এলোকেশী কন্যা সিজন ২ পর্ব ৭+৮+৯

এলোকেশী কন্যা সিজন ২ পর্ব ৭+৮+৯
লেখনীতে:- নূরজাহান আক্তার (আলো)

______রোদ যে ভয় পায়নি তা কিন্তু না রোদ কয়েক পা পিছিয়ে বুকে থুথু দিয়ে চোখ বন্ধ করে!তারপর কয়েকবার মাথা ঝাঁকিয়ে আবার চোখ খুলে দেখে যে না এখানে কেউ নেই!তারপর রোদ ওর রুমে চলে যায়!

রোদ ওর রুমে গিয়ে শার্ট খুলছে আর মনে মনে বলছে_____
রোদঃ তখন ওই মেয়েটার এত বড় চুল দেখে আমিও এখন ভুলভাল দেখা শুরু করছি মে বি!আচ্ছা ওই মেয়েটা এত বড় চুল সামলায় কিভাবে?যাইহোক মেয়েটা হাতের তিল গুলো খুব মোহনীয়! আচ্ছা মেয়েটার নামটা যেন কি উমমম হুমম মনে পড়ছে মেয়েটির নাম আলো!আচ্ছা আলো এত বড় চুল মাথায় নিয়ে হাটে কিভাবে?থাক ওই মেয়েটাকে নিয়ে এখন আমার না ভাবলেও চলবে!সে আলো হোক আর কালো হোক আমার মাথা না ঘামানোটাই বেটার…!!এখন আমার আবেগ প্রবণ হওয়া যাবে না…!!

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ওইদিকে আলোর ঘুম পাচ্ছে না!সন্ধ্যায় গোসল করার কারনে চুলও শুকাচ্ছে না।আর নতুন একটা রুমে ঘুম না আসাটাই স্বাভাবিক!আলোর গলা শুকিয়ে গিয়েছিলো কাঁদতে কাঁদতে তাই নিচে পানি খেতে গিয়েছিলো!আলো ওর রুমে এসে বারান্দায় রাখা ইজি চেয়ারে বসে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকে আর বলে!
আলোঃ আচ্ছা চাঁদ মামা তুমিও কি আমার মত একা?তোমারও কি কেউ নেই?? আজকে আমি এখানে আসলাম তুমি আমার সঙ্গী হবে।
আলো ওখানেই বসে একা একা কথা বলতে বলতে আলো একটা সময় ঘুমিয়ে যায়।

পরেরদিন সকালে _____!!!
আলো খুব সকালেই ঘুম থেকে উঠে! তারপর নিচে গিয়ে দেখে রোদের আম্মু উঠেছে!আলোর রোদের আম্মুর থেকে জায়নামাজ আর কুরআন নিয়ে আসে।রোদের আম্মু খুশি হয়! আলো ওর রুমে এসে অযু করে নামাজ পড়ে তারপর কুরআন পড়ে।আলোর পাশের রুমটা হচ্ছে মেঘের রুম!আলোর কুরআন পড়া শুনে মেঘ ঘুমে ঢুলুঢুলু চোখ নিয়ে আলোর রুমে আসে!মেঘ এসে আলোর পাশে বসে আলোর কুরআন পড়া দেখে! রোদের আম্মু নিচ তলায় থাকে এজন্য দোতলা থেকে মেঘ ওর আম্মু কুরআন পড়া শুনতে পাই না! আলো কুরআন পড়া শেষ করে পাশ ফিরতেই দেখে মেঘ বসে বসে ঘুমাচ্ছে….!!

