এলোকেশী কন্যা সিজন ২ পর্ব ২২+২৩+২৪

এলোকেশী কন্যা সিজন ২ পর্ব ২২+২৩+২৪
লেখনীতে:- নূরজাহান আক্তার (আলো)

রোদঃ তিলোকন্যা তোমাকে বোকা বানাতে পারলে যে আমার কি ভালো লাগে তা বলে বোঝাতে পারবো না।তোমার নরম হাতে পরম যত্নে আমার চুল টেনে দিচ্ছো কি যে ভালো লাগছে আপাতত সেটা ভাষার প্রকাশ করতে পারছিনা আমি!এত যত্নে চুল টেনে দিচ্ছো যে আমার এখন ঘুমের দেশে পাড়ি জমাতে মন চাচ্ছে আমার
তিলো কন্যা….!!
রোদ ঘুমাচ্ছে আর আলো পরম যত্নে মুখে প্রশান্তির হাসি ঝুলিয়ে রোদের চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আলো রোদকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে আর হাসছে।আলো খুব আস্তে করে ওর হিজাবটা খুলে নিলো কারন চুলটা ভেজা থাকায় খোঁপা করছে আর ভেজা চুলে হিজাব ভিজে যাচ্ছে! আলো হিজাব খুলে চুল ছেড়ে দিল! মেঘ গুটি গুটি পায়ে উঠে রোদের আনা খাবারের প্যাকেট গুলো হাতাড়াতে শুরু করলো!মেঘ একটা প্যাকেট খুলে দেখলো চিকেন স্যান্ডুইচ আছে তাতে!মেঘ খাবারের প্যাকেট নিয়ে আলোর সামনে দাঁড়ালো! আলো মেঘকে ইশারায় বলে খেয়ে নিতে কিন্তু মেঘ আগে স্যান্ডুইচ বের করে আলোর মুখের সামনে ধরে!আর ইশারায় বলে তারাতারি খেয়ে নিতে!আলো এক কামড় নিলে মেঘও সেইটা থেকেই এক কামড় দেই!তারপর দুজন মিলে স্যান্ডুইচ শেষ করে!তারপর দুইজনে খেয়ে পানি খেয়ে বসে রইলো…..মেঘ পাশে দাড়িয়ে আলোর চুল হাতে পেঁচাচ্ছে আর আলোর কানে কানে বলছে….!!

মেঘঃ বউমনি দাভাইকে কাতুকুতু দিবো।(ফিসফিস করে)
আলোঃ না না একমই না(ফিসফিস করে)
মেঘঃ এত ঘুমিয়ে কি হবে শুনি??
আলোঃ এখন তোমার দাভাইয়ের ঘুম ভাঙালে আমাদের দুজনকে মেরে গাল লাল করে দিবে।
মেঘঃ আমি কাতুকুতু দিয়ে পাশে লুকিয়ে যাবো আর তুমি ঘুমানোর মত অভিনয় করবা।
আলোঃ না মেঘবাবু!আমরা ধরে পড়ে যাবো।
মেঘ আলোর কথা না শুনে গুটি গুটি পায়ে রোদের পায়ের কাছে গেল! তারপর রোদের পায়ের তালুতে সুড়সুড়ি দিচ্ছে।রোদ একবার নড়ে চড়ে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়লো আর চোখ বন্ধ করেই বললো…
রোদঃ মেঘ আমার ঘুমের ডিস্টার্ব করবি না!আবার সেইম কাজ করলে তোরে কিক দিয়ে ট্রেন থেকে ফেলে দিবো…..(চোখ বন্ধ করে)
আলো রোদের কথা শুনে চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর ভান করলো আর মেঘ আলোর দেখে দাড়িয়ে দাড়িয়ে ঘুমানোর ভান করলো!তারপর আর কি মেঘ চোখ বন্ধ করে হেঁটে হেঁটে পাশের বেডে শুয়ে পড়লো আর গেম খেলাতে মনযোগ দিলো!আলোও একটা সময় তাকিয়ে থাকতে থাকতে নিন্দ্রার কোলে ঢলে পড়ে!মেঘ খেলতে খেলতে আলো দিকে তাকিয়ে দেখে আলো ঘুমিয়ে গেছে! তাই মেঘ গুটি গুটি পায়ে হেটে কেবিনের বাইরে চলে গেল…!!
রোদের নাকে সুড়সুড় লাগার কারনে রোদ বিরক্ত হয়ে ভ্রু কুচকে তাকালো!আর তাকিয়ে রোদের চোখ বড় বড় হয়ে গেল!আলো ঘুমের ঘোরেই রোদের দিকে হেলে পড়ে যাচ্ছিলো!রোদ তারাতরি আলোকে ধরে ফেলে!আলোর চুল ছাড়া তাই সব চুল আলোর মুখের সামনে এসে পড়ছে!রোদ অপলক চোখে তাকিয়ে বিশ্বজয় করা একটা হাসি দিলো!রোদ উঠে আলো বেডে শুইয়ে দেয় আর রোদ মনে মনে বলে উঠে….

