এলোকেশী কন্যা সিজন ২ পর্ব ৪+৫+৬

এলোকেশী কন্যা সিজন ২ পর্ব ৪+৫+৬
লেখনীতে:- নূরজাহান আক্তার (আলো)

মেঘঃ বেত্তামিজ কাউ আমার বাবা,মা আর দাভাই আমাকে কোনদিন মারে নি! আর তুই কি না তোর পটি মাখানো লেজ দিয়া আমি চড় মারলি।দাড়া আমি তোর নামে পুলিশের কাছে অভিযোগ দিবো..!!স্টুপিট কাউ তোকে আমি দেখে নিবো..!!

মেঘের কথা শুনে আলো হাসতে হাসতে মাটিতে বসে গড়াগড়ি খাচ্ছে!মেঘ ধবলির মাকে আরো কিছু বকা দিলো!আলো এসে মেঘের গালে ঠান্ডা পানি দিয়ে দিলো!আলো রান্না ঘরে রান্না করছে আর মেঘ বসে বসে দেখছে!ওইদিকে মেঘের আম্মু মেঘকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। রোদের খালামনি আর রোদের আম্মু মেঘকে খুঁজতে খুঁজতে আলোর বাড়ি চলে এসেছে!রোদের আম্মু দেখে আলো আর মেঘ রান্না ঘরে বসে হাসছে!রোদের আম্মু আলোর দিকে তাকিয়ে দেখে….

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আলো রান্না ঘরে গরমে রান্না করছে!আর ফর্সা মুখটা লাল হয়ে আছে!নাকে থুতনীতে আর ঘাম জমে আছে! আর আগুনের তাপে গাল দুটো লাল হয়ে আছে তাতে আলোকে আরো সুন্দর দেখাচ্ছে !রোদের আম্মু আরো অবাক হয়েছে মেঘ আলোকে বউমনি বলে ডাকছে!কারন মেঘ আগেই সবাইকে বলছে রোদের বউকে মেঘ বউমনি বলে ডাকবে।রোদের আম্মু আলোর চুলের খোঁপার দেখেও কম অবাক হয়নি!আলো রোদের আম্মু সাথেও কথা বলে বসতে দেয় হালকা কিছু খেতে দেয় উনাদের।তারপর কিছু সময় গল্প করে রোদের আম্মু মেঘকে নিয়ে চলে যায়।তারপর আলো ওর রান্না শেষ করে গোসলটাও সেরে নেয়।

রোদের আম্মু কথার ছলে তার বোনকে আলোর কথা জিজ্ঞেস করে!রোদের আম্মুর রোদের জন্য আলোকে খুব পছন্দ হয়েছে কিন্তু রোদ যা ঘাড়ত্যাড়া। এই দিকে মেঘ রোদকে ফোন দিয়ে গল্প জুড়ে দিয়েছে!আজকে সকালের গরুর লেজের চড় খাওয়ার কথাও বলছে!কথার চলে মেঘ রোদকে বলে উঠলো..!!

মেঘঃ দাভাই আমি আমার বউমনিকে পেয়ে গেছি!খুব তারাতারি বাসায় নিয়ে যাবো।
রোদঃ কানাডা থেকে ঘুরে আসলি,ঢাকাতে কম মেয়ে দেখিস নি আর শেষে কি না অজপাড়া গায়ের মেয়েকে তোর বউমনি হিসেবে পছন্দ হলো।যাই হোক কবে ফিরবি তোরা??
মেঘঃ আমি বউমনিকে না নিয়ে যাচ্ছি না!আমি যখন বলেছি তখন বউমনিকে নিয়েই আমি যাবো…!!
রোদঃ মেঘ এবার কিন্তু বেশি হয়ে যাচ্ছে
মেঘঃ আমার বউমনিকে দেখলে তুমিও টাসকি খাবে দাভাই!তাই বলছি আমার বউমনিকে আগেই না দেখে এত কথা বলো না! পরে আবার আফসোস করবে।
রোদঃহুমম বুঝলাম! যাই হোক আম্মুকে ফোনটা দে

