এলোকেশী কন্যা সিজন ২ পর্ব ৫৫+৫৬+৫৭

এলোকেশী কন্যা সিজন ২ পর্ব ৫৫+৫৬+৫৭
লেখনীতে:- নূরজাহান আক্তার (আলো)

ভালবাসা ছাড়া কারো সাথে সম্পর্কের দোহায় দিয়ে অট্টলিকায় থাকার চেয়ে! ভালবাসার মানুষটাকে নিয়ে গাছ তলায় থাকায় শ্রেয়। কারন গাছ তলাতে থাকলেও বিশ্বাস, ভরসা,আর ভালবাসা এই তিনটিই বিরাজ করে!!

আলোর কথা শুনে রোদ বললো।
–তাই নাকি?(রোদ)
–হুমম!সেই দিক থেকে বলতে পারেন আমি সুখের কাতারে থাকা একজন মেয়ে।(আলো)
— দাভাই আমার খুব হিসি লাগছে।সাইডে বাইক থামাও তো(মেঘ)
— ইসস রে তোর ইয়ে পাওয়ার আর সময় পেলো না (বিরক্তের সুরে রোদ)
–পেলে আমি কি করবো??(মেঘ)
— হুমম তাই তো!আপনি বাইক সাইড করুন (আলো হেসে দিয়ে)
–তোদের জ্বালাতন আর সহ্য হচ্ছে না আমার।তোরা দুটোতে মিলে আমাকে খুব জ্বালিয়ে মারিস(রোদ)
–আমি কি দিয়াশলাই নাকি যে জ্বালাবো??(মেঘ)
–মেঘ তুই বেশি বকবক করবি না!সারাদিন কানের কাছে পকপক করতেই থাকবে।(রোদ)

তারপর রোদ অন্ধকার রাস্তাতেই বাইক থামিয়ে মেঘকে ওর কাজ সারতে বললো!আলো একটু দুরে দাড়িয়ে আছে!মেঘ রোদের হাত টেনে মেঘের সাথে দাঁড় করিয়ে দিলো।রোদ মেঘের কান টেনে বললো…!!
— দাভাই সামনে হিসি করবি তোর লজ্জা লাগবেনা(রোদ)
–তুমি আমি তো সেইম সেইম লজ্জা লাগবে কেন দাভাই??(মেঘ)
–এখন তো বড় হচ্ছিস?? (রোদ)
–দাভাই তুমি সকালেই তো বললে”মেঘ ছোট ছোটোর মত থাক!এত বকবক করিস কেন” আবার এখন বলছো আমি বড় হয়ে গেছি।(মেঘ)
— হুমম আমার ভুল হয়েছে ভাই! তুই তারাতারি তোর কাজ শেষ কর(রোদ)
–সাপ টাপ উড়ে এসে কামড়ে টামড়ে দিবে না তো দাভাই(মেঘ)
— সাপ উড়তে পারে??সাপের পাখনা আছে বলে তো আমার জানা নাই! (রোদ)
–রাতের বেলায় তো উড়তেও পারে!তুমি ট্যারা তাই দেখতে পাবে না। হা হা হা (মেঘ)
রোদ আর কিছু বললো না! মেঘ ওর কাজ শেষ করলো তারপর দুইভাই বাইকে বসলো।মেঘ আর আলো বকবক করতে শুরু করলো আর রোদ নিরব শ্রোতার মত শ্রবণ করতে লাগলো।কারন এখন ওদের মাঝে কিছু বললে দুইজনেই একসাথে খাউখাউ করে উঠবে সেটা এতদিনে খুব ভালো করেই বুঝে গেছে।
তারপর রোদ ওদের নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে গেল ডিনার করতে!বাইক রেখে ওরা তিনজনে মিলে ওয়েস্টার্ন রেস্টুরেন্টে ঢুকলো!অনেক সুন্দর করে বিভিন্ন লাইট দিয়ে রেস্টুরেন্টটা সাজানো!মেঘ তিরিংবিরিং করতে করতে একটা চেয়ারে বসে পড়লো।রোদ আলোর দিকে তাকিয়ে বললো….!!

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

–কি খাবে বলো??
–গরম গরম ধোঁয়া ওঠা বিরিয়ানী (আলো)
–দাভাই আমি চিজ বার্গার আর পিৎজা খাবো (মেঘ)
–আর আমি খাবো থাইফুড (রোদ)
রোদ মেনুকার্ড নিয়ে খাবার অর্ডার করলো!একটুপর খাবার আসলো!রোদ স্পুন নিয়ে ফ্রাইড রাইস আর চিকেন কারী মুখে পুরে নিলো!আলোও গরম গরম বিরিয়ানী খেতে শুরু করলো।মেঘ বার্গারে একটা কামড় দিয়ে আলো আর রোদের খাওয়া দেখছে!রোদ আর আলোর খাওয়া দেখে মেঘের এখন বার্গার খেতে ইচ্ছে করছেনা। আলো মেঘের তাকানো দেখে মেঘের মুখের সামনে বিরিয়ানী ধরলো আর মেঘ হালুম হালুম করে খেতে শুরু করলো!হাস্যকর ব্যাপার হলো মেঘ খেলো আলোর বিরিয়ানীর হাফ আর আলো খেলো রোদের থাইফুডের হাফ আর বেচারা রোদকে খেতে হলো মেঘের চিজ বার্গার আর পিৎজা।রোদও জানতো এটাই হবে! তবে ভাগাভাগি করে খাবার খাওয়ার মাঝেও ভালবাসা আছে যেটা একা একা পেট পুরে খাওয়া মাঝে নেই!যদিও রোদ চেয়েছিলো আরো খাবার অর্ডার দিতে কিন্তু মেঘ আর আলো করতে দেয় নি।কারন এখানে রয়েছে তাদের অটুট ভালবাসার বন্ধন।

