এলোকেশী কন্যা সিজন ২ পর্ব ৪০+৪১+৪২

এলোকেশী কন্যা সিজন ২ পর্ব ৪০+৪১+৪২
লেখনীতে:- নূরজাহান আক্তার (আলো)

ওদের কথা বলতে বলতেই রোদ নিচে নেমে এলো।রোদ ইউনিভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য একেবারে রেডি হয়ে নিচে নামে!আলো উঠে রোদকে খেতে দিলো!মেঘ উঠে এসে রোদের পাশে ধপাস করে বসলো পড়লো!রোদের ওর প্লেট থেকে খাবার নিয়ে মেঘের মুখের দিলো!আর মেঘ কাঠবিড়ালি মত কুট কুট করে খাচ্ছে আর ফোনে গেম খেলছে!তারপর দুইভাই ওদের খাওয়া শেষ করে উঠে পড়লো…!!
ওইদিকে_____!!
ঐশী কলেজে রোদ আর আলোর নামে খারাপ খারাপ কথা বলে বেড়াচ্ছে! আবির রোদকে এই কথাটা জানানোর জন্য এখনই কলেজের জারুল গাছটার পাশে দেখা করতে বলেছে। রোদও আজকের এর শেষ দেখেই ছাড়বে বলে রেগে কলেজে যাওয়ার জন্য বের হয়েছে। এই ঐশীর একটা ফাইনাল বন্দোবস্ত না করলে হচ্ছে না। কারো যদি অহংকার বেশি হয়ে যায় তখন তার পাখাটা ঝেটে দেওয়াই শ্রেয় বলে মনে হয় রোদের কাছে।

রোদ ঐশীকে ভালো হওয়ার একটা সুযোগ দিয়েছিলো!বাট ঐশী শুধরানোর মত মেয়ে না! রোদ তাড়াতাড়ি করে ব্রেকফাস্ট সেরেই বাইক নিয়ে বেরিয়ে গেছে। আলো আর মেঘ ওরা ওদের মতো আবার দুষ্টুমি! আর সাথে আর কথার ফুলঝুরি নিয়ে বসে পড়লো।
সূর্বণপুরে আদিলের রিসিপশনে সবাই অনেক মজা করছে! রোদের আম্মু, দিদান ,সবাই যে যার মতো ব্যস্ত আছে! রোদে রা চলে যাওয়াতে বাসাটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে! রোদের আম্মু সকাল থেকে এ পর্যন্ত আলোকে কে সাত বার ফোন করে কথাও বলছে! সকাল ১০ঃ৩০ টার দিকে আলো মেঘকে গোসল করিয়ে দিয়ে নিজেও গোসল সেরে নিল!জার্নি করে এসেছে এজন্য আজকে তারাতারি করে গোসলটা সেরে ফেললো।তারপর দুপুরের রান্না করার জন্য রান্নাঘরের দিকে এগোলো! মেঘ রান্নাঘরের ডেক্স এর ওপর দুই হাটু মুড়ে মটরশুটির খোসা ছাড়াচ্ছে ঠিকই কিন্তু বাটিতে না রেখে পেটে চালান করছে বেশি !মেঘের এমন কান্ড দেখে আলো মেঘের গাল টেনে দেয়!মেঘ আলোর দিকে তাকিয়ে ফট করে বলে উঠলো….!!
মেঘ: বউ মনি আজকে কি রান্না করবে?(মটরশুঁটি খেতে খেতে)
আলো: মেঘবাবু তুমি কি খাবে বলো?তুমি যা বলবে তাই রান্না করবো আমি আজকে (মুচকি হেসে)
মেঘ: আমি ডিম ভুনা আর আলুর ভাজি দিয়ে ভাত খাবো ( অনেক ভেবে চিন্তে)
আলো: দুটোই তো তাহলে শুকনো তরকারি হয়ে গেল মেঘ বাবু..!!

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

মেঘ:শুকনা তো কি হলো??
আলোঃ তোমার দাভাই তো শুকনা তরকারি দিয়ে ভাত খেতে পারে না।
মেঘঃ ওহহ!তাহলে দাভাই যখন ভাত খাবে তখন দাভাই ভাতের মধ্যে পানি ঢেলে নিতে বলবে তাহলেই ভাত ভিজে গেল।তখন না হয় দাভাই খাবে…(চিন্তিত হয়ে)
আলোঃ হা হা হা ফাজিল একটা! সব সময় মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি ঘুরে তাই না (গাল টেনে)
আলো মেঘের গাল টেনে দেয় আর মেঘ খিলখিল করে হাসতে থাকে!মেঘের গুলুমলু গাল টেনে দিতে আলোর খুব ভালো লাগে!মেঘ যখন হাসে ঠোঁটে দুই কোণে মারাত্মক ভাবে টোল পড়ে!আর তখন মেঘের হাসি দেখলে সবারই মনটা এমনিতেই ভালো হয়ে যায়!আলোর দেখা মেঘই হচ্ছে সবচেয়ে সুন্দর একটা বাচ্চা যার মধ্যে সৌন্দর্যে সব গুন ফুটে ওঠে মেঘের মধ্যে। মেঘ এখন সাদা সেন্ডো গেন্জী আর মেরুন কালার থ্রী কোয়াটার পড়ে আছে!এতেই মেঘকে দারুন লাগছে! আর মেঘ হচ্ছে লাল ফর্সা এজন্য বেশি হাসলেও মেঘের গাল লাল হয়ে যায়!এখনই যে কিলার লুক বড় হলে না জানি কত মেয়েকে ঘায়েল করে তার ঠিক নেই!
(রিডারস্ আমারও একটা মেঘ আছে!একদম গল্পের মেঘের মত অনেক দুষ্টু! )
আলো মেঘের কপালে একটা আদর দিয়ে রান্না করতে শুরু করলো..!!
আলো ওর চুল গুলোকে পেছনে ছোট একটা কাঁকড়া দিয়ে আটকে নিলো!তারপর রান্নাতে মন দিলো…!!শিউলি আলোকে কেটে কুটে দিচ্ছে আর আলো রান্না করছে!আর মেঘ পাশে থেকে পকপক করতে আছে!মেঘের প্রধান কাজ শিউলিকে রাগিয়ে দেওয়া…!! মেঘের কান্ড দেখে আলোও শুধু হাসে।
রোদ, আবির,আকাশ সরাসরি আলোর কলেজে গিয়ে প্রফেসরের কেবিনের দিকে গেল! তারপর ওরা নক করে পারমিশন নিয়ে প্রফেরের কেবিনে ঢুকলো…!!

