এলোকেশী কন্যা সিজন ২ পর্ব ১৩+১৪+১৫

এলোকেশী কন্যা সিজন ২ পর্ব ১৩+১৪+১৫
লেখনীতে:- নূরজাহান আক্তার (আলো)

রোদঃ এখানে একটা টাওয়াল আছে!আর টাওয়ালটা নিয়ে আগে তোমার মুখটা মুছবে।আর আমার কথা না শুনলে কালকে থেকে কলেজে যাওয়া বন্ধ…!!
রোদ আলোকে এই কথাটা বলে হনহন করতে করতে বাসায় ঢুকে গেল।

মেঘ আলোকে দেখে আলোর কোলে হামলে পড়লো!তারপর আলো মেঘকে আদর দিয়ে কোল থেকে নামিয়ে মেঘকে বললো ফ্রেশ হয়ে এসে বিকালে দুজন মিলে আইসক্রিম খাবে! তারপর আলো ফ্রেশ হতে চলে গেল!আলো ওর রুমে দিয়ে হিজাব আর ওড়নাটা খুলে ফ্যানটা ছেড়ে দিলো!তারপর ঠাস করে বেডে শুয়ে পড়লো।আলো কখনো ভাবেনি যে আবার পড়াশোনা করতে পারবে!আর এটা ভাবতেই আলো অনেক খুশি লাগছে।হঠাৎ করে আলোর রোদের বলা কথা মনে হতেই আলো হুড়মুড়িয়ে বেড থেকে উঠে……!!!

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আলো বেড থেকে উঠে শপিংব্যাগ থেকে টাওয়াল বের করে করলো!টাওয়ালটা আলোর খুব পছন্দ হয়েছে তাই আলো রোদের কথামত মুখটা মোছার জন্য মুখের কাছে আনতেই !আলোর খুব পরিচিত একটা পারফিউমের সুবাস পাচ্ছে টাওয়াল থেকে!আলো কি মনে আগে টাওয়ালটা ওর ঠোঁটে উপর রাখলো! তারপর টাওয়ালটা নিয়ে পুরো মুখ ঢেকে একটা মুচকি হাসি দিলো! টাওয়াল মুখ থেকে সরিয়ে ওর ঘামে ভেজা মুখটা ভালো করে মুছে নিলো!টাওয়াল থেকে অন্য একটা পারফিউমের সুবাস পাচ্ছে যেটা আলো রোদের রোদের বাইকে বসার সময় আলোর রোদের শরীর থেকে পেয়েছিলো।
আলোর কেন জানি খুব খুশি লাগছে! আর বড় কথা হলো রোদ নিজে পছন্দ করে আলোকে টাওয়ালটা এনে দিয়েছে তাই।এজন্য আলো আরো বেশি খুশি…!!আলো মুচকি হাসতে হাসতে ওর ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল…!!

আলো ওয়াশরুমে ঢুকতেই রোদ বারান্দায় থেকে বের হয়ে ওর রুমে চলে গেল।রোদ ওর রুমে গিয়ে একটা ডায়রি আর পেন নিয়ে একটা বালিশটা বুকের কাছে নিয়ে নিজের ভর দিয়ে শুয়ে পড়লো।তারপর আবার বেড থেকে উঠে আলমারি খুলে একটা ডায়রী বের করলো!যদিও একটা সময় রোদের কাছে মনে হতো ডায়রি লিখা অযৌক্তিক। বাট আজকে কেন জানি ওর খুব ডায়রি লিখতে ইচ্ছা করছে।এজন্য রোদ ওর মনের কথায় শুনছে!রোদ কিছু একটা লিখছে আর মুচকি মুচকি হাসছে!রোদ ওর ডায়রীতে লিখলো….!!
তিলোকন্যা________!!
রোদ ডায়রী টা বন্ধ করে কিছু একটা ভেবে আবার বেড থেকে উঠে পড়ে!আর ডায়রীটা আবার আগের জায়গায় রেখে দেয়।তারপর রোদ টাওয়াল নিয়ে ওর ওয়াশরুমে চলে যায়।আলো সাওয়ার নিয়ে মাথায় টাওয়াল জড়িয়ে রুমে এসে ভেজা জামা কাপড় বারান্দায় মেলে দেয়! তারপর ভেজা চুল খোপা করে আর অজু করে নামাজে বসে পড়ে।নামাজ পড়ে নিচে চলে যায়!আলো নিচে গিয়ে দেখে মেঘ হাফ আইসক্রিম শেষ করে দিসে!আলোকে দেখে মেঘ বিশ্বজয় করা হাসি দেয়…!!
মেঘঃ বউমনি আসলে আইসক্রিম গুলো গলে যেত তাই আমি আগেই শুরু করছি।
আলোঃ তা ফ্রিজে আইসক্রিম রাখলে গলে যায় বুঝি..!! আগে জানতাম না তো (মুচকি হেসে)
মেঘঃ না মানে আইসক্রিম দেখলেই আমার মনটা আকুবাকু করে! আসলে আমি পরীক্ষা করে দেখলাম আইসক্রিম টা খেতে ভালো কি না???
আলোঃ ওহহহ্!!তাই বুঝি। তা বললে না তো মেঘবাবু আইসক্রিমটা কেমন খেতে।(মুচকি হেসে)
মেঘঃ ভালোই খেতে! তুমি একটু খেয়ে দেখো…!!
আলোঃ না এখন আর আইসক্রিম খাবো না!তুমিও এখন আর আইসক্রিম খাবে না মেঘবাবু!চলো আমরা এখন দুপুরের খাবার খাবো!
মেঘঃ আচ্ছা চলো..!!
আলো,রোদের আম্মু আর শিউলি মিলে ডায়নিং টেবিলে খাবার সাজিয়ে নিলো!রোদের আম্মু রোদকে ডাকলো রোদ উপর থেকে বললো আসছে!রোদ সাওয়ার নিয়ে একটা সাদা থ্রি কোয়াটার প্যান্ট আর কালো গেন্জী পড়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে নিচে তাকাতেই ওর হার্টবিট বেড়ে গেল!রোদের আম্মু আলোকে ওর ভেজা চুলো ছেড়ে দিতে বললো না হলে পড়ে আবার মাথা ব্যাথা করবে!আলোও মুচকি হেসে ওর চুলের খোঁপা খুলে দেয়!
আলোর লম্বা চুল গুলো ছেড়ে দেওয়ার! আর কাঁচা হলুদ আর ব্লু কম্বিনেশনের একটা থ্রি পিস পড়ে আছে!রোদ আস্তে আস্তে সিড়ি দিয়া নামছে আলোর দিকেই তাকিয়ে। আলো তখন রান্না ঘরে থেকে গ্লাস নিয়ে ডায়নিং টেবিলে রাখতে গিয়ে খেয়াল করে কেউ ওর পেছনে দাড়িয়ে আছে!রোদ শুধু সেদিনই একবার খেয়াল করছিলো আলোর চুল অনেক বড়! বাট আজকে নিজের চোখে এত বড় চুল তাও এত কাছাকাছি দেখে ও অবাক হয়ে গেছে!রোদ চেয়ার টেনে বসে পড়ে আর আগে একটু পানি খায়….!!
সবাই এক সাথেই খাচ্ছিলো! আলো আড়চোখে রোদের দিকে তাকাচ্ছিলো আর মেঘের মাছের কাটা বেছে দিচ্ছিলো!আলো মনে মনে রোদের কথায় ভাবছিলো…

