এলোকেশী কন্যা সিজন ২ পর্ব ৩১+৩২+৩৩

এলোকেশী কন্যা সিজন ২ পর্ব ৩১+৩২+৩৩
লেখনীতে:- নূরজাহান আক্তার (আলো)

হুজুর রোদকে ইশারা করে আলোকে রুমে নিয়ে যাওয়া জন্য! রোদ মেঘকে কোলে থেকে নামিয়ে আলোকে কোলে নিয়ে ওর রুমে নিয়ে যায়….!!
রোদ আলোর বিছানাতে শুইয়ে দেয়!রোদের চোখ থেকে একফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো গাল বেয়ে!রোদ আলোকে মজা করার জন্য ইচ্ছে করে কাঁদাতে চাইতো! বাট এভাবে এত কষ্ট পেয়ে আলোর চোখের পানি দেখতে চাইনি রোদ! রোদ আলোর কপালে আদর দিলো! আর আলোর দুইগাল ধরে ছলছল চোখে তাকিয়ে বললো…!!
রোদঃসরি তিলোকন্যা!আর কাঁদাবো না তোমাকে!আমি কখনো চাইনি তুমি এত কষ্ট পাও!অনেক হয়েছে তিলোকন্যা আমি আর তোমাকে কষ্ট পেতে দিবো না!আমি সরি..!! (কপালে আদর দিয়ে)

রোদের আম্মু আর দীদান আলোর রুমে আসলো!আলোর পুরো শরীরে মাটি লেগে গেছে!চুলের অবসথা তো আরো খারাপ! মেঘ আলোর কাছে যাওয়ার সাহস পাচ্ছে না!রুমের দরজার কাছে পর্দার আড়ালে দাড়িয়ে ছলছর চোখে আলোর দিকে তাকিয়ে আছে!রোদ মেঘকে দেখতে পেয়ে মেঘের কাছে এগিয়ে গেল আর হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো!মেঘ মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে…!!
রোদঃ কি হয়েছে মেঘবাবুর? এভাবে এখানে দাড়িয়ে আছো কেন?(মেঘের গালে হাত রেখে)
মেঘঃ দা দা দাভাই বউমনি আমার জন্য খুব কষ্ট পাচ্ছে! আমার খুব কষ্ট হচ্ছে দাভাই (ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে)
রোদঃ আরে না!আসলে একটা দুষ্টু লোক তোমার বউমনিকে কষ্ট দিসে!এখানে তোমার কোন দোষ নেই সোনা…!ওই দুষ্টু লোককে পানিশমেন্ট দিয়েছি আর কষ্ট দিবে না তোমার বউমনিকে!আর কাঁদে না এবার সব ঠিক হয়ে যাবে।(চোখ মুছে দিয়ে)
মেঘঃ বউমনি কি আমাকে আর ভালোবাসবে না দাভাই? (কেঁদে কেঁদে)
রোদঃ কেন ভালবাসবে না?আগের মত আবার তোমাকে ভালবাসবে!এখন তোমার বউমনি একটু টায়ার্ড তো তাই ঘুমাচ্ছে…. (মুচকি হেসে)

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

রোদের আম্মু রোদ আর মেঘকে বাইরে যেতে বললো আলোর ড্রেসটা চেন্জ করিয়ে দেওয়ার জন্য। মেঘ আর রোদ দুইভাই আলোর দিকে একবার তাকিয়ে চলে যায়!হঠাৎ মেঘ দৌড়ে এসে আলো পুরো মুখে এত এত আদর দিয়ে কেদে দেয় আর আলোর গলা জড়িয়ে ধরে কেঁদে কেঁদে বলে..!!
মেঘঃ বউমনি আমি তোমাকে এত এত আদর দিয়ে দিলাম!এবার দেখবে তোমার সব কষ্ট চলে যাবে। আর একটুও কষ্ট হবে না তোমার বউমনি…..!আমি তোমাকে অনেক অনেক বেশি ভালবাসি বউমনি(আদর দিয়ে)
রোদের চোখ লাল হয়ে আছে!মনে হচ্ছে এখুনি টুপ করে পানি ঝরে পড়বে!রোদ এসে মেঘকে কোলে নিয়ে রুমে থেকে চলে গেল!রোদের আম্মু আর দীদান আলোর ড্রেস বদলে দিলো আর টাওয়াল ভিজিয়ে শরীর মুছে দিলো।আলো এখনো ঘুমাচ্ছে তাই আর কেউ আর ডাকে নি!হুজুর, রোদের আব্বু আর আম্মু, রোদ আর দীদান সবাই বসে আছে!আর একটু দুরে মেঘ বসে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে মন খারাপ করে।হুজুর রোদের দিকে তাকিয়ে বললো….!!

হুজুরঃতোমরা এখনকার যুগের ছেলে মেয়েরা এসব বিশ্বাস করো না!তবে সবকিছু অবিশ্বাস বা অবহেলা করাও উচিত না।জানিনা তুমি বিশ্বাস করো বা করবে কি না?আর জ্বিন বলে কিছু তো আছেই আর সেটা কুরআনেই তো উল্লেখ আছে!যেহেতু কুরআনের জ্বিন নিয়ে উল্লেখ আছে তাহলে মুসলমান ঘরের ছেলে মেয়ে হয়ে জ্বিন নিয়ে মজা করেও! এটা ওটা বলা কি ঠিক?সত্যি বলতে যারা কোনদিন কুরআন পড়েনি বা পড়ে না! বা জ্বিন সূরার অর্থই জানে না তারাই মজা করবে এসব নিয়ে।
রোদঃ আমার মনে হচ্ছে আপনি আমাকে কিছু বলতে চান?আপনি খোলাখুলি বলতে পারেন।
হুজুরঃ শুধু তোমাকে না প্রত্যেকটা পাঠকগণ সহ
এখানে উপস্থিত সবাইকে আমি কিছু বলতে চাই!পৃথিবীতে মানুষ যেমন ভালো আর খারাপ দুইধরনের আছে! তেমনি জ্বিনরাও তাই!এই মেয়ের ভাগ্য ভাল ওকে খারাপ জ্বিন আঘাত করছে কষ্ট দিয়েছে! কিন্তু শারীরিক ভাবে কোন অত্যাচারে লিপ্ত হতে পারেনি?কারো কারো ক্ষেতে দেখা যায় জ্বিনা রা সুন্দরী মেয়েদের সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হয়! যে মেয়েরা সুন্দর তারা বিবাহিত বা অবিবাহিত কাউকে তারা মানে না।যাকে তারা পছন্দ হয় তার সাথেই সঙ্গমে লিপ্ত হয়….!! এটাও সঠিক যে খারাপ জ্বিনরা বিবাহিত মেয়েদের হাজবেন্ডের রুপ ধরে এসেও তারা….!!!!
রোদঃ……