রোদঃ আসসালামু আলাইকুম স্যার!আসতে পারি??
প্রফেসরঃ আরে রোদ যে!কি মনে করে?? তারপর বলো কেমন আছো??বসো বসো
রোদঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি!আপনি কেমন আছেন??(মুচকি হেসে)
প্রফেসরঃ জ্বি আমি অনেক ভালো আছি!আবির আর আকাশ তোমাদের কি খবর??
আবির আর আকাশঃ ভালো স্যার..!!
রোদঃ স্যার আমি জরুরী কিছু কথা বলার জন্যই এখানে এসেছি।(মুচকি হেসে)
প্রফেসরঃ পারসোনালি তোমাকে আমি যতটুকু চিনি তুমি সিরিয়াস ম্যাটার ছাড়া এখানে আসতে না!বলো কি ব্যাপারে কথা বলবে..??(কপালে চিন্তার ভাজ ফেলে)
রোদঃ আপনি তো ঐশীকে চেনেন মনে হয়! যার বাবা রাজনীতি করে! আর উনি এখন বড় মাপের একজন নেতা।
প্রফেসরঃহুম! হুম! চিনি তুমি বলো..??
রোদঃ ঐশী আমার নামে কলেজে বাজে কিছু কথা ছড়াচ্ছে! যেটা আমি মেনে নিতে পারছি না।আমি চাইলে ওরে ফিনিস করে দিতে পারতাম! বাট আপনার কলেজে কি কি হয় সেটা আপনাকে জানানো উচিত বলেই আমি মনে করি!তাই আমি এখানে এসেছি! আর ঐশীর বলা এসব লেইম কথা গুলো আমি কানে তুলতাম না!আর যে মেয়েকে নিয়ে বাজে কথা গুলো বলছে যদি না সে আমার ওয়াইফ হতো! আমি আপনাকে জানালাম তারও কারন আছে!এই পেনড্রাইভে কিছু ভিডিও আছে! আমি আপনার ছাএ হয়েও আপনাকে এসব দিতে হচ্ছে ভেবে আমি নিজেও লজ্জিত। আমি এখান থেকে যাওয়ার পর আপনি এগুলো চেক করে নিবেন….!! তারপর আপনি যা ডিশিসন নিবেন আমি সেটাই মেনে নিবো…!!কারন আমি জানি আপনি অন্যায়কে প্রশ্চয় দেন না। (ঠান্ডা সুরে)
প্রফেসরঃওকে..!!( চিন্তিত হয়ে)

রোদঃ আপনিও চাইলে খোঁজ নিয়েও পরখ করে নিতে পারেন।(মুচকি হেসে)
আকাশঃ ঐশীর আরো কিছু গুন আছে স্যার!আপনি খোঁজ নিলেই জানতে পারবেন।
রোদঃ আজ তাহলে আসি স্যার!আসসালামু আলাইকুম..!!
প্রফেসরঃ ওয়ালাইকুম সালাম!!
তারপর রোদ মুখে শয়তানি হাসির রেখা টেনে জারুল গাছের নিচে এসে আবার বসে পড়লো!আশা, আবৃতি, রোদ, আকাশ আর আবির ছাড়া আগের মত কেউ আড্ডা দেয় না!এখন যে যার মত পড়া নিয়ে বিজি থাকে!আকাশ রোদের মুখের দিকে তাকিয়ে উঠলো…!!
আকাশঃ আমি যতদুর জানি রোদ তুই এত সহজে ঐশীকে ছেড়ে দেওয়া মত ছেলে না।কি হলো কিছুই তো বুঝলাম না।(ভ্রু কুচকে)
রোদঃ আমি আর কি করবো? এখন যা করার স্যারই করবো..!! (শয়তানি হাসি দিয়ে)
আবিরঃ আসল কাহিনী কি বলবি তো??
রোদঃআজ সকালে ঐশীর বাবার নেতা পদ হারালো!এবার ঐশী কলেজ ছাড়া হবে। এই আর কি..!এছাড়া আমি আর কিছু করিনি।(শয়তানি হাসি দিয়ে)
আকাশঃ মানে?(অবাক হয়ে)

রোদঃ মানে এই যে,ঐশীর বাবাকে আজকে সকালে ১০ঃ৩০ টার মধ্যে রাজনীতির বড় নেতার পদ ত্যাগ করতে হয়েছে!যদিও এই মহৎ কাজের পেছনে আমারই হাত আছে!আর ঐশীর যেমন ক্যারেক্টারের মেয়ে সেটাই আমি স্যারের কাছেই তুলে ধরলাম।ঐশীর কিছু লেইম কাজের ভিডিও সেটা প্রমান সহ স্যারের হাতেই হস্তক্ষেপ করে আসলাম।এই যেমন ধর,,,বাবা নেতা বলে অহংকার করে যার তার গায়ে হাত তোলা,বাজে ভাবে কাউকে রেগিং করা,ছেলেদের সাথে বেড শেয়ার সবই ভিডিওতে আছে..!! দেখা যাক এবার স্যার কি করে?? (শয়তানি হেসে)
আকাশঃ আবে শালা! এত বুদ্ধি রাখিস কই তুই (রোদের কাঁধ চাপড়ে)
রোদঃ অন্যকে বাঁশ খাওয়াতে গেলে আগে ঠান্ডা মাথায় ভাবতে হয়! কিভাবে তাকে বাঁশ খাওয়ালে সে অকেজো হয়ে পড়বে।আর আমি শুধু এটাই করছি…!!আমি সেদিন ওর বাসায় গিয়েও ওরে ওয়ানিং দিয়ে এসেছি তাও ও শুধরাতে পারলো না।এখন যা হচ্ছে এজন্য আমি না বরং ওরাই দায়ী..!!
আবিরঃ হুমম!তা ঠিক…!!
আকাশঃএগুলো বাদ দে! যা হবে দেখা যাবে..!!এক সপ্তাহ পর আমাদের তো পরীক্ষা! যদিও রোদ তোর তো কোন সমস্যা নেই! সমস্যা তো আমাদের রে ভাই..!(মুখ ফুলিয়ে)
রোদঃ কেন তোদের কি সমস্যা?? (ভ্রু কুচকে)
আবিরঃ আরে শোন না ভাই! এক কাজ সবার করার দরকার নেই!রোদ তুই ভাল করে পড়াশোনা কর পরীক্ষা সময় আমাদের দিকে একটু তাকাস তাহলেই হলো। শুধু আমরা পড়াশোনা করে ব্রেণকে এত চাপ দিতে যাবো কেন হুদাই বল তো!কি বলিস আকাশ? (রোদের কাঁধ চাপড়ে)

