এলোকেশী কন্যা সিজন ২ পর্ব ৪৯+৫০+৫১

এলোকেশী কন্যা সিজন ২ পর্ব ৪৯+৫০+৫১
লেখনীতে:- নূরজাহান আক্তার (আলো)

রোদ ওর চুলে হাত বুলাতে বুলাতে আবির আকাশকে নিয়ে বেরিয়ে গেলে কি একটা কাজের জন্য….!!
২ ঘন্টা পর রোদ, আবির আর আকাশ বাসায় আসলো তারপর তিনজন হাত মুখ ধুয়ে খেতে বসলো।সবাই অনেক মজা করে খেলো।তারপর আবির, আবৃতি, রিদি,আশা সবাই যে যার বাসায় চলে গেল।আলো মেঘকে আগেই খাইয়ে দিয়েছে তাই মেঘ অনেক আগেই উপরে গিয়ে ওর রুমে শুয়ে পড়ছে।মেঘের রুমের মেঝেতে রকিও শুয়ে আছে।আলো আর শিউলি মিলে ডায়নিং টেবিল গুছিয়ে নিলো,এটো প্লেট পরিষ্কার করে নিলো,রান্নাঘর পরিষ্কার করে সব কিছু ঠিকঠাক করে আলো মেঘের রুমে গেল।মেঘ গেম খেলতে খেলতে ওর বুকের উপরে ফোন রেখেই ঘুমিয়ে গেছে।আলো মেঘকে সুন্দর করে শুইয়ে দিলো, তারপর এসির পাওয়ার কমিয়ে দিয়ে মেঘের শরীরে চাদর টেনে দিলো!আর মেঘের কপালে আদর দিয়ে দিলো….!!

আজকে এশার নামাজটা আলো পড়তে পারেনি তাই আলো ওর রুমে এসে ওয়াশরুমে গিয়ে অজু করে নামাজে দাড়িয়ে গেলো।রোদ ওর রুমের বারান্দায় দাড়িয়ে দূর আকাশের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো!তারপর রোদ ওর রুমে এসে একটা বই নিয়ে আধশোয়া হয়ে শুয়ে বই পড়তে মনোযোগী হলো।এভাবে বেশ কিছুক্ষন পরেও আলো আর মেঘের সাড়া না পেয়ে রোদ উঠে মেঘের রুমে গিয়ে দেখলো মেঘ ঘুমাচ্ছে! তাই রোদ আর কিছু না বলে মেঘের কপালে আদর দিয়ে দিলো! আর মেঘের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।তারপর রোদ আলোর রুমের দিকে গেল।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

রোদ আলোর রুমে ঢুকে দেখে আলো ওর চুলের সাথে যুদ্ধ করছে!রোদ আলোর রুমের দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আলোর কান্ড দেখতে থাকলো। আলোর চুলে গিট্টু লাগছে কিভাবে কে জানে?বড় চুলে এই একটা সমস্যা! গিট্টু লাগলে সেটা ছাড়াতে গিয়ে জান ন্যাতা ন্যাতা হয়ে যায়!বড় চুলে তেল দেওয়া, শ্যাম্পু করা যে কি জ্বালা সেটা যার বড় চুলে সেই শুধু বোঝে।আলো অনেকটা সময় চেষ্টা করলো! কিন্তু শেষ পর্যন্ত অধৈর্য হয়ে চিরুনী টা বেডের উপর ছুঁড়ে মারলো!তারপর ওর গুলোকে হাত খোঁপা করে হনহন করতে করতে বারান্দায় চলে গেল।রোদ মুচকি একটা হাসি দিয়ে বেডের উপর থেকে চিরুনী নিয়ে বারান্দায় গেল!আর আলোর পেছনে দাড়িয়ে আলোর চুলের খোঁপা খুলে দিলো!আলো আড়চোখে রোদকে দেখে কিছু বললো না চুপচাপ দাড়িয়ে থাকলো।রোদ এই প্রথম আলোর চুলে হাত দিলো কেমন একটা ভালোলাগা কাজ করছে ওর মধ্যে।তবে রোদের মত প্রতিটা ছেলের মনে তাদের বউয়ের চুল নিয়ে কোন ইচ্ছে আছে কি না জানি না? তবে অনেক ছেলেই চাই তাদের বউয়ের চুল হবে দীঘল কালো কেশ।
রোদ আলোর চুল গুলো দুই ভাগ করে নিলো তারপর যত্নসহকারে আলোর চুলের জট ছুটাতে লাগলো।আলো কিছু বলছেনা চুপটি করে বাধ্য মেয়ের মত দাড়িয়ে আছে!রোদ এর আগের কোন মেয়ের শরীর ঘেষে পর্যন্ত দাঁড়ায় নি আর চুল ধরা তো দূরে থাক।!আলোর চুল বেশি বড় হওয়ার জন্য রোদও একটু হিমশিম খাচ্ছে। তারপরেও রোদ ভালবাসার সাথে অতি দায়িত্ববান হাজবেন্ডের মত আলোর চুল গুলো খুব সুন্দর করে ব্রাশ করে দিলো।রোদের মনের একটা অন্য রকম ভাল লাগার কাজ করছে! সেটা প্রকাশ করলো না। কারন রোদের মতে, সব অনুভূতির কথা মুখে বলে বউয়ের জানাতে নেই! কিছু কিছু কথা অজানা থাকাটাই শ্রেয়!রোদ মুচকি হেসে আলোকে বললো..!!

