এলোকেশী কন্যা সিজন ২ পর্ব ৩৪+৩৫+৩৬

এলোকেশী কন্যা সিজন ২ পর্ব ৩৪+৩৫+৩৬
লেখনীতে:- নূরজাহান আক্তার (আলো)

মায়া আর নিহা রোদ আর আলোকে হাসা হাসি করছিলো!আর আলো মাথা নিচু করে হাসছিলো।
এর মধ্যে রোদের আম্মু রোদের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো….!!
রোদের আম্মুঃ আব্বু আমার পছন্দের একটা গান শোনা তো!আজকে তোর গান শুনতে ইচ্ছে করছে আমার খুব!
রোদের আব্বুঃ হুমম আব্বু সারাদিনের ক্লান্তিতে মনটা কেমন অশান্তি লাগছে।একটা গান হয়ে যাক…!!(রোদের দিকে তাকিয়ে)
রোদঃ এখন!
রোদের আম্মুঃথাক তোর সমস্যা হলে !তোর আর গাইতে হবে না।এজন্য কথায় বলে বউকে পাইলে নিজের পোলাপানের কাছে বাবা মা আংকেল আন্টি হয়ে যায়।(মুখ ভেংচি দিয়ে)

রোদঃ থাক আর ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করতে হবে না!গিটার নিয়ে আসি ওয়েট…!!
মায়াঃ ভাইয়া তুমি বসো আমি গিটার নিয়ে আসছি..!
মেঘঃএই যে আমি নিয়ে গিটার এসেছি মায়া আপু!তোমাকে আর যেতে হবে না।(গিটার হাতে নিয়ে)
মেঘ রোদের হাত গিটার দিলো!রোদ একবার ওর আম্মু আর একবার আলোর দিকে তাকিয়ে গিটারে সুর তুললো!উপস্থিত সবাই রোদের দিকে তাকিয়ে আছে!রোদের আম্মু রোদের দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবছে..!!
রোদের আম্মুঃ আব্বু রে তোকে দেখে আমার মাঝে মাঝে খুব অবাক লাগে!এই রাজপুত্রের আম্মু আমি!আমি নিজেও মাঝে মাঝে তোর উপস্থিত বুদ্ধির কাছে হার মেনে যায়!আমি জানি তুই খুব চাপা স্বভাবের নিজের বুকে ফেটে যাবে! তাও কাউকে কিছু বুঝতে দিবি না!আলো ঠিক একদিন তোর মনের মত হয়ে উঠবে দেখিস!তোরা খুব সুখী হবি! ভালো থাকবি! আমার কথাটা একদিন মিলিয়ে নিস আব্বু। যারা সরল মনে চলে তাদের আল্লাহ তাদের সহায় হয়!আব্বু রে তোর বাম পাশে হাড় দিয়ে আলো তৈরী এজন্য আজকে তোরা পবিএ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিস।যে যেমন আল্লাহ তার জন্য তেমন সঙ্গী পাঠায়…!!(মনে মনে)
মেঘঃ দাভাই! কোকা কোলা তু গানটা গাও!এরা কেউ হিন্দি গান বুঝতে পারবে না।(কানে কানে)
রোদঃচুপ কর ফাজিল(মেঘের চাট্টি মেরে)
মেঘ রোদকে মুখ ভেংচি দিয়ে আলোর কোলে ঝপাং করে বসে পড়লো!রোদ আড় চোখে আলোর দিকে একবার তাকালো! আলোর মুখটা দেখে মনে হচ্ছে ও সবার মত ওর ও রোদের গান শুনতেও ইচ্ছে করছে বাট বলতে পারছে না!রোদ মুচকি হেসে ওর আম্মুর পছন্দের একটা গান গাইতে শুরু করলো…..!!

বকুল ফুল! বকুল ফুল
সোনা দিয়া হাত ক্যানে বান্ধাইলি
শালুক ফুলের লাজ নাই
রাইতে শালুক ফোটে লো! রাইতে শালুক ফোটে এ
যার সাথে যার ভালোবাসা আআ
সেই তো মজা লুটে লো (মুচকি হেসে)
বকুল ফুল! বকুল ফুল
বকুল ফুল সোনা দিয়া
হাত ক্যানে বান্ধাইলি
শাওন ও ভাদোর মাসে জামাই আদর করে লো
জামাই করে
ইচ্ছে জামাই করবো! আদর দানা তো নাই ঘরে লো
বকুল ফুল! বকুল ফুল
বকুল ফুল সোনা দিয়া
হাত ক্যানে বান্ধাইলি

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আমার জামাই ধান বায় হরিণ ডাঙার মাঠে লো হরিণ ডাঙার মাঠে এ
সোনা দেহে ঘাম ঝরে! এ দুঃখে পরাণ ভাটে লো
উপরের দুই লাইন গাওয়া পর রোদ মুচকি হেসে ওর আম্মুর দিকে তাকিয়ে ইশারায় ওর আব্বুকে দেখালো!এত গুলো মানুষের সামনে লজ্জায় রোদের আম্মু মাথা নিচু করে হাসতে লাগলো!আর উপস্থিত সবাই হো হো করে হাসতে শুরু করলো।আলোও মুখ টিপে হাসছে!আলোর জানা ছিলো না কোন ছেলে তার মায়ের সাথে এতটা ফ্রি হতে পারে!আসলে রোদ ওর আব্বু আর আম্মুর সাথে খুব ফ্রি তাই সুযোগ পেলে মজা নিতে কম করেনা।এখন যেমন গানের মধ্যে দিয়েই ওর আম্মুকে লজ্জায় ফেললো।
(আমারও আমার আম্মুকে লজ্জায় ফেলতে মেলা ভাল্লাগে!সেই ট্যাশ আর কি!)
সবাই হাসাহাসি করছে বাট সবার হাসি কারন মেঘ বুঝতে পারছেনা!তাই মেঘ সবার মুখে মুখে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে সবার হাসির কারন!বেচারা মেঘ কিছু বুঝতে না পেরে ওর আম্মুকে বললেই ফেললো।
মেঘঃ আম্মু তুমি কি লজ্জা পাচ্ছো?সবাই হাসলো কেন?আমাকে বলো আমিও হাসবো..!!
মেঘের কথা শুনে আরেকদফা হাসির রোল পড়লো!তারপর সবাই আড্ডা শেষ করে যে যার রুমে চলে গেল!কারন অনেক রাত হয়ে গেছে।আলো আর মেঘ আলোর রুমে চলে গেল!রোদ বসে থেকে আলোর যাওয়া দিকে একবার তাকিয়ে মাথা নিচু করে বসে রইলো!রোদের আব্বু রোদকে রুমে যেতে বলায় রোদও ওর রুমে চলে গেল!আলো আর মেঘ টানটান হয়ে শুয়ে আবার গল্প জুরে দিলো।আলো যত কথায় বলুক! যত যাই বলুক কবুল বলার পর থেকে রোদের প্রতি অন্যরকম একটা টান অনুভব করছে!এটাই হয়তো পবিএ একটা বন্ধনের অদৃশ্য শক্তি…!!