আকাশঃ হুমম ওই আর কি..!!(দাঁত বের করে)
রোদঃ তোরা এমন ভাব করছিস মনে হচ্ছে তোরা লাস্ট বেঞ্চের স্টুডেন্ট!
আকাশঃ তোর থেকে পয়েন্ট আমাদের কমই থাকে ইয়ার।আমাদের মাথায় একটু হাত রাখ ভাই..!!
আকাশঃ এই জ্বালা আর প্রাণে সহে না।মনু রে এ এ এ (গলা ফাটিয়ে)
রোদঃ থাক আর ড্রামা করতে হবে। আচ্ছা শোন আমি এখন বাসায় গেলাম!আলো আর মেঘ বাসায় একা আছে!আম্মুরা ফেরেনি..!!
আবিরঃ শুভ কাজটা সেরে নিলেই তো পারিস বন্ধু।আমরা জানি তো তুমি অনেক বড় হয়ে গেছো!সব পরীক্ষা দিতে পারবে এখন তুমি…!! (রোদের দিকে তাকিয়ে!দাঁত বের করে হেসে)
আকাশঃ আবির তোর সাথে আমিও একমত…!!(হেসে)
রোদঃ শুভ কাজ তো অনেক আগেই সেরে ফেলছি বন্ধু !এখন তোমরা চাচ্চু হওয়ার জন্য প্রস্তুত হও…!!(দুষ্টু হেসে)
রোদের কথা শুনে আবির আর আকাশ চোখ বড় বড় করে রোদের দিকে তাকিয়ে আছে!আর রোদ ঠোঁটের কোণে দুষ্টু হাসি রেখা টেনে গান ধরলো…!!
আমি ফাইসা গেছি!
আমি ফাইসা গেছি মাইনকার চিপায়
আমারও দিলে চোটও বোঝে না রে
কোন হালায়..!!

রোদ গান গাইতে গাইতে বাইক নিয়ে চলে গেল!আর আবির আর আকাশ হাবলার মত হা করে রোদের চলে যাওয়া দেখলো!ওরা রোদের বলা এই কথাটা হজম করতে পারছে না!রোদ বাসায় এসে কলিংবেল বাজাতেই আলো এসে দরজা খুলে দিলো!রোদ মুচকি হেসে আলোর দুই গাল টেনে দিয়ে হাসতে হাসতে উপরে চলে গেল!কারন আজকে রোদের মনটা এখন খুব ভালো!আলো রোদের এমন কাজে দরজা না আটকে চোখ বড় বড় করে রোদের দিকে তাকিয়ে চলে যাওয়া দেখছে।আলো দরজা আটকে সোফায় বসে ..!!
আলোঃ এই দুপুর বেলা উনাকে কোন জ্বিনে চুম্মালো নাকি কে জানে?এর আগে তো এমনডা করে নি।যাই হোক এই পোলা যে যথেষ্ট উচ্চ মানে লুচু সেটা আমি বুঝে গেছি।অসভ্য একটা (মুখ ভেংচি দিয়ে)
রোদ ফ্রেশ হয়ে বেডে বসতেই! মেঘ আর রকি রোদের রুমে হামলা করলো!রোদ টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে মেঘকে ভ্রুু নাচিয়ে জিজ্ঞাসা করলো কি হয়েছে?মেঘ কিছু বললো না..!!

রোদঃ কি হয়েছে মহারাজ?আপনার কি কোন কারনে মন খারাপ? কি হয়েছে আমাকে বলুন..??(মেঘের দিকে তাকিয়ে)
মেঘঃ আমি এসেছি আপনাকে কুস্তাকুস্তির আহবান করতে রোদ মেহবুব!আপনি এখন আমার সাথে কুস্তাকুস্তি করবেন।(রকির গায়ে হাত বুলিয়ে)
মেঘের এই কথা শুনে রোদ কিছু বলার আগেই মেঘ রোদের উপর হামলে পড়লো!দুই ভাই বেডের উপর শুরু করে দিলো নাম না জানা যুদ্ধ! রোদের মন টা ভালো আছে তাই রোদও মেঘের দুষ্টুমির সাথে তাল মিলালো!দুই জনই সমান তালে চিৎকার করছে আর যুদ্ধ করছে!ওদের চিৎকার শুনে আলো এক দৌড়ে রোদের রুমে এসে চোখ বড় বড় করে দুই ভাইয়ের কান্ড দেখছে!ছোট টা আগে থেকেই বিচ্ছু সবাই জানে বাট বড়টাও কি এখন দুষ্টুমির খাতায় নাম লিখালো…!!এটা নিয়ে আলো আপাতত অনেক কনফিউজড..!! হঠাৎ মেঘ চিৎকুর করে…!!
মেঘঃ ওইই ঢিশকুম (রোদে পিঠে কিল বসিয়ে)
রোদঃ আহহ্!আর মারিস না ভাই আমি মরে গেছি (চোখ বন্ধ করে)

