এলোকেশী কন্যা সিজন ২ শেষ পর্ব 

এলোকেশী কন্যা সিজন ২ শেষ পর্ব 
লেখনীতে:- নূরজাহান আক্তার (আলো)

ধৈর্য্যশীল, সৎ আর পরিশ্রমীরা নিশ্চয়ই তারা তাদের কাজের সুমিষ্ট ফল পাবেই।আল্লাহ তোমার ভরসায় আছি…!!কারন আল্লাহ তুমি যা করে আমাদের ভালোর জন্যই করো!(রোদ)
ওই রুমের মধ্যে কে কি করছে সেটা এখানে বড় পর্দায় দেখা যাচ্ছে! ওই রুমে যারা গেল তারা নিজেরা নিজেদের কাজে ব্যস্ত। রোদ এটাও দেখলো যে আলো একটা লং কাপড় নিয়ে কিছু একটা করতে গিয়ে দুম করে মেঝেতে পড়ে গেল।তবে কেউ ওকে তোলা তো দুরে থাক ফিরেও কেউ তাকালো না ওর দিকে! কারন এখন কারো দিকে তাকানোর কোন সময় নেই। রোদ যখনই দেখলো আলো পড়ে গেছে তখনই রোদ আল্লাহকে ডাকতে থাকে।যাতে আলো বেশি ব্যথা না পায় বা পেটে যাতে কোন কোন চাপ না লাগে!আলো মেঝে থেকে নিজে নিজেই উঠে দাঁড়ালো ! আর একটা চেয়ারে বসে আগে নিজেকে রিলেক্স করে নিতে বেশ কয়েকবার জোরে নিঃশ্বাস নিলো! তারপর চেয়ার থেকে উঠে ওর কাজ শুরু করলো!তবে এর মধ্যে কোন ডিজাইনার কার প্রতি জেলাস সেটাও বড় পর্দায় পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে! কারন একে অন্যের দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচানোটাও এখানে দেখা যাচ্ছে। এই ৫ জনের মধ্যে একজন মাএ ছেলে! আর সে বার বার আড়চোখে আলোর ড্রেসটার দিকে তাকাচ্ছে। তবে আলোর কারো দিকে মন নাই সেই নিজের কাজে মনোনিবেশ করছে।জাজ রা নিজেদের মাঝে গুজুর গুজুর করছে। আর আলো এ্যাশ কালারের কাপড় দিয়ে ডিজাইনার একটা গাউন বানাচ্ছে! আর সেটা আর্কষনীয় করে তুলে যা লাগবে আলো সেগুলোই করতেই ব্যস্ত।

৩ ঘন্টা পর_______!!
সবাই যে যার মত করে হাত চালিয়ে কাজ করছে!জাজ রা উঠে দাড়িয়ে ওদের টাইম শেষ বলে ঘোষণা করলো।ওই ৫ জনের ড্রেস ৫টা মডেলকে পড়িয়ে স্টেজে দাঁড় করানো হলো।রোদ দুর থেকে আলোকে ইশারায় বোঝাচ্ছে টেনশন না করতে !আলো একদৃষ্টিতে ছলছল চোখে রোদের দিকে তাকিয়ে আছে কারন আলোও এখন ভয় হচ্ছে। ৫ জন মডেল কোমরে হাত রেখে স্টাইল করে দাঁড়িয়ে আছে।আলো দুরুদুরু বুকে বার বার আল্লাহকে সরণ করছে। আর জাজ রা খুঁটিনাটি পরখ করে ৫ জনের মধ্যে দুইজনকে বাদ করে দিলো।তার মধ্যে দুইজনের মধ্যে সাফিনের আরেক স্টুডেন্ট সাবা বাদ হয়ে গেল।আলো আর একটা ছেলে পাশাপাশি দাড়িয়ে আছে! এই দুইজনের মধ্যেই এখন একজনকে বেস্ট ডিজাইনার হিসেবে উল্লেখ করবে।ফাইনাল ফলাফল জানার জন্য টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে উপস্থিত সবার মাঝে।
৪ জন জাজ তাদের চেয়ার থেকে উঠে স্টেজে এসে দাড়ালেন আর তাদের মাঝে একজনে হাতেই আছে সেই অমূল্য রেজাল্ট। যেটা জানার জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে চাতক পাখির মত আলো জাজদের দিকে তাকিয়ে আছে !চারদিকে স্তব্ধ হয়ে গেছে!মেঘ চোখ বন্ধ করে রোদের কোলে উঠে রোদের বুকের সাথে লেপ্টে আছে।মেঘ ওর ছোট্ট হাত দিয়ে রোদের শার্টের একপাশ মুঠ করে ধরে আছে।রোদ একবার আলোকে ইশারায় বলছে রিলেক্স থাকতে একবার মেঘর পিঠে হাত রেখে মেঘকে বলছে টেনশন না নিতে।মেঘ রোদের কথা শুনেও না শোনার ভান করে চুপ করে আছে মনে মনে বলছে…!!

