এলোকেশী কন্যা সিজন ২ পর্ব ৩৭+৩৮+৩৯

এলোকেশী কন্যা সিজন ২ পর্ব ৩৭+৩৮+৩৯
লেখনীতে:- নূরজাহান আক্তার (আলো)

মেঘঃ যে বমি করছে তার বাসায় কি ওয়াশরুমে নেই নাকি তার বাসায় বালতি নেই দাভাই?আর সব কিছু রেখে বেলুনের ভিতর বমি করলো কেন??(চিন্তিত হয়ে)
এখন মেঘের এমন প্রশ্নের কি উওর দিবে রোদ সেটাই বুঝতে পারছেনা।এদিকে দুইভাইয়ের কথা শুনে আলোর মন বলছে এখুনি পাখি হয়ে ঠুস করে আকাশে উড়াল দিতে পারলে অনেক ভালো হতো!এরা দুইভাই দুটোই হয়েছে উচ্চ মাত্রার অসভ্য! ছোট গাধাটা না হয় না বুঝে জিজ্ঞাসা করছে এসব! বাট বড় গাধাটা এসব কি বললো??আলো আর কিছু না বলে ওদের ফেলেই সামনে দিকে জোরে হাঁটা দিলো!আলোর দেখে মেঘ ও আলোর পেছন পেছনে দৌড়াতে শুরু করলো।

কিছু অতিরিক্ত সচেতন মানুষের জন্য রাস্তা ঘাটে
এমন অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয় অনেক কেই!মেঘের মত এমন অবুজ শিশুরা এসব কিছু রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে জানার কৌতূহল প্রকাশ করে! আর এই বিষয়ে জানার জন্য ফট করে বড়দের জিজ্ঞেস করে ওঠে। তখন বড়দের আর কিছু বলার থাকেনা ! অনেক বাবা মা তো আবার রাস্তাতেই বাচ্চাটাকে মার ধর করতে শুরু করে! তার একটাই অপরাধ সে কেন প্রোটেকশনের ব্যাপারে জানতে চাইবে?আর পরে ওই বাচ্চাটি মার খাওয়ার পর আরো কৌতূহলী আর জেদি হয়ে ওঠে! কারন আমাদের সবার একটা ব্যাড বিহেভ আছে! আর সেটা হলো, যে জিনিসটার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি কর হয় আমরা সেটাই উপরেই বেশি কৌতূহল প্রকাশ করি।সেটা চুরি করে হোক, লুকিয়ে হোক, সব চোরামি পন্থা অবলম্বন করে হলেও জানার চেষ্টা করি!এর প্রধান কারন মানুষ পজেটিভ কিছুর চেয়ে নেগেটিভ কিছুর উপর আকৃষ্ট হয় বেশি।আর এক্ষেতে
বাচ্চারাও ঠিক তাই করে থাকে….!!তাই বলছি এমন কিছু আপনার সাথে ঘটলেও! আপনি নিজের মেধা খাটিয়ে পরিস্থিতি সামলে নেওয়ার চেষ্টা করবেন….!!
বাচ্চাদের ভালো করে বুঝালে দেখবেন বুঝবে! বাট আপনি যদি মারধর করেন বা ধমক দেন! তখন তাদের মনে জেদ এর সৃষ্টি হয়!এমন পরিস্থিতিতে পড়লো আপনি ওদের মনোযোগ অন্য দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন।কারন ওদের মনোযোগ অন্য দিকে দিকে এটা ওদের মাথা থেকে আউট হয়ে যেতেও পারে!বাচ্চাদের ধমকালে বা ভয় দেখালে এর সমাধান হবে না!আমাদের দেশে রাস্তা ঘাটে ব্যবহারিত প্যাড বা প্রোটেকশন পড়ে থাকাটাও কমন হয়ে গেছে!কারন একটাই আমাদের দেশে সচেতন মানুষে বড্ড বেশি অভাব।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

এখন বলতে পারেন! তাহলে কি এসব ব্যবহারের পর আলমারিতে তুলে রাখবো?আমি কিন্তু এটাও মিন করিনি। আল্লাহ আপনাকে আমাকে সবাইকেই বিবেক বুদ্ধি দিয়েছে!তাহলে কেন বুদ্ধি খাটিয়ে নিজে সচেতন হবেন না।দশ তলা বিল্ডিং থেকে ঠাস করে তো ব্যবহারিত প্রোটেকশন ফেলে দেন রাস্তায়! সেই পথের পথিক যদি কোন মা আর ছেলের সামনে ওটা পড়ে!তাহলে ওরা ঠিক কতটা লজ্জাজনক পরিস্থিতি পড়বে! এটা একটু নিজে নিজে আগে কল্পনা করে নিন!তাহলেই বুঝবেন এটা কেমন লজ্জা জনক একটা পরিস্থিতি…!! এজন্য কথাটা বললাম।আর কোন মেয়ে মেয়ে তো এমন ভাবে ডাস্টবিনে বা রাস্তাঘাটে প্যাড ফেলে! মনে হয় ওটা ওদের নিজের বাবার তৈরী করা রাস্তা! কেন রে প্যাডটা কি কাগজের প্যাকেটে মুড়িয়ে ফেলা যায় না।আপনি নিজে সচেতন হলে, আপনার জন্য তাহলে অন্যকে এতটা লজ্জায় পড়তে না হতেও পারে।
ওইদিকে_____!!
আলো আর মেঘ হাঁটছে আর রোদ হাবলার মত তাকিয়ে ওদের দুজনের চলে যাওয়া দেখছে।মেঘ আলোর হাত ধরে লাফাচ্ছে আর হাঁটছে। আর আলো মনে মনে রোদ এর গুষ্টি উদ্ধার করছে! রোদ আর কিছু না ভেবে ও আস্তে আস্তে হাঁটা শুরু করল! কিন্তু সামনে এগোতেই মেঘ আর আলো খেয়াল করল! সাদা সাদা এক ধরনের ফুল অনেকগুলো মাটিতে পড়ে আছে! ফুলগুলোর আকার টা খুব সুন্দর! মেঘ তিনটা ফুল নিয়ে আলো হাতে দিল! আলো খুশি হয়ে মেয়েকে ধন্যবাদ দিল! আলোর ধন্যবাদ এর বিনিময়ে মেঘ আলোকে একটা লজ্জা মাখা হাসি উপহার দিল।এদিকে ফুল দেখে মেঘ একটু আগের দেখা জিনিসটার কথা ভুলে গেলো।এতে রোদ আর আলোও হাফ ছেড়ে বাঁচলো।

