এলোকেশী কন্যা সিজন ২ পর্ব ৪৬+৪৭+৪৮

এলোকেশী কন্যা সিজন ২ পর্ব ৪৬+৪৭+৪৮
লেখনীতে:- নূরজাহান আক্তার (আলো)

৫দিন পর……!!!
রোদ আর মেঘ আগের তুলনায় নিজেদের স্বাভাবিক করে নিয়েছে।আলোকে ছাড়া এক মুহূর্তের জন্য মেঘ কোথাও যেতে চাই না।তবে আগের তুলনায় তিনজনের সম্পর্কটা অনেক মজবুত হয়েছে!রোদ এখন আলো আর মেঘকে যথেষ্ট সময় দেয় আর দুজনের আবদার গুলো রাখার ট্রাই করে……!! আলো এই কয়েকদিন রোদকে অনেক বুঝিয়েছে। আর রোদ পরীক্ষা দিতেও রাজি হয়েছে।
কালকে রোদের পরীক্ষা…..!!
রোদ ওর পড়ার টেবিলে ফোনের লাইট জালিয়ে পড়ছে আর মেঘ আর আলো বেডে ঘুমিয়ে আছে।পড়তে পড়তে রোদের চোখ গেল আলোর আর মেঘের দিকে।রোদ চেয়ার থেকে উঠে মেঘের কপালে আদর দিয়ে দিলো! তারপর রোদ আলোর কপালেও আদরে দিয়ে দিলো।রোদ ওদের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে আবার গিয়ে পড়াতে মনোযোগ দিলো।
সকাল বেলা….!!

ভোর ৫ঃ৩০ টার দিকে আলো মেঘ আর রোদ নামাজ আদায় করে নিলো।রোদ একটু ঘুমিয়ে নিলো।আলো আর মেঘ চলে গেল রান্না ঘরে!আলো ঝটপট ব্রেকফাস্ট বানিয়ে নিলো।তারপর আলো মেঘকে স্কুলে যাওয়ার জন্য রেডি করিয়ে দিলো।মেঘ রোদকে খামছি,কিল, ঘুসি,কামড় দিয়ে ঘুম থেকে টেনে হিছড়ে উঠালো! তারপর ব্রেকফাস্ট করতে নিচে নিয়ে গেল।রোদ সারারাত পড়ার জন্য ওর চোখের ঘুম ছুটছে না।মেঘকে আলো খাইয়ে দিচ্ছে আর মেঘ কুটকুট করে খাচ্ছে।মেঘ রোদের দিকে তাকিয়ে ফট করে বললো….!!
মেঘঃশুধু ঘুমালে কি হবে দাভাই??আজকে না তোমার পরীক্ষা.. (খেতে খেতে)
রোদঃ তো এখন আমাকে কি করতে হবে স্যার যদি বলে দিতেন??
মেঘঃ পড়তে বসতে হবে।আর একটা কথা শোনো…!!
রোদঃ জ্বি বলুন ..!!
মেঘঃ বানান গুলো ঠিক মত পড়বে,আর পরীক্ষার হলে গিয়ে দুষ্টুমি, লাফালাফি, ঝাপাঝাপি করবে না।এক জায়গায় চুপটি করে বসে থাকবে।কারন মাথা বেশি ঝাকাঝাকি করলে পড়া গুলো উল্টো পাল্টা হয়ে যেতে পারে বুঝলে!আর পরীক্ষার খাতা লিখা শেষ করে রিভাইজ দিবে বার বার। মনে থাকবে তো…!!
রোদঃ আমি মাঝে মাঝে কনফিউজড হয়ে যায় জানিস ভাই!
মেঘঃ কেন??কনফিউজড হয়ে যাও কেন দাভাই??
রোদঃ কনফিউজ হয়ে যায় তার কারন আমি মাঝে মাঝে ভুলে যায় তুই আমার বড় ভাই নাকি আমি তোর বড় ভাই…!!
মেঘঃ তোমাকে শাষণ করার সময় আমি তোমার বড় আর আমাকে চকলেট কিনে দেওয়া সময় তুমি আমার বড় বুঝলে (খিলখিল করে হেসে)
রোদঃ তবে রে দাড়া তোর হচ্ছে…!!

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

মেঘ উঠে দৌড় দিয়েছে!আর আলো ওদের কথা শুনে হাসছে। বেশ কয়েকদিন পর আবার ওরা নিজেদের আগের মত স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে।তারপর ওরা খাওয়ার পর্ব শেষ করে” আলো নিজে মেঘকে নিয়ে স্কুলে গেল! কারন কিছুদিন মেঘের স্কুল মিস হয়েছে! তাই একজন অভিভাবক যেতে বলছে।রোদ যেতে চলেছিলো বাট আলো রোদকে নিষেধ করে দেয়। আলো রোদকে একটু ঘুমিয়ে নিতে বলে আলো আর মেঘ চলে যায়।
রোদ ফোনে এর্লাম দিয়ে শুয়ে পড়লো।একটু রেস্ট নেওয়া দরকার।আলো মেঘকে নিয়ে ওর স্কুলে চলে গেল।আলো মেঘকে ওর ক্লাসে ঢুকিয়ে প্রিন্সিপ্যালের সাথে কথা বলে নিলো!তারপর আলো আরেকবার মেঘের ক্লাসে উঁকি মারলো!মেঘ আলোকে দেখে হাত নাড়লো। আলো মুচকি হেসে সাবধানে থাকতে বলে চলে গেল।আলো বাসায় ফিরে দেখে রোদ এখনো ঘুমাচ্ছে তাই আলো রোদ শরীরে স্পর্শ করেই আস্তে আস্তে ডাকলো কারন ঘুমন্ত মানুষকে জোরে বা আচমকা ডাকা উচিত না।আলো দুই বার ডাকতেই রোদ ঘুরে আলোর কোলে মাথা রেখে দুই হাত দিয়ে কোমর জড়িয়ে ধরলো!আলো মুচকি হেসে রোদের মাথায় হাত দিয়ে রোদের চুলে হাত বুলিয়ে দিতে থাকলো।রোদ চোখ বন্ধ করেই বললো….!!

