এলোকেশী কন্যা সিজন ২ পর্ব ১০+১১+১২

এলোকেশী কন্যা সিজন ২ পর্ব ১০+১১+১২
লেখনীতে:- নূরজাহান আক্তার (আলো)

মেঘঃ জিও বউমনি!যা দিলে না পুরাই জখাম!ওরে কেউ সিটি বাজাও রে!!!!______
রোদ মেঘের কাছে গিয়ে ওর এক কান টেনে ধরলো।
মেঘঃ আও আও আমি ব্যাথা পাচ্ছি দাভাই।ওরে আমার কান ছিঁড়ে গেল রে..!!
রোদঃ জিও বউমনি তাই না!তোদের দুজনকে যদি উচিত শিক্ষা দিতে না পারি! তো আমার নামও রোদ না..!!(রেগে গিয়ে)

রোদ ওর রুমে চলে গেল!আর মেঘ লাফাতে লাফাতে রকিকে নিয়ে আলোর রুমে গেল!তারপর আলো আর মেঘ বাগানে পানি দিলো আর আগাছা সাফ করলো।আলো আর মেঘ দুজনেই রকির সাথে দুষ্টুমি করছে আর খিলখিল করে হাসছে।রোদের আম্মুও ওদের সাথে যোগ দিলো!রোদের আম্মু, মেঘ আর আলো মিলে ঠিক করলো তিনজনে লুডু খেলবে।তারপর তিনজন লুডু খেলা শুরু করলো!মেঘ আর আলো মিলে রোদের আম্মুর গুটি কাটছে!মেঘ আর আলো কেউ কারো গুটি কাটছে না!রোদের আব্বু অফিস থেকে কেবল আসলো! আর উনি এসেই দেখে বাগানে এক প্রকার যুদ্ধ চলছে!আলো আর মেঘ রোদের আব্বুকে খেলতে বসিয়ে দিলো!রোদের আব্বু আর আম্মু, আলো আর মেঘ,আলো মেঘে মিলে ওর আব্বুদের গুটি কাটছে!কোথা থেকে রোদ এসে ওর আব্বু সাজেস্ট করতে লাগলো তখন রোদের আব্বু আম্মু মিলে আলো আর মেঘের গুটি কাটতে শুরু করলো।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আলো আর মেঘ আর পারছে না!মেঘ আর আলো রোদের দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে মনে হচ্ছে ওকে গিলে খাবে!আর রোদের উদ্দেশ্য আলো আর মেঘের হেরে যাওয়ার পর ওদের পেঁচার মত মুখটা দেখার।আলো আর মেঘ দুজন দুজনার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো! তারপর কি যেন ভেবে ওরা খেলায় মন দিলো!আলো আর মেঘের বেশি ছয় পড়ছে এজন্য ওদের সব গুটি আবার বেরিয়ে গেল।মেঘ রোদকে কিছু বলতেই দিচ্ছে না রোদ কিছু বলতো গেলেই মেঘ তখন চিৎকার করে উঠছে! আর না হলে জোরে গান গাইতে শুরু করছে।ওদের কাহিনী দেখে মেঘের আব্বু আর আম্মু হাসছে..!!

শেষমেষ মেঘ আলো আর মেঘের জয় হলো!কারন সবার আগোচরে আলো আর মেঘ ওদের তিনটা গুটি চুরি করে আগেই রেখে দিয়েছিলো।রোদের ফোন আসাতে রোদ অনেক আগেই চলে গিয়েছে এজন্য আলো আর মেঘ চুরি করতে পেরেছে।মেঘ ওর আব্বুকে হারিয়ে ট্রিট চাচ্ছে….!!

সন্ধ্যার একটু আগে রোদ রেডি হয়ে বাগানে আসে!মেরুন কালার একটা শার্ট, কালো জিন্স,একহাতে ব্যাচলেট, আরেক হাতে কালো ওয়াচ,আর খোঁচা খোঁচা দাড়ি।রোদ ওর আম্মু কে বলে ও হাতিরঝিল প্রোগ্রামে যাচ্ছে! আর আসতে একটু লেট হবে।আলো আড়চোখে একবার রোদের দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নেয়!রোদ চলে গেলে সবাই বাসায় যায় কারন একটু পরই মাগরিবের আজান দিবে।বাসায় গিয়ে যে যার রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়!আলো অজু করে একেবারে মাগরিবের নামাজ পড়ে তারপর নিচে আসে!

আলো রান্না ঘরে গিয়ে একটা পাতিলে চায়ের পানি বসায়!তারপর বাগান থেকে কয়েকটা তুলসি পাতা তুলে আনে আর পাতিলের সেই পানিতে তুলসি পাতা, দারুচিনি, এলাচি, তেজপাতা, লবঙ্গ, চিনি,আদা, আর একটু মধু দেয়! চুলের আচ না কমিয়ে পানিটা ভালো মত ফুটিয়ে চা দেয় আর নেড়ে নেয়!তারপর কড়াইয়ে তেল দিয়ে চিপ্স ভেজে নেয়। তখন রোদের আব্বু আম্মুও নামাজ পড়ে ড্রয়িং রুমে আসে!আলো ওদের চা দেওয়ার আগে রোদের আব্বু বলে উঠে…