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

–আল্লাহ দাভাই বলছে তুমি যা করো আমাদের ভালোর জন্য করো। আল্লাহ আমার বউমনিকে ফাস্ট করে দিও!আমার বউমনি হেরে গেলে বউমনি অনেক কষ্ট পাবে। আর বউমনি কষ্ট পেলে আমিও খুব কষ্ট পাবো।আমি আমার বউমনিকে খুব ভালবাসি। প্লিজ আল্লাহ তুমি আমাদের উপর সহায় হও।(মেঘ)
একজন জাজ উনার হাতের কাগজটার দিকে আর একবার চোখ বুলিয়ে নিলো।তারপর মাইক্রোফোনটা মুখের কাছে নিয়ে আলোর পাশে থাকা ছেলেটাকে বললো..!!
–তোমার নাম কি??তোমার বাসায় কোথায়? (জাজ)
–ম্যম আমার নাম শাহরিয়ার আলম। আমার বাসা রাজশাহী।
–আচ্ছা তুমি যদি ফাস্ট হও তাহলে কি করবে??
–যদি আমি ফাস্ট হই তাহলে তো আমি অনেক খুশি হবো!আর সবাইকে বলবো যে আমি পেরেছি বেস্ট ডিজাইনার হতে।
–ওহ্
–এবার আমি তোমার সাথে কথা বলি (আরেকজন জাজ আলোর দিকে তাকিয়ে)
–আসসালামু আলাইকুম (আলো)
–ওয়ালাইকুম সালাম! সালামের উওরটা নিলাম যদিও আমি তোমার ধর্মের না।যাই হোক তোমার নাম কি??
–স্যার ধন্যবাদ আমার সালামের উওরটা নেওয়া জন্য! আর আমার নাম আতকিয়া ইবনাত আলো
–আলোর মত দেখতে বলেই কি তোমার নাম আলো নাকি? (হেসে)
–আমি যতটুকু জানি আমি সকালের আলো ফোটার পর পরই নাকি পৃথিবীর আলো দেখেছিলাম তাই আমার নাম আলো।(আলো)
–বাসায় কোথায়?? (জাজ)
–ঢাকাতেই
–তুমি কি নার্ভাস ফিল করছো??
–একটু একটু (মাথা নিচু করে)
— তুমি বলো তো! এখন তুমি যদি ফাস্ট হও তো তুমি কি করবো??

–স্যার আমার দুইটা প্রাণপাখির সাপোর্ট পেয়েই আমি এতদূর পর্যন্ত এসেছি।আমি যদি আল্লাহর রহমতে ফাস্ট হতে পারি তাহলে আগে আমার প্রাণপাখি দুইটার মুখের সেই তৃপ্তির হাসিটা দুচোখ ভরে দেখবো।কারন ওদের মুখে তৃপ্তি হাসিটা দেখার জন্যই আমি আজ এখানে দাড়িয়ে। আমার মনোবল শক্তি, সাপোর্ট, ভাল থাকার পাসওয়ার্ড, আমার মুখের হাসি সব ওরা।ওদের মুখের সেই হাসিটা দেখার জন্যই আমি এখন পর্যন্ত চেষ্টা করে যাচ্ছি ।(আলো)
–হুমম বুঝলাম!আর খুশিও হলাম কারন তুমি অনেস্ট আনসার দিয়েছো!তবে সত্যি বলতে তোমরা সবাই খুব ভালো করেছো বাট সবাইকে তো ফাস্ট করা যায় না।এজন্য আমাদের নাম্বার অনুযায়ী আমাদের পরখ করতে হয়।তবে মন খারাপ করার কিছু নেই! বাবার যেমন বাবা থাকে তেমনি ভালোরও ভালো থাকে!কারো কাজ উনিশ তো কারোটা বিশ।একটা দুই নাম্বার তফাত আর কি!তোমরা ফাস্ট হতে না পারলে হাল ছেড়ে দিবে না নতুন করে শিক্ষার আগ্রহ প্রকাশ করবে। আর একটা কথা সব সময় মনে রাখবে!
“যেখানে শেষ হয় সেখান থেকেই নতুন করে শুরুর আগমন ঘটে” (জাজ)

তারপর আরেকজন জাজ শাহরিয়ার আর আলো রেজাল্ট বললো।আলো পেয়ে ৯৯৬ আর শাহরিয়ার পেয়েছে ৯৯৮! পুরো স্টেজ সহ সবার মাঝে টানটান উত্তেজনা করছে।শাহরিয়ার আলোর থেকে দুই মার্ক বেশি পেয়েছে! শাহরিয়ার সাপোর্টরা হইহুল্লোড় শুরু করে দিয়েছে।আলো মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে আর অঝোর ধারায় গাল বেয়ে পানি পড়তেই আছে।মেঘ রোদের গলা জড়িয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে। রোদেরও মনে হচ্ছে ওর হার্ট কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে! বার বার নিঃশ্বাস আটকে যাচ্ছে। রোদের মাথায় একটা কথা বার বার ঘুরপাক খাচ্ছে যে রোদ এখন আলোকে সামলাবে কি করে?কি বলে শান্ত করবে আলোকে।
টেলিভিশনে এই প্রোগ্রামটা সরাসরি দেখানো হচ্ছে।রোদের সব বন্ধুরা বসে দেখছে আবির, আকাশ, রিধি,আশা, আবৃতি এরা কেঁদে দিয়েছে।কারন ওরা জানে আলো ঠিক কতটা কষ্ট করেছে এই পর্যন্ত আসতে।বন্ধুদের সবার মাঝে একটা চিন্তায় কাজ করছে সেটা হলো আলোকে কিভাবে সামলাবে??আর মেঘ সে তো….
আলো মাথানিচু করে মনে মনে একটা কথায় আড়তাতে লাগলো..!!

