এলোকেশী কন্যা সিজন ২ পর্ব ৪৩+৪৪+৪৫

এলোকেশী কন্যা সিজন ২ পর্ব ৪৩+৪৪+৪৫
লেখনীতে:- নূরজাহান আক্তার (আলো)

রোদ আবার সেই পাহাড়ে কাছে আসে আর দেখে ওদের গাড়ির কোন চিহ্ন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না।গাড়িটা পাহাড় থেকে একদম পাহাড়ের নিচে পড়ছে!রোদ ধপ করে মাটিতে বসে পড়লো!রোদ মেঘ দুইজনেই আহাজারি করে কাঁদতে শুরু করলো!আলো কাকে সামলাবে রোদকে নাকি মেঘকে নাকি নিজেকে…!!
আলো মেঘকে জড়িয়ে ধরে আছে আর মেঘ হাউমাউ করে কাঁদছে! মেঘ বুঝে গেছে ওর আম্মু আর কোনদিন ফিরে আসবে না।রোদ মাটি থেকে উঠে স্থানীয় লোক জন পুলিশ সবার কাছে ছুটে গেল যদি পাহাড়ের নিচে গিয়ে একবার দেখা যেত।কিন্তু পুলিশ জানালো এই পাহাড়ে নিচে দিয়ে নাকি একটা নদী বয়ে গেছে। রোদ অনেক চেষ্টা করলো বাট আর কোন উপায় পাওয়া গেল না।রোদ আবার সেই জায়গাতে এসে স্তব্ধ হয়ে বসে পড়লো।

রোদঃ আম্মু তুমি আমাদের একা ফেলে এভাবে যেতে পারো না!আম্মু আব্বু প্লিজ তোমরা ফিরে এসো।আমাদের এভাবে এতিম করে দিও না।প্লিজ তোমারা ফিরে এসো (মাথা নিচু করে কেঁদে )
এর মধ্যে আলো মেঘ বলে চিৎকার করে উঠলো..!!আলোর চিৎকার শুনে রোদ দৌড়ে আলোর কাছে গিয়ে দেখলো মেঘ অতিরিক্ত কান্না কারনে সেন্স হারিয়ে ফেলছে!রোদ দৌড় গিয়ে গাড়ি থেকে পানির বোতল এনে মেঘের মুখে পানি ছিটিয়ে দিলো…!!
রোদ বার বার মেঘকে ডাকছে কিন্তু মেঘ কোন সাড়া দিচ্ছে না!রোদ মেঘকে কোলে নিয়ে গাড়িতে বসলো। আলো মেঘকে কোলে নিয়ে আছে রোদ ড্রাইভ করছে আর রোদের পাশে ড্রাইভার বসে আছে!রোদ রামগড়ে একটা হসপিটালে মেঘকে নিয়ে গেল। তারপর ডাক্তার মেঘকে চেকআপ করে বললো অতিরিক্ত কান্না আর ভয়ের জন্য এমন হয়েছে…!!আর ছোট একটা বাচ্চা এত চাপ নিতে পারেনি তাই সেন্স হারিয়েছে।
এদিকে রোদের পাগল হওয়ার উপক্রম একদিকে বাবা মা আরেক দিকে মেঘ। রোদ মেঘের কেবিনের মেঝেতে বসে হাটু গেড়ে বসে কাঁদতে শুরু করলো..!!

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

রোদঃ আব্বু আম্মু আমাদের একা ফেলে যেও না তোমরা প্লিজ! আমরা পারবো না তোমাদের ছাড়া থাকতে আম্মু! আম্মু আব্বু তোমরা এতটা নিষ্ঠুর হয়ে চলে যেতে পারো না। আম্মু! আম্মু গো আমি মেঘকে কি উওর দিবো আম্মু! আমি মেঘের কাছে কি করে বলবো তোমাদের আমরা চিরতরের জন্য হারিয়ে ফেলছি! এত কঠিন পরিস্থিতিতে আমাদের ফেলে তোমরা চলে যেও না ফাঁকি দিয়ে।আমি তোমাদের মত করে কিছু সামলাতে পারবো না আম্মু।এত কষ্ট দিও না তোমরা আমাদের…!! (কেঁদে কেঁদে)
আলো রোদের কান্না দেখে রোদের কাঁধে গিয়ে হাত রাখে!রোদ ওর কাঁধে কারো স্পর্শ পেয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে আলো!রোদ আলোকে দেখে রোদ মাথা নিচু করে ফেলে আর কাঁদতে থাকে।বাবা মা হারানোর কষ্টটা ভুলে রোদ যে কি করে নিজেকে কিভাবে সামলাবে সেটাই বুঝে উঠতে পারছেনা।আলো রোদকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে রোদের চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে..!!
আলোঃ আপনি এমন করলে মেঘকে সামলাবো কি করে?আপনি প্লিজ শান্ত হন।(কেঁদে কেঁদে)
এর মধ্যে মেঘ পিটপিট করে চোখ খুলে!আলো মেঘকে তাকাতে দেখে দৌড়ে মেঘের কাছে গেল!রোদও ওর চোখ মুখ মুছে মেঘের কাছে গেল।মেঘ রোদকে দেখে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে। রোদ মেঘকে জড়িয়ে ধরে আর বলে…!!

রোদঃ আমি আছি তো সোনা!কাদবি না তুই (বুকের জড়িয়ে ধরে)
মেঘঃ আমি আম্মুর কাছে যাবো দাভাই!আমি আর দুষ্টুমি করবো না! আম্মুর সব কথা কথা শুনবো তুমি আম্মুকে তারাতারি চলে আসতে বলো দাভাই!আমার কষ্ট হচ্ছে দাভাই তুমি আম্মু কে বলে দাও (কেঁদে কেঁদে)
রোদঃ হুমম বলবো তো!তুই যদি কাদিস তাহলে আম্মু আর আসবে না।তুই কাঁদিস না ভাই আমার। (রোদ ওর চোখের পানি মুছে)
রোদ আর কোন উপায় না পেয়ে বাসায় ফিরে গেল!আলো আর মেঘকে বাসায় রেখে তারপর কোন উপায় বের করবে!মেঘ কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত হয়ে আলোর কোলেই ঘুমিয়ে গেল!আলো সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে আর চোখের কোণা বেয়ে অঝোরে পানি পড়তে আছে..!!আলো চোখ বন্ধ করে মনে মনে বলছে!
আলোঃ অভাগীদের কপালে যা থাকেনা সেটা জোর করে পাওয়া যায় না।নিজের বাবা মায়ের ভালবাসা পায়নি কোনদিন!এখানে এসে বাবা মায়ের ভালবাসা একটু পেয়েছি আল্লাহ তুমি সেটাও কেড়ে নিলো।আমাকে এত অভাগী কেন বানালে অাল্লাহ!আমার কপালে কেন সুখ সহ্য হয় না!কেন এত বিপদ আসে আমার জীবনে?আমি কেন সবার মত একটু সুখে থাকতে পারিনা!আর কত বার আমাকে আমার আপনজন হারানো কষ্ট সহ্য করতে হবে আল্লাহ! আর
আমি এই নিষ্পাপ বাচ্চাটাকে এখন সামলাবো কি করে?এ কেমন নিষ্ঠুর তোমার লীলা অাল্লাহ।এমন কঠিন পরিস্থিতিতে আমাদের কেন ফেললে আল্লাহ??(কেঁদে কেঁদে)