রোদের আব্বুঃ আলো মামনি তুমি কি বানাচ্ছো?? চারদিকে এত সুন্দর ঘ্রাণে তো পুরো বাড়ি টাই মো মো করছে!
আলোঃ আব্বু আপনাদের জন্য চা বানালাম!আব্বু চা টা খেয়ে দেখেন তো কেমন হয়েছে??
মেঘঃ আমাকে তারাতারি দাও বউমনি!তারাতারি দাও ইয়াম কি খুশবু…!!! (জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে)
রোদের আম্মুঃ তুই এসব করতে গেলি কেন??
আলোঃ খেয়ে দেখো আর বলো কেমন হয়েছে…এই নাও (সবাইকে চা দিয়ে)
রোদের আব্বুঃ উমমম অসাধারণ হয়েছে!মামনি মন ভালো করার মত চা বানিয়েছো তুমি..!!
আলোঃ আব্বু আপনার ভালো লেগেছে??(খুশি হয়ে)
রোদের আব্বুঃ খুব খুব ভালো হয়েছে খেতে।আমি অফিস থেকে এসে প্রতিদিন তোমার হাতের এই চা টা খেতে চাই মামনি..!!
আলোঃ আচ্ছা আব্বু (অনেক খুশি হয়েছে)
মেঘঃ ইয়ামমম! উফফফ খুব গরম। তোমরা কেউ আমার চায়ে ফু দিয়ে দাও তো।
আলোঃ মেঘ বাবু আমাকে দাও আমি ফু দিয়ে দিচ্ছি।
রোদের আম্মুঃ চা টা আসলেই অনেক টেস্ট হয়েছে।

তারপর খেতে খেতে আড্ডা দেওয়া শুরু করে!খাওয়া শেষ করে আলো আর মেঘ পড়তে বসে!আলো ওর বই গুলো নেড়েচেড়ে দেখছে!কালকে থেকে কলেজ যাওয়া শুরু করবে!মেঘ ওর বই গুলো নিয়ে লাফাতে লাফাতে আলোর রুমে চলে আসে!আলো মুচকি হেসে মেঘকে ওর পড়া দেখিয়ে দেয়!তারপর নিজেও পড়া শুরু করে!মেঘ পড়তে পড়তে বলে…

মেঘঃ বউমনি কত গিয়ারে পড়বো আমি??
আলোঃ কত গিয়ার মানে??
মেঘঃ 2th, 4th গিয়ারে পড়বো! নাকি আরো গিয়ার বাড়াবো।
আলোঃ কোন গিয়ারে পড়তে হবে না!সুন্দর করে পড়ো যাতে পড়াটা মাথায় থাকে।
মেঘঃ বউমনি আমার পড়াশোনা ছাড়া সব কিছু করতে ভালো লাগে!আচ্ছা বউমনি যে পড়াশোনা বানিয়েছে সে কি মারা গেছে??
আলোঃ মারা গেছে মনে হয়..
মেঘঃ মরে গিয়ে ভালো করছে তা না হলে আমিই উনাকে মেরে ফেলতাম।উফফ কি যে একটা অশান্তি
আলোঃ আচ্ছা মেঘ তোমার অংক নাকি ইংরেজী কোনটা পড়তে বেশি ভালো লাগে??
মেঘঃ আমার কোনটাই ভালো লাগে না।
আলোঃ কেন???
মেঘঃ অংক বই দেখলে আমার পেটে মোচর দেয় আর ইংরেজী বই দেখলে বুকে আনচান করে।
আলোঃ এ তো দেখি অনেক বড় অসুখ।
মেঘঃহুমমম!এখন কি করা যায় বলো তো??
আলোঃ তোমাকে গরুর ইনজেকশন দিতে হবে।তাহলে ঠিক হয়ে যাবে।হা হা হা হা

তারপর দুজন দুষ্টুমি করতে করতেই পড়া শেষ করলো!রাত ১০ টার দিকে রাতের খাবার খেয়ে যার যার রুমে চলে গেল!আলো আর মেঘ দুজন একসাথে ব্রাশ করে নিলো!আলোর ঘরেই মেঘ শুয়ে পড়লো!আলো মেঘের সাথে গল্প করছে আর মেঘের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। মেঘের তো এত এত কথা বলছে!ওর যেন কথা শেষই হয়না। আর গল্প করতে করতে মেঘ বাবু ঘুমের একটা সময় দেশে পাড়ি জমায়!আলো মেঘের কপালে একটা আদর দেয় আর মনে মনে বলে…

আলোঃ রক্তের সম্পর্ক না থাকলে আপন হওয়া যায় না!এই কথাটা আমি ভুল প্রমান করবো!আমি আমার আপন ভাইয়ের মত ভালবাসি তোমাকে মেঘ।তোমার দাভাই আমাকে যত কিছুই বলুক আমি সব মেনে নিবে শুধু তোমার মুখের দিকে চেয়ে!মেঘবাবু তোমার কারনে আমি আবার বেঁচে থাকার নতুন আশা খুঁজে পেয়েছি!আমি জানিনা আমার ভাগ্য তে কি আছে!আমি এটাও জানিনা আমি কোনদিন তোমার বউমনি হতে পারবো কি না! তবে আমি তোমার পাশে আছি আর সারাজীবন থাকবো।আমার শরীরের শেষ নিঃশ্বাস অবধি আমি তোমাকে আগলে রাখবো মেঘবাবু…!!