–মেয়েদের ধৈর্য যে খুব কম এটাই তার প্রমাণ
–মানে??(ভ্রু কুচকে)
–মানে এই যে নিজের চুলের জট খুলতেই তুমি অধৈর্য হয়ে! নাক ফুলিয়ে কি একটা অবস্থা করছো..!! (মুচকি হেসে)
–আপনার এমন চুল থাকলে বুঝতেন(মুখ ভেংচি দিয়ে)
তাই বুঝি!তা কি বুঝতাম শুনি??(গ্রিলের সাথে হেলান দিয়ে)
–এত বড় চুলে শ্যাম্পু করা,তেল দেওয়া, গোসল পর চুল শুকানো,চুল ভেজা থাকলে তো অল্পতেই ঠান্ডা লাগে আমার।আপনি বুঝবেন না এসব কত জ্বালা..!
–আচ্ছা !এবার থেকে আপনার সাথে আপনার চুলের দায়িত্বও আমি নিলাম কেমন..!!(মুচকি হেসে)
–মানে?
–মানে হলো এই যে, চুলে তেল দেওয়া, শ্যাম্পু করা,চুল শুকানোর ব্যবস্থা করা এসব আমি করবো এবার থেকে কেমন।তাও এমন মুখ ফুলিয়ে থাকবেন না। (পেছনে থেকে জড়িয়ে ধরে আলোর কাঁধে থুতনি রেখে)
আলো হালকা কেঁপে উঠলেও রোদকে কিছু বললো না! চাঁদনী রাত,সাথে ভালবাসার মানুষটি,বাগান থেকে ভেসে আসা বেলি আর হাসনাহেনা ফুলের সুগন্ধে চারদিকে মৌ মৌ করছে।রাতের অন্ধকারে ঢাকা শহরটা যেন আরো বেশিই সুন্দর দেখায়!মাথার উপরে জ্বলজ্বল করছে লক্ষ কোটি তারকার মেলা।এটা যেন খুব সুন্দর একটা মুহূর্তে ওদের কাছে।রোদ আলোর কানের কাছে স্লো ভয়েজে বললো…!!

–আমি যদি কিছু চাই এখন তোমাকে কাছে থেকে!তাহলে কি আমাকে সেই জিনিসটা পেতে দিবো?
–ক ক কি চাই??(কাঁপা সুরে)
-তোমাকে..??(স্লো ভয়েজে)
–কালকে পরীক্ষা আছে না আপনার.?
–না ২দিন পর পরীক্ষা আছে!আর এখন কথা কাটানোর চেষ্টা করে লাভ নেই?(মুচকি হেসে)
–কই কথা কাটালাম
–হুম বুঝলাম!কি হলো বলো??
–কি বলবো??
–আমি তোমাকে পরিপূর্ণ ভাবে এখন চাই। এতে কি তোমার আপত্তি আছে??এখনো কি বলবে তোমার সময় চাই??(আলোকে ওর দিকে ঘুরিয়ে)
–ইয়ে মানে আসলে আমি তো পালিয়ে যাচ্ছিনা তাই না।তাহলে এত তাড়া কিসের??(মাথা নিচু করে)
–তাড়া তো আমার নেই! যদি আমার তাড়া থাকতো আমাদের বিয়ের পরেও এতদিন ওয়েট করতাম না তাই না।তোমাকে আমার সাথে ফ্রি হওয়া জন্য এতটা সময় দিতাম না।আমি জানি নিজেকে কেমন করে কনট্রোল করতে হয়!তাই বলে বিয়ের পরেও কি বিবাহিত ব্যাচেলার হয়েই থাকবো?আর এটাই বা কেমন বিচার?আমি এতদিন কিছু বলিনি বাট আজকে বলছি তার কারনটা হলো তুমি??
–আমি মানে??(রোদের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে)

–মেয়েদের মনের রং পাল্টায় গিরগিটির মতো?তুমি হয়তো মনে করতে পারো?তোমাকে আমি এতদিন কাছে টেনে নেই না কেন??হাজিবাজি এসব তোমার মনে আসতেই পারে!আমিই তোমাকে তোমার সেই ভাবনার আনসার দিচ্ছি সেটা হলো…!! আমাদের তো হুট করে বিয়ে হয়ে গেছে, তুমি আমার সাথে তখন এতটা ফ্রি ছিলে না।আমি যদি তোমার কাছে যেতাম তুমি আনইজি ফিল করতে,আমি এমনটা চাইনি। জোর করলে অনেক আগেই তোমার শরীরটা পেতাম!এর সাথে আমাকে নিয়ে তোমার মনে একটা খারাপ ধারনাও সৃষ্টি হতো। তুমি আমার বিয়ে করা একমাত্র বউ! তিনটা শব্দের মাঝে তোমাকে আমি সারাজীবনে জন্য আমার করে নিয়েছি! তাই এত তাড়াহুড়ো করতো বা জোর করতে মন চাইনি..!! কিন্তু এখন…??(আলোর মুখের দিকে তাকিয়ে)
–এখন আপনি যদি চান তো আমারও আর কিছু বলার নেই!কারন আপনিও একটা পবিএ সম্পর্কের অধিকার নিয়েই আমার কাছে আসতে চাইছেন।(মাথা নিচু করে)
–মন থেকে বলছো তো?(মুচকি হেসে)
–হুমম!আমি তো বলছি আপনি আর মেঘ আমার কাছে যখন যা চাইবেন আমার সার্মথ্যের মধ্যে থাকলে আমি আপনাদের ফিরাবো না। আমি সিনেমা বা গল্পের হিরোইন মত এত ন্যাকামি করতে পারবো না।আর বড় কথা হলো আপনি আমার হাজবেন্ড। (মাথা নিচু করে)
রোদ আর কিছু বলে নি একটানে আলোকে ওর বুকের সাথে জড়িয়ে কোলে তুলে নিয়েছে।রোদ জানে আলো রোদকে খুব ভালবাসে আর সেটা রোদ খুব ভাল করেই ফিল করে।রোদকে আজকে ফিরিয়ে দেওয়া মত দুঃসাহস এখনো আলোর হয়নি! কারন আলো জানে কোন হাজবেন্ড যদি তার ওয়াইফকে কাছে টানতে চাই! আর সে ওয়াইফ যদি কোন সমস্যা ছাড়াও তার হাজবেন্ডের ডাকে সাড়া না দেয়! তাহলে ফজরের আজান হওয়া না অবধি রহমতের ফেরেশতা সেই ওয়াইফকে অভিশাপ দিতে থাকে।