রোদের মনে হচ্ছে এখনই যদি ওর নিঃশ্বাসটাও এখানে থমকে যেত তাহলে ভালো হতো!রোদ ড্রাইভার আংকেলকে উনার বাসার কাছে নামিয়ে দিয়ে রোদ ওদের বাসায় চলে গেল।রোদ গাড়ি থেকে নেমে মেঘকে কোলে নিয়ে বাসায় ঢুকে একটা রুমে শুইয়ে দিলো!তারপর ড্রয়িং রুমে এসে আকাশ, আবির, কে ফোন দিয়ে ইমিডিয়েট ওর বাসায় আসতে বললো।আবির আর আকাশ একসাথে ছিলো তাই তারাতারি চলে আসে!রোদের মুখে সব শুনে ওরাও অবাক হয়ে যায়!আর কিছু বলার ভাষা হারিয়ে গেছে ওদের!তারপর তিন জন মিলে যে যার মত করে চেষ্টা চালাতে থাকে যাতে রোদ ওর বাবা মায়ের মৃত দেহটা যেন অত্যন্ত পায়।রোদ, আবির, আকাশ অনেক চেষ্টা করেও কোন আশার আলো খুঁজে পেল না।রোদের করা সব আশায় এক নিমেষই শেষ হয়ে গেল।এখন বাসাটা একদম স্তব্ধ হয়ে গেছে..!!
আবিরের বড় ভাই পুলিশের বড় কর্মকর্তা সে ড্রাইভারকে সন্দেহ করে এবং ড্রাইভারকে অনেক জিজ্ঞাসাবাদ করে!কিন্তু ড্রাইভারের কোন দোষ নেই সে সব সত্যি কথায় বলছে! এবং আবিরের বড় ভাই রামগড়ের স্থানীয় মানুষের কাছে খোঁজ নিয়েও জানতে পারে যে হ্যা সত্যি এক্সিডেন্ট হয়েছে!আলো, রোদ, মেঘ এদের কাছে এই বাসাটাই আজকে সকাল অবধি সুখের রাজ্য ছিলো!কিন্তু এখন এই বাসাটাই এখন কেমন থমকে গেছে চারদিকে শূন্যতা বিরাজ করছে।আস্তে আস্তে সবাই জেনে যায় যে রোদের বাবা মা মারা গেছে..!!দূরে কাছের সব আত্মীয় স্বজনরা রোদের বাসাতেও চলে আসে…!!
আকাশ, আবির,আশা, রিদি সব বন্ধুরা মিলে রোদের রুমে যায়! আর গিয়ে দেখে রোদ মেঝেতে বসে বেডের সাথে হেলান দিয়ে মাথা নিচু করে বসে আছে!আবির গিয়ে রোদের কাঁধে হাত রাখতেই রোদ ওর চোখের পানি মুছে নিলো।আবির রোদকে উদেশ্য করে বললো…!!
আবিরঃ আমার জানা নেই ভাই এখন তোকে কি বলবো!রোদ নিজেকে সামলানোর চেষ্টা কর!তুই এমন করলে মেঘের কি হবে?(কেঁদে কেদে)

রিদিঃ রোদ ভাই আমার এত ভেঙ্গে পড়িস না।পৃথিবীতে কেউ চিরদিনের জন্য বেঁচে থাকো না।কেউ আগে যায় আর কেউ পরে যায়।এটাই যে সৃষ্টিকর্তার নিয়ম। কারো বাবা মা বেঁচে থাকবে না চিরদিন…!! (কেঁদে কেঁদে)
রোদঃ সেদিন আসার সময় যদি জানতাম যে , ওইটাই হবে আমার জন্য শেষ বারের মত আমার আব্বু আম্মুকে জড়িয়ে ধরা!আর সুযোগ পাবো না আমি তাদের জড়িয়ে ধরার! তাহলে বিশ্বাস কর তোরা আমি তাদের আমার বুকে থেকে কখনোই ছাড়তামই না।আমিই মনে হয় পৃথিবীর সব থেকে অভাগা সন্তান রে! যে শেষ বারের মত বাবা মায়ের মুখটা দেখারও সুযোগ পেলো না। (আবিরকে জড়িয়ে ধরে)
আশাঃ একটা অসহায় মেয়ে যার সব দায়িত্ব আন্টি তোকে দিয়ে গেছে!তুই নিজেকে শক্ত কর রোদ!তোকে শক্ত হতে হবে!আন্টি আংকেলের মত তোকে ওদের সামলে রাখার (ছলছল চোখে তাকিয়ে)
আবিরঃ আমরা সবাই তোর পাশে আছি ভাই!তুই ভেঙ্গে পড়িস না।তোকে ভেঙ্গে পড়তে দেখতে আলো আর মেঘকে সামলানো যাবেনা!
আকাশঃ আন্টি আংকেল তোর কাছে তাদের সবচেয়ে প্রিয় মানুষগুলোকে আমানত হিসেবে রেখে গেছে!তুই যদি শক্ত না হস তাহলে তাদেরকে কি করে দেখে রাখবি বলতো।আলো আর মেঘের কথা ভেবে নিজেকে শক্ত কর ভাই!তুই ছাড়া ওরা যে একেবারেই নিঃস্ব।
রিদিঃ মেঘ আলো তোমরা এদিকে এসো!ওখানে দাড়িয়ে আছো কেন??(দরজার দিকে তাকিয়ে)

রোদ ছলছল চোখে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে আলো আর মেঘ কেঁদে কেঁদে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে!রোদ ওদের দিকে তাকাতেই দুজনই একসাথে রোদের বুকে ঝাপিয়ে পড়ে!উপস্থিত সবাই ওদের তিনজনের কান্না দেখে ওরাও হাউমাউ করে কেঁদে দেয়।আলো আর মেঘ শব্দ করে হাউমাউ করে কাঁদছে আর রোদ ওদের বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে চোখের পানি ফেলছে…..!!
আবির আর আকাশ বাসায় কুরআন পড়ানো,আর দোয়া করানোর ব্যবস্তা করে!এতিম বাচ্চাদের বাসায় এনে ওদের দিয়ে দোয়া করানো হয়! যাতে রোদের বাবা মায়ের আত্মা শান্তি পায়!তারপর দোয়া পড়ানো শেষ হতেই পরিপূর্ন বাসাটা একে একে শূন্য হতে থাকে!আবির আর আকাশ মিলে রোদকে জোর করে একফোটা পানিও খাওয়াতে পারেনি……!!
রাত ১২ টার দিকে রোদের সব বন্ধুরাও চলে যায়।শুধু রোদ, আলো আর মেঘ থেকে যায় নিশব্দ এই প্রানহীন বাসায়……!!