–সাফল্যের চূড়ায় দাঁড়িয়ে আবার পিছু ফিরে যাওয়াটাই মনে হয় আমার ভাগ্যতে ছিলো।আমি ভাগ্যের উপর সব ছেড়ে দিয়েছলাম আর ভাগ্য আবার আমাকে ধোঁকা দিলো।পারলাম না মেঘুসোনা তোমাদের ইচ্ছে টা পূরণ করতে। আমি হেরে গেলাম! ভাগ্যের কাছে বার বার হেরে যেতে যেতে আমিও এবার ক্লান্ত।প্রতিবারের মত আজকেও ভাগ্য আমাকে ধোঁকা দিলো! আমি সরি রোদ আমি পারলাম না তোমার কথা রাখতে।আমি পারলাম না তোমাদের মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটাতে।আমি ব্যর্থ! আমি ব্যর্থ! আমার সব কষ্ট স্বার্থকতা নামক অমূল্য জিনিসটার ধারে কাছেও ঘেষতে পারলো না ! আমি আবার ভাগ্যের কাছে পরাজয় স্বীকার করলাম। আমি বার বার উঠে দাঁড়াতে চাই কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে বার বার আমি মুখ থুবকে পড়ে যায়। আজকেও আমি আমার ইচ্ছেপূরণের সাফল্যের চুড়াতে এসেও খালি হাতে ফিরবো।(আলো মাথা নিচু করে চোখের পানি ফেলে)
জাজদের কথা অনুযায়ী আলো ৯৯৬ নম্বর আর শাহরিয়ার ৯৯৮ পেয়েছে!আর রেজাল্ট অনুযায়ী শাহরিয়ার দুই নাম্বার বেশি পেয়েছে।আর এই রেজাল্ট অনুযায়ী শাহরিয়ার প্রথম স্থানে আছে। তাহলে আলো কি এতদূর এসেও খালি হাতে ফিরে যাবে???সত্যিই কি আলো আবার ভাগ্যের কাছে হেরে যাবে??

#এলোকেশী_কন্যা২__
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_59

জাজদের কথা অনুযায়ী আলো ৯৯৬ নম্বর আর শাহরিয়ার ৯৯৮ পেয়েছে!আর রেজাল্ট অনুযায়ী শাহরিয়ার দুই নাম্বার বেশি পেয়েছে।আর এই রেজাল্ট অনুযায়ী শাহরিয়ার প্রথম স্থানে আছে।

আলো নিশ্চিুপ হয়ে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে!রোদ চোখে পানি ছলছল করছে এই বুঝি গড়িয়ে পড়বে।মেঘ তো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে।
জাজদের মধ্যে একজন মাইক্রোফোনটা হাতে নিয়ে বললো…!!
–শাহরিয়ার পেয়েছে ৯৯৮ আর আলো পেয়েছে ৯৯৬ এখানে এগিয়ে আছে শাহরিয়ার। তবে এটা ছিলো এখনকার পরীক্ষায়। এখানে তিন ধাপে বিজয়ী পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমরা আর সেটা হলো!
১.ওনাদের তৈরী করা কাজের উপর নির্ভর করে
২. এখানে ড্রেস তৈরী পরীক্ষা
৩.আমাদের হাতে কিছু মার্ক(এস.বি.এ) যেটা আমরা কাজ,ব্যবহার,উপস্থিত বুদ্ধি এসব দেখে বিচার করে দিবো।(ম্যাম)
–আর সেই তিনটি ধাপের রেজাল্ট হিসেবে শাহরিয়ার পেয়েছে..
১.হাতের কাজে- ৭৫০/৯০০
২.ড্রেস তৈরী – ৯৯৮/১০০০
৩.জাজদের মতে- ৮৫/১০০
___________________________(২০০০ এর মধ্যে)
মোট পেয়েছে ১৯২৯
–আর আলো মোট পেয়েছে…
.হাতের কাজে- ৮৬৯/৯০০
২.ড্রেস তৈরী – ৯৯৬ /১০০০
৩.জাজদের মতে- ৯৫/১০০
___________________________(২০০০ এর মধ্যে) মোট পেয়েছে ১৯৬০