আলোঃএই যে…
রোদঃহুমম
আলোঃউঠতে হবে না
রোদঃহুমম
আলোঃকি হুম হুম করছেন?উঠুন
রোদঃহুমমম
আলোঃ উফফ! উঠুন না (ঠেলে)
রোদঃ মেঘ সাবধানে রেখে আসলে তো??
আলোঃহুমম!এবার আপনি উঠুন
রোদঃ ইচ্ছে করছেনা উঠতে!এভাবেই থাকি না প্লিজ
আলোঃজ্বি না!আজকে আপনার পরীক্ষা আছে?উঠুন ফ্রেশ হয়ে, খেয়ে নিন।
রোদঃ খেলাম তো আর খাবো না।
আলোঃ সেটা আমি বুঝবো।আপনি আগে উঠুন….!!
রোদঃ তুমি কলেজে যাবে না।
আলোঃ না..!!
রোদঃকেন?
আলোঃ আমি আম্মুর মত সংসারী হবো তাই!আর এত পড়াশোনা করে কি হবে?
রোদঃ এই কথা যেন আর না শুনি!পড়াশোনা কন্টিনিউ করে যা ইচ্ছে করো।
আলোঃ আমি প্রতিদিন ক্লাস করতে পারবো না।
রোদঃ বাসায় পড়বে নোট আমি এনে দিবো।
আলোঃ আচ্ছা…!!

রোদ চোখ খুলে বেশকিছু সময় আলোর দিকে তাকিয়ে থাকলো।তারপর আলোর দুই গালে হাত রেখে আলোর মাথাটা নিচু করে আলোর কপালে আদর দিয়ে দিলো।আলো এর বিনিময়ে শুধু একটা মুচকি হাসি দিলো!তারপর আলো রোদকে ঠেলে ঠুলে উঠিয়ে রোদকে ফ্রেশ হতে পাঠিয়ে দিলো।রোদ একেবারে সাওয়ার নিয়ে বের হলো!রোদ টাওয়াল দিলে মাথা মুছতে মুছতে পেছনের দিকে ঘুরতেই দেখে আলো দাড়িয়ে আছে!রোদ ভ্রু কুচকে কিছু বলার আগেই আলো রোদের মুখে এক লোকমা ভাত ঢুকিয়ে দিলো!রোদ হাবলার মত হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে আলোই বলে উঠলো…..!!
আলোঃ পেট ঠান্ডা থাকলে মাথা ঠান্ডা থাকে।আর পরীক্ষা হলে মাথা ঠান্ডা রাখা অত্যন্ত জুরুরী।
রোদঃ আমি কি বাচ্চা নাকি??হাজিবাজি বোঝালেই আমি বুঝে যাবো।
আলোঃ আপনি যে বাচ্চা না সেটা তো আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম।ধন্যবাদ আমাকে মনে করিয়ে দেওয়া জন্য..!! (মুচকি হেসে)
রোদঃ তাই না! সময় আসলেই বুঝিয়ে দিবো আমি কি..??(দুষ্টু হেসে)
আলোঃ…..!!
তারপর রোদ আলোর হাতে খেতে থাকলো আর ওর দরকারী জিনিস গুলো একবার চেক করে নিলো।আলো রোদকে খাইয়ে দিয়ে সব গুছিয়ে নিচে চলে গেল!রোদ রেডি হয়ে নিলো আর হাতের ওয়াচের বেল্ট বাঁধতে বাঁধতে নিচে গেল।তারপর রোদ আলোকে বলে সামনের দিকে এগোতেই আলো রোদের হাত ধরে ফেললো…!!রোদ ঘাড় ঘুরিয়ে রোদের দিকে তাকাতেই আলো রোদের পায়ের উপরে ভর দিয়ে রোদের কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো….!রোদের ঠোঁটের কোণেও হাসির রেখা ফুটে উঠলো…!!আলো রোদের দিকে তাকিয়ে বললো…!!

আলোঃ আল্লাহ যা করে আমাদের ভালো জন্যই করে!আমাদের বর্তমান, অতীত, আর ভবিষ্যতে যা হয় সব উপর ওয়ালার মর্জিতেই হয়।আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন সব ঠিক হয়ে যাবে।সাবধানে যাবেন আর মাথা ঠান্ডা করে পরীক্ষা দিবেন! তারপর আবার সাবধানে বাসায় ফিরে আসবেন।আপনার কলিজাগুলো আপনার অপেক্ষায় থাকবে… (মুচকি হেসে)
রোদ মুচকি হেসে মাথা নাড়িয়ে চলে গেল।আলো ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো ১০:২৩বাজে!মেঘের বাসায় ফেরার সময় হয়ে তাই আলো ওর হাতের সব কাজ গুলো সেরে নিলো।একটু পর মেঘ চিৎকুর দিতে দিতে বাসায় এসে ওর জুতা গুলো দুইটা দুই দিকে ছুঁড়ে মারলো!একটা জুতা রকির মাথায় পড়ছে তাই রকি ক্যাউ ক্যাউ করে উঠলো।আলো মেঘের পাশের বসে দেখে মেঘ রাগে ফোঁস ফোঁস করছে।আলোর মেঘের শার্টের বোতাম খুলতে খুলতো জিজ্ঞাসা করলো….!!!
আলোঃ আমার মেঘবাবু এত রেগে আছে কেন শুনি??(মুচকি হেসে)
মেঘঃ আমার সাথেই বার বার এমন হয়!কেন? কেন? কেন??(রেগে)
আলোঃ কি হয়েছে?? বলো আমাকে?
মেঘঃ গোপাল ভাঁড়! পেট মুটকু স্যার আজকে কি করছে জানো?? (জোরেই কথাটা বললো)
আলোঃ কি করছে?(অবাক হয়ে)
মেঘঃ আজকে যত জন ছেলে পড়া পারে নি।মটকু স্যার মেয়েদের দিয়ে সব ছেলেদের কান মোলা খাইয়েছে।
আলোঃ এর মধ্যে কি তুমি ছিলো??
মেঘঃ হুমম ছিলাম তো!জানো আমি কত লজ্জা পেয়েছি।পিংকি কত জোরে আমার কান দুটো টেনেছে জানো বউমনি।আর একটুও জন্য আমার কান ছিঁড়ে গড়ের মাঠ হয়ে যায়নি….!!
আলোঃহুমম! এটা তো খুব জটিল ব্যাপার..(গাল হাত রেখে)
মেঘঃ আমিও কালকে পড়া করে যাবো??তারপর পিংকে দেখিয়ে দিবো যে আমার কেমন শক্তি…
আলোঃ গুড! এই না হলে আমার মেঘবাবু…!!
মেঘঃ আমিও পিংকির কান টেনে লাল করে না দিতে পারলে আমার নামও মেঘ মেহবুব না। (রেগে)
আলোঃ…..