তিনজন অনেক মজা করে তারপর বাসায় ফিরে মেঘ বেশকিছু সময় রোদের সাথে কুস্তাকুস্তি করে নিলো!আলো মেঘকে ব্রাশ করিয়ে ওর রুমে গিয়ে আলোর সাথে গল্প করতে শুরু করলো তারপর একটা সময় আলোর গল্প শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে গেল!আলো মেঘের মাথায় থেকে হাত সরিয়ে মেঘের কপালে একটা আদর দিয়ে, মেঘের গায়ের উপর চাদর টেনে দিলো আর এসির পাওয়া কমিয়ে দিয়ে পাশের রুমে গেল।আলো রুমে গিয়ে দেখলো রোদ বারান্দায় রাখা সোফাকে শুয়ে ফোন টিপছে!আলো রোদের কাছে গিয়ে টান টান হয়ে দুম করে রোদের উপর শুয়ে পড়লো!রোদ হাতের ফোনটা পাশের সেন্টার রেখে আলোর কপালে একটা আদর দিলো আর মুচকি হেসে বললো..!!
–আজকে আমার বউটার কি মনটা খুব ভালো??
–উহুম!
–তাহলে কি হয়েছে আমার তিলোকন্যার?
–টেনশনে আছি এজন্য আপনার বুকে থেকে একটু শান্তি ধার নিতে এসেছি (আলো)
–কিসের টেনশন শুনি?(ভ্রু কুচকে)
–(আলো সাফিনের বলার সব কথা বললো)
–হুমম! সেই অনুযায়ী নিজের প্রস্তুুত করো!আমি জানি তুমি পারবে।এখানে টেনশনের কি আছে?
–যদি না পারি
–যদি এখানে আসছে কেন??নিজের মাঝে কনফিডেন্ট বাড়াও আর আমি সব সময় তোমার পাশে আছি তাই না।একদম ভয় পাবে না কারন ভীতুরা ভয় পায় আর আমার বউটা অনেক সাহসী আমি জানি (আলো দুই গালে হাত রেখে)
–ইনশাআল্লাহ আমি চেষ্টা করবো!
–তোমার কি শরীর খারাপ?? (রোদ)
–না তো কেন??
–মুখটা শুকনা শুকনা লাগছে কেন হুম??
–আমার তো মনে হচ্ছে আগের তুলনায় মুটু হয়েছি আমি (আলো)
–হা হা হা! (রোদ)
তারপর দুইজনে এত এত কথার ঝুলি খুলে বসলো!এত এত কথা ভালবাসা,খুনশুটি সব আছে এর মাঝে!এত সুন্দর একটা মুহূর্তে মাঝে মাঝে একটু একটু মৃদ্যু বাতাস এসেও ওদের শরীর ছুঁয়ে যাচ্ছে !ওরা যেন চাচ্ছে আলো আর রোদের সঙ্গ দিতে! আলো আর রোদ ওরা ওদের মাঝেই ব্যস্ত কারন আলো চাই ওর প্রতিটা কাজের জন্য রোদের এক একটা সাজেশন কারন রোদ প্রতিটা জিনিস খুব সুন্দর করে আলোকে বোঝাতে পারে।
পরের দিন সকালে…..!!