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

রোদঃ আমি আমার স্বপ্নের এলোকেশীকে পেয়ে গেছি!আমার এলোকেশী এখন আমার কাছেই আছে!সেই এলোমেলো চুলের এই নিষ্পাপ সিগ্ধ চেহারা! এতদিন আমাকে ধরা না দিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলে কেন তিলোকন্যা? এবার আর কোথাও পালাতে পারবে না।এতদিন আমার স্বপ্নে এসে ধরা না দিয়েও আমাকে খুব জ্বালিয়েছো দুষ্টু মেয়ে! এবার আমি তোমাকে স্বঙ্গানে কেমন জ্বালায় দেখো….(মনে মনে)
রোদ আলোকে বেডে শুইয়ে দিলো!রোদ মেঘকে কেবিনে দেখতে পেলো না তাই কেবিনের বাইরে গেল মেঘকে খুঁজতে! আলো শান্তির একটা ঘুম দিচ্ছে! রোদ কেবিনের দরজাটা ভালো করে আটকে সামনে এগোতেই দেখে মেঘ আর একটা বাচ্চা মেয়ে ট্রেনের মেঝেতে বসেই গল্প করছে!মেঘ কি কি বলছে আর বাচ্চা মেয়েটি খিলখিল করে হাসছে!রোদ ওদের সামনে গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে বাচ্চা মেয়েটির গাল টেনে দিলো…!!
রোদঃ এই বাবু তোমার নাম কি??(গাল টেনে)
মেয়েটিঃ আমাল নাম ইত্তে
রোদঃ এটা আবার কেমন নাম??
মেঘঃ দাভাই ওর নাম ইচ্ছে!ও খুব কিউট তাই না দাভাই..!!
রোদঃ মেঘ চল একটা কাজ করি!আমাদের তো বোন নাই ইচ্ছে কে আমাদের বোন বানিয়ে নেই..!!
মেঘঃনাআআআআআ!এত কষ্ট করে ওরে পটালাম আর তুমি ওরে বোন বানানোর কথা বলছো দাভাই।আমি ওকে তোমার ভাবি বানাবো…
রোদঃ গাধা ছোট ভাইয়ের বউ কখনও বড় ভাইয়ের ভাবি হয় নাকি রে ফাজিল??(মেঘের মাথায় চাট্টি মেরে)
মেঘঃহওয়ালেই হয়! তুমি একদম চুপ থাকো! তা না হলে বউমনির কাছে তোমাকে কেস খাওয়াবো বলে দিলাম।
রোদঃ এই ইচ্ছে তুমি আমার ভাবি হবে..!!
ইচ্ছেঃ (লজ্জা পাচ্ছে)

রোদঃ হা হা হা ওরে বাবা এতে দেখি লজ্জা পাচ্ছে।
মেঘঃ দাভাই তুমি কিছু একটা করো না।
রোদঃ আমি আবার কি করবো?(ভ্রু কুচকে)
মেঘঃ আমার আর ইচ্ছের বিয়ে দিয়ে দাও!
রোদঃ আমি নিজেই তো এখনো বিয়ে করতে পারলাম না! আর কোন সুখে আমি এখন তোর বিয়ের কথা ভাববো শুনি…!!
মেঘঃ বউমনি আছে তো তোমার জন্য…
রোদঃ ইচ্ছে কে কি পরীর কথা বলে দিবো (ফিসফিস করে)
মেঘঃ না দাভাই!এই ইচ্ছে তুমি এখন যাও।আমরা পরে আবার বিয়ে বিয়ে খেলবো কেমন।
ইচ্ছেঃআল এতটু খেনি(খেলি)না মেদ(মেঘ)
মেঘঃ না আর একটুও খেলবো না।তুমি যাও আর যাওয়ার আগে আমাকে চকলেট দিয়ে যাও।
ইচ্ছেঃ না তোমাকে তককেট দিবো না!এতা এথন আমাল..!!
মেঘ চকলেট নিয়ে নিবে ভেবে ইচ্ছে মুখের মধ্যে চকলেট ঢুকিয়ে দেই!মেঘ রেগে গিয়ে ইচ্ছের একটা ঝুঁটি খুলে দেয় আর ইচ্ছের গালে জোরে একটা চিমটি দিয়ে আলোর কেবিনের দিকে দৌড় দেয়।আর ইচ্ছে গগন ফাটানো চিৎকুর দিয়া উঠে!রোদ হাবলার মত হা করে তাকিয়ে আছে!ফাজিল রোদের জন্য ওরা বর বউ খেলাটাও শান্তি মত খেলতেও পারলো না।রোদ ইচ্ছেকে কোলে নিয়ে থামানো চেষ্টা করছে বাট ইচ্ছে কিছুতেই থামছেনা এই মেয়ে…!!তখন ইচ্ছের বাবা মা ইচ্ছেকে কোলে নিয়ে চলে যায়।রোদ কেবিনে গিয়ে দেখে আলো আর মেঘ শুয়ে গল্প করছে!রোদ ওর আম্মুর কেবিনে গিয়ে উনাকে ঘুম থেকে তুলে এই কেবিনে আনে।তারপর চারজন মিলে খেয়ে নেয়…..!!

রাত ১১ টার দিকে ওর সুবর্ণপুর পৌঁছায়!রোদের মামা নিজে এসেছে ওদের স্টেশন থেকে নিতে।তারপর সবাই রোদের মামার বাসায় যাওয়া জন্য গাড়িতে উঠে বসে! গ্রামের মধ্যে তাদের বাসা তবে রোদের নানু একটা সময় ছিলো জমিদার!রোদের মামারা জমিদার বাড়ির পাশেই আবার নতুন করে ফ্ল্যাট বানিয়েছে তারা সেখানেই থাকে!গ্রামের রাস্তাটায় লাইট না থাকায় ঘুটঘুটে অন্ধকার হয়ে আছে গা ছমছম করা একটা পরিবে মনে হচ্ছে! মেঘ তো রোদের বুকের সাথে মিশে চোখ বন্ধ করে আছে!ওরা বড় মামার বাসায় পৌঁছে গাড়ি থেকে নেমে বাসায় ঢুকে! তারপর সবাই আলোকে দেখে জিজ্ঞাসা করে এটা কে?রোদের আম্মু সরাসরি বলে দেয় এটা রোদের বউ!
রোদের আম্মুঃ এটা আমার রোদের বউ!ওদের বিয়ে ঠিক করা আছে শুধু অনুষ্ঠান করলেই হবে..!!
বড় মামীঃ বেশ মিষ্টি মেয়ে তো!আমাদের রোদের সাথে খুব মানিয়েছে।
রোদের আম্মুঃ বড় ভাবি আম্মা কই
বড় মামীঃ মা ঘুমিয়ে পড়ছে!আমরাই এত রাত পযন্ত মাকে জাগতে দেয় নি।
মেজ মামাঃ মামনী তোমার নাম কি??(আলোর কাছে এসে)
আলোঃআসসালামু আলাইকুম!জি আমার নাম
আতকিয়া ইবনাত আলো!
আলো সবাইকে সালাম দিয়েই আর সবার সাথে কথা বলে!তারপর ওরা রুমে গিয়ে যে যার মত ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করে নেয়! আর কিছুসময় গল্প করে যে যার মত ঘুমানোর জন্য রুমে চলে যায়……!!
আলো আর মেঘ এক রুমে আর রোদ ওদের পাশের রুমে!আলো যে রুমে আছে সেটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে!রুমটা খুব সুন্দর করে সাজানো। মেঘ বকবক করছে আর আলো বসে বসে ওর চুলে চিরুনী করছে আর মেঘের সাথে কথা বলছে!মেঘ ফট করে বলে উঠলো….!!