আলোঃএকটা ছেলে এত সুন্দর করে খেতে পারে আলোর জানা ছিলো না!আর রোদকে এখন খুব ভালো দেখাচ্ছে কারন রোদের ভেজা চুল গুলোতে রোদের কপাল ঢেকে গেছে!রোদের ফেসের সাথে হেয়ার কাট টাও দারুন মানিয়েছে!রোদের আম্মু খেতে খেতে ফট করে বলে উঠলো…!!
রোদের আম্মুঃআজ হোক আর কাল হোক বরটা তো তোরই তাই না!এভাবে চুরি চুরি দেখার কি আছে আলো?সামনেই তো বসে আছে দেখলে ভালো করেই দেখ..!!
রোদঃ…..
রোদের আম্মুর কথা শুনে আলোর এখন ইচ্ছা করছে মাটি ফাঁক করে ঢুকে যেতে!রোদের সামনে এভাবে লজ্জায় পড়তে হবে এটা জানলে আলো কোনদিনও রোদের দিকে তাকাতো না!রোদের আম্মুর কথা শুনে রোদ একবার আলোর দিকে তাকায় তারপর আবার খাওয়াাতে মনোযোগ দেয়।রোদ এমন একটা ভাব করে! যেন এখন ওর খাওয়াতে মনোযোগ না দিলে পুরো পৃথিবী উল্টো পথে ঘুরতে শুরু করবে।হঠাৎ
মেঘ খেতে খেতে বলে উঠলো…..
মেঘঃ বউমনি তুমি লজ্জা পেও না!তুমি একবার বলো যে দাভাইকে তুমি দেখবে! তাহলে আমি সারাদিন দাভাইকে তোমার সামনেই বসিয়ে রাখবো।
রোদের আম্মুঃ থাক আমার মেয়েটাকে আর তোরা লজ্জা দিস না!এমনিতেই আমার মেয়েটা লজ্জায় লাল হয়ে গেছে! হা হা হা
আলোঃ……
মেঘঃবউমনি দাভাই কে দেখে তুমি লজ্জা পাচ্ছো কেন??আমার জানামতে নতুন বউ তার বরকে দেখে লজ্জা পায়…!!! তাহলে তুমি কেন লজ্জা পাচ্ছো??
আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা।
রোদঃ….
রোদের আম্মুঃ আলো এভাবে লজ্জা পাস না মা! আমার ছেলেটা তো তোর এই লজ্জা মাখা মুখ দেখে তোর প্রেমে হাবুডুবু খাবে।তখন ওকে সামলানো মুশকিল হয়ে যাবে।
মেঘঃ শুধু হাবুডুবু না আম্মু। দাভাই বউমনির প্রেমে পইড়া মইরা তো অলরেডি লাশও হয়ে গেছে…!!হা হা হা
রোদের আম্মুঃ আচ্ছা এসব কথা বাদ!আলো আজকে কলেজে কেমন সময় কাটলো তোর।
আলোঃ ভ ভ ভা ভালো!
রোদের আম্মুঃ আচ্ছা শোন মনযোগ দিয়ে পড়াশোনা করবি আর কিছু বুঝতে না পারলে রোদ তো আছে। রোদের থেকে বুঝিয়ে নিস কেমন…!!
আলোঃ জি!!
মেঘঃবউমনি এই জামাতে তোমাকে অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে।পুরাই জখাম
আলোঃহা হা হা!ধন্যবাদ মেঘবাবু..!!
রোদঃ আম্মু আমার খাওয়ার শেষ আমি উঠলাম…
রোদ কথাটা বলে বেসিনে হাত ধুয়ে হনহন করতে করতে ওর রুমে চলে গেল!রোদ চলে যাওয়াতে আলোও যেন হাফ ফেড়ে বাঁচলো।তারপর যে যার মত খেয়ে রুমে চলে গেল!আলোর আর মেঘ দু’জনে আলোর রুমে শুয়ে গল্প করতে করতে ঘুমিয়ে গেল!রোদও মুভি দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়ে আর দুপুরে খাবার পর একটা ভাতঘুম না দিলেই কেমন জানি লাগে!রোদের আম্মু আলোর রুমে এসে দেখে আলো ওর চুল গুলো ছেড়ে দিয়ে মেঘকে সাথে নিয়ে ঘুমাচ্ছে…!!রোদের আম্মু আলোর দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে!