রোদ আর আলো মেঘকে স্কুলে ড্রপ করে ওরা শপিংমলে চলে গেল!বেশ কিছু দরকারী জিনিস কেনাকাটা করে ওরা বাসায় ফিরলো!রোদ আলোর জন্য ফ্যাশান ডিজাইনের জন্য যা কিছু দরকারী জিনিস সেগুলো এনে একটা রুমে রাখছে।আর এখানে এসেই আলো প্র্যাকটিস করে আর নতুন কিছু করার চেষ্টা করে!আজকেও আলো মনমত সুতা,বাহারি রঙের ফিতা,কাপড়,পুতি থেকে শুরু করে আরো অনেক কিছু এনেছে।রোদ আলোকে বাসায় রেখে অফিসে গেল আর আলো ওই রুমে বসে ঠান্ডা মাথায় কাজ শুরু করলো কারন কিছু আইটেম ওখানে শো করতে হবে তাই আলো আর একটা মিনিটও নষ্ট করতে চাই না। আলো হাতে পেন্সিলটা তুলে নিয়ে মনমত একটা ড্রেস আঁকতে শুরু করলো তারপর ওটাতে রং ও করে ফেললো!তারপর কাপড়, কাঁচি নিয়ে ওর মন মত একটা ড্রেস বানানোর কাজে লেগে গেল….!!
রোদ সাফিনকে ফোন দিয়ে জেনে নিলো প্রোগ্রাম টা কেমন ধরনের হবে। রোদ এটাও জেনে নিলো যে এখানে র‌্যাম্প শো হবে করতে হবে আর সেটা ডিজাইনারদের হাতে বানানো ড্রেস পড়েই মডেলরা র‌্যাম্প শো করবে।তারপর রোদ সাফিনের সাথে আরো কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করে নিলো।কারন রোদ আলোকে নিজে কিছু বোঝালে সেটা আলো খুব সহজে ব্রেনে ক্যাচ করতে পারে। রোদ এই কয়েকদিনে আলোর মাঝে একটা জিনিস খেয়াল করছে আর সেটা হলো আলো এখন ওর কাজটা সিরিয়াস ভাবে নিতে শিখেছে। আর এটাই হবে আলো জন্য প্লাস পয়েন্ট৷ প্রতিটা কাজ ভালবেসে আর আগ্রহ নিয়ে করলে সেই কাজটা যথেষ্ট ভাল হয়।রোদ ইচ্ছে করেই অফিসে এসে বসে আছে কারন রোদ জানে ও বাসায় থাকলে আলো মনোযোগ দিয়ে কোন কাজ করতে পারবে না বার বার এসে জিজ্ঞাসা করবে রোদের কিছু লাগবে কি না??যদিও এটাও ভালবাসার মানুষটার প্রতি যত্নশীলতলার একটা অংশ।
রোদ অফিসের কিছু কাজ সামলে আবিরকে বলে মেঘের স্কুলের সামনে চলে গেল!তারপর মেঘকে নিয়ে বাসায় ফিরে রোদ মেঘকে শব্দ করতে না করলো কারন আলো যে ওর কাজের রুমে কাজ করছে সেটা উঁকি মেরে দেখে এসেছে। রোদ মেঘকে ড্রেস বদলে দিয়ে খাবার খাইয়ে দিলো তারপর মেঘ আর রোদ ওর রুমে গিয়ে ল্যাপটপে মুভি দেখতে শুরু করলো।মুভিতে একটা বাচ্চা দেখে মেঘ রোদকে বললো..!!

–দাভাই আমাদের বাসায় একটা বাবু আসলে খুব ভাল হবে তাই না (মেঘ)
–বাবু আছে তো আমাদের বাসায় (রোদ)
–কইই দেখি (এক লাফে উঠে)
–কেন তুই তো বাবু (রোদ)
–না না আমি বলছি একটা মেয়ে বাবুর কথা! থাকলে অনেক ভাল হতো (মন খারাপ করে)
–মনে হয় কবে তোর ইচ্ছেটা খুব পূরণ হবে মেঘ!আমারও কেন জানি ডাউট হচ্ছে আলোকে নিয়ে।যদিও ও মুখ ফুটে কিছু বলেনি… (মনে মনে)
হঠাৎ করে মেঘ বেডের উপর উঠে চিৎকুর দিয়া বলে উঠলো!
–বউমনি!ওহ বউমনি তাড়াতাড়ি এসো !বউমনি তারাতারি দাভাই এর রুমে এসে দেখো দাভাই কি সব নাংঙ্গু পাংগু মুভি দেখছে। বউমনি ঝাড়ু টা সাথে করে নিয়ে এসো..(চিৎকুর দিয়ে)

#এলোকেশী_কন্যা২__
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_56

তারাতারি দাভাই এর রুমে এসে দেখো দাভাই কি সব নাংঙ্গু পাংগু মুভি দেখছে। বউমনি ঝাড়ু টা সাথে করে নিয়ে এসো..(চিৎকুর দিয়ে)
–চুপ চুপ! ভাই আমার চুপ কর।এটা জানলে আমাকে আস্ত রাখবে না
–কি হয়েছে মেঘ??(আলো দৌড়ে এসে)
–বউমনি দাভাই নাংঙ্গু পাংগু মুভি দেখছে
–(আলো রোদের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে)
–এই না না আমি কিছু করিনি! মেঘই ইচ্ছে করে পানি পানি গানটা দিয়ে আমাকে ফাঁসিয়ে দিচ্ছে। আমি সত্যি বলছি(মুখ কাচুমাচু করে)
–আর দাভাই আমাকে একটা কথা শিখিয়ে দিচ্ছে বউমনি(মেঘ)
–কি কথা?(ভ্রু কুচকে)
–দাভাই বলছে আমাদের বাসায় নাকি একটা বাবু থাকলে নাকি আরো ভালো লাগবে।
আলো রোদের দিকে কটমট করে তাকিয়ে গটগট করে চলে গেল!আর রোদ অসহায় মাসুম বাচ্চার মত আলোর চলে যাওয়া দেখলো আর মেঘের মুখে বিশ্বজয় হাসি ফুটে উঠলো।স্কুল থেকে আসার সময় মেঘ রোদকে আইসক্রিম কিনে দিতে বলেছিলো রোদ দেয়নি তাই মেঘ এভাবে রোদকে জব্দ করলো।