হুজুরঃজ্বীনদের শরীর মূলত খুব সূক্ষাতি সূক্ষ। জ্বীনরা চাইলে যেকোন কঠিন পদার্থের বাধা অতিক্রম করতে পারে। জ্বীন দের কে আল্লাহপাক বিশেষ কিছু কথা ও কাজ শিখিয়ে দিয়েছেন যার দ্বারা জ্বীনরা চাইলে এক আকার থেকে আরেক আকারে রূপান্তরিত হতে পারে। তবে জ্বীন দের কাছে সবচেয়ে প্রিয় আকার হল সাপের আকার। জ্বীনরা বেশিরভাগ সময় সাপের আকারে চলাফেরা করতে পছন্দ করে। জ্বীনদের খাবার হল শুকনা হাড় ও গোবর।
তবে সহীহ হাদীসে শুকনা হাড় ও গোবর দ্বারা এস্তেঞ্জা করতে নিষেধ করা আছে। হাদিসে বলা হয়েছে এ দুটা হল জ্বীনদের খাবার। জ্বীন দের সাথে মানুষের বিয়ে হওয়া সম্ভব। তবে জ্বীনদের সাথে মানুষের বিয়ে হালাল না হারাম এ নিয়ে আলেমদের মাঝে মতবিরোধ আছে। তবে বেশিরভাগ আলেমদের মতে জ্বীন বিয়ে করা মাকরুহ। অনেক অন্ধ বুজুর্গ জ্বীন মেয়েকে বিয়ে করেছেন যেন সফরে ঐ বুজুর্গের হাটা চলায় সুবিধা হয়। তবে জ্বীনরা যদি চায় তাইলেই মানুষ জ্বিনদেরকে দেখতে পারে। জ্বীন দের সাথে মানুষের উটাবসা, বিয়ে এটা পুরাটাই জ্বীনদের ইচ্ছা। মানুষের মাঝে যেমন বিভিন্ন ফেরকা, মাযহাব আছে ঠিক তেমনি জ্বীন দের মাঝেও বিভিন্ন দল মত আছে।
রোদের আব্বুঃ আচ্ছা হুজুর তাহলে জ্বিন কোথায় থাকে! আর কাদের উপরে ভর করে বেশি এটা বললে অনেক উপকার হতো…!!
হুজুরঃজ্বিনরা মেয়েদের উপর ভর করে আর পরীরা ছেলেদের উপর!পরীরাও যে ছেলে সুন্দর তাদের সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হয়!আর পরীরা সেই সঙ্গগের মাধ্যমে গর্ভবতীও হয়! ভালো জ্বিনরা থাকে মসজিদে
আর খারাপ জ্বিনরা বেশির ভাগ থাকে…

১. আয়নাতে____!!
ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা আয়না দেখতে খুব বেশিই পছন্দ করে!তবে যেসব মেয়েরা আয়নার সামনে ড্রেস বদলায়,ওড়না ছাড়া বার বার আয়নার সামনে গিয়ে শরীরের ভাজ দেখে!বার বার আয়নার দিকে তাকিয়ে মুখের বিভিন্ন ধরনে অঙ্গ ভঙ্গি করে।আরশি জ্বিন সেই মেয়েদের উপর ভর করে বেশি! এজন্য আয়না দেখার সময় সূরা পড়ে নিতে হয়।
২.ওয়াশরুমে ____!!
খারাপ জ্বিনদের আরেকটা থাকার স্থান হলো ওয়াশরুম!কারন খারাপ জ্বিনরা নাপাক, দুর্গন্ধ স্থান তাদের খুব পছন্দের জায়গা!ওয়াশরুমে ঘন্টার পর ঘন্টা অকারণে থাকা মানুষ গুলো জ্বিনের খপ্পরে পড়ে বেশি!কেউ কেউ আছে ওয়াশরুমে গেলে ফোন নিয়ে ঘন্টার ঘন্টা কাটিয়ে দেয়।আর ফোন হাতে থাকার ফলে শয়তানের আর খারাপ জ্বিনের উৎসাহে মাষ্টারবেট এর মত কাজ গুলোর প্রতি মনোনিবেশ করে থাকে বেশি…!এক ভুল বার বার করে থাকে আর মনে মনে ভাবে এটাই লাস্ট..!! কিন্তু শয়তান আর খারাপ জ্বিন তার পেছনেই পড়ে থাকে! যতক্ষণ না সেইম ভুল মনোবাসনা নিয়ে আবার মাষ্টারবেট এর মত কাজগুলো না করে ।
৩.নাপাক ব্যাক্তি_____!!
জ্বিনরা নাপাক ব্যাক্তিকে পছন্দ করে বেশি!বিশেষ করে গোসল ফরয হওয়া সত্ত্বেও যারা দীর্ঘ সময় কাটিয়ে দেয়! তাদের উপর জ্বিন মারাত্মক ভাবে ভর করে….!!ফরজ গোসলটা শুধু বিবাহতদের উপরেই ইঙ্গিত করে না! স্বপ্নদোষের পরে গোসল দেওয়াটাও ফরজ গোসলের মধ্যেই পড়ে।
৪.নোংরা মস্তিষ্কের মানুষ ____!!
সারাক্ষণ যৌনতা চিন্তা করা!এ ধরনের মুভি ভিত্তিক বা অশ্লীল বই অথবা ছবি দেখা।সব সময় যাদের মস্তিষ্কে এসব নোংরা ধারণা নিয়ে ঘুরে বেড়ায়! সেসব লোকদের জ্বিন অতি সহজে আক্রমন করে।
৫.নাস্তিকদের_____!!
যারা আল্লাহকে ভুলে যায়!দিনে দুই এক বারও যারা আল্লাহকে স্মরণ করে না!যাদের বাসায় কুরআনের বাণী বা তেলাওয়াত করে না।বা যারা বাড়িতে কুরআনের বাণী অযথা কুরআন রাখেনা। এসব জায়গাতে জ্বিন অতি সহজে যেখানে আক্রমন করে।