আলো মুচকি হেসে মেঘের পাশে বসে!আলো বসতেই মেঘ আলোর কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়ে।আলোর মেঘকে টেনে বিছানায় নিয়ে যায়!মেঘের ঘুম চলে গেছে আর আলো মেঘের হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। মেঘ আলোর দিকে তাকিয়ে বলে…
মেঘঃ বউমনি তোমার শরীর মা মা গন্ধ আছে!
আলোঃ তাই বুঝি
মেঘঃ হুমম! বউমনি তুমি আমাকে সব সময় ভালবাসবে তো।আমি কিন্তু তোমাকে এতগুলা ভালবাসি..!!
আলোঃ মেঘ বাবু আমিও তোমাকে অনেক ভালবাসি!আর ভালবাসি কেন জানো?
মেঘঃ কেন বউমনি??
আলোঃ আমার অনেক ইচ্ছা ছিলো আমার একটা ছোট ভাই বা বোন থাকবে!আর আমি তাদের অনেক ভালবাসবো।কিন্তু আল্লাহ এতদিন আমাকে সেই সুখ দেয় নি! কিন্তু এখন আমি তোমাকে পেয়েছি মেঘবাবু!তাই তোমাকে অনেক অনেক ভালবাসবো
মেঘঃ বউমনি দাভাইকে বেশি ভালবাসবে নাকি আমাকে বেশি ভালবাসবে।

আলোঃ তোমার দাভাই আসলো কোথা থেকে!আর উনাকে ভালবাসতে যাবো কেন দুঃখে মেঘবাবু।(মেঘের গাল টেনে)
মেঘঃ জানো বউমনি আমার দাভাই আমাকে শুধু বকা খাওয়াই!কিছুদিন আগে ছাদ থেকে আমি হিসি করছিলাম তখন দারোয়ানের মাথায় পড়ছে!দাভাই তখন আম্মুকে বলে দিসে! আর আম্মু আমাকে চটাস চটাস করে আদর দিসে!আহহ কি যে মিষ্টি আদর গুলো খেতে! পিঠটা এত জ্বালা করছিলো যে মনে হচ্ছিল আমার পিঠেই ঠাডা পড়ছে…
মেঘের কথা শুনে আলো হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে!কথা বলতে বলতে আলো মেঘকে ওর রুমে নিয়ে যায় আর তারপর ফ্রেশ করিয়ে দেয়।তারপর দুইজন নিচে চলে যায়!রোদের আম্মু আর আলো মিলে পরোটা আর গরুর মাংস রান্না করে।রোদের আব্বু এসে মেঘকে বলে পড়তে বসতে…
রোদের আব্বুঃ মেঘ যাও পড়তে বসো!সকালের পড়াটা অনেক উপকারী…
মেঘঃ না এখন পড়তে বসবো না!
রোদের আম্মুঃ কেন??
মেঘঃ আমি চলে গেলে যদি বউমনি ভয় পাই তাই।
রোদের আববু+আম্মুঃ হা হা হা

মেঘের আর কি করা রোদকে এক বস্তা গালি দিয়ে উপরে চলে গেল!রোদকে গালি দেওয়া কারন রোদ অনেক ট্যালেন্ট ছাএ আর মেঘ পড়াশোনাতে পুরাই ভজার বাপ।রোদ ভাল ছাএ এজন্য মেঘকে সবাই বলে ভাল করে পড়ার জন্য। মেঘ রোদের রুমে গিয়ে একটা চকলেট বোম (পটকা) ফাটালো! আর রোদ বুকে হাত দিয়ে হুড়মুড়িয়ে বেডের উপরেই উঠে দাড়িয়ে গেল।রোদ ঘুমে বিভোর ছিলো হঠাৎ ওর রুমে এত শব্দ হওয়ার কারনে ভয় পেয়েছে!রোদের তাকানো দেখে মেঘ ভো-দৌড়! মেঘের দৌড়ানো দেখে রোদও দৌড় কারন রোদ ক্ষেপে গেছে…..

