এলোকেশী কন্যা সিজন ২ পর্ব ২৫+২৬+২৭

এলোকেশী কন্যা সিজন ২ পর্ব ২৫+২৬+২৭
লেখনীতে:- নূরজাহান আক্তার (আলো)

________রোদ কোন রকম ওর হাসি থামিয়ে চেয়ারে উঠে বসে আর গিটার হাতে নেয়!মেঘ মাঠের মাঝখানে দাড়িয়ে আছে! এখন মেঘ ডান্স করে দেখাবে!মেঘের এমন করার কারন বিকাল থেকে আলোর মন ভালো নেই তাই আলোকে হাসানোর জন্য! রোদ মেঘের দিকে তাকালেই ওর খুব হাসি পাচ্ছে! রোদের আম্মু ভিডিও কলে ওদের আব্বুকে মেঘকে দেখিয়েছি।উনি ৪ মিঃ হা করে মেঘের দিকে তাকিয়ে গগন ফাটানো মত হাসতে শুরু করছেন!উপস্থিত অনেকে মাঠের চারপাশে গোল হয়ে দাড়িয়ে আছে!মেঘ রোদকে টেনে মাঠের মাঝখানে চেয়ারে বসতে বললো!রোদ মাঠের মাঝখানে বসে গান গাইতে শুরু করলো….!!
চালে জাব তু লাটাক মাটাক..
লওনডো কে দিল পাটাক পাটাক..
সাসে যায়ে আটাক আটাক..
আতা মাজি সাটাক সাটাক….
বাম তেরা গোতে খায়..
কামার পে তেরি বাটার ফ্রাই…
বডি তেরি মাখান জেসি..
খানে মে বাস তু বাটার খায়…
বড় লোকের বিটি লো লম্বা লম্বা চুল…
এমন মাথায় বেঁধে দেবো লাল গেন্দা ফুল…

মেঘ গানের তালে তালে ওর কোমর দুলাচ্ছে আর ধুমাইয়া নাচতে শুরু করছে!রোদ তো অনেক কষ্টে হাসি আটকে রেখে নিচে তাকিয়ে গান গাইছে!মেঘের কোমল দুলানো দেখে আলো হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে..!!
বড় লোকের বিটি লো লম্বা লম্বা চুল…
এমন মাথায় বেঁধে দেবো লাল গেন্দা ফুল…
এই লাইন রোদ যখন গাইছে মেঘ তখন গালে হাত দিয়ে লজ্জা পাওয়ার মত মুখটা করছে!মেঘের ডান্স দেখে উপস্থিত সবাই পেটে হাত দিয়ে হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছে!তারপর রোদ গান শেষ করে আর মেঘ নাচ শেষ করে! বেচারা মেঘ আলোর মন ভাল করতে যে ডান্স দেখালো!এখন তো মেঘের ঘেমে পুরো একাকার অবস্থা! মেঘ গিয়ে আলোর কোলে ঠাস করে বসে পড়লো আর আলোর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলো…!!
মেঘঃ বউমনি আবার ডান্স তোমার কেমন লাগলো??
আলোঃ অনেক অনেক অনেক ভালো!তুমি এত
সুন্দর ভাবে কোমর দুলাতে পারো আমি তো অবাক।
মেঘঃ বউমনি আমি বেলি ডান্সও দিতে পারি..!!
আলোঃ বাব্বাহ আমার মেঘবাবু এত কিছু পারে!আমাকে শিখাবে…!!(মেঘের গাল টেনে)
রোদঃ থাক তোমাকে এসব শিখতে হবে না!বেলি ডান্স আর কোমর দুলানো শিখতে গিয়ে আবার তোমার কোমর খুলে পড়ে গেলে আরেক সমস্যা..! এখানে আবার হসপিটাল একটু দুরে…!! (আলোর পাশের চেয়ারে বসে)
আলোঃ…….

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

সব সময় আমারে না খোঁচালে মনে হয় উনি শান্তিই পায় না!ভালো কথা কইলেও ঘুরাইয়া ফিরাইয়া প্যাচ লাগাইয়া আমারেই বাঁশ দেয়!আর আমারে বাঁশ দেওয়াই উনার একমাএ কাজ মনে হয়।কেন রে ভাও আমি তোর কোন সুখের কাজে বাম হা ঢুকাইয়া দিসিছিলাম যে আমারে যখন তখন এমন কইরা বাঁশ দিস!(মনে মনে)
রোদঃ দিয়েছো দিয়েছো ভাল করে মনে করো..!!
রোদের কথা শুনে আলো টাসকি খেয়ে মাথা নিচু করে বসে থাকলো!মেঘ হাত মুখ ধুয়ে ড্রেস বদলে এক প্লেট খাবার এনে আলোকে বললো মেঘকে খাইয়ে দিতে!ডান্স করে মেঘের পেট ফাঁকা হয়ে গেছে। আলো হাত ধুয়ে মেঘকে খাওয়াতে যাবে তখন রোদ ধমক দিয়ে দুজনকে রুমে পাঠালো!রোদ এই ফাঁকে ওর আম্মুকেও ওর আর আলোর খাবারটা দিয়ে দিতে বললো!রোদ আলোর রুমে গিয়ে দেখে আলো বেডে বসেই মেঘকে খাইয়ে দিচ্ছে!রোদ গিয়ে আলোর পাশেই ঠাস করে শুয়ে পড়লো।আলো একবার আড়চোখে রোদের দিকে তাকিয়ে মেঘকে আবার খাওয়াতে মনোযোগ দিলো!মায়া এসে রোদের আর আলোর খাবার দিয়ে গেল!রোদ ফোনের দিকে তাকিয়েই মেঘকে উদ্দেশ্য করে বললো…!!
রোদঃ বুঝলি মেঘ আমার অনেক আপসোস হচ্ছে! আর এত কষ্ট আর সহ্য হচ্ছে না আমার..!!
মেঘঃ কেন দাভাই?তোমার আবার এত কষ্ট আসলো কই থেকে..!!
রোদঃ আরে ভাই বহুত কষ্ট আছে রে আমার!কেউ দেখে না আমার কষ্ট…!! (মন খারাপ করে)
মেঘঃ দাভাই কি হয়েছে??
রোদঃ আমার খুব খুধা লাগছে বাট নিজের হাতে খেতে ইচ্ছে করছে না!এত পরিমান খুধা লাগছে যে মাথা ঘোরা শুরু করছে!তোর তো বউমনি আছে তাই তোকে খাইয়ে দিচ্ছে আমার তো আর বউমনি নাই…!!
মেঘঃ আচ্ছা দাভাই তাহলে আমার বউমনিকে আপাতত তুমি ধার নাও!পরে আবার দিয়ে দিও…!!
রোদঃ ওকে!বাট তুই তো ধার দিলি বাট তোর বউমনি কি আর আমাকে খাইয়ে দিতে রাজি হবে।আমার কি আর সেই সুখ কপালে আছে রে ভাই (মন খারাপ করে)
আলোঃ………..

