এলোকেশী কন্যা সিজন ২ পর্ব ১৬+১৭+১৮

এলোকেশী কন্যা সিজন ২ পর্ব ১৬+১৭+১৮
লেখনীতে:- নূরজাহান আক্তার (আলো)

________হঠাৎ মেঘ রোদের উপর হামলে পড়লো!কিল,ঘূষি,কামড় সাথে রোদের শার্ট ধরে টানতে শুরু করলো…..!!!
রোদ তারাতারি গাড়ি ব্রেক করে!মেঘ ইচ্ছে মত রোদকে মারতে আছে!আর আলো হা করে তাকিয়ে আছে!রোদ বার বার মেঘকে থামতে বলছে বাট মেঘ থামছেই না।মেঘ রোদকে মারছে আর বলছে…
মেঘঃ তুমি আবার আমার বউমনিকে বকা দিয়েছো তাই না!আমার বউমনি আবার কেন কান্না করলো?তোমাকে না সেদিন বলছি আমাকে বকা দিবে তাও বউমনিকে কিছু বলবে না (চিৎকার করে)
রোদঃআমি তোর বউমনিকে কখন বকা দিলাম।?

মেঘঃ তুমি বকা না দিলে বউমনি কেঁদেছে কেন?বউমনির চোখ মুখ ফুলে আছে কেন??(মারতে মারতে)
আলোঃ মেঘবাবু শোনো আমার কথাটা..
মেঘঃ না না আমি কোন কথা শুনবো না! কেন তোমাকে দাভাই বকবে কেন? কেন? কেন??
রোদঃ আমি তোর বউমনিকে বকা দেইনি!তোর বউমনি পড়ে গিয়ে ব্যাথা পেয়েছে তাই কেঁদেছে।
মেঘঃ ওহহ!তাহলে ঠিক আছে।
রোদঃ এখন এখন তোকে তুলে আছাড় মারি!না জেনে শুধু শুদু কেন আমাকে এতগুলো মারলি তাই বল..!!(দাঁতে দাঁত চেপে)
মেঘঃ সরি সরি!আমার ভুল হয়ে গেছে।আমি না তোমার আদরে ছোট ভাই। এবারের মত মাফ করে দাও কেমন। তুমি তো আমার ভালো দাভাই।পৃথিবীর সবচেয়ে বেস্ট দাভাই তুমি (রোদের গালে আদর দিয়ে)
রোদঃ পাম মারা শেষ! এবার থাম…

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

তারপর রোদ ওর চুল গুলো ঠিক করে আবার গাড়ি স্টাট দেয়!মেঘ আর আলো বকবক করছে আর রোদ ড্রাইভ করছে আর ওদের বকবক শুনছে।তারপর ওরা একটা রেস্টুরেন্ট যায়!মেঘ আর আলো বিরিয়ানী খাবে তাই রোদও বিরিয়ানী আর চিকেন ফ্রাই, সালাড,আইসক্রিম আর তিনটা ডিউ অর্ডার করে!খাবার আসলে রোদ আর মেঘ স্পুন দিয়ে খেতে শুরু করে বাট আলো স্পুন দিয়ে খেতে পারে না।রোদ ব্যাপারটা বুঝতে পেরে রোদ ওর স্পুনটা রেখে হাত ধুয়ে হাত দিয়ে খেতে শুরু করলো!রোদের দেখে মেঘও স্পুনটা ফেলে দিলো!এমন ভাবে ফেললো মনে হচ্ছে স্পুনে একটা পোকা বসেছিলো…
রোদঃ আস্তে রাখলেই তো হয় তাই না।এত জোরে রাখার কি আছে??
মেঘঃআসলে দাভাই আস্তে রাখতে গিয়ে জোরে হয়ে গেছে।

তারপর তিনজন খেতে শুরু করলো!তিনজনে খুব মজা করে খাচ্ছে! তখন হঠাৎ করে মেঘ পাশে তাকিয়ে বললো…
মেঘঃ এই যে টাকলা আংকেল আপনি কি খাবেন?খেতে চাইলে আসুন। আর না খেতে চাইলে এদিকে আর তাকাবেন না! কারন কেউ তাকিয়ে থাকলে আমার আর আমার বউমনির খেতে সমস্যা হয়।আর বড় কথা আমার ওয়াশরুমে বেশি সময় ধরে থাকতে বিরক্ত লাগে।
আলোঃএখানে ওয়াশরুমের কথা আসলো কোথা থেকে…!! (ফিসফিস করে)
মেঘঃ বউমনি আসলে ওই আংকেলটা যেভাবে তাকিয়ে আছে আমার দিকে! আমার ইয়ো ইয়ো হবে সিওর।আর ইয়ো ইয়ো হলে ওয়াশরুমে দৌড়াদৌড়ি করতে হবে এজন্য আগেই বলে দিলাম।
রোদঃকতদিন বলবো! বড়দের সাথে এভাবে কথা বলতে নেই!এক্ষুনি ওই আংকেলটাকে সরি বলো।(দাঁতে দাঁত চেপে)
মেঘঃ ওই টাকলা আংকেল সরি..!!
রোদঃ টাকলা আংকেল এটা কেমন ডাক।সুন্দর করে ডাকো। (দাঁতে দাঁত চেপে)
মেঘঃ ওই চুল ছাড়া আংকেল। আমি সরি
লোকটিঃ ইটস্ ওকে

