এলোকেশী কন্যা সিজন ২ পর্ব ২৮+২৯+৩০

এলোকেশী কন্যা সিজন ২ পর্ব ২৮+২৯+৩০
লেখনীতে:- নূরজাহান আক্তার (আলো)

রোদ ওর রুমে গিয়ে দেখে অনেক মেয়ে বসে আছে!রোদকে দেখে সব ড্যাবড্যাব করে রোদের দিকে তাকিয়ে আছে।রোদ বিরক্ত হয়ে বের হয়ে গেল ওর রুম থেকে!তারপর ড্রয়িং রুমে গিয়ে দেখে দীদান,বড় মামা,রোদের আব্বু, রোদের আম্মু বসে আছে।রোদ ওর আব্বু কাছে গিয়ে বললো…!!
রোদঃ আব্বু গাড়ির চাবিটা দাও তো।
আব্বুঃ ফ্রেশ না হয়ে এখন আবার কোথায় যাবে??
রোদঃ আমি বাসায় যাবো! এখন মানে এখনই
আম্মুঃ মানে কি রোদ??বাসায় যাবি মানে??
বড় মামাঃ কি হয়েছে রোদ আব্বু??কোন সমস্যা??
রোদঃ আমার আর থাকতে ইচ্ছে করছে না আব্বু। তুমি সবাইকে নিয়ে পরে এসো! আমি আজকে ঢাকা ফিরবো।
আব্বুঃ কি হয়েছে আব্বু??
রোদঃ কালকে থেকে আমি এক মুহূর্তের জন্য শান্তি পাচ্ছি না!হুটহাট করে যখন তখন মেয়েরা আমার রুমে ঢুকে পড়ছে।কালকে রাতে ঘুমাতে পারিনি।আজকে রুমে গিয়ে দেখি আমার রুমটা ওই মেয়েগুলো বুক করে নিয়েছে।আমার জিনিস পএগুলোও যে যার মত ব্যবহার করছে!এসব কি???

আম্মুঃ ওই মেয়েগুলো আদিলের মামাতো বোন!আমি ওদের মানা করছি তাও ওরা শোনেনি।বলছে এই রুমেই নাকি ওরা থাকবে।বিয়ে বাড়ি একটু তো এডজাস্ট করে নিতে হয় তাই না আব্বু…!!
রোদঃ তোমরা করে নাও!আমি মাঝ বরাবর ঝুলাঝুলির কোন কাজে নেই।ওই রুম থেকে এখুনি আমার ট্রলি এনে দাও। আলোর রুমে গিয়ে সাওয়ার নিয়ে আমি এখুনি বেরিয়ে যাবো।(রেগে গিয়ে)
রোদ কথাটা বলে চলে গেল।রোদের আব্বু বা আম্মু আর কিছু বললো না কারন রোদ রেগে গেছে।এখন কিছু না বলাটাই বেটার!রোদ প্রথমত রেগে যাওয়ার আসল কারন রুমে যখন ঢুকছিলো তখন একটা মেয়ের শরীরে ওর নিউ একটা শার্ট দেখছে!আরেকটা মেয়ে রোদের সানগ্লাস পড়ে দাড়িয়ে ছিলো।আর আরেকজন রোদের পারফিউম চেক করছিলো।আর কোন জিনিস না বলে নেওয়াটা রোদ মোটেও পছন্দ করেনা।আর এসব কারনে রোদ বিয়ের বাড়ি যায় না কারন বিয়ে বাড়ি মানেই মেয়েদের গাদ্যারিং!আর মেয়ে গুলোও হয়েছে গায়ে পড়া টাইপের! বলা নেই কয়া নেই, রোদের শার্ট গায়ে জড়িয়ে বসে আছে…!!

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

রোদের মামা গিয়ে মেয়েগুলোকে দিলো একটা ধমক কারন ওদের রুমে দেখিয়ে দিয়েছে তারপরেও ওরা এই রুমে এসেছে!রোদ মেয়েগুলোকে বললো ওর যেসব জিনিস ওরা ইউজ করে সেগুলো যাতে নিয়ে যায়!মেয়ে গুলোকে হা করে দাড়িয়ে থাকতে দেখে রোদ একটা ধমক দিলো আর ওর শার্ট, সানগ্লাস আর পারফিউমটা ওদের দিয়ে দিলো!রোদ একমাত্র আলো ছাড়া কোন মেয়ের সংস্পর্শের জিনিস ইউজ করতেও চাই না।অন্য কোন মেয়ের শরীরে জড়ানো শার্ট তো অনেক দূরের কথা ….!!
কোন একজন মেয়ে রোদের রুমে থাকা ওয়াশরুমে আছে! তাই রোদ আলোর রুমে গিয়ে দেখে ওয়াশরুমের ভেতর থেকে মেঘ আর আলোর কথা শোনা যাচ্ছে। রোদ হুড়মুড় ওয়ারুমে ঢুকে গেল।রোদকে দেখে দুইজনের হাসি বন্ধ হয়ে গেল!রোদ ওর শার্ট খুলে সাওয়ারে নিচে দাড়িয়ে গেল!আলো আর মেঘ হা করে রোদের দিকে তাকিয়ে আছে!রোদ ওর শরীরে লেগে থাকা কাদা গুলো ধুয়ে নিলো তারপর মাথায় শ্যাম্পু করে নিলো!রোদ ওর চুল ঝাকাতেই চুলের পানি আলোর গায়ে পড়লো!রোদ ওর মত সাওয়ার নিচ্ছে আর এমন ভাব করছে মনে হচ্ছে ওয়াশরুমে ও ছাড়া আর কেউ নাই।