রোদ ওর প্যান্টের দুই পকেটে হাত ঢুকিয়ে একমনে ওর বারান্দায় দাড়িয়ে!আর ওই দুর আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে!রোদের আম্মু এর মধ্যে হুড়মুড়িয়ে মেঘকে কোলে নিয়ে রুমে ঢুকে পড়লো!রোদ ওর রুমে কারো আসার শব্দ শুনে পেছনে তাকিয়ে দেখে ওর আম্মু আর মেঘ দাড়িয়ে।রোদ ওর আম্মু কাছে গেল আর কিছু বলার আগেই….!!
রোদের আম্মুঃরোদ যাও আলো রুমে একা আছে।আমি আর মেঘ এই রুমে আছি।
রোদঃ থাক না আম্মু! এখনো তো কেউ জানেনা আমাদের বিয়ের কথা।কেউ দেখলে খারাপ ভাববে..!!
মেঘঃদাভাই যাবে না তাহলে আমি যাই আম্মু (খুশি হয়ে)
আম্মুঃ তোর বউ নাকি যে তুই যাবি!তুই ঘুমা তারাতারি (মেঘের কান টেনে)
মেঘঃ উরি বাবা আমার কানটা ছিঁড়ে দিবে নাকি!আম্মু আমি গেলে কি হবে?
আম্মুঃমেঘ তোমার বউমনির শরীর ভালো না!রাতে অনেক জ্বর আসতে পারে।আমি তো মেডিসিন খেয়ে ঘুমায়! তাই বুঝতে পারবো রা।মেঘ তুমি ঘুমালে জাগা পাওয়া না।এজন্য দাভাই যাক কেমন (মেঘেকে বেডে শুয়ে দিয়ে)
মেঘঃআমিও যাই তাহলে দাভাইয়ের সাথে(উঠে বসে)
আম্মুঃকানের কাছে ফকফক করলে এক থাপ্পড়ের তোর বাপের নাম ভুলিয়ে দিবো।ঘুমা তারাতারি…!আর রোদ তুমি দাড়িয়ে আছো কেন?বলছিনা মেয়েটা একা আছে রুমে…!!

রোদঃ আম্মু কেউ দেখলে মুখে কিছু বলবেনা বাট এই নিয়ে অনেক কথা হবে।থাক না আম্মু..!!
রোদের আম্মুঃ বিয়ের দিনে জোড়া ভেঙ্গে দুই জন আলাদা রুমে থাকতে নেই!আমি তোমার আম্মু আমি জানি কোনটা করলে তোমার ভালো হবে! তাই যা বলছি তাই করো।আর কেউ এখনো জেগে নেই যে কেউ দেখবে!আলোর দিকে খেয়াল রেখো কারন ওর জ্বর আসতে পারে।এখন আর কথা না বাড়িয়ে যাও ওই রুমে।
রোদঃহুমম!!
মেঘঃ আমি বিয়ে করলে আমার বউকেও দাদাই এর পাশে ঘুমাতে দিবো না দেখো!আজকে যেমন দাভাই আমাকে ঘুমাতে দিলো না বউমনি কাছে।দাভাই মনে রেখো…!!আমিও একদিন দিবো না ঘুমাতে।দাভাই কাঁদলেও দিবো না। (মুখ ফুলিয়ে)
( এটা নিষ্পাপ বাচ্চার সরল মনের অভিমানি কথা এটা!যে কথার গভীরতা খুঁজলে অনেক কিছু!বাট মেঘের সরল মনে তো আর আমাদের মত প্যাচ নেই তাই এমন কথাটা সহজে বললো)
আম্মুঃদিস না বাপ!তাও তুই চুপ কর।রোদ তুমি ওই রুমে যাও আর দরজা আটকে দিব।
রোদঃহুম!!
মেঘঃ না না দাভাই তুমি দরজা আটকে দিবে না।আম্মু ঘুমালে আমি আসবো ওই রুমে।
রোদের আম্মুঃ তুই আবার ফকফক করছিস!মার খেতে না চাইলে তুই ঘুমিয়ে পড় মেঘ।(রাগী চোখে তাকিয়ে)
রোদঃ চল মেঘ আমার সাথে ওইরুমে..!!আম্মু ওকে যেতে দাও।
মেঘঃহুমম দাভাই একদম ঠিক বলছে!চলো দাভাই
রোদের আম্মুঃ তোরা দুইভাই আমাকেই পাগল করেই ছাড়বি তাই না! তোদের যা বলছি তোরা তাই কর।আর একটা কথা বললে আমি এখর বাসায় তুলকালাম বাঁধিয়ে দিবো বলে দিলাম।দু’জনে আর একটা টু শব্দ করলে দেখ আজকে তোদের দুটোকে আমি কি করি..!!

রোদঃ…
মেঘঃ….
রোদের আম্মুঃ রোদ আব্বু আলো কিন্তু অসুস্থ….!!
রোদের আম্মু এই কথাটা শুনে রোদ থমকে দাড়িয়ে পড়ে!বাট রোদ পেছনে ফিরে আর কিছু বলে না দ্রুত গতিতে রুম থেকে বের হয়ে যায়!রোদের আম্মু রোদকে কি বোঝাতে চেয়েছে! এটা রোদের বুঝতে অসুবিধা হয়নি!রোদ আলোর রুমে ঢুকে দেখে আলো পানি খাচ্ছে! কারো দরজা বন্ধ করার শব্দ শুনে আলো পেছনে ঘুরে রোদকে দেখে ভীষম খায়।আলো কাশতে শুরু করে! রোদ এগিয়ে গিয়ে আলোর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে বাট কাশি থামছে না।রোদ আলোকে বিছানায় বসিয়ে আলোর সামনে রোদ হাঁটু গেড়ে বসে বললো..!!