আলো মুখ চেপে হাসছে কারন আলো মেঘের কথা শুনে আর হাসি থামাতে পারছে না।আলোর দেখে মেঘও হো হো হাসতে শুরু করে দিলো!এবার আলোও শব্দ করে হেসে দিলো।আর রোদ ওদের দু’জনের দিকে তাকিয়ে আছে।তারপর তিনজন খাওয়া শেষ করলো!আলো আর মেঘ উঠে একপাশে দাড়ালো আর রোদ বিল পেমেন্ট করতে গেল।তখন একটা মেয়ে এসে আলোকে বললো…
মেয়েটিঃ ড্রেসআপ দেখে তো মনে হচ্ছে ভালো ফ্যামিলি বাট কোন রেস্টুরেন্ট গিয়ে যে হাত দিয়ে খাওয়া বেমানান এটা জানেন না বুঝি।কোন গাইয়া গ্রাম থেকে উঠে এসেছেন…(ত্যাচ্ছিলের সুরে)
রোদঃ এক্সকিউজ মি ম্যম!কি যেন বললেন??আমি আপনার কথাটার উওর টা দেই..(পেছনে থেকে)
মেয়েটিঃমানে
রোদঃ আপনি একটু আগে যে কথাটি বললেন তার আনসারটা আমি দেই কেমন।আচ্ছা ম্যম আমরা যে খাবারটা খেলাম! তার বিল কি আপনি দিয়ে দিবেন প্লিজ??
মেয়েটিঃ কেন আপনাদের বিল আমরা কেন দিবো??
রোদঃ আপনি যেহেতু বিলটা দিবেন না! সেহেতু আমরা কিভাবে খাবো না খাবো আপনি বলার কে?আমাদের টাকা দিয়ে আমরা খাচ্ছি তাহলে আপনি মধ্যখান থেকে বাম ডান ঢুকাচ্ছেন কেন?আমার যতদূর মনে পড়ছে আমি আপনাকে চাকর রাখিনি তাহলে…. (শান্ত সুরে মুচকি হেসে)
মেয়েটিঃ আম আমি আসলে

রোদঃ আসলে আর নকলে দেখার আপাতত সময় আমাদের হাতে নেই!তবে হ্যা আমরা হাতে দিয়ে খাবো নাকি পা দিয়ে এটা আপনার না ভাবলেও চলতো!বাট আপনি গায়ে পড়া মেয়েদের মধ্যে একজন তাই হয়তো অন্যদের বিষয়ে দুমদকম করে ঢুকে পড়েন তাই না।আর কে গাইয়া এই কথাটা কাকে বললেন??যাকেই বলেন মুখ সামলে কথা বলবেন আর নিজের চড়কায় তেল দেন। আর অন্যের ব্যাপার আপনার এই নোংরা বাম হাত ঢুকানোর হ্যাবিট টা যত দ্রুত সম্ভব বদলে ফেলবেন। আচ্ছা আপুনি ভালো থাকবেন…. বাই
রোদ মেয়েটি কে শান্ত সুরে আছিলা বাঁশ দিয়ে মেঘের হাত ধরে হাটতে শুরু করলো!আলোও রোদের পেছন পেছনে হাটছে।আর আমি মেয়েটি হা করে তাকিয়ে থাকলো।কারন এরকম ভাবে বাঁশ এর আগে মেয়েটি খায়নি! তাই হজম করতে একটু কষ্টই হচ্ছে আর কি! মেঘ ফট করে বলে উঠলো….
মেঘঃ দাভাই তুমি তো পুরাই হিরোগিরি করে চলে আসলে…!আমার দাভাই বলে কথা।
রোদঃ এই মেয়ে তুমি কি বোবা নাকি?কেউ কিছু বললে তার জবাব দিতে পারো না।গাধী একটা (আলোর দিকে তাকিয়ে)
আলোঃ আসলে ভ ভ ভাইয়া আম
রোদঃ থাক আর কিছু বলতে হবে!তোমার মুখে ভাইয়া ডাক শুনে আমার জান পরাণ জুড়িয়ে গেছে। তোমাকে আর কিছু বলতে হবে না।

তারপর তিনজন বাসায় ফিরলো!রোদ ওর রুমে গিয়ে দেখলে বেডের উপরেই ওর ফোনটা রাখা।
(আজকে সকালে রোদ পার্কে বসে আলোর ফোনে ওর নাম্বার সেভ করে দিচ্ছিলো!এখন যদি বলেন আলো ফোন পেলো কোথায়। তাহলে বলবো রোদের আম্মু আলোকে ফোন কিনে দিসে।আপনাদের জানানো হয়নি…!!তাই আমি সরি।কালকে
একজন পাঠিকা আমাকে জিজ্ঞাসা করছে রোদ তো ফোন বাসায় রেখে গেছে! তাহলে রোদ পার্কে ফোন কোথায় পেলো?তাই আজকের পার্টে জানিয়ে দিলাম।রোদ আলোর ফোন টিপছিলো…)
রোদ সাওয়ার নিয়ে গুনগুন করতে করতে রুম এসে বসলো।তারপর কি মনে করে ফোনটা হাতে নিতেই রোদের চোখ চড়ক গাছ কারন আকাশ, সিয়া,আবৃতি মিলে রোদকে ৪৮+কল দিয়েছে।রোদ সাথে আকাশকে ফোন দিলো! আকাশ ফোনটা রিসিভ করলো….
রোদঃ কি রে এতবার ফোন দিয়েছিলি কেন?
আকাশঃ আগে বল আলো এখন কোথায়??
রোদঃআলো তো বাসায়! কেন হঠাৎ আলোর খোঁজ করছিস যে…!!(ভ্রু কুচকে)
আকাশঃ বিকাল ৫ টায় লেকের পাড়ে আয়।তোর সাথে আমার কথা আছে।
রোদঃ সিরিয়াস কিছু..!!
আকাশঃ হুমমম
রোদঃ ওকে বাই
আকাশঃ বাই
রোদ ওর ফোনে এলাম দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো!আলো সাওয়ার নিয়ে নামাজ পড়ে নিচে আসে।মেঘ ড্রয়িং রুমে বসে বসে রকির শরীরে চিরুণী করে দিচ্ছে। মেঘের কান্ড দেখে আলো খিলখিল করে হেসে উঠলো।তারপর আলো আর মেঘ মিলে রকির সাথে দুষ্টুমিতে মেতে উঠলো।