আলো এখন নিজের মত করে বিভিন্ন রকম ডিজাইনের ড্রেস বানাতে পারে!ওই রুমটাতে আলো ওর মনমত কিছু ড্রেস বানিয়ে হ্যাংগারে সাজিয়েও রেখেছে! আলো একটা করে ড্রেস বানাই আর রোদ আর মেঘকে দেখায়। আলো আজকে থেকে প্রোগ্রামের জন্য ড্রেস বানানো শুরু করবে কারন এখন যে ড্রেস গুলো বানাবে সেগুলো পড়েই মডেলরা র‌্যাম্পে হাটবে। আলো খাওয়া দাওয়া ঘুম সব তুঙ্গে তুলে একমনে এখন কাজ নিয়ে পড়ে থাকে!তবে মেঘের দিকে ঠিকই খেয়াল রাখে। রোদ এখন আলোর খেয়াল রাখে!
আলো একটা মেয়ে বাচ্চার খুব সুন্দর গাউন বানালো! কালো আর খয়েরী নেটের কাপড় দিয়ে!বুকের এক সাইডে বড় বড় তিনটে গোলাপ আর গাউনের ঘের অনেক। আলোর এই গাউনটা বানাতে ৪ ঘন্টা সময় লেগেছে। আলো আর মেঘ রুমে ঢুকেছে ৩ মিঃ হয়ে গেলো। রোদ আলোর কাজের রুমে নক দিলো সাথে সাথে দরজা খুলে দিলো।রোদ খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে রুমে ঢুকে দেখে সোফাতে একটা বাচ্চা মেয়ে অনেক সুন্দর একটা গাউন পড়ে সোফাতে বসে আছে!রোদ খাবার প্লেটটা সাইডে রেখে বাচ্চা মেয়েটির দিকে তাকালো তারপর বাচ্চা মেয়েটির গাল টেনে দিয়ে বললো..!!
— এই যে মিস এ্যাঙ্জেল আপনার নাম কি?(রোদ)
–(নিঃশব্দ)
–আপনাকে তো দেখতে খুব সুন্দর লাগছে!এই আলো আমাদের যখন মেয়ে হবে এই রকম একটা গাউন বানিয়ে দিবে আমার মেয়েকে।আলো এই বাচ্চাটা কে?? কথা বলতে পারে না কি??
–হুমম পারে (আলো)
–কথা বলছে না যে!এই যে মামনি কথা বলো (রোদ)
–কি কথা বলবো দাভাই??(বাচ্চাটি)
বাচ্চাটির কথা শুনে রোদ টাসকি খেয়ে চোখ বড় বড় করে হাবলার মত হা করে তাকিয়ে আছে!আর মেঘ থুক্কু বাচ্চা মেয়েটি ঠোঁটের সাথে ঠোঁট বার বার ঝষে লিপস্টিক ঠিক করছে!আলো মুচকি হাসছে আর পেন্সিল হাজিবাজি জিনিস গুলো গুছিয়ে রাখছে।রোদ বেশকিছু সময় চুপ থেকে তারপর গগন ফাটানোর মত হাসতে শুরু করলো!রোদ হাসতে হাসতে পেট হাত রেখে ফ্লোরে বসে পড়ছে কারন মেঘকে দেখলে কেউ চিনতেই পারবেনা এটা মেঘ কারন আলো মেঘকে মেকাব করে সাথে মাথায় মেয়েদের চুলও লাগিয়ে স্টাইল করে চুলও বেঁধে দিয়েছে!এদিকে রোদের হাসি দেখে আলোও হেসে দিলো আর মেঘ কিছু বলতে পারছেনা লিপস্টিক চারপাশে লেগে যাওয়ার ভয়ে।
মেঘ সাদা ফর্সা আর গোলগাল মুখোশ্রী সাথে গুলমলু গালের সাথে চিকন ঠোঁট তার উপরে এত সুন্দর একটা গাউন আর মেয়েদের মত স্টাইল করে বাধা চুল আর হাসলে থুতনি দুইপাশে মারাত্মক সুন্দর ভাবে টোল পড়ে এজন্য ওকে একটা রাজকন্যার মত লাগছে দেখতে।রোদ হাসি থামিয়ে আলোর দিকে তাকিয়ে বললো..!!

–গাউনটা অসম্ভব সুন্দর হয়েছে একদম ইউনিক মডেল(রোদ)
–সত্যি
–হুমম

এই দুইদিনে আলো সারাদিন ওই রুমে থাকে আর মেঘ রোদকে জ্বালিয়ে রোদের জীবনটা অতিষ্ঠ করে তুলেছে!কিছুক্ষণ আগে আলো সাওয়া নিয়ে বের হয়েছে রোদ এসে আলোর চুলের টাওয়াল খুলে চুল মুছে দিচ্ছে আর আলো রোদের বুকের সাথে লেগে আছে!রোদ আলোকে ওর বুক থেকে সরিয়ে চুলগুলোকে ভালো করে মুছে চিরুনি করে হেয়ার ড্রায়ার নিয়ে চুলগুলো ড্রায় করতে লাগলো! আর মাথায় হাত রেখে ধপ করে বেডে বসে পড়লো।রোদ ড্রায়ার রেখে আলোর ধরে জিজ্ঞাসা করলো
–কি হয়েছে এভাবে বসে পড়লে কেন?
–মাথা ঘুরাচ্ছে খুব (দূর্বল গলায়)
–চলো এখন খেয়ে ঘুম দিবে তাহলেই ঠিক হয়ে যাবে। আর
বলছিলাম যে তোমার পিরিয়ডের ডেট কবে??
— মানে কি??(ভ্রু কুচকে)
–যা জানতে চাচ্ছি বলো! (শান্ত কন্ঠর)
–ভুলে গেছি কাজের চাপে
–লুকাচ্ছো নাকি সত্যি ভুলে গেছো??
–সত্যি মনে নেই
–ওকে