রোদঃ কোন একটা বইতে পড়েছিলাম।যে বর সামনে কালীন বউয়ের গলায় পানি আটকে গেলে বা ভীষম লেগে কাশি না কমলে লিপকিস করলে নাকি কাশি কমে যায়।(দুষ্টু হাসি দিয়ে)
রোদ এই কথাটা বলাও শেষ আলো কাশিও শেষ। রোদ ওর ঠোঁটে দুষ্টু হাসি রেখা টেনে টান টান হয়ে বেডে শুয়ে পড়লো! আর আলো চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকলো।আলোর তাকিয়ে তাকিয়ে থাকা দেখে রোদ আলোকে বললো…!!
রোদঃ ১মিনিট সময় দিলাম!এর মধ্যে ড্রিম লাইন অন করে তারাতারি শুয়ে পড়ো।
আলোঃ ম ম মেঘ আর আম্মু কই!আমি ওদের কাছে যাবো।
রোদঃ আম্মুর বড় ছেলে তো এই রুমে তাহলে ওই কি করতে যাবে?এই তোমার সমস্যা কি বলো তো আমাকে না বকালে তুমি শান্তি পাও না তাই না।আর ১২ সেকেন্ড আছে। (দেওয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে)
আলো তারাতারি করে ড্রিম লাইট অন করে! তারপর গুটিগুটি পায়ে গিয়ে বেডের গিয়ে দুরুত্ব রেখে শুয়ে পড়ে!আলোকে দেখে ফাজিল রোদ খুব মজা পাচ্ছে। রোদ হাতে হাতের উপর ভর করে আলোর দিকে ঘুরে তাকিয়ে বললো..!!
রোদঃ তিন বার কবুল বলছি কি এত দূরত্ব রেখে থাকার জন্য।
আলোঃআ আম আম
রোদঃ এই তুমি তোতলা নাকি?শেষ মেষ আম্মু একটা তোতলা মেয়েকেই আমার ঘাড়ের উপর চাপিয়ে দিলো।এই ছিলো আমার কপালে…!!(কপাল চাপড়ে)
আলোঃ……

রোদঃআজকে এই রাতটা আমাদের জন্য একটা স্পেশাল একটা রাত!তাহলে …..!! (দুষ্টু হেসে)
রোদের কথা শুনে আলো এক লাফে উঠে বেডের শেষ কোনায় গুটিশুটি হয়ে বসে পড়লো!আলোর মুখটা দেখার মত হয়েছে! ওকে দেখে মনে হচ্ছে ওর সামনে ভয়ংকর কোন প্রাণী দাড়িয়ে আছে!রোদ কোন রকম হাসি আটকে বললো।
রোদঃ তবে আমি তোমাকে একটা অপশন দিচ্ছি তুমি যখন এত ভয় পাচ্ছো!প্রথমত অপশনটা হচ্ছে আজকে আমাদের বিয়ের রাত সে হিসেবে তুমি আমার বউ!তাই আমি বলছিলাম কি?আসলে আমি বলছিলাম যে! রোদের এভাবে কথা বলা দেখে আলো ভয়ে আরো গুটিশুটি হয়ে বসে পড়লো!রোদ ঘাড় ঘুরিয়ে কোন রকম আবার হাসি আটকে বললো!
রোদঃ আজ আমাদের বিয়ে হয়েছে!আমরা এখন হাজবেন্ড ওয়াইফ সো এখন যদি!এখন যদি আমি তোমাকে?তোমার ছোট থেকে বড় হওয়া আর গ্রামের কি কি করতে সেইসব কথায় জিজ্ঞাসা করি তাহলে বলবে তো! আই মিন আজকে সারারাত যদি আমার সাথে গল্প করতে! তাহলে ভালো লাগলো আমারও!আমার একটা বাজে অভ্যাস রুম চেন্জ হলে আমার ঘুম আসে না।তাই আর কি…!!
রোদের কথা শুনে আলো যেন দেখে প্রাণ ফিরে এলো!এই ফাজিল ছেলেটা এমন ভাবে বলছিলো যে আলোর ভয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে!আলো উঠে ঢকঢক করে আরেক গ্লাস পানি খেয়ে নিলো!তারপর এক বুক সাহস নিয়ে আবার শুয়ে পড়লো বেডে! একবার চোখের দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা দিলো! তার বিনিময়ে রোদও আলোর মায়াবী মুখটার দিকে চেয়ে একটা মুচকি হাসি দিলো।রোদ এখনো আলোর দিকে ফিরে শুয়ে আছে!রোদ জিজ্ঞাসা করলো…!!
রোদঃ গ্রামে তোমার সময় কাটতো কিভাবে??আমাকে কি বলা যায়??
আলোঃহুমম বলা যায়! (মুচকি হেসে)

#এলোকেশী_কন্যা২__
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_35

রোদঃ গ্রামে তোমার সময় কাটতো কিভাবে?আমাকে কি বলা যায়??
আলোঃহুমম বলা যায়! (মুচকি হেসে)
রোদঃতাহলে বলুন ম্যম! এই অধম আপনার কথা শোনার জন্য অধীর আগ্রহে আপনার মুখ পানে চেয়ে আছে।(মুচকি হেসে)
আলো রোদের কথা শুনে মুচকি হাসি দিলো!রোদের এভাবে কথা বলার কারন! আলো যাতে আনইজি ফিল না করে! তাই রোদ এমন ভাবে আলোর সাথে কথা বলছে!আলোও একটু ভয়ে ভয়ে থাকলেও এখন অনেকটাই ইজি হয়ে রোদের সাথে কথা বলছে!আলো অনেক খুশি হয়ে রোদের দিকে তাকিয়ে ওর গ্রামের থাকাকালীন কি কি করতো সেটা বলতে থাকে!আর রোদ আলোর মুখ পানে চেয়ে থাকে।আলো হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে কথা বলছে! আবার হাসছে! যখন হাসে তখন বামপাশের গেজ দাঁতটাও দেখা যায়!আলো রোদের দিকে তাকায়….!!
আলোঃ আমি গ্রামে থাকলেও খুব সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়তাম!তারপর নিজেকে শুভ সকাল বলে আগে উয়িশ করতাম!!
রোদঃ কেন??নিজে নিজেকে শুভ সকাল বলতে কেন?(ভ্রু কুচকে)
আলোঃ আল্লাহর রহমতে আল্লাহর দেওয়া উপহার হিসেবে আরেকটা সকাল আমি উপভোগ করতে পারছি! তাই আমি খুব সকালে আল্লাহর শুকরিয়া করি আর নিজেকেই নিজে আগে উয়িশ করি! আর আসল কথা যে নিজেকেই ভালবাসতে জানেনা সে অন্যকে কি করে ভালবাসবে??