আমি জানতাম এই বড় গাধাটা নিশ্চয়ই কোন ঘোট পাকিয়েই এখানে এসেছে। আর ছোট গাধাকে দেখো বড় গাধাটার ফাঁদে পা দিলো।মন চাচ্ছো দুটোকে তুলে আছাড় দেই! কিন্তু ওর মত দামড়া একখান পোলারে তো আমি তুলতেই তো পারবো না।এই বড় গাধাটা ওর কথার জালে ফাঁসিয়ে সব সময় আমাকে দিয়ে ওর কাজ করিয়ে নেই! (মনে মনে)
মেঘঃ বউমনি দাভাইকেও একটু খাইয়ে দাও তো! আমাদের দুই ভাইকে একসাথেই খাইয়ে দাও।
রোদঃ হুমম! হুমম!রাইট..!!
আলো রাগে দাঁত কিড়মিড় করে রোদের দিকে একবার তাকিয়ে মেঘের মুখে খাবার দিলো!রোদ মুচকি মুচকি হাসছে শুধু ওর ফোনের দিকে তাকিয়ে! আলো কাঁপা কাঁপা হাতে রোদের দিকে খাবার বাড়িয়ে দিলো!রোদ তখন মেঘকে বললো….!!
রোদঃ থাক রে মেঘ! কেউ মন থেকে আমাকে খাইয়ে দিতে না চাইলে আমি খাবো না!শুধু শুধু কারো মনের বিরুদ্ধে কাজ করানো উচিত না।
মেঘঃ কেন দাভাই??বউমনি তো তোমাকে খাইয়ে দিচ্ছে! তাহলে এত ফকফক করছো কেন?(গেম খেলতে খেলতে)
রোদঃ তুই আমার দিকে তাকিয়ে তো দেখ! তাহলেই বুঝবি!

মেঘ ফোনের দিক থেকে চোখ সরিয়ে রোদের দিকে তাকাতেই মেঘ খিলখিল করে হাসতে থাকে!আলো অন্য দিকে তাকিয়ে রোদের দিকে খাবার ধরে আছে!আলো ভ্রু কুচকে রোদের দিকে তাকিয়ে দেখে আলো রোদের মুখে না কপাল বরাবর খাবার ধরে আছে!আলো এটা দেখে মুচকি হেসে ওর জিহ্বাতে কামড় দেয়!তারপর রোদের মুখে খাবার দেয় রোদ মুখে খাবার নিয়ে খেতে থাকে! আলো খাবার নিয়ে একবার রোদকে দিচ্ছে তো একবার মেঘকে দিচ্ছে! দুজনেই খাচ্ছে আর ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে! আলো ওদের মুখে খাবার দেওয়া পর দুজনেই কি সুন্দর করে খাচ্ছে! খুব সুখের একটা মুহূর্ত এটা!
আলো ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে সেটা দেখছে!রোদও বাচ্চাদের মত করেই খাচ্ছে ….!!
মেঘের খাওয়া হয়ে গেছে!আলো এখন শুধু রোদকে খাওয়াতে আছে! হাস্যকর কথা হলো রোদের খাবার শেষ হওয়ার পরেও রোদ হা করে আছে! তাই আলো ওর খাবারটাও রোদকে খাওয়াতে থাকে!মেঘ কিছু বলতে গেলে আলো ইশারায় মেঘতে চুপ থাকতে বলে!আলো খুব যত্ন করে রোদকে খাওয়াতে থাকে আর মনে মনে ভাবে…!!
আলোঃ এত সুখ আমার কাছে এসে ধরা দিবে আমি ভাবতে পারিনি!আল্লাহ তোমার কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া!আর এই ছেলেটার কত রুপ আমাকে দেখতে হবে কে জানে?এক সময় বকা দেয় তো অন্য সময় এসে বুদ্ধি খাঁটিয়ে আমাকে দিয়ে ওর কাজগুলো করিয়ে নেয়। সত্যি অদ্ভুত.. (মনে মনে)