— আর এই পূর্ণ নাম্বার অনুযায়ী আজকে বেস্ট ডিজাইনার হিসেবে জয়ী হলো ” আতকিয়া ইবনাত আলো) (জোরে চিৎকার করে)
জাজরা এটা ঘোষণা করার সাথে সাথে চারদিকে হৈহুল্লোড় বেড়ে গেল।রোদ আর মেঘ দুইভাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।আলো ওখানে হাঁটু গেড়ে দুই হাত তুলে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানায়।বার বার ভাগ্য সবাইকে ঠকায় না এটা আবার প্রমান হলো।একজন জাজ আলোকে উদ্দেশ্য বললে…!!
–আলো তোমার প্রাণপাখি দুটোর সাথে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিবে না।(ম্যাম মুচকি হেসে)
–হুম! (চোখ মুছে)
–আলোর প্রাণপাখি গুলো প্লিজ স্টেজে আসুন।এখানে আসার জন্য আপনাদের অনুরোধ জানাচ্ছি (এ্যাংকারিং করা ছেলেটি)
রোদ মেঘের মুখ মুছিয়ে নিজের মুখটাও মুছে নিলো!তারপর উঠে দাড়িয়ে স্টেজে গেল।রোদ আর মেঘকে দেখে জাজ রা অবাক হলো কারন জাজরা মেঘ আর রোদকে মডেল ভেবেছিলো। রোদ আর মেঘ গিয়ে দাঁড়ালো। মেঘ ছুটে গিয়ে আলো গলা জড়িয়ে ধরে চোখ মুছে দিয়ে এত এত আদর দিয়ে দিলো।রোদ আলোকে তুলে ওর পাশে দাড় করিয়ে চোখ মুছে দিলো! একজন ম্যাম বলে উঠলো..!!
–এনারা তোমার প্রাণপাখি??
–হুমম(আলো)
–তোমাদের একে অপরের প্রতি এত টান দেখে খুশি হলাম।এই যুগে একজন আরেকজন সাপোর্ট করার মানুষেরও বড্ড অভাব।এই যে জুনিয়র মডেল আপনি খুশি তো??
–হুমম আমি তো অনেক খুশি।আমার বউমনি বেস্ট এটা আবার প্রমান করে দিলো(অনেক খুশি)
–বউমনি মানে??(স্যার)
–হুমম তো এটা আমার বউমনি আলো!আমি মেঘ মেহবুব আর ওটা আমার দাভাই রোদ মেহবুব
–এটা আপনার ছেলে না (ম্যম অবাক হয়ে)
–মেঘ আমার ছেলে,আমার দেবর,আমার প্রাণপাখি সবই বলতে পারেন।(আলো মুচকি হেসে)
–আপনাদের বন্ডিং টা মনে রাখার মত।আর রোদ মেহবুব আপনি কিছু বলুন।(স্যার)
–আসসালামু আলাইকুম! আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না।তবে এটা আবার প্রমান হলো যে,সৎ,পরিশ্রমী, আল্লাহ তাদের খালি হাতে ফেরায় না।(মুচকি হেসে)

–রোদ মেহবুব আপনি ঠিক বলেছেন।তবে আপনি কি প্রফেশনাল মডেল??আপনার এটিটিউড আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমি ভেবেছিলাম প্রোগ্রামের পর আপনার খোঁজ নিয়ে মিট করবো।তবে ব্যাড লাক আপনি মেরিড!আফসোস (মুখটা গোমড়া করে)
— হা হা হা (সবাই একসাথে)
তারপর জাজরা আলোর হাতে বেস্ট ডিজানার এর এ্যাওয়ার্ডটা তুলে দিলো।আলো মুচকি হেসে এ্যাওয়ার্ডটা রোদ আর মেঘের হাত তুলে দিলো।আলোর কষ্ট স্বার্থক।আলো পেরেছে রোদ আর মেঘের আবদার রাখতে।জাজরা আলোকে চেক তুলে দিলো!আর ৩ বছর আলো ওনাদের সাথে কাজ করার সুযোগ পেলো!সাথে নিজস্ব একটা গাড়িও উপহার হিসেবে পেলো।তারপর প্রোগ্রাম শেষ হলো আলো শাহরিয়ার সহ সবার সাথে কথা বললো।সাফিনের সাথেও কথা বললো। এরপর এদিকের ল্যাটা চুকিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লো….!!
মেঘের খুশি দেখে কে আশেপাশে সবাই আলোর সাথে দেখা করতে এসেছে।আর মেঘ বুক ফুলিয়ে হাজারটা কথার বুলি ছুড়ছে।বাসার থেকে লোকজন চলে গেলে রোদ খাবার নিয়ে রুমে গেল। আলো বেডে বসে আছে চুপটি করে।রোদ আলোর পাশে বসতেই আলোকে ঝাপিয়ে পড়লো রোদের বুকে।তারপর রোদের গলায় মুখ লুকিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে দিলো। এই শান্তি জায়গায় মুখ লুকানোর জন্য আলো এতক্ষণে উশখুশ করছিলো।আলো কাঁদছে আর কি বলছে সেটা রোদের কাছে অস্পষ্ট।রোদ মাথায় বুলিয়ে, কপালে আদর দিয়ে চোখের পানি দুই আঙ্গুল দিয়ে মুছে দিলো।তারপর আলোর চোখ রেখে বললো…!!
–কাঁদছো কেন পাগলী??
–আমি তো ভেবেছিলাম আমি হেরে গেছি।হেরে গেলে আমি মুখ দেখাতে পারতাম না তোমাদের।
–চুপ! আর একটা কথাও না!জানো না যে, শেষ ভাল যার সব ভাল তার তাই না।এখন কান্নাকাটি বন্ধ করে।আর তখন পড়ে গিয়েছিলো বেশি কি ব্যাথা পেয়েছিলে?.এখন কি বেশি ব্যাথা করছে??ডাঃ এর কাছে যাবে।(পাগলের মত উত্তেজিত হয়ে)
–উহুমম।আমি একদম ঠিক ঠিক আছি।
–সত্যি তো!(আলোর কপালে আদর দিয়ে)
–হুমম।