রোদঃহুমম! কথাটা একদম ঠিক বলছো।কথাটা শুনে খুব ভাল লাগলো।
তারপর রোদ আর আলো এমন অনেক অনেক গল্পে মেতে উঠে!আলো কথা বলেই যাচ্ছে আর রোদ নির্বাক শ্রোতার মত শুনেই যাচ্ছে! রাত প্রায় ২টার দিকে আলো কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে পড়ে!রোদ যখন দেখলো আলো ঘুমিয়ে গেছে তখন রোদ আস্তে করে উঠে বসে!আর মুচকি হেসে আলোর কপালে আদর দিয়ে আবার ওর জায়গায় দিকে শুয়ে পড়ে।রোদ আলোর দিকে তাকিয়ে হাসি দিয়ে মনে বলে উঠে…!!
রোদঃবোকা মেয়ে হাজবেন্ড কি ওয়াইফের শরীরের টানেই কাছে আসে নাকি!আমাকে দেখে এত ভয় পাওয়া কি আছে শুনি?আজকে বিয়ে করছি মানে যে আজকেই বউয়ের শরীরের উপর হামলে পড়বো তা না!এমন কাপুরুষ আমি নই আর আমি এতটা লেইম মাইন্ড নিয়েও চলতে শিখি নি!কবুল বলে সারাজীবনের জন্য শুধু তোমাকে আমার করে নিয়েছি! তাহলে এত তাড়া কিসের ??বোকা মেয়ে আগেই ভয়ে কাঁপতে শুরু করছে।(মুচকি হেসে মনে মনে)
পরেরদিন সকালে____!!
আলোর ঘুম থেকে উঠে দেখে রোদ উপুড় হয়ে “দ” স্টাইলে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে!আলো রোদের দিকে একবার তাকিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়! তারপর ফ্রেশ হয়ে আস্তে করে দরজাটা খুলে রুম থেকে বাইরে বের হয়!আলো গুটিগুটি পায়ে নিচে নেমে দেখে সবাই আড্ডা দিচ্ছে! আদিলের বউকে নিয়ে সবাই মজা করছে!আলো সোফাতে বসতেই মেঘ দৌড়ে এসে আলোর কপালে হাত দিয়ে দেখলো আলোর জ্বর এসেছে কি না?আলো মেঘের এমন কান্ডে হেসে দিলো!আর মেঘকে জড়িয়ে ধরে কাতুকুতু দিতে শুরু করলো!আর মেঘ খিলখিল হাসতে শুরু করলো!

মেঘঃ আহহ্ বউমনি আর না! আর না! (হেসে)
আলোঃ কেন! কেন! আর একটু দেই (হেসে)
মেঘঃ না না বউমনি আমার অনেক কাতুকুতু! আর দিও না!উ বাবা আর পারছিনা (খিলখিল করে হেসে)
রান্নাঘর থেকে রোদের আম্মু সহ সবাই মেঘ আর আলোর দিকে তাকিয়ে আছে!মেঘ আর আলোকে দেখে কেউ বলবে না এরা দেবর ভাবি!হুমম বলারও দরকারও নাই! কারন মেঘ আর আলো একে অন্যের প্রান!রক্তের সম্পর্কও ওদের না হলেও ওদের মাঝে আত্মার সম্পর্ক আছে!আলো আর মেঘের এমন খুনশুটি দেখে রান্নাঘরের সবার মনটা ভালো হয় যায়।আজকাল ভাইবোনের সম্পর্ক গুলো তো কেমন খাপছাড়া! সেখানে মেঘ আর আলোর সম্পর্কটা কতটা মধুর…!!এমন মধুর সম্পর্ক গড়তে কতজনই বা পারে..!!

আজকে না কালকে আদিলের রিসিপশন তাই আজকে সবাই ফ্রি মুডেই আছে!এটাই নাকি এখানকার নিয়ম।সকালবেলা সবাই ব্রেকফাস্ট সেরে যে যার মত আড্ডা দিচ্ছে! রোদের বাবা,বড় মামা আরো অনেকেই উঠানের চেয়ার মেতে সবাই গল্পে মেতে আছে!ড্রয়িং রুমে মহিলারাও তাদের গল্প জুড়ে দিয়েছে!আলো আর মেঘ এক কোণে বসে নিজেদের মত কথায় মেতে আছে!রোদ ঘুম থেকে উঠে ওর আম্মুকে ফোন দিয়ে বলে ওর খাবারটা উপরে পাঠিয়ে দিতে!রোদের আম্মু দুইজনের খাবার রেডি করে আলোকে রোদের রুমে পাঠিয়ে দেয়।রোদ একেবারের সাওয়ার নিয়ে বের হয়েছে!রোদ ড্রেস পড়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে চুল ঠিক করছিলো! তখন আলো আর মেঘ রুমে ঢুকে আর খাবারের ট্রে টা রাখে!আর চলে যাওয়া জন্য পা বাজায়!
রোদ ওদের দুজনকেই বেডে বসতে বলে!আলো আর মেঘ দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে বেডে বসে পড়ে!রোদ হাত ধুয়ে খেতে বসে পড়ে!রোদ খেতে খেতে আলোর মুখের সামনে খাবার ধরে! আলো কিছু বলার আগেই রোদ আলোর গাল চেপে খাবারটা মুখে ঢুকিয়ে দেয়!আর আলো হাবলার মত হা করে রোদের দিকে তাকিয়ে থাকে!মেঘ মনে করছে আলোর মুখে যখন রোদ খাবার দিলো তাহলে নিশ্চয়ই মেঘকেও দিবে!তাই মেঘ আগেই হা করে থাকলো! কিন্তু রোদ মেঘকে খাবার না দিয়ে নিজের খাওয়াতে আবার মন দিলো।
মেঘঃদাভাই বউমনিকে তো দিলে তাহলে আমাকেও খাইয়ে দাও..!!