বিকাল ৪ঃ৫০ মিঃ রোদ রেডি হয়ে নিচে নামছিলো!তখন রোদের আম্মু আলোর চুলে তেল দিয়ে দিচ্ছিলো।আর মেঘ আলোর চুল গুলো ধরে কি যেন গবেষণা করছিলো।রোদ একবার আলোর তাকিয়ে ওর আম্মুকে বলে চলে গেল!রোদ ওর বাইক নিয়ে লেকের পাড়ে গেল!রোদ লেকের গিয়ে দেখে সবাই বসে আছে!রোদ হাসতে হাসতে আকাশের পিঠ চামড়ে জিজ্ঞাসা করলো কি হয়েছে??আকাশে, রোদকে আজকের সকালের ঘটনাটা সব বললো!রোদ সব শুনে দাঁতে দাঁত চেপে উঠে দাঁড়ালো……..!!
তারপর…..!!!
রাত ৯ টার দিকে রোদ বাসায় ফিরলো!হাতে ব্যান্ডেজ নিয়ে!আলো মেঘকে তখন শব্দার্থ আর অনুবাদ পড়াচ্ছিলো!
I=আমি..
You =তুমি..
Have= আছে..
রোদ রাগে হনহন করতে করতে আলোর রুমে ঢুকলো!তারপর রোদ আলোর হাত ধরে টেনে দাঁড় করিয়ে চোখ লাল করে বললো।
রোদঃ কেউ যদি কিছু বলে অপমান করে তাহলে তুমি তাকে কিছু বলো না কেন?কেন চুপ করে থাকো?এই মেয়ে আজকে সকালে এত কিছু হয়ে গেল তুমি আমাকে কিছু বললে না কেন??নিজেকে কি ভাবো তুমি??(গাল চেপে ধরে)
মেঘঃ দাভাই তুমি বউমনি ক
রোদঃ চুপ একদম চুপ!তুই যদি একটা কথা বলিস আজকে তোকে পিটিয়ে সোজা করে দিবো।আর এই মেয়ে তুমি নিজেকে কি ভাবো হ্যা?এটা তোমার গ্রাম না বুঝলে এটা ঢাকা। এখানে টিকতে গেলে হাতের আর গলায় জোর থাকতে হয়।নিজেকে সব সময় সেভ করার জন্য রুখে দাড়াতে শিখো! (ধাক্কা দিয়ে)
আলোঃ….
রোদঃ এই মেয়ে তোমাকে এতবার জিজ্ঞাসা করার পরেও তুমি কিছু বললে না কেন??আর এমন হবে?কি হলো বলো!!!! (জোরে চিৎকার করে)
আলোঃ নননন না আর এম এমন হবে না।(ভয় পেয়ে)

রোদঃ এবার থেকে কোথাও কোন সমস্যা হলে আগে আমাকে তুমি নিজে জানাবে!যদি আজকের মত অন্য কারো থেকে আমার জানতে হয় তো! সেদিনই মেরে পুঁতে দিবো। মনে থাকে যেন (রেগে গিয়ে)
আলোঃ উমমমমম হুম হুম ম ম মনে থাকবে(ভয়ে তোতলাতে তোতলাতে)
তারপর রোদ পাশের সেন্টার টেবিলটা জোরে লাথি দিয়ে হনহন করতে করতে ওর রুমে চলে গেল।রোদ ওর রুমের দরজা অনেক শব্দ করে লাগালো!এত জোরে দরজা লাগিয়েছে যে পুরো বাড়ি কেঁপে উঠছে!রোদের আব্বু আর আম্মু দৌড় রুম বের হয়ে আসে।বাট কেউ রোদের রুমে নক করে না কারন রোদের আব্বু আম্মু জানে তাদের বড়পুত্র রেগে গেলে এমনই করে…
ওইদিকে আলো আর মেঘ দুজনে বকা খেয়ে ভীতু বিড়ালছানা মত বসে একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে!কারো মুখে কথা নেই দুইজনের মুখটা চুপসে যাওয়ার বেলুনের মত হয়ে গেছে….!!
#এলোকেশী_কন্যা২__
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_17
??
________ওইদিকে আলো আর মেঘ দুজনে বকা খেয়ে ভীতু বিড়ালছানা মত বসে একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে!কারো মুখে কথা নেই দুইজনের মুখটা চুপসে যাওয়ার বেলুনের মত…. মেঘ বলে উঠলো…!!
মেঘঃবউমনি দাভাইয়ের বকা খেয়ে এখন তোমার কেমন ফিলিংস হচ্ছে??
আলোঃ খুব খারাপ মেঘবাবু!আমাকে তোমার দাভাই শুধু শুধু বকা দেয়।(নাক টেনে টেনে)
মেঘঃ তুমিও একদিন দাভাইকে বকা দিয়ে সব শোধ করে দিও কেমন!আচ্ছা বউমনি এখন একটা কথা বলবো..!!
আলোঃ হুমম বলো!
মেঘঃ বাসায় বড় বোন বা বড় ভাই থাকা আর বাঁশের বাগান থাকা ওই একই ব্যাপার!বড় ভাই বা বোন যদি পড়াশোনাতে ভালো হয়! তাহলে আমাদের ছোটদের জন্য আরো এক ডজন বাঁশ ফ্রি ধরে রাখো।দাভাইয়ের জন্য আম্মুর কাছে আমি বাঁশ খেতে খেতে আমি পুরাই বাঁশখোর হয়ে গেলাম।আর ভাল্লাগেনা এ জীবনডার প্যারা!আমার এই জীবনডাই বেদনা….
আলোঃ হুমম একদম ঠিক বলছো..!