৬.আর একটা জরুরি কথা যেটা প্রতিটা মেয়ের জানা উচিত_____!!
মেয়েদের পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে নিজেকে একটু সচেতন রাখা।কারন পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে জ্বিন, বদনজর,জাদুটোনার প্রভাব বেশি পড়ে।মেয়েদের উচিত পিরিয়ড ভালো হওয়ার পর পরই নিজেকে যথা শীঘ্রই পবিএ করে নেওয়া! কারন আমি আগেই বলেছি জ্বিন অপবিত্র নোংরা শরীর জ্বিন খুব পছন্দ করে।আর আলোর মত যাদের চুল অনেক বড় সেসব মেয়েদের চুল ছেড়ে যেখানে সেখানে যাওয়া উচিত না বিশেষ করে ভর দুপুরে চুল ছেড়ে উঠানে দাঁড়ানো, ছাদে যাওয়া,সন্ধ্যায় পর চুল ছেড়ে বাসায় বের হওয়া।আর পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে নিমগাছ,তেঁতুলগাছ, ফাঁকা ছাদ বা নির্জন জায়গা গুলো কিছুদিনের জন্য এড়িয়ে চলা…!!
উপস্থিত সবাই খুব মনোযোগ দিয়ে হুজুরের কথা শুনলো!হুজুরের বলা কথাগুলোর রোদ খুব মনোযোগ দিয়ে শুনেছে!বাবা মায়ের সামনে একটু লজ্জা পেলেও জানার আগ্রহটা রোদ নিজের মধ্যে
দমিয়ে রাখতে পারেনি!কারন কোন বিষয়ে জানতে বা জানাতে না দেওয়াটা বোকার কাজ। আর বুদ্ধিমানের কাজ সব শুনে বা জেনে রাখা! যাতে পরবর্তী কোন সময় কোন কাজে এই জানাটাকেই কাজে লাগতে পারে। হুজুর সবার উদ্দেশ্য করে বললো…!!
হুজুরঃ আমি মনে করি আলোর বিয়ে দিয়ে দেওয়া।দুষ্টু প্রকৃতির জ্বিনের খপ্পরে যে আর পড়বে না এটার গ্যারান্টি তো আমি দিতে পারবো না।বিয়ে যখন ঠিক আছে! তাহলে এখন ওর বিয়েটা দিয়ে দেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
রোদের আম্মুঃ তাহলে আপনি নিজে শুভ কাজটা সম্পূর্ন করে তারপর যান।আমি আলোকে নিয়ে আর কোন রিস্ক নিতে চাই না।
রোদঃ আম্মু তুমি আ

রোদের আব্বুঃপ্লিজ আর কথা বলো না রোদ আব্বু! এটাই ফাইনাল..!!
মেঘ দৌড়ে এসে বললো আলো নাকি ঘুম থেকে উঠেছে!রোদের আম্মু মেঘকে ডাকে কাছে। আর ইশারায় রোদকে বলে মেঘকে কিছু বলতে!রোদ মেঘের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে।
রোদঃ মেঘবাবু তোমাকে একটা কথা বলা হয়নি..!
মেঘঃ কি কথা দাভাই?
রোদঃ আজকে যা যা হলো তুমি যা কিছু শুনেছো বা দেখছো! সেসব একটা কথাও কোনদিন আর কাউকে বলবেনা।এমনি তোমার বউমনিকেও না!যদি বলো তাহলে তোমার বউমনি আমাদের ছেড়ে অনেক দূরে চলে যাবে..!!
মেঘঃ আমি যদি কাউকে বলি তাহলে কি বউমনি আকাশের তারা হয়ে যাবে দাভাই (জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে)
রোদঃহুমম
মেঘঃওকে!আমি প্রমিস করছি আমি কোনদিনও এসব কথা কাউকে বলবো না। আমি কিছুতেই আমার বউমনিকে আকাশের তারা হতে দিবো না…(ছলছল চোখে তাকিয়ে)
রোদ মুচকি হেসে মেঘকে বুকে জড়িয়ে নেই!রোদের আম্মু আলোর রুমে যায়!আলো উঠে বসার চেষ্টা করছে কিন্তু শরীরের ব্যাথায় উঠতে পারছে না।রোদের আম্মু আলোর ধরে উঠে বসায়! আর আলোর দুই হাত ধরে বলে….!!!