মেঘঃ বউমনি তুমি দাভাইকে তারাতারি বিয়ে করে নাও
তে..!!
আলোঃ কেন??
মেঘঃ দাভাইয়ের বিয়ে না হলে আমার বিয়েও দাভাই হতে দিবে না
আলোঃ হা হা হা! তুমি এখন বিয়ে করবে নাকি মেঘবাবু।
মেঘঃ হুমম করবো তো!আমি তো এখন বড় হয়ে গেছি বউমনি (বেডের উপর দাড়িয়ে কোমরে হাত রেখে)
আলোঃভাল ছেলেরা কখনো মুখে বলে না বিয়ে করবে বিয়ে করবো!আগে পড়াশোনা করতে হবে তারপর নিজের পায়ে দাড়াতে হবে।তারপর বিয়ে…!!
মেঘঃ আমি তো নিজের পায়েই দাড়িয়ে আছে বউমনি..!!
আলোঃ হা হা হা!এখন বুঝবে না আর একটু বড় হও তখন বুঝবে। নিজের পায়ে দাঁড়ানো কাকে বলে…!!
মেঘ আর আলো গল্প করছে হাসাহাসি করছে!বাট সবার চোখের আড়ালে কারো তীক্ষ্ণ নজর আলোর দিকে পড়েছে!আলো এখানে বেড়াতে তো আসলো! বাট এখানে আসার পর সব ঠিক থাকবে তো!এখানে আসাটা আলোর জন্য আবার কাল হয়ে না দাড়ায়…..!!!

#এলোকেশী_কন্যা২__
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_23

_______মেঘ আর আলো গল্প করছে হাসাহাসি করছে!বাট সবার চোখের আড়ালে কারো তীক্ষ্ণ নজর আলোর দিকে পড়েছে!আলো এখানে বেড়াতে তো আসলো! বাট এখানে আসার পর সব ঠিক থাকবে তো!এখানে আসাটা আলোর জন্য আবার কাল হয়ে না দাড়ায়…..!!!
পরেরদিন সকালে______!!
ঘুম ভেরে আলোর ঘুম ভেঙে যায়!আলো পাশে তাকিয়ে দেখে মেঘবাবু কোলবালি জড়িয়ে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে আর মাঝে মাঝে মিটিমিটি হাসছে!হয়তো স্বপ্নেও কোন দুষ্টুমি করছে!আলো ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে মেঘের পায়ে কাতুকুতু দিয়ে মেঘকে ঘুম থেকে টেনে তুলে!তারপর মেঘকে জোর করে ফ্রেশ করিয়ে আলো আর মেঘ ছাদে যায়!কারন সকালের সৌন্দর্য মন ভাল করার একটা চাবিকাঠি। আলো ছাদে এসে দুই হাত মেলে দিয়ে প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নেয়!আলোর দেখে মেঘেও দুইহাত বাড়িয়ে প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নিতে থাকে!
আলো খালি পায়ে হাটছে আর চারপাশে চোখ বুলাচ্ছে!আর মেঘ টবে থাকা ফুলের উপর প্রজাপতি বসেছে ওটাকে ধরার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে। আলো ঘুরে ঘুরে দেখে ছাদের পাশের বাগানটাই সব ধরনের ফলের গাছ আছে আর ঝোপঝাড়ে ভরা!কিন্তু একদূরে চোখ যেতেই সবুঝ আর সবুজের সমারোহ! ফসলি জমিগুলো বিভিন্ন ধরনের আবাদ লাগানো!দুর থেকে জমিগুলো বেশ ভালো লাগছে! মাঝে মাঝে বাতাস এসে ধানের জমিগুলোকে ঢেউ খেলিয়ে চলে যাচ্ছে।

আলো হাটতে হাঁটতে ছাদের কিনারায় নিম গাছের নিচে এসে দাঁড়াতেই আলোর শরীরে ঝাঁকুনি দিয়ে ওঠে আর আলো থম মেরে দাড়িয়ে যায়।আলো যেন নড়াচড়া করতেও ভুলে গেছে।একটুপর রোদও ছাদে আসে আর এসে আড়মোড়া ভাঙ্গতে শুরু করলো!আলো একবার আড়চোখে রোদকে দেখে নিলো!কালো টাওজার আর সাদা একটা গেন্জী পড়া আর মহারাজের চুল গুলো এলোমেলো হয়ে কপালে পড়ে আছে।রোদ দাড়িয়ে দাড়িয়ে হাত -পা নাড়িয়ে ব্যায়াম করছে! মেঘ এসে রোদের কাছে বায়না ধরলো মেঘকে নিয়ে রোদ যাতে এখন বুক ডাউট দেয়!মেঘ ঘ্যান ঘ্যান করতেই আছে তাই রোদ রাজি হলো….!!
রোদ মেঘকে পিঠের উপর নিয়ে বুক ডাউন করা শুরু করলো আর মেঘ রোদকে আকড়ে ধরে আছে যাতে পড়ে না যায়!মেঘের কাছে বুকডাউনটাকে একটা খেলা মনে হয় আর মেঘ খুব মজাও পায়!মেঘ যখন আধো আধো বুলিতে কথা বলা শিখছে তখন থেকে রোদ মেঘকে পিঠের উপর নিয়ে বুক ডাউন দিতো!মেঘ তখন বেশিছোট থাকায় পড়েও গিয়েছিলো! পরে রোদ মেঘকে বেল্ট দিয়ে বেধে তারপর বুকডাউন করতো তখন মেঘ খিলখিল করে হাসতো!আর মেঘের হাসি দেখে রোদও হাসতো…..!!!এখন মেঘ খিলখিল করে হাসছে আর রোদকে বললো…!!