মেঘঃ আর একটা বিচার করো তুমি বউমনি..??
আলোঃ কিসের বিচার??
মেঘঃ রাইটার আলোমনি আছে না।তুমি কি তাকে চিনো??যে এলোকেশী কন্যা২ গল্পের রাইটার…!!
আলোঃ হুমম চিনি তো!হুম ভাল মেয়ে তবে একটু দুষ্টুমি করে তাই আর কি ।আর যাকে বাঁশ দেয় তার অবস্থা টাইট করেই ছাড়ে।আর দুষ্টুমি আর বাঁশ দিতেও কিন্ত বুদ্ধি লাগে……!!
মেঘঃ হুম সেটা বুঝলাম!তবে তার রির্ডারস গুলো আমার পেছনে কেন লাগছে বলতে পারো?আর পাঠিকারা গুলো এত দুষ্টু কেন??
আলোঃ তারা তোমাকে কি করছে??আমার জানামতে সবাই তো তোমাকে কত ভালোবাসে মেঘবাবু..!!(অবাক হয়ে)
মেঘঃস্কুল থেকে আসার সময় আলোমনির সাথে আমার দেখা হয়েছিলো।তো আলোমনি আমাকে বললো যে, উনার বেশ কয়েকজন পাঠিকা নাকি ইনবক্সে উনাকে বলছে, যে তারাতারি আমার খাৎনার ব্যবস্থা করতে।আমি কি কারো ক্ষতি করছি যে এখন আমার ইয়েটা নিয়েই সবাই টানাটানি করছে।ছিঃ!ছিঃ! আমি এটা শুনে তো আমি এত এত লজ্জা পেয়েছি!আর লজ্জা পেয়ে মরতে মরতে একটুর জন্য বেঁচে গেছে….!! তুমিই বলো বউমনি এসব ডেনজার কথাবার্তা গুলো কি বলা ঠিক?
(অসহায় ভাবে তাকিয়ে)
মেঘের কথা শুনে আলো টাসকি খেয়ে কিছুক্ষণের জন্য চুপ ছিলো!তারপর হো হো করে হাসতে শুরু করলো….!!আলো হাসতে হাসতে সোফা থেকে মেঝেতে বসে গড়াগড়ি খাচ্ছে। আর আলোর এভাবে হাসি দেখে মেঘ ওর কোমরে দুই হাত রেখে ভ্রু কুচকে আলোর দিকে তাকিয়ে আছে….!!

#এলোকেশী_কন্যা২__
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_47

মেঘের কথা শুনে আলো টাসকি খেয়ে কিছুক্ষণের জন্য চুপ ছিলো!তারপর হো হো করে হাসতে শুরু করলো….!!আলো হাসতে হাসতে সোফা থেকে মেঝেতে বসে গড়াগড়ি খাচ্ছে। আর আলোর এভাবে হাসি দেখে মেঘ ওর কোমরে দুই হাত রেখে ভ্রু কুচকে আলোর দিকে তাকিয়ে আছে….!!
মেঘঃবউমনি হেসো না তো! আমার কথা শোনো..!!
আলোঃহাসবো না তো কি করবো তুমিই বলে দাও তো মেঘবাবু??(হাসতে হাসতে)
মেঘঃ জানো বউমনি আমার একটা হিসাব মিলছে না কিছুতেই…!!(চিন্তিত হয়ে)
আলোঃ কিসের হিসাব??
মেঘঃ সবাই আমার খাৎনা খাওয়ার জন্য চিৎকুর করছে!কিন্তু কথা হচ্ছে.. (গালে হাত রেখে)
আলোঃ হুমমম বলো??
মেঘঃ খাৎনা মানে তো আমার ইয়ে কেটে ফেলা।
আলোঃহুমমম..!! (মুখ টিপে হেসে)
মেঘঃতো আমার খাৎনা সবাই কেন খেতে চাচ্ছে??
তবে আসল কথা হচ্ছে আমার ইয়েটা কেটে এত জনকে ভাগ করে দিবো কি ভাবে??(আরো চিন্তিত হয়ে)
আলোঃ ওরে দুষ্টু!ফাজিল একটা! দাড়াও তোমার হিসাব মেলাচ্ছি..!!
মেঘঃ বউমনি আমি কিছু বলিনি!আমি তো হিসাব করছিলাম।(দৌড় দিয়ে)
আলোঃ বড় গাধাটার মুখ যেমন লাগাম ছাড়া! তেমনি ছোট গাধাটার মুখও লাগাম ছাড়া।এদের দুজনকে নিয়ে আমার বেহাল দশা..!!ফাজিল একটা…!!
মেঘঃ বউমনি তুমি তো জানো দাভাই দুষ্টু আর আমি তো খুব ভালো ছেলে..!! (শার্টের কলার ধরে ভাব নিয়ে)
আলোঃ তাই না..!!