#এলোকেশী_কন্যা২__
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_32

রোদ মুচকি হেসে মেঘকে বুকে জড়িয়ে নেই!রোদের আম্মু আলোর রুমে যায়!আলো উঠে বসার চেষ্টা করছে কিন্তু শরীরের ব্যাথায় উঠতে পারছে না।রোদের আম্মু আলোর হাত ধরে উঠে বসায়! আর আলোর দুই হাত ধরে বলে….!!!
রোদের আম্মুঃ তুই যদি মনে করিস আমি কোনদিন আমি তোর ক্ষতি চাই না।তাহলে এখন তুই টু শব্দ করবি না।আমি এখন এই মুহূর্তে যা বলবো তুই টু শব্দ না করে সেই কাজটাই করবি (আলোর দিকে তাকিয়ে)
আলোঃহুমম!আ আম্মু তুমি শুধু বলো আমাকে ক কি করতে হবে??
রোদের আব্বুঃ আমার রোদকে বিয়ে করতে হবে!প্লিজ তুই না করিস না।
আলো কি বলবে বুঝতে পারছেনা?কারন রোদের বাবা আর মাকে এই দুটো মানুষকে আলো চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতে পারে!আর রোদ একটু রাগী বাট রোদকে রিজেক্টে করার মত সাহস আলোর নাই।
আর সত্যি বলতে আলোও রোদকে ভালবেসে ফেলেছে।বিয়ের কথা শুনে আলো মাথা নিচু করে আছে!নিরবতা সম্মতির লক্ষণ ভেবে রোদের আব্বু আর আম্মু মুচকি হাসলো।রোদের আব্বু মুচকি হেসে আলোর মাথায় হাত রেখে দোয়া করে চলে গেলো!আলোর পুরো শরীর প্রচন্ড ব্যাথা নড়তে গেলেও মনে হচ্ছে জান বের হয়ে যাচ্ছে। আলো রোদের আম্মুকে বললো…!!
আলোঃ আম্মু আমার শরীর এত ব্যাথা কেন?আমার শরীর এত খারাপই বা করছে কেন???
রোদের আম্মুঃ রোদ আর তুই বাসায় আসার সময় গাড়ি এক্সিডেন্ট করেছিলো! তুই রাস্তা পড়ে গিয়ে ব্যাথা পেয়েছিস! আর তখন সেন্স হারিয়েছিলি তাই তোর কিছু মনে নাই..!!

আলোঃ না! র র রোদ ভাইয়ার ঠিক আছে তো..??
রোদের আম্মুঃ হুমম রোদ ঠিক আছে!(মুচকি হেসে)
আলোঃ আম্মু আমি গোসল দিতে চাই!শরীর কেমন জানি করছে আমার।গোসল দিলে মনে হয় ভালো লাগবে।
আম্মুঃ আচ্ছা চল আমি তোকে সাহায্য করছি..
আলোঃ আচ্ছা..
রোদের আম্মু আলোকে নিয়ে ওয়াশরুমে গেল!রোদ বিয়ের বাড়িতে যাওয়ার সময় যে পান্জাবী পড়ে ছিলো সেটা রোদ এখনো চেন্জ করেনি!রোদের আব্বু রোদকে বললো একেবারে গোসল সেরে নিতে!রোদের মুখটাও শুকিয়ে গেছে। রোদ ওর রুমে চলে গেল।দীদান সব কাজ তারাতারি সেরে ফেলতে বললো কারন আদিল নতুন বউ নিয়ে চলে আসবে আর একটু পর।রোদের দীদান হুজুরের বলা কথা অনুযায়ী জ্বিনের খাওয়া, মিষ্টি, কলা, লবণ, কবুতর সব একটা পুকুরে ফেলে দিলো!কারন জ্বিনে কিছু খেলে সেসব জিনিস স্বাদ গুলো শুধু খায়!লবণ যদি কেউ টেস্ট করতো লবণ তিতা লাগলো,মিষ্টির খেতে স্বাদ লাগলো না, কলাও তাই…!!
আলোকে কেউ সত্যিটা জানাতে চাচ্ছে না কারন এগুলো শুনে আলো আরো ভয় পাবে। স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারবেনা।রোদের আম্মু আলোকে গোসল করিয়ে বেডের উপর বসালো!তারপর মাথায় ওড়না দিয়ে দিলো আর সবাইকে ডাকলো!গোসলের পর আলোর শরীরটা এখন খুব ভাল লাগছে!হুজুর, দীদান,রোদের আব্বু, মেঘ,রোদের আম্মু সবাই রুমে এসে বসলো।একটু পর রোদও আসলো!আলো মাথা নিচু করে বসে আছে! তারপর হুজুর আলোর ঠিকানা,নাম জেনে নিলো রোদেরও নিলো! তারপর বিয়ে পড়ানো শুরু করলো।কেন জানি আলোর খুব ভয় লাগছে পুরো শরীর থরথর করে কাঁপছে! আলোকে ভয় পেতে দেখে রোদের খুব ইচ্ছা করছে আলোকে বলতে…!!

রোদঃ এই পাগলী ভয় পাচ্ছিস কেন?আমি আছি তে তোর পাশে!প্রতিটা মুহূর্ত তোর পাশে থাকার জন্যই তো এই পবিএ বন্ধ আবদ্ধ হতে যাচ্ছি। একদম ভয়
পাবি না!তবে জীবনে কত কতটুকু ভালো রাখতে পারবো তোকে এটা আমার জানা নেই! নিঃস্বার্থ ভাবেই তোকেই আমি এখন যেমন ভালবাসি!তেমনি সারাজীবন আমার বুকের বামপাশে শুধু তুই থাকবি।আজকে কথা দিচ্ছি আমার ভালবাসার কমতি হবে না কখনো তোর।(মনে মনে)
রোদ মনে মনে এসব ভাবছিলো!তখন রোদের আব্বু আলোর পাশে বসে আলোর মাথায় হাত রাখতেই আলো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো!রোদের আব্বু আলোকে অনেক কথা বলেই বোঝালো। আলোর চোখের পানিও মুছে দিলো।
হুজুর আলোকে কবুল বলতে বললো!রোদের আব্বু আলোর হাত ধরে আশ্বাস দিলো কবুল বলার জন্য! আলো কবুল বলে দিলো!রোদ আলোকে কি বলবো ওর নিজের বুকটাই দুরুদুরু করে কাঁপছে! কি থেকে কি হয়ে গেল?কয়েক ঘন্টার মাঝে ওদের জীবনের উপর দিয়ে ঝড় বয়ে গেল।রোদও কবুল বলে দিলো আর আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করলো।তারপর দীদান সহ সবাই সাক্ষী হয়ে সাইন করলো!আলো পক্ষে সাইন করছে মেঘ আর রোদের আব্বু…..!!
তারপর সবাই রোদ আর আলোর জন্য মোনাজাতে দোয়া করে!তারপর সবাই রোদ আর আলোকে রেখে বাইরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়।রোদের আম্মু সবাইকে বলে দেয় যাতে এখনকার বিয়ের কথা কেউ না জানে। তারপর বড়রা কথা বলতে বলতে নিচে চলে যায়।রোদ এখনো সোফাতে বসে নিচের দিকে তাকিয়ে থম মেরে আছে!মেঘ ছলছল চোখে একবার আলোর দিকে বাইরে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই….!!