রোদ দুই প্লেট খবার খেয়েও হা করে!আলো খাবার দিচ্ছে না দেখে রোদ ভ্রু কুচকে তাকিয়ে দেখে সব খাবার ও খেয়ে ফেলছে!রোদ খেয়াল করে আলোর খাবারটাও রোদ খেয়ে বসে আছে!রোদ উঠে আরো এক প্লেটে খাবার নিয়ে এসে বলে যাতে আলো নিজেও খায় রোদকেও খাইয়ে দেয়!আলোর হাতে খেয়ে রোদ পেট ভরলেও মন ভরছে না!এজন্য রোদের এত ছলাকলা…..!
আলো নিজেও খেলো রোদকেও খাইয়ে দিলো!আজকে বাসায় অনেক মেহমান তাই রোদের রুম অনেক আগেই বুক হয়ে গেছে! রোদের আম্মু আলোর রুমে এসে বলে রোদ যাতে আলোর রুমের সোফাতে ঘুমিয়ে পড়ে আর মেঘ আর আলো যাতে বেডে ঘুমায়!রোদ একটু রাগ দেখালো বাট মনে মনে খুশিই হলো!যেহেতু এটা গ্রাম তাই ১০ মানে এখানে অনেক রাত তাই গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শেষ করে যে যার মত ঘুমানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে!দীদান এসে রোদকে বলে গেল আলোর দিকে খেয়াল রাখতে! আর কোন সমস্যা হলে রোদ যেন পন্ডিতি না করে দীদানকে ডাক দেয়।

বাইরে যে যেখানে পেরেছে শুয়ে পড়ছে!রোদের আম্মু আর দীদান কিছু নিয়ে আলোচনা করতে বসলো!রোদ আলোর রুমে থাকবে শুনে আলো খুব অস্বস্তি লাগছে! কারন সে ঘুমালে হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে ঘুমায়!একবার ঘুমালে তার কোন হুশই থাকে না!আলো আর মেঘ ব্রাশ করে এসে শুয়ে পড়লো!রোদও ব্রাশ করে সোফাতে শুয়ে পড়লো!মেঘ রোদের কাছে গল্প শুনবে তাই মেঘ উঠে রোদকে টানতে টানতে বেডে এনে বললো শুয়ে পড়তে!আলো একপাশে মাঝখানে মেঘ আর অন্য পাশে রোদ!রোদ কোন কথা না বাড়িয়ে শুয়ে পড়লো আর ঠোঁটের কোনে দুষ্টু হাসির রেখা টেনে বানিয়ে বানিয়ে হরর গল্প বলতে শুরু করলো!
মেঘ আলোকে বললো মেঘকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে!আলোকে মেঘকে জড়িয়ে ধরলো আর মেঘ রোদের দিকে একটু একটু করে এগোতে এগোতে রোদের বুকে সাথে লেপ্টে গেল!মেঘ রোদের দিকে যাচ্ছে আলোর হাত ধরেও টানছে!রোদ এমন ভাবে গল্পটা বলছে যাতে দুজনেই ভয় পায় আর রোদকে জড়িয়ে ধরে….!!আলোর ভীতু মুখ দেখে রোদের খুব পাচ্ছে! মেঘ রোদের বুকের সাথে লেপ্টে গেছে আর রোদের বুকেই মেঘ মুখ লুকিয়ে রাখছে!বেচারা আলোও ভয় পেয়ে মেঘের সাথেই লেপ্টে আছে!রোদ হাত বাড়িয়ে দুজনকেই নিজের বাহুডোরে রাখে…..!!
রোদের চালাকি অবশেষে সফল হয়…!!রোদ গল্প বলতে বলতে খেয়াল করে দু’জনেই ভয়ে চোখ বন্ধ করে থাকতে থাকতে দুজনেই ঘুমিয়ে পড়ছে!রোদ আস্তে করে উঠে আলো ভাল করে শুইয়ে দেয় তারপর মেঘকেও মাঝখানে ভাল করে শুইয়ে দিয়ে নিজেও কাত হয়ে শুয়ে পড়ে!আর এক হাতের উপর ভর দিয়ে রোদ ওর তিলোকন্যা কে দেখতে থাকে…!!

#এলোকেশী_কন্যা২__
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_26

______রোদের চালাকি অবশেষে সফল হয়…!!রোদ গল্প বলতে বলতে খেয়াল করে দু’জনেই ভয়ে চোখ বন্ধ করে থাকতে থাকতে দুজনেই ঘুমিয়ে পড়ছে!রোদ আস্তে করে উঠে আলোকে ভাল করে শুইয়ে দেয়! তারপর মেঘকেও মাঝখানে ভাল করে শুইয়ে দিয়ে রোদ নিজেও কাত হয়ে শুয়ে পড়ে!আর এক হাতের উপর ভর দিয়ে রোদ ওর তিলোকন্যা কে দেখতে থাকে…!!
রোদ ওর তিলোকন্যার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে পড়ে!রাত প্রায় তিনটার দিকে আলো উঠে রুমের দরজাটা খুলে হাঁটা ধরে! ড্রয়িং রুম পেরিয়ে আলো উঠনো পা রাখতে রাখতে যাবে! তখন দীদান এসে আলোর সামনে মিষ্টির প্যাকেট ধরে!আলো মিষ্টি দেখে হাত বাড়িয়ে নিতে যাবে তখন দীদান উনার রুমে দিকে হাটা ধরে!মিষ্টির লোভে আলোও দিদানের রুমে যায়!আলো রুমে ঢুকতেই দীদান রোদকে ফোন দিয়ে ওনার রুমে আসতে বলে!রোদ উঠে আলোকে না পেয়ে তারাতারি করে দীদানের রুমে যায়!রোদ দীদানের রুমে গিয়ে দেখে আলো বসে বসে মিষ্টি খাচ্ছে! দীদান রোদ কে ইশারায় চুপ থাকতে বলে….!!রোদের আম্মু আর রোদ আলোর পেছনে দাড়িয়ে আছে!রোদের দীদান বলে উঠে….!!