রোদঃ…….
মেঘঃ হা করছি তো
রোদঃ এটা তো আমার খাবার তোকে কেন দিবো(ভ্রু কুচকে)
মেঘঃ বউমনিকে যে দিলে (অসহায় মুখ করে)
রোদঃ ওরে দিসি বলে কি তোরেও দিবো নাকি?
মেঘঃ আমার দুই টাকার খুধা লাগছে!আমাকেও খাইয়ে দাও (রোদের দিকে তাকিয়ে)
রোদঃ পারবো না খাইয়ে দিতে তোকে!যা ভাগ তুই
মেঘঃ কেন দিবে না?(রেগে গিয়ে)
রোদ আর কিছু বলার আগেই মেঘ রোদের উপর হামলা করে!মেঘ রোদকে ইচ্ছে মত কিল ঘুষি দিচ্ছে আর চিৎকার করছে!আলো বসে বসে দুই ভাইয়ের মারামারি দেখছে!রোদের একহাত এটো! তাই রোদ মেঘকে একটা হাত দিয়েই কোন রকম ধরে রাখে।তারপর কিছু বলার আগেই মায়ার এসে বলে…!!
মায়াঃরোদ ভাইয়া, মেঘ আর ভাবিমনি তোমাদের সবাই নিচে ডাকছে।নিচে নাকি এখন কি হবে?তাই তোমরা তারাতারি এসো (রুমের দরজায় এসে)
রোদঃ ওকে তুমি যাও!আমরা আসছি
মায়াঃ জ্বি ভাইয়া

মায়া চলে গেল আর রোদ মেঘ আর আলোকে খাইয়ে দিলো!রোদের আম্মু জানে মেঘ যতই খাবার খেয়ে থাকুক রোদের খাবার থেকে ভাগ না বসালে মেঘের শান্তি হয়না।এজন্য রোদের আম্মু দুজনের খাবার দিয়ে দিয়েছে!রোদও ওর সাথে মেঘ আর আলোতেও খাইয়ে দেয়।তারপর আলো সব গুছিয়ে নিচে চলে যায়!আর মেঘ বেডের উপর দাড়িয়ে রোদের কোলে এক লাফ দেয়!রোদ অন্যদিকে তাকিয়ে ছিলো তাই খেয়াল করেনি মেঘ লাফ দিচ্ছে! রোদ মেঘকে কোন রকম ধরে ফেলে না হলে মেঘ মুখ থুবকে মেঝেতে পড়তো!রোদ রাগী চোখে মেঘের দিকে তাকাতেই মেঘ দুই হাত দিয়ে ওর কান ধরে মুখ কাচুমাচু করে রোদকে সরি বললো!মেঘ সরি বলে রোদের গালে আদর দিয়ে সাথে সাথে রোদের বুকেই মুখ লুকালো!এমন করে সরি বলে আদর করলে রোদ কেন কেউই কোন বাচ্চাকে কিছু বলতে পারবেনা।রোদ মেঘকে আর কিছু না বলে মেঘকে কোলে নিয়েই নিচে চলে গেল।মেঘ জানে যতই দোষই করুক কান ধরে সরি বললে রোদ মেঘকে কিছু বলবে না।মেঘটাও বড্ড চালাক হয়ে গেছে এখন…!!
রোদ নিচে গিয়ে দেখলো সবাই উঠানে গোল হয়ে দাড়িয়ে আছে!আজকে এখানে একটা অন্যরকম খেলার আয়োজন করা হয়েছে!এটা কাপলদের জন্য শুধু!রোদের আব্বু আর আম্মু, বড়মামা আর বড় মামী, মেজো মামা আর মেজো মামী, ছোট মামা আর ছোট মামী,আদিল আর আদিলের বউ!সবাই জোড়া দাড়িয়ে আছে খোলায় অংশগ্রহন করার জন্য! এই খেলাতে যে ফাস্ট হবে তার জন্য রয়েছে কাপল রিং সেট!আর এটা রোদের দীদানের পক্ষ থেকে!বাকিরা সবাই গোল হয়ে দাড়িয়ে অতি আগ্রহে খেলা দেখার জন্য দাড়িয়ে আছে!

দীদান রোদ আর আলোর কাছে এসে ওদেরও খেলতে বললো!বাট রোদ না করে দেয়।
দীদানঃ আলো আর রোদ তোমারও খেলতে যাও!কারন তোমরাও কাপল।
রোদঃ না দীদান!আমরা দেখি
দীদানঃ কেন? সবাই তো খেলছে?
রোদঃআব্বু আর আম্মু যে খেলায় অংশগ্রহন করেছে সেখানে প্রতিদ্বন্দী হওয়া মানেই হয় না।প্লিজ দীদান জোর করো না।
রোদের আব্বুঃ আমি আছি তাই কি রোদ মেহবুব ভয় পাচ্ছো নাকি??(মুচকি হেসে)
রোদঃ আব্বু তোমরা প্লিজ আমাকে জোর করো না।তোমরা খেলো আমরা দেখি!!
রোদের আম্মুঃআমার ছেলে হয়ে থাকলে মুখে বড় বড় কথা না বলে ফাস্ট কাপল হয়ে দেখা।আজ তুই প্রমান কর তোর বাপের মত তুই অর্কমা না।
রোদঃ কথায় কথায় তুমি শুধু আব্বুকে টানো কেন আম্মু?
বড় মামাঃ রোদ আব্বু তুমিও এসো!আর কোন কথা না। তুমি না আসলে তোমার আম্মু আজকে তোমার আব্বুর ইজ্জতের ফালুদা করে ছাড়বে।
রোদ প্রথমে যেতে রাজি হয় না বাট আদিল আর বড়মামা রোদকে জোর করে খেলতে রাজি করায়!এখন চেয়ার খেলা হবে কিন্তু চেয়ার খেলাটা হবে একটু ভিন্ন টাইপের!একটার পর একটা চেয়ার রাখা হবে আর যে যার বউকে সেই চেয়ারের উপর তুলে বসাতে হবে।১মিঃ এর মধ্যে যে যত চেয়ারের উপর বউকে বসাতে পারবে! সেই ফাস্ট হবে বলে সবাই ঠিক করে।
মেয়েরা সবাই খুব খুশি বাট হাজবেন্ড গুলোর মুখ দেখার মত হয়েছে!রোদ আর আলো পাশাপাশি দাড়িয়ে আছে।রোদ আলোকে একটা আস্তে করে ধাক্কা দিয়ে বিরবির করে জিজ্ঞাসা করলো