রোদের আম্মুঃ কে বললো রাজার ঘরেই শুধু রাজকন্যা হয়!গরীবের ঘরেও রাজকন্যা হয়।যেমন তুই আলো!আল্লাহ তোকে নিজে হাতে বানিয়েছে।
আমি দোয়া করি আলো তুই জীবনে অনেক বড় হবি!আমি মানুষ চিনতে ভুল করিনি! তোর মতই মেয়ে আমার রোদের জন্য পারফেক্ট!আমার কেন জানি মনে হয় রোদেও তোকে পছন্দ করে কারন আমিই মাঝে মাঝে তোর রুপ আর চুল দেখে অবাক হয়ে যায়।সেখানে আমার ছেলেই বা কতদিন নিজেকে আটকে রাখবে।আর প্রতিটা মানুষ সুন্দরের পূজারী। আজকে আমি নিজের চোখে দেখছি রোদ অবাক হয়ে তোর চুলের দিকে তাকিয়ে ছিলো!আর প্রতিটা ছেলেই একটু হলেও বড় চুলের মেয়েদের প্রতি দূবল থাকে!আর রোদও দেখবি একটা সময় তোকে গ্রহন করবে।শুধু সময়ের অপেক্ষা আর আমিও খুব তারাতারি তোদের বিয়ে দিয়ে দিবো কারন আগুন আর ঘি এই দুটো একসাথে রাখতে নেই…!!

#এলোকেশী_কন্যা২__
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_14

________ রোদের আম্মু আলোর রুম থেকে বের হয়ে রোদের রুমে চলে গেল!রোদের বেডের পাশে বসতেই রোদ উঠে ওর আম্মুর কোলে মাথা রাখলো!রোদের আম্মু মুচকি হেসে রোদের চুল টেনে দিতে শুরু করলো।রোদের আম্মু বলতে শুরু করলো…!!
রোদের আম্মুঃআব্বু আমার উপর তোমার বিশ্বাস আছে তো (মুচকি হেসে)
রোদঃ আম্মু এসব কি বলো?তোমার উপর যদি বিশ্বাস না করি! তাহলে পৃথিবীর কারো উপরেই বিশ্বাস করার প্রশ্নই আসে না।আম্মু আমার বিশ্বাস, ভরসা,আস্থা সব তুমি!
রোদের আম্মুঃ কথাটা শুনে খুশি হলাম!তাহলে আমি যা বলবো তাই করতে হবে।কি করতে পারবে তো আব্বু??
রোদঃ ওকে বিয়ে করার ছাড়া! যা করতে বলবে আমি সব করতে রাজি আছি।
আম্মুঃ কেন আব্বু আলোকে বিয়ে করতে সমস্যা কোথায় তোমার??আমি জানি তুমি কোন কারণ ছাড়া কিছু করো না।তবে এখন আমাকে যদি একটা সত্যি কথা বলো! তাহলে আমি তোমাকে আপাতত আর বিয়ের কথা বলবো না…!!
রোদঃ কি কথা বলো??