দীদানঃ তোমার নাম কি??
আলোঃ….
দীদানঃ তোমার নাম বলো তাহলে আরো মিষ্টি দিবো।
আলোঃ আমার নাম গণশা…!!গণশা! গণশা! আমার নাম…! হা হা হা
দীদানঃ তুমি হিন্দু সম্প্রদায়ের
আলোঃহ
দীদানঃ তুমি মেয়েটাকে এভাবে জ্বালাচ্ছো কেন??ও কি করছে যে! তুমি শুধু শুধু ওকে কষ্ট দিচ্ছো।ওর থেকে চলে যাও…
আলোঃনা হেতিরে আমার খুব ভাল্লাগছে!আমি কিছুতেই হের থেইকা যামু না!
দীদানঃকেন যাবে না?তোমার বাড়ি ঘর নাই।তুমি থাকো কোথায়??
আলোঃআমি বেশির ভাগ থাকি মাইয়া মানুষের শরীরে! কারন মাইয়া মানুষের শরীরের গন্ধ আমার মেলা ভাল্লাগে!আমার হেতিরে খুব পছন্দ হইছে ওরে আমার পোলার মা বানাবো…!!হেতির চেহারা আমার দূর্গা মায়ের মত।আমি কিছুতেই হেতিরে ছাড়মু না।
দীদানঃওহ তো মুসলিম! আর তুমি তো হিন্দু! তুমি চলে যাও ওর থেকে!
আলোঃ আমারে তাড়াইতে পারবা না!আমি গেলে হেরে মাইরা রাইখা দিয়া যামু!আমি গনশা! আমার যেইডা পছন্দ হয় আমি নিয়াই যায়।আমি রুগীরে আইজ নিয়াই যাচ্ছিলাম….হা হা হা
দীদানঃ আচ্ছা তুমি কি বলতে পারবে আলোর শরীরে তোমরা মোট কতজন আছো??
আলোঃ হ মুই সব জানি..!!না কমু না!কিছু কমু না
দীদানঃ বলো আমাকে!

আলোঃকমু তার আগে আমি ধুপ খামু!ধুপ দে!ধুপ দে ধুপ!তাহলে কমু…!!
দীদানঃধুপ নাই আগরবাতি আছে!আপাতত আগরবাতি খাও! আমি পরে তোমাকে পেট পুরে ধুপ খাওয়াবো।কথা দিলাম..!!
আলোঃ তুমি ভালা মানুষ তাই মাইনা নিলাম।কথার নড়চড় কইরো না তাহলে হেতিরে ক্ষতি কইরা দিমু।
দীদানঃ এবার বলো!তোমরা কতজন আছো ওর শরীরে..!!
আলোঃ আমরা আছি চারজন! তবে তিনজন মুসলিম জ্বিন আছে!ওরা রুগীর উপর মেলা রাইগা আছে। হা হা হা
দীদানঃ কেন???
আলোঃকমু না!আর কিছু কমু না! কমু না!
রোদের দীদান ভাল ভাবে কথা বলেই সবটা জেনে নিতে চাচ্ছিলো কারন এদের চেতানো উচিত না। আর এখন চেতানোও উচিত হবে না।এই হিন্দু জ্বিনটিও ছিলো আলোর শরীরে!এই জ্বিনটি মিষ্টির পাগল!দীদান আর কিছু বলার আগেই আলো ঠাস করে মাটিতে পড়ে গেল!রোদ দৌড়ে এসে আলোকে তুলে দীদানের বেডে শুইয়ে দিলো!রোদ আর রোদের আম্মু অবাক হয়ে গেছে!দীদান রোদ আর রোদের আম্মুকে বলে উঠে….!
দীদানঃ আমি এসব টুকটাক জানি সেটা তোমরা জানো!আলোকে এখানে আনার আগে ওর শরীর বন্ধ করে আনোনি কেন?ওর মাঝে এমন কিছু আছে যেগুলো সাধারণ মানুষ বাদেও অন্যকিছুকেও আকষর্ণ করে!আলো এখানে আসার পর ওকে জ্বিন রা ছায়া দিয়েছিলো কিন্তু এখন ওরা সরাসরি আলোর শরীরে ভর করছে!
রোদঃ ২০২০ সালেও এখন এসব মানতে হবে!আমি বলছিনা দীদান এসব মিথ্যা! যেহেতু জ্বিন জাতি নিয়ে আমাদের ধর্মগ্রন্থে অনেক কিছু বলা আছে!আমার মনে হয় আমাদের কোথাও ভুল হচ্ছে বুঝতে।
দীদানঃ না রোদ সবকিছু তুচ্ছ করে নেওয়াটা বোকামি! এটা বিয়ে বাড়ি এজন্য আমি কিছু করতেও পারছি না!আদিলের বিয়ে হয়ে গেলেই এর সমাধান করবো যত শীঘ্রই !এখন কিছু করতে গেলে সবাই জেনে যাবে আর বাড়ির বাচ্চারা ভয় পাবে।
রোদের আম্মুঃ আম্মা তুমি কিছু একটা করো!মেয়েটা জীবনে অনেক কষ্ট করছে। এখানে এসেও আরেক ঝামেলায় পড়লো…!!ওকে এখানে আনাটাই আমার ভুল হয়েছে…!!