মেঘঃ আর দশবার দাভাই প্লিজ! প্লিজ!
রোদঃ ২০ বার হয়ে গেছে তো এখন আর না..!!
মেঘঃ আর ১০ দশবার দাভাই! বউমনি দাভাইকে বলো না আর দশবার করতে।
আলো দাড়িয়ে দাড়িয়ে দুইভাইয়ের কান্ড দেখছে!মেঘ যে খুব মজা পাচ্ছে সেটা ওর হাসি দেখা বোঝা যাচ্ছে! আলো মেঘ আর রোদের দিকে তাকিয়ে ভাবছে…!!
আলোঃমেঘ গুলুমলু এজন্য হাসলে দারুন দেখায় মন চাই গালদুটো টেনে দেই!যেমন দেখতে তেমন মিশুক আবার তেমনই দুষ্টু!এই বয়সেই এইরকম বড় হলে যে কত মেয়েকে ঘায়েল করবে তার হিসাব নেই।তবে বড় গাধাটাও কোন দিক দিয়ে কম না!না জানি জীবনে কতখান প্রেম করছে কে জানে?না এর দ্বারা প্রেম করা সম্ভব না কারন সবসময় তো উনার রাগ উঠেই থাকে আর এ করবে প্রেম।আমার তো মনে হয় এর বউ একদিন এর কাছে থাকবে কিনা সন্দেহ! না জানি এভাবে কতটা বিয়ে করবে।আমিও না বোকার মত কি যে ভাবছি!তবে আল্লাহ শুধু মেয়েদের কে দুইহাত ভরে সৌন্দর্য দান করে না! ছেলেদেরকেও করে।এর প্রমান রোদ আর মেঘ….!!
মেঘ আলোর দিকে তাকিয়ে চিৎকুর দিয়ে ফট করে বলে উঠলো….
মেঘঃ বউমনি তুমি এসো..!! দাভাইয়ের অনেক শক্তি দাভাই তোমাকেও নিতে পারবো।
আলোঃ না না আমি মহিষের পিঠে উঠবো না।তুমিই উঠো..!!
আলোর কথা শুনে রোদ ঘাড় ঘুরিয়ে ভ্রু কুচকে রোদ বামপাশে আলোর দিকে তাকায়! আলো রোদের তাকানো দেখে একদৌড়ে নিচে চলে যায়!সকালে বেলা রান্না ঘরে তোরজোড় চলছে রান্নার জন্য! এখানের সবাই জয়েন্ট ফ্যামিলি তাই সদস্যও বেশি তাই রান্নাও করতে হয় বেশি বেশি!আলো ওর রুমে ঢুকে মাথা চেপে ধরে বসে আছে!শরীরের মধ্যে কেমন জানি আনচান আনচান করছে!আলো একা রুমে না থেকে গুটি গুটি পায়ে নিচে গিয়ে রান্নাঘরের দিকে গেল!আলোকে দেখে সবাই খুশি হয়ে ওর সাথে কথা বলতে শুরু করলো!আলোও সবার তাড়াহুড়ো দেখে নিজেও কাজে হাত লাগালো!সবাই এত নিষেধ করার পরেও কোন শুনলো না……!!
রোদ আর মেঘ ফ্রেশ হয়ে নিচে এসে দীদানের সাথে কথা বলছে!রোদ ওর দীদানকে জড়িয়ে ধরে তখন ওর দীদান বলে ওঠে…!!
দীদানঃ কি বড়কর্তা এতদিন পর আমাকে মনে পড়লো বুঝি..

রোদঃ দীদান তুমি আমার একমাএ সুইটহার্ট তোমার কথা ভুলতে পারি।
দীদানঃ হা হা হা! কি গো ছোটকর্তা আমাকে তোমার মনে আছে..!!
মেঘঃ না দীদান তুমি আমার একমাএ বুড়ি বউ তোমার কথা ভুলতে পারি (মেঘের কথা শুনে সবাই হাসতে শুরু করলো)
দীদানঃ ছোটকর্তা একদম আমাকে বুড়ি বলবে না।
মেঘঃ তাহলে কি বলবো??
রোদঃহা হা হা মেঘ দীদান কেবল কিশোরী! তুই দীদানকে কিশোরী বলে ডাকতে পারিস।
রোদের কথা শুনে দীদান রোদের কান টেনে ধরলো!রান্নাঘর থেকে সবাই ওরে কান্ড দেখছে আর হাসছে!বড় মামার এক ছেলে এক মেয়ে আদিল(যার বিয়ে) আর মায়া, মেজো মামার দুই ছেলে এক মেয়ে সজল, সাদ আর নিহা।আর ছোট মামার এক মেয়ে কলি।বাড়িটাতে এখন সবাই মিলে হাসি ঠাট্টা মজা করে বাড়িটা মাতিয়ে রাখছে!বাচ্চারা রোদকে ঘিরে ধরেছে গল্প শুনবে সবাই তাই!রোদকে একজন একদিকে টানছে তো আরেকজন টানছে অন্যদিকে । রোদ পড়ছে বিপদে আর মেঘ তো চারপাশে বসার জায়গা পায়নি তাই গাল ফুলিয়ে আলোর কাছে চলে গেল।
মেঘ আলোর কাছে গিয়ে দেখলো আলোর চোখ লাল হয়ে আছে!আলো সবার আড়ালে ওর রুমে চলে যায়। মেঘ যে আলোকে দেখছে এটা আলো খেয়াল করে নি!আলো রুমে গিয়ে দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে যায় আর বমি করতে শুরু করে! সকালে বেলা খালি পেটে বমিও হচ্ছে না….!!আলো চোখ মুখে পানি দিয়ে বেডে এসে বসতেই মেঘ এসে দাঁড়ালো আলোর কাছে।আলো মেঘকে বলে উঠলো….
আলোঃ মিষ্টি খাবো আমি (মাথা নিচু করে)