তিনজন দুপুরে খেয়ে ভাত ঘুম দিলো!আলো ওর কাজ করতে চেয়েছিলো কিন্তু রোদ আলোকে কাজ করতে দেয়নি জোর করে ঘুম পাড়িয়েছে কারন কয়েকদিন একনাগাড়ে কাজ করছে। আর ওর শরীরটাও ভালো না সেটা রোদও খেয়াল করছে।বিকালে ঘুম থেকে উঠে বাগানে হাটাহাটি করলো, বাগানের আগাছা পরিষ্কার করে, সব গাছে পানি দিলো। তারপর সন্ধ্যায় হালকা নাস্তা খেয়ে রোদ মেঘকে নিয়ে পড়াতে বসলো আর আলো ওর কাজে লেগে গেল।আলো ওর কাজ করছে মন দিয়ে আর রোদ মেঘকে কিছুক্ষণ পড়িয়ে মেঘকে নিয়ে বাইরে গেল দুইভাই ঘুরতে……!!! রাত ১০ টার দিকে যে যার কাজ শেষ করে হাতমুখ ধুয়ে খেয়ে শুয়ে পড়লো।

পরদিন ভোরবেলা______!!
আলো বেডে থেকে নেমে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়াতেই রোদ উপুড় হয়ে শুয়ে চোখ বন্ধ করেই বললো…!!
–ওয়ার্ড ড্রপের উপর কিট আছে সাথে নিয়ে যাও
–কিসের কিট (ভ্রু কুচকে)
–প্রেগনেন্সি কিট (আলোর দিকে তাকিয়ে)
–কিইই!
–ওরে বাবা রে বাবা আস্তে কাক ডাকা ভোরে তুমি এভাবে চিৎকুর দিচ্ছো কেন?যা বলছি ফটাফট তাই করো..!!
–আমি পারবো না! আপনি যা ভাবছেন তা না
–আমি কিছু ভাবিনি!এখন আমি আপনাকে যা বলছি তাই করবেন। একটা বাড়তি কথা বললে আপনার খবর আছে…!!
আলো কিটটা হাতে নিয়ে শব্দ করে ওয়াশরুমে দরজা আটকে দিলো!রোদ উঠে বসে ওর বুকে হাত দিলো কারন ওর হার্ট দ্রুত গতিতে লাফাচ্ছে। চোখ বন্ধ করে ওর বুকের উপর হাত রেখে মনে মনে বললো…!!
–আল্লাহ তুমি যা করো মঙ্গলের জন্য করো!রেজাল্ট যেটাই আসুক আমি খুশি মনে মেনে নিবো।
একটু পর আলো ওয়াশরুমে থেকে বের হয়ে মাথা নিচু করে রোদের সামনে এসে দাঁড়ালো! রোদ রেজাল্ট জানার জন্য অধীর আগ্রহে আলোর দিকে তাকিয়ে আছে!আলো ছলছল চোখে রোদের দিকে তাকিয়ে বললো..!!
–আমার হাত কাঁপছে! আমি পারবো না টেস্ট করতে
–ধুর বোকা মেয়ে ভয় পাচ্ছো কেন? আল্লাহ ভরসা।
–আমার একটা রিকুয়েস্ট রাখবেন প্লিজ (কেঁদে)
–কাঁদছো কেন??কি রিকুয়েস্ট বলো??(আলোর চোখ মুছে)
–আপনি আমার জন্য খুব লাকি!আমি চাই এই টেস্ট টা আপনি আপনার শুভ হাতে করুন, প্লিজ।
— হুমম
ওর পেছনে লুকানো কিটটা রোদের হাতে দিলো!রোদ আলোর মুখের দিকে তাকালো!আলো মাথা নিচু করে ইউরিন ভরা টিউবটা রোদের হাতে দিয়ে উল্টো ঘুরে মুখ ঢেকে দাড়িয়ে রইল!রোদ আলোকে ওর দিকে ঘুরিয়ে আলো কপালে আদর দিয়ে বললো..!!
–ভয় পাচ্ছো কেন??আমি আছি তো পাশে,প্লিজ কাঁদো না।
–হুম