রোদ এসে আলো আর মেঘের সামনে দাঁড়ালো! মেঘ রোদকে একটা ফুল দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করল,,,!!
মেঘ: দাভাই দেখো ফুলটা অনেক সুন্দর তাই না?
রোদ:হুমম!!
মেঘ: দাভাই তুমি কি জানো এই ফুলটার নাম কি?
রোদ: হুমম!এটা চালতা ফুল!
আলো: এটাই চালতা ফুল? অনেক সুন্দর হয় তো দেখতে চালতা ফুল! আমি কখনোই এর আগে দেখি নাই! তবে শুনছিলাম( ফুলের দিকে তাকিয়ে)
রোদ: এইযে রানী এলিজাবেথ বাজির কথা কি আপনার মনে আছে? নাকি নতুন করে আমাকে মনে করিয়ে দিতে হবে?( দুষ্টু হেসে)
আলো: ম ম মনে আছে ব ব বলুন কি করতে হবে?( ভয় পেয়ে)
রোদ: বেশি কিছু না!আপাতত তুমি এখন আমাকে চালতা ফুল দিয়ে প্রপোজ করবে ..!!( দুষ্টু হেসে)
আলো: মানে কি?ব ব ব বলছি এটা তো রাস্তা?( মুখ কাচুমাচু করে)
মেঘ: বউমনি তুমি কি ভয় পাচ্ছ?
রোদ: ভীতুর ডিমরা তো ভয় পাবেই! আর এটাই তো স্বাভাবিক তাই না মেঘ ( খোঁচা দিয়ে)
মেঘ: বউ মনি তুমি তো আমার বউ মনি! তুমি ভয় পেতেই পারো না !তুমি দাভাই কে এখুনি প্রোপোজ করে দেখিয়ে দাও তো..!!
রোদ: ওর দ্বারা সম্ভব না মেঘ! চল ছেড়ে দে! কিছু মানুষ আছে কথা দিয়ে কথা রাখতে পারে না!বাট মুখেই বড় বড় কথা বলে! (গম্ভীর কন্ঠে)

মেঘ: দা ভাই তুমি একদম আমার বউ মনির সাথে এভাবে কথা বলবে না বলে দিচ্ছি! আমার বউমনির অনেক সাহস।( কোমরে দুই হাত রেখে নাক ফুলিয়ে)
রোদ: কত যে সাহস সেটা তো দেখতেই পাচ্ছি? আর দেখাতে হবে না ! (খোঁচা মেরে)
রোদ যে আলো কে এখন এরকম ভাবে ফাসাবে আলো কল্পনাও করেনি! কিন্তু সমস্যা হলো মেয়ে হয়ে এখন একটা ছেলেকে কিভাবে প্রপোজ করবে? আলো স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে দুই ভাইয়ের কথা শুনছে! তবে আলো এটা বুঝতে পারছে যে! রোদ ওকে খোঁচা দিয়ে কথাগুলো বলছে! আলো অলরেডি কাপাকাপি শুরু করে দিয়েছে! এতদিন কোনো ছেলে পাশে এসে দাঁড়ালোও কেমন জানি একটা অস্বস্তি ফিল করতো!কিন্তু সেখানে রোদ তো ওর হাজব্যান্ড তারপরেও আলো একটু আনইজি ফিল করছে…!!
আলো কয়েক কেজি সাহস নিয়ে আর কিছু না ভেবে দুইটা চালতা ফুল তুলে নিল! আর গুটি গুটি পায়ে মেঘের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো! মেঘ অবাক হয়ে আলোর দিকে তাকিয়ে আছে! আলো মুচকি হেসে হাঁটু গেড়ে মেঘের সামনে বসলো! তারপর মেঘের দিকে ফুল দুটো এগিয়ে দিয়ে….!!
আলো: মেঘ বাবু! তোমার দাভাই এর আগে তুমি এসেছো আমার জীবনে! তোমার দাভাইকে আমার জীবনের পাওয়ার জন্য তুমি একমাত্র উসিলা! তোমার সূত্র ধরে আমি তোমার দাভাইয়ের কে পেয়েছি! আমার কোন ভাই নেই? কিন্তু আমি তোমাকে পেয়েছি মেঘ বাবু! আমি চাই সারাটা জীবন তুমি আমাকে এভাবে সাপোর্ট করে যাও! আমি আমার এই দুষ্টু মিষ্টি আমার মেঘ বাবুটাকে অনেক ভালোবাসি! আল্লাহর কাছে অনেক অনেক শুকরিয়া জানাই কারণ আমি তোমার মত একটা ভাই পেয়েছি! আমার বাড়িয়ে দেওয়া এই ফুল দুটি নিয়ে! তুমি তোমার আর আমার এই ভাই বোনের ভালোবাসা টুকু সাদরে গ্রহণ করে নাও মেঘবাবু!তাহলে আমি অনেক খুশি হবো…!!( মুচকি হেসে)

মেঘ অবাক হয়ে আলোর দিকে তাকিয়ে আছে! ওর ছোট্ট মাথায় এটাই বুঝতে পেরেছে যে ! আলো মেঘকে অনেক ভালোবাসে! আর এ জন্য মেঘ অনেক খুশি! মেঘ আলোর হাত থেকে ফুল নিয়ে মুখে বিশ্বজয় করা হাসির রেখা টেনে আনে!আর মেঘ সাথে সাথে আলোর গলা জড়িয়ে ধরে আর আদর দিয়ে দেয়! আর পাশে দাঁড়িয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে রোদ! কারণ রোদ তো বলল ওকে প্রোপোজ করতে ! বাট আলো মেঘকে ভাই বোনের প্রোপোজ করে ফেললো! পৃথিবীতে এর আগে এরকম ভাবে কোন ভাই কিংবা বোন, দেবর কিংবা ভাবি! এভাবে কেউ কাউকে প্রপোজ করছে কিনা এটা রোদেরও জানা ছিল না!
আলো এবার আরো দুটো ফুল নিয়ে মুচকি হেসে রোদের দিকে এগিয়ে গেল! আলো আর রোদ দুজন সামনাসামনি দাঁড়িয়ে আছে! আলো কি কিভাবে কি করে শুরু করবে বুঝতে পারছে না! আর রোদ ওর ঠোঁটের কোনে দুষ্টু হাসির রেখা টেনে! পকেটে দুই হাত ঢুকিয়ে সাহেবি স্টাইলে দাঁড়িয়ে! আলোর দিকে তাকিয়ে আছে! রোদ তো অনেক খুশি! কারন কোন মেয়ে যদি কোন ছেলেকে প্রপোজ করতে আসে! তাহলে ছেলেটির খুশি লাগারই কথা! যাকে প্রাণের চেয়ে বেশি ভালোবাসে তার ওপরে সে যদি বিয়ে করা বউ হয়!আর বউ হয়েই যদি প্রপোজ করে তাহলে তো কোন কথাই নেই!সেই ছেলে তো তাহলে সোনায় সোহাগা…!!