তারপর রোদ ওর আম্মুর সাথে কথা বললো!রোদের আম্মু রোদকেও কথার ছলে এখানে আসতে বললো।কারন এই ফাকে রোদ আলোকে দেখে পছন্দ করে ফেললে আলোকেই তাহলে রোদের বউ বানাবে!রোদ বললো পরশুদিন আবিরদের সাথে নিয়ে আর গ্রামে আসবে আর খালামণিকেও দেখা হবে।রোদের আম্মুও খুশি হলো…!!রোদের আম্মু আলোর খোঁজ খবর নিয়েছে আলো যথেষ্ট ভাল একটা মেয়ে! আর রোদের খালামনিও বলছে রোদের সাথে আলোকে খুব ভাল মানাবে…!!

পরেরদিন বিকালে _________
রোদ, আবির,আবৃতি,সিয়াম,আশা,রিদি আকাশ, এরা গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লো!ঢাকার এই যানজটের শহর ছেড়ে গ্রামে কয়েকদিন ঘুরলে সবার মনটাই ফ্রেশ হবে। সবাই আড্ডা দিতে দিতে আনন্দপুর গ্রামে পৌঁছালো!ওদের যেতে যেতে রাত হয়ে গেছে! রোদকে দেখে তো মেঘ এক লাফে রোদের কোলে উঠে পড়ছে!তারপর সবাই ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করে নিলো!রোদের বুকের উপর মেঘ শুয়ে আর ভাঙ্গা রেকর্ডের মত আলোকে নিয়ে গল্প বলেই যাচ্ছে থামার কোন নাম নাই!মেঘের কথা শুনে সিয়াম মজা করে বললো..!!

সিয়ামঃ মেঘ বস! রোদ রাজি না হলে কি হবে আমি রাজি আছি!তোমার মুখের তার গল্প শুনে আমি সেই রমণীর প্রেমে পড়ে গেছি!আম

সিয়াম এই শেষ না করতেই মেঘ সিয়ামের উপর হামলা করলো!মেঘ সিয়ামকে কামড়ে,চুল ধরে টেনে, কিল, ঘুসি, দিচ্ছে রোদ মেঘকে জোর করে থামালো।সিয়ামের অবস্থা দেখে আকাশ,আবির, রোদ হো হো করে হেসে দিলো।তারপর সবাই ঘুমিয়ে গেল!রাত ২ টার দিকে রোদ ঘুম ভেঙে গেল!রোদের এই এক সমস্যা কোথায় বেড়াতে গেলে ওর ঘুম হারিয়ে যায়!রোদ মেঘকে ওর বুকের উপর থেকে নামিয়ে পাশে শুইয়ে দিয়ে রোদ উঠে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো! গ্রামের বাড়ি এজন্য লম্বা করে বারান্দাটা রুমের পাশেই!রোদ বারান্দার গ্রিল ধরে আকাশে দিকে তাকায়। চাঁদের আলোয় বাড়ির উঠানটা আলোকিত হয়ে গেছে।রোদের আম্মু পানি খাওয়ার জন্য উঠেছে হঠাৎ বারান্দায় কাউকে দেখে রোদের আম্মু বারান্দায় আসে আর রোদকে দেখে!রোদের আম্মু এসে দেখে রোদ বারান্দায় দাড়িয়ে আছে…!!

রোদের আম্মুঃ রোদ!!
রোদঃ জি আম্মু!তুমি ঘুমাও নি (পেছনে ঘুরে)
রোদের আম্মুঃ পানি খেতে উঠেছিলাম।তুমি ঘুমাও নি কেন এখনো??
রোদঃ তুমি তো জানো আম্মু! জায়গা বদল হলে আমার ঘুম আসে না।
রোদের আম্মুঃ এসো আমার রুমে!আজকে আমরা মা ছেলে গল্প করি..!!
রোদঃ আম্মু রাত জাগলে তোমার শরীর খারাপ করবে তো!
রোদের আম্মুঃ কিছু হবে না!