আলো মাথা নিচু করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে!আর রোদের গুষ্ঠী উদ্ধার করছে!মেঘকে তো আলো সাবানের ফেনা দিয়ে ভূত বানিয়ে দিয়েছে!রোদ সাওয়ার শেষে ওর টাওয়াল নিয়ে শরীর মুছে টাওয়াল টা পড়ে নিলো!আর ভেজা ড্রেস রেখে আলোর দিকে তাকিয়ে বললো…!!
রোদঃ এগুলো ধুয়ে দাও!একটু যদি ময়লা থাকে তো। তো তোমাকে কাপড়ের মত করে আছাড় দিবো।
আলোঃ(একট ছেলে এত নিলজ্জ্ব হয় কি করে?)
রোদঃ শর্টস্ নাই তাই এত লজ্জা পাওয়ার কিছু হয়নি।
আলোঃ…….
আল্লাহ দড়ি ফেলো আমি তরতর করে দড়ি বেয়ে উপরে উঠে যায়!ইসস কি লজ্জা কি লজ্জা! আল্লাহ এই পেলাডাকে সবই তো দুইহাত ভরে দিলে! সাথে এক বালতি লজ্জা দিলে না কেন? এক চিমটি পরিমান লজ্জা যদি এই পোলার থাকতো তাহলে হরহর করে কোন মেয়েকে এক কথা বলার আগে একটু হলেও ভাবতো! মন তো চাচ্ছে নিজেই চিকা মরা বিষ খাইয়া মইরা যায়….(মনে মনে)
রোদের কান্ড কথা শুনে মেঘ আর আলো এখনো হাবলার মত তাকিয়ে আছে! কারন রোদ খুব রেগে আছে সেটা ওর মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। রোদের আম্মু রোদকে বললো ওই রুমে যেতে!রোদ উঁকি মেরে দেখলো রুমের বাইরে কেউ আছে নাকি।যখন দেখলো কেউ নেই তখন রোদ ওর রুমে চলে গেল আর মনে মনে মেয়েগুলোকে কয়েক দফা ঝাড়া শুরু করে দিলো….!!রোদের আম্মু রোদকে ডেকে বলল..!!
রোদের আম্মুঃ আব্বু মাথা ঠান্ডা কর!তুই চলে গেলে আলোকে আমরা একা একা সামলাতে পারবো না।আলোর কথা ভেবে দেখ একবার।আর ওই মেয়েগুলো কেন এই রুমে আর কেউ আসবে না।সোনা আব্বু আমার যাস না প্লিজ! আর তুই চলে গেলে আলোরও মনটা খারাপ হয়ে যাবে।আমার সোনা ছেলে যাস না…!!
রোদঃহুমমম!

রোদের আম্মু মুচকি হেসে রোদের মাথায় হাত বুলিয়ে চলে আসলো!ওইদিকে মেঘ আর আলো দুষ্টুমির সাথে সাওয়ার নিয়ে নিলো!রোদ ড্রেস পড়ে নিলো আর চুল গুলো মুছে নিলো।আলো ওর মাথায় টাওয়াল পেচিয়ে রুমে এলো!মেঘ ওর টাওয়াল পড়েই আয়নার সামনে দাড়িয়ে ড্রেস ধরে ধরে দেখছে কোনটা পড়বে!আলো মুচকি হেসে ওর, মেঘ আর রোদের ভেজা কাপড় গুলো বারান্দায় মেলে দিলো।রোদের আম্মু আলোকে একটা শাড়ি দিয়ে গেল পড়ার জন্য! যেটা রোদ পাঠিয়েছে কৌশলে ওর আম্মুকে দিয়ে।আলো মেঘকে রেডি করিয়ে দিলো! আলোর পছন্দ করা সেই ইউনিক এ্যাশ কালারে পান্জাবী টা পড়ছে মেঘ!এ্যাশ কালার পান্জাবীর সাথে সাদা কালার চুরিদার পড়ছে মেঘ!আলো মেঘকে রেডি করিয়ে রোদের রুমে পাঠিয়ে দিলো!

আলো প্যাকেট খুলে দেখে এ্যাশ আর ব্ল্যাক কম্বিনেশনের অসম্ভব সুন্দর একটা শাড়ি!শাড়িটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে শাড়িটা অনেক দামী।রোদের আম্মুর সাহায্য নিয়ে আলো শাড়িটা পড়ে নিলো!রোদের আম্মু আলোর চুল গুলো হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে শুকিয়ে নিলো!রোদের আম্মু আলোর চুল শুকাতে গিয়ে নাজেহাল অবস্থা। রোদের আম্মু আলোর চুল গুলো নিয়ে খুব সুন্দর করে খোঁপা করে দিলো! আর খোঁপার এক সাইডে পরপর চারটে গোলাপ খোঁপাতে গেথে দিলো!তারপর ঠোঁটে হালকা করে লিপস্টিক আর কাজল দিয়ে দিলো!এক হাতে ব্যাচলেট আর আরেক হাতে স্টেনের এক গোছা চুড়ি।আঙুলে পর পর তিনটা স্বণের আংটিও পড়িয়ে দিলেন।আর ছোট্ট কালো টিপ আলোর কপালে দিয়ে দিলো! যাতে কারো কোন বদনজর না লাগে আলোর উপর।
রোদের আম্মুর মেয়ে নাই তাই সাজিয়ে দেওয়ার শখটা আলোকে দিয়েই পূরণ করলো।রোদের আম্মু আলোকে অবাক হয়ে দেখছে। মেকাব নেই কোন ভারী সাজগোজ নেই শুধু হালকা লিপস্টিক, কালো একট টিপ আর কাজলেই অসাধারণ দেখাচ্ছে আলোকে।রোদের আম্মু মুচকি হেসে আলোর কপালে আদর দিয়ে দিলো! তারপর উনি রেডি হতে চলে গেলেন।