আলো অন্য পাশে তাকিয়ে মনে মনে নিজেকে অনেক বুঝিয়ে সাহস জোগাড় করে নিল! আলোকে মেঘ ওর আঙ্গুল দেখিয়ে বেস্ট অফ লাক বললো! আলো আর কিছু না ভেবে রোদের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পরল! আর রোদের দিকে ফুল দুটি এগিয়ে দিয়ে…!!
আলো: আপনাকে আমি আমার ভালো থাকার পাসওয়ার্ড বানাতে চাই! আপনি কি হবেন আমার ভালো থাকার পাসওয়ার্ড?? প্রতিটা মানুষের জীবনে সুখ ,দুঃখ ,রাগ ,অভিমান সব মিলিত হয়েই চলমান আমাদের জীবন! আমি আমার জীবনে সুখ-দুঃখ আপদ-বিপদ সবমিলিয়ে প্রতিটা মুহূর্তে প্রতিটা সেকেন্ড এ আপনাকে আমার পাশে চাই! আমি আপনার প্রত্যেকটা অনুভূতিকে ফিল করতে চাই! আমি আপনার জীবনে রোদের আলো হয়ে আলোকিত হয়ে থাকতে চাই! আপনার কাছে আমার এর থেকে বেশি কিছু চাওয়ার নেই! এবার বলুন আপনি কি হবেন আমার ভালো থাকার পাসওয়ার্ড….?? ( লজ্জায় লাল হয়ে)

রোদও আলোর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে আলোর হাত থেকে ফুল দুটি নিলো! আর আলোর কপালে রোদ ওর ঠোঁট ছোয়ালো! আর পবিএ বন্ধনের পবিএ ভালবাসার পরশ একে দিলো।তারপর রোদ
আলোকে শক্ত করে বুকের সাথে জড়িয়ে নেয়!রোদ এভাবেই আলোকে ওর আনসারটা টা জানিয়ে দেয়! আর আলোরও বুঝে এই রাগী ছেলেটাও ওকে খুব ভালোবাসে! রোদ আলোকে জড়িয়ে ধরে এটাই বুঝল যে আলোক খুব কাঁপছে!আর এমন ভাবে কাঁপার একটাই কারন হতে পারে!আর সেটা হলো প্রিয় মানুষটাকে ভালোবাসার কথা জানানোর প্রথম নামহীন কোন অনুভূতি জন্য ! এরমধ্যে মেঘ দৌড়ে এসে আলো আর রোদ দুজনকে একসাথে জড়িয়ে ধরলো!রোদ মেঘ আর আলোকে দুজনকেই বুকে টেনে নিলো!নিরব এই নির্জন জায়গাতে কিছু গাছ পালা,মাথার উপরের নীল আকাশ,গাছের কোণে লুকিয়ে থাকা পাখির কিচিরমিচির শব্দ ওদের ভালবাসার সাক্ষী হয়ে রইলো!আর এটা অনেক সুখের একটা মুহূর্ত ….!!
তারপর রোদ আর মেঘ ওরা দুইজন দুইটি দুইটি চারটি করে ফুল নিলো!আর দুই ভাই একসাথে আলোর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো! রোদ আর মেঘ দুজন দুজনের দিকে দিকে তাকিয়ে একসাথে বলে উঠলো….!!
রোদ আর মেঘ: আমরা যেমন তোমার ভালো থাকার পাসওয়ার্ড!তেমনি তুমি আমাদের ভাল থাকার একটা প্রধান কারন!আমরা সবাই তোমাকে খুব ভালোবাসি! আমরা চাই তোমার মুখে সব সময় এই হাসি টা যেন থাকে! কারন তোমার মুখে এই হাসিটাই আমাদের ভাল থাকার পাসওয়ার্ড….!! ( দুই ভাই একসাথে)

#এলোকেশী_কন্যা২__
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_38

দুই ভাইয়ের প্রোপোজ করার স্টাইল দেখে আলো কি বলবে বুঝতে পারছেনা! ওর চোখের কোণে পানি জমে গেছে! পৃথিবীতে এর থেকে সুখের মুহুর্ত আর আছে কি না আলোর জানা নেই! এত সুখ এসে যে আলোর ভাগ্য তে ধরা দিবে সেটা আলো এর আগে চিন্তাও করতে পারেনি! আলো ছল ছল চোখে দুই ভাইয়ের থেকে একসাথে ফুলগুলো হাতে তুলে নেয়! আলো মেয়েকে জড়িয়ে ধরে মেঘের কপালে আদর আদর দিয়ে দেয়! এবার রোদ ওর কপালটা আলোর দিকে এগিয়ে দেয়! আলো ফট করে বলে ওঠে…!!
আলো: অসভ্য..!!
রোদ: যা বাবা! দুজনই তো একসাথে প্রোপোজ করলাম। তাহলে একজন আদর পাবে কেন শুনি? এটা কিন্তু রীতিমত অন্যায় হচ্ছে ?( মুখ ফুলিয়ে)
মেঘ: দাভাইকে একদম আদর দিবে না বউমনি! দাভাই অনেক দুষ্টু …( রোদকে রাগানোর জন্য)
আলো:হুমম! একদম তুমি ঠিক বলছো মেঘ বাবু?তোমার দাভাই অনেক দুষ্টু! তাই উনাকে একটুও আদর দিব না।
রোদ: ওরে দুষ্টুরা! এখন আমাকেই দুষ্টু বলা হচ্ছে! মেঘ তুই আমার বউ এর থেকে আদর নিয়ে! এখন আমাকে বলছিস যেন আদর না দেয়! দাঁড়া তোর হচ্ছে…..!!