মেঘঃ বউমনি চলো তুমি আমি মিলে দাভাইকে কিলাই আসি।তারপর দাভাইকে বারান্দায় দিয়ে নিচে ফেলে দেই..!!
আলোঃ তোমার দাভাইয়ের সামনে গেলে আমার শরীর কাঁপতে থাকে আর গলা শুকিয়ে যায় মেঘ।
মেঘঃ আচ্ছা সুয়েটার পড়ে নাও তাহলে আর কাঁপবে না।
আলোঃ এই গরমে আমি সুয়েটার পড়বো কেন?আর তোমার দাভাই আস্ত একটা জলহস্তী’! ওরে তো তুললেই পারবো না।তাহলে বারান্দায় দিয়ে ফেলবো কিভাবে…??
মেঘঃ ওহহ তাই তো।
রোদের এখন সাওয়ার নেওয়ার দরকার !কারন ওর মাথাটা খুব গরম।তখন রোদ আকাশের মুখে সব শুনে নিজের রাগ কনট্রোল করতে পারে না!রোদ বাইক নিয়ে ঐশী বাসায় যায়!রোদের রাগ খুব খারাপ এটা আকাশরা জানে! তাই ওরাও বেশ কয়েকজন মিলে রোদের সাথে যায়!রোদ ঐশীর বাসায় গিয়ে অনবরত কলিংবেল বাজাতেই আছে!ঠিক তখন বিরক্ত হয়ে ঐশী দরজা খুলে রোদকে দেখে অবাক হয়ে যায়!রোদ সাথে সাথে ঐশীকে থাটিয়ে একটা থাপ্পড় মারে!ঐশী তাল সামলাতে না পেরে মেঝেতে পড়ে যায়!রোদ আবার ঐশীকে মারতে গেলে আকাশরা রোদকে থামায়….
রোদের চিৎকারে ঐশী বাবা মা দৌড়ে আসো!ঐশীর বাবা রোদের পূর্ব পরিচিত!ঐশীর বাবা রোদকে দেখে জিজ্ঞাসা করে….
ঐশী বাবাঃ রোদ বাবা তুমি এখানে? আর কি হয়েছে??(অবাক হয়ে)

রোদঃ কি হয়েছে সেটা আপনার এই বেয়াদব মেয়েকে জিজ্ঞাসা করেন??(দাঁতে দাঁত চেপে)
ঐশীঃ ওই ফালতু মেয়েটার জন্য তুমি আমার গায়ে হাত তুললে রোদ…..!!(এক গালে হাত দিয়ে)
রোদঃ তোর সাহস কি করে হয় আমার কলিজার গায়ে হাত দেওয়ার! আবার এখন তুই ওকে বলছিস ও ফালতু। আজকে তোকে আমি মেরেই ফেলবো।এতদিন তোকে অনেক ছাড় দিয়েছি শুধু মেয়ে বলে! বাট আর কোন ছড়াছাড়ি হবে না..!! (আর দুইটা চড় মেরে আর হাত দিয়ে পাশের একুরিয়ামে আঘাত করে চিৎকার করে বলে)
একুরিয়াম ভেঙে পানি গুলো পুরো রুমে ছড়িয়ে গেছে!একুরিয়ামে থাকা মাছ গুলো মেঝেতে পড়ে লাফাচ্ছে।রোদ কিছুতেই ওর রাগ কনট্রোল করতে পারছে না।পাশের সেন্টার টেবিলে এক লাথি দিতেই সেন্টার টেবিলটা ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। আকাশ ঐশীর বাবাকে সব বলে!ঐশী বাবা মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে!রোদ ঐশী বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলে…

রোদঃ আংকেল আপনি রাজনীতি করেন সবাই জানে!আর আপাতত যে পদে আছেন সেটাও হারাবেন যদি আপনার মেয়ে একই ভুল আবার করে।কেউ না জানুক আপনি তো জানেন রোদ মেহবুব আসলে কি??তাই বলছি মেয়েকে সামলান! আর আমাকে চেতানো ফল বড্ড বেশি খারাপ হবে।লাস্ট ওয়ানিং দিয়ে গেলাম! যদি কালকে আপনার মেয়ে গিয়ে আলো সরি না বলে তো!….. তো সেটা কালকেই আপনাকে আপনার শখের পদ ত্যাগ করতে হবে। মাইন্ড ইট…..!!(রেগে গিয়ে)
ঐশীঃরোদ আই লাভ ইউ! আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি! প্লিজ একবার আমার কথা ভাবো।
রোদঃ হা হা হা! তোর মত মেয়েকে ভালবাসবে রোদ মেহবুব!যার একসাথে ৭ টা ছেলের রিলেশন চলে।ঐশী তোকে লাস্ট ওয়ানিং দিলাম আলোর থেকে দুরে থাক!ওকে কষ্ট দিলে এবার তোর ছাড় নাই….!!
ঐশীর বাবাকে এমন বড় নেতা হওয়ার সুযোগ রোদই করে দিয়েছিলো!কারন বড় বড় নেতারা রোদের পূর্ব পরিচিত! রোদকে দেখে অনেক রাজনীতিতে আসার অফার করেছিলো! বাট রোদ নিজেকে এসবে মধ্যে জড়ায় নি! আর ঐশীর বাবা রাজনীতিতে একটা বড় পদে ঢুকতে চেয়েও ঢুকতে পারছিলো না! এজন্য উনি রোদকে আগেই বলে রেখেছিলো!আর রোদই এভাবে উনাকে বড় নেতা হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিলো…!!আর রোদের যে কেমন রাগী একটা ছেলে কিছু দিন উনি খুব ভালো করেই বুঝে গেছে….!!
রোদরা ঐশীর বাসা থেকে বের হয়ে আসে!তখন সিয়াম জোর করে রোদকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়!কারন তখন একুরিয়ামে আঘাত করাই একুরিয়ামের কাঁচ ভেঙ্গে রোদের হাতে ঢুকে গেছে।
ডাক্তার রোদের হাতের ঢুকে থাকা কাঁচ গুলো বের তারপর পরিষ্কার করে হাতে ব্যান্ডেজ করে দেয়।তারপর রোদ বাসায় চলে আসে…!!