আম্মুঃ আলোকে তোমার কেমন লাগে?আমি সোজাসাপ্টা উওর আশা করছি আব্বু…!!
রোদঃ আম্মু এসব কথা থাক না!অন্য কথা বলো।
আম্মুঃ না আমি যেটা জানতে চাচ্ছি সেই উওরটা আগে দাও!তুমি কি আলোকে পছন্দ করো???
রোদঃওকে আমার ভালো লাগে বাট বিয়ে করার মত ভালো লাগে না!আর ভাল লাগারও তো প্রকারভেদ আছে তাই না আম্মু..!!
আম্মুঃ হা হা হা!আমি জানতাম তুমি স্মার্টলি একটা আনসার করে কথাটা এড়িয়ে যাবে।তবে সমস্যা নেই আব্বু! তোমাকে মুখে বলতে হবে না আমি তোমার চোখের ভাষা পড়তে পারি!কারন আমি তোমার আম্মু…..!!
রোদঃ আম্মু রাগ করো না প্লিজ! তুমি সময় মত এই কথাটার আনসার পেয়ে যাবে!আমাকে কিছু দিন সময় দাও।অনেকে রিলেশন করবো বলে যার তার সাথে রিলেশনে জড়িয়ে পড়ে!দেখা নেই, জানা নেই, পরে তারা আপসোস করে!আর বিয়ে তো এক দুইদিনের ব্যাপার না তাই আমি কোন রিস্ক নিতে চাই না!আমি পড়াশোনা শেষ করে জব করতে চাই…তারপর বিয়ে।
আম্মুঃ জব না করলে কি তোমার বউ না খেয়ে মরবে?তোমার বাবার যা আছে তোমাদের দুইভাইয়ের ছেলে মেয়েদেরও কিছু না করলেও চলবে!আর নিজেদের বিসনেজ থাকতে অন্য কোথাও জব করার কি দরকার??? (রেগে গিয়ে)
রোদঃ নিজের যোগ্যতায় আমি কিছু করতে চাই…!!
রোদের আম্মুঃ প্রথমত আমি তোমাকে বাইরে জব করতে দিতে রাজি না!কারন আমি আমার ছেলেকে বাইরের কারো কাছে কথা শুনতে দিবো না।আর কিছু করতে চাইলো নিজেদের বিসনেসের হাল ধরো! আর তা না হলে ঘরে বসে থাকো!আর তুমি কিছু না করলেও তোমার বউ বাচ্চা না খেয়ে থাকবে না।
রোদঃ আচ্ছা এখন এসব কথা বাদ দাও!আমার মাথা ব্যাথা করছে ! এখন তুমি আমার মাথা টিপে দাও তো।
আম্মুঃপারবো না!তুই কি আমার কথা শুনিস যে আমি তোর কথা শুনবো।তোরা কেউ আমার সাথে কথা বলবি না (রেগে গিয়ে)
রোদঃ আরো আম্মু রাগ করছো কেন?আমার কথাটা তো শুনে যাও…!!
রোদের আম্মু রোদের কোন কথা না শুনে হনহন করতে করতে চলে গেল!রোদ জানে এখন ওর আম্মু ওর আব্বু ফোন দিয়ে কয়েক দফা ঝাড়বে! বেচারা রোদের আব্বু কিছু বুঝতে না পেরে চুপ থাকবে।তার ৩০ মিঃ পর রোদের আম্মু নিজেই রোদের আব্বুকে ফোন দিয়ে সরি বলবে।রোদ বা মেঘ যদি কথা না শুনে তাহলে রোদের আম্মু ছেলেদের কিছু বলে না। ছেলেদের বাবার উপরে উনার সব রাগ তুলে।আজকেও সেইম কাজ হয়েছে!রোদের আম্মু রোদের আব্বু ধুমাইয়া কয়েকদফা ঝেড়ে দিলো আর বেচারা রোদের আব্বু কিছু তো বুঝলোই না শুধু শুধু বকা গুলো পানি ছাড়াই গিলে নিলো….!!
রোদের আম্মু আলোর রুমে গিয়ে দেখে আলো ঘুম থেকে উঠে বসে আছে!রোদের আম্মু আলোর কাছে গিয়ে বললো…
রোদের আম্মুঃএই মেয়ে শোন! বড় গাধাটা আমার মাথা গরম করে দিসে!তুই তারাতারি এখন আমাকে তোর হাতে সেই স্পেশাল চা টা খাওয়া তো।

আলোঃ বড় গাধা আবার কে আম্মু?? (অবাক হয়ে)
রোদের আম্মুঃ যার বউ করার জন্য তোকে এই বাড়িতে এনেছি সেই বড় গাধা। (রেগে চিৎকার করে)
আলোঃ …..(অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে)
রোদের আম্মুঃ চা করলে রোদের জন্যও করবি ওর নাকি মাথা ব্যাথা করছে।তবে চা করে প্রথমে আমাকে দিয়ে তারপর রোদকে দিবি!আমি আমার রুমে গেলাম আইস ব্যাগ টা নিয়ে। আপাতত আমার মাথাটা খুব গরম…!!
আলোঃ জি…!!
রোদের আম্মু চলে গেলো আর আলো অবাকের পালা শেষ করে!ওয়াশরুমে গিয়ে মুখটা ধুয়ে
রান্না ঘরের দিকে হাটা ধরলো!তারপর আলো ওর হাতে চা বানিয়ে আগে রোদের আম্মুকে দিয়ে এলো!এবার আলো পড়ছে আরেক বিপদে! আলোর এখন মনে হয় রোদের সামনে যাওয়া আর বাঘের সামনে যাওয়া দুটোই সমান।এখন আলোর আবার বাঘের সামনে পড়তে হবে এটন ভাবলেই আলোর দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আলো চায়ের কাপ হাতে নিয়ে গুটি গুটি পায়ে এগুলো রোদের রুমের দিকে!আলোর রোদের রুমের দরজাতে নক করলো বাট কারো সাড়া শব্দ না পেয়ে রুমের দরজাতে হাত দিতেই দরজা খুলে গেল।আলোর গুটি পায়ে রোদের রুমে ঢুকলো…!!
আলো রোদের রুমের চারপাশটা ঘুরে দেখছে!রুমটা অত্যাধুনিক আসবাবপএ দিয়ে সাজানো। রুমের প্রতিটা আসবাবপত্রই অানকমন ডিজিইনের তৈরী!বড় বড় ফুলদানী, শোপিস, এ্যাকুরিয়ামও আছে। আলো দাড়িয়ে দাড়িয়ে এসব দেখছিলো ঠিক তখন ওয়াশরুমের দরজা খোলার শব্দ শুনতেই আলো পেছনে ঘুরে তাকায়। রোদও আলোকে দেখে একটু অবাক হয় বাট নিজেকে সামলে নেয় আর ভ্রু কুচকে জিজ্ঞাসা করে….!!
রোদঃ আমার রুমে কি চাই তোমার??