রোদঃ এই যে রাণী এলিজাবেথ আপনার ওয়েট কতো??(দুষ্টু হেসে)
আলোঃ এখন কত সঠিক না জানিনা।তবে ৪৫/৫০ কেজি হবে হয়তো(খুশি হয়ে)
রোদঃ এমন আলুর বস্তাকে আমি তুললে গিয়ে না জানি আমি নিজেই পটল তুলে ফেলি।ইয়া আল্লাহ তুমি তোমার এই অধম বান্দাকে রক্ষা করো…!! (দুষ্টু হেসে)
রোদের কথা শুনে আলো মনটা খারাপ করে দাড়িয়ে আছে!শেষে কিনা রোদ ওকে আলুর বস্তা বললো।আলোর মুখ ফুলানো দেখে রোদ মুচকি মুচকি হাসছে।এইদিকে সবার প্রথমে বড় মামা আর বড় মামী খেলতে নেমেছে!বড় মামী তো খুব খুশি কিন্তু বড় মামার জান শুকিয়ে গেছে কারন মামীর ওজন অনেকটাই বেশি! বেচারা বড় মামার তো মামীকে তুললেই জান বেরিয়ে যাবার উপক্রম হবে।প্রথমে একটা চেয়ারে বসানোর পর পাশে থেকে আরেকজন সেই চেয়ারের উপর আরেকটা চেয়ার তুলে দিলো!আর মামা তার অর্ধাঙ্গিনীকে তুলে সেই চেয়ারের উপর বসালো!এভাবে বড় মামা পর পর চারটা চেয়ারের উপর তুলতেই ১মিঃ শেষ। বড় মামী বড় মাকে ধুনাতে শুরু করলো আর বড় মামা অসহায় হয়ে বড় মামীর দিকে তাকিয়ে থাকলো!আর বড় মামার অবস্থা দেখে উপস্থিত সবাই হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে। আলোও মুখ টিপে হাসছে।

এদিকে রোদের আম্মু তো যথারীতি রোদের আব্বুকে থ্রেট দেওয়া শুরু করছে! আর পাশে থেকে আলো আর মেঘ দাড়িয়ে দাড়িয়ে উনাদের কথা শুনছে!যখন রোদের আব্বু কথা বলছে তখন আলো আর মেঘ ঘাড় ঘুরিয়ে রোদের আব্বুর দিকে তাকাচ্ছে! আর যখন রোদের আম্মু কথা বলছে! তখন আলো আর মেঘ ঘাড় ঘুরিয়ে রোদের আম্মুর দিকে তাকাচ্ছে!আর রোদ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আলোর আর মেঘের মুখের অবস্থা দেখে মুখ টিপে হাসছে…!!
যথারীতি খেলা চলতেই আছে!বড় মামা ৪ টা, মেজো মামা ৬ টা আর ছোট মামা ৫ চেয়ারে তাদের বউকে বসিয়েছে!এবার রোদের আব্বু আর আম্মু পালা।কিন্তু রোদের আব্বু কখন যে রোদের আম্মুর পাশে থেকে পলায়ন করেছে এটা কেউ বলতে পারছেনা।রোদের আব্বু তখন শত সাহস নিয়ে খেলতে রাজি হয়েছিলো! কিন্তু রোদের আম্মু যখনই বলেছে যদি খেলায় ফাস্ট হয়ে কাপল রিং এনে দিতে না পারে! তাহলে উনার পিঠে চ্যালাকাঠ ভাংবে!এই কথা শোনার পর থেকে রোদের আব্বুর বুকের হার্টবিট অতি দ্রুত চলে শুরু করছে! আর সেই সাথে উনার শত সাহস ঠুস করে উবে যায়!আর একটা সময় উনি আশে পাশে তাকিয়ে পলায়ন করে…..!!

#এলোকেশী_কন্যা২__
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_36

যথারীতি খেলা চলতেই আছে!বড় মামা ৪ টা, মেজো মামা ৬ টা আর ছোট মামা ৫ টা চেয়ারে তাদের বউকে বসিয়েছে!এবার রোদের আব্বুর আর আম্মুর পালা।কিন্তু রোদের আব্বু কখন যে রোদের আম্মুর পাশে থেকে পলায়ন করেছে এটা কেউ বলতে পারবেনা।রোদের আব্বু শত সাহস নিয়ে খেলাতে রাজি হয়েছিলো! কিন্তু রোদের আম্মু যখনই বলছে কাপল রিং যদি খেলায় ফাস্ট হয়ে এনে দিতে না পারে! তাহলে উনার পিঠে চ্যালাকাঠ ভাংবে!এই কথা শোনার পর থেকে রোদের আব্বুর বুকের হার্টবিট অতি দ্রুত চলে শুরু করছে! আর একটা সময় উনি আশে পাশে না তাকিয়েই পলায়ন করিয়াছে।
এদিকে রোদের আব্বুকে খুঁজে না পেয়ে রোদের আম্মু তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধ করার ঘোষণা করে দিয়েছে!রোদের আব্বু নাই তাই এবার আদিল আর ওর বউ নিয়ে খেলতে শুরু করলো!আদিল সবাইকে অবাক করে দিয়ে ওর বউকে অলরেডি ৮ টা চেয়ারের উপর তুলে বসিয়েছে!আদিলের বসানো দেখে আলো একবার আদিলের দিকে তাকাচ্ছে একবার রোদের দিকে তাকাচ্ছে!আর রোদ একটা হাত পকেটে ঢুকিয়ে আরেকহাতে ফোন নিয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে।তাও আবার সাহেবী স্টালে দাড়িয়ে। আলো বার বার রোদের দিকে তাকাচ্ছে! রোদ বুঝতে পারছে যে আলো ওকে কিছু বলতে চাচ্ছে! তাই রোদ আলোর দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাড়িয়ে বলে..!!

রোদঃ এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছো কেন শুনি?আমাকে কি আজকে বেশি হ্যান্ডসাম দেখাচ্ছে..?? (দুষ্টু হেসে)
আলোঃছাতার মাথা দেখাচ্ছে আপনাকে! আমি গেলাম আমি এই খেলা খেলতে চাইনা।
রোদঃকেন?(ভ্রু কুচকে)
আলোঃআদিল ভাইয়া ভাবিকে ৮ টা চেয়ারে বসিয়েছে ফেলছে।
রোদঃহুমম তো (ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে আবার ফোনের দিকে তাকিয়ে )
আলোঃআপনি তো আমাকে তুললেই পারবেন না!তাই হেরে গিয়ে মন খারাপ না করে এখনই আমি গেলাম।
রোদঃ খেলায় না নামতেই আগেই হেরে যাওয়ার চিন্তা ভাবনা বাহ্। আচ্ছা যাই হোক! যদি আমি পারি তো কি করবে.??(ফোনের দিকে তাকিয়ে)
আলোঃ আপনি পারবেন না!আদিল ভাইয়ার দিকে তাকান..!!তাহলেই বুঝবেন
রোদঃ আমার বড় ভাইয়া তার বউয়ের কোমরে হাত রেখে খেলছে! আর আমি অসভ্যের মত তাকিয়ে থাকবো।মাথায় তো বুদ্ধির ছিঁটে ফোঁটাও নেই গাধী একটা…(আলোর মাথায় ঠুয়া মেরে)
আলোঃ……