রোদ অনেকটা সময় নিয়ে সাওয়ার নিয়ে বের হলো! তারপর ড্রেস বদলে থ্রি কোয়াটার প্যান্ট আর সাদা একটা গেন্জী পরে রুমের বাইরে গেল!রোদ আলোর রুমে ঢুকে দেখে মেঘ নেই! আলো বেডের উপর বসে নখ কামড়াচ্ছে…!!
রোদঃ এই মেয়ে নখ খাচ্ছো কেন??এটা খুব বাজে অভ্যাস একটা।(দাঁতে দাঁত চেপে)
আলোঃভা ভাই ভাইয়া আপনি..?? ক ক কিছু লা লা লাগবে।
রোদ আলোর দিকে এগিয়ে যায়! তারপর বেডের উপরে রাখা মেঘের স্কেলটা হাতে নিয়ে রাগী চোখে আলোর দিকে তাকায়! আলো ভয়ে ভয়ে ঢোক গিলে পিছিয়ে যায় আর কাপতে থাকে!রোদ আলোকে আরো ভয় পাইয়ে দিতে স্কেল দিয়ে বেডের উপর জোরে জোরে বেশ কয়েকটা বারি দিলো!আলো চোখের পলক ফেললেই চোখের পানি গড়িয়ে পড়বে আলোর গাল বেয়ে!আলো গলার দিয়ে কথা বের হচ্ছে না!মনে হচ্ছে গলা শুকিয়ে মরুভূমিতে পরিনত হয়েছে।রোদ দাঁতে দাঁত চেপে আলোকে বললো…
রোদঃ তুমি তখন মেঘকে কি পড়াচ্ছিলে…(দাঁতে দাঁত চেপে)
আলোঃ ক ক কখন
রোদঃ আমি এর আগে যখন রুমে ঢুকছিলাম!নিজের পড়া বাদ দিয়ে ম্যাম সাজা হচ্ছে তাই না।
আলোঃবা বা বাংলা অনুবাদ আর শব্দার্থ পড়াচ্ছিলাম।
রোদঃ এই মেয়ে তুমি কি নিজে পড়তে পারো? যে মেঘকে তুমি পড়াচ্ছিলে বলো (বেডে আরেকটা
বারি মেরে)
আলোঃ আম আমম মা মানে
রোদঃ বেশি পড়া শিখে গেছো তাই না!এবার আমি তোমাকে পড়া ধরবো! যদি না পারো তো তোমাকে মেরে তক্তা বানিয়ে দিবো।(দাঁতে দাঁত চেপে)

আলোঃ……
রোদঃ “আমি খুব সুদর্শন ছেলে” এটা ইংলিশে ট্রেনেসলেশন করো..!!
আলোঃ….
রোদঃ কি হলো বলবে নাকি মার খাবো বলো(জোরে ধমক দিয়ে)
আলোঃ ইউ আর এ ভেরি হ্যা হ্যান্ডসাম বয়(ভয়ে ভয়ে )
রোদঃ আমি তোমাকেই ভালবাসি..
আলোঃআই ডু লাভ ইউ
রোদঃ তুমিই আমার বউ হবে
আলোঃইউ উয়িল বি মাই ওয়াইফ
রোদঃ আমি তোমাকে সত্যি ভালোবাসি(শান্ত সুরে)
আলোঃ আই আই
রোদঃ বলবে নাকি মার খাবে!এটা না পারলে তোমাকে এখন মেরে প্রতিবন্ধী করে দিবো।
আলোঃ আই রিয়েলি লাভ ইউ (চোখ মুখ খিচে)
রোদঃ হুমমম আপাতত হয়েছে! আজকের মত ছেড়ে দিলাম। এর পর যদি আমার থেকে কোন কথা লুকিয়েছো তো। তখন শাস্তি কাকে বলে সেটা দেখাবো…!!
রোদ আলোর রুমে থেকে বের হয়ে ওর রুমে ঢুকতে যাবে! তখনই রোদের আব্বু পেছন থেকে বলে উঠলো।
রোদের আব্বুঃ উহুম! উহুমম! আমার ছেলে তো দেখি ভালোই টিচারগিরি করতে পারে।বাহ্ দারুন তো
রোদঃ না মানে আব্বু (লজ্জা পেয়ে)
রোদের বাবাঃ থাক আব্বু তোমাকে আর কিছু বলতে হবে না!আমিও এইকথা কাউকে কিছু বলবো না! তুমি তোমার ক্লাস চালিয়ে যাও।তবে মেয়েটা তোমাকে খুব ভয় পাই! এভাবে ভয় দেখিও না।তাহলে ভালবাসার ভ ও তোমার কপালে জুটবে না।হা হা হা
রোদঃহুমম (মুচকি হেসে)