আলো উঠতে উঠতে মেঘ একদৌড়ে বগার পার।আলো মেঘকে ধরতে গিয়েও পারলো না।তারপর আলো মেঘকে গোসল করিয়ে দিলো!তারপর নিজেও গোসল করে নিলো।আলো মেঘকে খাইয়ে দিতে চাচ্ছিলো কিন্তু মেঘ এখন খাবে না বলে জেদ করে। কারন স্কুল থেকে আসার পথে হাজিবাজি নাকি খেয়েছে।মেঘ ওর স্কুল ব্যাগ থেকে আচারের প্যাকেট বের করে আলোকে দিলো!আলো আচার পেয়ে মেঘের গুলুমলু গাল দুটো ইচ্ছে মত চটকে দিলো।
আলো মেঘের রুমের বেডের উপর বসে আছে আর দুইজনেই আচার খাচ্ছে। আর মেঘ আলোর কোলে মাথা রেখে আকাশের দিকে তাকিয়ে আচার খাচ্ছে আর গল্প করছে..!!
মেঘঃ বউমনি দিনের বেলাতে তারা উঠে না কেন??আব্বু আম্মুকেও দেখা যাচ্ছে তারা উঠে না এজন্য..!! (স্বাভাবিক ভাবেই)
আলোঃ মেঘবাবু আব্বু আম্মুর কথা কি খুব মনে পড়ছে সোনা??(মেঘের কপালে আদর দিয়ে)
মেঘঃ একটু একটু..!!
আলোঃতোমার বুকে হাত রেখে আব্বু আম্মুকে যা বলতে চাও সেটা মনে মনে বলো।আব্বু আম্মু তো আমাদের মাঝেই বেঁচে আছে তাই না সোনা।
মেঘঃ আচ্ছা…!! (তাই করলো)
আলোঃ এখন ভালো লাগছে তো.??(মুচকি হেসে)
মেঘঃহুমম অনেক! দাভাই কখন আসবে বউমনি??
আলোঃ ২ টার দিকে চলে আসবে।

আলো মেঘকে বলে নামাজ পড়তে বসে গেল!আর মেঘ রকির সাথে খেলতে শুরু করলো।প্রায় ২ টার দিকে রোদ বাসায় আসলো।আলোর রুমে উঁকি দিয়ে দেখলো আলো নামাজ পড়ছে আর মেঘ পাশে বসে রকির মাথা চুলকে দিচ্ছে। খেলতে খেলতে মেঘ দেখলো রোদ দরজায় দাড়িয়ে আছে তাই মেঘ রোদের কাছে গেল।রোদ মেঘকে কোলে নিয়ে আদর দিয়ে ওর রুমের দিকে হাঁটা ধরলো…!!মেঘ রোদের গলা জড়িয়ে ধরে তোতাপাখির মত কথার ঝুলি খুলে বসলো।
মেঘঃ পরীক্ষা কেমন হলো দাভাই??লিখতে পারছো তো??
রোদঃ হুমম! অনেক ভাল হয়েছে পরীক্ষা!!
মেঘঃ তাহলে ট্রিট দাও (দাঁত বের করে)
রোদঃ আমি এত কষ্ট করে পরীক্ষা দিলাম আমি তাহলে তোকে কেন ট্রিট দিবো শুনি(ভ্রু কুচকে)
মেঘঃ আমি যে বাসায় বসে থেকে তোমার জন্য দোয়ার করলাম! এজন্য তো তো ভাল পরীক্ষা দিয়েছো।(কনফিডেন্টের সাথে)
রোদঃ ওহহ তাহলে শুধু শুধু এত কষ্ট করে পড়লাম তাহলে কি করতে আমি??(কনফিউজড হয়ে)
মেঘঃ তারাতারি ট্রিট দিবে! না হলে বউমনিকে বলে দিবো তোমার পাশে একটা মেয়ে বসেছে।আর তুমি তাকে আলাভু বলছো (খিলখিল করে হেসে)
রোদঃআমাকে কেস না খাওয়ালে কি তুই শান্তি পাসনা ভাই..??
মেঘঃ সত্যি আমি শান্তি পাই না! দাড়াও বউমনিকে বলে আসি..??
রোদঃ না না দাড়া ভাই দিবো তো ট্রিট…!! এমন করিস কেন??আমি কখন বললাম আমি ট্রিট দিবো না।
মেঘঃ এই না হলে আমার দাভাই (আদর দিয়ে)

রোদ মেঘকে কোলে নিয়ে ওর রুমে গিয়ে নামিয়ে দিলো!মেঘ রোদের ফোন নিয়ে গেম খেলতে শুরু করলো।রোদ ফ্রেশ হয়ে আসলো তারপর দুইভাই অজু করে নিয়ে নামাজে দাড়িয়ে গেল।আলো নামাজ শেষ করে আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো মেঘ রুমে নেই!তাই আলো দ্রুত পায়ে নিচে নেমে মেঘকে না পেয়ে আবার দৌড়ে ছাদে গেল।ছাঁদে গিয়েও আলো রোদকে না পেয়ে বাগানে গেল,বাগানে মেঘকে না পেয়ে আলো রান্না ঘর,আম্মুর ঘর সব খুঁজতে লাগলো।আলো রকিকে ডাকতেই রকি এক দৌড়ে আলোর কাছে এসে হাজির!আলো রকির মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে জিজ্ঞাসা করলো মেঘ কোথায়? রকি আলোর ওড়নার এক পাশে কামড়ে ধরে রোদের রুমের দিকে নিয়ে গেল!রোদের রুমের সামনে গিয়ে দেখে আলো হাফ ছেড়ে বাঁচলো!দুই ভাই কি সুন্দর ভাবে নামাজ পড়ছে! অসম্ভব সুন্দর একটা দৃশ্য…!!
আলোর কাছে মনে হয় যখন রোদ আর মেঘ যখন অজু করে, পান্জাবি পড়ে, মাথায় শুভ্র চাওয়া টুপি মাথায় দেয় তখন ওদের সৌন্দর্য টা যেন আরো দ্বিগুন বেড়ে যায়।চোখের ভেজা পাঁপড়ি, মুখের সিগ্ধতায় ছুয়ে যায়।আর এটাও ওদের দুই ভাইয়ের নজর কাড়া একটা লুক..!!
তখন আলো নামাজ শুরুর আগে মেঘকে বলেছিলো যেন কোথাও না যায়!কিন্তু নামাজ শেষ করে আলো মেঘকে না পেয়ে ভয় পেয়ে গিয়েছিলো।আলো রোদের রুমের দরজাতে আর না দাঁড়িয়ে ডাইনিং টেবিলে খাবার দিতে গেল!আলো ওর ভেজা চুল গুলো হাত খোঁপা করে নিলো!খাবারের চুল যাতে না পড়ে তাই….!!রোদ আর মেঘ বকবক করতে করতে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামছে!রোদের কোলে মেঘ..!! আলো দুজনকে খেতে বসতে বললো।আলো ওদের খাবার বেড়ে দিলো..!!আলো মেঘের প্লেট হাতে নিয়ে মেঘকে খাওয়াতে শুরু করলো!রকিও মেঝেতে শুয়ে শুয়ে আরামসে ডগ ফুড খাচ্ছে!মেঘ রোদের দিকে তাকিয়ে বললো..!
মেঘঃ দাভাই আমাদের পাশের বিল্ডিংয়ের লাবলু কাকুর বউ আমাকে জিজ্ঞাসা করলো যে,আমাদের বাসায় যে মেয়েটা থাকে সে কে??