রোদ উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে আলো আর মেঘ ভোঁ-দৌড় দেয়! তারপর তিনজন মিলে একটা নদীর পাড়ে যায়! এই নদীর পাড় টা মন ভালো করার মত একটা জায়গা! প্রতিদিন অনেক অনেক মানুষ ভিড় জমায় এখানে! ইয়া বড় বড় কৃষ্ণচূড়া ফুলের গাছের নিচে বসার জায়গা আছে! আশেপাশে ছোট ছোট অনেক দোকান! মেঘ আলোর হাত ধরে টানতে টানতে একটা দোকানের সামনে নিয়ে যায়! দোকানের সামনে গিয়ে মেঘ পুতুলওয়ালা লাল কালারের ক্লিপ পছন্দ করে আলোকে দেয়! মেঘ একদম বাচ্চাদের পুতুল ওয়ালা ক্লিপ আলোর জন্য পছন্দ করেছে! এটা দেখে আলো মুচকি হাসে! রোদ এসে আলোকে লাল, কালো,সবুজ কালারের রেশমি চুড়ি কিনে দেয়! ওরা দুই ভাই আলোকে ওদের পছন্দমতো আরো কিছু জিনিস কিনে দেয়! তারপর তিনজন বাদাম কিনে নদীর কিনারে গিয়ে পানিতে পা ভিজিয়ে বসে পড়ে!
মেঘ বাদামের খোসা ছাড়াতে পারে না তাই আলো মেঘকে বাদামের খোসা ছাড়িয়ে দিচ্ছে! আলো আর মেঘ ওদের মত করে গল্প জুড়ে দিয়েছে। আর রোদ এই দুটো তোতাপাখির বলা গল্পগুলো শুনছে! সূর্য অস্ত যাচ্ছে এজন্য চারিদিকে লাল আভা ছড়িয়ে দিয়েছে! দলে দলে পাখিগুলো তাদের বাসায় ফিরে যাচ্ছে! মাথার উপর দিয়ে কিছু কিছু কা কা শব্দ করে উড়ে যাচ্ছে! মেঘ আকাশের দিকে তাকিয়ে আলোকে জিজ্ঞাসা করে উঠলো…..!!
মেঘ: আচ্ছা বউমণি পাখিরা কি ঘুমায় না? (আকাশের দিকে তাকিয়ে)
আলো: কে বলল পাখিরা ঘুমায় না? পাখিরাও ঘুমাই! জানো পাখিদের কে বলা হয় ভোরের দূত( মুচকি হেসে)
মেঘ: ভোরের দূত আবার কি?( চিন্তিত হয়ে)

আলো: এখন তো পাখিদের উড়ে যেতে দেখছো তাই না ! এখন ওরা ওদের বাসায় ফিরে যাচ্ছে ! আর এখন বাসায় গিয়ে ওদের ছানাদের কে খাবার খাওয়াবে! তারপর ওদের ছানাগুলোকে খাওয়ানো শেষ করে! মা পাখিটা ছানাগুলোকে নিয়ে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়বে!তারপর পাখিরা ভোরের আজানের সাথে সাথে ঘুম থেকে উঠে আর আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করবে!যখন সকালে হালকা আলো ফুটে পাখিরা কিচিরমিচির শব্দ করে আমাদের ঘুম থেকে তারাতারি উঠতে বলে।ওরা কিচিরমিচির শব্দ করেই আমাদের বোঝায় যে সকালে হয়ে গেছে!আর আমরা যাতে সকালে উঠে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করি!!এজন্য পাখিদের ভোরের দূত বলা হয়..!! (মেঘের দিকে তাকিয়ে)
মেঘঃবউমনি আমি সারারাত জেগে পড়াশোনা করি! তাই সকালে তারাতারি উঠতে পারিনা। (দাঁত বের করে)
রোদঃ মেঘ এটা কত নাম্বার ঢপ দিলি রে ভাই…??
মেঘঃএটা ওয়ান টু পক পক নাম্বার ঢপ দিলাম দাভাই..!! (খিলখিল করে হেসে)
আলোঃ হা হা হা! ফাজিল একটা (মেঘের গাল টেনে)
তারপর তিনজন টুকটাক খাওয়া দাওয়াত করে ওরা বাসায় চলে গেল!রোদ মেঘ আর আলোকে বাসায় ঢুকিয়ে দিয়ে বাইরে চলে গেল।আলো আর মেঘ ওরা রুমে ঢুকে ঠাস করে বেডে শুয়ে পড়লো।আর রোদ সেই হুজুরের সাথে দেখা করতে গেল!রোদ হুজুরের বাসায় গিয়ে হুজুরের বারান্দায় পেতে রাখা চেয়ারে বসলো!রোদ বসতেই হুজুর এসে দাঁড়ালো আর রোদ হুজুরকে দেখে সালাম দিলো!তারপর রোদ হুজুরের দিকে তাকিয়ে বললো..!!
রোদঃ আংকেল আপনি আমাকে আজকে আসতে বলেছিলেন !এজন্য আসলাম…!!
হুজুরঃ আজকে শনিবার এজন্যই তোমাকে আসতে বলেছিলাম!আর শুনলাম তুমি নাকি বউমাকে নিয়ে ঢাকা ব্যাক করছো।(চেয়ারের বসতে বসতে)