–আমি ভয় পেয়েছিলাম।আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া আল্লাহ আমাদের সহায় ছিলো।আমার জানটার চোখের পানির মূল্য দিয়েছে।কাঁদছিলে কেন তখন জানোনা তোমার চোখের পানি আমার বুকের তোলপাড় শুরু করে।আর কাঁদবে না..!!
–হুম(মুচকি হেসে)
তারপর রোদ আর কিছু না বলে আলোকে আবার বাহুডোরে জড়িয়ে নেই।কিছুক্ষণ দুইজনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে একে অন্যের দমিয়ে রাখা অনুভূতিটা এখন আদানপ্রদান করছে।আর আলো যখন পড়ে গিয়েছিলো রোদের বুকের ভেতরটাতে তখন কি হয়েছিলো সেটা রোদই জানে।রোদ আলোকে খাইয়ে দিয়ে শুইয়ে দিলো।কারন এখন আলোর বিশ্রামের প্রয়োজন।টানা তিন ঘন্টা বসে কাজ করলো,এত মানসিক চাপ,কান্নাকাটি এতে আলোও টায়ার্ড।
আর আলোও এখন কোন কথা বলতে নারাজ কারন আলো এখন রোদের বুকে মাথা রেখে প্রশান্তি নামক জিনিসটিকে লুফে নিতে ব্যস্ত।কারন আলোর মতে শুধু মাত্র আলোর জন্যই রোদের বুকটাই হচ্ছে সবচেয়ে নিরাপদ স্থান।যেখানে শুধু আলোর বসবাস। এখানে অন্য কারো জায়গা নেই এখানে শুধু আলোর একাই রাজত্ব…!!

#এলোকেশী_কন্যা২__
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_60(last part)

প্রায় ৭ মাস পর_________!!
রোদ আর মেঘ এখন আলোকে ননীর পুতুলের মত যত্ন করে। মেঘ একটু পর পর আলোর পেটে কান পেতে থাকে বাবুর কোন রেসপন্স করছে কিনা সেটা দেখার জন্য। মেঘের দেখে রোদও তাই করে আর দুই ভাই দুইপাশ কান পেতে থাকে। আর আলো ওদের কান্ড দেখে হেসে লুটোপুটি খায়। সময় মত খাওয়া, হাটা চলা করা,মেডিসিন খাওয়া,এসব কিছুর সবটাই রোদ খেয়াল রাখে! একদিন রাতে আলোর কোলে মাথা রেখে রোদ শুয়ে ছিলো আর আলো রোদের চুল টেনে দিচ্ছিলো!হুট করে রোদ আলোর একটা হাত ধরে ওর বুকের বাম পাশে চেপে ধরে বললো..!!
–আলো আমাদের কিউট একটা প্রিন্সেস হবে।আর সেই প্রিন্সেসের মাঝেই আমার আম্মু আমাদের মাঝে আবার ফিরে আসবে। তুমি আমার কথা মিলিয়ে নিও..!!(মুচকি হেসে)
–তাই
–হুমম!আমি খুব করে চাই আমার বাড়িটা আলো করে ছোট্ট একটা আলো আসুক।আমি আবার আম্মু বলে কাউকে ডাকার আরেকটা সুযোগ পেতে চাই (চোখ বন্ধ করে)
–হুমম! তাই যেন হয়
আলো আর কিছু বলেনি। সব কথার প্রেক্ষিতে উওর দিতে নেই! কিছু কিছু কথা নিরবতা আর দীর্ঘ শ্বাসের মাঝে চাপা পড়ে থাকুক না। তাতে যদি ভালো কিছু হয় তাতে ক্ষতি কি! আলো এখন নিরবতাটাকেই প্রাধান্য দিলো হয়তো এতেও কোন কারণ থাকলেও থাকতে পারে। কি মনে করে আলো রোদের কপালে আদর দিয়ে দিলো। রোদ আলোর দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিলো।তারপর রোদও আলোর কপালে মিষ্টি একটা ভালবাসার ছোঁয়া দিতে ভুল করলো না…!!
মেঘ আর রোদের যত্ন, সাবধাননতা,আর অসীম ভালবাসার মাঝে কেটে গেলে আরো তিনটা মাস।দেখতে দেখতে কাঙ্ক্ষিত সেই দিনটা এসে গেল। যে দিনটা জন্য মেঘ আলো আর রোদ অধীর আগ্রহে বসে ছিলো!এত কষ্ট আর অসহ্য ব্যাথার সমাপ্তি ঘটিয়ে ছোট্ট একটা পরীর আগমন হলো। আর সেই ছোট্ট পরীটা গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে জানান দিচ্ছে তার আগমনের বার্তা। রোদ আর মেঘ ওটির বাইরে অস্থির ভাবে পায়চারী করছে।বাবুর কান্নার আওয়াজ শুনে দুই ভাই তো আরো পাগল হয়ে গেছে!শুধু পারছেনা ওটির দরজা ভেঙ্গে ঢুকে পড়তে।আল্লাহর অসীম দয়াতে আলো আর ছোট্ট পরীটাও সুস্থ আছে। একজন নার্স এসে রোদের কোলে বাবুকে এগিয়ে দিতেই রোদ অস্থির হয়ে আগে আলোর কথা জিজ্ঞাসা করলো…!!
–আলো কেমন আছে??সব ঠিক আছে তো??
–হুমম সব ঠিক আছে! চিন্তা করবেন না একটু পর পেশেন্টের সাথে দেখা করতে পারবেন।(নার্স)
–হুমম