দীদানঃ রোদ আলোকে চোখে চোখে রাখবা!যখন অস্বাভাবিক কিছু দেখবা জমজমের পানি ওর শরীরে ছিটিয়ে দিবে!আর তুমি ওর আশে পাশে থাকলে ওর শরীরে বেশি জ্বালাপোড়া করবে কারন জ্বিন গুলো চাচ্ছে না তুমি ওর আশে পাশে থাকো।
রোদঃ ওর তাহলে আজকে বিয়ে বাড়ি যাওয়ার কোন দরকার নাই..!!ও বাসায় থাকুক…!!
দীদানঃনা না ওকে একা কোথাও রাখা যাবে না!বিয়ে বাড়ি যাওয়ার আগে জমজমের পানি ছিটিয়ে দিও!তাহলে কিছু হবে না আর এসব কথা আলো বা মেঘ যেন না জানে।
রোদঃআচ্ছা…!!
রোদ আলোকে কোলে নিয়ে ওদের রুমে চলে গেল!দীদান আর রোদের আম্মুও ঘুমাতে গেল!রোদ আলোকে বেডে শুইয়ে আলোর কপালে একটা আদর দিয়ে দিলো! তারপর রোদ ওর জায়গায় গিয়ে শুয়ে পড়লো আর আলোর দিকে তাকিয়ে থাকলো!এর মধ্যে মেঘ রোদের বুকে মুখ ঘষতে শুরু করলো!মেঘের এই একটা বাজে অভ্যাস! ছোট থাকতে যখন মেঘ রোদের কাছে ঘুমানো আবদার করতো! তখন রোদ মেঘকে বুকের উপর নিয়েই ঘুম পড়াতো!মেঘ যখন ঘুমিয়ে পড়তো তখন রোদ মেঘকে পাশে শুইয়ে দিতো! মেঘের যখন মাঝরাতের দিকে খুধা লাগতো তখন রোদের বুকে সাথে লেপ্টে গিয়ে রোদের বুকে মুখ ঘষতে শুরু করতো!রোদ বিরক্ত হয়ে উঠে তখন ওর আম্মুর কাছে মেঘকে দিয়ে আসতো!এখনও মেঘ তাই করছে! আর রোদ বিরক্ত হয়ে মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে…!
রোদঃ দুষ্টুমিতে মাশাল্লাহ সব থেকে এগিয়ে! দিন দিন বড় হচ্ছে ছোট বেলার অভ্যাস ছাড়বে তা না আগের মত আছে!মন চাচ্ছে ঠাটিয়ে একটা থাপ্পড় দেই!এমনিতেই আমার বেশি কাতুকুতু আর আসছে বুকে মুখ ঘষতে!আরেক জনকে তো আবার ভূতে ধরে বসে আছে।আমার হয়েছে যত জ্বালা। এটাকেই মনে হয় বলে মাইকার চিপায় পড়া…!!(বিরবির করে)
মেঘের অত্যাচারে রোদ উঠে সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়লো!রোদের খুব চিন্তা হচ্ছে আলোকে নিয়ে কারন এসব এখনই আটকাতে হবে তা না হলে পরে হিতে বিপরীত না হয়ে যায়!রোদ কপালের উপরে একহাত দিয়ে চিন্তা করছে! রোদ একবার আলোর দিকে তাকিয়ে দেখলো কি নিষ্পাপ একটা মুখ!রোদ আবার চোখ বন্ধ করে নিলো আর ঘুমে তলিয়ে গেল…!!
পরেরদিন সকালে….!!

আজকে আদিলের বিয়ে!সকাল থেকেই শুরু হয়েছে হইচই! মেঘ ঘুমিয়ে ছিলো হঠাৎ হুড়মুড় করে উঠে বাথরুমের দিকে দৌড় দিলো!মেঘের এভাবে যাওয়ার জন্য রোদের আর আলোর ঘুম ভেঙে গেল!আলো ঘুম ঘুম চোখে একবার তাকিয়ে আবার পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো!মেঘ আবার হুড়মুড় করে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে রোদের সামনে এসে লাফাতো শুরু করলো!রোদ চোখ খুলে ঘুম ঘুম কন্ঠে মেঘকে বললো…!!
রোদঃ কি হয়েছে? এভাবে বানরের মত লাফালাফি করছিস কেন?
মেঘঃ দাভাই আমি ওয়াশরুমে যাবো…!!!!!!!
রোদঃ উফফ!ওয়াশরুমে যাবি তো যা! আমার এখানে এসে এমন করছি কেন??
মেঘঃ দাভাই আমি প্যান্টের হুকটা খুলতে পারছি না!তারাতারি খুলে দাও আমার জরুরী বিভাগে যেতে হবে।উরি বাবা রে তারাতারি…!!
রোদঃ তোকে নিয়ে আমি আর পারিনা রে মেঘ!তোর এত জ্বালা বিশ্বাস কর ভাই! তোকে দেখে আমার আর বিয়ের পর আর বাচ্চা নেওয়ার শখ নাই। (খুলে দিয়ে)
মেঘঃওকে!দাভাই তুমিও আমার সাথে এখন ওয়াশরুমে চলো!কালকে ভূতের গল্প শুনে এখন আমার ভয় লাগছে।
রোদঃ আমি তোর সাথে ওয়াশরুমে যাবো!তুই এক্ষুনি আমার সামনে থেকে যা! না হলে তোরে সত্যি একটা কিক মারবো??(রেগে গিয়ে)
মেঘঃ না না তোমাকে আমার সাথে ওয়াশরুমে যেতে হবে না!তুমি ওয়াশরুমের দরজার কাছে দাড়িয়ে থাকবে।
মেঘ রোদকে টেনে ওয়াশরুমে দরজায় দাঁড় করিয়ে রাখলো আর মেঘ ওয়াশরুমে চলে গেল!একটু পর মেঘ ওয়াশরুমের ভেতর থেকে বলছে….
মেঘঃ দাভাই!দাভাই শুনে পাচ্ছো
রোদঃ হুমমম!
১মিঃ পর..!!
মেঘঃ দাভাই!দাভাই আছো…!!
রোদঃ…
মেঘঃ দাভাই!ওহহ দাভাই কথা বলছো না কেন?দাভাই…(উত্তেজিত হয়ে)
রোদঃ আছি রে বাবা!
মেঘঃ আচ্ছা…!!