আলো মেঘের পাশে থেকে উঠতেই কলিংবেল বেজে ওঠে!আলো ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত ১২ঃ০৯ বাজে!আলো ধীর পায়ে নিচে যায়!রোদের আব্বু আম্মু ঘুমিয়ে পড়ছে!আলো দরজা সামনে গিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় জিজ্ঞাসা করে…

আলোঃ ক ক ক কে???
রোদঃ ভূত! দরজা খুলবে নাকি বাইরেই দাড়িয়ে থাকবো???
আলোঃ ওহহ র র রোদ ভাইয়া আপনি।(দরজা খুলে)
রোদঃ কেন অন্য কাউকে আশা করেছিলে নাকি?এই এই ওয়েট ওয়েট এখন কারো আসার কথা ছিলো নাকি। (ভ্রু কুচকে)
আলোঃ….(আলো কিছু না বলে চলে যাচ্ছিলো)
রোদঃ আমার খুব খুধা লাগছে!তারাতারি খাবার বাড়ো! আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি…
আলোঃ জ জ জি
রোদঃ ছোট বেলায় তোমার বাবা মা কি তোমাকে সব পোলিও বা সব টিকা দিয়েছিলো??
আলোঃ হুমম!এ এ কথা জিজ্ঞাসা করছেন কেন??
রোদঃ সব কথাতে তোতলাও এজন্য জিজ্ঞাসা করলাম।যাই হোক এসে যেন সব খাবার রেডি পাই।

রোদ কথাটা বলে হনহন করতে করতে চলে গেল!আলো রোদকে মনে মনে কয়েক দফা গালি দিলো।আর মনে মনে গালি দেওয়া ছাড়া আর কি বা করবে?কারন রোদের সামনে গেলেই আলো তোতলাতে থাকে! তাই মনে মনে গালি দিয়ে মনটাকে শান্ত করে..
.
আলোঃ এই পোলা ডা এত অসভ্য ক্যারে!শালা আমার সাথে ভালো করে কথা কইলে কি তোর লেজ গজাবে নাকি ডায়রিয়া হবে।সব সময় ধমকায়।কেন রে আমি তোর কোন গমের ক্ষেতে মই দিসি! যে সব সময় আমার সাথে এমন ভাবে কথা কইস তুই।দেখিস তোর বিয়ার পর তোর বউ পরকিয়া করবে… (মনে মনে)

আলো খাবার গরম করে ডায়নিং টেবিলে সাজিয়ে দেয়!রোদ খেতে আসে! তখন আলো চলে যাবে তখন রোদ আলোকে ডেকে বলে…
রোদঃ পানি টা কে ঢালবে?খেতে দেওয়াও তো জানো না…!!
আলোঃ আপনার হাতের কাছেই তো সব রাখছি।তাই ঢেলে দেই নি।
রোদঃ তুমি কি আমাকে পানি ঢেলে দিবা নাকি আমি তোমার মাথায় সব পানি ঢালবো।কোনটা..
আলোঃ না আমি এখনই পানি ঢেলে দিচ্ছি…
রোদঃ আমার যতক্ষণ খাওয়া না হবে ততক্ষন এখানেই দাড়িয়ে থাকবে!আর একটা টু শব্দ করলো বাড়ির বাইরে দাড় করিয়ে রাখবো।
আলোঃ…..
(গিল সারাজীবনে খাওন একেবারেই গিল তুই!আল্লাহ এ কোন জল্লাদের বাসায় আমাকে পাঠাইলা।মন থেকে মুই দোয়া করতাছি তোর ভীষম লাগুক, কামড় লাগুক,গলায় খাবার আটকায় যাক।লাগ ভেলকি লাগ এই খাটাশের ভীষম লাগ…)
রোদঃ শকুনের মত আমার দিকে তাকিয়ে আছো কেন?আমি জানি আমি সুদর্শন! তাই বলে এভাবে তাকিয়ে থাকবে!ওহহ আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম তোমার আবার লজ্জা কম!বাই দ্যা ওয়ে আমার দিকে এভাবে তাকাবে না আমি আনইজি ফিল করি।
আলোঃ….

রোদ ধীর গতিতে খাচ্ছে! আর আলো না পারছে কিছু বলতে আর না পারছে কিছু করতে।রোদ যে ওকে ইচ্ছে করে দাড় করিয়ে রাখছে! এটা আলোরও বুঝতে বাকি নেয়!রোদ যা খায় সীমিত খায় কিন্তু আলোকে শাস্তি দিবে বলে ওর সীমিত খাওয়া ১ঃ৩০ মিঃ ধরে খাচ্ছে। রোদ মুখে খাবার দিয়ে ফোনের দিকেই হা করে তাকিয়ে আছে!আলো অধৈর্য হয়ে বললো…
আলোঃরোদ ভাইয়া আমাকে কালকে কলেজে যেতে হবে!এখন রাত ১ টা বাজে! যদি আমাকে এখন রুমে যেতে দিতেন…!!তাহলে কালকে সকালে তারাতারি উঠতে পারতাম।
রোদঃ এত পড়াশোনা করে কি হবে?যে কারো গলায় ঝুলে পড়লেই তো হয়!শুধু শুধু পড়াশোনা…
আলোঃ…
রোদঃ তবে যে চুলোয় ইচ্ছে হয় যাও!আই ডোন্ট কেয়ার।বাট মাথায় হিজাব,ওড়না আর কামিজের হাত হবে ফুল হাতা,এই তিনটার যদি একটাও এদিক ওদিক হয়! আর আমার চোখে যদি পড়ে তখনই তোমাকে মেরে পুঁতে দিবো।আর তখনই বুঝবে রোদ মেহবুব আসলে কি??আর কথাটা গুলো ভালো করে মাথায় ঢুকিয়ে নাও….!!

#এলোকেশী_কন্যা২__
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_11

রোদঃ যে চুলোয় ইচ্ছে হয় যাও!আই ডোন্ট কেয়ার।
বাট মাথায় হিজাব,ওড়না আর কামিজের হাত হবে ফুল হাতা,এই তিনটা যদি একটাও একদিন ওদিক হয় আর আমার চোখে যদি পড়ে তখনই তোমাকে মেরে পুঁতে দিবো।আর তখনই বুঝবে রোদ মেহবুব আসলে কি??আর এই কথা মাথায় ঢুকিয়ে নাও….