তবে আলো যদি “না “শব্দটা করতো তাহলে রোদ আর কথা বাড়াতো না! রোদ আর আলো দুজনেই মনে অস্বস্তি নিয়ে কেউ কাউকে আপন করতে চাইনি।কেনই বা চাইবে কারন দুজনের মনেই তো আছে দুজনের জন্য অসীম ভালবাসা।রোদ আলোকে বেশি কিছু না বললেও আলো বুঝেছে রোদ কি চাইছে?আর হাজবেন্ড ওয়াইফের সম্পর্ক টা তো এমনই হওয়া উচিত যে মুখের কোন কথা না বললেও সেটা মুখে বলার আগেই দুজন দুজনের মনের কথা
বুঝে নিবে।আর মনের কথা বুঝে নেওয়া জন্য মনে থাকতে হবে নিঃস্বার্থ ভালবাসা!আর পবিএ ভালবাসার নিয়েই! আলো আর রোদ আজকে ওদের পবিএ সম্পর্কটা আরেক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেল।
কবুল শব্দটার মাঝে যেমন অদৃশ্য একটা টান থাকে। তেমনি পবিএ বন্ধন আবদ্ধ হয়ে দুজন দুজনকে আপন করে নেওয়ার মাঝেই অদৃশ্য এটা টানের সৃষ্টি হয়।আর এই অদৃশ্য টানের জন্যই ভালবাসার মানুষটার হাত ধরে সারাটাজীবন পার করে দেওয়া যায়।বিয়ে নামক বন্ধন মানে বিশ্বাস,ভালবাসা,চাহিদা,রাগ,অভিমান আর এইগুলো মানিয়ে নিয়েই আমাদের চলতে হয়।আর বিয়ের পর দুটো শরীর একে হওয়ার মাঝেও রয়েছে আল্লাহর রহমত। আর আমরা কখনোই আল্লাহর এই রহমতকে অস্বীকার করতে পারবো না! কারন পৃথিবীতে
নর-নারীর সৃষ্টির পরে থেকেই এই নিয়মই চলছে।

ওরা এত বিপদ আপদ পেরিয়ে এখন নিজেদের সামলে নিতে শিখেছে! আলো আর রোদ আজকে এরা ভালবেসে দুজনকে দুজনকে আপন করে নিলো…!!
পরেরদিন সকাল বেলা………!!
আজকে আবার নতুন করে ওদের জীবনে নতুন একটা সকালের আর্বিভাব হলো..!
আলো ঘুমিয়ে আছে রোদের বুকে মাথা রেখে! আর রোদ আলোর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।রোদ মুচকি মুচকি হাসছে আর মনে মনে হাজারটা বুলি আওয়াচ্ছে।রোদ আলোর কপালের আদর দিয়ে দিলো….!! আর মনে মনে বলতে থাকলো..!!
–বিয়ের পর কি আসলেই শারীরিক,মানসিক,সৌন্দর্যের বদল ঘটে?যদিও আমি এই কথাতে বিশ্বাসী ছিলাম না ! এখন কেন জানি মনে হচ্ছে কথাটা মিথ্যে নয়।কোন সাজ নেই,এলোমেলো চুল, আর গভীর নিন্দায় আচ্ছন্ন একটা মেয়েকে এতটা সুন্দর লাগার কারন কি?আসলেই আমার বউটা কি এই সুন্দরী নাকি আমাকে চোখে ওকে এত সুন্দর দেখাচ্ছে?নাকি আমার ছোয়াতে সৌন্দর্য দিগুন হয়ে গেছে।(মনে মনে কথাগুলো বলছে আর মুচকি হাসছে)

#এলোকেশী_কন্যা২__
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_50

রোদ মুচকি মুচকি হাসছে আর মনে মনে হাজারটা বুলি আওয়াচ্ছে।রোদ আলোকে কপালের আদর দিয়ে দিলো….!!
–বিয়ের পর কি আসলেই শারীরিক,মানসিক,সৌন্দর্যের বদল ঘটে।যদিও আমি এই কথাতে বিশ্বাসী না !তবুও এখন কেন জানি মনে হচ্ছে কথাটা মিথ্যে নয়।কোন সাজ নেই,এলোমেলো চুল,আর গভীর নিন্দ্রায় আচ্ছন্ন একটা মেয়েকে এতটা সুন্দর লাগার কারন কি?আসলেই আমার বউটা কি এই সুন্দরী নাকি আমাকে চোখে ওকে এত সুন্দর দেখাচ্ছে?নাকি আমার ছোয়াতে ওর সৌন্দর্য আরো দ্বিগুন হয়ে গেছে।(মনে মনে)
একটুপরে আলো পিটপিট করে চোখ খুলে দেখে রোদ ওর দিকেই তাকিয়ে আছে!আলো রোদের দিকে থেকে চোখ সরিয়ে মাথা নিচু করে ফেললো।রোদ মুচকি হেসে এক হাতের উপর ভর দিয়ে আলোর দিকে ঘুরে মুখে দুষ্টু হাসির রেখার টেনে বললো..!!
–মিসেস রোদ মেহবুব শুভ সকাল!কেমন আছেন?
–শুভ সকাল!ভালো আছি!আপনি??(মিষ্টি করে হেসে)
–আলহামদুলিল্লাহ আমিও অনেক ভাল আছি..!!
–তারপর বলুন আপনার ভুল ধারণা কাটলো কি না?
–কিসের ভুল ধারণা??(ভ্রু কুচকে)
–এই যে আপনি বিয়ের আগে যে ভুল ধারণা গুলো আপনার মনে পোষণ করে রাখতেন ফাস্ট নাইট নিয়ে!সেটাই কথায় আমি বলছি…!!(দুষ্ট হেসে)