রোদ আলোকে নিয়ে হাটু গেড়ে মেঝেতেই বসে পড়লো।সেন্টার টেবিলে কিটটা রেখে রোদ কাঁপা কাঁপা হাতে কিটের মাঝে কয়েক ফোঁটা ইউরিন দিলো।তারপর দুজন দু’জনের মুখের দিকে তাকালো। আলো কান্না করে চোখ মুখ লাল করে দিয়ে ফেললো এরি মধ্যে। আলো আর রোদ ওদের দুজনের থেকে দুজনের চোখ সরিয়ে কিটের দিকে তাকাতেই হতভম্ব হয়ে গেছে। কারন স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে দুই দাগ ভেসে উঠেছে…!আলো আর রোদ কিটের দিকেই তাকিয়ে আছে।কয়েক সেকেন্ডের জন্য ওদের ব্রেণ কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে! রোদ আচমকা আলোকে জড়িয়ে ধরাতে আলোর হুশ আসে আর সে প্রচন্ড পরিমানে কাঁপছে। রোদ কি বলবে ভাষা হারিয়ে ফেলছে।রোদ খুশিতে পাগলপ্রায় অবস্থা । রোদ আলোর পুরো মুখে টুকরো টুকরো আদর দিয়ে শক্ত করে বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়েছে।কিন্তু আলো চুপচাপ আছে কারন আলোর মাথায় অন্য কিছু ঘুরছে।আলো রোদের দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে বললো..!!
–আমি এই বাবুটা চাই না রোদ!
–ম মানে কি বলছো এসব তুমি?? (রোদ অবাক হয়ে)
–আমি এই বাবুটা চাই মানে চাই না ব্যস্।আমি মায়ের ওয়াদা ভঙ্গ করতে পারবো না। আমি চাই না! আমি চাইনা এই বাবুটা। তুমি কি শুনতে পাচ্ছা আমি সত্যি চাই না এই বাবুটা।আমি পারবো না মেঘকে কষ্ট দিতে।(উওেজিত হয়ে)
–আলো! আলো রিলেক্স! শান্ত হও প্লিজ!এটা আমাদের ভালবাসার একটা অংশ। তুমি কেন এভাবে ভাবছো??শোনো আমার কথাটা তুমি আগে শোনো। (আলোর শান্ত করতে)
–প্লিজ রোদ প্লিজ (আলো কেঁদে কেঁদে)
–আমাকে বলো কি হয়েছে??কেন চাওনা তুমি বাবুটা?বাবুটা কি দোষ করছে বলো?(রোদ)
–বাবু আসলে যদি আমার মেঘের আদর কমে যায়!আমি যদি আর মেঘকে ভালবাসতে না পারি।আমার মেঘটা যে খুব কষ্ট পাবে।আমি মাকে কথা দিয়েছি মেঘকে কষ্ট পেতে দিবো না।আমি পারবো না এই বাবুটা রাখতে!আমি মেঘের আদরের ভাগ বসাতে দিবো না..!! মেঘই আমার সন্তান আর সন্তান লাগবেনা আমাদের।
–যদি মেঘ এই বাবুটা রাখতে বলে তাহলে??তাহলেও কি মেঘকে এই কথায় বলবে??(রোদ)
–মানে??

#এলোকেশী_কন্যা২__
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_57

আমি যদি আর মেঘকে ভালবাসতে না পারি।আমার মেঘটা যে খুব কষ্ট পাবে।আমি মাকে কথা দিয়ে মেঘকে কষ্ট পেতে দিবো না।আমি পারবো না এই বাবুটা রাখতে!আমি মেঘের আদরের ভাগ বসাতে দিবো না..!! মেঘই আমার সন্তান আর সন্তান লাগবেনা আমাদের।
–যদি মেঘ এই বাবুটা রাখতে বলে তাহলে??তাহলেও কি মেঘকে এই কথায় বলবে??(রোদ)
–মানে?
–ওয়েট..
রোদ মেঘের রুমে গিয়ে মেঘকে তুলে আনে! আজকে মেঘও কেন জানি তারাতারি ঘুম থেকে উঠে শুয়ে শুয়ে গেম খেলছিলো।রোদ মেঘকে কোলে তুলে ওদের রুমে নিয়ে আসে আর দুই ভাই আলোর সামনে বসে! মেঘ আলোকে কাঁদতে দেখে চোখ বড় বড় করে রোদের দিকে তাকিয়ে থাকে। রোদ একবার আলোর দিকে তাকিয়ে মেঘের দিকে তাকালো!রোদ মুচকি হেসে মেঘকে বললো….!!
–মেঘ তুই মনে কর যে তোর বউমনির পেটে ছোট্ট একটা বাবু আছে। বেশ কিছুদিন পর আমাদের ঘর আলো করে আমাদের বাসায় আসবে। তাহলে কি তুই কষ্ট পাবি??(রোদ)
–কষ্ট কেন পাবো?আমি তো বাবুটাকে কোলে নিবো সবাইকে দেখাবো। আদর করবো, এত এত ভালবাসবো।
–কেউ যদি বাবুটাকে এখন মেরে ফেলতে চাই তাহলে তুই কি করবি??মনে কর আমিই মেরে ফেললাম তাহলে কি করবি?
–তাহলে আমি তোমার সাথে কোনদিন আর কথা বলবো না দাভাই! কেন বাবুটাকে মারবে তুমি বলো?সে তো কোন দোষ করেনি তাহলে কেন মারবে?(মেঘ)
–যদি তোর বউমনি মারতে চাই তখন??(রোদ)
–আমার বউমনি এমন কাজ করতেই পারেনা।আমি জানি আমার বউমনি বেস্ট।(আলোর গলা জড়িয়ে)
–মেঘ তুই সত্যি কষ্ট পাবি না তো??
–না দাভাই আমি একটুও কষ্ট পাবো না। বরং একটা বাবু আসলে আমার ভালো হবে বাসায় একটা খেলার সাথী তো পাবো।বাসায় একা একা ভালো লাগেনা আর আমার বন্ধুদের সবার ছোট ভাই বা বোন আছে আমার তো নেই (মন খারাপ করে)
–তোর খেলার সাথীও আসছে খুব তারাতারি (রোদ)
–সত্যি দাভাই! সে কোথায় এখন?
–তোর বউমনির পেটে(ছলছল চোখে আলোর দিকে তাকিয়ে)
–বউমনি দাভাই কি সত্যি বলছে বউমনি??বউমনি বলো না প্লিজ (খুশিতে লাফালাফি করে)
–হুম মেঘুসোনা (আলো)
–ইয়াহু!