রোদ আলোর রুমের দরজা নক করে!আলো রোদকে ভেতরে আসতে বলে!রোদ দরজাতে দাড়িয়ে আলোর দিকে একবার তাকায়! তারপর রোদ রুমের দরজা আটকে আলোর কাছে এগিয়ে আছে!আলোর কাঁপাকাপি অলরেডি শুরু হয়ে গেছে রোদকে দেখে!আলো হা করে রোদকে দেখছে! কারন রোদ আলোর পছন্দ করা সেই পান্জাবীটা পড়ছে!আলো অবাক হয়ে দেখছে!রোদ পান্জাবীটার কালো জিন্সের পড়েছে! একদম আলোর শাড়ির সাথে কালার ম্যাচ করে!আর সাথে কালো ওয়াচ, চুল গুলো স্পাইক করা, ঠোঁট গুলো তো বাচ্চাদের মত লাল হয়েই থাকে সবসময় ।আর এ্যাশ কলারটা মনে হচ্ছে রোদের জন্যই তৈরী! একদম রোদের বডি অনুযায়ী পান্জাবীটা! যার কারনে আরো বেশি ভালো দেখাচ্ছে। আলো কল্পনাও করেনি রোদকে এতটা সুন্দর দেখাবে পান্জাবীটাতে।রোদ আলোর তাকানো দেখে বললো….!!
রোদঃ জীবনে কোনদিন ছেলে দেখো নি!এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?অসভ্য মেয়ে
আলোঃনা মানে আস আসলে
রোদঃ আর তোমাকে এভাবে সং সাজতে কে বলছে??এভাবে সং সেজে গেলে যাতে ছেলেরা তাকায় তাই এভাবে যাচ্ছো???থাটিয়ে এমন থাপ্পড় লাগাবো! যাতে এবার থেকে এসব ইচ্ছের কথা ভাবনাতে আসলেও শিউরে উঠো!ফাজিল কোথাকার(দাঁতে দাঁত চেপে)
আলোঃ…..
রোদ আলোকে টেনে ওর সামনে দাড় করায়!আর আলোর চুলের খোঁপা থেকে গোলাপ গুলো টেনে খুলে মেঝেতে ছুড়ে ফেলে দেয়!তারপর রোদ ওর আম্মুর করে দেওয়া খোঁপাটাও খুলে দিলো!আলো ছলছল চোখে রোদের দিকে তাকিয়ে আছে!রোদ আলোকে একদম সাধারণ ভাবে হাত খোঁপা করতে বললো!আলো রোদের কথা মত হাত খোঁপা করলো।আর খোঁপাতে রাবার ব্যান্ড লাগালো যাতে খুলে না যায়।

তারপর রোদ আলোকে একটা সিল্কের কালো কালারের হিজাব দিলো পড়তে!আলো হিজাবটা নিয়ে আয়নার সামনে যেতে নিলে! রোদ আলোর থেকে হিজাব নিয়ে নিজে পড়াতে শুরু করে দিলো।আলো ড্যাব ড্যাব করে রোদের দিকে তাকিয়ে আছে।তারপর রোদ আশে পাশে তাকিয়ে বারান্দায় গেল!আর টাওয়ালটা ভিজিয়ে আলোর ঠোঁটের লিপস্টিক মুছে দিলো।আলো টু শব্দ করছে না শুধু হ্যাবলার মত হা করে রোদের কাহিনী দেখছে!রোদ আবার বারান্দায় টাওয়ালটা মেলে দিয়ে আসলো আর আলোর ঠোঁটে একদম হালকা করে গোলাপি চ্যাপষ্টিক দিয়ে দিলো! আলো ডান হাত ধরে গুনে গুনে চারটা কালো স্টেনের চুরি রেখে বাকি গুলো খুলে ফেললো।বাম হাতে তিনটা আংটির মধ্যে দুইটা আংটি রেখে একটা খুলে ফেললো।হিজাবে খুব সুন্দর একটা ব্রুজ আটকে দিলো!রোদ আলোর কপালে থেকে টিপ টাও তুলো ছুঁড়ে ফেললো!তারপর রোদ কয়েক পা পিছিয়ে আলোর মাথা থেকে পা পর্যন্ত দেখলো! তারপর রোদ আলোর চারপাশে দিয়েও একবার ঘুরে শাড়ি ঠিক করে পড়ছে কিনা চেক করে নিলো।

সবকিছু ঠিক ঠিক আছে দেখে রোদ ওর রুমে চলে গেল!তারপর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই এসে জমজমের পানি আলোর পুরো শরীরের ছিটিয়ে দিলো!জমজমের পানি শরীরে পড়াতে আলো প্রথমে কেঁপে উঠে! এর মধ্যে মেঘ ঘেমে নেড়ে একাকার হয়ে রুমে আসলো!মেঘ রোদকে বললো রোদের মত সাজিয়ে দিতে!রোদ আবার টাওয়াল এনে মেঘের মুখ মুছে দিয়ে চুল ঠিক করে দিলো!দুই ভাইয়ের স্টাইল দেখে আলোর মাথা ঘুরছে মনে হচ্ছে এদেরই আজকে বিয়ে!রোদের দেখে মেঘও ওর হাতে ওয়াচ পড়লো! তারপর রোদের মত করে মেঘও ওর পান্জাবীর হাতা কনুই পর্যন্ত তুলে রাখলো..!!
মায়া আর নেহা এসে আলোকে নিচে নিয়ে গেল সবাই রেড়ি!রোদ ওর রুমে গিয়ে পারফিউম দিলো সাথে মেঘও দিলো!দুই ভাই চোখে সানগ্লাসও পড়ে নিলো।রোদ পড়ছে ব্ল্যাক আর মেঘ পড়ছে ব্লু…..!!
মেঘঃ দাভাই কার দিকে মেয়েরা বেশি তাকাবে দেখো তো (ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে)
রোদঃআমার দিকে (চুল ঠিক করতে করতে)
মেঘঃ যাহ্!ঢপ মেরে না তো।(ভাব নিয়ে)

রোদের আম্মু আলোকে এমন সাজে দেখে ভ্রু কুচকে আলোর দিকে তাকালো! আলোো করুণ চোখে তাকালো রোদের আম্মুর দিকে!রোদের আম্মু বুঝতে পারে যে এটা উনার গুনধর ছেলেরই কাজ হবে!সবাই ভারী মেকাব করছে এত এত গয়না,কড়া লিপস্টিক দিয়েছে তার মধ্যে আলোর একদম পানি পানি সাজে! তবে সবাই আড়চোখে আলোকে দেখছে!মেঘ আর রোদকে সিড়ি দিয়ে নামতে দেখে সবাই এবার ওদের দিকে তাকায়!দুই ভাই একই রকম ড্রেস পরিহিত আর দুই দেখতেও মাশাল্লাহ……!! তার উপরে আজকে যেই লুক দিয়েছে তাতে দুইজনকেই পুরাই চকলেট বয় লাগছে..!!
আলোর রোদকে দেখে মুখ ভেংচি দিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকলো!রোদ মুখে বাঁকা হাসি দিয়ে ওর বাবার পাশে এসে দাঁড়ালো! রোদের আব্বু রোদকে গাড়ির চাবি দিয়ে বললো মেঘ, আলো আর রোদ যাতে ওদের গাড়িতে যায়।রোদ চাবিটা নিলো আর মেঘ আর আলোকে আসতে বললো!রোদের আম্মু মেঘকে ভুজুংভাজুং দিয়ে আটকে রাখলো আর আলোকে রোদের কাছে পাঠিয়ে দিলো!সবাই যে যার মত গাড়িতে উঠে বসলো!এদিকে আলো একা রোদের সাথে যেতে চাচ্ছে না! রোদের আম্মু জোর করে আলোকে রেখে ওনারা ওদের মত চলে গেল….!!
রোদ গ্যারেজ থেকে গাড়ি বের করে আনে আর আলোর সামনে এসে গাড়ির দরজা খুলে দিলো!আর আলো গাড়িতে উঠে বসলো….