মেঘঃ বউমনি আমারও খুধা লাগছে!আমিও খাবো তোমার সাথে! আচ্ছা তুমি দাড়াও আমি এক্ষুনি মিষ্টি আনছি।
মেঘ ফ্রিজ থেকে দুই প্যাকেট মিষ্টি এনে আলোর সামনে রাখলো!মিষ্টির প্যাকেট খুলে মেঘ একটা মিষ্টি নিতে যাবে তখন আলো মেঘের থেকে সব মিষ্টি কেড়ে দুইহাত দিয়ে গপাগপ খেতে শুরু করলো!আলোর খাওয়া দেখে মেঘ খিলখিল করে হাসতে হাসতে মেঝেতে লুটোপুটি খাচ্ছে….!! হঠাৎ সজল মেঘকে ডাকলো নিচে থেকে তাই মেঘ দৌড়ে নিচে চলে গেল।রোদ বাচ্চাদের সাথে অনেকটা সময় গল্প করছে ঠিকই বাট ওর চোখ আলোকে খুঁজছে! কোন রকম বাচ্চাদের থেকে মুক্ত হয়ে রোদ উপরে চলে গেল আলোকে খুঁজতে। রোদ গিয়ে দেখে আলো ঘুমাচ্ছে আর চারদিকে মিষ্টির প্যাকেট পড়ে আছে!পিঁপড়া উঠবে ভেবে রোদ প্যাকেট গুলো তুলে বারান্দা দিয়ে পাশের ঝোপ জঙ্গলের দিকে ছুড়ে মারলো…!!
আলো ঘুমাচ্ছে তাই রোদ আর ডাকলো না নিচে চলে গেল!সকালের খাবার এক সাথে খেতে বসেছে অনেক বড় ডায়নিং টেবিল! আগে বাড়ির সব ছেলেরা সহ বাচ্চারা খাবে তারপর মেয়েরা।রোদের মামীরা সবাইকে খাবার সার্ভ করে দিচ্ছে।রোদের আম্মু আলোকে ডেকে আনে! আদিল সিড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সবুজ কালার কামিজ আর লাল চুড়িদার আর লাল ওড়না পড়া মেয়ে সিড়ি দিয়ে নামছে।আদিল তখন ফট করে বলে উঠে….!!
আদিলঃ উনি কে?(আলোর দিকে তাকিয়ে)
বড় মামীঃ ও আলো! রোদের বউ…!!
আদিলঃরোদ তুই বিয়ে করলি কবে ভাই
রোদের আম্মুঃ করে নি তবে করবে খুব তারাতারি!
দীদানঃএই মেয়ে এইদিকে এসো(আলোকে ডেকে)
আলোঃ আসসালামু আলাইকুম…!!

দীদান অদ্ভুত ভাবে আলোর দিকে তাকিয়ে আছে!এই ব্যাপারটা কারো দৃষ্টি এড়ালো না।আলোর পুরো মুখ লাল হয়ে আছে তার উপরে লাল ওড়না দেওয়া মাথায়।আদিল সহ প্রথমে সবাই আলোকে দেখে অবাকই হয়েছে ওর সৌন্দর্য দেখে!দীদানের এভাবে তাকানো দেখে মেঘ ফট করে বলে উঠলো….!!
মেঘঃ দীদান আমার বউমনি দেখতে অনেক সুন্দর না!আমি নিজে খুঁজে এনেছি আমার দাভাইয়ের জন্য! আর তুমি এভাবে আমার বউমনির দিকে তাকিও না।আমার বউমনির মুখে পিম্পল বের হবে(মুরগির রানে কামড় দিয়ে)
মেঘের কথা শুনে সবাই হো হো করে হেসে দিলো!কিন্তু দীদান ভ্রু কুচকে এখনো আলোর দিকে তাকিয়ে আছে!আলোরও এবার অস্বস্তি লাগছে!রোদ কিছু বলতে চাচ্ছিলো বাট রোদের আম্মু রোদকে ইশারায় চুপ করে থাকতে বলছে!দীদান আর কিছু বলে না….!!
আজকে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান তাই সবাই সকালের খাবার খেয়ে দুপুরের রান্নার কাছে লেগে পড়ে!সবাই গল্প করছে আর হাসাহাসি করছে আর কাজ করছে!মায়া আর নিহা এরা রোদের মামাতো বোন এরা আলোর সাথে থাকছে! আলো নিহা আর মায়া মিলে মাদুর বিছিয়ে বসে মটরশুটির খোসা ছাড়াচ্ছে!মেঘ আলোর কাছে এসে আলোকে কানে কানে ফুসফাস কি যে বললো আলো কিছুই বুঝতে পারলো না!আলো কিছু বলার আগেই মেঘ দুই মুঠো মটরশুঁটি নিয়ে দৌড়! মেঘের আসল কাহিনী বুঝতে পেরে ওরা তিনজন হো হো করতে হাসতে শুরু করলো।