রোদঃ জ্বি!
হুজুরঃ এটা নাও!আর আমার ফোন নাম্বারটা ফোনে সেভ করে নাও!কোন সমস্যা দেখা দিলে আমাকে ফোন করবে…!!
রোদঃএটা কি..?? (জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে)
হুজুরঃ এটা সাত টা ধাতু দিয়ে তৈরী করা একটা তাবিজ!এটা সব সময় বউ মার সাথে রাখলে ভালো হয়! বিশেষ করে পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে। যাতে বউমার শরীরে খারাপ কিছু প্রবেশ করতে আর না পারে।
রোদঃ আমার জানামতে তাবিজ ব্যবহার করা উচিত নয় মুসলমানদের জন্য!তাহলে এসব আ ম
হুজুরঃ এই তাবিজের মধ্যে আয়াতুল কুরসি আর কিছু কুরআনের আয়াত লিখা আছে।এছাড়া আর কিছু না…!!
রোদঃ আর ওর তো সেদিন শরীর বন্ধ করে দিয়েছিলেন!এখন থেকে কি ওর শরীর বন্ধ করাই থাকবে।(হুজুরের দিকে তাকিয়ে)
হুজুরঃ না! কালকে সকালে বাসায় পৌঁছে আমাকে জানিও! আমি বউমার শরীর বন্ধ না থাকার ব্যবস্থায় করে দিবো।আর হ্যা আর একটা কথা বলার ছিলো….!!
রোদঃ জ্বি বলুন আংকেল…!!
হুজুরঃ বিয়ে মানে পবিএ একটা বন্ধন!এখন তো তোমরা স্বামী স্ত্রী এখন তো আর কোন সমস্যা নেই!
তাই বলছিলাম যে তোমরা যত শ্রীঘই পারো একটা বাচ্চা নিয়ে নাও.!! তুমি কি বুঝতে পারছো আমি কি বোঝাতে চাচ্ছি ..!
রোদঃজ্বি আংকেল!( মাথা নিচু করে)
হুজুরঃ আর আরেকটা কথা!গোসল দেওয়া সময় জামাকাপড় পড়েই গোসল করতে বলবে, দুপুর বেলা খোলা চুলে ছাদে বা উঠানে যে নিষেধ করবে!আর পিরিয়ডে সময় সচেতন থাকতে বলবে।
রোদঃ জ্বি আচ্ছা! আংকেল আজ তাহলে আসি!আপনি ভালো থাকবেন আর আমাদের জন্য দোয়া করবেন।(মুচকি হেসে)
হুজুরঃ ইনশাআল্লাহ!সাবধানে যেও! আর যে কোন সমস্যাতে আমাকে ফোন দিবে কেমন।
রোদঃজ্বি আংকেল!আসসালামু আলাইকুম…!!
হুজুরঃ ওয়ালাইকুম সালাম..!!

তারপর রোদ বাসায় চলে যায়!আলো আর মেঘ ওদেে সব জিনিস গুছিয়ে নিয়েছে।রোদ বাসায় ফিরে সাওয়ার নিয়ে নিলো! তারপর তিনজন মিলে খেয়ে নিলো।রোদের আম্মু তিনজনের জন্য খাবার প্যাক করেও দিয়েছে!রোদ ওর রুমে গিয়ে বসতেই রোদের আম্মু এসে রোদের পাশে বসলো।রোদ মুচকি হেসে ওর আম্মুর কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো!রোদের আম্মু রোদের কপালে আদর দিয়ে দিলো! আর রোদের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো…!!
রোদের আম্মুঃ আমি জানি আব্বু তুমি দায়িত্বশীল একটা ছেলে!তারপরেও মা হয়ে তোমাকে কথাটা বলাটা আমার দায়িত্ব মনে করছি তাই বলছি!আব্বু মেঘ আর আলোর দায়িত্ব আমি তোমাকে দিলাম!ওরা দুজন সাথে তুমিও সাবধানে যাবে! আর ওদের খেয়াল রাখবে কেমন।মাথা গরম করবেনা যা করবে ভেবে- চিন্তে করবে।
রোদঃ হুমম! তুমি আর আব্বু বেশিদিন এখানে থেকো না।তোমাদের ছাড়া বাসাটা শূন্য শূন্য লাগে।
রোদের আম্মুঃ হুমম আমি যত শ্রীঘই পারি বাসায় চলে আসবো আব্বু। তোমরা সাবধানে থাকবে কেমন…!! (রোদের কপালে আরেকটা আদর)
তারপর ওরা তিনজন রেডি হয়ে নিলো!সবার থেকে বিদায় নিয়ে নিলো মেঘ, আলো রোদ।রোদের আম্মু আলো, মেঘ,আর রোদের কপালে আদর দিয়ে দিলো!তারপর পর পর তিনজনকেই জড়িয়ে ধরলো রোদের আম্মু ।রোদের আব্বুও মেঘকে কোলে নিয়ে মেঘের কপালে আদর দিলো!আলোর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো! আর রোদকে জড়িয়ে ধরলো আর সাবধানে যেতে বললো।তারপর ওরা তিনজন গাড়িতে উঠে বসলো।আর স্টেশনের দিকে রওনা দিলো….!!

৩০ মিনিট পর ওরা স্টেশনে পৌঁছে যায়!ড্রাইভার ওদের স্টেশনে রেখে চলে যায়!রোদ আলো আর মেঘ ওরা ওদের কেবিনে চলে যায়!রোদ মেঘ আর আলোকে কেবিনে রেখে আরো কিছু শুকনা খাবার নিয়ে আসলো!তারপর কেবিনের দরজা লক করে একটা বেডে শুয়ে পড়লো!আলো আর মেঘ শুয়ে শুয়ে গল্প করছে!রোদ ওর পকেট থেকে ফোন বের করে মেসেঞ্জারে আবিরের সাথে চ্যাট করছিলো!ঠিক তখন আলো মেঘকে বললো..!!
আলোঃ মেঘবাবু তুমি কি পশুর নাম বলতে পারো?
মেঘঃ হুমম পারি! বাট এখন মনে পড়ছে না!রাতের বেলায় আমার পশুর নাম মনে পড়ে না বউমনি…!!
আলোঃ মনে করার চেষ্টা করো মেঘবাবু!আমি জানি তুমি পারবে..??(মেঘের গাল টেনে)
মেঘঃ উমমম! উমমম!হ্যা মনে পড়ছে একটার নাম বিড়াল…(লাফিয়ে উঠে)
আলোঃ হুমম! তারপর বলো..!!
মেঘঃ আরো বলতে হবে??(চিন্তিত হয়ে)
আলোঃমেঘবাবু ১০ টা পশুর নাম বলো শুধু..!!
মেঘঃ বউমনি আমি তো ৬ টা পশুর নাম পারি শুধু..!!
আলোঃ আচ্ছা তাহলে ৬ টার নামই বলো।
মেঘঃ তাহলে কি আমাকে গুড দিবে বউমনি?
আলোঃ হুমম! দুইটা গুড দিবো..!!
মেঘঃ তোমার হাত দাও! তোমার হাতের আঙ্গুল গুনে গুনে পশুর নাম আমি বলবো..!
আলোঃ আচ্ছা!এবার বলো..!! (হাত এগিয়ে দিয়ে)
মেঘঃ বিড়াল,বিড়ালের আম্মু, বিড়ালের আব্বু, বিড়ালের দাভাই,বিড়ালের বউমনি আর বিড়ালের বাসার কাজের বুয়া (আলোর আঙ্গুল গুনে গুনে)