#এলোকেশী_কন্যা২__
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_44

মেঘ চুপটি করে আলোর কোলে বসে আছে!আলো মেঘকে কিছু খাওয়ানো চেষ্টা করছে কিনতু মেঘ খাচ্ছে না।রোদ এসে মেঘের কপালে আদর দিয়ে মেঘের মুখের খাবার তুলে দেয়!মেঘ মাথা নিচু করে আছে ঠিকই কিন্তু মেঘের গাল বেয়ে বেয়ে পানি পড়ছে!আলো মেঘের কপালে আদর দিয়ে মেঘের গালে দুই হাত রেখে কান্না করতে করতে বললো…!!
আলোঃ খেয়ে নাও মেঘবাবু??সোনা আর কান্না করো না.!!(ছলছল চোখে তাকিয়ে)
মেঘঃ……
আলোঃ তুমি যদি না খাও তাহলে কিন্তু আমিও মারা যাবো!আমি ওই আকাশে তারা হয়ে যাবো…!! তখন তুমি থেকো একা একা! (অন্য দিকে ঘুরে বসে)

মেঘঃ তাহলে আমিই মরে যাবো বউমনি!আম্মু আর আব্বু আমাকে রেখে চলে গেছে।তুমি আর দাভাই আমাকে ছেড়ে কোথাও যেও না বউমনি।আমি তোমার সব কথা শুনবো তাও আমাকে রেখে চলে যাওয়া কথা বলো না বউমনি (জোরে কেঁদে কেঁদে)
আলো মেঘের চোখ মুছে দেয়!রোদ মেঘকে খাইয়ে দিতে থাকে!মেঘকে খাওয়াতে খাওয়াতে রোদ আলোর দিকেও খাবার ধরে কারন আলোও আজকে সারাদিন কিছু খায়নি। আলো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে রোদের হাত থেকে খাবার মুখে তুলে নেয়!আলো আর মেঘ কাঁদছে আর খাচ্ছে! রোদ বার বার ওর অবাধ্য চোখের পানি আড়াল করে ফেলছে।আলো আর মেঘ দুইজনেই প্লেট থেকে খাবার নিয়ে রোদের সামনে ধরে। রোদ একবার মেঘের আর একবার আলোর দিকে তাকিয়ে রোদ না করতে পারেনা।তাই রোদও খাবার মুখে তুলে নেয়…!!কারো গলা দিয়েই খাবার নামছে না কিন্তু কেউ কারো ভালবাসা ফিরাতে পারছেনা তাই তিনজন কোন রকম খেয়ে নিলো।এটাকে বলে ভালবাসা! এটাকেই বলে ভালো থাকা আর এটাকে বলে সুখ।ভালথাকা মানে শুধু সুখটাকেই বোঝায় না!
কষ্টের মাঝেও সুখ লুকিয়ে থাকে শুধু খুঁজে নেওয়া জানতে হয়।

রোদ মেঘকে বেডে শুইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয়!তারপর রোদ উঠতে গেলে আলো রোদকে ইশারায় উঠতে নিষেধ করে! আলো রোদের মাথার পাশে বসে আর রোদের মাথায় মুভ লাগিয়ে দেয়!আলো ঠিকই বুঝে নিয়েছে যে রোদের প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করছে! কারন রোদ কিছুক্ষণ আগেও ওর নিজের মাথা চেপে ধরে বসে ছিলো।আলো রোদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে! রোদ চোখ বন্ধ করে আছে ঠিকই কিন্তু চোখের পানি পড়া বন্ধ হয়নি।কারন রোদের আম্মুও এইভাবে রোদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছিলো।আলো রোদের চোখের পানি মুছে দেয়….!!রোদ ওর চোখ বন্ধ করে থাকতে থাকতে একটা সময় ঘুমিয়ে পড়ে।আলো রোদ আর মেঘের দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে মনে মনে বলতে থাকে….!!

আলোঃ আম্মু আমি হয়তো তোমার মত এত সুন্দর করে সংসারটা সামলাতে পারবো না!তবে আমি এখন থেকে চেষ্টা করবো তোমার মত হওয়ার!তোমরা এভাবে আমাদের ফাঁকি দিয়ে না গেলেও পারতে!আম্মু তোমার বলা প্রতিটা কথাটা আমি মেনে চলবো!তোমার এই দুই রাজপুত্রকে ভাল রাখার জন্য আমার যা যা করতে হবে আমি করবো!আমি শেষ নিঃশ্বাস অবধি এই দুজনকে আগলে রাখবো! আমি আমার নিজের ছেলের মত করেই মেঘকে দেখে রাখবো আম্মু!আমাকে তোমার দেওয়া এই আমানত গুলোর আমি কোনদিনও খেয়ানত হতে দিবো না আম্মু।আজকে দিনটা আমাদের তিনজনের জীবনের মোড় একেবারেই ঘুরিয়ে দিলো!কালকে থেকে আমিও নতুন আলো হয়ে নিজেকে তৈরী করবো! যে আলোর কাছে রোদ আর মেঘকে ঘিরেই হবে তার পৃথিবী।আমি সবার দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিবো আমি প্রমান করো দিবো! সব বউমনিরা খারাপ না!রক্তের সম্পর্কের থেকে বড় হলো আত্মার সম্পর্ক।আম্মু আব্বু তোমরা যেখানেই থাকো আমাদের জন্য দোয়া করো। আমি যেন মেঘের বেস্ট বউমনি হয়ে থাকতে পারি!আজকে থেকে আমার একটাই লড়াই হবে ! আর সেটা হলো মেঘের বউমনির হয়েও মেঘকে মায়ের মত আগলে রাখার লড়াই……!!(বেডের সাথে হেলান দিয়ে)
আলো এমন কিছু কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে!আমাদের জীবনটা বড়ই অদ্ভুত নিয়মে চলতে পছন্দ করে!যখনই সুখের রেখা দেখা দিবে!তখনই আমাদের জীবনে এমন কিছু ঘটে যে জীবনের রং টাই পাল্টে যায়।রোদ আলো আর মেঘের জীবনেও ঠিকই এমনটাই হলো।একটা অনাকাঙ্ক্ষিত বিপদ এসে ওদের তিনজনের সাজানো গুছানো সুখে মোড়ানো জীবনডাকে কিছু মুহূর্তেই জন্য থমকে দিলো।আর এটাই হয়তো সৃষ্টিকর্তার অদ্ভুত লীলা!
পরেরদিন সকালবেলা…..!!