রোদ ওর আম্মুর রুমে যায় ______!!
তারপর রোদ ওর আম্মু কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়ে!রোদের আম্মু রোদের মাথার চুল টেনে দেয়!রোদ আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেলে!আম্মুদের হাতে মনে হয় জাদু থাকে! মাথায় হাত রাখলে এত শান্তি লাগে যা বলে বোঝানো যাবে না!রোদের আম্মু রোদকে বলে…
রোদের আম্মুঃ আব্বু তোমাকে কিছু কথা বলি??
রোদঃ হুমম বলো!আমি শুনছি..!!
রোদের আম্মুঃআজকে একটা মেয়েকে দেখছি! আর মেয়েটাকে আমার খুব ভালো লাগছে।আমি চাই এই মেয়েটাকে তোমার বউ করতে! আমি তোমার উপর চাপিয়ে দিচ্ছি না আগে দেখো,জানো,বুঝো তারপর তুমি যা বলবে তাই হবে।
রোদঃ আম্মু আমি এখন বিয়ে করবো না!আগে নিজের পায়ে দাড়ায় তারপর বিয়ে করবো।
রোদের আম্মুঃ আমি তোমাকে আমার পছন্দের কথা জানালাম!জানো আববু ভাগ্য বলে একটা কথা আছে!যদি আমার পছন্দের মেয়েটার ভাগ্যতে তুমি থাকো তাহলে সেই তোমার বউ হবে।আমি ভাগ্য বিশ্বাসী তাই ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিলাম।
রোদঃ কি এমন দেখলে যে আমার সাথে বিয়ের কথা ও ভেবে নিলো??আচ্ছা মেঘ যাকে বউমনি বলছে তুমি কি তার কথায় বলছো??
রোদের আম্মুঃ হুমমম!আমিও তার কথায় বলছি।আর মেঘ ছোট হলেও মেঘ বেস্ট জিনিস টাই চুজ করে এটা তো জানো!মেঘের সাথেই আমি মেয়েটাকে দেখছি! মেয়েটার নাম আলো আর গ্রামের সহজ সরল একটা মেয়ে!ঢাকার মেয়ের মত মেকাব সুন্দরী না।এই মেয়েটিকে আল্লাহ সৌন্দর্য দান করেছে নিজে হাতে!মেয়েটিকে দেখলে যে কারো চোখ আটকে যাবে..!!জানো রোদ মেয়েটার চেহারাতে একটা পবিত্র আর সিগ্ধতায় ভরপুর!
রোদঃ রোদ মেহবুবের বউ সব দিকে দিয়ে পারফেক্ট হতে হবে আম্মু! আর আমি এখন এসব নিয়ে ভাবছি না প্লিজ এসব কথা আর বলো না।
রোদের আম্মুঃ আমি না হয় বাদ দিলাম!কিন্তু মেঘকে কি করে বোঝাবে? রোদ ভুলে যেও রা মেঘ তোমার মতই জেদি যখন যেটা বলবে নিবে তো নিয়েই ছাড়ে।
রোদঃ আমিও তাই ভাবছি আম্মু!মেঘ যার তার সাথে এত সহজে মিশে না।আর এই মেয়েটি কি এমন করছে যে মেঘ সরাসরি বউমনি বলে ডাকতে শুরু করছে!
রোদের আম্মুঃএজন্য তো বলছি!তুমি কালকে মেয়েটিকে দেখো!তারপর যা বলবে তাই হবে..!!
রোদঃ হুমম

তারপর রোদ ওর আম্মু কোলে মাথা রেখেই ঘুমিয়ে পড়ে!
পরেরদিন সকালে______!!
মেঘ সকালে রোদকে জোড় করে ঘুম থেকে তুলেছে!মেঘ রোদের হাত ধরে টানতে টানতে রাস্তায় বের হয়েছে হাঁটার জন্য!রোদের ঘুম পুরা হয় নি এজন্য সে একপ্রকার বিরক্ত। মেঘ রোদের হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে সাথে ওর তোতাপাখির মত মুখের বুলি! আলো সকালে বেলা নামাজ পড়ে তারপর সকালে খাবার রেডি করে পারু আর পুটিকে নিয়ে মাঠে যাচ্ছিলো।আলো পড়ে আছে একটা অরেন্জ কালার কামিজ আর কালো চুরিদার আর কালো ওড়না! আর চুল গুলো খোঁপা করা।
মেঘ আলোকে দেখেই বউমনি বলে চিৎকুর দিয়ে উঠলো!রোদ ভ্রু কুচকে সেইদিকেই তাকালো…..