মেঘের কথা শুনে রোদ ফোনের দিক থেকে চোখ সরিয়ে ১০ সেকেন্ড চুপ থেকে মেঘের দিকে তাকিয়ে ছিলো!তারপর রোদ উঠে বসে হাত তালি দিতে শুরু করলো আর বললো…!!
রোদঃ বাহ্ বাহ্ অসম্ভব সুন্দর হয়েছে মেঘ!তুই এত কিছু জানিস ভাই!আমার তো তোকে নিয়ে গর্ব হচ্ছে ভাই!এই বছরের সব চেয়ে বেস্ট করে বানানো আর.এফ. এল বদনা টা তোকেই নোবেল হিসেবে দেওয়া উচিত ভাই!তুই ই একমাত্র আমাদের বংশের নাম উজ্জ্বল করবি! আমি আজকেই এর গ্যারান্টি দিয়ে দিলাম। (পুলকিত হয়ে)
রোদের কাছে প্রশংসা শুনে মেঘ তো খুশিতে ডগোমগো করে উঠে বসলো!আর আলো দুই ভাইয়ের কথা শুনে উচ্চ মাত্রার টাসকি খেয়ে! অটিস্টিকস রোগী মত কুটুর কুটুর করে রোদ আর মেঘের দিকে তাকিয়ে থাকলো!

#এলোকেশী_কন্যা২__
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_39

রোদের কাছে প্রশংসা শুনে মেঘ খুশিতে ডগোমগো হয়ে উঠে বসলো!আর আলো দুই ভাইয়ের কথা শুনে উচ্চ মাত্রার টাসকি খেয়ে অটিস্টিকস রোগী মত কুটুর কুটুর করে রোদ আর মেঘের দিকে তাকিয়ে থাকলো!
মেঘ আলোর আর একটু কাছে এগিয়ে আসলো!তারপর মেঘ আলোর কানে কানে বললো….!!
মেঘঃ বউমনি বদনা কত প্রকার??
আলোঃ আমার জানা মতে বদনা একটা প্রকারই হয়!
মেঘঃ আর.এফ.এল বদনা আবার কি বউমনি??অনেক দামী জিনিস তাই না (ফিসফিস করে)
আলোঃ হুমম মাএ ৮৭ টাকা দাম মনে হয়!ধবলিকে গোসল করানোর জন্য একটা বদনা এনে দিয়েছিলো ছোট মা!তখন দেখছিলাম বদনার দাম ৮৭ টাকা।
মেঘঃ কিহ!বউমনি দাভাই কি ওয়াশরুমের বদনার কথা বললো..! (চোখ বড় বড় করে)
আলোঃ হুমম!
মেঘঃকিহ!দাভাইই (চিৎকুর দিয়ে)
রোদঃ আমি কানে ভালো শুনতে পায়! এভাবে ছাগলের মত চিৎকার করছিস কেন???
মেঘঃ আমি ছাগল হলে তুমি গন্ডার..!!
রোদঃ তাহলে তুই কচি পাঠা..!!(ফোনের দিকে তাকিয়ে)
মেঘঃ বউমনি দাভাই আমাকে কচি পাঠা বলছে! তুমি আমাকে কিছু একটা শিখিয়ে দাও।(রাগি চোখের রোদের দিকে তাকিয়ে)
আলোঃ তোমাকে কচি পাঠা বললো তো!তাহলে তুমি তোমার দাভাইকে বলো বুইড়া ষাড় (কানে কানে)
মেঘঃ দাভাই তুমি বুইড়া ষাড় (খিলখিল করে হেসে)
মেঘের মুখের এমন কথা শুনে রোদ খুব ভাল করেই বুঝতে পারে আলো মেঘকে শিখিয়ে দিয়েছে!রোদ আলোর দিকে তাকাতেই আলো চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর ভান করতে থাকে!রোদ ওর ঠোঁটের কোনে দুষ্টু হাসির রেখে টেনে বলে উঠলো….!!
রোদঃ ঠিক আছে! এই কথাটা যেন মাষ্টার ম্যম মনে রাখে!আমিও যদি এর শোধ তুলতে না পারি তাহলে আমার নামও রোদ মেহবুব না….!!

তারপর তিনজন খেয়ে শুয়ে পড়লো!আলো আর মেঘ একটা বেডে আর অন্য টাতে রোদ!আলো গল্প বলছে আর মেঘ মনোযোগ দিয়ে শুনছে!রোদ কানে ইয়ারফোন গুঁজে গান শুনছে আর চোখ বন্ধ করে আছে! ঝমঝম শব্দ করে ট্রেন চলছে তার আপন গতিতে!আলো খেয়াল করে দেখলো মেঘ ঘুমিয়ে গেছে! তাই আলো বেড থেকে আস্তে করে উঠে পড়ে!তারপর ব্যাগ থেকে একটা সুতির ওড়না বের করে মেঘের গায়ে দিয়ে দেয় আর সাবধানের মেঘের কপালে আদর দিয়ে দেয়!আলো রোদের দিকে তাকিয়ে দেখে রোদও চোখ বন্ধ করে আছে!তাই আলো মুচকি হেসে রোদের কপালের উপর থেকে চুল সরিয়ে খুব সাবধানে রোদের কপালেও আদর দিয়ে কেবিন থেকে হয়!আলো বের হওয়ার সাথে সাথে রোদ চোখ খুলে তাকায় আর ওর কপালে হাত রাখে!তখন রোদের মুখে প্রশান্তির হাসি ফুটে ওঠে…!যদিও রোদের কাছে এটা অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ছিলো…!!
আলো ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে একটু এগোতেই রোদকে দেখে চমকে উঠে!আলো বুঝতে বাকি নেই রোদ জেগে ছিলো তখন!এজন্য আলোর এখন লজ্জায় লাল টমেটোর রুপ ধারণ করেছে!রোদ আলো হাত ধরে ট্রেনের দরজার কাছে এসে দাঁড়ালো! ট্রেন অতিদ্রুত ছুটছে! দরজার কাছে এসে দাড়াতেই এত বাতাস আসছে যে,মনে হচ্ছে বাতাসের জন্য ঠিক ভাবে নিঃশ্বাসটাও নেওয়া যাচ্ছে না!ওড়নাটাও বাতাসের গতির সাথে তাল মিলিয়ে উড়ছে!রোদ আলোর বাম হাতটা শক্ত করে ধরে আছে!মাঠের পর মাঠ পেরিয়ে ট্রেন চলতেই আছে।দূরের ওই বাড়িঘর গুলোর জ্বলে থাকা লাইট গুলো জ্বলজ্বল করে জ্বলছে!আকাশেও মেঘ জমেছে!ট্রেনটা এখন একটা জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে এজন্য চারদিকে অন্ধকারে ছেয়ে গেছে….!!