রোদঃ তুমি কি বললে??
মেঘঃ আমি কিছু বলার আগেই উনি বললো যে,
রোদঃ কি বললো উনি?
মেঘঃ আমি কিছু বলার আগে উনি বললো, মেঘ তোমার বাসায় যে থাকে সে তোমাদের বাসার রক্ষিতা নাকি..!!একথা বলেই দাঁত বের করে হাসতে শুরু করে দিলো!আমি তো কিছুই বুঝতে পারলাম না দাভাই!আমিও একটু হেসে বাসায় চলে আসলাম।আচ্ছা দাভাই রক্ষিতা মানে কি??? (খেতে খেতে)
মেঘের কথা শুনে আলো আর রোদ স্তব্ধ হয়ে গেছে।এখন কিভাবে বলবে যে এই রক্ষিতা শব্দের মানেটা কত জঘন্য!মেঘ ছোট্ট একটা বাচ্চা তাই এত কঠিন শব্দের মানে বুঝতে পারেনি!রোদ আলোর দিকে তাকাতেই দেখে আলোর চোখের কোণের পানি!পবিএ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েও যদি এই কথা শুনতে হয় তাহলো কষ্ট পাবারই কথা!কিন্তু আলো ওর মুখে হাসির রেখা টেনে মেঘকে বলে উঠলো…!!
আলোঃমেঘবাবু রক্ষিতা মানে দুষ্টু মেয়ে!
মেঘঃ কিহহ্ তারমানে তোমাকে দুষ্টু মেয়ে বলছে ওই মহিলা?? উনার এত বড় সাহস(ফট করে উঠে দাড়িয়ে)
আলোঃ উনি জানেনা তাই হয়তো বলছে।
মেঘঃ দাঁড়াও আমি আসছি…!!

মেঘ দৌড়ে বের হয়ে গেল!আলো আর রোদ এত ডাকলো কিন্তু মেঘ শুনলো না।তারপর ওই মহিলার বাসায় সামনে গিয়ে উনাদের জানালা বরাবর একটা ঢিল ছুঁড়ে মারলো!দুইবারের বেলাতে ঢিল না লাগলেও তিন বারের বেলাতে ঝনঝন শব্দের উনার থাইয়ের গ্লাস ভেঙ্গে গেল।আর মেঘ ওখান থেকে এক দৌড়ে আবার বাসায় ঢুকে গেল।মেঘ বাসায় আসার সময় ওই মহিলার কর্কশ কন্ঠের চিৎকার ঠিকই শুনতে পেয়েছে।এতেই মেঘ গলা ফাটিয়ে গান গাইতে গাইতে বাসায় ঢুকে আবার ভদ্র বাচ্চার মত খেতে বসে গেল।আলো মেঘের মুখে খাবার দিয়ে বললো….!!
আলোঃ এটা কি না করলে হতো না মেঘবাবু??
মেঘঃ যে তোমাকে নিয়ে পঁচা কথা বলবে তাকেই আমি শাস্তি দিবো।
রোদঃ হুটহাট করে সব কাজ করে ফেলাটা বোকামি!এজন্য পরে আফসোস করতে হয়।
মেঘঃ এখন করলাম তো কেবল একটা! দরকার হলে আবার করবো (খিলখিল করে হেঁসে)
আলোঃ আপনি খাচ্ছেন না কেন??(কথা কাটানোর জন্য রোদের দিকে তাকিয়ে)
রোদঃ নিজে হাতে খেতে আমার ইচ্ছে করছে না।
আলোঃ তাহলে স্পুন দিয়ে খান..!!
রোদঃ তাও ইচ্ছে করছে না
মেঘঃ বউমনি দাভাই মনে হয়ে তোমার হাতে খাবে তাই বসে আছে হ্যাংলার মত
রোদঃতুই হ্যাংলা! আমার বউয়ের হাতে খাচ্ছিস আবার আমাকেই হ্যাংলা বলছিস(মেঘের কান টেনে)
মেঘঃ আহহ্ বউমনি
আলোঃ ওর কান ধরছেন কেন আপনি?ছাড়ুন
রোদঃতোমার চ্যালা কেন আমাকে হ্যাংলা বলছে শুনি..??
আলোঃ হয়েছে এবার দুইজনেই থামুন

তারপর আলো একসাথে রোদ, মেঘের সাথে নিজেও খেতে শুরু করলো।আলো ওদের খাইয়ে দিচ্ছে আর ওরা দুজনে ঝগড়া করছে!আলো মাঝে মাঝে ওদের কথা শুনে খিলখিল করে হাসছে।রোদের সাথে পাল্লা দিয়ে খেতে গিয়ে মেঘ বেশি করে খেয়ে ফেলছে! তাই দাঁড়াতে পারছেনা।আর মেঘের কান্ড দেখে রোদ হাসছে আর বলছে…!!
মেঘঃ উহ্! উহ্ মা আমার পেট ফেটে যাবে নাকি!বউমনি আমাকে ছেড়ো না প্লিজ..!! উরি বাবা…!!
আলোঃ আরে কিছু হবে না। একটু হাটাহাটি করো ঠিক হয়ে যাবে তো।(মেঘকে ধরে)
রোদঃ খা আরো বেশি খা।নাক, মুখ চুবিয়ে খা।আলো এই হ্যাংলাটাকে আরেক প্লেট ভাত খাইয়ে দাও।আর আমি দোয়া করি মেঘ তোর পেট ফেটে চৌচির হয়ে যাক।মেঘ তোকে দেখতে কুমড়ো পটাশের মত লাগছে…….!!(হাসতে হাসতে)
রোদ মেঘকে এইসব বলে রাগিয়ে দিচ্ছে!আর মেঘ রেগে ফোঁস ফোঁস করছে! আলো দাড়িয়ে দাড়িয়ে দুই ভাইয়ের কাহিনী দেখছে! চলতে থাকলো ওদের দুই ভাইয়ের খুনশুটি ভালবাসা।তারপর তিনজন কিছুসময় হাটাহাটি করে ঘুমাতে গেল।রোদ, মাঝখানে মেঘ আর এক সাইডে আলো!মেঘ ওর এক পা তুলে দিলো আলোর গায়ের উপর আর এক পা দিলো রোদের পেটের উপর…!!আর ওভাবে থাকতে থাকতে তিনজনেই ঘুমের দেশে পাড়ি দিলো…!!