ফজরের আজান শুনে আলো ঘুম থেকে উঠে!তারপর রোদ আর মেঘকেও ঘুম থেকে টেনে তোলে!আলো রোদ আর মেঘকে নামাজের জন্য মসজিদে যেতে বলে! আলোর কথা মত দুই ভাই বেড থেকে নেমে পড়ে!রোদের দেখে দেখে মেঘও অযু করে নিলো!তারপর দুই ভাই পান্জাবী পড়ে মাথায় টুপি পড়ে বের হতেই আলোর মেঘের হাত ধরে ফেলে!রোদ মেঘের হাত ধরে ছিলো!মেঘ থেমে যাওয়ার জন্য রোদও থেমে যায়।আলো মুচকি হেসে মেঘের সামনে বসে পড়ে আর মেঘকে বলে….!!
আলোঃ মেঘবাবু আমি এখন তোমাকে কিছু কথা বলবো! আর তুমি আমার কথাগুলো মন দিয়ে শুনবে কেমন…!! (মেঘের গালে হাত রেখে)
মেঘঃ কি কথা বউমনি..??(নিষ্পাপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে )
আলোঃ মেঘ সোনা তুমি তো মসজিদ যাচ্ছো নামাজ পড়তে তাই না !তো ওখানে সবাই যেমন ভাবে নামাজ পড়বে! তুমিও তাদের দেখে দেখে তেমন ভাবেই নামাজ পড়বে ! নামাজে অমনোযোগী হবে না! আর মন খারাপ করে নামাজ পড়বে না।আমাদের আব্বু আম্মু তো ওই দুর আকাশের তারা হয়ে গেছে তাদের জন্য মন থেকে দোয়া করবে!মোনাজাতে কাঁদবে আর আল্লাহকে বলবে! যাতে আমাদের আব্বু আম্মু অনেক ভালো থাকে!আমরা সন্তানরা যদি তাদের জন্য দোয়া করি আল্লাহ আমাদের দোয়া কবুল করবে।আর যখন নামাজ পড়বে তখন সব সময় মনে করবে স্বয়ং আল্লাহ তোমার সামনে উপস্থিত। তাই অমনোযোগী হয়ে নামাজ পড়ে না কেমন! আর মন থেকে আব্বু আম্মুর জন্য দোয়া করবে সোনা…!!ইনশাল্লাহ তখন দেখবে আল্লাহ তোমার দোয়াই আগে কবুল করবে..!! (মেঘের কপালে আদর দিয়ে)

মেঘঃ বউমনি তোমার জন্য কি দোয়া করবো?
আলোঃ মেঘবাবু আমার জন্য তোমার মনে যে দোয়া আসে! তুমি সেই দোয়াই করবে….(মুচকি হেসে)
মেঘঃ তাহলে আমি আল্লাহকে বলবো! আমার এক আম্মু তো ওই আকাশের তারা হয়ে গেছে! আমার বউমনির মত আম্মুকে যাতে আল্লাহ ওই আকাশের তারা করে না দেয়!আমার এক আব্বু ওই আকাশের তারা হয়ে গেছে! আমার দাভাই রুপী আব্বুকে যেন কোনদিন আমার থেকে দুরে সরিয়ে না দেয়।এবার তোমাদের কিছু হলে আমি মরেই যাবো বউমনি..!! (ছলছল চোখে তাকিয়ে)
আলোঃ ছিঃ!এসব বলতে নেই সোনা।তুমি তো আমাদের প্রান তোমাকে ছেড়ে আমরা কোথাও যাবো না..!! (চোখ মুছে দিয়ে)
রোদঃ………(রোদ ওর চোখের পানি অন্য দিকে
তাকিয়ে মুছে নিলো!রোদের কিছু বলার ভাষা নেই)
আলোঃ যাও আজানের ডাকে সাড়া দিয়ে এসো…!!আর আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে এসো।
মেঘঃ আচ্ছা (আলোর গালে আদর দিয়ে)
আলোঃদুইজনেই সাবধানে যেও..!! (মুচকি হেসে)
রোদঃহুমম..!
মেঘঃ আচ্ছা বউমনি..!!

তারপর রোদ আর মেঘ দুইভাই এক সাথে নামাজ আদায় করতে গেল!আলোও অযু করে নামাজে বসে গেল। মেঘ মসজিদে গিয়ে সবার দেখে দেখেই নামাজ পড়েছে!আলোর কথামত মেঘ মন থেকে সবার জন্য দোয়া করছে!মেঘ শব্দহীন ভাবে কেঁদে কেঁদে মোনাজাত করেছে!নামাজ পড়া শেষ তাই সবাই এখন চলে যাওয়ার জন্য উঠে দাড়িয়েছে!মেঘ একদিন ওদিক তাকিয়ে কি যেন দেখলো আর ইমাম যেখানে বসে আছে সেই দিকটাই মেঘ এগিয়ে গেল!সবাই একে একে বের হচ্ছে বাইরে যাওয়ার জন্য ! রোদ পাশে তাকিয়ে দেখে মেঘ নাই! তাই রোদ মেঘকে খুঁজতে থাকে!মেঘ ইমামের কাছে বসলো! মেঘকে দেখে ইমাম মুচকি হেসে মেঘকে উনার কোলে বসিয়ে নিলো! আর মেঘের নাম জিজ্ঞাসা করলো।একটু ভিড় কমতেই রোদ দেখে মেঘ ইমামের কোলে বসে তাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো।ইমাম বললো…!!
ইমামঃ বাবু তোমার নাম কি?(মুচকি হেসে!মেঘের টুপি ঠিক করে দিয়ে)
মেঘঃ আমার নাম মেঘ মেহবুব! আর ওই যে দাড়িয়ে আছে ওইটা আমার দাভাই। আমার দাভাইয়ের নাম রোদ মেহবুব।আর বাসায় আমার বউমনি আছে আর আমার বউমনির নাম আলো মেহবুব..!!(একনাগাড়ে গড়গড় করে বলে দিলো)
ইমামঃ মাশাল্লাহ্ খুব সুন্দর নাম!আমার মনে হচ্ছে তুমি আমাকে কিছু বলতে চাও। তুমি আমাকে যা বলতে চাও র্নিভয়ে বলো….!!(মুচকি হেসে)