মেঘঃ দাভাই আমি কিছু করি নি!এমনি এমনি শব্দ হলো।এবারে মত আমাকে মাফ করে দাও (দৌড়াতে দৌড়াতে)
রোদঃ তুই দাড়া আজকে তোরে আমি কি করি দেখ!দাড়া একদম দৌড় দিবি তুই (দৌড়াতে দৌড়াতে)
মেঘঃ ওহ আববু,ওহহ আম্মু, ওহহ বউমনি আমাকে বাঁচাওও! দাভাই আমাকে মেরে ফেললো….. (চিৎকুর করে)

মেঘ গিয়ে ওর আব্বুর পেছনে লুকায়!রোদের আব্বু রোদকে কোন রকম থামায় আর জিজ্ঞাসা করে কি হয়েছে?রোদ রাগে ফোঁস ফোঁস করতে করতে বলে…
রোদঃ কালকে মাথা ব্যাথার জন্য আমি সারারাত ঘুমাতে পারি নি! ভোরের দিকে কেবল ঘুমটা এসেছিলো আর তোমার ছোট ছেলে এখন আমার রুমে গিয়ে চকলেট বোম ফাটিয়ে এসেছে। (রাগে চিৎকার করে)
মেঘঃ ইয়ে মানে আমি ইচ্ছে করে করিনি!এমনি এমনি ফোটে গেছে আমার কি দোষ।
রোদের আব্বুঃ মেঘ তোমাকে আমি পড়তে বসতে বলছি আর তুমি রোদের রুমে গিয়ে এসব করছো কেন??
মেঘঃ আমি ভেবেছিলাম এখন পড়তে না বসে সন্ধ্যায় একেবারে 5th গিয়ারে সব একসাথে পড়ে নিবো।এজন্য পড়তে না বসে দাভাইয়ের রুমে গিয়েছিলাম।আর আমি চকলেট বোম ফাটিয়ে পরীক্ষার করছিলাম দাভাই সত্যি সত্যি ঘুমাচ্ছিলো কি না???(মাথা নিচু করে)

রোদ রাগে ফোঁস ফোঁস করতে করতে সোফায় বসে পড়লো!মেঘও শান্ত বিড়াল ছানার মত সোফায় বসে নক কামড়াতে শুরু করলো।

#এলোকেশী_কন্যা২__
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_8

______রোদ রাগে ফোঁস ফোঁস করতে করতে সোফায় বসে পড়লো!মেঘও শান্ত বিড়াল ছানার মত সোফায় বসে নক কামড়াতে শুরু করলো।

আলো রান্নাঘর রোদের দিকে তাকিয়ে আছে!রোদের রাগ দেখে আলোর কাঁপাকাপি শুরু হয়ে গেছি।রোদের চিৎকারে বাড়িটাও মনে হচ্ছে কাঁপছে। আর আলো অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখছে! তাকিয়ে থাকার আরেকটা কারন রোদ হাঁটুর সমান কালো থ্রি কোয়াটার একটা প্যান্ট আর সাদা সেন্ডো গেঞ্জী পড়ে আছে!আর এখন যদিও এটা ছেলেদের কমন একটা ড্রেস।আলো তো গ্রামের মেয়ে এটা তো আর ও জানে না।আর রোদও জানে না আলো এখন সত্যি সত্যি ওদের বাসায় আছে আর ওর দিকেই আলো এখন হা করে আছে।রোদ রাগী চোখে মেঘের দিকে তাকিয়ে হন হন করতে করতে ওর রুমে চলে গেল।আর আলো মনে মনে ভাবছে…
আলোঃ ছিঃ! ছিঃ! এই পোলার তো দেখি এক্কেবারেই লাজ লজ্জা কিছু না!এসব কি পড়ে আছে বাসায়। মেঘ না হয় ছোট থ্রী কোয়াটার পড়ছে কিন্তু তাই বলে মেঘের দেখাদেখি এই দামড়া পোলাও এসব পড়বে।না ছেলেটা আসলেই অসভ্য (মনে মনে)

নিচে থেকেই রোদের আম্মু রোদকে ডাকলো ব্রেক ফাস্ট করতে!রোদ ষাড়ের মত চিৎকুর দিয়া বললো..
রোদঃ আম্মু আমি এখন খাবে না! এখন আমি ঘুমাবো!আর কেউ যদি ডিস্টার্ব করে তাকে কপালে দুঃখ আছে আগেই বলে দিলাম। (চিৎকার করে)

তারপর রোদকে ছাড়া সবাই ব্রেক ফাস্ট সেরে নিলো!মেঘ আলোকে টানতে টানতে ওদের ছাদে নিয়ে গেল!তারপর মেঘ আলো সব দেখাচ্ছে কোথায় কি আছে?মেঘদের বাসার ছাদে উঠে আলো হা করে সব দেখছে কারন এত এত বড় বড় বিল্ডিং আলো এর আগে দেখেনি!মেঘ আলোকে ওটা দেখাচ্ছে….!!