#এলোকেশী_কন্যা২__
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_5
??

________মেঘ আলোকে দেখেই বউমনি বলে চিৎকুর দিয়ে উঠলো!রোদ ভ্রু কুচকে সেইদিকেই তাকালো…..!!
আলো মেঘের দিকে তাকালো আর দেখে
মেঘের সাথে একটা সুদর্শন ছেলে দাড়িয়ে আছে!আর ছেলেটাকে দেখেই আলো সাথে সাথে ওর মাথার ওড়নাটা বড় করে দিয়ে দেয়!কারন ছোট মায়ের কড়া আদেশ কোন ছেলের সাথে কথা না বলতে!মেঘ রোদের হাত ধরে টানতে টানতে আলোর সামনে নিয়ে গেল।রোদ বিরক্ত হয়ে মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে!মেঘ ফট করে বলে উঠলো___!!

মেঘঃ বউমনি এটা আমার দাভাই!কথা বলো
আলোঃ আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া…!!(রোদকে উদ্দেশ্য করে)
রোদঃ ওয়ালাইকুম সালাম..!!
মেঘঃ বউমনি তুমি কি দাভাইকে দেখে লজ্জা পাচ্ছো? (ভ্রু কুচকে)
আলোঃ না না মা আস আসলে
রোদঃমেঘ এবার চল আমরা বাসায় যায়।
মেঘঃ না না তুমি তো বউমনিকে দেখলেই না!বউমনি ওড়নাটা সরাও দাভাই তোমাকে দেখবে তো।আসলে দাভাই তোমাকে দেখার জন্য এখানে এসেছে।
রোদঃ….
(দিলো রে দিলো আমার ইজ্জতের ফালুদা করে দিলো!আমি কখন এই মেয়েকে দেখার জন্য আসলাম। মনে মনে)
আলোঃ আম আম আমি যায় মেঘ বাবু!

আলো মেঘের দিকে তাকিয়ে হাটতে শুরু করে আর সামনে একটা গর্ত থাকায় সেই গর্তে পা ঢুকে যায় আর ঠাস করে মাটিতে পড়ে যায়!আলো পড়ে যাওয়ার সাথে সাথে মাথার ওড়নাটাও সরে যায় আর চুলের খোপাও খুলে যায়!মেঘ দৌড়ে গিয়ে আলোকে টেনে তোলার জন্য আলোর হাত ধরে টানতে থাকে আর রোদ হাবলার মত হা করে আলোর চুলের দিকে তাকিয়ে আছে কারন চুল গুলো মাটিতে লুটোপুটি খাচ্ছে। বেচারা আলো লজ্জা আর ভয়ে কাঁদে দেওয়ার মত অবস্থা! আলোর পা মচকে গেছে এজন্য উঠতেও পারছে না!মেঘের টানাটানিতে কষ্ট করে উঠলো কিন্তু পা মচকে যাওয়ার জন্য একটা ধাপও ফেলতে পাচ্ছে না…!

রোদের চোখ আটকে গেছে অন্য কিছু তে!রোদ উজবুকের মত তাকিয়ে আছে আলোর ডান হাতের বাহুকে থাকা পর পর একসাথে থাকা সাতটা তিলের দিকে!ছোট হাতের জামার জন্যে তিল গুলো দেখা যাচ্ছে আর এই ফাঁকে রোদ তিল গুলো গুনেও নিয়েছে!রোদ অবাকের চরম শিখায় কারন এখন পর্যন্ত রোদ কোথাও শুনে নি বা দেখে কারো একসাথে পর পর সাতটা তিল হয়!আর ফর্সা হাত কালো তিল গুলো অসম্ভব সুন্দর দেখাচ্ছে।
আলো আড়চোখে একবার রোদের দিকে তাকায় আর মনে মনে বলে..!!