মেঘঃ আমি আজকে দুপুরেও এখানে নামাজ পড়তে আসবো।
ইমামঃমাশাআল্লাহ শুনে খুব ভালো লাগলো!বাবু তুমি অবশ্যই আসবে!এই মসজিদ আল্লাহর ঘর! আর এটা সবার জন্য উন্মুক্ত। (মেঘের দিকে তাকিয়ে)
মেঘঃ আমি যখন দুপুরে নামাজ পড়তে আসবো! তখন তুমি আমার আব্বু আর আম্মুর জন্য একটু দোয়া করে দিবে।(মাথা নিচু করে)
ইমামঃ তোমার আব্বু আম্মু কি অসুস্থ??
মেঘঃ না!আমার আব্বু আম্মু কালকে দুপুরে ওই দুর আকাশের তারা হয়ে গেছে! তাই বউমনি বলছে, আমরা সবাই যদি আব্বু আম্মুর দোয়া করি তাহলে আমার আব্বু আম্মু ভালো থাকবে আল্লাহর কাছে।তাই তোমাকে বলছি একটু দোয়া করে দিতে!আমি দোয়া করলে একজন হলাম কিন্তু তুমি দোয়া করলে এখানে যারা যারা থাকবে সবাই দোয়া করবে! তাই তোমাকে বলছি। প্লিজ আমার আব্বু আম্মুর জন্য দোয়া করে দাও…!!(ছলছল চোখে তাকিয়ে)
ইমাম অবাক হয়ে গেছে মেঘের কথা বলার বাচন ভঙ্গি দেখে!এতটুকু একটা বাচ্চা কি সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলে।রোদ মেঘের কথা শুনে ছলছল চোখে মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে!তারপর মেঘ ইমামের সাথে কথা বলা শেষ করে রোদের কাছে যায়!
রোদ মেঘকে ওর কোলে নিয়ে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে রাখে!এখন আলো আর মেঘই হলো রোদের ভাল থাকার চাবিকাঠি ।মেঘ নামাজ পড়ার সময় এটা খেয়াল করছে ইমাম যা যা করছে! ওখানে উপস্থিত সবাই ঠিক সেইরকম করেই নামাজ পড়ছে!তাই মেঘের ছোট্ট মাথা এই বুদ্ধি এসেছে যে ইমাম দোয়া করলেই সবাই ওর বাবা মায়ের জন্য দোয়া করবে।তাই তখন মেঘ ইমামের সাথে বলতে যায়।

ইমাম এসে রোদের সাথেও কথা বলে আর জানতে পারে ওদের বাবা মায়ের এই অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর ঘটনা।ইমাম রোদ আর মেঘের মাথায় হাত রেখে দোয়া করে দেয় যাতে আল্লাহর রহমত এদের উপর বর্ষিত হয় আর এরা যাতে নিজের সামলে নিতে পারে।ইমাম রোদ আর মেঘের মাথায় হাত রেখে দোয়া করে দিলো তাই দেখে মেঘ বললো..!!
মেঘঃ আমাকে একটু তোমার দোয়া দাও তো আংকেল! আমার বাসায় আমার বউমনি আছে।আমার বউমনি তো তোমার দোয়া পেলো না।
মেঘের কথা শুনে ইমাম দোয়া করে হাত মুঠো করে মেঘের বামপাশের বুকে হাত বুলিয়ে দিলো!আর ইমাম মেঘকে বললো বাসায় গিয়ে এখান থেকে দোয়া নিয়ে আলোর মাথা হাত বুলিয়ে দিতে!ইমামের কথা শুনে মেঘ খুশি হলো।তারপর রোদ আর মেঘ মসজিদ থেকে বের হয়!মেঘ রোদের হাত ধরে হাঁটছে…!! মেঘ রোদের দিকে তাকিয়ে বললো..!!
মেঘঃ দাভাই নামাজ পড়লে শান্তি শান্তি লাগে তাই না!নামাজ পড়ে আমার এখন অনেক ভালো লাগছে…!!(বুকে হাত রেখে)
রোদঃ হুমমম!নামাজের মাঝেই শান্তি আছে।এজন্য যতই মন খারাপ, বিপদ,যাই হোক নামাজ পড়লে শান্তি লাগে।(মুচকি হেসে)
মেঘঃ দাভাই…!!
রোদঃ হুমমম

মেঘঃ বউমনিকে আমি তুমি কেউ আর কষ্ট দিবো না।আম্মুর কথা শুনতাম না তাই আম্মু চলে গেছে।আমি বউমনিকে হারাতে পারবো না!তাই এবার থেকে আমি বউমনির সব কথা শুনবো..!!(মাথা নিচু করে)
রোদঃ তোর বউমনিকে তুই খুব ভালবাসিস তাই না..!!(শান্ত কন্ঠে)
মেঘঃ হুমম!আমি তোমাকেও খুব ভালবাসি দাভাই
রোদঃ আমিও তোকে খুব ভালবাসি ভাই!তুই তো আমার কলিজা মেঘ।(হাটু গেড়ে বসে)
মেঘঃ হুমমম(রোদের গালে আদর দিয়ে)
রোদঃ তোর বউমনিও তোকে খুব ভালবাসে!আর তোর বউমনি খুব কষ্ট পায় যখন তুই কান্না করিস।আমি তোদের দুজনকেই খুব ভালবাসি সোনা।তোরা ছাড়া আমিও যে একা!আব্বু আম্মুকে ছাড়া তোরা আমার কাছে যা চাইবি আমি এনে দিবো।তাও আর কাঁদিস না ভাই। তোদের চোখে পানি দেখলে আমার খুব কষ্ট হয় সোনা।(মেঘের গালে হাত রেখে)
মেঘঃ দাভাই আমি আর কাঁদবো না।প্রমিস আমি বউমনির সব কথা শুনবো।
রোদঃ আমি জানি তো আমার ভাই সব চেয়ে বেস্ট (আদর দিয়ে)
মেঘঃ তুমিও বেস্ট দাভাই (আদর দিয়ে)
তারপর আবার দুইভাই হাঁটতে শুরু করলো!রোদ আর মেঘ মুখে যাই বলুক বাবা মাকে কি এত সহজে ভোলা যায়।রোদ মেঘকে বোঝাচ্ছে কিন্তু রোদের যে বুক ফেটে যাচ্ছে এটা কেউ দেখতে পাচ্ছে না।মেঘ ছোট তাই বুঝতে পারছেনা! কিন্তু রোদ তো জানে যে ওদের মাথার উপর থেকে সবচেয়ে নিরাপদ ছায়া টা চিরকালের জন্য সরে গেছে।এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে ওদেরকে এখন লড়াই করে বাঁচতে শিখতে হবে।রোদ মেঘের জন্য নিজেকে শক্ত রাখার চেষ্টা করছে কিন্তু মনের ভেতরে যে তুফান উঠেছে সেটা থামাতে ব্যর্থ হচ্ছে রোদ।