রোদের আম্মু মেঘ আর আলোকে রেখে একটু বাইরে গেছে!মেঘ গেছে ওয়াশরুমে! সাড়ে দশটার দিকে রোদ ঘুম থেকে উঠে!তারপর একেবারে সাওয়ার নিয়ে একটা মেরুন কালার থ্রি কোয়াটার প্যান্ট আর হালকা গোলাপি কালারের একটা গেন্জী পড়ে!রোদ এক হাত দিয়ে ফোন ধরে কথা বলছে! আর অন্য হাত দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে সিড়ি দিয়ে নিচে নামছে…
রোদঃ হুমমম বল!আমি এখনো বাসায়! হুমম এখনি বের হবো!!
সিয়ামঃ…..
রোদঃ ওকে! বাই

আলো তখন ড্রয়িং রুমের সোফাতে বসেছিলো!সকালে রোদের রাগ দেখে আলোর থুতনী কাপা শুরু হয়ে গেছে!আলো এই এক সমস্যা ভয় পেলে থুতনী কাঁপতে শুরু করে!(এটা আমার রোগ….?)….!!ওইদিকে রোদ ওর আম্মুকে ডাকছে আর বলছে ওকে খেতে দিতে!আলো গিয়ে দেখলো রোদ ডায়নিং টেবিলে বসে ফোন টিপছে! এখন তো বাসায় কেউ নাই তাই আলো গুটি গুটি পায়ে রোদের খাবার গরম করে রোদকে খেতে দেয়!রোদ খেতে শুরু করে…!রোদ আলোর দিকে এখনো তাকায় নি!রোদ পাশে না তাকিয়ে বললো…

রোদঃ আম্মু বিচ্ছুটা কি খেয়েছে??
আলোঃ…..
রোদঃ আম্মু (খাবার খেতে খেতে)

রোদ ভ্রু কুচকে পাশে তাকাতেই আলোকে দেখে ভীষম খায়!কারন রোদ না দেখেই এতক্ষণ ওর আম্মু ভেবে কথা বলছিলো!রোদের দিকে আলো পানি এগিয়ে দেয়!রোদ পানি খেয়ে আলোকে বলে…
রোদঃ তুমি এখানে??
আলোঃ আ আম আম
রোদঃ তার মানে মেঘ সত্যি বলেছিলো তুমি সত্যি সত্যি আমাদের বাসায় এসেছো!তা এখানে আসার কারন মতলব টা কি (খেতে খেতে)
আলোঃ ম ম মতলব মানে
রোদঃ এখন আমার কথাটা ঠিক বুঝতে পারছো না! নাকি বুঝতে চাইছেন না কোনটা বলো তো।
আলোঃ ভ ভা ভাইয়া আপনি আমাকে ভুল বুঝছেন!আম আমি (কেঁদে দিয়ে)
রোদঃ আমি কি তোমাকে মেরেছি নাকি! অযথা কাঁদছো কেন? (ধমক দিয়ে)
আলোঃ…..
রোদঃএভাবেই ন্যাকা কান্না করে ছেলেদের মন গলিয়ে তারপর তাদের ফাসিয়ে গলায় ঝুলে পড়ার মতলব তাই না। (খেতে খেতে)
আলোঃ…..
রোদঃ চেহারাটা ভালো ট্রাই করতে থাকো কোন কোন ছেলে পটে যাবে।তবে একটা কথা শুনে রাখো আমার আশে পাশে ঘুরঘুর করতে দেখলে এমন একটা থাটিয়ে থাপ্পড় দিবে মুখটা ৮৮০ এঙ্গেলে বেঁকে যাবে।
আলোঃ….
রোদঃ যদিও আমি তোমাকে ভাল একটা মেয়ে ভেবে ছিলাম!কিন্তু মেঘ তোমাকে বউমনি বলে এখানে আনতে চাইলো আর তুমি গলে গিয়ে নাচতে নাচতে চলে এসে।ভালো মেয়েরা এমনটা করে না মে বি।তবে তুমি লোভী মেয়ে … এটাই প্রমান করলে।