আলোঃ এই পোলা আমার দিকে এমন কুটুর কুটুর কইরা তাকায় আছে ক্যারে!সবাই ঠিকই কয় শহরের পোলাদের নজর ভালা না!ছেলেটা দেখতে সিনেমার হিরোই মতই বাট এত লুচু ক্যান!জীবনে কি মাইয়া মানুষ দেখেনি নাকি!(মনে মনে)

ওইদিকে মেঘের ঝাকুনি খেয়ে রোদের হুশ আসে!রোদ আলোর দিকে তাকিয়ে দেখে আলোর উঠতে পারছে না আর চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে।রোদ আলোর দিকে এগিয়ে যায় আর আলোর পায়ের কাছে হাটু গেড়ে বসে!আলো হতভম্ব হয়ে রোদের দিকে তাকায়! রোদ আলোর দিকে তাকিয়ে বলে..!!

রোদঃ সামান্য একটা বিষয় নিয়ে ছিচকাদুনীর মত কাঁদছেন কেন???
মেঘঃ দাভাই বউমনি ব্যাথা পেয়েছে তাই হাঁটতে পারছে না!দাভাই কিছু একটা করো।
রোদ আলোর বাম পা নিয়ে দেখে আলোর পায়ে রুপার চিকন একজোড়া নুপূর! ফর্সা পায়ের নূপুর গুলো দারুন মানিয়েছে!রোদ আলোর পা দেখে মুচকি হাসে আর মনে মনে ভাবে আলোর পা আর মুখের রং এক! তাহলে আসলেই আলো দেখতে অনেক সুন্দর!রোদের আরো একটা জিনিস চোখ এড়ালো না সেটা হলো আলোর বামপায়ের তিন নাম্বার আঙুলটা ছোট।

রোদ আলোকে জিজ্ঞাসা করে কোথায় ব্যাথা লাগছে!আলো দেখিয়ে দেওয়ার সাথে সাথে রোদ একটা মোচর দেয় আর আলো মা গো বলে রোদের গেন্জী খামচে ধরে।মেঘ মনে করছে রোদ আলোকে ব্যাথা দিয়েছে তাই মেঘ রোদকে কিল,ঘুসি মারতে থাকে…!!রোদ মেঘকে থামাতে পারছে না।

আলো হা করে মেঘের কান্ড দেখছে!আলো কি বলবে এখন বুঝতে পারছে না।আলো মেঘকে থামতে বললো আর এটাও বললো যে আলো আর পায়ে ব্যাথা করছে না! তখন মেঘ থামলো!আলো রোদের দিকে তাকিয়ে ধন্যবাদ দিয়ে বাসার দিকে হাটা ধরলো!আর মেঘ রোদের দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচি দিয়ে বাসার দিকে হাটা ধরলো!আর রোদ দুইজনের দিকে তাকিয়ে নিজেও বাসায় যাওয়ার জন্য হাটা ধরলো..!!

ওই দিকে মেঘ দৌড়ে বাসায় ডুকে নিজ দায়িত্বে চিৎকার করে বলছে! রোদ আলোকে দেখে নাকি হা করে তাকিয়ে ছিলো।এই কথা শুনে সবাই মুখ টিপে টিপে হাসছে আর রোদ রাগে গজগজ করছে!ওইদিকে রোদ যে আলোর পা ধরে আলোর পা ঠিক করছিলো এটা গ্রামের কয়েকজন দেখে গোটা পাড়া ছড়িয়ে দিয়েছে!রোদের আম্মু রোদের মাথায় হাত রেখে বললো…!!
রোদের আম্মুঃ আলোর সাথে তোমার দেখা হয়েছিলো আব্বু (মুচকি হেসে)
রোদঃ হুমমম
রোদের আম্মুঃ কেমন লাগলো??পছন্দ হয়েছে..!!
রোদঃ আম্মু তুমি মেঘের কথা কান দিও না তো!ও কি বলে না বলে! এসব টপিক বাদ দাও
রোদের আম্মুঃ কি হলো বললে না তো আলোকে তোমার পছন্দ হয়েছে আব্বু (মুচকি হেসে)
রোদঃ আসলে আ আম্মু
রোদের আম্মুঃ আমি কি ওদের বাসায় বিয়ের কথা বলবো??
রোদঃউনাকে আমার ভালো লাগছে তার মানে এই না যে বিয়ে করতে হবে!আম্মু আমার কালকে হাতিরঝিল একটা প্রোগ্রাম আছে! আমাকে আজকেই যেতে হবে।
রোদের আম্মুঃ ওকে!
তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও!আমি এখুনি আসছি..??
রোদঃ কোথায় যাচ্ছো আম্মু? আম্মু আমি এখুনি বাসায় যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়বো।তোমরা আস্তে ধীরে এসো… আমার কিছু কাজ আছে।
রোদের আম্মুঃ ওকে!তাহলে তুমি নাস্তা সেরে বেরিয়ে পড়ো।আমি এখনই একটা কাজ সেরে আসছি..!!