হঠাৎ মেঘ রোদের হাত ছেড়ে দৌড়ে চলে গেল!সামনে একটা বকুল ফুলের গাছ দেখে।গাছের নিচে অনেক গুলো বকুল ফুল পড়ে আছে।মেঘ মাটিতে হাঁটু ভাজ করে বসে আর ওর ছোটো ছোটো হাতে বকুল ফুল কুড়াতে শুরু করে।মেঘ বকুল ফুল গুলো কুড়িয়ে মেঘের পান্জাবীর ছোট পকেটে রাখলো।কিন্তু ফুল গুলো নষ্ট হয়ে যাবে ভেবে মেঘ আবার পকেট থেকে ফুল গুলো বের করে!আর মাথার টুপি খুলে টুপির ভিতর ফুল গুলো রাখলো।
শুভ্র চওড়া টুপির ভেতর বকুল ফুল গুলো অসম্ভব সুন্দর দেখাচ্ছিলো!মেঘ টুপিতে রাখা ফুল গুলোর দিকে একবার তাকিয়ে প্রান জুড়ানো একটা হাসি দিলো!যে হাসির দাম কোটি টাকা দিয়েও কিনে নেওয়া সম্ভব নয়!রোদেরও মন জুড়িয়ে গেল মেঘের হাসি দেখে।রোদ এগিয়ে এসে মেঘের পাশে এসে দাঁড়ালো আর মেঘ মনোযোগ দিয়ে আর কিছু ফুল কুড়াতে ব্যস্ত হয়ে গেল !মেঘ স্বযত্নে ফুল গুলো তুলে ওর টুপিতে রাখছে! মেঘের এই ভাবে ফুল কুড়ানোর প্রধান কারন মেঘ আলোকে ফুল গুলো উপহার হিসেবে দিবে তাই।আর এটা আলোর কাছে পবিএ একটা মনের,পবিএ একটা বন্ধনের, পবিএ ভালবাসায় মুড়ানো একটা উপহার হিসেবে অখ্যায়িত হয়ে রবে…..!!

#এলোকেশী_কন্যা২__
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_45

মেঘ স্বযত্নে ফুল গুলো তুলে ওর টুপিতে রাখছে! মেঘের এই ভাবে ফুল কুড়ানোর প্রধান কারন মেঘ আলোকে ফুল গুলো উপহার হিসেবে দিবে তাই।আর এটা আলোর কাছে পবিএ একটা মনের,পবিএ একটা বন্ধনের, পবিএ ভালবাসায় মুড়ানো একটা উপহার হিসেবে অখ্যায়িত হয়ে রইবে…..!!
তারপর মেঘ আর রোদ মসজিদ থেকে বাসায় ফিরে গেল!আলো নামাজ পড়ে কুরআন পড়ে! আর ওদের আব্বু আম্মুর জন্য কেঁদে কেঁদে মোনাজাতে দোয়া করলো।তারপর আলো রান্না ঘরে গিয়ে দেখে শিউলি মন মরা হয়ে বসে আছে!আলো রান্না ঘরে গিয়ে চুলার উপরে পাতিল বসিয়ে ডিম সিদ্ধ করতে দিলো!পাশে থেকে শিউলি বলে উঠলো……!!
শিউলিঃ আম্মা নাই দেইখা বাসা কেমন খালি খালি লাগতাছে! এতদিন ধইরা এই বাসায় আছি বাসার এত খারাপ পরিস্থিতি এর আগে আসে নাইক্কা।আম্মা ছাড়া কিছু ভালো লাগতাছে না..(চোখ মুছে)
আলোঃ শিউলি আন্টি মেঘের সামনে এসব কিছু বলো না!তাহলে ওকে সামলানো যাবো না(চোখ মুছে)
শিউলিঃ মেঘ বাবার জন্য মেলা কষ্ট হইতাছে। এই টুকু পোলা মা ছাড়া কিছু বোঝে না এহন কেমন কইরা থাকবে।ভাবিমনি তুমি ছাড়া ওদের আর কেউ নাই গো ভাবিমনি…!!
আলোঃ হুমম! (ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে)
শিউলিঃ কাইনন্দেন না ভাবিমনি! আল্লাহ যা করে ভালোর লাইগাই করে।এইহানেও হয়তো ভালা কিছু আছে…!!
আলোঃ হুমমম…!!
মেঘঃ বউমনি! বউমনি! কই তুমি??দেখো আমি তোমার জন্য কি নিয়ে এসেছি??(দৌড়ে বাসায় এসে চিৎকার করে)
আলোঃ কি হয়েছে মেঘবাবু??(রান্না ঘর থেকে ছুটে এসে)
মেঘঃ এই দেখে আমি তোমার জন্য দোয়া আর আমার ভালবাসা এনেছি..(অনেক খুশি হয়ে)
আলোঃকই দেখি???
তারপর মেঘ আগে ওর বুকে হাত বুলিয়ে আলোর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো ইমামের কথা অনুযায়ী! আলো বোঝার চেষ্টা করছে মেঘ কি করছে?তারপর মেঘ ওর হাতে থাকা টুপিটা আলোকে দিলো।
মেঘঃ এই নাও আমার ভালবাসা(মুচকি হেসে)

আলোঃ এগুলো আমারর! অনেক পবিএ তো মেঘবাবু তোমার ভালবাসা।আমি অনেক খুশি হয়েছি সোনা!তোমাকেও অনেক অনেক ভালবাসা।রোদ এসে ড্রয়িং রুমে সোফায় বসলো।মেঘের মুখে হাসি দেখে আলোর প্রান জুড়িয়ে গেল!মেঘের পুরো মুখে আলো আদর দিয়ে ভরিয়ে দিলো।এর মধ্যে রকি এসে টুপির মধ্যে কি আছে দেখার জন্য লাফাতে শুরু করলো!আলো টুপিটা নিয়ে ওর রুমের দিকে দৌড় দিলো আর রকি আলোর পেছন পেছন দৌড় দিলো।আলো আর রকির দৌড় দেওয়া দেখে মেঘ খিলখিল করে হাসতে হাসতে আলোর রুমে চলে গেল।রোদ সোফায় বসে এতক্ষণ সব কিছু পর্যবেক্ষণ করছিলো!তারপর উঠে ওর আম্মুর রুমে চলে গেল….!!
মেঘ আলোর রুমে গিয়ে দেখে আলো মেঘের দেওয়া ফুল গুলো একটা ডায়রীর ভাঁজে রেখে দিলো।এখানে রোদ আর মেঘের প্রোপোজ করা চালতার ফুল গুলোও আলো যত্ন করে রেখে দিয়েছে।এই সব ফুল গুলো শুকিয়ে যাবে! কিন্তু ভালোবাসার স্মৃতি হয়ে থাকুক না কিছু জিনিস! এই ফুল গুলো ওদের ভালবাসা বিনিময় করার অমূল্য একটি প্রমান।তারপর আলো আর মেঘ নিচে নেমে আসলো। আলো মেঘকে নিয়ে রান্না ঘরে গিয়ে ঝটপট পরোটা আর মুরগির মাংস রান্না করে ফেললো।আলো আর শিউলি এত এত কথা বলে মেঘকে হাসিয়ে যাচ্ছে….!!