আলো মুখ ঘুরিয়ে রোদের বুকে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো!রোদ মুচকি হেসে বললো..!!
রোদঃ বাব্বা!একেই মনে হয় বলে মেঘ না চাইতেই জল….(মুচকি হেসে)
আলো কিছু বললো না চুপ করেই থাকলো!এত বাতাস আসছে যে শরীরে কাঁপুনি ধরিয়ে দিচ্ছে এখন!রোদ আলোকে সামনে তাকাতে বললো!আলো মুখ উঠিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই দেখতে পেলো শত শত জোনাকি পোকা! অসম্ভব সুন্দর একটা দৃশ্য….!!
(এটা সিনেমাতেই হয় না শুধু!বাস্তবেও হয় আর এটাকে জোনাকির মিছিলো বলা যায়! আসলেই অনেক অনেক সুন্দর হয় জোনাকির মিছিল!আমি নিজের চোখে দেখছি…..!!কোন একটা মুহূর্তে)
রোদ ওর ফোনটা বের ভিডিও করে নিলো!তারপর রোদ আলোকে কেবিনে যেতে বললো!কিন্তু আলো না করে দেয়!আর কিছু সময় রোদ আর আলো রাতের সৌন্দর্য উপভোগ করে কেবিনে চলে যায়!রোদরা কেবিনে ঢুকতেই ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি পড়তে শুরু করে!বৃষ্টির কারনে শীত শীত লাগবে! তাই রোদ এসি বন্ধ করে দেয়। তারপর রোদ শুয়ে পড়ে!আলো মনে মনে রোদকে অসংখ্যবার ধন্যবাদ জানায়! রাতের অন্ধকারে জোনাকিদের মিছিল টা দেখানোর জন্য…!!অসম্ভব সুন্দর কিছু মুহূর্ত রোদ আলোকে উপহার দিয়েছে!আলো সেই মুহূর্ত গুলো নিয়ে ভাবতে থাকে!তারপর আলো ঘুমিয়ে পড়ে…!!

ভোরের দিকে রোদ আলো আর মেঘকে টেনে তুলে!কারন ৫মিনিট পরেই ট্রেন থামবে ঢাকা স্টেশনে!এই দুইজনকে ঘুম থেকে তুলতে গিয়ে রোদের কাল ঘাম ছুটে গেছে!রোদ আলো আর মেঘকে পানি দিলো চোখ মুখে দেওয়া জন্য! আলোর আর মেঘ চোখ মুখে পানি দিলো! রোদ সব ব্যাগ প্যাক গুছিয়ে নিলো!ট্রেন থামলো তারপর ওরা তিনজন স্টেশনে বাইরে এসে দাঁড়াতেই ওদের ড্রাইভার কাকুও গাড়ি নিয়ে আসলো!তারপর ওরা গাড়িতে উঠে বসলো…!!
রোদ ড্রাইভারের পাশে বসেছে আর মেঘ আর আলো বসেছে পেছনের সিটে! রোদ পেছনের দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে আলো আর মেঘ আবার ঘুমের দেশে পাড়ি দিয়েছে!মেঘ আলোর কোলে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে আর আলো সিটের সাথে মাথা হেলিয়ে দিয়ে ঘুমাচ্ছে! রোদ আর কিছু না বলে জানালার বাইরে তাকালো!আধাঘন্টা পর ওরা বাসায় পৌঁছে গেল!রোদ গাড়ির দরজা খুলে মেঘকে কোলে নিয়ে বাসার ভেতরে ঢুকে গেল!শিউলি বাসায় ছিলো এজন্য সব গোছগাছ করা। রোদ ওর রুমে গিয়ে মেঘকে বেডে শুইয়ে দিলো!তারপর আবার গিয়ে আলোকে কোলে তুলে নিয়ে মেঘের পাশে আলোকেও শুইয়ে দিলো!
ড্রাইভার সব ব্যাগ প্যাক বাসায় এনে রাখলো!রোদ ফ্রেশ হয়ে নিলো!আর ফোন বের করে ওর আম্মুকে জানিয়ে দিলো ওরা বাসায় পৌঁছে গেছে!রোদের আম্মু হুজুরকে জানালো!হুজুর উনার কাজ উনি করে ফেললো!রোদের আম্মু রোদকে বললো সব রুমে আয়াতুল কুরসি রাখতে।রোদ ওর আম্মুর সাথে কথা বলা শেষ করে!তারপর মেঘের রুমের দিয়ে রোদ শুয়ে পড়লো!কারন রোদ সারারাত একটুও ঘুমায়নি!