রোদঃ বুদ্ধি থাকবেই বা কেমন করে! মাথায় তো গোবর ঠাসা আছে শুধু ! গোবর গুলো তো এখন সারে পরিণত হয়েছে! এজন্য এইরকম এলোকেশ হয়েছে! আর এলোকেশ তো না বট গাছের ঝুলে থাকা লাতা (দুষ্টু হেসে)
আলোঃচুল নিয়ে একদম বাজে কথা বলবেন না!আর মুখে ফকফক না করে কাজে করে দেখান!পারবেন না তো করতে কিছু….!! (মুখ ভেংচি দিয়ে)
রোদঃ বাজি!!
আলোঃউমম! হুম! বাজি (না ভেবেই)
রোদঃ বাজিতে আমি জিতে গেলে যা চাইবো তাই দিতে হবে। ভেবে বলছো তো (দুষ্টু হেসে)
আলোঃহুমম!পারবেন না তো তাহলে হুদাই এত ভাব নিচ্ছেন কেন? (ভেংচি কেটে)
রোদঃ ওকে ডান!দেখা যাক পারি কি না..!!
ওদিকে____!!
আদিলে ১মিঃ ওর বউকে পর পর ১২ টা চেয়ারে বসিয়েছে!এবার তো রোদের পালা! রোদ আর আলো সামনে এগিয়ে গেল!কোথা থেকে রোদের আব্বু এসে রোদকে বেস্ট অফ লাক জানালো!রোদের আম্মু কটমট করে রোদের আব্বুর দিকে তাকালো!রোদের আম্মুর এভাবে তাকানো মানে দাড়াও পরে তোমার সাতার কাঁটার ব্যবস্থা করছি।এদিকে রোদ মুচকি হেসে আলোর দিকে তাকিয়ে বললো…!!
রোদঃ রেডি থাকুন আমার পাওনা আমাকে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য! এক আনাও ছাড় নাই আর! সব আমি কড়াই গন্ডায় সব উসুল করে নিবো।( দুষ্টু হেসে)

আলোঃ স স স সে পরে দেখা যাবে।(তুতলে)
রোদ মুচকি হেসে আলোর কোমর হাত রাখতেই আলো লাফ দিয়ে উঠে! তারপর আশে পাশে তাকিয়ে নিজেকে শান্ত করার জন্য কয়েকবার জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলে!আর আড়চোখে একবার রোদের দিকে তাকায়! রোদ মুচকি হেসে খেলা শুরু করে!আলো চোখ বন্ধ করে রোদের কাঁধে হাত রাখে! আর রোদের টি-শার্ট টা শক্ত করে খামছে ধরে রাখে! আর রোদ আলোকে চেয়ারে একবার বসাচ্ছে আর একবার নামাচ্ছে!সবাই চোখ বড় বড় করে রোদের দিকে তাকিয়ে আছে!রোদ অলরেডি ১৩ টা চেয়ারে পার করে ফেলছে!আদিল মায়া, নেহা, সজল সিটি বাজাতে শুরু করছে!এভাবে ১মিনিটে রোদ পর পর আলোকে ১৮টা চেয়ারে বসিয়েছে!
সবার সিটি বাজানোর শব্দ শুনে আলো চোখ খুলে আর রোদের দিকে তাকায়! আর দেখে রোদ ওর ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসির রেখা টেনে দাড়িয়ে আছে!রোদ আর আলো কাপলদের চেয়ার খেলায় ফাস্ট হয়েছে! তাই দীদান রোদ আর আলোকে কাপল রিং এর বক্সটা দিলো!সবাই খুশি হয়ে হাত তালি দিলো।আলো দীদানকে ধন্যবাদ দিয়ে একবার রোদের দিকে তাকিয়ে রোদের আব্বু আর আম্মুর দিকে এগিয়ে গেল!তারপর আলো রোদের আব্বুর দিকে একটা রিং এগিয়ে দিয়ে বললো…!!
আলোঃ আব্বু তুমি আম্মুকে এই মেয়েদের রিং টা পড়িয়ে দাও! আর আম্মু তুমি আব্বু এই ছেলেদের রিং পড়িয়ে দাও..!! (মুচকি হেসে)
রোদের আব্বুঃআমরা তো খেলাতেই যায়নি! তাহলে আমাদের এই উপহার টা দিচ্ছিস কেন আম্মু?(অবাক হয়ে)
আলোঃ বাবা মায়ের জিনিস যদি ছেলে মেয়েরা নিতে পারে! তাহলে ছেলেমেয়েদের জিনিস কেন বাবা মায়েরা নিতে পারবেনা শুনি।(মুচকি হেসে)

রোদের আম্মুঃএটা তো তোদের কষ্ট করে খেলার পাপ্য উপহার। তাহলে আমাদের কেন দিবি??(আলোর দিকে তাকিয়ে)
আলোঃ তোমরা যদি তোমাদের জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহারটা আমাকে দিতে পারো! তাহলে আমি কেন এই সামান্য উপহারটা তোমাদের সাথে ভাগ করে নিতে পারবো না আম্মু (রোদের দিকে তাকিয়ে)
আলোর এই কথা শুনে আর কেউ কিছু বলার ভাষা খুঁজে পায়নি!এই উপহার টা রোদের আব্বু আম্মু কে দেওয়ার জন্যই আলো রোদের সাথে বাজি টা ধরেছিলো!রোদের আব্বু আলোর মাথার হাত রেখে দোয়া করে! আলোর এমন কথায় আর কাজে আর কিছু বলার ভাষা খুঁজে পায়নি ওরা!রোদের আম্মু ছলছল চোখে রোদের দিকে তাকায়!রোদের আম্মুর তাকানো মানে এটাই যে, আলোকে চিনতে উনি ভুল করে নি। রোদ বুঝতে পেরেছে ওর আম্মুর চোখে ভাষা!রোদও আলোর কাজে একটু অবাক হয়।তারপর উপস্থিত সবার সামনে রোদের আব্বু আম্মু দুজন দুজনকে আংটি পড়িয়ে দেয়!সবাই মুখে হাসি সবাই খুশিও হয় আলোর এমন কাজে!যদিও রোদ কল্পনাও করেনি আলোর এমনটা করবে!আলোর এমন কাজে রোদও অনেক খুশি হয়।
তারপর খেলা শেষ করে সবাই সাওয়ার নিয়ে দুপুরে সবাই একসাথে খেতে বসে!ছেলেরা সবাই একসাথে খেতে বসেছে! ছেলেদের খাওয়া শেষ হলে মেয়েরা সবাই একসাথে খেতে বসবে!মেঘ একটা মোড়ার উপর বসে আছে!আর আলো মেঘকে খাইয়ে দিচ্ছে! আলো আসার পর থেকে রোদের আম্মুর ছুটি!মেঘ এখন ওর আম্মুর হাতে খায় না আলোর হাতেই খাই।ডায়নিং টেবিলে বসে খেতে খেতেই রোদ খাওয়া থামিয়ে ওর আব্বুর দিকে তাকিয়ে বললো…!!