আলোঃ ম ম মা মানে ভ ভ ভাই ভাইয়া চ চ চা দিতে এসেছিলাম। (তোতলাতে তোতলাতে)
রোদঃ আমাকে তুমি কি বললে??(রাগী চোখে তাকিয়ে)
আলোঃ ওহহ স স সরি মাম ম মামা।
রোদঃ তুমি আমাকে মামা ডাকলে! তোমার সাহস তো কম না!এখুনি আমার রুম থেকে তুমি বেরিয়ে যাবে এখুনি….!! (চিৎকার করে)
আলোঃ ত ত তাহলে কি ডাকবো??আপনি তো কালকে বললেন মামা বা আংকেল ডাকতে।তাহলে এখন আ আপনি এত রেগে যাচ্ছেন কেন?(কাঁপতে কাঁপতে)
রোদঃ আমি কেন রেগে যাবো!আমার তো এখন খুশিতে ধেই ধেই করে নাচতে ইচ্ছে করছে।(দাঁতে দাঁত চেপে)
রোদ রাগী চোখে আলোর দিকে তাকিয়ে আছে!আর আলো অলরেডি ভয়ে কাঁপতে শুরু করছে!আলো এত পরিমাণ কাঁপছে যে হাতে থাকা চায়ের কাপটাও ঠকঠক করে শব্দ হচ্ছে। আলোর এখন পানি খাওয়ার খুব দরকার!রোদের চিৎকারে আলো এত পরিমাণ ভয় পেয়েছে যে আলোর গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে!আলো অনেক সাহস করে আলোর পাশে থাকা সেন্টার টেবিলের উপর চায়ের কাপটা রেখে আশেপাশে না তাকিয়ে উল্টো ঘুরে ভৌ-দৌড় দিসে!আর রোদ আলোর যাওয়ার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে….!!!
রোদঃ অসভ্য মেয়ে একটা! এতদিন ভাইয়া ডাকতো এখন আবার সরাসরি মামা ডাকছে ভাবা যায়!মন চাচ্ছে তুলে আছাড় দিতে (দাঁতে দাঁত চেপে)
আলোর রোদের রুম থেকে এসে ওর বেডে ধপ করে বসে পড়ে!মেঘ তখন ঘুম থেকে উঠে আড়মোড়া ভেঙ্গে কুটুরকুটুর করে সামনে তাকিয়ে ছিলো।মেঘ আলোকে দেখে মুচকি হাসি দিলো! বাট আলো তখনও কাঁপছিলো মেঘ তারাতারি উঠে আলোর গায়ে কম্বল দিয়ে দেয়!মেঘ মনে করছে আলোর শীত করছে এজন্য…!! মেঘের কথার আলোর আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয়…!!!
পরেরদিন সকালে ___________!!

আলো সকালে উঠে নামাজ পড়ে তারপর ব্রেক ফাস্ট বানিয়ে মেঘকে ঘুম থেকে টেনে তুলে ফ্রেশ হতে পাঠিয়ে দেয়।মেঘ ফ্রেশ হয়ে আসলে আলো মেঘকে খাইয়ে দিয়ে এক্কেবারে স্কুলে জন্য রেডি করে নিচে যায়।তারপর আলো মেঘের কপালে আদর দিয়ে দেয় আর মেঘও আলোকে আদর দিয়ে টাটা দিয়ে স্কুলে চলে যায়।
মেঘ স্কুলে পৌছে ওর ক্লাসে চলে যায়! আর পাশের জনের ব্যাগ দিয়ে নিজের বসার জায়গা মুছে ব্যাগটা আগের জায়গাতে রেখে দেয়!মেঘ নিজের জায়গায় বসতেই ক্লাস টিচার চলে আসে!টিচার রোল কল করছে তখন মেঘ খাতাতে ডোরেমন আঁকাতে বিজি! মেঘের রোল পাস হওয়ার পর মেঘের মনে হয় ওর রোল মিস হয়ে গেছে।মেঘ যেহেতু পেজেন্ট দিতে পারেনি তাই মেঘ ওর পাশের জনেরও মুখ চেপে ধরে! যাতে সেও পেজেন্ট দিতে না পারে!মেঘ যার মুখ চেপে ধরে ছিলো সে টিচারকে বলে দেওয়া উঠে দাড়ায় আর বলে…
সাবিদঃমেঘ আমি টিচার কে বলে দিবো! তুই আমাকে পেজেন্ট দিতে দিস নি…
মেঘঃ বলে দেখ!আমিও টিফিন পিরিয়ডে সব মেয়ের সামনে তোর প্যান্ট খুলে দিবো। (দুষ্টু হেসে)
বেচারা সাবিদ ভয়ে টিচারকে আর না বলে আবার বসে পড়লো!মেঘদের প্রথম ক্লাস ম্যাথ এজন্য টিচার সবাইকে নামতা পড়ে আসতে বলেছিলো !টিচার সবাইকে পড়া ধরতে ধরতে মেঘের কাছে আসলো।মেঘও বীরের উঠে দাঁড়ালো….!!
টিচারঃ মেঘ ৪ এর ঘরে নামতা বলো…!!
মেঘঃ ওকে স্যার…!!
টিচারঃকি হলো বলো???
মেঘঃ লা লা লা! হুম হুমম হুমম………!!!
টিচারঃ তোমাকে নামতা বলতে বলছি তুমি লা লা করছো কেন?? (ভ্রু কুচকে তাকিয়ে)
মেঘঃ লা লা লা!(মুখ কাচুমাচু করে)
টিচারঃ তুমি কি আমার সাথে ফাজলামি করছো??আজকেও পড়া না পারলে তোমাকে কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখবো কিন্তু.. (দাঁতে দাঁত চেপে)
মেঘঃ ইয়ে মানে স্যার আসলে নামতার সুর টা আমার মনে আছে! কিন্তু নামতাটা মনে নাই!আপনি চাইলে আমি আপনাকে পাগলু গানটা গেয়ে শোনাতে পারি…(বিশ্বজয় করা হাসি দিয়ে)