বিকাল সাড়ে ৪ঃ৩০ টার দিকে তিনজন ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে নিলো!তারপর বাগানে কিছুসময় হাটাহাটি করলো!বিকাল বেলা রোদ আলো মেঘ তিনজন মিলে ওদের বাগানে গাছগুলোতে পানি দিলো, আগাছা সাফ করলো।রোদ আর আলো বাগানে পেতে রাখা চেয়ারে বসলো।রোদ চেয়ার থেকে হুট করে উঠে আলোর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে আলোর দুই হাতের হাত রেখে বেশকিছু সময় আলোর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলো বাট কিছু বললো না।আলো এখনো সেই সাহস হয়নি রোদের চোখে চোখ রেখে কথা বলার তাই আলো রোদের দিকে একবার তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো।তবে আলো এই এবার রোদের চোখ তাকাতেই আলো বুঝে গেছে এই চোখের ভাষা কারন এই চোখের ছাউনি বলে দিচ্ছে মুখে না বলা নিঃস্বার্থ কিছু ভালবাসার কথা।এই চোখের ভাষায় বলে দিচ্ছে…”আমি তোমার পাশে আছি সারাজীবন থাকবো”❤❤
রোদ কিছু বললো না বাট আবার চেয়ারে বসে পড়লো।তারপর একটু পরেই মাগরিবের আযান দিলো তাই ওরা বাসায় গিয়ে নামাজ আদায় করে নিলো।তারপর রাত প্রায় ৮ টার দিকে আবির,আকাশ,রিদি আর আশা রোদের বাসায় আসলো।সবাই এক সাথে ছাদে গিয়ে মাদুর পেতে আড্ডা দিতে শুরু করলো!

#এলোকেশী_কন্যা২__
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_48

বিকাল সাড়ে ৪ঃ৩০ টার দিকে তিনজন ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে নিলো!তারপর বাগানে কিছুসময় হাটাহাটি করলো!রোদ আলো মেঘ তিনজন মিলে ওদের বাগানের গাছগুলোতে পানি দিলো, আগাছা সাফ করলো।মেঘ তো বাগানে রকির সাথে দৌড়াদৌড়ি করছে।
রোদ আর আলো বাগানে পেতে রাখা চেয়ারে বসলো।রোদ চেয়ার থেকে হুট করে উঠে আলোর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে! আর আলোর দুই হাতের হাত রেখে বেশকিছু সময় আলোর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলো! বাট কিছু বললো না।আলো এখনো সেই সাহস হয়নি রোদের চোখে চোখ রেখে কথা বলার তাই আলো রোদের দিকে একবার তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো।তবে আলো একবার রোদের চোখের দিকে তাকাতেই বুঝে গেছে রোদের এই চোখের ভাষা! কারন এই চোখের ভাষা বলে দিচ্ছে মুখে না বলা নিঃস্বার্থ কিছু ভালবাসার কথা।রোদের এই চোখের দৃষ্টিও এটাই বলে দিচ্ছে যে…”আমি তোমার পাশে আছি আর থাকবোও সারাজীবন ” ❤❤
রোদ কিছু বললো না বাট আবার চেয়ারে বসে পড়লো।তারপর একটু পরেই মাগরিবের আযান দিলো তাই ওরা বাসায় গিয়ে নামাজ আদায় করে নিলো।তারপর রাত প্রায় ৮ টার দিকে আবির,আকাশ,রিদি আর আশা রোদের বাসায় আসলো।সবাই এক সাথে ছাদে গিয়ে মাদুর পেতে আড্ডা দিতে শুরু করলো!আড্ডার মাঝখানে আলো কখন নিচে চলে গেছে কেউ খেয়াল করে নি!আলো আর শিউলি মিলে সবার জন্য কফি,পকোড়া,চিপ্স, আর মিষ্টি রেডি করে নিলো।আলো এই মধ্যেই রাতের খাবারের আয়োজনও করে ফেললো!আলো শিউলিকে নিয়ে ছাঁদে গেল সবাইকে নাস্তা গুলো দিলো…!!শিউলি চলে আসতে নিলে আলো শিউলি হাত ধরে বসিয়ে দিলো….!!

শিউলিঃ ভাবিমনি আমি নিচে যাই পিলিগ
আলোঃপিলিগ না কথাটা হবে প্লিজ!আর প্লিজ বললে হবে না! নিচে গিয়ে একা একা তুমি কি করবে শিউলি আন্টি।এখানে সবাই আছে তুমিও এখানে আড্ডা দাও ভালো লাগবে।
শিউলিঃ তোমরা আড্ডা দাও আমি নিচে যাইগা।
রোদঃ নিচে তো কেউ নেই.??
শিউলিঃআসলে হইলো গিয়া রোদ বাবা এহন শ্রীময়ী হইবো আমি যাইয়া শ্রীময়ী দেখি তোমরা আড্ডা দাও কেমন।
আলোঃ ওহহ এবার বুঝেছি। হা হা আচ্ছা তুমি যাও..
শিউলিঃ থানকুশ
মেঘঃ ওয়েলকুশ
সবাইঃহা হা হা
সবাই আড্ডা দিচ্ছে আর হাসাহাসি করছে!এর মধ্যে আলো বলে উঠলো…!!
আলোঃ আপনাদের কারোর সাথেই আমার তেমন কথা হয়নি। আপনারা তো সেইম ইয়ারের তাই না(মুচকি হেসে)
আবিরঃ হুমম আমরা একই গোয়ালেরই গরু
রিদিঃ বল তোরা বলদ (হেসে)
আকাশঃ এই রিদি একদম ফাউল কথা বলবি না।
আশাঃ রিদি শুধু ফাউল কথা বলছিস কেন বলতো?ওরা তো বলদ না ওরা তো বুইড়া ষাড়।(দাঁত বের করে)
আবিরঃসব ফাউল কথা!আমার হলাম এখনো কচি বাচ্চা বুঝলি! তাই আমাদের এসব বলবি না।
আকাশঃ রোদ বিয়ে করেছে তাই রোদই শুধু ওর সতীত্ব হারিয়েছে।এছাড়া আমি আর আবির হলাম পিওর সিঙ্গেল
রিদিঃ ছেলে মানুষের সতীত্ব থাকে বুঝি ( চোখ বড় বড় করে)