#এলোকেশী_কন্যা২__
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_29

________রোদ গ্যারেজ থেকে গাড়ি বের করে আনে আর আলোর সামনে এসে গাড়ির দরজা খুলে দেয়!আলো গাড়িতে উঠে বসলো….রোদ মেঘকে না দেখে বুঝলো এটা রোদের হিটলার আম্মু কাজ!মেঘকে উনিই আসতে দেয়নি!একদিক থেকে রোদও মনে মনে খুশিও হয়!আলো গাড়িতে উঠে বসে আর রোদ আলোর দিকে টিস্যু এগিয়ে দিলো! কারন আলোর নাকে থুতনিতে হালকা ঘাম জমেছে যেটা রোদকে ঘায়েল করার জন্যই যথেষ্ট ।আলো টিস্যুটা হাতে নিয়ে মুখ ফিরিয়ে নিলো…..!!রোদ মুচকি হেসে গাড়ি স্টাট করলো…!!আলো বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে মুখ গোমড়া করে!রোদ ভালো করেই বুঝতে পারছে তার তিলোকন্যা তার উপরে অভিমান করেছে!রোদ মুচকি হেসে বললো…!!
রোদঃমুখটা এমন পেত্নীর মত করে আছেন কেন শুনি?? আপনার কত নাম্বার হাবি মারা গেছে যে মুখটা এমন করে ফুলিয়ে রাখছেন…!!
আলোঃ…..
রোদঃ যা বাবা বোবা হয়ে গেলে নাকি??আহারে তোমার জন্য তো এখন কষ্টই হচ্ছে! শেষে কি না বোবা হয়ে গেলে তুমি!এখন তো কেউ তোমাকে বিয়েও করবে না..!! (দুষ্টু হেসে)
আলোঃ…
রোদঃ ওমন শাকচুন্নির মত সাজতে দেয়নি! তাই মুখ ফুলিয়ে রাখছেন বুঝি ম্যম..!!(মুচকি হেসে)
আলোঃ সবাই কত সুন্দর করে সেজেছে! শুধু আমিই…!! (অভিমানী গলায়)
রোদঃহুমম তুমি কি বলো??

আলোঃ ওদের সবাইকে কত সুন্দর দেখাচ্ছে! শুধু আমাকেই পঁচা দেখাচ্ছে। ওরা কেমন করে তাকাচ্ছিলো আমার দিকে।(মুখ ফুলিয়ে)
রোদঃ ভারী মেকাব,গাঢ় করে লিপস্টিক, এত এত গয়না, এসব পড়লেই সুন্দর দেখায় বুঝি..?
আলোঃহুমম দেখায় তো!(অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে)
রোদঃ উহুম! তাহলে বলবো তুমি ভুল জানো!অনেকে মনে করে বিয়ের অনুষ্ঠান মানেই ঝাকানাকা কিছু ড্রেস পড়লেই হয়! সবাই যা করে তুমিই বা কেন সেইম কাজই করবে? সব সময় আলাদা কিছু করার ট্রাই করবে।আর একটা মানুষের ড্রেস, সাজগোজ বলে দেয় মানুষটা ঠিক কতটা রুচি সম্পূর্ন একটা মানুষ! সাধারণ থেকেই অসাধারণ কিছু হওয়া যায় জানো!আর অসাধারণ মানে এই না যে নিজের আসল রুপটাকে মেকাবে আবৃত করে সং সাজা!
আলোঃ….
রোদঃ আলো একটু সামনে তাকাও!আর সামনের কালো ড্রেস পড়া মেয়েটার চোখের দিকে তাকাও! দেখো মেয়েটা চোখের উপর কালো কি যেন দিসে??
আলোঃহুমম ওটাকে স্যাডো বলে..!!
রোদঃ সে যাই বলুক আমাকে এত চিনে লাভ নাই!এবার বলো যদি এমন স্যাডো দেওয়া মত কালো চোখ নিয়ে কোন বাচ্চার জন্ম হয় তাহলে সবাই কি করবে..??
আলোঃ সবাই অবাক হবে!ভয় পাবে! চিৎকার চেচাঁমেচি করবে!বাচ্চাটাকে দেখতে সাংবাদিক আসবে! কত শত মানুষ ফেসবুকে বাচ্চার ছবিটা পোষ্ট দিবো!হাজারো বানোয়াট কথা এড করে ক্যাপশন দিবে।কারন এমন তো বাচ্চা তো কারো হয় না..!!
রোদঃরাইট!আর এমন বাচ্চা কেন হয়নি জানো??(মুচকি হেসে)
আলোঃ আল্লাহ চাইনি বা দেয়নি তাই…!!
রোদঃইয়াহ্ একদম রাইট!আমাদের প্রতিটা মানুষকে কার কতটুকু সৌন্দর্য দিলে ভালো হবে! আল্লাহ আমাদের ততটুকু সৌন্দর্য দিয়েই তৈরী করে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন।তাহলে এসব কৃত্রিম হাজিবাজি দিয়ে নিজের আসল রুপ কেন ঢাকবে বলো।এমন তো না মেকাব একবার করলে আর জীবনেও আর মেকাব করা লাগবে না তাহলে।বরং এসব স্যাডো ফ্যাডো দিলে চোখেরই সমস্যা হয়।তাই বলছি নিজে যতটুকু সুন্দর আছো এটা নিয়েই শুকরিয়া করো..!!
আলোঃ….