রোদ বাবুকে কোলে নিয়ে বাবুটার দিকে ছলছল চোখে তাকালো।রোদ আর মেঘ একসাথে বাবুর গালে আদর দিলো।মেঘ বাবুকে নিতে পারছেনা তাই রোদের কোলে থেকে আদুরে গলায় বাবুর আঙ্গুল ধরে বললো…!!
–আমার আম্মু আবার এসে গেছে।এই আম্মু হাউ আর ইউ??(মেঘ)
–মেঘ তুই আসলেই গাধা ও কি ইংরেজি বুঝবে যে তুই ইংরেজিতে কথা বলছিস।আমার আম্মুটা এখন ছোট তাই না আম্মু। (রোদ)
–ওদের কথা শুনে বাবু প্রথমে চোখ বড় বড় তাকালো তারপর ঠোঁট ফুলিয়ে আবার গলা ফাটিয়ে চিৎকুর দিয়ে কাঁদতে শুরু করলো।
–না না কাঁদে না কাঁদে না!এই আমার আম্মুটা কাঁদছে কেন? আমার আম্মু তো গুড গার্ল।
–দাভাই আদুরির মনে হয় ক্ষুধা লাগছে??ৎদেখো কেমন হা করে কাঁদছে!ওকে আগে কিছু খেতে দাও.. (মেঘ)
–আমারও তাই মনে হচ্ছে। এখন কি করি বলতো??
–এই নাও বার্গারটা ওকে খেতে দাও(বার্গার টা রোদের দিকে এগিয়ে দিয়ে)
–এই টুকু বাবু বার্গার খাবে?? তুই কি পাগল?
–তাহলে ও কি খাবে? হা হা হা দাভাই আদুরি তো ফোকলা বার্গার খেতে পারবেনা।এই ফোকলা পরী, ফোকলা!ফোকলা! (বাবুর গাল টেনে)
–আমার আম্মুটাকে একদম ফোকলা বলবি না মেঘ..!! বড় হতে দে তখন বুঝাবে তোকে..!! (রোদ)
–দাঁত নেই ফোকলা!ফোকলা পরী!পেটুক পরী!
(মেঘ বাবুর গাল টেনে)
মেঘের কথা শুনে বাবুটা কি বুঝলো কে জানে বাবুটা আরো জোরে কাঁদতে শুরু করলো।থামা থামির নাম নেই! বাবুটা এমন ভাবে কাঁদছে যেন এখন এভাবে না কাঁদলে পৃথিবী উল্টো দিকে ঘুরতে শুরু করবে।বাবুর কান্না দেখে মেঘ এবার উত্তেজিত হয়ে রোদকে বললো..!!

–দাভাই ওরে তারাতারি খেতে দাও!ও যা খেতে চাই তারাতারি নিয়ে এসো প্লিজ! ওর কান্না আমি সহ্য করতে পারছিনা দাভাই।(মেঘ)
–বাবুকে তো এখন দুধ খাওয়াতে হবে!আর এছাড়া তো কিছু খেতে পারবেনা।আর খাওয়ানো ঠিক হবে না।
–তাহলে ওরে তাই খাওয়াও
–আমি কিভাবে ওরে দুধ খাওয়াবো! গাধা একটা(চোখ মুখ খিচে দাঁতে দাঁত চেপে)
–তাহলে তুমি কিছু তো একটা করো দাভাই..!!
একটুপর আলোকে কেবিনে দেওয়া হলো।নার্স এসে বাবু নিয়ে গেল খাওয়াতে আর রোদ মেঘকে একটু পরে কেবিনে আসতে বললো।আলো বাবুকে আগে দেখেছে তারপরেও এখন আবার বাবুকে বুকের সাথে জড়িয়ে কপালে আদর দিয়ে দিলো।একটু পরে রোদ আর মেঘ কেবিনে আসলো তখন বাবু ঘুমে আচ্ছন্ন।মেঘ কেবিনে ঢুকে আলোর কাছে দৌড়ে গিয়ে এত এত আদর দিয়ে ভাল মন্দ জিজ্ঞাসা করলো।আলোও মেঘকে আদর দিয়ে কিছু খেয়েছে কি না জিজ্ঞাসা করলো?তারপর মেঘ বাবুর কাছে এগিয়ে গেল। মেঘ বাবুকে উঠানোর জন্য বাবুর গালে আকিবুকি করছে।রোদ আলোর খুব কাছে বসে জিজ্ঞাসা করলো..!!
–এখন কেমন আছো?? খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না??
–আলহামদুলিল্লাহ এখন আমি অনেক ভাল আছি
–মুখটা শুকিয়ে আছে কেন তোমাদের??সকালে থেকে কি কিছু খাও নি??
–আমার কলিজাটা ব্যাথায় কাঁদছে আর আমি কিভাবে খাবো??এতটা নিষ্ঠুর আর পাষাণ মনে হয় আমাকে??
–উহুম না মনে হয় না! তবে এখন তো কিছু খাও!
–পরে খাবো।(আদর দিয়ে)