রোদ ওর আম্মুর রুমে এসে ওর আম্মু আর আব্বু প্রতিটা জিনিস ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছে!রোদের চোখ থেকে ঝরে যাচ্ছে কষ্টের নোনা জলের স্রোতের ধারা।রোদ আলমারি খুলে ওর আব্বু একটা পান্জাবী আর ওর আম্মু একটা শাড়ি নিয়ে বুকের সাথে জড়িয়ে রাখলো।আলো ইশারায় শিউলিকে বললো মেঘের দিকে খেয়াল রাখতে তারপর আলো রোদের রুমে গেল।কিন্তু রোদকে না পেয়ে আলো বাকি সব রুমে,ছাদে,বাগানে খুঁজলো বাট রোদকে আলো কোথাও খুজে পেলো না।আলো রোদের আম্মু রুমে দেখে মেঘ বেডের এক কোণায় বসে বুকের সাথে কিছু একটা জড়িয়ে নিয়ে বসে আছে থম মেরে!আলো রোদের কাঁধে হাত রাখলো কিন্তু রোদ কোন সাড়াশব্দ না করে ওই ভাবেই বসে রইলো!আলো রোদের দুই গালে হাত রেখে, রোদের চোখে চোখ রেখে বললো…!!
আলোঃ আমরা সবাই মরণশীল!কেউ সারাজীবন বেঁচে থাকে না!নিজেকে সামলে নিতে শিখুন।আপনি এমন করলে আমি মেঘকে কিভাবে সামলাবো বলতে পারেন।কেন এভাবে ভেঙে পড়ছেন? মেঘের জন্য হলেও নিজেকে সামলাতে শিখুন..?? (ছলছল চোখে)
এর মধ্যে রোদের ফোনে ফোন আসলো!ড্রয়িং রুমে ফোন ছিলো তাই শব্দ টা এখান থেকেই শোনা যাচ্ছিলো।রোদ চোখ মুখ মুছে কাপড় গুলো আলমারিতে রেখে ড্রয়িংরুমের দিকে পা বাড়ালো।রোদ ফোন হাতে নিয়ে দেখলো ওদের অফিসের ম্য্যানেজার ফোন করছে!রোদ ফোনটা রিসিভ করলো…!!

রোদঃ ম্যানেজার আংকেল আসসালামু আলাইকুম
ম্যানেজারঃওয়ালাইকুম সালাম!রোদ বাবা একটু
অফিসে আসতে পারবে।জুরুরী এজন্য ফোন দিলাম..!!
রোদঃ জি আমি আসছি…!!
ম্যানেজারঃ আচ্ছা বাবা
তারপর সবাই মিলে ব্রেকফাস্ট করে নিলো।রোদ আলো আর মেঘকে সাবধানে থাকতে বলে রোদ গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেল।আবির, আকাশ, রোদ অনেক চেষ্টা করেও ওদের বাবা মায়ের মৃত লাশের খোঁজ করতে পারেনি।পাহাড় থেকে পড়ে থেতলে যাওয়া শরীর!যদি নদীতে ভেসে যায় তাহলে সেই লাশ তো পাওয়ারও কথা না।রোদ অফিসে গিয়ে ম্যানেজারের সাথে কথা বলে জানতে পারলো কিছু ফাইল সাইন করা অত্যন্ত জুরুরী। রোদ এর আগেও ওর বাবা কাজে সাহায্য করতো তাই রোদের বাবা রোদকে এই অফিসের সাইড এমডি করেই রেখেছিলো।আজকে থেকে সাইড এমডি না আজকে থেকে সবকিছুর লিগ্যাল মালিক রোদ।এখন থেকে সব ওর একা হাতে দেখা শোনা করতে হবে ভেবে রোদ একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।তারপর রোদ ম্যানেজারের দিকে তাকিয়ে বললো…..!!
রোদঃ আংকেল কিছুদিনের জন্য অফিসটা সামলে নিতে পারবেন।(মন খারাপ করে)
ম্যানেজারঃ আমি চেষ্টা করবো বাবা।তুমি টেনশন করো না সব ঠিক হয়ে যাবে।
রোদঃ হুমম..!!

তারপর রোদ অফিস থেকে বাসায় চলে আসলো।মেঘ মন খারাপ করে ছিলো আলো বোঝানোর পর এখন মেঘ রকির সাথে খেলছে।রোদ ওর রুমে গিয়ে বালিশের উপর ভর দিয়ে উপুর হয়ে শুয়ে পড়লো।রোদকে বিষন্ন মুখে দেখে আলো সিঁড়ি বেয়ে রোদের রুমে এসে দেখলো রোদ শুয়ে আছে!আলো গুটিশুটি পায়ে এগিয়ে এসে রোদের পাশে বসলো আর রোদের ঘাড়ে হাত রাখলো।রোদ তারাতারি করে চোখ মুছে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে আলো….!!রোদ আলোকে দেখে উঠে বসলো! আলো কিছু বলছেনা শুধু নিষ্পাপ এক দৃষ্টিতে রোদের দিকে তাকিয়ে আছে।রোদ আলোকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললো….!!
রোদঃ কিছু বলবে??
আলোঃ আপনার তো পরীক্ষা আছে সামনে, তাহলে পড়তে বসছেন না কেন??
রোদঃ আমি পরীক্ষা দিবো না।
আলোঃ কেন??(জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে)
রোদঃ এমনি
আলোঃ আপনি কি চাচ্ছেন মেঘ আর আমি মারা যায়।
রোদঃ আলোওও (গম্ভীর হয়ে)
আলোঃ আপনি এমন করলে আমি মেঘকে কি বুঝ দিবো বলতে পারেন।আপনার কি একার কষ্ট হচ্ছে আমাদের কষ্ট হচ্ছে না।আমাদের কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে না।আব্বু আম্মু চলে গেছে না ফেরার দেশে এখন কি চাচ্ছেন আমি আর মেঘও মারা যায়।
রোদঃ আলোওও চুপ করো (দাঁতে দাঁত চেপে)
আলোঃ না চুপ করবো না আমি!কেন ভেঙে পড়ছেন এভাবে? আমার আর মেঘের জন্য কি নতুন করা সব শুরু করা যায় না।আমাদের জন্য কি আপনি সব কষ্ট ভুলতে পারবেন না।যদি না পারেন তো বলে দেন।আমি আগে বিষ খাবো তারপর মেঘকে বিষ খাইয়ে মরে যাবো।আপনি থাকেন একা একা (কেঁদে কেঁদে)
রোদঃ ঠাসসসস্!তোমার সাহস কি করে হয় মরে যাওয়ার কথা বলা।তোমরা আমাকে কি পেয়েছে যার যা ইচ্ছে তোমরা তাই করবে।তোমরা সবাই কেন আমার ইমোশন নিয়ে খেলছে বলতে পারো।যাদের ভালবাসি তারাই কেন আমাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার প্ল্যান করছো তোমরা।আমার কি কষ্ট হয় না নাকি আমাকে তোমাদের মানুষ বলে মনে হয় না সেটা আগে আমাকে বলো(আলোর দুই বাহু ঝাঁকিয়ে)