আজকে অনেক মানুষ তাই বড়মামীরা মাটির চুলায় পাশের রান্না ঘরে রান্না শুরু করলো!রান্নাঘরটা বেশ বড়!বাসার সামনে বড় একটা উঠান আছে তারপাশে আছে বড় ফুলের একটা বাগান!উঠানের পাশেই আছে কল ঘর!দুপুর ১ টার মধ্যে উনারা রান্না শেষ করে নিলো!রোদের আম্মু আলোকে অনেক আগেই গোসলের জন্য ওকে ওর রুমে পাঠিয়ে দিয়েছে!আলো গোসল সেরে ভেজা কাপড় নিয়ে আর ছাদে না গিয়ে বাড়ির উঠানে এক বড় রশি টানানো সেখানে কাপড় মেলে দিলো!রোদের বড় মামী সহ সব মহিলা রান্না ঘর পরিষ্কার করতে করতে আলোর দিকে চোখ পড়ে তাদের! আলোর চুল দেখে হা করে তাকিয়ে থাকে…!!আলো এখানে আসার থেকে ওর চুলে খোঁপা করা এবং মাথায় ওড়না ছিলো এজন্য কেউ ওর চুল দেখতে পায় নি!রোদরা সব কাজিন মিলে তখন বাগান থেকেও আলোকে দেখে!কাজিনরাও ওর চুলের দিকে তাকিয়ে থাকে..!!রোদের খুব রাগ লাগছে সবার এভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে..!!আলোও এজন্য চুল ছাড়া রাখে না কারন অনেকে ভাবে ভাব দেখানোর জন্য চুল ছেড়ে রাখে! কিন্তু ভেজা চুল তো বেঁধে রাখা যায় না! আলো ভেজা চুল বাদে অন্য সময় অকারনে চুল খুলেও রাখেনা।
আলো ব্লু কামিজের সাথে গোলাপি চুরিদার আর গোলাপি ওড়না পড়েছে!ব্লু আর গোলাপি কালারটা ফর্সা শরীরে একটু বেশিই ভালো দেখায়! রোদেরও যেন আজকে আলোর থেকে দৃষ্টি সরাতে কষ্ট হচ্ছে!রোদের ওর পাগলামির কথা ভেবে মনে মনে হাসে।
আলো টাওয়াল দিয়ে ওর চুলের আগাটা ভালো করে মুছে টাওয়াল রোদের শুকাতে দিয়ে মাথায় ওড়না তুলে দিয়ে বাসার দিকে পা বাড়াতেই আবার সকালের মত ওর শরীরটা পুরো ঝাঁকুনি দিয়ে কেঁপে ওঠলো! আর আলো সাথে সাথে থমকে দাড়িয়ে গেল…..!!
মেয়েদের সৌন্দর্য ভালো কিন্তু অতি সৌন্দর্য মেয়েদের জীবনে কাল হয়ে দাড়ায়!কারন অতিরিক্ত কোন কিছুই সুখকর নই!এখানে আসার পর থেকে আলোর জন্য কি কি বিপদ অপেক্ষা করছে! সেটা রোদ বা আলো কল্পনাও করতে পারছে না!

#এলোকেশী_কন্যা২__
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_24

মেয়েদের সৌন্দর্য ভালো কিন্তু অতিরিক্ত সৌন্দর্য মেয়েদের জীবনে কাল হয়ে দাড়ায়! আলোর জন্য কি বিপদ অপেক্ষা করছে আলো কল্পনাও করতে পারছে না!
বেশ কিছুক্ষণ আলো উঠানেই দাড়িয়ে থাকার পর হেটে ওর রুমে চলে গেল!রোদের বড় মামীরা সবাই একসাথে বাড়ির এক সাইডে বড় শান বাঁধানো পুকুরে সবাই মিলে গোসলে করতে চলে গেল!এই দিকটাই ছেলেদের আসার নিয়ম নাই!আজকে রোদের আম্মুও পুকুরে গোসলের জন্য এসেছে! অনেকদিন পুকুরে গোসল করে না তাই আজকে লোভ সামলাতে পারেনি!রোদের মেঝমামী রোদের মাকে উদ্দেশ্য করে বললো…
মেঝমামীঃ আপা আপনি আলোকে খোঁজ
কোথায় থেকে পেলেন!ওকে দেখে আমি নিজেই চোখ ফেরাতে পারিনা।
বড় মামীঃ আমি তো ওর চুল দেখে অবাক হয়ে গেছি!একটুকু মেয়ে এত বড় চুল সামলায় কিভাবে??
রোদের আম্মুঃশুধু চুল আর ওর রুপ না! সত্যি কথা হলো আলো অনেক সহজ সরল আর খুব ভালো মনের একটা মেয়ে।তুমি যতই ওকে কটু কথা বলবে দেখবে তোমার সাথে হেসে হেসেই কথা বলবে! খুব মিশুক স্বভাবের মেয়েটা…..!!
ছোট মামীঃওহ সাথে কথা বলেই বুঝতে পেরেছি আমি!তবে আপা এখানকার জায়গা মোটেও ভাল না আলোকে চোখে চোখে রাখবেন।
রোদের আম্মুঃ আলো ঘরকুনো মেয়ে ওকে নিয়ে একদম চিন্তা করো না।

মেঝ মামীঃরোদের সাথে খুব মানাবে আলোকে!একদম পারফেক্ট কাপল যাকে বলে।
রোদের আম্মুঃতোমরা দোয়া করো যাতে আমার মেয়েটা এবার সুখের নাগাল পায়!
রোদের আম্মু মুখে যত কথায় বলুক উনার মনেও একটা ভয় এসে বাসা বেঁধেছে।রোদ ওর রুমে গিয়ে গোসল সেরে আলোর রুমে আসে!আলো তখন বেডের উপর মাথা নিচু করে বসেছিলো।রোদ আলোর পাশের এসে বসে বলে উঠলো…!!
রোদঃএই যে রাণী এলিজাবেথ আপনি এখানে ভুলেও ছোট হাতে কামিজ পড়বেন না! আর আম্মু যদি গায়ে হলুদের জন্য শাড়ি পড়তে বলে তাহলেও পড়বেন না। কথাটা ঠিকমত মাথায় ঢুকিয়ে নিন…
আলোঃ….
রোদঃ আর চুল শুকানোর পর চুল বেঁধে রুম থেকে বের হবেন! চুল দেখিয়ে আর কাউকে পাগল বানাতে হবে না…!!
আলোঃ….