আলো বেডে শুয়ে শুয়ে দুই ভাইয়ের কান্ড দেখছে আর হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে! বেচারা রোদ রাতেও ঘুমাতে পারেনি আর এখন মেঘের জন্য দাড়িয়ে থাকতে হচ্ছে! রোদ দেওয়ালে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে চোখটা বন্ধ করতেই একটু পর পর মেঘ ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চার মত ভ্য ভ্য করে উঠছে।এদিকে আলোর হাসি দেখে রোদের শরীর জ্বলে যাচ্ছে! রোদ আলোর কাছে গিয়ে একটানে রোদ আলো তুলে বসায়।আলো হা করো রোদের দিকে তাকিয়ে থাকে…!!
রোদ আবার ওর ঠোঁটের দুষ্টু হাসির রেখা টেনে আলোর কোমর জড়িয়ে ধরে আলো কোলে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়ে…!!

#এলোকেশী_কন্যা২__
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_27

রোদ আবার ওর ঠোঁটের দুষ্টু হাসির রেখা টেনে আলোর কোমর জড়িয়ে ধরে আলো কোলে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়ে…!
এদিকে মেঘ দাভাই! দাভাই! করে চিৎকুর দিচ্ছে!রোদের সাড়াশব্দ না পেয়ে মেঘ তাড়াতাড়ি কাজ সেরে দৌড়ে বাইরে আসে!তারপর আলোকে দেখে লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে এক দৌড়ে রুমের বাইরে চলে যায়!মেঘের কান্ড দেখে আলো মুচকি হাসে। রোদ সত্যি সত্যি ঘুমিয়ে পড়ছে আলোর কোলে!রোদের আম্মু আলোকে ডাকতে এসে দেখে আলোর কোলে রোদ ঘুমাচ্ছে! রোদের আম্মুকে দেখে আলো লজ্জায় কি করবে বুঝতে না পেরে মাথা নিচু করে বসে রইলো!আলো উঠতে গেলে রোদের আম্মু ফিসফিস করে বলে…!!
রোদের আম্মুঃ আমার ছেলেটার ঘুমটা নষ্ট করলে তোর খবর আছে!একদম নড়াচড়া করবি না বলে দিলাম।
আলোঃ এখন নিচে না গেলে সবাই কি ভাববে আম্মু?
রোদের আম্মুঃ আমি সেটা বুঝে নিবো!তুই চুপচাপ
বসে থাক!আমি দরজাটা হালকা করে লাগিয়ে যাচ্ছি।
আলোঃ আম্মু আব্বু কি এসেছে? আজকে তো আসার কথা ছিলো আব্বুর।
রোদের আম্মুঃ হুমম ভোরে এসেছে!এখন ঘুমাচ্ছে
রোদের আম্মুঃ তোর খাবারটা এখনই আমি পাঠিয়ে দিচ্ছি। তুই খেয়ে নে..!!
আলোঃ না না আম্মু! আমি পরে খাবো।
রোদের আম্মুঃ আচ্ছা..!!

রোদের আম্মু চলে গেল!আলো মুচকি হেসে রোদের চুলে হাত বুলাচ্ছে আর মুচকি মুচকি হাসছে!রোদ একবার নড়ে উঠলো তারপর আরো শক্ত করে আলোকে জড়িয়ে ধরে আবার ঘুমের দেশে পাড়ি দিলো!এভাবে বসে থাকতে থাকতে আলোও ঘুমিয়ে পড়লো!প্রায় ২ ঘন্টা পর কোথা থেকে এসে মেঘ চিৎকার করে রোদের গায়ের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়লো!রোদ হুড়োমুড়িয়ে উঠে বসলো!হঠাৎ করে বেডের উপর দুম করে পড়াতে আলোরও ঘুম ভেঙ্গে গেল।রোদ উঠে দাড়িয়ে মেঘের কান টেনে ধরলো…..!!
মেঘঃআহ্!আহ্! ওহ মা!উরি মা গো মা।আহ্ দাভাই আমি ব্যাথা পাচ্ছি..!!
রোদঃ আজকে আমি তোর কানটাই ছিঁড়ে দিবো!ফাজিল ছেলে একটা।সব সময় দুষ্টুমি..!!
আলোঃ ওর লাগছে তো কানে!ওকে ছেড়ে দিন(মেঘকে রোদের হাত থেকে উদ্ধার করে)
মেঘঃ হুমম বউমনি ঠিকই বলছে!আমি কানে ব্যাথা পাচ্ছি…!!
রোদঃ ঘুমন্ত মানুষের শরীরে কেউ এভাবে লাফ মারে!যদি আমি মারা যেতাম।
মেঘঃ যা বাবা! কেউ কারো গায়ে লাফ দিলে মারা যায়। এটা তো আমি আজকেই শুনলাম।(মাথা চুলকে)
আলোঃমেঘ কেউ ঘুমিয়ে থাকলে এমন দুষ্টুমি করতে হয় না!এমন দুষ্টুমির কারনে যাদের হার্ট দূর্বল তারা হার্ট এ্যাটাক করে মারা যেতেও পারে!