তারপর রোদ আর ওর বাবা ছাদে গিয়ে গল্প জুড়ে দেয়!রোদ ওর বাবাকে সব কথা শেয়ার করে।রোদ ওর আম্মুকেও অনেক কথা বলে বাট সবটা বলে না! কারন রোদের আম্মু সব সময় উল্টো বুঝে তুলকালাম বাধিয়ে বসে থাকে!রোদ আর রোদের বাবা প্রায় দিন বাবা ছেলে মিলে খোলা আকাশের নিচে বসে সাথে গরম ধোঁয়া উঠা কফি নিয়ে গল্পে মেতে উঠে।রোদের বাবা বিজনেস নিয়েও রোদের সাথে আলোচনা করে! রোদের বাবার ভাষ্যমতে রোদের থেকে ইউনিক কিছু ধারণা পাওয়া যায় যেগুলো করলে বিসনেজ টাকে আরো সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব….. আর হয়েছেও তাই।
রাত সাড়ে দশটার দিকে সবাই এক সাথে খেতে বসে।আলো আর একবারো রোদের দিকে তাকায় নি!কেন তাকাবে শুধু শুধু রোদ আলোকে বকা দেয়, আলোও চিন্তা করছে রোদের সাথে আর কোনদিন কথা বলবে না।রোদ বেশ কয়েকবার আলোর দিকে তাকিয়েছে।সবাই খেয়ে যে যার রুমে চলে যায়!আলো বারান্দায় দাড়িয়ে রাতের ঢাকা দেখছে! রাত এগারটা বাজে তাও এত গাড়ি যাচ্ছে রাস্তা দিয়ে! মাঝে মাঝে ফুরেফুরে বাতাস এসে গায়ে লাগছে! আকাশের তারা গুলো জ্বল জ্বল করে জ্বলে জানান দিচ্ছে ওরাও জেগে আছে….!!
আলো খোলা চুলে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে!মাঝে মাঝে দমকা বাতাস এসে চুল গুলো এলোমেলো করে দিয়ে যাচ্ছে! বাগান থেকে হাসহেনা ফুলের গন্ধে চারদিকে ছড়িয়ে গেছে!
আলো একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে উঠে…

_______এই শহরে সুখ আছে..!!
__________কিন্তু নেই কোন শান্তি ..!!
_______এখানে রুপের কদর করতে সবাই পারে..!!
_______কিন্তু মনের খবর কতজনই বা রাখে ..!!
____এখানে সবকিছু থেকেও শূন্য রয়েছেঅনেককিছু
____এখানকার মানুষ টাকা ছাড়া বোঝেনা কোনকিছু
______তাই সবাই দ্রুতগতিকে ছুটতে থাকে টাকার ___________পিছুপিছু!!

#এলোকেশী_কন্যা২__
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_18

______আলো বারান্দা থেকে রুমে চলে যায়! তারপর বেডে শুয়ে পড়ে!আর একটা সময় ঘুমের রাজা এসে আলোর চোখে ভর করে।আর আলো গভীর ঘুমে তলিয়ে যায়।রোদ আলোর রুমে উঁকি মারে! আলো ওর রুমের দরজা আটকে ঘুমায় না কারন আলো ভয় পায় তাই।রোদ আলোর দিকে তাকিয়ে দেখে পুরো বেড জুড়ে চার হাত ছড়িয়ে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে! রোদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে…!!!

রোদঃ আমার মেরিড বন্ধুদের কাছে থেকে যতটুকু শুনছি তাদের বউরাও নাকি পুরো বেড জুড়ে ঘুমায়।আচ্ছা পৃথিবীর সব মেয়েরাই কি এভাবে পুরো বেড দখল করেই ঘুমায় নাকি কে জানে?কই আমরা ছেলেরা সিঙ্গেল খাটেও তো বেশ গুছিয়ে ঘুমাতে পারি! বাট এই মেয়েকে দেখে মনে হচ্ছে এত বড় বেডেও ওর হচ্ছে না।(মনে মনে)
রোদ ওর রুমে গিয়ে ডায়রী বের করলো!তারপর উপুর হয়ে শুয়ে ডায়রি লিখতে শুরু করলো….
এই তিলোকন্যা তুমি কি জানো টাওয়াল দিয়ে আগে তোমার মুখটা কেন মুছতে বলেছিলাম…!!
কারন আমি টাওয়ালটা অনেক গুলো আদর দিয়ে দিসিলাম!সেদিন দুপুরে কলেজ থেকে আসার সময় দেখেছিলাম!তোমার নাকে,ঠোঁটের নিচে আর থুতনীতে জমে থাকা সেই বিন্দু বিন্দু ঘাম!আর ঘামার্ত মুখে যে কাউকে এতটা সুন্দর দেখায় তোমাকে না দেখলে বুঝতাম না।জানো তিলোকন্যা ঘাম গুলোকে দেখে আমার খুব হিংসে হচ্ছিলো। বার বার মন চাচ্ছিলো তোমার কপালে একটা ভালবাসার পরশ একে দিতে!আমি তো দিতে পারছিলাম না তাই টাওয়ালে অসংখ্য আদর দিসিলাম!আর তুমি আমাকে অবাক করে দিয়ে তোমার নিজের অজান্তে টাওয়ালটা তুমি প্রথমে তোমার ঠোঁটের উপর রাখলে!আমি জাস্ট বলে বোঝাতে পারবো না! আমি ঠিক কতটা খুশি আর অবাক হয়েছিলাম______!!
এই তিলোকন্যা______!!