#এলোকেশী_কন্যা২__
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_41

ওদের চিৎকার শুনে আলো এক দৌড়ে রোদের রুমে এসে চোখ বড় বড় করে দুই ভাইয়ের কান্ড দেখছে!ছোট টা আগে থেকেই বিচ্ছু সবাই জানে বাট বড়টাও কি এখন দুষ্টুমির খাতায় নাম লিখালো…!!এটা নিয়ে আলো আপাতত একটু বেশিই কনফিউজড..!!
মেঘঃওই ঢিশকুম (রোদের পিঠে কিল বসিয়ে)
রোদঃ আহহ্!আর মারিস না ভাই আমি মরে গেছি (চোখ বন্ধ করে)
আলো আর কিছু না বলে রুম থেকে চলে গেল!
মারামারি এক পর্যায়ে রোদ জিহ্বা বের করে চোখ বন্ধ করে নড়াচড়া না করে শুয়ে পড়লো।মেঘ মারামারি থামিয়ে দিয়ে রোদকে ডাকতে শুরু করলো!রোদ কিছু বলছে না শুধু ঘাপটি মেরে শুয়ে আছে। মেঘ রোদের চোখের পাতা তুলে দেখলো! রোদ দুষ্টুমি করে চোখের মনি একবার একদিক ওদিক করছে!মেঘ রোদের চোখের পাতা থেকে হাত সরাতেই রোদ চোখ আবার বন্ধ হয়ে গেল!মেঘ কান্না ভেজা কন্ঠে রোদকে আরো কয়েকবার ডাকলো কিনতু রোদ সাড়াশব্দ না করে ঘাপটি মেরে থাকলো।মেঘ দৌড়ে আলোকে কাছে চলে গেল।
আলো এসে দেখে রোদ চার হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে আছে চোখ বন্ধ করে!মেঘ এবার কান্না করেই দিলো..!!
মেঘঃ দাভাই! দাভাই! তুমি মারা যেও না দাভাই।আমি তোমাকে আর মারবো না!(রোদের গালে হামি দিয়ে)
আলোঃ মেঘ কান্না করে না!তোমার দাভাই মারা গেছে ভালো হয়েছে।তোমাকে আমি আর একটা নতুন দাভাই এনে দিবো আমি (মেঘের চোখ মুছে)

মেঘঃ আমি আমার দাভাইকেই আমি অনেক ভালুপাশি বউমনি। দাভাইকে তুমি ঠিক করে দাও… (কান্না করে)
আলোঃ না! তোমার দাভাই মারা যাক আমি আরেকটা বিয়ে করতে পারবো ভালো হবে তো(রোদে পায়ের তালুতে কাতুকুতু দিয়ে)
রোদ এতক্ষণ ঘাপটি মেরে থাকলেও রোদের পায়ের তালুতে কাতুকুতু দেওয়ার সাথে সাথে রোদ লাফিয়ে উঠে বসে পড়ে!মেঘ ছলছল চোখে রোদের দিকে তাকিয়ে! মেঘ রোদের বুকে ঝাপিয়ে পড়ে আর হাউমাউ করে কেঁদে দেয়!আলো দাড়িয়ে দাড়িয়ে দুই ভাইয়ের ভালবাসার খুনশুটি দেখতে থাকে!রোদ মেঘের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে মেঘকে কান্না থামাতে বলে…!!
রোদঃ মেঘ সোনা কাঁদে না!আমি তো দুষ্টুমি করছিলাম।আমার কিছু হয়নি তো..!! (আদুরে গলায়)
মেঘঃ দ দ দাভাই (কেঁদে কেঁদে)
রোদঃ সরি বাবু!আমি আর এমন করবো না! এই যে কান ধরছি! আর এমন হবে না আর কান্না করে না…!!
(মেঘের চোখ মুছে আর এক হাতে নিজের কান ধরে)
মেঘঃ তুমি পঁচা দাভাই(রোদের র্টি শার্টে নাক মুছে)
রোদঃইয়াক!মেঘ এমন করে না।
মেঘঃ করবো তো (আবার নাক মুছে)
রোদঃ এ্যা! এ্যা ইয়াক! ইয়াক!

রোদের এমন করা দেখে মেঘ খিলখিল করে হাসতে থাকে!তখন রোদ মেঘের সাথে দুষ্টুমি করছিলো বাট মেঘ সিরিয়াস হয়ে গিয়েছিলো! আর ভয়ে তখন কান্না করে দিয়েছিলো!প্রতিটা বড় বোনের ভেতর যেমন একটা মা মা ব্যাপার থাকে! তেমনি প্রতিটা বড় ভাইয়ের মাঝেও বাবার একটা ছায়া থাকে!আর রোদ মেঘ খুব ভালবাসে! মুখে যত যাই বলুক রোদের কলিজা মেঘ! আর মেঘ যেমন বাচ্চা ওকে ভালো না বেসে থাকা যায় না।মেঘের চোখে পানি দেখে রোদও কষ্ট খুব পায়..!!
রোদ মেঘের কপালে আদর দিয়ে দিলো!মেঘও রোদের গলা জড়িয়ে ধরে আর রোদের বাম গালে আদর দিয়ে দেয়!তারপর দুই ভাই ওর আম্মুর সাথে ফোন কথা বলতে শুরু করে দিলো! কথা বলা শেষ করে উঠতেই মেঘ রোদের ডান গালে একটা কামড় বসিয়ে দৌড় দেয়!আর রোদ ওর গালে হাত বুলাতে বুলাতে মেঘকে দৌড়ানি দেয়!আলো ডায়নিং টেবিলে খাবার রেডি করছিলো।মেঘ দৌড়ে এসে আলোর পেছনে লুকিয়ে পড়ে!রোদ এসে মেঘকে ধরার চেষ্টা করে!এক পর্যাযে মেঘ আলোকে ধাক্কা দিয়ে রোদের দিকে ঠেলে আর রোদ আলোকে ধরে নেয়!এর মধ্যে রোদ কুটুর করে আলোকে একটা হামি দিয়ে দেয়! আর আলো চোখ বড় বড় করে রোদের দিকে তাকিয়ে থাকে!তারপর আলো আর কথা না বাড়িয়ে দুই ভাইয়ের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে দুইজনকে একটা ধমক দিয়ে খেতে বসতে বলে! আর দুইজনেই ভদ্র হয়ে খেতে বসে পড়ে!