–আমি কিছু ভাবতাম সেটা আপনি কি করে জানলেন?(অবাক হয়ে)
–জানা টা কি স্বাভাবিক নই।প্রতিটা ছেলে মেয়েই ভাবে তাই না..!!
–হুম ভাবতাম তবে আপনি আমার ধারণাটা ভুল প্রমাণিত করে দিয়েছেন??
–হা হা হা! যেমন??
–আমি জানতাম ফাস্ট নাইট মানে হ..(বলতে না দিয়ে)
— ফাস্ট নাইট মানে জোর করা,বাইট দিয়ে পুরো শরীরে দাগ করে দেওয়া , বর রা তাদের হিংস্র রুপ ধারণ করে,আর শারীরিক ভাবে খুব কষ্ট দেয় এটাই তো মনে করেছিলো তুমি তাই তো।শুধু তুমি না তোমার আমার মত সব ছেলে মেয়েরাই এমনটা ভাবে।আর এসব ভাবার কারন গল্প, মুভি,নাটক এসব দেখেই এমন ধারণা করে থাকে।আসলে রিয়েল লাইফটা তা না!যদি ভালবাসা বলে কিছু থাকে তো কেউ এমন করবে না! বউটা তো আমার তাহলে এত হিংস্র হওয়া কি আছে?তবে কোন কোন ছেলে মনে করে মেয়েদের শরীর মানেই আছড়ে,কামড়ে,কষ্ট দেওয়ার মাঝেই সুখ।তারাই হয়তো এমন করেই পৈশাচিক আনন্দ পায়!কিন্তু যাকে ভালবাসি এত কষ্ট দেই কিভাবে?শরীরে দাগ না করে কি আপন করা যায় না..??(আলোর নাক টেনে)
–সবাই যদি আপনার মত ভাবতো তাহলে অনেক ভালো হতো??
–ভালো হতো বলতে?

–আপনার মত করে যদি প্রতিটা ছেলে এমন করে ভাবতো! তাহলে বৈধ ধর্ষণ বলে কিছু থাকতো না।বিয়ের রাতে মুখ বুঝে শারীরিক কষ্ট সহ্য করতে হতো না।বিয়ের পরের দিন সকালে শরীরে কামড়ে দাগ গুলো লুকানোর জন্য কোন মেয়েকে লজ্জায় কুকড়ে থাকতে হতো না।আর আপনার মত করে কোন ছেলে যদি ভাবতো তাহলে বিয়ে রাতেই এত এত লোককে জানিয়ে লজ্জার মাথা খেয়ে নববধূকে হসপিটালে এডমিট করতে হতো।আশ্চর্য হলেও এটাই আমাদের সমাজে অহরহ ঘটে থাকে।(রোদের দিকে তাকিয়ে)
–তাই বুঝি (মুচকি হেসে)
–হুমম!তবে শরীরে দাগ নিয়ে রুম থেকে বের হওয়া আর বিয়ের রাতেই হসপিটালে এডমিট হওয়া এসব যে কতটা লজ্জার সেটা শুধু একটা মেয়েই জানে।(আলো)
–সবাই তো আর এক না তাই না!কেউ বুদ্ধি খাটিয়ে কাজ করে! আর কেউ কোন কিছু না ভেবে হুট করে যেকোন কাজ করে ফেলে।এর ফলাফল পরে তাকে ভুগতে হয়। এটা যদিও বোকামি…!! (রোদ)
–হুমম..সেই তুলনায় আমি খুব লাকি!!(মুচকি হেসে)
তারপর রোদ আর কিছু না বলে আলোর কপালে আদর দিয়ে দেয়।আলো উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে সাওয়ার নিয়ে একেবারে অজু করে বেরিয়ে আসে।আলো ওয়াশরুমে থেকে বের হয়ে দেখে রোদ উপুড় হয়ে ঘুমাচ্ছে! আলো বারান্দায় টাওয়াল মেলে রুমে আসতেই রোদ চোখ বন্ধ করেই বললো…!!

–পুরো রুমে বউ বউ গন্ধে মো মো করছে..!!
–বউ বউ গন্ধ এটা আবার কি??(ভ্রু কুচকে)
–এখন যেটা রুমে পুরো ছড়িয়ে গেছে সেটা
–জ্বি না! এটা ডাভ সাবানের গন্ধ হাদারাম(মুচকি হেসে)
–ওইটা তো আমার বউয়ের শরীর থেকেই আসছে তাই না।এজন্য এটাকে বউ বউ গন্ধ বললাম! বুঝলেন ম্যম
–হুমম!এবার উঠে ভদ্র ছেলের মত সাওয়ার নিয়ে নামাজ পড়ে নিন।
–জ্বি অবশ্যই কেন নই…!!(মুচকি হেসে)
তারপর রোদ ওয়াশরুমে চলে গেল আর আলো নামাজে দাড়িয়ে গেল।রোদ সাওয়ার নিয়ে মেঘের রুমে গেল আর মেঘকে ওর রুম থেকে টেনে তুললো।মেঘকে সাথে নিয়ে রোদ অজু করে নিলো।তারপর দুইভাই একসাথে নামাজ পড়ে নিলো….।
আলোর নামাজ পড়ে রান্না ঘরে গেল! তারপর ব্রেকফাস্ট বানানোর কাজে লেগে গেল।শিউলি আলোর ভেজা চুল গুলো মুচকি হেসে কাজে মনযোগ দিলো।রোদ আর মেঘ নিচে এসে বাগানের দিকে গেল তারপর কিছুক্ষন হাটাহাটি করে ব্রেকফাস্ট সেরে নিলো।রোদ আলোকে রান্না ঘরের কাজ তারাতারি শেষ করে ফেলতে বললো” কারন রান্না করার জন্য কিছু লোক আসবে। এর মধ্যে আরো কিছু লোক এসে বাড়িটা অনেক সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়ে চলে গেল।আলো রোদের কথা মত কাজ শেষ করে রান্নাঘর থেকে চলে গেল!সকাল ১১ঃ৩০ টা মধ্যে রোদের সব বন্ধুরা, আশে পাশের প্রতিবেশিরাও চলে আসলো।আলো আর মেঘ কিছু বুঝতে পারছেনা ওরা শুধু বসে বসে কি হচ্ছে তাই দেখছে।রোদ রিদি, আশা আর আবৃতিকে ইশারা করে বললো আলোকে উপরে নিয়ে যাওয়ার জন্য। রিদিরা আলোকে নিয়ে উপরে চলে গেল।রোদ একটু পর গিয়ে লাল আর গোল্ডেন কম্বিনেশনের একটা কাতান শাড়ি,আর হালকা কিছু গয়না দিয়ে গেল!একটু দুরে দাড়িয়ে রিদি রোদকে কিছু বলতেই রোদ রিদির মাথায় চাট্টি মেরে হাসতে হাসতে চলে গেল।রোদের কথা মত রিদিরা আলোকে সাজিয়ে দিতে শুরু করলো।