রোদ কথাটা বলে বেসিনে হাতটা ধুয়ে হনহন করতে করতে ওর রুমে চলে গেল!আলো রোদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে সবকিছু গোজগাছ করে আলোর ওর রুমে গিয়ে মেঘের পাশে শুয়ে পড়লো…….!!!
পরেরদিন সকালে_______
আলো প্রতিদিনের মত আজকেও নামাজ পড়ে তারপর খালি পায়ে কিছুক্ষণ বাগানে হাটাহাটি করে!তারপর রান্নাঘরে এসে সকালের নাস্তা বানিয়ে নেয়!তারপর মেঘকে ঘুম থেকে টেনে তুলে আর জোর করে ফ্রেশ হতে পাঠিয়ে দেয়!মেঘ আসছে না দেখে আলো মেঘের রুমে গিয়ে দেখে মেঘ দেওয়ালে হেলান ঘুমাচ্ছে! আলো মুচকি হেসে মেঘকে নিয়ে ওয়াশরুমে যায় তারপর ব্রাশ করিয়ে মুখ ধুয়ে দেয়!মেঘ ওর আঙ্গুল দেখিয়ে আলোকে বোঝায় ও হিসি করবে!আলো মুচকি হেসে নিচে মেঘের রুমে চলে যায়।

আলো মেঘের ক্লাস রুটিন অনুযায়ী সব বই ব্যাগে ঢুকিয়ে দেয়!তারপর মেঘকে স্কুলের জন্য রেডি করিয়ে খাইয়ে দেয়!রোদের আম্মু প্রতিদিন এসব করতো এখন উনি আরামে বসে বসে শুধু দেখছে!মেঘে স্কুলের যাওয়ার জন্য পা বাড়াতে আলো মেঘকে থামায় আর মেঘের কপালে আদর দিয়ে দেয়।মেঘও আলোকে রিটার্ন আদর দেয় তারপর মেঘ স্কুলে চলে যায়।

আজকে রোদদের বাসায় শিউলি(কাজের বুয়ার) আসার কথা!উনি গ্রামে বেড়াতে গিয়েছিলো।রোদের আব্বু ব্রেক ফাস্ট করে মেঘের সাথেই বেরিয়ে গেছে!রোদের আম্মু আর আলো ব্রেক ফাস্ট সেরে নেয়।আলো একবার ভাবলো গোসল টা সেরে তারপর রেডি হবে কিন্তু আবার ভাবলো এখন যদি গোসল করে তাহলে চুল শুকাবে না আর ভেজা চুল থেকে পানি পড়ে জামা ভিজে যাবে!তখন আরো বিশ্রী দেখাবে!আলো এজন্য গোসল না করে হাতমুখ ধুয়ে নিলো তারপর কলেজে যাওয়ার রেডি হয়ে নিলো!

রোদের আম্মু রোদ কে ডেকে তুলছে কারন রোদের দায়িত্ব পড়ছে আলোকে কলেজে নিয়ে যাওয়ার জন্য। রোদ ফ্রেশ হয়ে আসে!রোদের আম্মু রোদকে ব্রেক ফাস্ট করতে বললে রোদ বলে সে কিছু খাবে না।আলো রেডি হয়ে নিচে নামতে নামতে দেখে রোদ সোফায় বসে আছে!আর রোদের বসা দেখে আলো হা করে তাকিয়ে আছে!রোদ ওর পায়ের উপর পা তুলে সাহেবী স্টলে বসে ফোন টিপছে।

আলো রোদের আম্মুর কাছে গেল কারন রোদের আম্মুর যাওয়ার কথা আজকে আলোর সাথে। রোদের আম্মুর বুদ্ধি করে রোদ কে পাঠাচ্ছে আলোর সাথে!রোদের আম্মু রোদের দিকে তাকিয়ে বললো…
রোদের আম্মুঃ রোদ আলো রেডি হয়ে গেছে!যাও ওকে কলেজে রেখে এসে!সাবধানে যাবে…!!
রোদঃ উফফ এসব প্যারা আমার আর ভালো লাগে না। (বিরক্তের সুরে)

রোদের কথা শুনে আলো দাঁতে দাঁত চেপে শুনলো।রোদ একবার আলোর মাথা থেকে পা পর্যন্ত তাকালো। তারপর বাইরে হাটা দিলো।রোদের আম্মু আলোকে রোদের সাথেই যেতে বললো।রোদ ওর বাইক নিয়ে আসলো!আলো কি করবো বুঝতে পারছে না! এই খাটাশের সাথে যাওয়া থেকে না যাওয়াই বেটার কিন্তু কি করবে এখন।রোদ আলোর দিকে তাকিয়ে বললো…!!

রোদঃ বাইকে বসার জন্য এখন কি তোমাকে আলাদা করে চিঠি পাঠাতে হবে (দাঁতে দাঁত চেপে)
আলোঃআ আম আমি এর আগে কারো বাইকে বসি নি তাই একটু ভ ভ ভয় লাগছে।
রোদঃ ওহহ!তাহলে তুমি এখানেই দাড়িয়ে থাকো কেমন। তোমার জন্য রাজপুত্র তার পক্ষীরাজ ঘোড়া আনবে! তখন তুমি কলেজে যেও।তুমি ছোট্ট খুকিমুনি বলে কথা! বাইকে উঠতে তো ভয় পাবেই….
আলোঃ….
রোদঃ তুমি তাহলে থাকো!আমি গেলাম….
(আমাকে ধাক্কা দেওয়া তাই না!আলোমনি তুমি একবার শুধু বাইকে উঠো তারপর তোমাকে আমি বোঝাবো মজা।খুব সাহস তাই না রোদ মেহবুব কে ধাক্কা দিয়েছে।মনে মনে)