রোদের আম্মু আর খালামনি দুইজন মিলে আলোর বাড়ি গেল!ছোট মা তখন আলোকে খুব মারছিলো আর গালি দিচ্ছিলো।রোদের আম্মু ওখানে গিয়ে শুনে রোদ নাকি মাঝ রাস্তায় আলোর পা ধরেছিলো।আর কে যেন এটা দেখেছে! তারপর আলোর বাড়ি এসে আলোর ছোটমাকে বলে দিয়েছে।তারপরেও আলোর ছোট মা এসে আলোকে মারতে শুরু করছে।

আলোর কান্না দেখে রোদের আম্মুর বুক কেঁপে ওঠে!আর রোদের আম্মু এটাও ভালো করে জানে কোন কারন ছাড়া হুট করে রোদ কিছু করে না!রোদের আম্মুকে দেখে আলোর ছোট মা আরো চেচাঁমেচি করতে থাকে…!!রোদের আম্মু আলোর ছোট মাকে বলে..

রোদের আম্মুঃ শুধু শুধু মেয়েটার গায়ে তুলবেন না!কি এমন করছে মেয়েটা যে আপনি ওকে এভাবে মারছেন।আপনি আসলেই খুব পাষাণ একটা মহিলা!আমার ছেলের জন্য মেয়েটাকে এভাবে মারছেন! ওকে আমি আলোকেই আমার ছেলের বউ করতে চাই! আমি আমার সাথে আলোকে নিয়ে যেতে চাই।আপনার মত মহিলার কাছে এই মেয়েটা আসলেই সেইভ না….(রেগে চিৎকার করে)

#এলোকেশী_কন্যা২__
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_6

রোদের আম্মুঃ শুধু শুধু মেয়েটার গায়ে তুলবেন না!কি এমন করছে মেয়েটা যে আপনি ওকে এভাবে মারছেন।আপনি আসলেই খুব পাষাণ একটা মহিলা!
আমি আলোকে আমার ছেলের বউ করতে চাই এখনই!আপনার মত মহিলার কাছে এই মেয়েটা সত্যিই সেইভ না….(রেগে চিৎকার করে)