শাড়িটা আলোকে বাঙালিভাবে পড়িয়ে কোমরে একটা কোমর বন্ধনী,গলায় খুব সিম্প্যাল ডিজাইনের একটা নেকলেস,কানে দুল,সাইডে সিঁথি করে চুল খোঁপা করা আর কপালের মাঝখানে চুলের ভেতর দিয়ে কপালে টিকলি দেওয়া। দুই হাতে সোনার চুর আর হালকা মেকাব চোখে টানা কাজল আর ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক। আর আলোর চুলের খোঁপাটাতে ২১ টা গোলাপ ফুল দেওয়া! আর খোঁপার পাশে বেলি ফুলে গাজরা দেওয়া। চুল অনেক তাই খোঁপাও হয়েছে অনেক বড় এজন্য ২১টা গোলাপ লাগছে। রোদ এনেছিলো ২৫ টা গোলাপ….!! আলোর খোঁপার চুল দেখা যাচ্ছে না কারন চুল তো গোলাপে ঢাকা আর রোদ এভাবে রিদিকে সাজাতে বলছে।রিদি, আবৃতি, আশা আলোর সাজানো শেষ করে তিনজন তিনজনের দিকে তাকিয়ে আছে!ওরা কেউ কল্পনা করেনি রোদের কথা মত আলোকে সাজালে আলোকে এতটা সুন্দর দেখাবে….!!(আপনারা কেউ নজর দিয়েন না)
রোদ মেঘও রেডি হয়ে গেল!রোদ ব্লু পান্জাবী আর কালো জিন্স পড়ছে!আর মেঘের পুরো ড্রেসআপ ব্ল্যাক..!!রিদি,আশা, আবৃতি সবাই একসাথে সিঁড়ি দিয়ে নামছে।যাদের ইনভাইট করা হয়েছিলো তারা সবাই এসে গেছে।রোদ আলোর দিকে তাকাতেই দুজনের চোখাচোখি হলো।রোদ আলোর দিকে থেকে চোখ সরিয়ে নিলো! কারন উপস্থিতি এত গুলো মানুষের সামনে নিজের বউয়ের দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকাটা বেমানান।মেঘ দৌড়ে আলোর কাছে যেতে নিলে কার্পেটে বেঁধে দুম করে পড়ে গেল!আলো দ্রুত পায়ে হেটে মেঘকে তুলে মেঘের ড্রেস ঠিক করে দিলো।রোদ এগিয়ে এসে একে একে সবার সাথে আলোর পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে। আর আলো মুচকি হেসে সালাম দিয়ে সবার সাথে কথা বলছে!এর মধ্যে মেঘ আলোর হাত ধরে একটু দুরে নিয়ে গেল আর দুইটা মহিলাকে দেখিয়ে বললো..!!

–বউমনি ওইটা লাবলু কাকুর বউ(আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে)
–আঙ্গুল দিয়ে দেখিও না!উনারা পঁচা মনে করবে
–বউমনি ওরা কি লোভী তাই না??
–কেন??
–আমাদের বাসায় পোলাও এর গন্ধ পেয়ে কেমন হ্যাংলার মত চলে এসেছে।(দাঁতে কটমট করে)
–বড়দের নিয়ে এভাবে কথা বলতে নেই মেঘ সোনা!উনারা তো আমাদের বড় তাই না।
–বড় হলেও ওরা কুটনি,ডাইনি শুধু পঁচা কথা বলে।
–আবার..!!
–সরি! সরি! (এক কান ধরে)
–হুমম
রোদ এসে আলোকে নিয়ে এবার লাবলু আংকেলরা যেখানে আছে সেখানে গেল।উনারা যে রোদ আর আলোকে নিয়েই ফিসফিস করছিলেন সেটা ওদের আড়চোখে তাকানো দেখেই বোঝা যাচ্ছে। রোদ উনাদের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো….!!
–আসসালামু আলাইকুম!কেমন আছেন
আংকেল -আন্টি..??(মুচকি হেসে)
–আলহামদুলিল্লাহ আমরা ভাল আছি!তোমরা কেমন আছে??
–আলহামদুলিল্লাহ আমরাও অনেক ভাল আছি..!!
–তা রোদ তুমি বিয়ে করলে কবে? না শুনলাম আর না দেখলাম..?
–সূবর্ণপুর গিয়ে আমাদের বিয়ে হয়েছে!এখানে তো আমাদের কোন রিলেটিভ নেই। এজন্য জানানোর প্রয়োজন মনে করিনি..!!(মুচকি হেসে)