রোদ বাইক টান দিলো!তখন আলো রোদকে থামতে বলে বাইকে উঠে বসে।আলো রোদের থেকে দুরুত্ব রেখেই বসেছে!রোদ যদিও আলোকে বলছে রোদের কাঁধে হাত রাখার জন্য কিন্তু আলো রাখে না।রোদ দুষ্টু হেসে বাইক স্টাট দেয়!তারপর স্পীড বাড়িয়ে দেয়! আলো ভয়ে রোদের কাঁধে হাত রাখে।রোদ তখন দুষ্ট হাসে… তারপর ইচ্ছে করেই জোরে একটা ব্রেক মারে আর আলো হুমড়ি খেয়ে রোদের উপর পড়ে।রোদ তখন আলো বলে উঠলো…
রোদঃ তুমি তো আসলেই অসভ্য একটা মেয়ে।এর ধাক্কা খাওয়া জন্য সামনাসামনি পড়তে আর আজকে আমার উপরে…! ছিঃ!ছিঃ!
আলোঃ……..
(ফাঁকা রাস্তায় ব্রেক কষে এখন আমার দোষ দিচ্ছে। এই ছেলে আসলেই অসভ্য! এত পরিমানের অসভ্য যে, কোন সংখ্যা দেওয়ার মত সংখ্যা এখনো জন্ম হয় নি।মনে মনে)

আলো রোদকে মনে মনে ভয়ংকর কিছু গালি দিয়ে চুপ করে থাকলো!রোদ তো মজা নিচ্ছে আলোকে কথা শুনিয়ে।আলো রোদকে জিজ্ঞেস করলো আলো রোদকে ধরে বসতে পারবে না কি না!রোদ বেশি কিছু বললো না শুধু হুমম বললো।আলো রোদের কাঁধে এক হাত আর রোদের বামপাশে নাভির কাছের শার্ট খামচে ধরলো!রোদ কিছু বললো না বাট রোদ শয়তানি করে আবার ব্রেক মারলো! আর আলো শক্ত করে রোদের পেট খামছে ধরলো।রোদের ব্যাথা লাগছে তাও কিছু বলতে পারছে না!আর আলো ইচ্ছা করেই খামছে ধরছে…!! রোদ ব্যাথা সহ্য করলেও
রোদের কাতুকুতু বেশি তাই রোদ কাতুকুতু সহ্য করতে পারে না।তাই রোদ তারাতারি আলোর হাত সরিয়ে দিলো…!!আলো মনে মনে বলছে..!!
আলোঃ হাত সরিয়ে দিলি কেন? এখন কেমন লাগে খাটাশ পোলা একটা। (মনে মনে)
রোদঃ আমাকে খামচানোর এত ইচ্ছা সেটা মুখে বললেই হয়! রাক্ষসী একটা….!!!!
আলোঃকলেজে যেতে আর কতটুকু সময় লাগবে।(বিরক্ত হয়ে)

রোদের ঠোঁটের কোনে দুষ্ট হাসি! রোদ বাইক স্পীড বারিয়ে দিলো আলো রোদ বার বার রোদকে থামতে বলছে কিন্তু রোদ থামছে না।আলো ভয়ে পেয়ে রোদের পিঠে মাথা রেখে রোদকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। রোদ বাইকের গ্লাসে আলোর ভীতু মুখটা দেখে মুচকি মুচকি হাসে!আলোর কলেজ যেতে ২০মিঃ লাগার কথা সেখানে রোদ উল্টো রাস্তায় দিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ৪০মিনিটে কলেজে এনেছে!কলেজের গেটে রোদ বাইক থামায়! আলো বাইক থেকে নেমে চলে যেতে নিবে তখন রোদ আলোকে উদ্দেশ্য করে বলে…

রোদঃ এই মেয়ে তোমাকে আমি যেতে বলছি??
আলোঃ না (মাথা নিচু করে)
রোদঃ তাহলে চলে যাচ্ছো কেন??পা খুব লম্বা হয়েছে তাই না।পা ভেঙ্গে হাত ধরিয়ে দিবো তখন বুঝবে…!!
আলোঃ আচ্ছা আপনি আমাকে শুধু শুধু বকা দেন কেন?আমি কি করছি??
রোদঃ না তোমাকে বকা দিবো না কোলে বসিয়ে আদর
করবো।
আলোঃ…
রোদঃ কলেজে এসেছেন ভালো কথা!মন দিয়ে পড়াশোনাটাই যেন হয়!মন টা যদি একদিক ওদিক যাই তো খবর আছে!ছেলেদের থেকে দুরে থাকবেন যদি উল্টো পাল্টা কিছু শুনি তো! একটা রিকশা ওয়ালাকে ধরে এনে বিয়ে দিয়ে দিবো।
আমার কথা বুঝলে নাকি আবার বলবো..!!
আলোঃহুমম বুঝেছি!!
রোদঃ বুঝলে ভালো আর না বুঝলে আরো ভালো।এই শোনো আর একটা কথা তুমি পড়ে যাবে,আছাড় খাবে, ব্যাথা পেলে পাবে! বাট হিজাব আর ওড়না যাতে এদিক ওদিক না হয় এটা খেয়াল রাখবে। আর হিজাব আর ওড়না এদিক ওদিক হয় তো! কি করবো সেটা কাজেই বুঝিয়ে দিবো!আর কালকে রাতে কি বলছি মনে আছে তো??
আলোঃ জি…!!
রোদঃ ওকে! এখন যাও..!!