আলো ওদের খাবার বেড়ে ও নিজের বসে পড়লো!আলো দুই ভাইয়ের প্লেটে মুরগির দুইটা রান তুলে দিলো!রোদের আর মেঘের ডিম ভুনা,মুরগির রান,গরুর মাংস বেশি পছন্দ! মেঘের কথা অনুযায়ী আলো তখন আলু ভাজি,ডিম ভুনা আর মুরগির মাংস রান্না করেছিলো!এখন খেতে বসে রোদ যখনই ওর মুরগির রানটা মুখে তুলতে যাবে! তখনই মেঘ বলে উঠলো…!!
মেঘঃবউমনি তুমি আজকে যে মুরগিটাকে রান্না করছো! এই মুরগিটাকে আমি আগে থেকে চিনি।
আলোঃ কিভাবে চিনলে(অবাক হয়ে)
রোদঃ…
মেঘঃ এই মুরগিটাকে তো আমি সকালে আমাদের বাগানে দেখছি।(খেতে খেতে)
আলোঃ বাগানে মুরগি আসলো কই থেকে??(অবাক হয়ে)
মেঘঃ হুমম! আমি এই মুরগিটাকে আজকে বাগানে কেঁচো খেতে দেখছি(মুরগির রানে কামড় দিয়ে)
আলোঃ…..
রোদঃ….(খাওয়া থামিয়ে দিয়েছে)
মেঘঃ একদিন আব্বু আম্মুকে একটা কথা বলছিলো জানো বউমনি!সেই কথাটা আমার এখনো মনে আছে..!!
আলোঃকি কথা??(জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে)

মেঘঃযেমন ধরো!! দাভাই মুরগি খাই, আর মুরগি কেঁচো খায়, তার মানে হচ্ছে দাভাইও কেঁচো খায়।
এই কথা শুনে রোদ ইয়াক ইয়াক করতে উঠে চলে গেল বেসিনের সামনে!আর মেঘ রোদের ভাগের মুরগির রানটার উপর হামলা করলো!বেচারা রোদের আর খাওয়ার মত রুচি নাই তাই উঠে চলে গেল।আলো মেঘের দিকে তাকিয়ে দেখে! মেঘ চেয়ারের উপর দুই পা তুলে বাবু হয়ে বসে! দুই হাতে দুটো রান তুলে নিয়ে মনের সুখে মুরগির রান খাচ্ছে! মেঘের পুরো মুখে ঝোল লেগে আছে। মেঘ ভাত তো মুখে দেয় নি রান খেতে গিয়েই ওর গেন্জীতে , আর মুখে ঝোলে মাখামাখি করে ফেলছে!আলো মেঘের প্লেট টেনে আলো মেঘকে খাওয়াতে থাকে!মেঘ আলোর কুটুর কুটুর করে তাকিয়ে বললো…!!
মেঘঃ বউমনি তুমি কি আমার উপর রাগ করেছো??
আলোঃ রাগ করবো কেন মেঘবাবু (খাইয়ে দিতে দিতে)
মেঘঃদাভাই মুরগির রানটা নিয়েছি তাই
(মাথা নিচু করে)
আলোঃ একদম না!কারন বড় ভাইয়ের জিনিসের উপর ছোট ভাইদের অধিকার বেশি আছে।তুমি একদম ঠিক করছো..!! দরকার পড়লে আরো নিবে! আমি তোমাকে নিতে সাহায্য করবো (মুচকি হেসে)
মেঘঃসত্যি.. (খুশি হয়ে)
আলোঃ একদম…!! (হেসে)

মেঘ খুশিতে ওর ঝোল ওয়ালা মুখেই আলোর গালে হামি দিয়ে দিলো!আর আলো অভিনয় করে এ্য
এ্য করে কাঁদতে শুরু করলো!আর মেঘ আলোর কান্না দেখে হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে! আলো মেঘকে খাইয়ে মেঘের মুখ মুছে দিয়ে নিজেও খেয়ে নিলো।ওইদিকে রোদ পড়ার টেবিলে পড়তে বসেছে!রোদ গুন গুন করে পড়ছে ঠিক সেই সময় মেঘ রোদের পেছনে দাড়িয়ে রোদের পিঠে বন্দুক ঠেকিয়ে বললো…!!
মেঘঃ এরেস্ট ভীম..!!
আলোঃ মেঘবাবু কথাটা হবে এরেস্ট হিম (কোন রকম হাসি থামিয়ে)
মেঘঃ ওহহ হ্যা একটু ভুলে গিয়েছিলাম(ভাব নিয়ে)
রোদঃ আমি এখন পড়বো! আপনারা এখন আসতে পারেন! কারন আমি পড়তে বসলে! কেউ আমাকে বিরক্ত করলে আমার খুব রাগ হয়।
মেঘঃ এরেস্ট করছি আপনাকে রোদ মেহবুব। আপনি উপরের দিকে দুই হাত তুলুন!না হলে দুম করে আপনাকে গুলি করে দিবো (রাগী ভাবে)
রোদঃ স্যার! যে আমার মুরগির রানের উপর হামলা করছে তাকে আগে ধরুন।
মেঘঃ সে তো ছোট বাচ্চা ! আপনি মুরগির রানের আশা ছেড়ে দিয়ে এখন খাবার খেয়ে নিন।কারন আপনার ভাগের মুরগির রান ইন দা ভো গো মা..(খিলখিল করে হেসে)
রোদঃ আমি খাবো না..!
মেঘঃ ওকে..!!