–তা মেয়ের তো দেখছি ভালোই ভাগ্য!রাজকুমার আর রাজত্ব একেবারেই পেয়ে গেছে!(আন্টি)
–হুমম !তবে আমি মনে করি আমাদের ভাগ্য ভালো যে, আমরা ওর মত মেয়েকে এই বাড়ির বউ হিসেবে পেয়েছি।এদিক থেকে আমাদের ভাগ্যও অনেক ভাল বলতে পারেন।(রোদ মুচকি হেসে)
–এই মেয়ে তোমার নাম কি?(আন্টি)
–আতকিয়া ইবনাত আলো (আলো)
–তা আন্টি আপনার বাসার রক্ষিতারা আসেনি?ওদের যে দেখতে পাচ্ছি না(রোদ আশেপাশে তাকিয়ে)
–রোদ এসব কি বলছো?আমাদের বাসার রক্ষিতা মানে কি??ভদ্র ভাবে কথা বলো..(আংকেল রেগে গিয়ে)
–আপনার দুই ছেলের বউয়ের কথা বলছি আংকেল?
–তোমার সাহস কি হয়ে আমার ছেলের বউদের রক্ষিতা বলার?(আন্টি উঠে দাড়িয়ে)
–শরীরে খুব ফুটছে কথাগুলো তাই না!আমার কলিজাতে হাত দিয়ে কথা বললে আমি চুপ থাকবো আপনারা ভাবলেন কি করে?তা এবার বলুন আপনার সাহস কি করে হয় আমার বউকে রক্ষিতা বলার!আগে নিজের ভাষা আর ব্যবহার ঠিক করুন! তারপর অন্যের দিকে আঙ্গুল তুলতে আসবেন।আপনার বাসার বউরা যদি রক্ষিতা না হয়! তাহলে আমার বাসার বউকে রক্ষিতা বলার অধিকার আপনাকে কে দিলো?বড় হয়ে যদি নিজের সন্মান নিজে ধরে রাখতে না পারেন! তো ছোট হয়ে আমরাই বা আর কি করবো?আংকেল আপনার ওয়াইফ মেঘকে জিজ্ঞাসা করছে? আলো আমার বাসার রক্ষিতা কি না?মেঘ এক বাচ্চা সে তো এই লেইম কথাটার গভীরতা বুঝতে পারেনি। আর একটা বাচ্চাকে এসব কথা বলবে কেন উনি??লাস্ট ওয়ানিং দিলাম আপনাদের সেইম ভুল করলে এখানে থাকাটা আপনাদের জন্য দুষ্কর হয়ে যাবে!এখন যদি বলেন যে হুমকি দিচ্ছি কি না তাহলে বলবো হ্যা তাই…!!আর হ্যা আলো আমার বিয়ে করা বউ! ওর দিকে আঙুল তোলার আগে এবার থেকে দশ বার ভাববেন।আর অবশ্যই দুপুরে লান্চ করে যাবেন! আর আমাদের জন্য দোয়া করে যাবেন..!!(রোদ মুচকি হেসে ঠান্ডা মাথায় বাঁশটা দিলো)
আলো রোদের দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে!রোদের মনে যে এমন কিছু ছিলো আলো কল্পনার ক করেনি!এমন হেঁসে হেঁসে যে কাউকে এত সুন্দর করে বাঁশ গিলানো যায়! সেটা রোদকে না দেখলে বোঝা যেত না!মাশাল্লাহ দুই ভাই পুরাই বারুদ।কেউ কারো কথা গিলতে পারেনা!একজন সাথে একশন নেই আর আরেজন ভেবে চিন্তে ঠান্ডা মাথায় বাঁশ দেই!এদের দুই ভাইকেই অস্কার দেওয়া উচিত।

#এলোকেশী_কন্যা২__
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_51

দুই ভাই পুরাই বারুদ!কেউ কারো থেকে কম না।মেঘ তো সাথে সাথে একশন নেই আর রোদ সে তো ঠান্ডা মাথায় বাঁশ দেয়।আর রোদ হচ্ছে ধীরে সুস্থে বাঁশ দেওয়ার টিচার।তবে মেঘ আর রোদ এই দুই ভাইকে অস্কার দেওয়া উচিত।
লাবলু আংকেলরা রোদের দেওয়া বাঁশ খেয়ে অসহায় প্রাণীর মত কিছুক্ষন থেকে উনারা পলায়ণ করতে বাধ্য হয়েছিলো!কারন এত বাঁশ খেয়ে দাড়িয়ে থাকাটাও বেমানান!তবে উনারা যাওয়ার আগে রোদ উনাদেরকে সযত্নে আটকে রেখেছিলো তারপর দুপুরের খাবার খাইয়েছে!লাবলু আংকেলরা
চুপচাপ এক জায়গায় দাড়িয়ে আছে!আর রোদ আলোকে ওর পাশে দাঁড় করিয়ে মাইক্রোফোন সবাইকে উদেশ্য করে বললো….!!
–আসসালামু আলাইকুম!আশা করি সবাই ভালো আছেন?আল্লাহর রহমতে আমি সহ আমার পরিবারের সবাইও ভালো আছি!আপনাদের মনে হয়তো প্রশ্ন জেগেছে? আমার বিয়ের কথা আপনারা তো শুনতে পাননি? তাহলে হুট করে বউ কোথায় থেকে আসলো?আসলে আমরা স্বপরিবারে আমার নানুর বাসায় গিয়েছিলাম! আর সেখানেই আমাদের বিয়ে সম্পূর্ণ করেন আমার বাবা মা! তারাই সাক্ষী থেকে আমাদের বিয়ে দিয়েছে আর ভেবেছিলেন এখানে এসে অনুষ্ঠান করে আপনাদের সবাইকে জানাবে!কিন্তু তার আগেই বাবা মায়ের সাথে ঘটে যাওয়া এই দূর্ঘটনার জন্য সবকিছু স্থগিত করা হয়েছিলো!আমি চাইলে নতুন করে লোক দেখানোর জন্য আবার বিয়ের অনুষ্ঠানটা করতে পারতাম! কিন্তু যেখানে আমার বাবা মা তাদের দোয়া দিয়ে একবার বিয়ে দিয়েছেই তাই আবার বিয়ে করে লোক দেখানোর প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করিনি!আর এই হলো আমার ওয়াইফ আতকিয়া ইবনাত আলো!আমরা আপনাদের দোয়া নিয়ে নতুন করে আমাদের পথচলা শুরু করতে চাই! এজন্য আজকে আপনাদের দোয়া নিতে আমি এখানে এটেন্ড থাকতে বলছিলাম।অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাদের সবাইকে এখানে উপস্থিত হওয়ার জন্য! আপনারা নিজের মত করে ইনজয় করুন! ধন্যবাদ….!!(মুচকি হেসে)