দুইদিন হসপিটালে থেকে ওরা বাসায় ফিরে যায়।রোদ আর মেঘ দুজনে বাবুর কান্না শুনলে যেখানে থাকুক দৌড়ে হাজির।মেঘ তো বাবুকে কাঁদতে দেখলে বাড়ি মাথায় করে তুলে। মেঘ বাবুকে আদুরি, কাঠবিড়ালি,ফোকলা পরী এসব বলে ডাকে। বাবুর নাম রাখা হয় রৌদ্রী ইবনাত (রিদু)।মেঘ আর রোদের কলিজা এখন এই ছোট্ট পরীটা। যখনই ঠোঁট ফুলিয়ে কাঁদে দুই ভাই পাগলের মত হয়ে যায় এই পরীটার কান্না থামানোর জন্য। যত কৌশল আছে সব অবলম্বন করে শুধু এই পিচ্চি পরীটার কান্না থামাতে।আদুরিও হয়েছে তাই একবার কান্না শুরু করে থামার নাম নাই। যখন রোদ আর মেঘ পিচ্চি পরীর কান্না থামাতে পারেনা তখন দুইজনই আলোর দিকে অসহায় শিশুদের মত করে চেয়ে থাকে। আর আলোও কয়েক মিনিট ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে তারপর পিচ্চিকে কোলে নেই……!!
৪ বছর পর____!!
মেঘ এখন ৮ম শ্রেণীতে পড়ে। মেঘ আগের তুলনায় দেখতে আরো সুদর্শন। আজকে রোদের একজন বিদেশী ক্লায়েন্ট রোদের বাসায় এসেছে। ওইদিকে রিদু আর ওদের পাশের বাসার দুইজন খেলার সাথি বালি নিয়ে খেলছিলো।কোন এক কারনে ঝগড়া লাগে আর সাফি নামে ছেলেটা রিদুকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়।আর সেই সময় মেঘ দেখে ফেলে। এরপর মেঘ ছেলেটাকে ধরে রাখে আর রিদু ইচ্ছে মত সাফির চুল টেনে, খামছি দিয়ে,মুখের ভেতর বালি ঢুকিয়ে দেয়।বেচারা সাফি কাঁদতে কাঁদতে ওর বাসায় চলে যায়। রিদু আর মেঘ এসব বিশ্বজয় করা কর্ম করে বাসায় ঢুকে। রোদ সোফায় বসে বিদেশী ক্লায়েন্টের সাথে কথা বলেছিলো এই সময় রিদু আর মেঘ এসেও সোফাতে বসে। রিদুকে দেখে উনি বলে..!!

–হেই বেবি থোমার নাম খি?আর থুমি খেমন আসো??(ভদ্রলোক)
–আমাল নাম লিদু! আল আমি ভাল আছি!আপনি তেমন আতেন?(রিদু)
–আমিও বালো আসি
–ওহ।
–থা থোমার হাথে এতো ডার্স্ট খেনো??
–এতা দার্স্ট না এদুলো হলো বানি(বালি)
–এগুলো থোমার হাথে কেন?
–আমি এদুলো থাচ্ছিলাম।আপনি থাবেন??এদুলো ইয়াম হয় থেতে(রিদু)
–নো নো
–আপনি তি থাবেন??
–আমি খিছু খাবো না
–তেনো?? দুদ দেই ভাত দেই কানো বিলালের গু দেই থাবেন?
–ইয়াহ্ ইয়াহ্ (না বুঝেই)
রোদ আর আলো অবাক হয়ে রিদুর কথা শুনছিলো।আর মেঘ তো হাসি না চাপিয়ে রাখতে পেরে উঠে চলে গেল। রোদ এদিক ওদিক তাকিয়ে হাসি আটকানোর বৃথা চেষ্টা করছে।আর আলো রিদুর দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে। রিদু আলোর তাকানোর মানে বুঝতে পেরে মেঘের রুমের দিকে দৌড় দিলো।রোদ আর আলো বিদেশী ক্লায়েন্টকে দুপুরের খাবার খাইয়ে বেশকিছুটা সময় আড্ডা দিলো।তারপর উনি চলে গেল।সাফির আম্মু প্রতিদিনের মত আজকেও রিদুর নামে বিচার দিয়ে গেল।আলো রেগে গিয়ে রিদুকে ডাকলো…!!