রোদঃ এই মেয়ে আমি কি বলছি তুমি শুনতে পাচ্ছো না?কানের নিচে ধাপ দিলে দিলে তখন বুঝবে।
রোদের ফোনের কল আসাতে রোদ চলে যায় আর আলো ঝিম মেরে বসে থাকে!তারপর সবাই দুপুরে একসাথে খেতে বসে!মেঘ আর রোদ চেয়ারে বসতে যাবে ঠিক তখনই আলো ওদের ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে নিজে বসে পড়ে!রোদ মেঘকে ধরে ফেলে তা না হলে মেঘ মুখ থুবকে মেঝেতে পড়তো।আলো চেয়ারের উপরে দুই পা তুলে বসে আর একটা প্লেট নিয়ে ভাত, গরুর মাংস, ইলিশ, চিংড়ি গপাগপ খেতে থাকে!বাড়ির উপস্থিত সবাই আলোর কান্ড দেখে অবাক হয়ে আলোর দিকে তাকিয়ে আছে!আলোর এমন ব্যবহার দেখে বাচ্চারা হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে আর বড়রা ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে।সবার মনে খটকা লাগে! আলোকে দেখে মনে হচ্ছে কত বছর সে অভুক্ত। দীদান সবাইকে চুপ থাকতে বললো…!!
দীদানঃ আর কিছু খাবে তুমি?আর কিছু লাগবে তোমার(আলোর দিকে তাকিয়ে)
আলোঃ হুমম! আমি মিষ্টি খাবো!মিষ্টি! মিষ্টি!
রোদের বড় মামা এসে আলোর সামনে মিষ্টি এনে রাখতেই আলো হামলে পড়ে মিষ্টি খেতে লাগলো!একহাতে মিষ্টির প্যাকেট আর অন্য হাতে পাঁচ পিচ ভাজা ইলিশ মাছ নিয়ে খেতে খেতে গটগট করতে করতে উপরে চলে গেল!এর মধ্যে আদিলের নানু বাসায় লোক আসাতে সবাই ওদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো! আর আলোর বিষয়টা আপাতত ধামাচাপা পড়ে গেল!সকালে থেকেই আলো অস্বাভাবিক বিহেভ করছে! এটা রোদ অনেক আগে থেকেই খেয়াল করছে!রোদের গলা দিয়ে খাবার নামছে না তাও অল্প করে খেয়ে উঠে চলে গেল…!!

বিকেলবেলা থেকেই বাসায় আরো লোক এসে এড হলো!বিয়ে বাড়িতে লোকজন বেশি হবে এটাই তো স্বভাবিক!আর গ্রামের বিয়ে তারপরে উপরে এই গ্রামের জমিদারের নাতির বিয়ে বলে কথা! পাঁচ গ্রামের মানুষ তো দেখতে, খেতে তো আসবেই।আলো চুল ছেড়ে বেডে শুয়ে ছটফট করছে পুরো শরীর কেন জানি জ্বলে যাচ্ছে। বিশেষ করে রোদ যতবার আলোর রুমে এসে আলোকে দেখে যাচ্ছে ততই আলোর শরীর জ্বালাপোড়ার পরিমান বেড়েই যাচ্ছে।সাপের খোলস ছাড়ানোর সময় সাপ যেমন ব্যাথাতে ছটফট করে! আলোও বেডের উপর শুয়ে ছটফট করছে।
রোদের দীদান রোদকে ডেকে পাঠায় উনার রুমে!রোদ নক করে ওর দীদানের রুমে আসে!দীদানে ওর হাতে একগ্লাস যমযমের পানি দিয়ে বলে আলোর শরীরে ছিটিয়ে দিয়ে আসার জন্য! রোদ কিছু বলতে যাবে তার আগেই রোদের দীদান রাগী চোখে দিকে তাকাতেই রোদ আর কিছু না বলে পানি নিয়ে রোদের রুমে হাটা ধরে!
রোদঃ দুপুরেই তো গোসল করে উঠলো! আবার এখন পানি দিলে ভেজে যাবে তো!দীদান যে মাঝে মাঝে কি করে না।ধুর এখানে আসাটাই উচিত হয়নি। আর তিলোকন্যা এমন বিহেভ ই বা করছে কেন কে জানে??ওয়েট ওয়েট আমার উপর রেগে গিয়ে এমন করছে না তো!ধুর বাবা কিছু ভাল লাগছে না আর…!!
রোদ আলোর রুমে গেল!রোদকে দেখে আলো ক্ষেপে গিয়ে আশেপাশে থাকা জিনিস দিয়ে রোদকে আঘাত করতে থাকে!আলো রোদকে কিছুতেই ওর কাছে ঘেষতে দিচ্ছে না তাই রোদ রেগে গিয়ে দুরে থেকেই আলোর গায়ে পানিটা ছুঁড়ে মারে আর আলো শান্ত হয়ে বেডে বসে পড়ে…!!