রোদ কথাটা বলে ওর রুমে চলে যায়!আলো ওখানেই ঠায় দাড়িয়ে থাকে!আলো রোদের কথা শুনে কি রিয়েক্ট করবে এটা ভুলে গেছে!রোদ রেডি হয়ে বাইক নিয়ে চলে গেল!মেঘের ডাকে আলোর হুশ আসে তারপর আলো মেঘের দিকে তাকায় আর মেঘের আড়ালে চোখের পানি মুছে ফেলে।মেঘ আলোকে ধরে টানতে টানতে বাগানে নিয়ে যায়!আলো মেঘের জন্য কাঁদতেও পারছে না কিন্তু বেহায়া চোখের পানি গুলো গাল বেয়ে ঝরতেই আছে।মেঘ রকির সাথে দৌড়াতে দৌড়াতে এসে আলোর কোলে ঝাপিয়ে পড়ে! মেঘ হাসতে হাসতে আলোর কোল থেকে উঠতে গিয়ে দেখে আলো কাঁদছে….!!! মেঘ চিৎকার করে বলে…

মেঘঃ বউমনি তোমার কি হয়েছে??তুমি কাঁদছো কেন??কেউ কি কিছু বলছে তোমাকে বউমনি?কি হয়েছে তোমার বলবে তো?? (আলোর গাল ধরে)
আলোঃ আ আম আমার কিছু হ হয়নি মেঘবাবু!আমি ঠিক আছি।
মেঘঃবউমনি কোথায় কষ্ট হচ্ছে আমাকে বলো!তুমি কেদো না বউমনি আমারও যে কষ্ট হচ্ছে (ছলছল চোখে)

মেঘ আলো চোখের পানি মুছে দিচ্ছে! আলোর দুই গাল ধরে বার বার নিষেধ করছে না কাঁদতে। আলো আর নিজেকে ধরতে রাখতে পারে না।আলো মেঘকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে হাউ মাউ করে কেঁদে দেয়।মেঘ আলোর কান্না দেখে মেঘও কেঁদে দেয়।আজকে আলোও যেন চোখের পানি দিয়ে ওর কষ্ট গুলো মুছে ফেলতে চাচ্ছে। আলো কাঁদতে আর বলছে…

আলোঃ আমি লোভী না! আমার ভাগ্য আমাকে এখানে এনেছে।আমি খারাপ মতলবে এখানে আসি নি! আমি সবার মত ভাল থাকতে চাই….!
রোদের আম্মুঃ রোদ কি তোকে কিছু বলছে???(ভ্রু কুচকে)

আলো রোদের আম্মু কথা শুনে তারাতারি মেঘকে সরিয়ে চোখ মুখ মুছে ফেলে!কিন্তু ফর্সা মেয়েদের এই এক সমস্যা কাঁদলে সেই কান্না ছাপ সাথে সাথে লুকানো পারে না।কারন এখন আলোর চোখ,নাক,গাল,ঠোট লাল হয়ে আছে।যেটা এখন আলো চাইলেও আড়াল করতে পারে না!রোদের আম্মু আবার আলোকে জিজ্ঞাসা করে রোদ আলোকে কিছু বলেছে কি না!আলো মাথা নাড়িয়ে বলে রোদ কিছু বলে নি!রোদের আম্মু আলো আর মেঘকে নিয়ে বাসায় যায়।রোদের আম্মু মনে ঘটকা লাগে বাট এখন চেপে যায়।