মেঘ হনহন করতে করতে আলোর রুমে চলে গেল!তারপর আলোর একটা ওড়না নিয়ে পেছন থেকে রোদ হাত বাঁধতে শুরু করলো!মেঘ রোদের হাত বাঁধা শেষ করে মেঘ আলোকে বললো রোদকে খাইয়ে দিলো!আলো রোদের মুখের সামনে খাবার ধরতেই রোদ মুখ ঘুরিয়ে নিলো!এবার আলোরও রাগ উঠে গেলো! তাই আলো রোদের গাল চেপে মুখের মধ্যে খাবার ঢুকিয়ে দিলো!রোদ চোখ বড় বড় করে আলোর দিকে তাকিয়ে আছে!রোদ মুখে খাবার নিয়েই কিছু একটা বলার চেষ্টা করছে! বাট কি বলছে বোঝা যাচ্ছে না।তাই আলো রোদের নাকও চেপে ধরে যার ফলাফল রোদের শ্বাস রোধ হয়! আর রোদ মুখের খাবারটা শেষ করে অতি শ্রীঘই গিলে ফেলে।এবার রোদ হাঁপাতে হাঁপাতে বলে উঠে…!!
রোদঃ আম্মু গো দেখে যাও! এই দুই বিচ্ছু আমার জীবনডা ন্যাতা ন্যাতা করে দিলো!আমার মত নিরীহ বাচ্চা উপর এই দুই ফাজিল কেমন নিষ্ঠুর ভাবে অত্যাচার করছে..(অসহায় মুখ করে)
মেঘঃ আম্মু আসার আগে আমি আর বউমনি মিলে তোমার জীবনের উপর ট্রাক্টার চালাবো দাভাই!তখন তোমার জীবন দেখবা গীবন হয়ে যাবে! হু হা হা (বাংলা সিনেমার ভিলেনের মত করে হেসে)
রোদঃ তোদের উপর ঠাডা পড়বে দেখিস (দাঁতে দাঁত চেপে)
আলোঃ হুমম! আপনিও তো এই বাসাতেই থাকেন।তো ঠাডা পড়লে এই বাসার সাথে আমি আর মেঘ আমরা দুইজন তো উড়ে যাবো!বাট ঠাডা টা এখনই পড়লে ভালোই হবে আপনিও বাসাতেই আছেন সো তিনজন একসাথে উঠবো।দুজন উড়ে মজা পাওয়া যাবে না…!! (দুষ্টু হেসে)
মেঘঃ ওহহ্!জখাম কথা বলছো তো বউমিন…পুরাই জিও..! (দাঁত বের করে)
রোদঃআরে ব্যস্!এখন দেখি আমার বিড়াল আমাকেই বলে ম্যাউ…(চোখ বড় বড় করে আলোর দিকে তাকিয়ে)

#এলোকেশী_কন্যা২__
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_42

রোদঃআরে ব্যস্!এখন দেখি আমার বিড়াল আমাকেই বলে ম্যাউ…(আলোর দিকে তাকিয়ে)
তারপর আলো রোদকে খাইয়ে দিলো!রোদের হাতের বাঁধন মেঘ এত হালকা করে বেঁধেছিলো যে রোদের জন্য খোলা এটা কোন ব্যাপার না।মেঘ ভাব নিয়ে রোদের দিকে এগিয়ে এসে রোদের হাতের বাঁধন খুলো দিলো। তারপর আলো আর মেঘ নিচে চলে গেল।আর এভাবে ওদের সময় গুলো কাটতে লাগলো…!!
২দিন পর________!!
আজকে রোদের বাবা মায়ের ঢাকার ফিরার কথা!এই দুই দিন রোদ ওর পড়াশোনা নিয়েই বিজি ছিলো!মাঝে মাঝে আলো আর মেঘ রোদের কাছে গিয়ে রোদকে রাগিয়ে দিয়ে আসতো!এখন আলো রোদকে আগের মত ভয় পাই না এখন বরং মেঘ আর আলো মিলে রোদকে হেনেস্তা করে।আলোর রোদের আম্মুকে ফোন দিলো…!!
আলোঃ হ্যালো আম্মু তোমরা কখন আসবে??
আম্মুঃকেন রে?আমি গিয়ে কি করবো? তোর সংসার তুই এবার সামলে নিতে শিখ।আমি আর ফিরবো না(মুচকি হেসে)
আলোঃ তোমাকে ছাড়া ভালো লাগছে না আম্মু! তারাতারি তোমরা ফিরে এসো..??
আম্মুঃহুমম একটু পরেও আমরা গাড়িতে উঠবো!তা আমার দুই রাজপুত্র কই??
আলোঃ সারাদিন তো দুই জন মিলে কুস্তি করে এখনো তাই ই করছে।
আম্মুঃ হা হা হা!আমি এতদিন দেখছি এবার তুই দেখ..!!
মেঘঃ আম্মু দাভাই আমাকে মারছে খুব!তুমি তারাতারি চলে এসো তো (ফোন কেড়ে নিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে)
আম্মুঃ আব্বাজান আপনি কি এমন রাজ কার্য করছিলেন যে এত হাঁপাচ্ছেন…!
মেঘঃ মারামারি করছিলাম আম্মু (দাঁত বের করে)
আলোঃ আম্মু তোমার দুইটা ছেলে এত দুষ্টু বলার বাইরে।একটাও কথা শোনে না…(নাক ফুলিয়ে)
আম্মুঃ এখন ওদের সব দায়িত্ব তোর! তাই তুই সামলে নে আম্মু। আমি আর এসবের মধ্যে নেই।
আলোঃ আম্মু তারাতারি এসো তোমরা কেমন!আর হ্যা সাবধানে আসবে..(মুচকি হেসে)
আম্মুঃ হুমম!তোরাও সাবধানে থাকবি..!!
আলোঃ আচ্ছা..!!