রোদঃ আর আজকে যারা বেশি বেশি সাজগোজ করছে তাদের কথা বললে তো! তো যখন বাসায় ফেরার সময় হবে বা ফিরবে তখন তাদের অবস্থা দেখো! তাহলে বুঝবে কেন সাজগোজ করতে দিলাম না।
আলোঃ….
রোদঃসবাই কেমন করে তাকাচ্ছিলো বললে না এর উওরটা হচ্ছে! ওদের মত জোকার না সেজেও অসম্ভব সুন্দর দেখা যায়! এটা ওদের মে বি জানাছিলো না তাই ওমন করে তাকাচ্ছিলো।
আলোঃ……
রোদঃ কে কি করলো?কে কি বললো এটা ভাবতে গেলে জীবনে কিছু করতে পারবে না।সব সময় নিজের মনের কথা শুনবে!সবাই যা করে তুমি সব সময় অন্য রকম কিছু করার চেষ্টা করবে!যারা আজকে এত এত সাজগোজ করছে তাদের মধ্যে তুমি গিয়ে দাড়ালে সবাই তোমার দিকে তাকাবে কারন কি জানো??
আলোঃ না…!!
রোদঃ থাক এত জানতে হবে না!বেশি জেনে গেলে পরে সমস্যা হবে!শেষবার বলে দিলাম আর কোনদিন যদি দেখি সং সেজে বাইরে গেছো বা হিজাব ছাড়া যাচ্ছো বাসার বাইরে!তাহলে সেইদিনই বুঝবে বাকিটা! কেমন…!!
আলোঃ…
শেষের বলা কথাটা ছাড়া রোদের বলা বাকি কথাগুলো আলোর খুব ভালো লাগলো!রোদ এই প্রথম আলোর সাথে এত সহজে এত কথা বললো! তার একটা কারন আছে সেটা হলো যাতে আলো এখন রোদের সাথে থাকতে আনইজি ফিল না করে!আলোর জানা ছিলোনা রোদ এত সুন্দর করে কথা বলতে পারে!আর এত সুন্দর করে কাউকে কিছু বোঝাতে পারে!আলো এটাও বুঝলো যে আসলেই সবার থেকে রোদের চিন্তা ভাবনা আলাদা!আলো অবাক হয়ে রোদের কথা গুলো মনোযোগ দিয়ে শুনছে! কারন রোদের বলা প্রতিটা শব্দ প্রতিটা বচনভঙ্গি অবাকের সাথে সাথে আলোর মনে অন্য রকম একটা অনূভূতির সৃষ্টিও করছে..!!
রোদ গাড়ি থামিয়ে পাশের দোকান থেকে ওর জন্য স্প্রাইট আর আলোর জন্য আইসক্রিম নিয়ে আসলো!আলো আইসক্রিম খাচ্ছে আর আড়চোখে রোদের দিকে তাকাচ্ছে!

আলোঃ হুঁকোমুখো আপনি এতটা সুন্দর না হলেও পারতেন!আপনার এমন এটিটিউড বার বার আমাকে ঘায়েল করে।(মনে মনে)
রোদঃ আইসক্রিম গলে যাবে! আগে খেয়ে নাও তারপর আমাকে দেখো..!!(সামনে তাকিয়ে)
রোদের কথায় আলো খুব লজ্জা পায়!আলো সাথে সাথে মুখটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে নেয়!রোদ আলোর লজ্জা মাখা মুখ দেখে মুচকি হাসে!রোদদের গাড়িটা অনেক পেছনে!রোদ ইচ্ছে করেই গাড়িটা অনেক পিছিয়ে রাখছে।যাতে আর কিছুটা সময় আলোর সাথে থাকতে আর আলোকে জ্বালাতন করতে পারে।রোদ হঠাৎ করে ওর মুখে গম্ভীর ভাবটা ফুটিয়ে বললো….!!
রোদঃ তখন তুমি এভাবে সেজেছিলে কেন??তোমাকে এর আর আগে নিষেধ করছিলাম না(ধমকের সুরে)
আলোঃজ জ জি (চমকে উঠে).
রোদঃ তাহলে সাজলে কেন?নিজের রুপ মানুষকে না দেখালে চলে না তাই না। বড় চুল সবাইকে না দেখলে পেটের ভাত হজম হয় না তাই না!থাটিয়ে থাপ্পড় খাওয়ার শখ জেগেছে তাই না।(দাঁতে দাঁত চেপে)
আলোঃআস আসলে আম্মু সাজিয়ে দিয়েছে।তাই না করতে পারিনি।

রোদঃএকদম চুপ!আবার মুখে মুখে কথা তাই না।বলিনি আমার মুখে মুখে কথা বলবা না।(জোরে ধমকের সাথে)
রোদের ধমক শুনে আলো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে!রোদের এক একটা ধমকে আলো কেঁপে কেঁপে উঠছে!আলোও বুঝতে পারছেনা হঠাৎ কি এমন করলো যে রোদ এখন এমন করে ধমক দিচ্ছে। আলো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে। আর রোদ মনে মনে হেসে কুটিকুটি হয়ে যাচ্ছে!রোদ সামনে তাকিয়ে ঠোঁটের কোনে দুষ্টু হাসির রেখা টেনে মনে মনে বলে..!!
রোদঃ শুনেছি কাঁদলে নাকি মায়াবতীদের দেখতে অনেক ভালো লাগে!আমার তিলোকন্যাকে দেখে তার প্রমান পেয়েছি এজন্য তো ইচ্ছে করে তোমাকে কাদায়!আরো কাঁদাবো আমি তোমাকে শত শত বার কাঁদাবো…..!! আর তুমি ঠোঁট ফুলিয়ে বাচ্চাদের মত করে কাঁদবে আর আমি তোমাকে বসে বসে দেখবো!দোষ না করলেও তোমাকে অকারণে বকা দিবো আর তোমাকে কাঁদাবো কারন তোমার কান্না মাখা মুখের প্রেমে পড়ছি আমি!কাঁদো তিলোকন্যা বেশি করে কাঁদো আর আমি দুচোখ ভরে দেখি! তোমার কান্নামাখা মুখ…!! (মনে মনে)
আলো ওর হাতের আইসক্রিম টা রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলে দিতে গেলে রোদ আলো হাত ধরে ফেলে!আলো রোদকে তো কিছু বলতে পারবে না তাই অসহায় আইসক্রিমটার উপরে রাগ দেখাতে চাচ্ছে! রোদ আবার ধমক দিলো আর তারাতারি আইসক্রিমটা শেষ করতে বললো!আলো বাইরের দিকে মুখ করে বসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে আর আইসক্রিম খাচ্ছে!
আর রোদ দেখেও না দেখে ভান করে মুচকি হেসে বসে থাকলো!
ওদিকে _____!!