#এলোকেশী_কন্যা২__
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_12

রোদঃ বুঝলে ভালো আর না বুঝলে আরো ভালো।এই শোনো আর একটা কথা তুমি পড়ে যাবে,আছাড় খাবে, ব্যাথা তোমার যত যাই ইচ্ছা হোক! বাট হিজাব আর ওড়না যাতে এদিক ওদিক না হয়।আর কালকে রাতে কি বলছি মনে আছে তো??
আলোঃ জি…!!
রোদঃ ওকে! এখন যাও..!!
.
.
.
তারপর আলো চলে গেল আর রোদ আলোর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো! তারপর রোদও আড্ডা দিতে চলে গেল!আলোর কলেজের মাঠেই রোদ, আকাশ,সিয়াম, আবৃতি বসে আড্ডা দিতে শুরু করলো।রোদরা সব সময় এখানেই আড্ডা দেয় সিনিয়র বলে কথা!রোদ রা আড্ডা দিচ্ছে ঠিক তখন একটা মেয়ে এসে ওদের সামনে দাঁড়ালো ।মেয়েটি রোদের দিকে তাকিয়ে লজ্জা মাখা মুখ আর হাতে গোলাপ নিয়ে রোদকে প্রোপোজ করলো!রোদ মুচকি হেসে মেয়েটিকে ইশারায় আবৃতির পাশে বসতে বললো।মেয়েটিও খুশিতে গদগদ করে রোদের পাশে বসে পড়লো…!রোদ মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বললো…!!

রোদঃ তোমার নাম কি??
সোনালীঃ আমার নাম সোনালী শেখ!!
রোদঃ ওহহ নাইস নেম!তুমি কোন ইয়ারে পড়াশোনা করছো??
সোনালীঃআমি ইন্টার প্রথম বর্ষে ছাএী!আপনাকে আমার অনেক ভালো লাগে। আমি আপনাকে সত্যি সত্যি অনেক লাভ করি…!!
রোদঃ তুমি কি আমাকে চেনো আমি কে??
সোনালীঃ জি আমি আপনাকে চিনি! আর আপনার মত লেডি কিলারকে কে না চিনে।
রোদঃ হুমমম বুঝলাম!আচ্ছা আমি তোমাকে কিছু কথা বলি কেমন!আমার কথার মাঝে কোন কথা বলবে না।আগে শুনবে আমার কথাগুলো…….!!
আকাশঃমেয়েটি এখন বাঁশ খাবে সিওর..(বিরবির করে)
সিয়ামঃ এ আর নতুন কি!যা হচ্ছে হতে দে (বিরবির করে)
আবৃতিঃ মেয়েটার জন্য আপসোস হচ্ছে!তবে যাই হোক মেয়েটার জন্য এক বালতি সমবেদনা (বিরবির করে)
সোনালীঃ জি জি বলুন!আমি আপনার সব কথা শুনবো। (অনেক খুশি হয়ে)
রোদঃ বোন এসব আর আমাকে বলবে না কেমন! সত্যি বলতে এসব আমার পছন্দ না।আর তুমি এখানে পড়াশোনা করতে এসেছো সো পড়াশোনাতেই মনোযোগী দাও।কেবল তোমার জীবনে শুরু সো আবেগ প্রবণ হয়ে এমন কিছু করে বসো না যাতে পরে পস্তাতে হয়।ভালো করে পড়াশোনা করো আর নিজের পায়ে দাড়াও!
সোনালিঃ….
রোদঃআমি তোমাকে কতগুলো বুঝিয়ে বললাম তোমার ভালোর জন্য। আর আমি আশা করবো তুমি আমার কথা শুনবে!আর যদি আমার কথা এখন না শুনো আর এই কাজটাই আবার রিপিট করো তো! সবার সামনে এমন একটা থাটিয়ে থাপ্পড় দিবো! যে প্রেমের ভুত মাথা থেকে উবে যাবে।এখন আর একটাও কথা না এখান থেকে উঠে সুন্দর করে ক্লাসে চলে যাবে কেমন..(শান্ত ভাবে)
সোনালীঃ…..
রোদঃ আর এসব হাজিবাজি বাদে অন্য কোন সাহায্য লাগলে বলবে কেমন…!!
সোনালীঃ জি… (মাথা নিচু করে)

বেচারা মেয়েটি আর কোন কথা না বলে একবার ছলছল চোখে রোদের দিকে তাকিয়ে সোজা হেঁটে চলে গেল!ঠান্ডা মাথায় আর শান্ত সুরে কিভাবে বাঁশ দিতে হয় এটা রোদের থেকে সবার শেখা উচিত।মেয়েটি চলে যেতেই আকাশ,সিয়াম আর আবৃতি হাসিতে ফেটে পড়লো।কারন এই নিয়ে ৪৮ টা মেয়ে রোদকে প্রোপোজ করছে আর রোদ সবাইকে বোন ডেকে সব গড়মিল করে দিসে।….

সিয়ামঃ আবার আরেকটা বোন বানালি রোদ হা হা হা
আবৃতিঃ এই রোদ তুই এমন করি কেন??একটা প্রেম করলে তো পারিস।
রোদঃ ধুররর এসব প্যারা আমি সহ্য করতে পারবো না..!!আর যাকে ভালবাসার তাকে ভালবাসলেই হলো।
সিয়ামঃ তা মেঘের বউমনি কি আজকে কলেজে এসেছে???
রোদঃ হুমমম!
আকাশঃ আলো যথেষ্ট ভদ্র একটা মেয়ে!রোদ আলোকে ইগনোর করিস না ভাই! এমন মেয়ে আর পাবি না।
রোদঃ হয়েছে উপদেশ দেওয়া! নাকি আরো বাকি আছে।বাকি থাকলে তারাতারি শেষ কর।
আকাশঃ ভাল কথা বললে উপদেশ হয়ে গেলো তাই না!
সিয়ামঃ যে আলো বাসায় তুলছো বস! সেই আলোতেই তুমি আলোকিত হবে….হা হা হা
আবৃতিঃ হা হা হা! যা বলেছিস সিয়াম
রোদঃ তোদের আমার পেছনে লাগা ছাড়া কি আর কোন কাজ নাই!আর আলোকে এখন পাত্তা দেওয়ার সময় আমার কাছে নাই।সো ওই মেয়েটার কথা বলিস না তো…
আকাশঃ হা হা হা!হুমমম! হুমম!
সিয়ামঃ রোদের আলো হয়েই নিজেকে আলোকিত করবে। শুধু সময়ের অপেক্ষা….!!
রোদঃ হুমম ব