তুমি আমাকে দেখে এত ভয় পাও কেন?তুমি তো জানো না তোমার ভীতু ফেসটা আমি ঠিক কতটা পছন্দ করি!তুমি ভয় আর লজ্জা পেলে তোমার পুরো মুখ লাল টমোটোর মত হয়ে যায়!তখন তোমার ঠোঁট অনবরত কাঁপতে থাকে! তুমি জানো তোমার এই ভীতু ফেসটা দেখার জন্য আমি ইচ্ছে করে তোমাকে বকা দেই।আজকে “আই লাই ইউ বলার সময়” কত কষ্টে নিজের হাসি আটকে রেখেছি সেটা শুধু আমি জানি!বোকা মেয়ে দেখলে তো কি ভাবে টেকনিক খাটিয়ে তোমাকে দিয়ে… আই লাভ ইউ কথাটা বলতে বাধ্য করলাম।হা হা হা হা
রোদ ডায়রী বন্ধ করে আলমারীতে তুলে রাখে!তারপর বেডে শুয়ে মুচকি মুচকি হাসতে হাসতে একটা সময় ঘুমের দেশে পাড়ি জমালো।
পরেরদিন সকালে_______!!
আজকে শুক্রবার তাই দুই রাজপুত্র পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে! আগে থেকে নিষেধ করছে কেউ যেন রাজপুত্রদের ডিস্টার্ব না করে!আলো নিত্যদিনের মত সকালে উঠে পড়ে! নিচে গিয়ে দেখে রোদের আম্মু নাস্তা বানাচ্ছে আলোও হাত হাতে কাজ করে সব খাবার ডায়নিং টেবিলে সাজিয়ে ফেলে।রোদের আবু, আম্মু আর আলো খেতে বসে।কারন মেঘ আর রোদ কখন ঘুম থেকে উঠবে তার ঠিক নেই….!!

১০টার দিকে রোদ ঘুম থেকে উঠে সাওয়ার নিয়ে তারপর নিচে আসে!রোদের আম্মু আলোকে বলে রোদের খাবারটা গরম করে দিতে!কারন রোদ ঠান্ডা খাবার একদমই পছন্দ করে না!আলো মাথা নিচু করে রোদকে খাবার বেড়ে দিয়ে রান্না ঘরের দিকে পা বাড়ায়!রোদ আলোকে ডেকে বলে….
রোদঃ এই যে রানী এলিজাবেথ এদিকে আসুন!
আলোঃ…
রোদঃ কাউকে খেতে দিয়ে চলে যাওয়াটা অভদ্রতা। তাই আপনি আমার না খাওয়া পর্যন্ত বসে থাকবেন।
আলোঃ আপনি খাবেন তো আমি দাড়িয়ে থাকবো কেন?
রোদঃ খুশিতে ঠেলায় আর কি..!!
রোদের আম্মু রোদের কাছে এসে বললো…!!
রোদের আম্মুঃ রোদ কালকে তোমার মামা ফোন করছিলো!আদিলের(মামাতো ভাই) বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।পরশু গায়ে হলুদ। আমরা কালকে যাবো।
রোদঃ…আমরা মানে?? কে কে যাবে…(ভ্রু কুচকে)
রোদের আম্মুঃ আমি,আলো আর মেঘ কাল যাবো।
রোদঃ তুমি আর মেঘ যাচ্ছো যাও! বাট আলোকে নিয়ে যাওয়ার কি দরকার??
রোদের আম্মুঃ তো আলোকে বাসায় একা রেখে যাবো।এত বড় বাসায় ভয় পাবে তো।
রোদঃ দুই দিন কলেজ করলো কি করলো না এর মধ্যে ক্লাস মিস দিলে হবে?তোমার মেয়ে ডাব্বা মারবে পরীক্ষায়।
রোদের আম্মুঃ মারুক!তুই কবে যাবি তাই বল
রোদঃ আমি এসবের মধ্যে নাই!আমাকে একদম টানবে না।তোমাদের যা ইচ্ছে তোমরা তাই করো।
রোদের আম্মুঃ মানে কি?তার মানে তুই যাবিনা।
রোদঃ না! কারন ওখানকার বিয়ে মানে যত্তসব ফালতু রীতি নীতি।ওইসব দেখলে আমার মেজাজ বিগড়ে যায়।
রোদের আম্মুঃ মানে কি রোদ?তুই না গেলে তোর বড় মামা কষ্ট পাবে।
রোদঃ উফফ আম্মু আমাকে এসবের মধ্যে না টানলে এমন কিছু আসবে যাবে না।তাই আমার কথা বাদ দাও তো..!!
রোদের আম্মুঃ আমার মাথা গরম করবি না রোদ!!!!
রোদঃ আম্মু চিৎকার করছো কেন শুধু শুধু ?আর তুমি আলোকে মামার বাসায় নিয়ে যেতে চাচ্ছো বুঝলাম!বাট ওখানে ওর পরিচয় কি দিবে??একবার ভেবেছো??