তারপর রোদ মাইক্রোফোন টা হাত থেকে রেখে সাইডে রেখে দিলো!আর আলোর পাশে গিয়ে দাঁড়ালো! এর মধ্যে আবির, আকাশ,রিদি,আশা সবাই এসে আলো আর রোদকে ঘিরে ধরলো!রিদি আলোর দিকে রোদকে একটা ধাক্কা দিয়ে বলে উঠলো…!!
–হুম হুম বুঝলাম! এবার আমাদের টাকাটা দাও ব্রো (রিদি)
–কিসের টাকা??(রোদ)
–কিসের টাকা মানে কি ইয়ার?তোর বউকে এত কষ্ট করে সাজিয়ে দিলাম। আর তুই কি না বলছিস কিসের টাকা??(আবৃতি চোখ বড় বড় করে)
–ঢপ মারার জায়গা পাস না তাই না!আমার বউ সুন্দরী তাই ওকে সুন্দর দেখাচ্ছে। এসব ধান্দাবাজি ছাড় (আবৃতির মাথায় চাট্টি মেরে)
–ওরে বাটপার!ঠিকাছে আমারও দেখে নিবো তোমাকে দাড়াও মনু!লাগবেনা তোর টাকা এবার তো বল আলোকে কেমন লাগছে?(আশা)
–কোন রকম চালিয়ে নেওয়ার মত(ভাব নিয়ে)
–হা হা হা!রোদ তুই পারিসও বটে (আকাশ)
রোদের কথা শুনে আলো ওর মুখটা মলিন করে দাড়িয়ে রইলো!সবাই এটা দেখে মুখ টিপে টিপে হাসছে। রোদও মুচকি হেসে দিলো!তারপর একটা সফট ড্রিংকের ক্যান এনে আলোর সামনে হাটু গেঁড়ে বসে পড়লো!আলো চোখ বড় বড় করে রোদের দিকে তাকিয়ে আছে! রোদ মুচকি হেসে বলতে শুরু করলো…!!

–ভালবাসি তো!অনেক বেশি ভালবাসি!তোমার এই সরলতা!মায়াবী মুখে মিষ্টি হাসি,সিগ্ধ মুখে সিগ্ধতাকে।আমি ভালবাসি তুমি নামক আমার ন্যাচারাল বিউটি কুইন কে!রেগুলার যেমন সাধারন রুপে তোমাকে দেখি তুমি সেই ভাবেই আমার কাছে অসাধারণ! এজন্য আলাদা দিন বা আলাদা করে সাজগোজে দরকার নেই!তুমি নামক ব্যাধিতে আমি অনেক আগেই আক্রান্ত হয়েছি! আর শেষ নিঃশ্বাস অবধি আমি এই রোগেই আক্রান্ত থাকতে চাই! (শান্ত কন্ঠে মুচকি হেসে)
আলো রোদের কথা গুলো মুগ্ধ হয়ে শুনছিলো!রোদ যথেষ্ট সুদর্শন একটা ছেলে আর সব দিকে থেকে পারফেক্ট! তারপরেও আলোর মত একটা নগন্য মেয়ে এতটা ভালবাসে। আলো মাঝে এসবই নিয়ে ভাবে কারন রোদ আলোর থেকে দশগুন ভাল মেয়েকে ডির্জাব করে!আলোর কাছে এই প্রশ্নের উওর মিলে না! রোদ ক্যানটা আলোর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে!আলো মুচকি হেসে রোদের হাত থেকে ক্যানটা নিলো! তারপর রোদের হাত ধরে টেনে দাড় করালো! রোদ ওর পকেটে থেকে একটা স্বর্ণের ব্যাচলেট বের করে আলোর হাত পড়িয়ে দিলো।
তখন আবিরা সহ সবাই করতালি আর সিটি বাজানো শুরু করলো!আলো লজ্জায় মাথা নিচু করে রোদের পাশে চুপটি করে দাড়িয়ে থাকলো!তারপর সবাই অনেক মজা করলো!খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ করে যে যার বাসায় চলে গেল!রোদ কয়েকজন লোক ডেকে সব কিছু পরিষ্কার করিয়ে নিলো।
প্রায় দেড় মাস পর…!!

রোদের পরীক্ষা যথাসময়ে শেষ হয়ে গেছে!এখন রোদ অফিস দেখাশোনা করে!অফিসের আগের রুলস গুলো বাদ দিয়ে এখন রোদ নতুন করে কিছু রুলস তৈরী করেছে!রোদ এখন সবকিছু নিজের মত করে দেখাশোনা করছে!আবির আর আকাশও রোদের অফিসে জয়েন্ট করছে!রোদ আগে স্বাধীন ভাবে চলাফেরা করতো কিন্তু এখন তো ওর উপরে অনেক দায়িত্ব এসে পড়েছে!রোদ হাফিয়ে যাচ্ছে তবু আলো আর মেঘের মুখের চেয়ে সব মেনে নেয়!কারন আলোর আর মেঘের মুখের হাসি দেখলে রোদের সব কষ্ট ভুলে যায়! কারন আলো আর মেঘই এখন রোদের ভাল থাকার চাবিকাঠি…!!
রাত ৮ঃ৩০টার দিকে রোদ বাসায় ফিরে আর ধপ করে বেডের উপর শুয়ে পড়ে!আলো আর মেঘ তখন পড়ার টেবিলে পড়ছিলো!রোদকে দেখে মেঘ ফট করে বলে উঠলো…!!
–ইয়াহু দাভাই এসে গেছে!আর পড়া হবে না(লাফিয়ে উঠে দাড়িয়ে)
–না মেঘবাবু এমন করে না!পড়া শেষ না করলে কালকে টিচার কান ধরে দাড় করিয়ে রাখবে .!!
–আমার খুধা লাগছে বউমনি!এখন উঠে পড়ি প্লিজ
–একটু আগেই তো নুডলস আর কাবাব খেলে
–আবার খুধা লাগছে!আর কেমন কেমন জানি লাগছে..!!(পেটে হাত বুলিয়ে)
–এই পড়াটা শেষ করলেই তোমার ছুটি(আলো)
–বউমনি আমার শরীর চুলকাচ্ছে
–হয়েছে থাক আর পড়তে হবে না!এখন একটার পর একটা সমস্যা হতেই থাকবে!(রোদ)
–হুমম দাভাই একদম ঠিক বলছে!প্লিজ বউমনি উঠে পড়ি..!!প্লিজ! প্লিজ
–আচ্ছা
–ধন্যবাদ বউমনি!উমমম্মা (গলা জড়িয়ে ধরে আদর দিয়ে)