মেঘেরা যে গাড়িতে আছে সেই গাড়িতে সবাই মজা করতে করতে যাচ্ছে! এর মধ্যে কলি আর মেঘের ঝগড়া লেগেছে!কলি আর মেঘ ফিসফিস করে ঝগড়া করছে যাতে কেউ শুনতে না পায়।ওদের ঝগড়া লাগার কারন মেঘের চকলেট খেতে মন চাচ্ছে কলির কাছে চকলেট আছে! তাও কলি মেঘকে দিচ্ছে না।মেঘ অনেকক্ষণ যাবত কলিকে পটানোর পরেও কলি মেঘকে চকলেট দিতে নারাজ!মেঘ কিছু বলতেও পারছেনা কারন গাড়িতে কলির আম্মু আছে!মেঘ রাগী চোখে বার বার কলির দিকে তাকাচ্ছে আর কলি অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে বসে আছে!মেঘের মন চাচ্ছে কলির সামনে থাকা দাঁত দুটো টেনে তুলে দিতে…!!যাতে পানি খেতে গেলে সব পানি মুখ থেকে পড়ে যায়।
মেঘ তো রাগে কিছু বলতেও পারছেনা আবার কলিকে মারতেও পারছে না।তাই মেঘ দাঁতে দাঁত চেপে বিরবির করে গান ধরলো….
ব্যত্তামিজ গার্ল! ব্যত্তামিজ গার্ল
এমনটা করিস না করিস না…!!
একবার বাগে পাই
থাপ্পরাইয়া লাল কইরা দিমু তোর গাল
তখনই আমার কোন দোষ
দিবি না দিবি না

#এলোকেশী_কন্যা২__
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_30

মজা করতে করতে সবাই বিয়ে বাড়ি এসে পৌঁছায়!তারপর ওখানে গিয়ে সবাই খাওয়া দাওয়া,হাসি ঠাট্টা মজা,সেলফি এসবের মাঝেই কাজি এসে আদিলের আর শিমুর বিয়ে সম্পূর্ন করে!যারা সেজে গুজে এসেছিলো তাদের অবস্থা দেখে আলো মুখ টিপে টিপে হাসছে!কারন মেকাবে যারা মুখ আবৃত করছিলো গরমে তাদের মেকাব নষ্ট হয়ে গেছে!আলো এবার বুঝলো যে রোদ কেন সাজগোজ করতে নিষেধ করছিলো।
বেশ কিছুক্ষন ধরে রোদ আলোকে চোখে চোখে রাখছে! আর আলো সব জায়গাটা ঘুরে ঘুরে দেখছে এর মধ্যে রোদ খেয়াল করে আলোর মুখটা লাল হয়ে গেছে!আর কেমন জানি বিরক্তকর ভাব মুখে ফুটে উঠেছে।রোদ ওর আম্মুকে গিয়ে বললো কখন ওরা বাসায় ফিরবে! রোদ ওর আম্মুকে আলোর কথা বলতেই রোদের আম্মু রোদকে বললো আলোকে নিয়ে বাসায় চলে যেতে!কারন আলোকে নিয়ে কোন রিস্ক নিবে না।রোদ আর দেরী না করে আলোকে নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেল!এর মধ্যে মেঘও কখন দুম করে গাড়িতে ঢুকে পড়ছে কেউ খেয়াল করে নি!আলো গাড়িতে বসে কেমন ছটফট করতে থাকে!রোদ এটা ওটা বলে বলছে আর আলো থম মেরে বসে আছে!আলোর শরীর প্রচন্ড জ্বালাপোড়া করতে শুরু করছে!
আলো ওর হিজাব খুলে ফেলে আর চুল ছেড়ে দেয়!রোদের আম্মু দীদানকে ফোন দেয়!রোদ দ্রুত ড্রাইভ করছে কারন রোদেরও এখন বুক দুরুদুরু করছে।মেঘ কিছু বুঝতে পারছেনা কুটুরকুটুর করে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে!মেঘ বুঝতে পারছে আলোর মনে হয় শরীর খারাপ তাই এমন করছে!রোদ বাসায় পৌঁছাতেই দেখে দীদান বেরিয়ে আসে! দীদান আলোকে নিয়ে রুমে গিয়ে শাড়ি বদলে কামিজ পড়তে সাহায্য করে!রোদ মেঘকে গাড়ি থেকে নামতে দেখে অবাক হয়! আর রোদ ওর আম্মুকে ফোন দিয়ে বলে মেঘ ওদের সাথে আছে!এখন না বললে পরে ওর আম্মু মেঘ না পেলে টেনশন করবে!রোদের আম্মু সবাইকে কোন রকম বুঝিয়ে বাসায় আসার জন্য রওনা দেয়…..!!