আলো ফোনে কথা বলা শেষ করে রান্না ঘরে চলে গেল!রোদের রুমে মেঘ আর রোদ মারামারি করছে।রোদ সকাল থেকেই মনোযোগ দিয়ে পড়ছিলো! কিন্তু মেঘ গিয়ে রোদকে কামড়ে,খামছি দিয়ে, চুল এনে ওর সাথে মারামারি করতে বাধ্য করেছে!রোদের সাথে যখন মেঘ পারছেনা এখন দৌড়ে এসে আলোর কাছে রোদের নামে বিচার দিয়ে যাচ্ছে মেঘ!আবারও মেঘ এসে রোদের নামে আলোর কাছে বিচার দিয়ে গেল!এই নিয়ে রোদের নামে ১৪ বার হলো মেঘের বিচার দেওয়া! আলো গ্যাসের চুলার পাওয়া কমিয়ে দিলো! তারপর পাশে থেকে ডাল ঘুটনিটা হাতে নিয়ে রোদের রুমে দিকে হাটা ধরলো…!! রোদ মেঘের প্যান্ট ধরে টানাটানি করছে আর মেঘ শক্ত করে ওর প্যান্ট ধরে গলা ফাটিয়ে চিৎকুর করছে!মেঘের চিৎকার করা দেখে রোদ হো হো হাসছে। আলো ওর হাতের ডাল ঘুটনিটা দিয়া ধরাম করে একটা শব্দ করলো!মেঘ আর রোদ ঘাড় ঘুরিয়ে দরজার দিকে তাকালো আর দুজনেই আলোর হাত ডাল ঘুটনি দেখে মারামারি থামিয়ে চুপ করে ভদ্র বাচ্চার মত বসে রইলো..!!
আলোঃ এসব কি???(রেগে গিয়ে)
মেঘঃআমি কিছু করিনি সব দাভাইয়ের দোষ
রোদঃ আমিও কিছু করিনি(বাচ্চাদের মত করে)
আলোঃ সকাল থেকে চার বার রুম গুছালাম তারপরেও তোমরা রুমে কি অবস্থা করছো (জোরে)
মেঘঃ আমি এমন করিনি! আমি শুধু ডিগবাজি দিসি
আলোঃ তারাতারি রুম গুজাবে দুজন মিলে। তা না হলে এই ডাল ঘুটনি দিয়ে আজকে তোমাদের ডালের মত ঘুটে নিয়ে টানা রোদে শুকাতে দিবো। (নাক ফুলিয়ে রেগে গিয়ে)

রোদঃ বাব্বা!আমার বউ তো দেখি শাষণও করতে পারে বুঝি..!!(দুষ্টু হেসে)
আলোঃ আব্বু আম্মু আসছে আমাকে রান্না করতে হবে!আপনারা দুইজন তারাতারি করে রুম গুছিয়ে নিবেন।আর যদি কোন হাউকাউয়ের শব্দ শুনি তো কে দোষ করলো দেখবো না!এসেই….!! (ডাল ঘুটনি দেখিয়ে)
আলো কথাটা বলে চলে গেল!রোদ আর মেঘ রুম গুছাতে শুরু করলো!রোদের আব্বু রোদকে ফোন দিলো তারপর মেঘ আর রোদ দুজনের সাথে কথা বললো!রোদের আব্বুরা গাড়িতে উঠেছে তাই রোদকে জানালো।রোদ ওর বাবাকে সাবধানে আসতে বললো..!!রোদ আর মেঘ রুম গুছিয়ে নিচে গেল।রোদ হাতে বই নিয়ে ড্রয়িং রুমের সোফাতে বসে বইয়ে পাতাতে চোখ বুলাচ্ছে আর মেঘ বসে ডোরাকেক খাচ্ছে আর টিভি দেখছে।আলো রান্না ঘরে রান্না করছে।রকি মেঘের পাশে বসে মেঘের কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে!আলো এসে রোদকে একমগ কফি দিয়ে গেল!রোদ কফি খাচ্ছে আর বইয়ের পাতায় চোখ বুলাচ্ছে!এর মাঝে আকাশ রোদকে ফোন দিলো…!!
রোদঃ হুমম বল..!!(ফোন রিসিভ করে)
আকাশঃকই তুই
রোদঃ বাসায়
আকাশঃ সারাদিন বাসায় কি করিস রে তুই শালা??
রোদঃ বউ পাহারা দিচ্ছি (বাঁকা হেসে)
আকাশঃ এজন্য গুনি লোকেরা বলে বিয়ে করলে বন্ধুরাও পর হয়ে যায়।আজকে বুঝলাম রে বন্ধু (আফসোসের সুরে)
রোদঃহুমম!আপনার পেছন পার্টে লাথি দিমু এত বেশি বোঝার জন্য! আর লাথিটা আপনি নোবেল হিসেবে গ্রহন করবেন কেমন…!! (হেসে হেসে)
আকাশঃ থাক!তোমার আর বের হওয়া লাগবে না বন্ধু! তুমি বাসাতেই থাকো!আংকেলরা কবে ফিরবে..??
রোদঃ আজকে ফিরবে..!!