আলোঃম ম মেঘ মেঘবাবু!আমার কাছে আসবে না সোনা।(কান্না মাখা সুরে)
আলোর বলতে দেরী কিন্তু মেঘ দৌড়ে আলোর কোলে ঝাপিয়ে পড়তে দেরী করেনা।মেঘের এভাবে ঝাপিয়ে পড়াতে আলো খুব ব্যাথা পায়! কিন্তু কিছু বলে না!আলোর গলা জড়িয়ে ধরে মেঘ ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে। আলো বুঝতে পারছেনা মেঘ কাদছে কেন এভাবে?আলো মনে করছে তখন বিয়ে বাড়ি যাওয়ার সময় মেঘের সাথে যায়নি তাই মনে হয় মেঘ রাগ করছে।আলো মুচকি হেসে মেঘের চোখ মুছে দিয়ে মেঘের কপালে আদর দিয়ে দেয়! আর মেঘের গাল ধরে বলে…!!
আলোঃ আমার মেঘু সোনাকে একদম কান্না করাতে দেখতে ভালো লাগছে না।একদম কাঁদবে না।খুব পঁচা দেখাচ্ছে তোমাকে কাঁদলে…!! (চোখ মুছে দিয়ে)
আলো এই কথাটা বলে মেঘকে কাতুকুতু দিতে থাকে!আর মেঘ খিলখিল করে হাসতে থাকে!রোদ বসে বসে শুধু ওদের খুনশুটি দেখছে!এত কষ্ট এত ব্যাথা শরীর নিয়েও আলো দিব্যি হেসে যাচ্ছে! রোদ উঠে টাওয়াল নিয়ে আলোর কাছে যায় আলোর মাথা থেকে ওড়না সরিয়ে আলোর চুল মুছে দিতে থাকে!ভেজা চুল বেডের উপর থাকাতে বেডশীট টাই ভিজে গেছে!আলোও রোদের এভাবে চুল মুছে দেওয়াতে কিছু বলে না।রোদ যত্ন করে আলোর চুল মুছে দেয়! তারপর টাওয়ালটা বারান্দায় মেলে দিয়ে রুমে থেকে বেরিয়ে পড়ে!
মেঘ আর আলো খুনশুটি মেতে আছে!রোদ একটা ট্রেতে খাবার এনে ওদের সামনে বসে!আলো আর মেঘ কিছু বলতে নিলে রোদ হাতের আঙ্গুল উঠিয়ে কথা বলতে নিষেধ করে!রোদ এক লোকমা ভাত আগে মেঘের মুখে দেয়!মেঘ মুখে ভাত নিয়ে বসে থাকে!রোদ আলোর মুখেও খাবার তুলে দেয়।আলো আর মেঘ দুজন দুজনের দিকে তাকায় তারপর খেতে শুরু করে! কারন দুজনেরই খুব খুধা লাগছিলো।রোদ মেঘ আর আলোকে খাওয়ানো শেষ করে আলোর হাতে একটা ব্যাথার মেডিসিন দেয়।কারন ওর শরীর অনেক ব্যাথা হবে! আর রাতে সেই ব্যাথার চোটে শরীরে কাপুনি দিয়ে জ্বরও আসতে পারে।

রোদ আলোকে মেডিসিন খাইয়ে সবকিছু নিয়ে চলে গেল!আলো ভেজা চুল তাই এক সাইড করে ছেড়ে রাখলো!আর অনেক লম্বা চুল তাই মেঝেতে গিয়ে আলোর চুল গড়াগড়ি খাচ্ছে! আলোর দেখে মেঘও শুয়ে পড়লো আর দুইজন গল্পে মেতে উঠলো!বেশ কিছুক্ষন গল্প করতে করতে দুইজনেই ঘুমের দেশে পাড়ি দিলো!রোদ এসে দেখে দুইজন ঘুমাচ্ছে তাই আর ডাকলো না।রোদ আলোর রুমে জানালা আটকে পর্দা সরিয়ে দিলো!তারপর বাইরে থেকে তালা আটকে দিলো কারন আদিলরা এখনই বউ নিয়ে চলে আসবে। বাইরে চেচাঁমেচি শব্দ যাতে রুমে না আসে আর ওদের ঘুমটা যাতে নষ্ট না হয়! তাই রোদ এমনটা করলো!
রোদ নিচে নেমে বাগানের এক কোণে চেয়ার নিয়ে বসলো!ওর কিছু ভালো লাগছে না। এখানে কেমন জানি দমবন্ধ করা পরিবেশ। রোদ আলোকে নিয়ে যত তারাতারি সম্ভব এখান থেকে যেতে পারলে বাঁচে! চিৎকার চেচাঁমেচিতে রোদ পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখলো আদিল ওর বউকে নিয়ে এসেছে!নতুন বউকে গাড়ি থেকে নামানোর জন্য সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ছে!রোদের সবকিছু অসহ্য লাগছে! বার বার আলোর সেই আতনার্দ রোদের মনে পড়ছে!চোখ বন্ধ করলে আলোর কান্না মাখা মুখে রোদের চোখের সামনে ভাসছে!হঠাৎ রোদ ওর কাঁধে কারো স্পর্শ পেয়ে পাশ ফিরে তাকায়।রোদ ওর আম্মুকে দেখে সৌজন্য মূলক ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা টেনে আনে….!!