#এলোকেশী_কন্যা২__
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_15

মেঘঃ ইয়ে মানে স্যার আসলে নামতার সুর টা আমার মনে আছে কিন্তু নামতা টা আপাতত মনে নাই।আপনি চাইলে আমি আপনাকে পাগলু গানটা গেয়ে শোনাতে পারি…(বিশ্বজয় করা হাসি দিয়ে)
স্যার মেঘের আর কোন কথা না শুনে ক্লাসের বাইরে মেঘকে কান ধরিয়ে দাড় করিয়ে রাখলো!যদিও মেঘের কাছে এটা নতুন কিছু না!কারন সপ্তাহে পাঁচদিনই মেঘ ক্লাসের বাইরে কান ধরে দাড়িয়ে থাকে!মেঘ প্রতিদিন ম্যাথ টিচারের অসুখ কামনা করে! যাতে ম্যাথ স্কুলে না আসতে পারে! আর ওদের ক্লাস নিতে না পারে।বেচারা মেঘ কান ধরে এদিক ওদিক তাকিয়ে পযবেক্ষণ করছে কোথায় কি হচ্ছে?? একটু দুরে মেঘ দেখে একটা বিড়াল একটা প্রাচীরের উপর ঘুমিয়ে আছে!মেঘ গুটি গুটি পায়ে আর একটু সামনে এগিয়ে গেল!আর বিড়ালটাকে ভালো করে দেখছে আর মনে মনে বলছে..!!
মেঘঃ আহারে ম্যাওটা কত কষ্ট করে বালিশ ছাড়া ঘুমাচ্ছে! আমি যদি কোনদিন দেশের প্রধান মন্ত্রী হয় তাদের সব বিড়ালকে একটা করে বালিশ দান করবো।আর বিড়াল ছানা গুলোকে গুলোকে একটা করে দুধের প্যাকেট দিবো…. (মনে মনে)
তারপর মেঘ বিড়ালটাকে দেখে আবার আগের জায়গায় এসে দাঁড়ালো! আর টিচারের দিকে তাকিয়ে টিচারকে কয়েক দফা গালি শুরু করলো।
মেঘঃ এই স্যারটা আমার জীবনের সব শান্তি কেড়ে নিলো!আমি মনে থেকে দোয়া করলাম স্যার আজকে বাসায় গেলে স্যারের বউ স্যারকে রান্না করতে দিবে। স্যার রান্না করতে গিয়ে রান্না পুড়িয়ে ফেলবে! তখন স্যারের বউ স্যার কে মেরে স্যারের পেছন পার্ট লাল করে দিবে!তখন হারামজাদা স্যার বুঝতে পারবে আমার কষ্টটা! আমারও যে দাড়িয়ে থাকতে থাকতে পেছন পার্ট ব্যাথা হয়ে যায়।আল্লাহ প্লিজ আজকে আমার দোয়াতে কবুল করো। (মনে মনে)
ওইদিকে________!!

আলো কলেজে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে গেছে!আর রোদের তো ঘুম থেকে উঠার নামই নেই।রোদের আম্মু রোদকে ডাকতে গেলে আলো নিষেধ করে দেয়!আলো বলে আলো একাই চলে যেতে পারবে!রোদের আম্মু আলোকে একা ছাড়ে না বরং বাড়ির গাড়িতে করেই আলোকে কলেজে পাঠিয়ে দেয়।আলো কলেজে গিয়ে ক্লাস রুমে গিয়ে বসতেই কয়েকজন মেয়ে আলোকে ঘিরে ধরে। আলো মুচকি হেসে সবাইকে সালাম দেয়! বাট মেয়েগুলো সালামের উওর না নিয়ে হো হো হাসতে শুরু করে!আলো বুঝতে পারে না ওদের হাসির কারন! এজন্য আলো ফ্যাল ফ্যাল করে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে!ওদের মধ্যে একজন বলে উঠে……!!
রিপাঃ রোদকে বস করলে কিভাবে??আমরা কলেজের টপ সুন্দরী হয়েও ওর পাশে ঘেষতে পারলাম না! আর তুমি কি না ওর বাইকে বসেছো…???
রুশাঃতুমিও কম সুন্দরী না তারপরেও বলবো রোদের থেকে দূরে থাকো।কারন ঐশী যদি জানে তাহলে তোমাকে জানে মেরে দিবে।
আলোঃ আপনারা কে?আর আমার সাথে এভাবে কথা বলছেন কেন??
রিপাঃ আমরা কে এখনই তুমি জেনে যাবে! এত অধৈর্য হলে চলবে..!!
ঐশীঃ রোদ আমাকে ইগনোর করে তোকে ওর বাইকে বসিয়েছি।রোদ মনে করছে রোদ যা বলবে আমি চুপচাপ ওর কথায় মেনে নিবো।হা হা হা সো ফানি….!!
ঐশী কথা বলতে বলতে আলোর হিজাব ধরে এক টান দিলো আর হিজাব খুলে গেল!ঐশী জোর করে আলোর হিজাব খুলে মাটিতে ফেলে দিলো! আলো কেঁদে কেঁদে বার বার নিষেধ করছে তাও শুনছে না আলোর কথা কেউ……!!
আলোঃ এমন করবেন না!আপনি আমাকে মারুন
আমি মেনে নিবো! তাও আল্লাহ দোহায় লাগে আমার হিজাবে হাত দিবেন না।(কেঁদে কেঁদে)