রোদ কথা বলতে বলতে রোদের ফোন রিংটোন বেজে ওঠে!রোদ পকেট থেকে ফোন বের করে দেখে রোদের আম্মু। রোদ ফোনটা রিসিভ করে…
রোদঃ জি আম্মু..!!
আম্মুঃ আলো কি কলেজে পৌঁছে গেছে!
রোদঃ হুমমম
আম্মুঃআব্বু তুমি এখন কোথায় আছো??
রোদঃ আমি আশে পাশেই আছি!কেন কিছু বলবে??
আম্মুঃ আব্বু তুমি কি এখন একটু শপিং মলে যেতে পারবে??
রোদঃ কেন আম্মু?? জুরুরী কিছু..!!
আম্মুঃ আসলে একটা বড় টাওয়াল দরকার??
রোদঃ টাওয়াল আর এখন তুমি বড় টাওয়াল দিয়ে কি করবে??
আম্মুঃ আলোর ওয়াশরুমে যে টাওয়ালটা আছে ওইটা তো ছোট টাওয়াল।আর আলোর মে বি একটু সমস্যা হয় কারন ওর চুল তো বেশ বড়। সাওয়ার নিয়ে চুল পেছানো যায় না।যদিও আলো আমাকে লজ্জায় কিছু বলে নি বাট আমি খেয়াল করছি..!!
রোদঃ আম্মু আমি মেয়েলি জিনিস কোনদিন কিনি নি! তুমি বরং তোমার মেয়েকে নিয়ে নিজে গিয়ে কিনে নাও।
আম্মুঃ আমার কোমরের ব্যাথাটা বেড়েছে এজন্য তোমাকে বললাম।(যাহা ঢপ)
রোদঃ উফফ! আজকেই লাগবে কালকে আনলে হবে না। (বিরক্তের সুরে)
আম্মুঃ কলেজ থেকে এসে সাওয়ার নিবে তখন তো লাগবে তাই না।তাই এখন আনলে তো ভালো হয়…!!
রোদঃহুমম বুঝেছি!

তারপর রোদ ফোন কেটে দিলো আর একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।রোদ আকাশ আর সিয়ামকে বললো এখানেই আড্ডা দিতে আর আলোর দিকে খেয়াল রাখতে।সিয়াম আর আকাশ মুচকি হেসে মাথা নাড়িয়ে হ্যা বোঝালো।আর রোদ বাইক নিয়ে গেল শপিংমলে!রোদ ওর বাইক পার্ক করে শপিংমলে ঢুকে টাওয়াল দেখতে শুরু করলো!একটাও রোদের পছন্দ হচ্ছে না!রোদের বিরক্ত লাগছে। অনেক টাওয়াল দেখার পর রোদের একটা টাওয়াল পছন্দ হলো।
.
.
.
রোদ যে টাওয়াল টা পছন্দ করছে সেটা একটু বড় সাইজের আর টাওয়ালটা হালকা পিংকের উপর সাদা গোলাপ আঁকানো ! রোদ টাওয়ালটা নিলো আর আলোর জন্য একটা হেয়ার ড্রায়ার নিলো।তারপর রোদ সেগুলো নিয়ে আবার কলেজে চলে আসলো!রোদ আসার পর পরই আলো বাইরে বেরিয়ে আসলো!কারন আজকে আলোর আর কোন ক্লাস নাই!আলো কলেজের গেট দিয়ে বের হতেই দেখে রোদ বাইকে বসে ওর বন্ধু দের সাথে আড্ডা দিচ্ছে! আলো ভাবছে এখন রোদের কাছে যাবে কি না!আর রোদকেই বা কিভাবে ডাকবে।আর রোদ তো আলোকে কড়া ভাবে বলে দিয়েছে! সে যেন ছেলেদের থেকে দুরে থাকে!এখন ওখানে গেলে যদি রোদ রেগে যায় এজন্য আলো চুপচাপ দাড়িয়ে নখ কামড়াচ্ছিলো।
.
.
.
রোদ আলোকে দেখে সিয়াম আর আকাশের থেকে বিদায় নিয়ে বাইক স্টাট দিয়ে আলোর সামনে এসে থামলো।রোদ আলোর সামনে এসে অনেক জোরে ব্রেক কষে আর আলো ভয় পেয়ে কয়েক পা পিছিয়ে যায়।রোদ তেডি স্মাইল দিয়ে আলোকে বাইকে বসতে বলে!আলো রোদের বাইকে বসেতেই একটা জিনিস খেয়াল আর সেটা হলো অনেকেই আলোর দিকে হা করে তাকিয়ে আছে বাট আলো কিছু বুঝতে পারে না । রোদ কোন কথা না বলে বাইক স্টাট দেয়!আলো মুখ কাচুমাচু করে রোদকে জিজ্ঞেস করে…