রোদের আম্মুঃ আলো তোর এস এস সির সার্টিফিকেট গুলো আমাকে দে তো।
আলোঃ ক ক কেন আন্টি??
রোদের আম্মুঃ থাটিয়ে একটা থাপ্পড় দিবো!কিসের আন্টি কে আন্টি আমি তোর কোন জন্মের আন্টি।আর একবার আন্টি বললে তোর খবর আছে। আমাকে আম্মু ডাকবি…মনে থাকবে
আলোঃ হ হুম হুম

রোদের আম্মু আলোর এসএসসির সার্টিফিকেট গুলো নেয় আর বলে আলোকে কলেজে ভর্তি করে দিবে!আলো পড়াশোনার শুরু করবে, আলোর মাথা ঘুরছে কারন আলো এখন বুঝতে পারছে না আলো এখন কি করবে?রোদের কথা শুনে এখান থেকে চলে যাবে! নাকি নিজে বাঁচার জন্য একটা অবলম্বন তৈরী করবে।আলো রোদের আম্মু দিকে তাকিয়ে বলে…
আলোঃ আম্মু একটা কথা বলার ছিলো??
রোদের আম্মুঃ হুমমমম বল! অনুমতি নেওয়া দরকার নাই..
আলোঃ আম্মু আমি রোদ ভাইয়াকে বিয়ে করতে পারবো না (মাথা নিচু করে)

#এলোকেশী_কন্যা২__
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_9

____আলোঃ আম্মু আমি রোদ ভাইয়াকে বিয়ে করতে পারবো না (মাথা নিচু করে)
রোদের আম্মুঃকেন রোদকে তোর পছন্দ হয় নি(ভ্রু কুচকে)
আলোঃ আম্মু এই কথা বলবেন না!আমি বামুন হয়ে চাঁদে হাত বাড়াতে পারবো না আম্মু। কোথায় রোদ ভাইয়া আর কোথায় আমি কোথায় ? আম্মু উনার পাশে দাড়ানোর মত কোন যোগ্যতা আমার নাই!উনাকে বিয়ের কথা ভাবতে পারি না আম্মু…!! (কেঁদে কেঁদে)
রোদের আম্মুঃ তোকে আমি রোদের যোগ্য করেই তুলবো।এজন্য তোকে আমি এখানে নিয়ে এসেছি..
আলোঃ আম্মু আমি এখানে থাকতে পারবো না!আর যদি থাকতে হয়! তাহলে আমি এই বাসায় নিজে কাজ করে তারপর এখানে থাকবো! আর তা না হলে আমি গ্রামে চলে যাবো।
রোদের আম্মুঃ আমি জানিনা এই ডিসিশন কেন নিলি?তবে আমি তোর পাশে আছি আর পাশে থাকবো।
আলোঃআর রোদ ভাইয়া যদি কোন দিন আমাকে তার যোগ্য মনে করে তাহলে আমি উনাকে ফিরাবো না আম্মু! কিন্তু তার আগে আপনি রোদ ভাইয়া কে বিয়ের কথা বলবেন না।
রোদের আম্মুঃ হুমমম!

মেঘে এত কঠিন কঠিন বুঝতে না পারলো এটা বুঝলো যে আলো রোদকে বিয়ে করতে চাই না।মেঘ আলোর কাছে গিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে বললো।
মেঘঃ বউমনি তাহলে কি তুমি আমাকে রেখে চলে যাবে।আর থাকবে না আমাদের সাথে!তুমি কি আমার উপরে রাগ করছো বউমনি??
আলোঃ আমি কোথাও যাবো না মেঘ বাবু! আমি তোমার সাথেই থাকবো। আর আজকে থেকে যে নতুন একটা লড়াইয়ে নামলাম। সেই লড়াই যে আমার জিততেই হবে মেঘবাবু!তুমি একদম চিন্তা করো না
আমি তোমার সাথেই থাকবো (মেঘের চোখের পানি মুছে দিয়ে)