মেঘ বার বার জিজ্ঞাসা করছে আলোর কি হয়েছে?আলো বাইরে এসে দাড়ায়! তখন মেঘ দৌড় গিয়ে জিজ্ঞাসা করে…
মেঘঃ বউমনি তোমার কি হয়েছে?তোমার চোখ লাল হয়ে আছে কেন?তোমার কি খুব কষ্ট হচ্ছে বউমনি..!!(আলোর হাত ধরে)
মেঘ কথা শেষ করতে না করতেই আলো মেঘকে স্বজোরে একটা ধাক্কা দেয়!মেঘ দুরে ছিটকে পড়ে আর রোদ দৌড়ে গিয়ে মেঘ তুলে বুকে জড়িয়ে নেয়!মেঘ খুব ব্যাথা পেয়েছে এজন্য ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে। আলো বার বার মেঘকে আঘাত করতে যাচ্ছে ঠিক তখন এজন্য হুজুর আসে। হুজুরকে দীদান ডেকে আনে!উনাকে দেখে আলো আরো রেগে যায়। মেঘ আলোর এমন রুপ দেখে ভয়ে রোদের বুকের সাথে লেপ্টে থাকে!হুজুরটি এসে আলোর চারপাশে একটা রেখা টেনে দেয় সূরা পাঠ করতে থাকে!
আলোর চুল গুলো মাটিতে লেপ্টে একাকার অবস্থা!আলো মাটিতে বসে রাগে ফোঁস ফোঁস করছে।রোদের আব্বু আর আম্মু তখনই চলে আসে!হুজুরটি আলোকে জিজ্ঞাসা করে..!!
হুজুরঃ তোমরা যেখান থেকে এসেছো সেখানে চলে যাও।মেয়েটাকে আর কষ্ট দিও না।ভালোই ভালোই আমি যা জানতে চাইছি সেটা বলো! আমাকে রাগীও না! তাহলে তোমাদের জন্য সেটা ভালো হবে না।
আলোঃ….
হুজুরঃকি হলো কথা বলো!আর আমি যা জিজ্ঞাসা তাই বলো।(সূরা পড়া পানি আলোর গায়ে ছিটিয়ে)
আলোঃ কিছু বলবো না আমরা!তুই চলে যা আমরা এই মেয়েকে কিছুতেই ছাড়বো না।
হুজুরঃকেন?এই মেয়ে কি এমন ক্ষতি করছে যে তোমরা ওকে ছাড়বে না।কি পেলে তোমরা যাবে সেটা বলো…!!
আলোঃআমরা ওর জান নিবো(মেঘকে দেখিয়ে)
হুজুরঃওই বাচ্চাটি তোমাদের কি করলো?ওকে কেন টানছো তোমরা।আচ্ছা তোমরা কতজন আছো এখন…!!
আলোঃআমরা এখন মোট সাতজন আছি!
দীদানঃতোমরা তো চারজন ছিলে তাহলে আর তিনজন আসলে কেন??

আলোঃ এই মেয়ে যথেষ্ট সুন্দরী! এর সাথে আগে থেকেই দুইটা ভাল জ্বিন ছিলো!এখানে যেদিন আসে তার পরেরদিন সকালে ছাদে তিনজন ওর শরীরে ভর করে!আর আমি আর আমার ভাই এসেছি সেইদিন দুপুরের উঠানে যখন ওর চুল ছাড়া অবস্থায় ছিলো!এই মেয়ের পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে আমরা এসে ভর করছি !আর ওর চুল দিয়ে ওর শরীরে প্রবেশ করেছি।কারন পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে কারো শরীরে ঢুকতে আমাদের সুবিধা হয়!
হুজুরঃএক মেয়ের শরীরে এতজন জ্বিন ভর করছো!এটা কি ঠিক কাজ?
আলোঃ এতকিছু জানিনা আর বুঝিও না।আমরা এর শরীর থেকে যাবো না।আর কিছুতেই ওকে আমরা ভাল থাকতেও দিবো না।
হুজুরঃ সবই বুঝলাম! তাহলে মধ্যেখান থেকে ওই বাচ্চাটাকে টানছো কেন?
আলোঃ ওই বাচ্চার জন্যই তো এই মেয়েকে এত কষ্ট পেতে হচ্ছে! ওই বাচ্চার উপর রেগেই তো আমরা এই মেয়েকে এত কষ্ট দিচ্ছি।(রেগে মেঘের দিকে তাকিয়ে)
হুজুরঃকেন বাচ্চাটি কি করছে তোমাদের?
আলোঃ কারন সেইদিন সকালে ওই বাচ্চাটাই ছাদ থেকে ফুলের টব ফেলে আমাদের ছোট বোনকে মেরে ফেলছে।ওকে এর শাস্তি দিতেই আমরা মেয়ের শরীরে এসেছে।
আলোর কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে যায়!সেইদিন সকালে আলো চলে যাওয়ার পর যখন রোদ আর মেঘ ছাদে ছিলো তখন মেঘ প্রজাপতি ধরতে গিয়ে ভুলে করে একটা টব ফেলে দিসিলো।রোদ এজন্য মেঘকে বকাও দিয়েছিলো।
আলো চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে! হুজুর সূরা পাঠ করে সব জ্বিনকে হাজির করে!একে একে সব জ্বিনরা হাজির হয়! এর মধ্যে আলো বলে উঠে…!!

আলোঃআমি লবণ খাবো!লবণ খাবো! তারাতারি আমার সামনে লবণ হাজির কর।(চিৎকার করে)
আদিলের বিয়ের জন্য আনা লবনের সব প্যাকেট এনে আলোর সামনে হাজির করা হয়!আলো লবন দেখে জোরে একটা নিঃশ্বাস ছাড়ে!এর মধ্যে হিন্দু জ্বিনটা এসে মিষ্টি আর ধুপ খাওয়ার জন্য বলে!আলোর সামনে মিষ্টি আর ধুপ হাজির করা হয়!আরেকটা জ্বিন এসে বলে কলা খাবে!এই রকম ভাবে সবাই এক এক করে হাজির হয় আর বাট দুইটা জ্বিন আর আসে না।তারা কিছুতেই ধরা দিবে না!আলোর কাছে আগে থেকেই থাকা দুই জ্বিন হাজির হয়!হুজুর জিজ্ঞেস করে….!!
হুজুরঃতোমরা চলে যাও!মেয়েটাকে আর কষ্ট দিও না।
আলোঃআমরা আলোর তিনদিন বয়স থেকে ওর কাছে আছি!আলোর আম্মুও খারাপ জ্বিনের অত্যাচারেই মারা গেছে!আলোর মত ওর মা ও অনেক সুন্দরী ছিলো যার কারনে খারাপ জ্বিনের নজরে পড়ে! আমরা আলোর কাছে আছি কারন আলো খুব ভালো পরিষ্কার আর নামাজী একটা মেয়ে।আর আমরা ওর কোন ক্ষতি করিনি আর করবো না।আমাদের জন্য এতদিন খারাপ কিছু ওর কাজে আসতে পারেনি! কারন আমরা সব সময় আলোকে পরিষ্কার পরিছন্ন আর নামাজ ছাড়তে দেয়নি !কিন্তু এখানে এসে পিরিয়ড চলাকালীন সময়ের জন্যই আমরা বাকি জ্বিনদের আটকাতে পারিনি!আলোর ভালোর জন্য আমাদের থাকার অনুমতি দেন।
হুজুরঃ এই মেয়ের শরীরে তোমরা আছো জানলে এই মেয়ের শশুড়বাড়ির লোক সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকবে!তোমরা ওর ক্ষতি না করলেও ওকে নিয়ে সবার মনে একটা ভয় থাকে।তোমরা বাকিদের নিয়ে চলে যাও….!আমি তোমাদের ভালো ভাবে বলছি।
আলোঃ আমরাও চলে যাবো! বাকিরা আগে যাবে তারপর আমরা যাবো।কথা দিলাম…!বাকি জ্বিনগুলো আলোকে নিয়ে যাওয়ার বুদ্ধি এটেছে! তাই বলছি আমরা চলে গেলে আলোর আরো ক্ষতি করবে ওরা।