রোদ ওর চেয়ার থেকে উঠে ওর আম্মু জোর করে বসিয়ে দেয় আর রোদ ঘাসের উপর বসে ওর আম্মুর কোলে মাথা রাখে!সবাই কত আনন্দ করছে মজা করছে বাট শুধু কয়েকজনে মুখে হাসি নেই!রোদের আম্মু রোদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। রোদের কেন জানি খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছে! ছেলেদের নাকি কাঁদতে নেই!তাই রোদও কাঁদতে পারছেনা। রোদের আম্মু রোদকে উদ্দেশ্য করে বলে…!!
রোদের আম্মুঃ আব্বু তোর কি খুব মন খারাপ?? আর আমাকে বলা যায় না। (চুল টেনে)
রোদঃ আম্মু আমি শান্তি পাচ্ছি না!কেমন জানি হচ্ছে বুকের ভেতর! খুব কষ্ট হচ্ছে আমার। নিঃশ্বাস নিতে গেলেও মনে হচ্ছে নিঃশ্বাস আটকে যাচ্ছে। বার বার আলো কান্নামাখা মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠছে!এমন কেন হচ্ছে আমার আম্মু! আলোর তখনকার করা আতনার্দে আমার মনে হচ্ছিলো কেউ কলিজা ছিঁড়ে নিয়ে যাচ্ছিলো।আম্মু বলো না আমি শান্তি কেন পাচ্ছি না!আমার এমন হচ্ছে কেন??(চোখের পানি আড়াল করে)
রোদের আম্মুঃআলোকে গ্রাম থেকে এখানে আনার কাজটা তাহলে স্বার্থক হলো। এত ভালবাসিস মুখে স্বীকার করিস না কেন আব্বু? (মুচকি হেসে)

রোদঃ ভালবাসি কথা যদি মুখ ফুটেই বলতে হয় তাহলে এটা কেমন ভালবাসা আম্মু!মুখে হাজার বার ভালবাসি বললেই কি ভালবাসা হয়?তোমার মেয়ে কেন বুঝে না? আমি ওকে পাগলের মত ভালবাসি!তোমার অবুজ মেয়ে কেন বুঝে না?ওকে ভালবাসি বলেই এত শাসন করি।তোমার মেয়ে শুধু আমার রাগটাই বোঝে! আমার ভালবাসাটা বুঝেও না!আমি
সবার মত মুখে এত ভালবাসি ভালবাসি বলতে পারবো না আম্মু।আর আমাকেই বা কেন মুখে ভালবাসার কথা বলতে হবে?ও বুঝে নিতে পারে না কেন শুনি?ও কি জানেনা ভালবাসার কথা মুখে বললেই ভালবাসা হয় না!তোমার মেয়েটা বড্ড বেশিই পঁচা আম্মু! খুব খুব পঁচা তোমার এই দুষ্টু মেয়েটা।আমাকে বার বার শুধু কষ্ট দেয়…!!
আমার ভালবাসাটাও বোঝে না তোমার ফজিল মেয়েটা!
(ওর আম্মু কোলে মাথা দিয়ে অভিমানের সুরে!ধরা গলায়….)

#এলোকেশী_কন্যা২__
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_33

রোদ ওর আম্মু কোলে মাথা রেখে ওর মনের কথাগুলো বলছে!রোদের আম্মুও আজকে ছেলের না বলা কথা গুলো শুনছে!কারন মনের মধ্যে চেপে রাখা কথা গুলো কাউকে বলতে পারলে নিজেকে খুব হালকা লাগে!রোদের বলা প্রতিটা কথা শুনেই বোঝা যায়! রোদ আলোর প্রতি ঠিক কতটা দূর্বল।রোদের আম্মু মুচকি হেসে রোদের চুল টেনে টেনে বললো…!!
রোদের আম্মুঃ আব্বু তোমার এত অভিমান করলে তো হবে না!আলোকে তোমার মনের মত করে নাও। আব্বু একটা কথা সবসময় মনে রাখবে! মাটি যখন কাঁদা মাটি থাকে! তখন তুমি মাটিটাকে যেমন গড়ন দিবে! মাটি ঠিক তেমনই আকারই ধারন করবে।তাই বলছি এটাই সঠিক সময় আলোকে মনের মত করে তৈরী করে নাও!আলো এই শহরের এই প্যাচগোজ বুঝবে না! ওকে আস্তে ধীরে তোমাকে শিখিয়ে পড়িয়ে নিতে হবে।
রোদঃ….

রোদের আম্মুঃ কয়েকটা ঘন্টা আগেও তুমি মুক্ত জীবন পার করছো! কিন্তু এখন তুমি আর একা নও আব্বু! এখন কারো দায়িত্ব নিতে হবে তোমাকে!তার খাওয়ার, পড়া,ভালো থাকা,ইচ্ছে,আবদার,রাগ, অভিমান,দোষ, গুন সবকিছুর এখন তোমাকে মেনে নিতে হবে।আগে কিভাবে চলেছিলে সেটা এখন ভুলে যাও! এখন এটাই মনে রাখবে সব সময় যে তুমি আর একা নও!একটা মেয়ে স্বামী নামক ব্যাক্তি কাছে শুধু থাকা -খাওয়ার জন্য আসেনা আব্বু! একটা মেয়ে অনেক অনেক দায়িত্বে কাঁধে নিয়েই শশুড়বাড়িতে পা রাখে!সবাইকে ভাল রাখার চাকরিটা স্বাদরে গ্রহন করে!একদম শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করা অবধি এই চাকরি থেকে তার যে মুক্তি নেই না।আর একটা মেয়ে কবুল বলার সাথে সাথে তার সব ইচ্ছা, স্বপ্ন,আপনজনকে ছেড়ে স্বামী নামক ব্যাক্তির কাছে আসে! আর মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে স্বামী নামক ব্যাক্তির বিপদে-আপদে,সুখে-দুঃখে যেকোন পরিস্থিতি পাশে থাকার…!!(শান্ত কন্ঠে)
রোদঃ আম্মু তোমরা মেয়েরা না বড্ড অবুজ…!!