রোদের আম্মু আলোর এস এস সির সার্টিফিকেট গুলো নিয়ে মেঘ আর আলোকে কলেজে ভর্তি করার জন্য বেরিয়ে গেল।তারপর আলোকে কলেজে ভর্তি করে যাবতীয় বইপত্র আর আলোর জন্য নতুন বেশ কয়েক সেট জামা কাপড় কিনে তারপর বাইরে থেকেই খেয়েই ওরা একেবারে বাসায় আসে।তিনজন বাইরে খুব মজা করেছে! তারপর বাসায় এসে যে যার রুমে চলে যায়!তারপর বাসায় এসে আলো গোসল সেরে নেয়!আলো জামা কাপড় ধুয়ে ছাদে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই রোদের মুখোমুখি পড়ে আলো।রোদ কে দেখলে আলোর কেন জানি খুব ভয় লাগে…রোদ ফট করে বলে উঠলো…!!

রোদঃ চোখে কি কম দেখো নাকি..!নাকি ইচ্ছা করে আমার ধাক্কা খাওয়ার জন্য এমন ভাবে সামনে এসে দাড়ালে শুনি…
মেঘঃ দাভাই তুমি কি বউমনিকে বকছো??
রোদঃ এই কে তোর বউমনি হ্যা!তুলে এক আছাড় দিবো (মেঘকে ধমকে)
আলোঃমেঘের সাথে এভাবে কথা বলছেন কেন??
রোদঃ আমার ভাইয়ের সাথে আমি এখন কিভাবে কথা বলবো তোমার থেকে শিখতে হবে নাকি।মায়ের থেকে মাসির দরদ বেশি তাই না..!!

রোদ কথাটা বলে চলে গেল! মেঘ আলোর দিকে তাকিয়ে বললো…
মেঘঃ বউমনি মন খারাপ করো না!আমার দাভাই এমনই!
আলোঃ না মেঘ আমি মন খারাপ করিনি
মেঘঃ বউমনি আমি আর তুমি মিলে দাভাইকে এমন শাস্তি দিবো!তখন দেখবে আর তোমাকে বকা দিবে না।

মেঘের কথাটা আলোর পছন্দ হলো! তারপর মুচকি হেসে মেঘের হাত ধরে ছাদে চলে গেল কাপড় গুলো ছাদে শুকাতে দিতে!তারপর ছাদ থেকে নেমে বাইরের থেকে আনা খাবার গুলো রোদের জন্য ডায়নিং টেবিলে রেখে আলো নামাজ পড়তে চলে যায়।রোদ খেতে এসে দেখে সব রেডি করা তাই না ভেবে খেয়ে উপরে চলে যায়। আলোর রুমের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় রোদ কি মনে করে যেন একবার আলোর রুমের দিকে চোখে যায় দেখে আলো নামাজ পড়ছে…..!!

রোদের আজকে সন্ধ্যায় একটা প্রোগ্রাম আছে!আজকে ওখানে যেতে হবে।রোদ ওর রুমে এসে দেখে মেঘ রোদের বেডে শুয়ে গেম খেলছে!রোদ মেঘের পাশে শুয়ে পড়লো। মেঘ রোদের দিকে না তাকিয়ে বললো…
মেঘঃ দাভাই আমাকে কি তুমি ভালবাসো??
রোদঃ এই কথা কেন হুট করে??(ভ্রু কুচকে)
মেঘঃ বলো না..!!
রোদঃ হুমম আমি আমার এই বিচ্ছু ভাইটাকে খুব ভালবাসি (মেঘের গাল টেনে)
মেঘঃ দাভাই তুমি আমাকে ভালবাসো আর আমি বউমনিকে ভালবাসি।তাই বলছি যে তুমি বউমনিকে বকা দিও না।
রোদঃ…..
মেঘঃবউমনি কাঁদলে আমার বুকে কষ্ট হয়!যত বকার দেওয়ার ইচ্ছা হয় আমাকে দিবে! কিন্তু আমার বউমনিকে তুমি বকবে না।আজকে তোমার জন্য আমার বউমনি কেঁদেছে!
রোদঃ আমি তো ওই মেয়েটাকে বিয়ে করবো না তাহলে তুই ওকে বউমনি বলছিস কেন??
মেঘঃ বউমনি আমার বউমনিই হবে!আর তুমিই বউমনিকে বিয়ে করবে।
রোদঃ আমি ওকে বিয়ে করবো না!ব্যস্
মেঘঃ আমি বউমনিকেই তোমার বউ বানিয়ে ছাড়বো!ব্যাস্
রোদঃ এই তুই যা তো আমার রুম থেকে(দাঁতে দাঁত চেপে)
মেঘঃ এটা আমার বাবার বাসা আমি যাবো না।তুমি যাও এখান থেকে হিস হিস
রোদঃ মেঘ এখন আমার মাথা গরম করবি না একদম বলে দিলাম।যা এখন…!!
মেঘঃ না গেলে কি করবা??
রোদঃ তুলে আছাড় দিবো তোকে(রেগে গিয়ে)
মেঘঃ না থাক এত তারাতারি আমি মরতে চাই না।
রোদঃ তুই কি এখন যাবি???
মেঘঃ ওকে এখন যাচ্ছি! কিন্তু একটু পর আবার আসবো।