রোদ আলোর কাছে দিয়ে আলোর গাল চেপে ধরে!আর রাগী চোখে তাকিয়ে বলে…
রোদঃ খুব সাহস বেড়েছে তাই না!বাসায় চলো
একবার! তারপর তোমাকে মজা বোঝাবো।ফাজিল মেয়ে একটা…!!(রাগী চোখে তাকিয়ে)
মেঘঃ দাভাই বউমনিকে ব্যাথা দিচ্ছো কেন?
রোদঃ এই তুই সবসময় এর পাশে থাকবি!একে মোটেও সুবিধার মনে হচ্ছে না।মনে হচ্ছে জটিল কোন ঝামেলা পাকাবে…!!(দাঁতে দাঁত চেপে)
মেঘঃ আচ্ছা
আলোঃ…
যমযমের পানি ছিটানোর পর থেকে আলো স্বাভাবিক আছে!সন্ধ্যায় দিকে আদিলের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হলো!শত শত গ্রামের মানুষ এসে আদিলের গায়ে হলুদ দিয়ে যাচ্ছে! রোদ, মেঘ, আলো, আর সব কাজিনরা মিলে চেয়ার নিয়ে গোল হয়ে বসে আড্ডা দিচ্ছে আর হাসাহাসি করছে!সবাই কত সুন্দর করে সেজেগুজে আছে আর আলো হলুদ কামিজ আর সবুজ চুরিদার আর সবুজ ওড়না আর চুলে হাত খোঁপা করে বসে আছে!তারপরেও আলোকে সবার মাঝে আকষর্ণীয় দেখাচ্ছে! মেঘ একটা গোলাপ এনে আলোর খোঁপাতে গুজে দিলে….!!আলো মেঘকে জড়িয়ে ধরে চকাস করে আদর দিলো…!!
রোদঃ আমি যে পাশে বসে আছি এটা তো এখন চোখে পড়বে না!আর এই মেঘটাও হচ্ছে ফাজিল।এসে বলবে দাভাই বউমনির খোঁপাতে গোলাপটা গুঁজে দাও তো! তা না উনি এসে দুম করে নিজেই গোলাপটা পড়িয়ে দিলো!আমি মাঝে মাঝে ভাবি বউটা আমার নাকি মেঘের!দাড়া তুই বিয়ে কর আমার ছানাগুলোকে তোর বউয়ের পেছনে লাগিয়ে রাখবো! যাতে তুইও যখন তখন রোমাঞ্চ করতে না পারিস!তখন বুঝবি কেমন লাগে (মনে মনে)

এলোকেশী কন্যা  সিজন ২ পর্ব ১৯+২০+২১

মেঘ রোদের গিটার এনে দিয়ে বললো একটা গান গাইতে!রোদের এখন গান গাইতে ইচ্ছে করছে না তাই রাজি হলো না!রোদ বিরক্তকর একটা ভাব নিয়ে চেয়ারে বসে আছে!মেঘ রোদের কানে কানে এসে বললো…
মেঘঃ দাভাই এখন গান গাইতে শুরু করো তা না হলে আমি কিন্তু বউমনিকে বলে দিবো তুমি একটা মুটকি মেয়েকে কিসি করতে গিয়ে গণপিটুনি খেয়েছিলে। তখন দেখবে বউমনি তোমার মুখ দেখা তো দুরে থাক! তোমার থেকে ১০০ হাত দূরে থাকবে।(কানে কানে)
রোদঃ মাঝে মাঝে আমি কনফিউজড হয়ে যায় তুই কি আমার নিজের ভাই? বিশ্বাস কর মেঘ তোর মত ভাই যার আছে বাইরের শএুর দরকার হবে না।
মেঘঃ এবার আমার পছন্দের গানটা শোনাও তো!
রোদঃ তোর পছন্দ মানে তো ওই বাজে গানটা…লাল গেন্দা ফুল!উফফ বিরক্ত লাগে আমার গানটা।(বিরক্তের সুরে)
মেঘঃবেশি ফকফক করো না তো দাভাই! দাড়াও আমি আসছি..!!
মেঘ এবার একদৌড়ে ওর ছোট মামার রুমে গিয়ে কলির একটা গোলাপি গেন্জী পড়ে নিলো!কলি তো ছোট তাই গেন্জীটা মেঘের নাভির উপর পর্যন্ত হলো।আর মেঘ ওর সাদা জিন্সটা পড়ে নিলো! তারপর আলোর রুমে গিয়ে আলোর একটা কালো ওড়না নিয়ে মাথায় দিয়ে চুলের মত করে ছেড়ে রাখলো আর মুখে একটু পাউডারও দিয়ে নিলো!দুই কানের পেছনে দুইটা করে চারটা গাঁদা ফুল গুঁজে নিলো!তারপর কোমর দুলাতে দুলাতে রুমে থেকে বের হলো!মেঘকে যে যে দেখেছে সবাই হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে!রোদরা যেখানে আছে মেঘ মেয়েদের মত হেলে দুলে হেঁটে হেঁটে সেখানে দাঁড়াতেই সবাই মেঘকে দেখে হো হো হাসতে শুরু করলো!আলোও মেঘকে দেখে হাসতে থাকে!রোদ তো মেঘকে দেখে হাসতে হাসতে চেয়ার থেকে ঘাসের উপর পড়ে গেল! তারপরেও রোদের আজকে হাসি থামছে না…!!

রোদঃহা হা হা আমার আর আপসোস নাই মেঘ!তুই মেয়ে সেজে আমার বোনের অভাবটাও পূরণ করে দিলি আজকে! দারুণ লাগছে তোকে.. (হাসতে হাসতে)
মেঘঃ হ্যায় মরণ!(হিজরাদের মত করে মুখ ভেংচি দিয়ে)
আলো রোদের দিকে তাকিয়ে আছে!রোদের হাসির শব্দটা আলো মনে অন্যরকম অনূভূতির আলোড়ন সৃষ্টি করছে! এখানে না আসলে হয়তো আলোর জানাই তো না যে রোদ এত সুন্দর করে হাসতে পারে!আলো মনে মনে বলে…!!
আলোঃ ছেলেদের যে এভাবে হাসতে নেই হুঁকোমুখো! তোমার এই হাসি যে কত মেয়েকে ঘায়েল করার হাতিয়ার সেটা তুমি হয়তো জানোনা! তবে আমি যে ঘায়েল হয়ে গেছি তোমার হাসির প্রতিধ্বনিতে হুঁকোমুখো। আর এমন কিলার লুকে দেখে তো আমার বার বার মনে হয় ……
তোমারে চুম্মায় মাইরাল্লাই…..!!

এলোকেশী কন্যা  সিজন ২ পর্ব ২৫+২৬+২৭