মেঘঃ আচ্ছা সরি দাভাই!আর এমন হবে।
মেঘ রোদের হাত টেনে জোর করে বেডের উপর বসালো!তারপর মেঘ রোদের কোলের উপর দুম করে বসে পড়লো!মেঘ যাতে পড়ে না যায় তাই রোদ ওর এক হাত দিয়ে মেঘকে ধরে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো!মেঘ ওর দুই কান ধরে রোদকে সরি বললো…!!
মেঘঃ দাভাই!ওহহ দাভাই!সরি(কান ধরে)
রোদঃ….(অন্য দিকে তাকিয়ে)
মেঘঃ এতগুলো সরি দাভাই!আর এমন করবো প্রমিস
রোদঃ….
মেঘঃ বউমনি দাভাইকে বলো না আমি সত্যি সরি।
রোদঃ……
মেঘঃদাভাই তোমার নাক ছুঁয়ে বলছি আর করবো না।
রোদঃ…
মেঘ ওর কান ছেড়ে রোদের দুই গাল ধরে রোদের গালে এত এত আদর দিলো!তারপরেও রোদ অন্য দিকে তাকিয়ে আছে!মেঘ মন খারাপ করে মাথা নিচু করে ফেলে! তারপর আলো মেঘকে ডাকে!আর আলো কি কি যেন বললো মেঘকে ! মেঘ রোদকে বেডে ধাক্কা দিলো আর রোদ বেডে শুয়ে পড়লো!মেঘ আলো হাত ধরে বেডের আরেক পাশে নিয়ে গেল!তারপর রোদের এক হাতের আঙ্গুল গুলো আরেক হাতের আঙ্গুলের মাঝে ঢুকিয়ে আলোকে কানে কানে বললো শক্ত করে ধরে রাখতে!আলো মেঘের কথা মত রোদের হাত শক্ত করে ধরে রাখলো!রোদ কিছু বুঝে উঠার আগেই মেঘ রোদকে কাতুকুতু দিতে শুরু করলো!আর রোদ হো হো হাসতে শুরু করলো!কারন রোদের প্রচুর কাতুকুতু…. একদিকে আলো শক্ত করে হাত ধরে থাকার রোদ হাত ছড়াতে পারছে না! আর ওদিকে মেঘ রোদকে কাতুকুতু দিয়েই যাচ্ছে!পুরো বেড জুড়ে দুই ভাই দুষ্টুমি চালাচ্ছে!
রোদ হ্যাচকা টাকে আলোকেও বেডে নিয়ে মেঘ আর আলোকে কাতুকুতু দিতে শুরু করলো!আর আলো আর মেঘ খিলখিল করে হাসতে শুরু করলো।তিনজন মিলে বেডটার পুরো নাজেহাল অবস্থা করে ফেলছে!তিনজনই এখন বেডে শুয়ে এখনো হো হো করে হাসছে……!!

রোদ, আলো ফ্রেশ হয়ে নিচে আসে আর সকালের খাবার খেয়ে নেয়!আলো, রোদ, মেঘ উঠানে দাড়িয়ে দেখে সবাই আড্ডা দিচ্ছে যে যার মত!ফুল সাউন্ডে গান বাজছে!বাড়িতে মানুষে গিজগিজ করছে।রোদ আলো আর মেঘকে সামনে রাস্তায় হাঁটতে শুরু করে!গ্রামটা অনেক সুন্দর! রোদ আলো আর মেঘটা এটা ওটা দেখাচ্ছে! রোদ আলোকে দেখাচ্ছে কোনটা কোনটা ওর মামাদের জমি!এর মধ্যে মেঘ হাওয়া হয়ে গেছে কেউ খেয়াল করেনি!রোদ ধানের জমির পাশ দিয়ে হাঁটছে আইল ধরে!দুইপাশেই কেবল কাদা মাটিতে ধানের চারা লাগিয়েছে….!!!
রোদ সামনে আর আলো রোদের পেছন পেছন আইল দরে ধীর পায়ে হাঁটছে!পাশে আম বাগান থেকে মেঘ কচি আমগুলো ইচ্ছেমত ছিঁড়ে গেন্জীতে নিয়েছে! বাগানের মালিককে দেখে মেঘ দিলো দৌড়!মেঘ দৌড়ে আলোর কাছে গিয়ে আলোকে ধরতে যায় আর আইলের উপরে একদম চিকন রাস্তা তাই আর আলো নিজেকে সামলাতে না পেরে আলো রোদের উপর পড়ে!হুট করে এমন করা রোদও নিজেকে সামলাতে না পেরে তিনজন মিলে কাদা মাটিতে ঠাস করে পড়ে গেল!রোদের এখন কি বলার উচিত রোদ এটা বুঝতে পারছে না!ওদিকে জমির মালিক দূর থেকে দেখছে তার সদ্য লাগানো ধানের চারার উপর তিনজন আরামসে বসে আছে!জমির মালিক চিৎকুর দিতে দিতে ওদের দিকে তেড়ে আসছে।
মেঘঃদাভাই পালাও!ওই আংকেল ধরতে পারলে আমার পেছন পার্টে ট্যাটু করে দিবে।
রোদঃ পেছন থেকে ধাক্কা দিলো কে?(দাঁতে দাঁত চেপে)
মেঘঃ আমি…!! (মাথা নিচু করে)
আলোঃ মেঘ উঠো তাড়াতাড়ি…!!

