে।হালকা নীল রংয়ের টি- শার্ট আর কালো জিন্স পড়ে আছে।আলো মুচকি হেসে মেঘের গায়ের ধুলো ঝেড়ে দিলো।তারপর আলো মেঘের সাথে কথা বলতে শুরু করলো!মেঘও খুব মিশুক তাই দুজনেই গল্প জুড়ে দিলো!মেঘের কথা শুনে তো আলো খিলখিল করে হাসছে!আর মেঘেরও কেন জানি আলোকে হাসাতে খুব ভালো লাগছে!মেঘ আলোর দিকে তাকিয়ে বললো…!!

মেঘঃ আচ্ছা তোমার নাম কি?? (আলোর দিকে তাকিয়ে)
আলোঃ আমার নাম আতকিয়া ইবনাত আলো!আমার মা আমাকে আলোমনি কইয়া ডাকে।তোমার যেইডা ইচ্ছা হয় সেইডা কইয়া ডাকতে পারো।আচ্ছা এবার তুমি কও তোমার নাম কি??
মেঘঃ আমার নাম মেঘ মেহবুব!আমাকে সবাই মেঘ বলেই ডাকে..!!
আলোঃ আমি তোরে মেঘ বাবু কইয়া ডাকমু..!!
মেঘঃ আচ্ছা! আমি তোমাকে বউমনি বলে ডাকবো।তোমাকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে।
আলোঃ ক্যান আমারে বউমনি কইয়া ডাকবা ক্যান??
মেঘঃ আমিও তোমাকে ভালবাসে বউমনি বলে
ডাকবো।আমি বউমনি বললে কি তুমি রাগ করবে??
আলোঃ না রাগ করুম না!তোমার যা ইচ্ছে হয় তাই বইলা ডাইকো।
মেঘঃ বউমনি তুমি দেখতে খুব সুন্দর!
আলোঃ হা হা হা তাই নাকি মেঘবাবু।তুমিও দেখতে একদম রাজপুত্রের মত(মেঘের গাল টেনে)
মেঘঃ আচ্ছা বউমনি তুমি এভাবে কথা বলো কেন??
আলোঃআমি শুদ্ধ ভাবেও কথা কইতে পারি কিন্তু যেহেতু গেরামে থাকি! এখন যদি আমি শুদ্ধ ভাবে এখানকার মানুষের লগে কয়! তাহলে অনেক ভাববে স্কুলে যাইয়া দুই লাইন শিইখা এখন মর্ডেল কইরা কথা কই!
মেঘঃকেন তারা তাই বলবে কেন???
আলোঃ কারন গ্রামের তো সবাই পড়াশোনা করে না!আর করলেও একটা কথা আছে অল্প বিদ্যা ভয়ংকরী এর মত ব্যাপার।সেসব তুমি বুঝবা না মেঘবাবু
মেঘঃ আচ্ছা! এখন যে ভাবে কথা বলছে এটা কি এই গ্রামের ভাষা??
আলোঃহুমম!প্রতিটা গ্রামের বা জেলার আঞ্চলিক ভাষা আছে!আর যেখানে যে ভাষা ব্যবহার করে কথা বলা দরকার সেখানে সেইভাবেই আমি কথা বলি।তুমি চাইলে আমি তোমার সাথে শুদ্ধ ভাবে কথা বলবো।
মেঘঃ না না তুমি এভাবে কথা বলো!আমার শুনতে ভালো লাগছে..!!
আলোঃ আচ্ছা (মেঘের গাল ধরে টেনে)

আলো আর মেঘের দুইজনের বন্ধুত্ব হয়ে যায়!আলো পারু আর পুটির সাথে মেঘের আলাপ করে।মেঘের খুব ভালো লাগছে আলোর সাথে থাকতে!আলো মেঘকে নিয়ে ওর বাসায় চলে যায়! কারন এখনই গোয়ালা আসবে দুধ দোয়ানোর জন্য! মেঘও আলোর সাথে আলোর বাসায় যায়!আলো মেঘকে একটা মোড়া দেয় বসার জন্য! মেঘও চুপটি করে বসে আশে পাশে তাকিয়ে দেখছে।আলো একটা বাটিতে মেঘকে তিলের নাড়ু আর ভাজা বাদাম দিলো।মেঘ বাটিটা হাতে ধরে বসে আছে..!!ঠিক তখনই গোয়ালা তার ভাঙা সাইকেলে বেল বাজাতে বাজাতে আসলো..!!

মেঘ বসে বসে গোয়ালার কাজের গতি বিধি ফলো করছে!গোয়ালা দুধ দোয়াতে শুরু করলো আর মেঘ তখন গুটি গুটি পায়ে হেটে গোয়ালার পাশে দাঁড়ালো! গোয়ালা তখন মেঘের দিকে তাকিয়ে বললো__!!
গোয়ালাঃ এই ছ্যারা কি দেখো?তোমারে তো দেখে মনে হইতাছে শহরে পোলা।তা এইহানে কি করো??
আলোঃ কাকা এইডা আমাগো পাশের বাসার রুপা চাচির বোনের পোলা।ওর নাম মেঘ বাবু..!!
গোয়ালাঃএর আগে দুধ দোয়ানো দেখছোনি??
মেঘঃ না দেখিনি!আচ্ছা আমিও এমন চ্যা চু চ্যা চু কইরা দুধ দোয়াবো।প্লিজ আংকেল আমাকেও একটা সুযোগ দেন।

গোয়ালাঃ পারবা তো!ব্যাটা মানুষের সব কাজে শেখা উচিত! আসো আমি তোমারে দেইখা দেই! কেমনে দুধ দোয়াই

মেঘ খুশি মনে গোয়ালার সামনে বসে বসলো!তারপর মেঘকে হাত ধরেই দেখালো কিভাবে দুধ দোয়াতে হয়!মেঘের হাত কাঁপছে তারপর একা একাই চেষ্টা করলো দুইবারের বেলাতে পারলো না কিন্তু তিনবারের বেলায় ঠিকই পারলো।মেঘের তো খুশি ধরে না!তারপর গোয়ালা মেঘকে সরিয়ে আবার নিজের কাজে লেগে পড়লো!মেঘ দাড়িয়ে দাড়িয়ে দুধ দোয়ানো দেখছে! ধবলির মায়ের গায়ে মশা বসেছিলো এজন্য ধবলির মা লেজ দিয়ে মশা তাড়াতে গিয়ে মেঘের গালে লেজ দিয়েই বারি দিলো।মেঘ সাথে সাথে ওর গালে হাত দিয়ে রাগি চোখে ধবলির মাকে উদ্দেশ্য করে বললো..!!

মেঘঃ বেত্তামিজ কাউ! আমার বাবা,মা আর দাভাই আমাকে কোনদিন মারে নি! আর তুই কি না তোর পটি মাখানো লেজ দিয়া আমি চড় মারলি।দাড়া আমি তোর নামে পুলিশের কাছে অভিযোগ দিবো..!!স্টুপিট কাউ তোকে আমি দেখে নিবো..!!

এলোকেশী কন্যা  সিজন ২ পর্ব ৪+৫+৬ 

( লেখাঃনূরজাহান আক্তার (আলো)) এই লেখিকার আরও লেখা গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন এই গল্পের সিজন ১ পড়তে চাইলেও এখানে ক্লিক করুন