ঐশীঃ রোদকে আমি ৪ বছর ধরে ভালবাসি!যে কোন মূল্যে আমার রোদকে চাই ই চাই!আমি যেখানে রোদের সাথে ১০ সেকেন্ডের জন্য কথা বলতে পারি নি! আর তুই কি না আমার রোদের বাইকে বসেছিস। জানে মেরে দিবো তুই আমাকে চিনিস না….(ধাক্কা মেরে)
ঐশী কথাটা বলে আলোকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়!আর আলোর বেঞের কোনায় গিয়ে মাথায় আঘাত পায়!তারপর ঐশী চলে যায় রুম থেকে। আলো মেঝে থেকে হিজাবটা তুলে কোন কমন রুমে গিয়ে হিজাবটা ঠিক করে!আর কাঁদতে কাঁদতে কলেজ থেকে বেরিয়ে যায়।ওইদিকে১০ টার রোদের ঘুম ভাঙ্গে!আর ঘড়ি দেখে হুড়মুড়িয়ে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে যায়!রোদ নিচে গিয়ে শিউলির থেকে জানতে পারে আলো একাই কলেজে চলে গেছে!রোদ রাগে চোখ মুখ লাল করে ফোঁস ফোঁস করতে করতে বাইক নিয়ে বের হয়ে গেল।
আলোকে এভাবে যেতে দেখে আবৃতি, আশা, আকাশ, সিয়াম অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে!আকাশ সাথে সাথে ফোন বের করে রোদকে ফোন দেয়! বাট রোদ তখন তাড়াহুড়ো করতে করতে ওর ফোনটাই বাসায় রেখে চলে আসে।আকাশ, সিয়াম বার বার রোদকে ফোন দিয়ে যাচ্ছে বাট কেউ ফোনটা রিসিভ করছে না।এদিকে আলো কাঁদছে আর রাস্তায় দৌড়াচ্ছে আর তখনই রোদের বাইকের সামনেই পড়ে!পিচঢালা রাস্তায় পড়ে গিয়ে হাত ছিলে রক্ত বের হতে থাকে!রোদ তারাতারি বাইক সাইড করে আলোকে তুলে…
আলো রোদকে দেখে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো!আলোর চোখের পানি দেখে রোদ ভ্রু কুচকে জিজ্ঞাসা করে…
রোদঃ কি হয়েছে এভাবে পাগলে মত রাস্তায় হাটছিলে কেন???
আলোঃ….
রোদঃ কেউ কিছু বলছে?? এভাবে কাঁদছো কেন??বলো আমাকে??
আলো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদেই যাচ্ছে!চোখ, নাক ঠোঁট , গাল লাল হয়ে আছে!চোখ থেকে অনবরত পানি পড়ছে!রোদ আর আলোকে কিছু জিজ্ঞাসা করে না! রোদ আলোকে বাইকে বসতে বলে!রোদ বাইক স্টাট দেয় আর আলোকে নিয়ে একটা পার্ক যায়।কারন এখন বাসায় গেলে রোদের আম্মু তুলকালাম বাঁধিয়ে ছাড়বে।তারপর রোদ বাইক পার্ক করে আলোকে একটা জায়গায় বসতে বলে আর রোদ একটা দোকানে পানি আনতে যায়।রোদ পানি এনে আলোকে খেতে বলে আর চোখ মুখে পানি দিতে বলে!আলো পানির বোতল নিয়ে বসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদেই যাচ্ছে…!!

রোদ আলোর হাত থেকে পানি বোতলটা কেড়ে নিলো!তারপর আলোর গাল চেপে ধরে পানি মুখে দিলো!আলো চোখ বড় বড় তাকিয়ে আছে।রোদ আলোর মুখে পানি দেওয়ার পরেও আলো মুখ পানি নিয়ে বসে আছে!আসলে রোদের এমন কাজে আলো যে পানি গিলবে এটাই ভুলে গেছে!রোদ দেখে আলো পানি না খেয়ে রোদের দিকেই তাকিয়ে আছে!রোদ এবার আলো নাক চেপে ধরলো আর আলো সাথে সাথে পানি টা খেয়ে নিলো!আলো পানিটা খেয়ে ভ্য ভ্য করে কেঁদে দিলো বেচারা আলো আর সহ্য করতে পারছে না…..
রোদঃ আরে বাবা রে কি হয়েছে না বলে ছিচকাদুনের মত কাঁদছো কেন?আর পার্ক এসে এভাবে কাঁদলে পাবলিক মনে করবে আমি উল্টা পাল্টা কিছু করছি।কান্না থামাবে নাকি থাটিয়ে একটা থাপ্পড় দিবো। অযথা না কেঁদে মার খেয়ে তারপর বসে কাঁদতে থাকো।
আলোঃআপনি শুধু শুধু আমাকে বকা দেন কেন??(ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে)
রোদঃনা বকবো না! কোলে বসিয়ে আদর করবো।আর কাঁদছো কেন এটাই তো জানতে চাচ্ছি না বললে আমি জানবো কি করে??
আলো রোদকে কিছু বললো না!রোদ বার বার জিজ্ঞাসা করছে বাট আলো টু শব্দও আর করে নি!রোদ আলোর পাশে বসে ফোনে কিছু একটা করছে আর আলো তাকিয়ে আছে একটা গাছের ডালে দিকে।আলো যে গাছের ডালের দিকে তাকিয়ে আছে সেখানে একটা পাখি তার ছানা গুলোকে কিছু খাওয়াচ্ছে।আর পাখির ছানাগুলো কিচিরমিচির শব্দ করছে!হয়তো আলোও এখন ওর বাবা মাকে মিস করছে।রোদও খেয়াল করছে বিষয়টা তারপর রোদ আলোকে উদ্দেশ্য করে বললো….
রোদঃ আমি সকালে খেয়ে আসিনি!আমার খুব খুধা লাগছে। চলো আমি এখন কিছু খাবো….
আলোঃ আমি কিছু খাবো না! আপনি যান
রোদঃ যা বাবা! আমি আবার তোমাকে আমি কখন খেতে বললাম।আমি খাবো আর তুমি বসে বসে দেখবে..!!
আলোঃ আমি বাসায় যাবো এখন!আমার ভালো লাগছে না।
রোদঃ না এখন বাসায় যেতে হবে না!কারন এখন বাসায় গেলে তোমাকে দেখার সাথে সাথে আম্মু আমাকে ঝাড়া শুরু করবে!
আলোঃ…