রোদের আম্মু রেগে যায় খুব!রোদের আম্মু আলোর দীদার কাছে যায়।আলোর দীদা তখন কাঁদছিলো।রোদের আম্মু আলোর দীদাকে কাছে গিয়ে বললো…
রোদের আম্মুঃ চাচি আমি আলোকে আমার ছেলের বউ করতে চাই।যদি আপনি অনুমতি দেন তো…
দীদাঃ….
রোদের খালাঃ চাচি আমার বোনের বড় ছেলে নাম রোদ!অনেক ভালো ছেলে! আলো অনেক ভালো থাকবে। আপনি আর অমত করবেন না!
রোদের আম্মুঃ এই যে এটা আমার ছেলে রোদ(ফোনে রোদের ছবি দেখিয়ে)
দীদাঃ মা আমি সবই বুঝবার পারলাম! কিন্তু শহরের পোলা আলোকে ক্যান বিয়া করবে কও।এই পোলারও তো মত থাকতে হইবো তাই না।
রোদের আম্মুঃ চাচি আমার ছেলেকে আমি যা বলবো তাই করবে!আমি আজকেই ঢাকা ফিরছি! আর আমার সাথে আমি আলোকে নিয়ে যেতে চাই।আর চাইলে আপনিও আমার সাথে যেতে পারেন..
দীদাঃআমি যামু না!তোমরা এই অভাগীকে একটু ভালো রাইখো তাহলেই হবে।ছেরি ডা ভালবাসা পাই নি কারো কাছে (কাঁদতে কাঁদতে)
রোদের আম্মুঃ আমি আলোকে আমার সাথে নিয়ে যাবো তারপর ওকে রোদের মনের মত গড়ে তুলবো।ততদিন আলো আমার কাছে থাকবে।
রোদের খালামনিঃ চাচি আমার উপর ভরসা করে আলোকে যেতে দেন!আমি কথা দিচ্ছি আলো ওখানে ভালো থাকবে।

রোদের আম্মু আলোর দীদাকে রাজি করায়! তারপর রোদের আম্মুরা বাসায় এসে দেখে রোদরা চলে গেছে।রোদের আম্মু সবকিছু গোছগাছ করে তারপর আলোকেও গোছগাছ করে নিতে বলে!মেঘ কিছু বুঝতে পারছে না শুধু ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে আলোর দিকে।রোদের আম্মু মেঘকে রেডি করিয়ে দেয় তারপর আলোর বাসায় যায়।আলো কিছুতেই যাবে না বলে জেদ ধরছে!আলোর দীদা আলোকের উনার কসম দেয়! আলো দীদাকে জড়িয়ে ধরে কাদলো তারপর পুটি, পারু, ধবলির কাছে গিয়ে ওদরর জড়িয়ে ধরে আরো জোরে হাউমাউ করে কেঁদে দিলো!ওদের গায়ে হাত বুলিয়ে দিলো! আলো ছোট মায়ের কাছে গিয়ে বিদায় নিতে গেলো বাট ছোট মা হনহন করতে করতে বাড়ি থেকেই বেরিয়ে গেল।

আলোর দীদার থেকে বিদায় নিয়ে চললো একটা নতুন পরিবেশে।রোদের আম্মু গাড়িতে আলো পাশেই বসে আছে আর আলো রোদের আম্মুর কোলে মাথা দিয়ে কাঁদছে! আর মেঘ ড্রাইভাররের পাশে বসে রোদকে মেসেজ করছে…!!
মেঘঃ দাভাই তুমি চলে গেছো তাই বউমনি হাউমাউ করে কাঁদছে! এজন্য আমাদের সাথে আমরা বউমনিকেও সাথে নিয়ে বাসায় আসছি।

রোদ মেঘের মেসেজটা দেখলো!বাট মেঘ মজা করছে ভেবে কিছু বললো না। রোদের আম্মু আলোকে বার বার নিষেধ করছে যাতে না কাঁদে তারপরেও আলো কেঁদেই যাচ্ছে। রোদের আম্মু ঠাস করে আলোর গালে একটা থাপ্পড় মারে।

রোদের আম্মুঃ বার বার মানা করছি না কাঁদতে! রোদ, মেঘের মত তুই আমার সন্তান হয়ে থাকবি।আমার শখ ছিলো একটা আমার মেয়ে হবে কিন্তু আল্লাহ আমাকে মেয়ে না দিয়ে দিয়েছে দুইটা ফাজিলের ডিব্বা। তুই আমার মেয়ে হয়েই আমার বাসায় থাকবি একদম কাদবি না।আর কার জন্যই বা কাদবি তুই….!!

রোদের আম্মুর কথা শুনে আলো উনাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকলো!এই রকম ভালবাসার মিশ্রন শাষন করার যে ওর কেউ নেই।আলো কাঁদছে আর মেঘ ড্রাইভারের পাশের সিটে দাড়িয়ে সিট টাকে জড়িয়ে ধরে আলোদের দিকে কুটুরকুটুর চোখে তাকিয়ে আছে!আলো কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ে…!!