আকাশের আর রিদির কথা শুনে আলো অবাক হয়ে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।আর অবাক হওয়ার কারন এদের কথার এমন শ্রী দেখে।এর মধ্যে কফি খেতে খেতে রোদ ভীষম খেয়েছে! কারন বেচারা বিয়ের পর বউকে তেমনভাবে টার্চও করতে পারেনি এখনো,আর সে নাকি…….!! আলো উঠে রোদের পিঠে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে শুরু করলো।একটু পর রোদের কাশি থামলো! আলো রোদের পাশেই দাড়িয়ে থাকলো কারন রোদ রেলিংয়ের উপরেই বসে ছিলো।আলো রোদের পেটের কাছের টি শার্ট খামছে ধরে আছে।এটা যদিও কেউ এখনো খেয়াল করে নি।রোদ আলোর মুখে দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞাসা করলো কি হয়েছে???
আলোঃ হারাতে হারাতে আমি বড্ড বেশি ক্লান্ত।আপনিএখান থেকে সরে বসুন! আর না হলে আমাকে এভাবে ধরে থাকতে দিন।
আবিরঃ রোদ নিচে এসে বস ভাই! এভাবে বলার মানুষ পেতেও ভাগ্য লাগে??
রোদঃ হুমম….(মুচকি হেসে নিচে বসে পড়লো)
আকাশঃ তারপর রোদ আমরা চাচ্চু হবো কবে??
রোদঃ খুব তারাতারি (দুষ্টু হেসে)
আলোঃ আমি নিচে যাচ্ছি! (দৌড় দিয়ে)
আশাঃ আরে আলো যেও না!দিলি তো মেয়েটাকে লজ্জা পাইয়ে।তোরা আসলেই মানুষ হবি না।
আবিরঃযা বাব্বা!এখানে লজ্জার কি আছে শুনি?আমার জব টা হয়ে যাক তারপর দেখিস, আবৃতিতে তুলে নিয়ে বিয়ে করবো। আর এক রাতেই তোদের আন্টি আংকেল করে দিবো। (ভাব নিয়ে)
আশাঃ আবৃতি এই কথা জানলে তোকে পুঁতে ফেলবে
আবিরঃ এই তোরা জানিস রবি কি করছে??
আবিরঃ ওই বাইনচো* এর কথা আর বলিস না তো বাল।শালা এক সপ্তাহ আগে ৩ হাজার টাকা ধার নিয়ে এখনো ফেরত দেয়নি…..!!
মেঘঃ যেতে যেতে পথে পূর্নিমা রাতে
চাঁদ উঠে ছিলো গগনে!
শালা,বাইনচো* চাঁদ উঠে ছিলো গগনে।

কেউ এতক্ষণ খেয়াল করেনি এখনো এখানে মেঘ বসে আছে!মেঘ রোদের ফোনে গেম খেলছে আর গান বলছে!আর মেঘের গান শুনেই সবাই ওর দিকে তাকায়!আবির আর আকাশ করুন দৃষ্টিতে রোদের দিকে তাকিয়ে আছে!রোদ আবির আর আকাশকে বলে দিয়েছে রোদের বাসায় আসলে যাতে গালি দিয়ে কথা না বলে! কিন্তু আবিরের মুখ স্লিপ করে গেছে।আর বাচ্চাদের ভাল কোন কথা শিখাতে বসলে দেখবেন কাল ঘাম ছুটে যাবো কিন্তু ভাল কথাটা শিখাতে পারবেন না।বাট ওদের সামনে একটা গালি দেখবেন ফট করে ওরা ওটাই মুখস্থ করে নিবে।রোদ কৌশলে মেঘকে নিচে পাঠিয়ে দিলো।কারন এখন মেঘকে বকাবকি করলে ওটাই ও আরো বেশি করে বলবে।তাই রোদ মেঘকে পরে বুঝিয়ে বলবে ….!!মেঘ নিচে যেতেই রোদ সবার উদেশ্যে বললো……!!
রোদঃ আজকে রাতে সবাই ডিনার করে যাবি।আর কালকে দুপুরের আমার বাসায় তোদের লাঞ্চের দাওয়াত রইলো!কাল সকাল সকাল আমাদের সব ফেন্ডস রা উপস্থিত থাকবি কেমন।আর আরেকটা কথা….!!
আবিরঃ কি কথা..??আর হঠাৎ দাওয়াত কেন??
রোদঃ কারন আছে!আর রোদ মেহবুব কারন ছাড়া কিছু করেনা।আমি তোদের কিছু কথা বলছি তোরা কথাগুলো সিম্প্যাল ভাবেই নিস প্লিজ…!!
আকাশঃ বলতো তুই আগে..??