মেঘ উঠে এদৌড়ে ড্রয়িং রুমে গিয়ে কার্টুন দেখতে বসে গেল!আর আলো গুটিগুটি পায়ে রোদের কাছে গিয়ে রোদের শার্টের বোতাম খুলতে শুরু করলো!তারপর সব বোতাম খুলে রোদর বুকের উপরেই শুয়ে পড়লো!রোদ অবাক হলো না কারন বিগত দেড় মাস ধরে আলো এই কাজটাই করে আসছে!রোদ মুচকি হেসে বললো…!!
–প্রতিদিন তুমি আমার ঘামে ভেজা শার্ট পরিহিত অবস্থায় আমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরো কেন??
–আমার ইচ্ছে তাই জড়িয়ে ধরি(মুচকি হেসে)
–এমন ইচ্ছে হওয়ার কারনটাই তো জানতে চাচ্ছি??
–আমার ইচ্ছে হয় তাই আমি এমন করি আপনার কি?আমি কিন্তু এবার খুব বিরক্ত হচ্ছি! কেউ যেন আমাকে এখন আর ডিস্টার্ব না করে!(নাক ফুলিয়ে)
–ওকে কুল কুল বউ!আমি আর আপনাকে ডিস্টার্ব করবো না! আপনি আপনার কাজ চালিয়ে যান(মুচকি হেসে)
–আমি আপনার এই ঘামে ভেজা শার্টে আমার পাপ্য ভালবাসা খুজি (রোদের বুকে মাথা রেখে)
–মানে??
–মানে হলো এই যে,আপনার এই ঘামে ভেজা শার্টে আমি এক টুকরো ভালবাসা খুঁজে পাই!
–তাই বলে ঘামে ভেজা শার্টে ভালবাসা??(রোদ)
—হুমম! আমাদের জন্যই তো এত কষ্ট করে শরীরের ঘাম ঝরান!আর এই ঘামের জন্য আপনার থেকে দুরে সরে থাকবো ভাবলেন কি করে?একটা কথা মনে রাখবেন কারো কারো কাছে এই ঘামে ভেজা শার্টও মূলবান বলে মনে হয়! যদিও অনেকের কাছে কথাটা লেইম মনে হইলেও এটা আমার কাছেই সঠিক মনে হয়!তবে কথাটা কে কেমন ভাবে নিবে সেটা তাদের ব্যাপার! তবে এই যুক্তিটা আমার মত বর পাগল মেয়েদের কাছে সঠিক বলেই মনে হবে বুঝলেন।(মুচকি হেসে)
আলোর কথা শুনে রোদ মুচকি হাসলো!রোদের কিছু বলার নেই কারন আলোর বলা কথা দিয়েই আলো রোদের মুখ বন্ধ করে দিয়েছে!কতটা মেয়েই বা এমন করে ভাবতে পারে?রোদও অনেক খুশি হয় বাট প্রকাশ করে না।রোদ মুচকি হেসে আলোর দিকে তাকিয়ে বললো।….!!

এলোকেশী কন্যা  সিজন ২ পর্ব ৪৬+৪৭+৪৮

–আম্মু আমাকে সেরা উপহারটাই দিয়ে গেছে!আর সেটা হলো তুমি!জানো এখন আমার মনে হয় পৃথিবীর সব চেয়ে সুখী মানুষ আমি..(আলোর কপালে আদর দিয়ে)
–তাই বুঝি
–হুমম!আচ্ছা আলো তোমার মনে হয় না তুমি নিজের পায়ে দাঁড়াবে!নিজে কিছু করে নিজের পরিচয় গড়ে তুলবে(শান্ত সুরে)
–না! আমি এভাবেই ভালো আছি।আর আমি এভাবেই অনেক সুখী (মুচকি হেসে)
–আমাকে বলো তোমার স্বপ্ন কি??কি হওয়ার ইচ্ছে তোমার?
–একটা সময় ফ্যাশান ডিজাইনার হওয়ার খুব ইচ্ছে ছিলো!বাট এখন আর এসব ভালো লাগে না।(উঠে দাঁড়িয়ে)
–আমি আছি তো তোমার পাশে! আর আমাকে সব সময় তোমার পাশে আমাকে পাবে।
–থাক না এসব

–আমি চাই মিসেস রোদ মেহবুব নাম বাদেও তুমি নিজের একটা পরিচয় গড়ে তোলো!আমি
চাই আমার বউ নিজের পায়ে দাঁড়াক! আমি তোমার পাশে আছি তো! এবার তুমি তোমার নিজের মনোবল আর ইচ্ছাশক্তি বাড়াও!আর কোন কথা না তুমি তোমার স্বপ্নপূরণ করার জন্য নিজেকে তৈরী করো।(আলোর দুই গালে হাত রেখে)
তারপর রোদ আলোর সাথে কথা বলে ওয়াশরুমে চলে গেল!আর আলোর ওর চোখের পানি মুছে নিলো!কারন রোদের মত কতজন হাজবেন্ডই বা পারে এভাবে সাপোর্ট করতে, উৎসাহ দিতে!আর কতজনই মেয়েই বা পাই এমন সাপোর্ট!আর এমনভাবে সাপোর্ট পেতেও ভাগ্য লাগে…!!

এলোকেশী কন্যা  সিজন ২ পর্ব ৫২+৫৩+৫৪

1 COMMENT

Comments are closed.