–রিদু! রিদু! তারাতারি এখানে এসো
–আমি আততে পালবো না।আমি দেম(গেম) খেলছি
–তোকে আজকে এমন পিটুনি দিবো তোর বাবার নাম ভুলিয়ে দিবো।(রেগে)
–বাবাইকে মেলে নাম বুলিয়ে (ভুলিয়ে)দাও। আমাকে মারবে তেনো??
রিদুর কথা শুনে রোদ আর মেঘ আজও হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছে।রোদ রিদুকে কোলে নিয়ে বললো…!!
–আম্মু সবাই মিলেমিশে খেলতে হয়। এভাবে ঝগড়া করো কেন তুমি??
–সাপি আমাতে দাক্কা দিসে তাই আমি ওতে বানু তাওয়াই(খাওয়াই) দিসি।আল….!!
–আর কি??(ভ্রু কুচকে)
–মেঘ বাবাই বলছে মারামারি করতে না পারলে কামলে বা চোখ আঙ্গুল ঢুকিয়ে দিয়ে দৌড়ে বাসায় চলে আসতে। তাই মালামালি পারি তাই এমন করিনি।
–না আম্মু এসব আর করবে না।তুমি আমার গুড গার্ল..!!(রোদ আদর দিয়ে)
পরেরদিন ______!!
আজকে আবির আর আবৃতির বিয়ে তাই রোদরা সবাই বরযাত্রী হিসেবে আবৃতির বাসায় যাবে। সকালে সবাই খেতে বসেছে!আর রিদু একা খাবে তাই জেদ করছে তাই আলো রিদুকে একাই খেতে দিলো।আর খেতে গিয়ে প্লেট উল্টে ওর কোলেই পড়লো!আলো কিছু বলার আগেই রিদু দৌড়ে মেঘের কোলে বসে পড়লো।আর আলো কিছু বলার আগে মেঘ রিদুকে নিয়ে হনহন করতে করতে চলে গেল।রোদ মুখ টিপে হেসে খাওয়াতে মনোযোগ দিলো।এর মধ্যে মেঘের কাঁধ থেকে রিদু ইঁদুরের মতো মাথা বের করে আলোর দিকে তাকিয়ে বললো…!!
পালে না পালে না মাম্মা আমাতে ধরতে পালে না…
আবৃতির বাসায় গিয়ে সবাই অনেক মজা করলো।আবৃতির বিদায়ের সময় আবৃতি আর ওর বাবা খুব কাদছিলো।মেঘ রিদুকে বুকের সাথে চেপে ধরে রোদকে বললো….!!

এলোকেশী কন্যা  সিজন ২ পর্ব ৫৫+৫৬+৫৭

—দাভাই আমার আদুরির বিয়ে দিবো না আমি কোনদিন !আমি পারবো না আমার আদুরিকে ছাড়া থাকতে।আমার আম্মু আমাকে ফাকি দিয়েছে কিন্তু আমি আদুরিকে ফাঁকি দিতে দিবো না।(মেঘ)
–মেঘুসোনা তা বললে তো হবে না।মেয়ে হয়ে যখন জন্ম হয়েছে বিয়ে তো দিতেই হবে।এটাই যে
নিয়ম…!!(আলো)
–সেই নিয়মের মায়েরে বাপ!বিয়ে দিলেও সেই ছেলেকে ঘরজামাই হয়েই থাকতে হবে।দরকার হলে তাকে তুলে এনে আমার বাসায় রাখবো….!!আমি পারবো না আমার আদুরিকে এমন ভাবে বিদায় দিতে।পারবো না আমার আদুরির চোখের বিন্দু মাএ পানি দেখতে(মেঘ)

আলো আর রোদ একে অন্যের দিকে তাকালো মেঘের কথা শুনে।তবে আলো আর রোদ এই বিষয়ে আর কথা বাড়ালো না।মেঘ রিদুকে ওর বুকের সাথে জড়িয়ে নিলো আর সামনের পথের দিকে এগিয়ে গেল।আলো আর রোদ পাশাপাশি দাড়িয়ে দেখছে ।রিদুও মেঘের বুকের সাথে লেপ্টে আছে।ওদের দেখে মনে হয় ওরা একে আরেকজনের প্রাণ ভোমরা।থাকুক না ওরা ওদের মত!কিছু কিছু জিনিস সমাপ্ত হলেও বাকি থেকে যায় অনেক কিছুই ।ভাল থাকুক ওরা একে অন্যের ভালবাসার পাসওয়ার্ড হয়ে।আর আমিই বা কেন শুধু শুধু এখানে সমাপ্ত কথাটা বলে থামিয়ে দিবো।গল্পের ইতি এখানে টানলেও চিরজীবী হয়ে বেঁচে থাকুক ওদের এই অসীম ভালবাসার অসমাপ্ত কাহিনী ….!!

সমাপ্ত হয়েও অসমাপ্ত……!!!

( লেখাঃনূরজাহান আক্তার (আলো)) এই লেখিকার আরও লেখা গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন এই গল্পের সিজন ১ পড়তে চাইলেও এখানে ক্লিক করুন