রোদঃ মন চাচ্ছে তোদের দুটোকেই মেরে প্রতিবন্ধী করে বেডে ফেলে রাখতে।(রাগী চোখে তাকিয়ে)
মেঘঃ ওকে পরে করো!দাভাই আমার সব আম পড়ে গেছে একটু তারাতারি করে তুলে দাও না।
আলোঃমেঘবাবু রাখো তোমার আম!জানে বাঁচলে জীবনে অনেক আম খেতে পারবে।মেঘ দৌড় দাও
রোদ পেছনে তাকিয়ে দেখে সত্যি সত্যি ওই লোকটা একটা লাঠি হাতে তেড়ে আসছে!রোদ আলো আর মেঘের পুরো শরীরে কাদা লেগে একাকার অবস্থা। রোদ আশপাশে তাকিয়ে উঠে ভৌ দৌড় দিলো। রোদ জীবনেও কল্পনা করেনি কারো ভয়ে এভাবে দৌড় দিবে তারপরেও আজকে পরিস্থিতির স্বীকার আর কি।রোদের দেখে আলোও দৌড় এবার মেঘ ওর আম গুলোর মায়া ত্যাগ করে মেঘকে উঠে দাঁড়াতে হলো!রোদ জানে রোদ না উঠলে আলো মেঘও বসে বসে কাহিনী শুরু করবে! মেঘ একবার পেছনে তাকিয়ে দেখে লোকটি কাছে চলে এসেছে! তাই মেঘ চিৎকুর দিয়া বললো…!!
মেঘঃউরি বাবা!দাভাই দাঁড়াও…!!! আমারে নিয়া যাও
এবার মেঘকে পায় কে! তিনজনে মিলে চোখ মুখ খিঁচে দৌড় দিসে আর জমির মালিক পেছন থেকে চিৎকুর করতেই আছে!রোদ একটা গাছের সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে হাফাচ্ছে মেঘ মাটিতে দুই পা ছড়িয়ে বসে পড়ছে!আর আলো হো হো করে হাসছে এছাড়া কি করা উচিত আলোর আপাতত মাথায় আসছে না।তিনজনে কাদায় মাখামাখি…!!
রোদঃ ছিঃ! ইয়াক। পুরো শরীরে কাদায় মাখামাখি…!
মেঘঃ তোমাকে দেখতে ভালো দেখা যাচ্ছে। হা হা হা
রোদঃ তুই আমার সাথে কথা বলবি না!আজকে সকাল থেকে তুই আমাকে অনেক প্যারা দিয়েছিস।
মেঘঃ কত মিনিট কথা বলবো না বলে দাও..!!
রোদঃ৫ ঘন্টা তুই আমার সাথে কথা বলবি না।
মেঘঃএকটু কমানো যায় না।
রোদঃনা!আর একটা কথা বললে আরো বাড়িয়ে দিবো।
আলোঃ চলুন এবার আমরা বাসায় যায়।সবাই
আমাদের খুঁজবে তো।

এলোকেশী কন্যা  সিজন ২ পর্ব ২২+২৩+২৪

রোদ পেছন পেছন হাটছে আর আলো আর মেঘ গল্প করছে আর খিলখিল করে হাসছে!রোদ বুঝতে পারে না এরা এত কথা বলে কিভাবে?দুইজন একসাথে থাকলে আর কিছু লাগবে না এদের।সারাদিন কানের কাছে পকপক করতেই থাকবে।রোদ বিরক্ত হয়ে জোরে জোরে হেটে ওদের আগে বাসায় ঢুকে পড়ে!সবাই ওদের তিনজনকে দেখে হা করে তাকিয়ে আছে!রোদের আম্মু রোদের দিকে তাকিয়ে বললো…!!
রোদের আম্মুঃ রোদ তোর এই বয়সে এসে এভাবে কাদামাটিতে গড়াগড়ি খেতে ইচ্ছে হলো.??(ভ্রু কুচকে)
রোদঃ তোমার ছোট ছেলে যেখানে থাকবে সেখানে কি সুষ্ঠুভাবে কিছু হবে।(রাগী চোখে মেঘের দিকে তাকিয়ে)
রোদের আব্বুঃ মেঘ তুমি কি করছো??
মেঘঃ আমি কিছু করিনি আব্বু!আমি যে কিছু করছি দাভাইকে বলো তার প্রমাণ দেখাতে।দেখবে প্রমাণ দিতে পারবে না। দাভাই উল্টে আমাকে আর বউমনিকে ধানের জমিতে ধাক্কা দিসে।
রোদঃ আমি কখন তোদের ধাক্কা দিলাম??(অবাক হয়ে)
মেঘঃ বউমনি বলো! দাভাই আমাদের ধাক্কা দিসে তাই না?আমি আর বউমনি আম খেতে চেয়েছিলাম।তাই দাভাই আমাদের ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিসে।

মেঘের কথা শুনে আলো টাসকি খেয়ে চুপ করে দাড়িয়ে আছে!রোদ মেঘের কান টেনে ধরলো আর মেঘ চিৎকুর করতে শুরু করলো।তারপর দুই ভাইয়ের মারামারি শেষ করা শেষ হলে তিনজন মিলে রুমে চলে গেল।রোদের আব্বু বললো একেবারের রেডি হয়ে নিতে কারন আর দুই ঘন্টা পর সবাই আদিলের শশুড়বাড়ি যাওয়ার জন্য বের হবে!
রোদ ওর রুমে গিয়ে দেখে অনেক মেয়ে বসে আছে!রোদকে দেখে সব ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।রোদ বিরক্ত হয়ে বের হয়ে গেল রুম থেকে!তারপর ড্রয়িং রুমে গিয়ে দেখে দীদান,বড় মামা,রোদের আব্বু, রোদের আম্মু বসে আছে।রোদ ওর আব্বু কাছে গিয়ে বললো…!!
রোদঃ আব্বু গাড়ির চাবিটা দাও তো।
আব্বুঃ ফ্রেশ না হয়ে কোথায় যাবে এখন আবার??
রোদঃ আমি বাসায় যাবো! এখন মানে এখনই..!!

এলোকেশী কন্যা  সিজন ২ পর্ব ২৮+২৯+৩০