আকাশঃ আচ্ছা তাহলে থাকো বন্ধু তুমি বউ পাহারা দাও।আমরা তো আর সেই কপাল করে পয়দা হয়নি। এখন আমরা একবার পেছনে থাবড় দেই! আর একবার কপালে থাবড় দেয়। এটা দেখে যদি বাবা মা দয়া কইরা একখান বিয়া দেয় তো…!!
রোদঃ হা হা হা! হুম হুম এটাই কর আর এটাই বেটার হবে..!!বেস্ট অফ লাক..!(হেসে হেসে)
আকাশঃওকে কি আর করা!থাক তাহলে কেমন!বাই
রোদঃ হুমম!বাই
রোদ উঠে ওর রুমে গিয়ে সাওয়ার নিলো!তারপর একটা ঘুম দিলো।রাতে অনেকটা সময় পড়াশোনা করে এজন্য ঘুম পুরা হয় না।আলো ওর হাতের কাজ শেষ করে মেঘকে গোসল করিয়ে নিজেও গোসল সেরে নিলো!আলো রোদকে খেতে ডাকতে এসে দেখে রোদ ঘুমাচ্ছে তাই আলো আর ডাকলো না রোদকে!আলো খাবার নিয়ে মেঘকে খাইয়ে দিয়ে মেঘের রুমে মেঘকে ঘুম পাড়িয়ে দিলো।মেঘের সাথে বকবক করতে করতে আলো নিজেও ঘুমিয়ে পড়ছে কখন টের পায়নি…!!
২ ঘন্টা পর রোদের ফোন একটা ফোন আসে!ওয়ার্ডড্রেপের উপর ফোন থাকায় রোদেরও ইচ্ছে করছে না উঠে ফোনটা রিসিভ করতে!এভাবে তিনবার কল কেটে যাওয়ার পর, আবার রোদের ফোনের রিংটোনটা বাজতে থাকে!রোদ উঠে ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে ওর বাবার গাড়ির ড্রাইভার ফোন করছে!রোদ কল রিসিভ করে কানে ধরে হ্যালো বলতে…!!

এলোকেশী কন্যা  সিজন ২ পর্ব ৩৭+৩৮+৩৯

রোদঃ হ্যালো…!!
ড্রাইভারঃ রোদ বাবা গো সর্বনাশ হয়ে গেছে (কেঁদে কেঁদে)
রোদঃ ক ক কি হয়েছে আংকেল?আপনি কাঁদছেন কেন???(কাঁপা সুরে)
ড্রাইভারঃ রোদ বাবা আমাদের গাড়ি এক্সিডেন্ট হয়ে গেছে রোদ বাবা! স্যার আর মেডাম আর নাই গো রোদ বাবা!গাড়িটা পাহাড় থেকে খাদে পড়ছে..!
(কেঁদে)
রোদঃ ম ম মানে ক কি সব যাতা বলছেন?আমার আব্বু আম্মু নেই মানে কি ড্রাইভার আংকেল ( চিৎকার করে কেঁদে দিয়ে)
ড্রাইভারঃ আমি গাড়ি থেইকা লাফ দিসি কিন্তু স্যার মেডাম নামার আগেই গাড়ি পাহাড় থেইকা খাদে পড়ছে..!! (কেঁদে কেঁদে)
রোদঃ আ আ আপনি এখন কোথায়??? আমি এক্ষুনি সেখানে যাবো??
ড্রাইভারঃআমি রামগড় আছি রোদ বাবা (কেঁদে কেঁদে)
রোদঃ আম আম আমি এখুনি আসছি
রোদের চিৎকার শুনে মেঘ আর আলো ঘুম থেকে এক লাফে উঠে রোদের রুমে দৌড়ে যায়!রোদকে কাঁদতে দেখে আলো কিছু বুঝতে পারেনা।রোদ ওর গাড়ির চাবি নিয়ে এক হাতে আলোর হাত আর আরেক হাতে মেঘের হাত ধরে জোরে পা চালিয়ে নিচে নেমে যায়!রোদ শিউলি বাসায় থাকতে বলে আলো আর মেঘকে নিয়ে রোদ গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে..!!রোদ বার বার চোখ মুছে তাও চোখ চোখের পানিতে ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে! আলো রোদের চোখে পানি দেখে জিজ্ঞাসা করেই ফেললো…!!
আলোঃক ক কি হয়ে রোদ???
রোদঃ ড্রাইভার আংকেল ফোন দিয়েছিলো।আব্বু গাড়িটা নাকি এক্সিডেন্ট করছে।
আলোঃ কিহহ
মেঘঃ আম্মু! আম্মুর কাছে যাবো আমি দাভাই(কেঁদে দিয়ে)
রোদঃমেঘ সোনা আব্বু আম্মুর কিছু হবে না। তুই একদম কান্না করবি না। আমরা ওখানেই তো এখন যাচ্ছি সোনা তুই কাঁদিস না ভাই আমার (মেঘের চোখ মুছে)

রোদের কথা শুনে মেঘ কেঁদে দেয়!আলো, মেঘ, রোদ তিনজনের চোখ দিয়েই অঝোরে পানি পড়ছে!সবাই একটা চিন্তা করছে যেন এসব কিছু মিথ্যা হয়।রোদ খুব দ্রুত ড্রাইভ করছে!ঢাকা থেকে রামগড় প্রায় ৪ ঘন্টার রাস্তা! অতি দ্রুতি ড্রাইভ করাতে রোদ ৩ ঘন্টায় এসে পড়ছে!রোদ ড্রাইভার আংকেলকে ফোন দিলো। ড্রাইভার আংকেল এক্সিডেন্টের জায়গায় নিয়ে গেল!ড্রাইভারে মাথা ফেটে গেছে স্থানীয় লোকে ড্রাইভার আংকেল কে কাছের হাসপাতালে নিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিয়েছে।
রোদ সেই পাহাড়ে কাছে গিয়ে দেখে ওদের গাড়ির কোন চিহ্ন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না।গাড়ি পাহাড় থেকে একদম পাহাড়ের নিচে পড়ছে!রোদ ধপ করে মাটিতে বসে পড়লো!রোদ মেঘ দুইজনেই আহাজারি করে কাঁদতে শুরু করলো!আলো কাকে সামলাবে রোদকে নাকি মেঘকে নাকি নিজেকে…!!মেঘ আর রোদের কান্না ধ্বনি পাহাড়ে প্রতিধবনি হচ্ছে। ওদের তিনজনের এই কষ্টের আহাজারি কান্নার সাক্ষি এই পাহাড়,আকাশ আর গাছপালা…..!!ওদের কষ্ট এখন কেউ উপলব্ধি করতে পারবে না! কারন যার যখন হারায় সেই তখন সেই কষ্টটার মর্ম বুঝে….!!

এলোকেশী কন্যা  সিজন ২ পর্ব ৪৩+৪৪+৪৫