আলো ওর উওর পেয়ে গেছে! মেঘ খুশিতে এক দৌড়ে ওর রুমে গিয়ে ওর বন্ধু ফোন দিতে গেল।আর আলো রোদের বুকে হামলে পড়ে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো।রোদ অবাক হয়ে গিয়েছিলো তখন কারন আলো মেঘকে ঠিক কতটা ভালবাসলে তাদের নিজেদের সন্তানকে ত্যাগের কথা বলতে চাইতো।আজকে রোদ আবার প্রমান পেলো ওর আম্মু বেস্ট একজন জীবন সঙ্গী খুঁজে এনে দিয়েছে। আলোর কথাগুলো শুনে রোদ প্রথমে রাগ করলেও পরে কথাগুলো ভেবে আলোর জন্য গর্ববোধ হচ্ছে। আলোর মত কতজনই বা পারে এমন করে ভাবতে…!!

সকালে ব্রেকফাস্ট করতে করতে রোদ আর মেঘ যে কি গুজুর গুজুর করছে ওরাই জানে….!আলো শুনতে গেলে দুজনেই চুপ। শিউলি (কাজের মেয়ে)কে আলো খুশির খবরটা জানালো! উনি এখানে আছেন অনেক বছর ধরে। উনি কথাটা শুনে খুব খুশি হয়েছে।আলো ব্রেকফাস্ট করে ওর কাজের রুমে চলে গেল কারন দুইদিন পর ওর জন্য সেই কাঙ্ক্ষিত দিন। আলো ওর পেটের উপর হাত রেখে বললো…!!
–আল্লাহ তোকে আমাকে কাছে পাঠিয়েছে।আল্লাহ তোকে হেফাজত করবে।
আলো সাফিনকে ফোন দিলো। তারপর ওর মত ও কাজে লেগে গেল।এর মধ্যে মেঘ বা রোদ একটু পর পর এসে আলোকে এটা ওটা খাইয়ে যাচ্ছে। রোদেরটা না খেলেও মেঘ মুখের সামনে খাবার ধরলে আলো সেটা ফিরিয়ে দিতে পারেনা। তাই বাধ্য হয়ে খেয়ে নেয় আর এইখানে এই চালটা রোদ দেয়। বার বার মেঘ আলোকে কোন না কোন খাবার দিয়েই আসে…!!
যেহেতু ঢাকাতেই অনুষ্ঠানটা হবে তাই সব ডিজাইনারদের তিনদিনের জন্য থাকার জন্য কতৃপক্ষরা সেই ব্যবস্থা করে দিয়েছে। আলো ওর সব কাজ কম্পলিট করে ফেলছে।আগে ১০ জন ডিজাইনার বেঁছে নেওয়া হবে তারপর সেখান থেকে যাচাই বাছাই করে বেস্ট ডিজাইনারকে খুঁজে নেওয়া হবে।
আলো রোদের একটা হাত ধরে চুপটি করে বসে আছে।আলো যে প্রুচুর পারিমানে কাপছে সেটা রোদ খুব ভাল করেই বুঝতে পারছে।রোদ আলো দুই গালে হাত রেখে মুখটা তুলে বললো..!!
–এভাবে কাপছো কেন তুমি?
–না মানে এমনি
–ভয় পাচ্ছো,কিসের ভয় বলো তো?আমি তো আছি তোমার পাশে তাই না।আলোমনি ভালবাসি তো খুব(চোখে চোখ রেখে)
–হুমম

সামনে জাজ রা বসে আছে!একজন ছেলে আর মেয়ে এংকারিং করছে। ছেলেটার আর মেয়েটার কথা শুনেই বোঝা যাচ্ছে এরা যথেষ্ট স্মার্ট। এর মধ্যেই
৫০ জন ডিজাইনারদের মাঝে ১০ জনকে বেছে নেওয়া হয়েছে।এর মধ্যে আলোর নাম আছে।এই ১০ জন ডিজাইনার ১৫ টা করে ড্রেস বানিয়ে নিয়ে এসেছে।এই সেই ড্রেস গুলো মডেলরা পড়ে র‌্যাম্প শো করবে!তিন জন ডিজাইনার এর ড্রেস নিয়ে মডেলরা র‌্যাম্প শো করে ফেলছে এবার আলোর ড্রেস গুলো নিয়ে র‌্যাম্প শো করার পালা!আলো গিয়ে মডেলদের ড্রেস দেখিয়ে দিলো।তারপর শুরু হলো র‌্যাম্প শো….!!
জাজ রা পোশাকের ধরণ, ডিজাইন এর উপর মার্ক করছে!পর পর ১৩ টা ড্রেস পড়ে র‌্যাম্পে হাটা শেষ করলো!এর পর হঠাৎ করে রোদকে স্টেজের উপর দেখে আলো হতভম্ব হয়ে হা করে তাকিয়ে থাকে!কারন রোদের এক্সপেশনটা ছিলো সবাইকে পাগল করার মত। রোদের পরনে আলোর তৈরী ডিজাইনার করা ব্ল্যাক কালার পান্জাবী আর আর কালো জিন্স আর ব্ল্যাক কালার সানগ্লাস ।রোদ র‌্যাম্প শো করে চলে গেল এর পর মেঘ এন্টি নিলো।মেঘেরও ডিজাইনার পান্জাবী তবে মেঘ পড়ছে হালকা আকাশি রঙ এরটা। মেঘ র‌্যাম্প শো করতে করতে পেছনে ফিরে একদিক ওদিক তাকিয়ে একটু ভাব নিয়ে চলো গেল। এর মধ্যে রোদ আবার এসে দুই ভাই একসাথে হাটলো!উফফ! দুইজনেই লেডি কিলার লুকে আছে। রোদ আর মেঘ চলে যেতেই সব মডেলগুলো এক সাথে এসে আবার হেটে গেল…..!!
রোদ আর মেঘের এই এন্ট্রি হবে আলো জানতো না কারন রোদ সাফিনকে বলে ম্যানেজ করছে।এভাবে পর পর সব ডিজাইনারদের ড্রেস দেখানো শেষ।
এবার ফলাফলের পালা…!!