এলোকেশী কন্যা  সিজন ২ পর্ব ১০+১১+১২

রোদঃ আচ্ছা একটা সত্যি কথা বলো তো..??
আলোঃ কি সত্যি কথা??
রোদঃ তোমরা মেয়েরা এত ছিচকাদুনে কেন?আর তোমাদের চোখের এত পানি আসেই বা কোথায় থেকে!কিছু হলেই এমন ভাবে মরা কান্না শুরু করে যে বন্যা বানানো কনট্রাক নিয়েছো…!তারপরের নাক টেনে কান্না করো। ছিঃ!ইয়াক…..
আলোঃ আচ্ছা আপনি যান কিছু খেয়ে আসুন!আমি বসে আছি..!!
রোদঃ মেঘ যদি সাথে যায় তো যাবে..!!
মেঘের কথা শুনে আলো রোদের দিকে একবার তাকালো!কারন এখন আলোর মেঘকেই খুব দরকার।মেঘেই পারবে আলোর মনটা ভালো করতে।
রোদ আলোর তাকানোর মানে বুঝতে পেরে উঠে দাঁড়ালো! রোদ আর আলো মেঘের স্কুলে গেল! মেঘের স্কুল ছুটি দিতে আর ৫ মিঃ বাকি।রোদ মেঘের স্কুলের সামনে গিয়ে দেখে ওদের গাড়ির ড্রাইভার এসেছে মেঘকে নিতে!রোদ ড্রাইভারের কাছে গিয়ে বললো….
রোদঃ রমিজ আংকেল আপনি আমার বাইক নিয়ে বাসায় চলে যান।আর আমি মেঘকে নিয়ে পরে বাসায় ফিরবো…
রমিজঃ আচ্ছা বাবা!

রমিজ আংকেল রোদের বাইক নিয়ে চলে গেল!রোদ আর আলো দাড়িয়ে আছে মেঘের জন্য! রোদ আড়চোখে আলোর দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নেয়।তখন মেঘ গেট দিয়ে সবাইকে ঠেলেঠুলে বের হচ্ছিলো।মেঘ আশে পাশে তাকিয়ে ওদের গাড়ি খুঁজতে থাকে! রোদ আর আলো এক সাইডেই দাড়িয়ে মেঘের কান্ড দেখছে।মেঘের স্কুলে ড্রেস দেখে মনে হচ্ছে মেঘ যুদ্ধ করে বের হলো!শার্টের উপরে একটা বোতাম খোলা!টাই টার বেহাল দশা,আর জুতার কথা নাই বা বললাম।তবে চুল গুলো একদম ঠিক ঠাক আছে।রোদের ভাই বলে কথা।রোদ আর মেঘ তাদের চুল নিয়ে মজা করা একদমই পছন্দ করে না।মেঘ আশ পাশে তাকাচ্ছে ড্রাইভার আংকেল কে খুঁজছে! আর রোদ তখন গাড়িতে থাকা ফাস্ট এইডের বক্সটা বের করে! আর আলোর হাতে পরিষ্কার করে ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ করে দেয়।
মেঘ কোমরে দুই হাত দিয়ে ভ্রু কুচকে আশেপাশে তাকাচ্ছে!হঠাৎই আলোর দিকে মেঘের চোখ যায় আর একদৌড়ে আলোকে জড়িয়ে ধরে।আলোকে দেখে মেঘ খুব খুশি হয়েছে!রোদ আলো আর মেঘকে গাড়িতে বসতে বললো।আলো পেছনে বসতে গেলে রোদ আলোকে সামনে বসতে বসলো।আলো ওর সাইড ব্যাগ আর মেঘের থেকে কাঁধ থেকে ব্যাগটা নামিয়ে পেছনের সিটে রেখে দিলো!আর মেঘকে কোলে নিয়ে সামনের সিটেই বসে পড়লো।আলো মেঘকে ওর দিকে ঘুরিয়ে শার্ট টা ঠিক করলো!টাই টা সুন্দর করে বেঁধে দিলো তারপর মেঘের ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে হাত ভিজিয়ে মেঘের মুখটা ধুয়ে দিলো! তারপর নিজের ওড়না দিয়ে মেঘের মুখটা মুছে দিলো!মেঘ ভ্রু কুচকে আলোর দিকে তাকিয়ে আছে…!!
হঠাৎ মেঘ রোদের উপর হামলে পড়লো!কিল,ঘূষি,কামড় সাথে রোদের শার্ট ধরে টানতে শুরু করলো…..!!!

এলোকেশী কন্যা  সিজন ২ পর্ব ১৬+১৭+১৮