সকাল ৮ঃ৩০ টার দিকে মেঘের ঘুম ভেঙে যায়!যদিও এখন মেঘের এত সুন্দর খুব ভাংতো না শুধু হতভাগা খুধার জন্য ঘুম রাজা মেঘের থেকে বিদায় নিয়েছে!মেঘকে উঠতে দেখে রকি (কুকুর)দৌড়ে এসে মেঘের গাল চাটতে থাকে আর ঘেউ ঘেউ করতে থাকে!মেঘকে পেয়ে রকি খুব খুশি! মেঘ আলোকে ঘুমাতে দেখে রকির একটা কান টেনে রকিকে বাইরে নিয়ে গেল।রকি খুশিতে ছুটাছুটি করতে গিয়ে একটা ফুলদানি ভেঙ্গে ফেলে! আর সেই শব্দে আলোরও ঘুম ভেঙ্গে যায়…!!আলো দৌড়ে রুমে থেকে বের হয়ে দেখে মেঘ ফুলদানির ভাঙা কাঁচ তুলতে যাচ্ছে। আলো গিয়ে মেঘকে সরিয়ে দিয়ে কাঁচ পরিষ্কার করে ফেলে!আলোকে দেখে রকি আলোর হাত চাটতে শুরু করে..!আলো রকির মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় তারপর রকি শান্ত হয়..!!

আলো আর মেঘ ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করে নিলো!রোদকে খুঁজে না পেয়ে আলো রকির মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞাসা করে রোদ কোথায়?? রকি আলোর ওড়নার একপাশে কামড়ে ধরে মেঘের রুমে নিয়ে যায়!আলো রোদকে ঘুমাতে দেখে আর ডাকে নি! আলো মেঘ আর রকি তিনজন খুনশুটিতে মেতে আছে ড্রয়িংরুমে !আলো যতবার রকির শরীর চুলকে দিচ্ছে রকি ততবার আলোর হাত চেটে দিচ্ছে। আর আলো ভ্যা ভ্যা করে কান্নার অভিনয় করছে!আর সেটা দেখে মেঘ হাসতে হাসতে মেঝেতে শুয়ে লুটোপুটি খাচ্ছে…!! মেঘের যত খেলনা আছে সব মেঘ আলোর সামনে এনে রেখেছে!আলোর পাশে রকি শুয়ে আছে আর আলো রকির মাথা চুলকিয়ে দিচ্ছে। আর রকি মেঝেতে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে…!! এর মধ্যে শিউলি এসে বলতে শুরু করলো..!!
শিউলিঃ এ্যাই কুওাডা এমন হারামির হারামি। আমাকে দিনে তিন বার দৌড়ানি দেয়।(রকির দিকে তাকিয়ে)
মেঘঃ শিউলি আন্টি বলছিনা ওরে কুওা বলবে না।ওর নাম রকি!কুওা বললে রকি কষ্ট পায়।(ভ্রু কুচকে)
শিউলিঃ মেঘ বাবা!কুওাকে কুওা ডাকুম না তো কি ডাকুম কও।আমি তো ছুডু বেলা থেইকাই কুওারে কুওা ডাকছি। (জোর করে হাসার চেষ্টা করে)

এলোকেশী কন্যা  সিজন ২ পর্ব ৩৪+৩৫+৩৬

আলোঃ শিউলি আন্টি!তুমি কষ্ট করে রকির নাম ধরো ডাকবে কেমন।মেঘ বাবু যখন বলছে…!!
শিউলিঃ আচ্ছা ভাবিমনি!তবে এই কুওাডা সলি এই রকিডা মেঘ বাবার ঘর ঝাড়ু দিতে গেলেই আমারে দৌড়ানি দেয়!এই গতর লইয়া কি দৌড়ানো যাই কও ভাবিমনি! তাও কুওার ভয়ে সলি রকির ভয়ে জান খান হাত লইয়া দৌড় দিসিলাম…!!(দাঁত বের করে)
আলোঃ শিউলি আন্টি ওই কথাটা সলি হবে না কেমন!এই কথাটা হবে সরি..!!(শিউলির দিকে তাকিয়ে)
মেঘঃ শিউলি আন্টি তুমি জান হাত নিয়ে তো দৌড় দিয়েছিলো বুঝলাম! বাট তুমি মরে গেলে না কেন??(চিন্তিত হয়ে)
শিউলিঃ কুওার ভয়ে তখন তো আমি দৌড় দিসিলাম! জান হাতে লইয়া!আজরাইল তো আসে নাইক্কা হের লাইগাই মরতে মরতে মুই বাইচ্ছা গেছিগা।আর তারাতারি তোমরা চইলা আইসো! তাই তোমাগোরে একটা থ্যাঙ্কুস ইউ সু মান
মেঘঃ শিউলি আন্টি এটা কি নতুন কোন খাবারের নাম নাকি??
শিউলিঃ হায় আল্লাহ !মেঘ বাবা এটা তুমি কেমুন কথা কইলা?এইডা খাওনের নাম হইবো ক্যান। আমি তো ইংলিশ ভাষা কইছি… (গর্ব করে)

মেঘঃ শিউলি আন্টি তোমাকে আমার স্কুলে একদিন নিয়ে যাবো কেমন। (গালে হাতে দিয়ে চিন্তিত হয়ে)
শিউলিঃ ক্যান!আমি ইশকুলে যাবো কিসের লাইগ্গা মেঘ বাবা??
মেঘঃ তোমার ইংলিশ শুনে যে কেউ হুটুস করে এবনরমাল হয়ে যাবে।তাই আমি চাচ্ছি আমার টিচার গুলোই আগে এবনরমাল হোক তাই।আর ওদের জানা উচিত তুমি কত ইংলিশ বলতে পারো ওদের থেকে…(ফোকলা হাতে হেঁসে হেঁসে)
শিউলিঃ থ্যাঙ্কুস ইউ সু মান মেঘ বাবা (খুশি হয়ে)
আলোঃ শিউলি আন্টি কথাটা হবে থ্যাংকিউ সো মাচ্
শিউলিঃ থাইক আমার ইংলিশটাই ভালা! ভাবিমনি তোমারটা ইংলিশডা মেলা শক্ত…!!
শিউলির কথা শুনে মেঘ আর আলো আর কিছু বললো না!কারন শিউলি হচ্ছে সেই পাবলিকের একজন, যারা নিজের কথা বা কাজ ভুল হলেও সঠিক বলে চালিয়ে দেয়।এদের এজন্য এদের মতই থাকতে দেওয়া ভালো…!!
একটুপর রোদ ফোনে কথা বলতে বলতে নিচে নেমে এলো।রোদ ইউনিভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য একেবারে রেডি হয়েই এসেছে!আলো রোদকে দেখে উঠে গিয়ে ভালো করে হাত ধুয়ে তারপর রোদকে খেতে দেয়..!!

এলোকেশী কন্যা  সিজন ২ পর্ব ৪০+৪১+৪২