৩০মিঃ পর ফলাফল দিলো যে ১০ মাঝে ৫ জনকে সিলেক্ট করছে আর এই ৫ জনই ফাইনালে যেতে পারবে।এই ৫ জনের মাঝে আল্লাহর রহমতে আলোর নাম আছে। সাফিনের স্টুডেন্টের মধ্যে আলো আর সাবা ফাইনাল পর্যন্ত এসেছে।এর মধ্যে একজন জাজ এনাউন্স করলো যে এভাবেই পরীক্ষাটা হবে একটু অন্যরকম কারন ডিজাইনরা যে অন্য কারো থেকে ড্রেস বানিয়ে এনে সেটা শো অফ করছে না এর কোন গ্যারান্টি নেই। তাই জাজদের মতে এখন এই ৫ জনকে ৩ ঘন্টা করে সময় দেওয়া হবে! আর এই সময়েই মধ্যে যে একদম ইউনিক ড্রেস বানাতে সক্ষম হবে! সেই হবে এই এখানকার ডিজাইনার গুলোর মধ্যে একজন বেস্ট ডিজাইনার..!! এই কথা শুনে সবাই বুকের ধুকপুকানি বেড়ে গেছে। আলো ছলছল চোখে রোদের দিকে তাকালো। রোদ ইশারায় বোঝালো রিল্যাক্স হয়ে কাজ করতে কারন তাড়াহুড়ো বা হাইপার হয়ে গেলে হিতে বিপরীত হয়ে যাবে। জাজ রা একটা রুম দেখিয়ে দিলো আর ওই ৫ জনকে বললো যার যা দরকার সেগুলো নিয়ে ওই রুমে চলে যেতে।

এলোকেশী কন্যা  সিজন ২ পর্ব ৫২+৫৩+৫৪

আলো গুটি গুটি রোদের কাছে আসলো রোদ আলোকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে অনেক সাপোর্ট করলো।রোদ আলোর কপালে একটা আদর দিয়ে চোখ মুছে দিলো। মেঘও আলোকে জড়িয়ে ধরে আদর করে দিলো। রোদ আর মেঘ আলোকে বেস্ট অফ লাক জানালো। আলো ওর প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে ওই রুমে যেতে যেতে রোদ আর মেঘের দিকে ঘুরে তাকালো। রোদ আর মেঘ একসাথে ফ্লাইং কিস ছুঁড়ে দিলো আলো সেটা দেখে হেসে দিলো আর মনে মনে জোর বাড়িয়ে বললো…!!
“জানি আমি পারবো! আর পারতেই হবে আমার কলিজা দুইটার জন্য হলেও আমাকে পারতেই হবে।হে আল্লাহ আমি তোমার নামে শুরু করছি। আল্লাহ তুমি আমাকে রহম করো। আমি যাতে রোদ আর মেঘের ইচ্ছে পূরণ করতে পারি..!!
তারপর আলো সেই রুমটাই চলে গেল।ওরা সেই ঢোকার সাথে সাথে স্টেজে বড় পর্দার লাইট জ্বলে উঠলো আর বাকি সব লাইট বন্ধ হয়ে গেল।আলোরা যেই রুমে গেল সেখানে কে কি করছে এই পর্দায় সেটা দেখানো হচ্ছে আর সেটা সিসি ক্যামেরার মাধ্যম।কারন ওই রুমের পুরোটাই পুরো সিসি ক্যামেরার আয়ত্বে। ওখানে কে কি করছে সেটা এখানে বসেই দেখা যাবে আর এটার কারন কেউ যাতে চুরি করতে না পারে তাই।

রোদ তো আলোকে বোঝালো বাট রোদের বুকের ধুকপুকানি বেড়ে হাই হয়ে গেছে। রোদেরও কেন জানি একটা ভয় কাজ করছে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমছে! রোদ রুমাল দিয়ে ঘামটা মুছে ফেলে চেয়ারে বসে একটা কথায় মনে মনে বললো…!
!! _______ধৈর্য্যশীল, সৎ আর পরিশ্রমীরা নিশ্চয়ই তারা তাদের কাজের সুমিষ্ট ফল পাবেই। আল্লাহ তোমার ভরসায় আছি…! কারন আল্লাহ তুমি যা কর আমাদের ভালোর জন্যই করো_____!!

এলোকেশী কন্যা  সিজন ২ শেষ পর্ব