রোদের আম্মুঃহুমম জানি তো! আমরা মেয়েরা অবুজ বলেই তো জীবনে সহজেই সবকিছু ত্যাগ করাটাই আগে শিখি!আমরা মেয়েরা অবুজ বলেই তো শশুড়বাড়িতে থেকে হাজারটা কটু কথা শুনে স্বামী নামক ব্যাক্তির মুখের দিকে চেয়ে সহজে সব কটু কথা হজম করে নিতে পারি। আমরা অবুজ বলেই তো ঠিক তরল পর্দাথের মত যে কোন জায়গা বা স্থানে আকার ধারন করতে পারি।
রোদঃআম্মু নিজেদের কথাটাই বলে গেলে!কেন ছেলেরা কি দায়িত্ব পালন করে না??
রোদের আম্মুঃহুমম করে তো!আর এজন্যই তো স্বামী নামক নিরাপদ স্থান টা কেই আমরা আকড়ে ধরে সারাটাজীবন পার করে দেই।একটা মেয়ে তিনটা ছেলের বুকেই নিরাপদ থাকে জানিস আব্বু…!

রোদঃ হুমম জানি!একটা মেয়ে প্রথমে তার বাবার কাছে নিরাপদে থাকে!কারন তার বাবাই প্রথম মানুষ যে সব বিপদে থেকে তার মেয়েকে আগলে রাখতে পারে!তারপর নিজের ভাইয়ের কাছে একটা বোন সবচেয়ে নিরাপদে থাকে!কারন প্রতিটা ভাইয়ের কাছে তার বোন কলিজার টুকরা ।আর বিয়ে হওয়ার আগে মেয়েদের বাবা আর ভাই নিরাপদ স্থান!বাট বিয়ের পর একটা মেয়ে তার হাজবেন্ডের কাছেই সবচেয়ে বেশি নিরাপদে থাকে!আর দায়িত্ববান পুরুষ দায়িত্ব এড়াতে পছন্দ করে না! তাই তারা বউয়ের ভাল থাকার চাবিকাঠি হওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যায়।আর প্রতিটা হাজবেন্ডের মনে রাখা উচিত! প্রতিটা মেয়ে একজন বাবা ও ভাইয়ের কলিজা!তাদের অকারনে কষ্ট বা গালিগালাজ করা কোন ভদ্র বিবেকবান পুরুষ মানুষের কাজ নই!আর মেয়েরাও মনে করে হাজবেন্ডের কাছেই তারা সবচেয়ে নিরাপদ কারন বিয়ের পর এটাই যে তাদের শেষ ঠিকানা…!!
(শান্ত কন্ঠে)

রোদের আম্মু মুগ্ধ হয়ে রোদের বলা কথাগুলো শুনছিলো!আর রোদের আম্মু কোলে মাথা দিয়ে রোদ আকাশ পাতাল চিন্তা করতে মশগুল!ওইদিকে নতুন বউ দেখার জন্য বাড়ি আশে পাশের লোক গুলো ভিড় জমিয়েছে!রোদ উঠে দাঁড়ালো আর আলোর রুমে দিকে হাঁটা ধরলো।রোদ তালা খুলে রুমে ঢুকে দেখে আলো উঠে বসে আছে!রোদ আলোর পাশে বসে শান্ত সুরে বলে উঠলো..!!
রোদঃ ঘুম কেমন হলো??
আলোঃ হুমম ভালো
রোদঃ মাথা ব্যাথা করছে নাকি??
আলোঃ একটু
রোদঃ ওয়েট…!

রোদ ওর আম্মু কাছে গিয়ে তেল আনলো!তারপর রোদ আলোর পেছনে বসে আলোর চুলে তেল দিতে শুরু করলো!রোদ পরম যত্নে আলোর চুলে তেল দিয়ে দিচ্ছে! রোদের হাতে ছোঁয়াতে এত প্রশান্তিতে যে আলো আবার চোখ বন্ধ করে নেয়!রোদ এত বড় চুলে তেল দিতে পারে না!আর চুলও ভেজা থাকায়
পুরো চুলে তেল দিলো না রোদ! শুধু মাথায় দেয়।তারপর রোদ আলোর মাথাটা ওর বুকের সাথে হেলান দিতে বলে!আলো ইতস্তত বোধ করছিলো!রোদ নিজেকে আলোকে টেনে ওর বুকের সাথে হেলান দিয়ে বসায়।রোদ আলোর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে! আর আলো পরম শান্তিতে রোদের বুকে মাথা দিয়ে আছে!আর চোখ বন্ধ করে রোদের বুকের দ্রুত গতিতে চলা হার্টবিটের শব্দ শুনছে….!!
বেশ কিছুক্ষন পর মেঘও ঘুম থেকে উঠে পড়ে!রোদের বুকে হেলান দিয়ে থাকতে থাকতে আলো একটা সময় আবার ঘুমিয়ে পড়েছিলো!রোদও আলোকে দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়ে।আলোর রোদের বুকে এভাবে থাকাতে রোদের সব অশান্তি এক নিমিষেই দূর হয়ে গেছে।মেঘ উঠে কুটুরকুটুর চোখে আলো আর রোদের দিকে তাকায়!তারপর আস্তে করে বেড থেকে উঠে পড়ে!আর মেঘ দরজাটা ভাল করে আটকে দিয়ে বাইরে চলে যায়।মেঘ বাইরে গিয়ে দেখে বাসায় অনেক মানুষ গিজগিজ করছে।মেঘ বামপাশে তাকিয়ে দেখে! কলি একটা চেয়ারে বসে আছে!এবার মেঘ কলিকে ধরবে…!! মেঘের মুখে দুষ্ট হাসির রেখা ফুটে উঠে!।
মেঘ দ্রুতিগতি কলির কাছে গিয়ে কলিকে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে এক দৌড়ে গিয়ে লুকিয়ে পড়লো।কলি একমনে মাথা নিচু করে বেলুন নিয়ে খেলছিলো।কে ওকে মারলো দেখতে পায়নি!কলি ছলছল চোখে আশে পাশে কাউকে না দেখে চিৎকুর দিয়ে কাঁদতে শুরু করলো।কলির কান্না দেখে কলির বাবা কলিকে কোলে করে নিয়ে উনার রুমে চলে গেল!আর মেঘ দরজার আড়ালে থেকে বের হয়ে শয়তানি একটা হাসি দিলো…!!