রোদঃ আমার পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর আমাকে আমাদের বিজনেসের হাল ধরতে হবে।তোরাও পরীক্ষা শেষ করে হয়তো জব খুঁজবি! তাই বলছি তোরা চাইলো আমার অফিসে জয়েন্ট হতে পারিস।কারন আমার নিজের অফিস থাকতে তোরা কেন অন্যের অফিসে জব করবি ।আর এখন তোরা ছাড়া আমারই বা কে আছে বল!তোরা ভাবিস না আমি আমার স্বার্থের জন্য তোদের এসব বলছি! তাহলে বলবো এটা তোদের ভুল ধারনা হবে ।কারন আমি তো জানি এখনকার যুগে একটা জব খুঁজে পেতে কতটা কষ্ট করতে হয়!আর আবির এই জবটা করলে আবৃতির বাসাতে গিয়ে মাথা উঁচু করেই বলতে পারবি যে, তুই আবৃতির দায়িত্ব নেওয়া মত সার্মথ্য এখন তোর আছে।আমি অনেক ভেবেই কথাগুলো বলছি….!!
আবিরঃহুমমম! আমাদের এতটা বিশ্বাস করা জন্য ধন্যবাদ! এভাবেই বা কতজন পারে বন্ধুর কথা ভাবতে!আর আমরা একসাথে কাজ করলে ইনশাআল্লাহ বিজনেসটাকে আরো ভালো একটা পজিশনে নিয়ে যেতে পারবো।
রোদঃ হুমম!এজন্য তোদের বললাম।তোরা সময় নিয়ে ভেবে আমাকে জানাস।
তারপর রোদ,আকাশ আর আবির আশা রিদিসহ সবাই নিচে গিয়ে!সবাই আলোর সাথে গল্পও জুড়ে দিলো।সবাই ড্রয়িং রুমে বসে আড্ডা দিতে শুরু করলো!আকাশ ফট করে বললো…!!
আকাশঃ আলো তোমাকে ভাবি ডাকবো নাকি নাম ধরে ডাকবো?
আলোঃভাইয়া আপনারা আমাকে নাম ধরে ডাকবেন আর ভাবি বলে আমাকে পর করে দিবেন না। আমিও ভাইয়া ডেকে আমার ভাইয়ের আসনে বসাতে চাই।বন্ধুর বউ না আপনারা আমাকে বোন মত নাম ধরে ডাকলেই আমি খুব খুশি হবে (রান্নাঘর থেকে মুচকি হেসে)

এলোকেশী কন্যা  সিজন ২ পর্ব ৪৩+৪৪+৪৫

আবিরঃ আমাদের বোন হলে ভুল করলেই পিটুনি দিবো! তখন রাগ করা যাবে না।
আলোঃ আমি এটাই তো চাই..!!
আকাশঃ সত্যি তো
আলোঃ একদম
আবিরঃ তা কি রান্না হচ্ছে শুনি??
আলোঃ বিরিয়ানী
রোদঃ আমার বউয়ের রান্না খেয়ে দেখিস সারাজীবন হাত চাটতেই থাকবি (পেছন থেকে আলোর গলা জড়িয়ে ধরে)
রিদিঃ তাহলে তো খেতেই হয়!
আবিরঃ ঘ্রাণেই বোঝা যাচ্ছে রান্না দারুন হবে
রোদঃহুমম!দেখতে হবে না বউ কার..কোয়ালিটি আছে ব্রো (দুষ্টু হেসে)
আলো রোদের থেকে ছাড়া পাওয়া জন্য রোদের হাত সরানোর চেষ্টা করছে। আর রোদ দুষ্টু হেসে আলোকে জাপটে ধরে আছে।আলো বিরবির করে বললো…!!
আলোঃ এসব কি হচ্ছে?? ভাইয়ারা সামনে আছে উনারা কি ভাববে??
রোদঃ গাইজ্ তোরা কি কিছু ভাবছিস আমি এমন ভাবে আছি তাই (দুষ্টু হেসে)
আবিরঃ একদমই না!ক্যারি অন ব্রো। (ওদের মত আবার গল্প জুড়ে দিয়ে)
রোদঃ দেখলে তো ওরা কিছু ভাবছে না।
আলোঃআপনি হুট করে ভদ্র থেকে অভদ্রের রুপ ধারণ করলেন কেন শুনি??(দাঁতে দাঁত চেপে বিরবির করে)
রোদঃ তুমিই তো আমাকে স্বাভাবিক হতে বলছো।আর স্বাভাবিক হতে গেলে আমার অত্যাচার তো তোমাকে সহ্য করতেই হবে বউ। (দুষ্টু হেসে)

আলোঃ আপনি ভদ্র রুপে ফিরে আসুন প্লিজ! আমি আপনার এমন রুপ মানতে পারছিনা।(করুন সুরে)
রোদঃ কেবল তো শুরু সোনাপাখি!আজকে না আমি অনেক কিছু নিয়েই ভাবলাম আর এর সঠিক উওরটাও আমি এখন পেয়ে গেছি।আজকে থেকে রোদ অন্য রুপে রুপান্তরিত হবে! শুধু আলো আর মেঘ নামক আমার ভাল থাকার পার্সওয়াডদের জন্য। এবার আমিও ভাল থাকতে চাই। থাকবেনা তুমি আমার পাশে…!!(মায়াবী দৃষ্টিতে)
আলোঃ আমি আছি আপনার পাশে! ভালো, মন্দ সব মুহূর্তেই আপনি আমাকে আপনার পাশে পাবেন কথা দিলাম।(মুচকি হেসে)
রোদঃ সত্যি তো
আলোঃহুমম
রোদঃ তাহলে তুমি প্রস্তুত হও!নিজেকে পরিপূর্ণ করার জন্য। (দুষ্টু হেসে)
আলোঃ মানে
রোদঃমানে কিছু না..!!কালকে জন্য নিজেকে রেডি থেকো। (দুষ্টু হেসে)
আলো রোদের এত এই হাফ কথার মানে বুঝতে না পেরে চুপ থাকলো।রোদ রান্না ঘর থেকে বের হয়ে ড্রায়নিং টেবিল থেকে জগ নিয়ে রান্না ঘরের এসে মুখে পানির ঝাপটা দিলো।তারপর আলোর ওড়নার এক কোনায় মুখ মুখে নিলো!রোদ এত জোরে মুখে পানি ঝাপটা দিয়েছে যে সামনে চুল গুলোও হালকা ভিজে গেছে।রোদ আলোর ওড়না দিয়ে চুলগুলোও হালকা করে মুছে নিলো।তারপর রোদ ওর চুলে হাত বুলাতে বুলাতে আবির আকাশকে নিয়ে বেরিয়ে গেলে কি একটা কাজের জন্য….!!

এলোকেশী কন্যা  সিজন ২ পর্ব ৪৯+৫০+৫১