আলোঃ ভ ভ ভাইয়া একটা কথা বলবো??আ আম
রোদঃনা!তার আগে তুমি আমাকে একটা কথা বলো! তুমি আমার কত নাম্বার মায়ের পেটের বোন যে আমাকে ভাইয়া ডাকো।ভাইয়া না ডেকে একেবারে মামা কিংবা আংকেল ডাকলেই তো পারো!একেবারে ল্যাটা চুকে যায়(দাঁতে দাঁত চেপে)
আলোঃ…..
রোদঃ এবার থেকে আমাকে মামা বা আংকেল ডাকবে??আর এখন চুপ করে আছো কেন?ফাজিল মেয়ে কানের কাছে সব সময় ভাইয়া ভাইয়া করে আমার কানের পোকা বের করে দেয়।(দাঁতে দাঁত চেপে)
আলোঃ…..
রোদঃ আর একটা কথা বলবে বলে আবার চুপ করে থাকলে কেন?এখন তোমার কথাটা শোনার জন্য কি আমাকে সিরিয়ালে দাড়াতে হবে..!!
আলোঃইয়ে না মানে! আমি যখন আপনার বাইকে বসলাম তখন অনেকে ওইভাবে তাকিয়ে ছিলো কেন?ওরা কি আপনাকে আগে থেকে চিনে…??
রোদঃ আমি ওই কলেজের স্টুডেন্ট !আর আমাকে সবাই ভালো করেই চেনে!আর সবাই কেন তাকিয়ে ছিলো আমি কি করে বলবো??ওরা তো আর আমাকে আগে থেকে কিছু বলে তারপর তাকায় নি যে! আমি সব জানবো আগে থেকে তাই না..!!
আলোঃ হুমমম…!!
রোদঃআর কে কি বললো?কে কি করলো এটা দেখার জন্য আপনাকে কলেজে পাঠানো হয় না।তাই অন্য দিকে খেয়াল না করে বইয়ের দিকে খেয়াল করুন।

রোদের সাথে আগ বাড়িয়ে কথা বলতে যাওয়া আর নিজের দিকে বাঁশের বাগান ঘুরিয়ে নেওয়া ওই একই কথা!তাই আলো আর কিছু বললো না চুপ চাপ রাস্তার মানুষ দেখতে লাগলো! আর রোদ ওর বাইকের লুকিং গ্লাস দিয়ে আলোর দিকে তাকাচ্ছে বার বার! কারন রোদে আলোর মুখটা লাল হয়ে গেছে!গাল গুলোও বেশ লাল হয়ে গেছে!নাকের উপরে, ঠোঁটে নিচে আর থুতনীতে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে আর দেখতে দারুন লাগছে!রোদের জানা ছিলোনা কারো ঘামার্ত মুখ দেখতে এত ভালো লাগে!রোদের কারনে ঘাম গুলো চিকচিক করছে…!!আলোর ওর নিচের ঠোঁট কামড়ে রাস্তার মানুষ দেখছে আর রোদ ওর বাইকের গ্লাসে আলোকে দেখছে।

এলোকেশী কন্যা  সিজন ২ পর্ব ৭+৮+৯

রোদ একটা দোকানের সামনে বাইক থামিয়ে আলোকে নামতে বললো।তারপর রোদ একটা স্প্রাইট নিয়ে খেতে শুরু করলো!রোদ আলোকে জিজ্ঞাসা করলো কি খাবে?আলো মাথা নাড়িয়ে বললো কিছু খাবে না! রোদ আলোকে দুইটা ভ্যানিলা আইসক্রিমের বক্স কিনে দিলো! আর দুইটা আইসক্রিম কিনে দেওয়ার কারন বাসাতে যে আরেক বিচ্ছুটা আছে তার একাই একটা লাগে!রোদ হাফ স্প্রাইট খেয়ে আলোকে বাকিটা খেতে বললো। আর আলো রোদকে মাথা নাড়িয়ে বললো যে সে খাবে না বললো!রোদ আলোর দিকে রাগী চোখে তাকাতেই আলো ভয়ে খেতে শুরু করলো!আলো ভয়ে তাড়াহুড়ো করে খেতে ভীষম খায়! রোদ এগিয়ে এসে আলোর দিকে পানি এগিয়ে দেয় আর মাথা হাত বুলাতে থাকে।আলোর কাশি থামলে রোদ আলোর দিকে তাকিয়ে বলে…!!
রোদঃ খাবে না বলে হাভাতের মত খাচ্ছিলে কেন??আস্তে খেলে কি আমি কেড়ে খেয়ে নিতাম।
আলোঃ বললাম তো খাবো না আপনিই তো…
রোদঃ ওহহহ্ তারমানে আমি যদি তোমাকে এখন বলি! আমাকে কিস করতে! তাহলে কি সত্যি আমাকে কিস করবে??
আলোঃ……

রোদের কথা শুনি আলো চোখ বড় বড় রোদের দিকে তাকিয়ে আছে!রোদ ওর ঠোঁটের কোণে দুষ্টু হাসির রেখা টেনে আলোকে বললো বাইকে বসতে! রোদও বাইকে বসে বাই স্টাট দিলো।তারপর দুই বাসায় গেল!আলো বাইক থেকে নামতেই রোদ শপিংব্যাগটা আলোর দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো……..!!!

রোদঃ এই যে খুকুমনি এটা শপিংব্যাগটা নাও!
আলোঃ কি আছে এটাতে??
রোদঃ এখানে একটা টাওয়াল আছে!আর টাওয়ালটা নিয়ে আপনি নিজের রুমে গিয়ে আগে আপনার এই পেত্নীর মত দেখতে মুখটা মুছবেন।আমি কিন্তু আগে মুখটাই মুছতে বলছি মনে থাকে যেন!আর আমার কথা না শুনলে কালকে থেকে কলেজে যাওয়া বন্ধ…!!
রোদ আলোকে এই কথাটা বলে হনহন করতে করতে বাসায় ঢুকে গেল।

এলোকেশী কন্যা  সিজন ২ পর্ব ১৩+১৪+১৫