রোদঃ আব্বু তুমি তো কালকেই আসলে!তুমি রিসিপশনের পর দুইদিন এখানে থেকে তারপর ঢাকায় এসো।আমি আর আলো আজকেই ঢাকায় ব্যাক করবো।(ওর বাবার দিকে তাকিয়ে)
রোদের আম্মুঃ কেন??
রোদঃ আম্মু আবির আমাকে ফোন দিয়েছিলো! আর বললো আমার এক্সামের ডেটটা নাকি ঠিক হয়ে গেছে। তাই এখন আমার আর এখানে থাকাটা পসিবল না।
বড় মামাঃ একেবারে রিসিপশনের অনুষ্ঠানটা শেষ করে গেলে ভালো হতো না আব্বু
রোদঃ না মামা আমাকে আর থাকতে বলবেন না প্লিজ।আমি আর থাকতে পারবো না। তবে আসবো আবার বেড়াতে..!! (মুচকি হেসে)
রোদের আম্মুঃ কালকে সকালে গেলে হতো না আব্বু..!!
রোদঃ না আম্মু দিনের বেলাতে গ্যাদারিং বেশি হয় ট্রেনে! আর রাতের জার্নি টাই বেস্ট মনে হয় আমার কাছে…!!
রোদের আম্মুঃতুই যাচ্ছিস যা আলোকে টানছিস কেন?আলো আমাদের সাথেই যাবে
রোদঃ এখানে ওর আর কি কাজ আছে?থাকলোই তো…!!
মেঘঃ বউমনি গেলে আমিও যাবো বউমনির সাথে।এটা আমি কিন্তু আগেই বলে দিলাম (খেতে খেতে)
রোদের আব্বুঃ ওকে তোমরা যাও।আমি আর তোমার আম্মু রিসিপশনের অনুষ্ঠান শেষ করেই আসছি।
রোদঃহুমম!!

এলোকেশী কন্যা  সিজন ২ পর্ব ৩১+৩২+৩৩

তারপর রোদ খেয়ে ওর রুমে চলে গেল!তারপর সবাই একে একে সবার খাওয়ার পর্ব শেষ করে!আর যে যার রুমে চলে যায়।আলো আর মেঘ ওদের রুমে যেতেই দেখে রোদ রেডি হয় কোথায় জানি বের হচ্ছে। মেঘ রোদকে রেডি হতে দেখেই জেদ ধরে মেঘ যাবে রোদের সাথে এজন্য ! রোদ না করে তাও মেঘ কথা শুনছে না।একদিকে মেঘকে নিয়ে গেলে আলো একা হয়ে যাবে তাই রোদ আলো আর মেঘ দুজনকেই রেডি হয়ে নিতে বলে। আলো কালো আর নীল কম্বিনেশনের হালকা কাজ করা একটা থ্রী পড়ে নেয়!আলো সব সময় চুরিদারই বেশি পড়ে। এজন্য কালো কামিজের সাথে ব্লু চুরিদার আর ব্লু ওড়না পড়ছে।আর আলো মাথায় হিজাব পড়ে নেয়…!!মেঘ সাদা টি শার্ট আর ব্লু জিন্স পড়ছে!আর রোদ মেরুন কালার শার্ট আর কালো জিন্স পড়ছে। এদের দেখে যে কেউ দেখে বলবে সুখে মোড়া ছোট্ট একটা ফ্যামিলির সদস্য এরা তিনজন…..!তিনজনেরই নজর কাড়া লুক।
রোদ ওর আম্মুকে বলে আর বেরিয়ে পড়ে তিনজন মিলে ঘুরতে!আলো আর রোদ পাশাপাশি হাঁটছে আর মেঘ আলোর হাত ধরে তিরিং বিরিং করে লাফাতে লাফাতে যাচ্ছে।হঠাৎ মেঘ দাড়িয়ে যায়! আর সামনে একটু দূরে রাস্তায় পড়ে থাকা কিছু একটা দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করে…..!!
মেঘঃদাভাই এটা কি??

রোদ আর আলোর মেঘের কথা অনুযায়ী সামনে তাকিয়ে টাসকি খায়!রোদ ওর ঘাড়ে হাত রেখে ঘাড় এদিক ওদিক ঘুরাতে থাকে! আর আলো লজ্জায় মাথা নিচু করে মাটির দিকে তাকিয়ে আছে!আর এই মেঘ ফাজিলটা তোতাপাখির মত বুলি ফুটিয়ে জিজ্ঞাসা করতেই আছে। আলো আর রোদ দুজনেই কি বলবো বুঝতে পারছেনা?কারন মেঘের দেখিয়ে দেওয়া জিনিসটি হলো ব্যবহারিত প্রোটেকশন! তাও রাস্তার মাঝখানে যেটা যে কারো চোখেই পড়বে!এদিকে মেঘ ওইটা কি জানার জন্য পাগল হয়ে গেছে!আর দাভাই হিসেবে রোদ এখন মেঘকে কি করে বোঝাবে যে আসলে ওইটা কি???
মেঘঃ দাভাই বলো না এটা কি??
রোদঃছিঃ মেঘ!মানুষ বমি করে ফেলছে আর তুই এগুলোর দিকে তাকিয়ে আছিস।ইয়াক থু…!!
মেঘঃ ওহহ!আচ্ছা দাভাই যে বমি করছে তার বাসায় কি ওয়াশরুমে নেই! নাকি তার বাসায় বালতি নেই দাভাই?আর সব কিছু রেখে বেলুনের ভিতর বমি করলো কেন??(চিন্তিত হয়ে)
নিষ্পাপ একটা বাচ্চার মনে জানার কৌতূহল আর কি?এবার মেঘকে কে কি করে বোঝাবে! এই দায়িত্ব তোমরা নাও!

এলোকেশী কন্যা  সিজন ২ পর্ব ৩৭+৩৮+৩৯