!!_____-আগের পার্টে জ্বিন নিয়ে অনেক কিছু বলছি আমি! আর বলার মূল উদ্দেশ্য আপনাদের সচেতন করা!এসব বিষয় লিখতে গেলে আগে অনেক কিছু নিয়ে জেনে নিতে হয়!এসব বিষয়ে ভুল কিছু বললে বা লিখলে এর ফলও ভোগ করতে হয়!হুমম যা বলেছি একটা কথাও মিথ্যা না!তবে কমেন্টে যারা ট্রল করছেন তাদের বলছি! সাহসী বীর হয়ে থাকলে কুরআনের জ্বিন সূরাটা ভুল করে পড়ে এসে সাহস টা দেখিয়ে যান!দেখি কেমন বীর সন্তান আপনি!আসল কথা হলো হাসাহাসি করার মত কোন বিষয় নিয়ে আমি কিছু লিখছি না তাহলে ট্রল করবেন কেন?নিজেরাও জানবেন না অন্যকেউ জানাতে দিবেন না তাই তো!আর কমেন্টেও কয়েকজন খুব মজা নিচ্ছেন তাদের বলছি!আপনারা কুরআন পড়তে পারেন কিংবা কোনদিন জ্বিন সূরা পড়ছেন কিনা এটা নিয়েও এখন আমার সন্দেহ হচ্ছে । কারন কুরআন পড়া জানলে তো জ্বিন সূরা পড়তেন আর অবশ্যই এই বিষয়ে নূন্যতম ধারণাও আপনাদের থাকতো।
আর জানা থাকলে তাহলে আর ট্রল করতে আসতেন না।আর ভালো কিছু যদি সত্যি জানার থাকে ইনবক্সে বললে অবশ্যই আমি তার উওর দিবে! যদি সেই বিষয়ে আমার ধারনা থাকে তো!তাই বলে আমাকে এভাবে খোঁচাবেন আর আমি মেনে নিবো এটা ভাববেন না।
!! ______আমার কমেন্টে আর ইনবক্সে বেশ কয়েকজন একটা কথা জানতে একটু বেশিই আগ্রহ প্রকাশ করছেন! আর কথাটা হলো আমি জ্বিনে ধরা কি না?আমি আপনাদের অজানা তথ্য জানাচ্ছি বলে এখন আমাকেই জ্বিনে ধরা রোগী বানিয়ে দিলেন!এসব কেমন কথা?? এতোদিন জিজ্ঞাসা করছেন আমার গল্পের আলোর মত চুল এত বড় কি না?আজ আমি যদি বলি হ্যা আমার চুল এত বড়! তাহলে কি করবেন? আমাকে কি নোবেল দিবেন?হুমম তাহলে তারাতারি নোবেলটা দিয়ে যান। রাইটারদের বিষয়ে জানার অধিকার অবশ্যই আপনাদের আছে! তাই বলে অবান্তর কথা গুলো কেন জানতে চাইবেন??

এলোকেশী কন্যা  সিজন ২ পর্ব ২৮+২৯+৩০

আসল কথা বাসায় আমি এখন একা থাকি! আপনাদের এসব কথা আমার শুনলে কেমন জানি লাগে?আপনাদের জন্য এত বই,নেট, হাদীস ঘেটে তথ্য যোগাড় করছি! আর আপনারা ঘুরে ফিরে আমাকেই বাঁশ দিচ্ছেন।তবে আমি সিরিয়াস হয়ে একটা কথা সবাইকে বলে দিচ্ছি! এবার যারা ট্রল করবেন আমি এই গল্পটা এখানেই সমাপ্ত করবো!কারন আমি বা আমার গল্প কারো কাছে হাসির খোরাক হতে ইচ্ছুক নহে।
আর আমি সরি! গল্পের মাঝে এসব বলে ডিস্টার্ব করার জন্য! কারন গল্পের নিচে কিছু লিখলে আপনারা পড়েন না ইগনোর করেন।তাই গল্পের মাঝখানে লিখতে বাধ্য হলাম_____!!
রাত ৯ঃ৩০ টার দিকে রোদ আর আলো নিচে নামে! তখনও সবাই নতুন বউকে ঘিরে আড্ডা দিচ্ছিলো।রোদ আর আলো গিয়ে সোফাতে বসলো!আলো সবার সাথে কথা বললো মুখে হাসি রেখে!তারপর
নতুন বউকে ফ্রেশ হয়ে আসার জন্য!কয়েকজন নতুন বউকে আদিলের রুমে রেখে আসলো।

রোদ উঠে রান্না ঘরের দিকে গেল আর একমগ কড়া করে চা বানালো।রোদকে রান্না ঘরে দেখে রোদের মামীরা বলছে উনারা চা বানিয়ে দিচ্ছে! কিন্তু উনাদের আর কষ্ট দিতে চাইনি রোদ।কারন বিয়ে বাড়ির এত এত কাজের মধ্যে উনাদের এ কয়েকদিন খুব ধকল যাচ্ছে! তারপর রোদ নিজে হাতে চা বানালো আর মগটা এনে আলোর হাতে দিলো!আলো আড়চোখে একবার রোদের দিকে তাকালো! তারপর আলো মুচকি হাসি দিয়ে চায়ের মগে চুমুক দিলো।
রোদ আলোর হাতে থেকে মগটা নিয়ে চা খেতে শুরু করলো!আলো চোখ বড় বড় তাকিয়ে ছিলো বাট মনে মনে খুশিও হয়েছে!এর মধ্যে মেঘ সহ সবাই ড্রয়িং রুমে এসে আড্ডা দিতে শুরু করলো!মায়া আর নিহা রোদ আর আলোকে হাসা হাসি করছিলোএর মধ্যে রোদের আম্মু রোদের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো….!!

এলোকেশী কন্যা  সিজন ২ পর্ব ৩৪+৩৫+৩৬