এলোকেশী কন্যা  সিজন ২ পর্ব ৪+৫+৬

রোদ বেডের উপর বসে পড়লো! কিছুক্ষন গিটার হাতে নিয়ে টুংটাং করে গিটার টাও রেখে দিলো!রোদের কেন জানি সবকিছু অসহ্য লাগছে।রোদ বারান্দায় বসেছিলো হঠাৎ করে মেঘের রুম থেকে ফুল সাউন্ডের গানের শব্দ পেয়ে রোদ রুম থেকে বের হলো।এমনিতেই রোদের মেজাজ খারাপ তারপরেও এত জোরে গান দিয়ে মেঘ বানরের মত লাফাচ্ছে! রোদ মেঘের রুমে ঢুকতে যাবে আর আলো বের হতে যাবে ঠিক তখনই দুজন দুজনের মাথায় ঠুয়া লাগে!রোদ মেঘের রুমের গান বন্ধ করে দিয়ে আলোর দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো…
রোদঃ এই মেয়ে তোমার সমস্যা কি??চোখে দেখতে পাও না।
আলোঃ আসলে আমি খেয়াল করি নি..
রোদঃ সেটা খেয়াল করবে কেন??ইচ্ছা করেই তো ছেলের সাথে ধাক্কা খেতে আসো।
আলোঃ যা বলার বলুন কিন্তু লিমিটের মধ্যে
রোদঃ এই মেয়ে এই তুমি আমাকে লিমিট শিখাচ্ছো?
আলোঃ দরকার পড়লে শিখাবো।আমি যদি বলি আপনি গায়ে পড়া ছেলেদের মত আমাকে ধাক্কা খেতে আসেন।
রোদঃ এই মেয়ে একটা কথা শুনে নাও!রোদ মেহবুবের কোন ইচ্ছে নেই তোমার মত মেয়ের সাথে ধাক্কা খাওয়ার। (দাঁতে দাঁত চেপে)
আলোঃ আমিও যদি এই বলি…!!
রোদঃ তুমি আমার সাথে তর্ক করছো!এক থাপ্পড় দিয়ে তোমার সব দাঁত খুলে ফেলবো।নিজের কোন ম্যানারস্ তো নেই আবার এসেছে মুখে মুখে তর্ক করতে।ফাজিল মেয়ে একটা…

রোদের কথা শুনে আলোর খুব রাগ হলো! তাই আলো আর কিছু না বলে ইচ্ছে করেই রোদকে খুব জোরে ধাক্কা দিয়েই ওর রুমে চলে গেল।আর রোদ দরজার সাথে ধাক্কা খেলো।রোদ রাগী চোখে আলোর দিকে তাকিয়ে আছে।আর মেঘ বেডের উপর দাড়িয়ে চিৎকুর দিয়ে বললো…
মেঘঃ জিও বউমনি!যা দিলে না পুরাই জখাম!ওরে কেউ সিটি বাজাও রে!!!!

এলোকেশী কন্যা  সিজন ২ পর্ব ১০+১১+১২