যাক আলোর আইডিটা কাজে দিলো।আলোর উদেশ্য ছিলো রোদের মনের ক্ষোভটা বের করে আনা।কারন রোদ একেবারে চুপচাপ হয়ে গিযেছিলো।আলো চাইছিলো রোদকে একটা আঘাত করে রোদের মনের কথা গুলো জানতে।আলো রোদের হাতে থাপ্পড় খেয়ে চুপচাপ দাড়িয়ে আছে রোদের দিকে মায়াবি দৃষ্টিতে তাকিয়ে। রোদ এগিয়ে এসে আলোর দিকে ছলছল করে তাকিয়ে সরি বললো! তারপর শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।মারা যাওয়ার কথা শুনে রোদ রেগে গিয়েই থাপ্পড়টা মেরেছে ঠিকই! তাতে আলোর কোন অভিযোগ নেই। একটা থাপ্পড় খেয়ে যদি রোদ নিজেকে একটু সামলে নিতে পারে তাহলে এতে ক্ষতি কি….!!
রোদ আর আলোর কথা শুনে মেঘ রোদের রুমের দরজাতে এসে দাড়ায়!আলো মেঘকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে মেঘকে টেনে বেডের উপর বসিয়ে দেয়।তারপর আলো রোদেরও হাত ধরে টেনে মেঘের পাশে বসিয়ে দিলো।রোদ আর মেঘ আলোর দিকে তাকিয়ে আছে। আলো রোদ আর মেঘের দিকে তাকিয়ে ওদের দুই ভাইয়ের দুই হাত ওর মাথায় রাখলো তারপর বলতে শুরু করলো….!!
আলোঃ আমার কসম রইলো তোমাদের। তোমরা যদি কষ্ট পেয়ে নিজেকে গুটিয়ে রাখো। তাহলে আমিও তোমাদের ছেড়ে চলে যাবো। তোমরা দুইজন হলে আমার কাছে আম্মুর দেওয়া শেষ আমানত। আম্মু আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে তোমাদের ভাল রাখার। এখন তোমরা যদি এভাবে কষ্ট পাও আর নিজেকে গুটিয়ে নাও! তাহলে আম্মুর আমানত আমার কাছে খেয়ানত হয় যাবে।আর আমি এভাবে বেঁচে থাকতে পারবো না।এখন তোমরা বলো তোমরা নিজেকে স্বাভাবিক করবে নাকি আমিও চলে যাবো তোমাদের থেকে অনেক দুরে।আব্বু আম্মু কারোই বেঁচে থাকে না তারমানে এই না যে জীবন থমকে গেছে।জীবনটা তার নিজ গতিতে চলতে থাকে।তোমরা কান্না কাটি, মন খারাপ করলে আম্মু আব্বুর কিছু হবে না।তোমরা নামাজ পড়ে তাদের জন্য দোয়া করো। আর তোমাদের এমন দেখলে আব্বু আম্মুর আত্মা কষ্ট পাবে।এবার তোমরা বলো তো! আমরা তিনজন কি নতুন করে ভাল থাকার চেষ্টা করতে পারিনা??(কেঁদে দিয়ে)

এলোকেশী কন্যা  সিজন ২ পর্ব ৪০+৪১+৪২

মেঘঃ বউমনি তুমি কেঁদো না।তুমি যা বলবে তাই
হবে..!!(আলোর চোখের পানি মুছে দিয়ে)
রোদঃ হুমম! তুমি আর মেঘ যেমনটা চাইবে তেমনটাই হবে।এবার বলো আমার কি করতে হবে???(চোখের পানি মুছে ফেলে)
আলোঃ আপনি আপনার পরীক্ষাটা দিন!আব্বুর কষ্ট করে গড়ে তোলা বিজনেসটার হাল ধরুন।আপনারা বাবা মায়ের সব স্বপ্ন পূরণ করুন।যাতে কেউ আঙ্গুল তুলে বলতে না পারে আমাদের আব্বু আম্মু আমাদের সাথে নেই তাই আমরা খারাপ পথে পা দিয়েছি।নিজেদের এমন ভাবে তৈরী করুন যাতে আপনাদের নাম দিয়ে আব্বু আম্মুকে সবাই চিনতে পারে নতুন করে।আর কে বলছে বাবা মা মারা গেলে সন্তানের সাথে থাকে না।আপনাদের শরীরে আপনাদের বাবা মায়ের রক্ত আছে! আপনাদের বুকে বাবা মায়ের জন্য অসীম ভালবাসা রয়েছে। তাহলে কেন মনে করছেন তারা আর নেই।বাবা মা পাশে নেই ঠিকই! কিন্তু আপনাদের বুকে ভালবাসা নিয়েই তারা বেঁচে আছে!আর সারাজীবন এভাবেই বেঁচে থাকবে।আপনি মনে হয়ে এই কথাটা জানেন যে…..!!
” ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা!সব শিশুরই ”
অন্তরে…..!!!

আলোর কথা শুনে রোদ মেঘ দুজনে বেঁচে থাকার নতুন শক্তি খুঁজে পেয়েছে।এবার ওদের জীবনে নতুন পথ চলার জন্য নতুন এক সকালের আর্বিভাব হবে।এবারে ওরা নতুন করে ভাল থাকার জন্য আশার আলো খুঁজে পেয়েছে!এবার ওদের মনে থাকবে একসাথে পথচলা আর তিনজন তিনজনের প্রান হয়ে একে অপরের পাশে থাকার শপথ।
৫দিন পর……!!!

এলোকেশী কন্যা  সিজন ২ পর্ব ৪৬+৪৭+৪৮