রোদ বাসায় আসেনি!রোদের আম্মু বাসায় পৌছে আলোকে ডাকে!আলো হুড়মুড়িয়ে চারদিকে তাকিয়ে দেখে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। রোদের আম্মু আলোকে গাড়ি থেকে নামতে বলে!আলো গাড়ি থেকে নেমে চারপাশে তাকিয়ে দেখে অনেক সুন্দর একটা বাড়ি পাশে অনেক বড় একটা বাগান করা! বাগানের মাঝখানে বড় বড় তিনটা মাছ বানানো! আর মাছের মুখে ঝর্না মত পানি পড়ছে আর বিভিন্ন কালার লাইট জ্বলছে!রোদের আম্মু আলোকে নিয়ে ভেতরে যায়! আলো ভেতরে গিয়ে দেখে বাইরে থেকে বাড়িটা যতটা সুন্দর তার থেকে ভেতরে বেশি সুন্দর!মেঝেতে কার্পেট বিছানো,বড় বড় শোপিচ,আসবাবপত্র, আলো ঘুরে দেখছে।তখন রোদের আম্মু আলোকে বলে…

আম্মুঃ পরে পুরো বাড়িটা দেখিস!এখন ফ্রেশ হয়ে আয়।তারপর কিছু খেয়ে রেস্ট করবি..!!
মেঘঃ হুমম চলো বউমনি
আম্মুঃ মেঘ তোমার পাশের রুমে আলোকে নিয়ে যাও!আর ওকে সব দেখিয়ে দাও কোথায় কি আছে??
মেঘঃ আচ্ছা আম্মু

মেঘের পেছন পেছন আলোও গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে গেল!রুমটা সুন্দর করে গোছগাছ করা।মেঘ আলোকে ওয়াশরুমে নিয়ে গেল তারপর কোন টা কি ভালো করে বুঝিয়ে দিল!কোথায় কি রাখা আছে দেখিয়ে দিলো।মেঘ আলোকে ফ্রেশ হয়ে নিতে বলে তারপর মেঘ ওর রুমে চলে যায়।আলো একটা কামিজ হাতে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায় একবারে গোসল সেরে নেয়!আলোর চোখের পানি আর গোসলের পানি মিলে মিশে একাকার!আলোর বুকে চিরে কান্না আসছে….!!

এলোকেশী কন্যা  সিজন ২ পর্ব ১+২+৩

আলো গোসল সেরে মাথায় টাওয়াল পেচিয়ে রুমে আসে!মেঘ তখন আলোর হাত ধরে টানতে টানতে ড্রয়িং রুমে নিয়ে যায় আর রোদের বাবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।রোদের বাবা রোদের আম্মুর কোন কাজে বাঁধা দেয় না কারন রোদের বাবা জানে রোদের আম্মু যা করে ভেবে চিন্তে করে।রোদের আব্বু আলোর সাথে হেসে হেসে কথা বলে!

রাত ১২ঃ৩০ টার দিকে রোদ বাসায় ফিরে!সবাই যে যার রুমে ঘুমাচ্ছেন রোদ ওর কাছে থাকা চাবিটা নিয়ে দরজা খুলে ওর রুমে যাচ্ছিলো হঠাৎ করে আবছা আলোকে দেখে বড় চুল ওয়ালা একটা মেয়ে গুটিগুটি পায়ে সিড়ি বেয়ে উপরে চলে যাচ্ছে! রোদ যে ভয় পায়নি তা কিন্তু না! রোদ কয়েকটা পিছিয়ে বুকে থুথু দিয়ে চোখ বন্ধ করে কয়েকবার মাথা ঝাঁকিয়ে আবার চোখ খুলে দেখে যে না এখানে কেউ নেই!রোদ ডায়নিং টেবিলে গিয়ে আলোর পানি খেয়ে রেখে যাওয়া গ্লাসেই পানি খায়….!!
তারপর রোদ ওর রুমে চলে যায়।

এলোকেশী কন্যা  সিজন ২ পর্ব ৭+৮+৯