এলোকেশী কন্যা  সিজন ২ পর্ব ২৫+২৬+২৭

হুজুর আর কিছু না বলে জোরে জোরে সূরা পড়তে থাকে!আর আলো মাটিতে ছটফট করতে থাকে!সূরা পড়তে শুরু করার সাথে সাথে আলোর মনে হচ্ছে কেউ ওর শরীরে আগুনের লাভা ঢেলে দিয়েছে!হুজুর হিন্দু জ্বিনসহ তিনটা জ্বিনকে বোতলে ভরে ফেলে!বাকি থাকলো চারটা জ্বিন তার মধ্যে দুই ভালো আর দুই খুব খারাপ বদরাগী জ্বিন।ওরা কিছুতেই যাবে না বলে পণ করে!হুজুরও ছেড়ে দেওয়ার মানুষ নই জমজমের পানি আনে আর আরো সূরা পাঠ করে আলোর শরীরে সেই পড়া পানি ঢেলে দেয়।হুজুরের আকানো সেই রেখার মধ্যেই আলো এপাশ ওপাশ মাটিতে গড়াগড়ি করতে থাকে!আলোর এই অবস্থা দেখে রোদের কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে! কি করবে আর কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছেনা।এর আগে জীবনেও এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়নি রোদ!আবার সবকিছু অস্বীকার করাও যায় না।যদি হুজুর কুরআনের সূরা পাঠ না করে অন্য কিছু করতো তো।রোদ এখানে রুখে দাঁড়াতো বাট এখন যা হচ্ছে কুরআনের আয়াত আর সূরা পড়ে হুজুর তার কাজ করে যাচ্ছে! রোদ, রোদের আম্মু, আব্বু, আর মেঘের চোখ দিয়ে অঝরে পানি পড়ছে কারন তারা কেউ আলোর এত কষ্ট সহ্য করতে পারছেনা।আলো শরীরে থাকা খারাপ জ্বিন দুটোই বলতে থাকে…..!!
আলোঃআমরা প্রান নিয়েই তারপর যাবো! এই মেয়ের রাশির সাথে আমাদের রাশি মিলেছে তাই ওর শরীরে সহজে ঢুকতে পেরেছি আমরা।এর শরীরে থেকেই আমরা ওই বাচ্চার প্রান নিবো!এই হুজুর সূরা পাঠ করা বন্ধ কর বলছি।না হলে এই মেয়েকে মেরে ফেলবো।আমরা এখন রক্ত শুষে তারপর যাবো…!আমাদের বোনের প্রান গেছে তাই আমরাও প্রান নিয়ে তারপরেই যাবো।(রেগে আলো নিজের চুল নিজেই টেনে ছিড়ে আর শরীরে খামচাতে থাকে)

হুজুরের কথা মত দুইটা ধবধবে সাদা কবুতর এনে দীদান আলোর সামনে রাখে!জ্বিনগুলো কবুতর নিতে রাজি না তারা মেঘকেই নিবে!আলো এখনো রাগী চোখে মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে!আর মেঘ রোদের বুকে মুখ লুকিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে।
হজুর আবার সূরা পড়তে শুরু করলে জ্বিনগুলো চিৎকার করতে থাকে। আলো আর উপায় না পেয়ে উঠে বসে আর দেখে ওর সামনে নিখুঁত দুই জোড়া কবুতর!কবুতর গুলো একদম নিখুঁত হওয়ার কারনে জ্বিন দুটোর খুব পছন্দ হয়!কবুতর গুলো কি সুন্দর করে হেঁটে বেড়াচ্ছে আর সামনে রাখা বাটিতে থেকে ধান খাচ্ছে! আলো লাল চোখে কবুতরের দিকে তাকাতেই কবুতর জোড়া ঠাস্ করে মাটিতে পড়ে যায়।কবুতরের মুখের ধান মুখে থেকে যায় শুধু ওদের প্রান চলে যায়।
রোদ সহ সবাই অবাক হয়!হুজুর আবার সূরা পড়ে খারাপ জ্বিন দুটোকে বুদ্ধি খাঁটিয়ে বোতলে ঢুকিয়ে নেয়!ওই জ্বিনগুলোকে বোতলে ঢুকানোর সাথে সাথে আলোও সেন্স হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে!রোদ আলোকে এভাবে পড়তে দেখে দৌড়ে যেতে নিলে হুজুর রোদকে থামিয়ে দেয়!তারপর আবার সূরা পড়ে কয়েকদিনের জন্য আলোর শরীর বন্ধ করে দেয়…..!!আর আলোর শরীরে ফু দিয়ে দেয়।
হুজুর রোদকে ইশারা করে আলোকে নিয়ে যাওয়া জন্য! রোদ মেঘকে কোলে থেকে নামিয়ে আলোকে কোলে নিয়ে ওর রুমে নিয়ে যায়….!!

এলোকেশী কন্যা  সিজন ২ পর্ব ৩১+৩২+৩৩