রোদের আম্মুঃ কি পরিচয় দিবো মানে কি?বলবো তোর বউ! যা সত্যি তাই বলবো..!!
রোদঃ ওই পিচ্চি একটা মেয়ে আমার বউ!আমার বয়েই গেছে ওকে বউ বানাতে। আর যাতে তাকে আমার গলায় কেন ঝুলাচ্ছো ?
রোদের আম্মুঃ পিচ্চি মেয়ে কি বলছিস?আজকে তোদের বিয়ে দিলে কালকেই তো ওকে তুই বাচ্চার মা বানিয়ে দিবি ।বুঝি না সব বুঝি তাই বড় বড় কথা বাদ দে…!!
রোদঃ আম্মু এসব কি বলো তুমি??মুখে লাগাম দাও।
রোদের আম্মুঃ আমি কি ভুল কিছু বলছি!তুই আর তোর বাপ দুটোই এক রকম।সব সময় নিজেরা যা ভালো মনে করিস তাই করিস।
রোদঃ এখানে আব্বু কি করলো?আব্বু কে শুধু শুধু টানছো কেন??
রোদের আম্মুঃ কেন টানবো না!সব ওই লোকের দোষ। আজকে ওর জন্যই তুই আমার একটা কথা শুনিস না!আজকে ওরে ঝাটা দিয়ে মেরে ভূত যদি না ঝেড়ে দেই তো আমি স্বপ্না মেহবুব না।
রোদ আর ওর আম্মুকে কথা বলতে দেখে আলো অনেক আগে ওর রুমে দৌড় দিসে। তাই আলো কিছু শুনেতে পাইনি।বেচারা রোদের আব্বু কিছু না করলেও কেস খায়। রোদের আম্মু রোদকে আর কিছু না বলে উনার হাজবেন্ডকে উরাধুরা ঝাড়তে শুরু করলো!বেচারা রোদের আব্বু কি হয়েছে সেটাও বুঝলেও না!শুধু অসহায় বাচ্চার মত ওদিক ওদিক তাকাচ্ছে।রোদের আব্বু রুমে থেকে বের রোদের সামনে এসে বললো…!!

রোদের আব্বুঃ রোদ আমাকে একটা হেল্প করো তো আব্বু।
রোদঃ হুমম বলো আব্বু! কি করতে হবে আমাকে?
রোদের আব্বুঃ বলছি তুমি কালকেই তোমার আম্মুর সাথে তোমার মামার বাসায় যাও!প্লিজ আব্বু
রোদঃ আব্বু আমাকে এর মধ্যে টেনো না তো!ওখানে আমার ভালো লাগে না যেতে।
রোদের আব্বুঃ রোদ তুমি যদি না যাও তো তোমার আম্মু আমার জীবন ন্যাতা ন্যাতা করে দিবে।তুমি তো জানো! তোমরা কিছু করো আর সব দোষ আমার ঘাড়ে এসে পড়ে।
রোদঃ….
রোদের আব্বুঃ তাহলে তুমি যাচ্ছো কেমন..
রোদঃ হুমম না গিয়ে কি আর উপায় আছে!যেসব প্যারা থেকে আমি বাঁচতে চাই! ওগুলোই আমার ঘাড়ে এসে জোটে।
রোদের আব্বুঃ রাগ করে আব্বু। যা করবে মাথা ঠান্ডা করে করতে হয়।
রোদঃ ওখানে বিদ্যুৎ থাকে না,প্রচুর গরম,নেটের সমস্যা আর বড় সমস্যা হলো গ্যাদারিং…আর গ্রামের বিয়ে মানেই হাজিবাজি রীতি নীতি আমি এগুলো জাস্ট টলারেট করতে পারিনা আমি আব্বু।
রোদের আব্বুঃ ম্যানেজ করে মাত্র তো কয়েকটা দিন।
রোদঃ হুমম!ধুর শেষ মেষ আমাকে তুমি ফাঁসিয়ে দিলে আব্বু।

এলোকেশী কন্যা  সিজন ২ পর্ব ১৩+১৪+১৫

রোদের আম্মু হিটলারী বুদ্ধি কাজে দিয়েছে!রোদ খেয়ে ওর রুমে চলে গেল!রোদের আম্মু আবার আরেকটা বুদ্ধি বের করলো!সেটা হলো রোদ আর আলোকে শপিং করতে পাঠানোর! এজন্য উনি রোদের রুমে গেল।
রোদের আম্মুঃ আব্বু তুমি কি এখন ফ্রি আছো?
রোদঃ কেন?কিছু বলবে আম্মু
আম্মুঃ আলোকে নিয়ে শপিং করে এসো!ওর কিছু ভালো ড্রেস লাগবে।
রোদঃ উফফ!আম্মু তোমার কি মাথা গেছে। আমাকে এত টানাটানি করছো কেন??আর তোমার মেয়ের ড্রেস লাগবে তো তো তুমি যাও।আমাকে টানছো কেন শুধু শুধু! আর বড় কথা হলো আমি মেয়ে মানুষের কিছু কি জীবনে কিনছি যে এসব বুঝবো।এসবে আমার কোন ধারনাই নাই…!!
রোদের আম্মুঃ কিনো নি এখন থেকে কিনবে।বেশি কথা বলো কেন?আলোকে আমি রেডি হতে বলছি তুমিও রেডি হও।
রোদঃ আম্মু প্লিজ আমি যাবো না।তুমি যাও…!
আম্মুঃ না!তুমিই যাবে মানে তুমিই যাবে।

রোদঃ আচ্ছা তাহলে কালকে যায়।বাইরে এখন অনেক গরম।
আম্মুঃ না কালকে সকালে আমার বেরিয়ে পড়বো সুবর্ণপুর গ্রামে যাওয়ার জন্য।
রোদ রেডি হয়ে রুম থেকে বের হতেই দেখে আলো রেডি হয়ে সোফাতে বসে পানি খাচ্ছে। রোদ আলোর মাথা থেকে পা পর্যন্ত তাকায় আর দেখে সবকিছু ঠিক আছে।তারপর রোদ ওর আম্মু বলে আর গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লো শপিং করার জন্য। একদিকে আলোও যে মনে মনে রোদকে কয়েক দফা গালি দিয়ে দিলো।যদি গালি গুলো রোদ শুনতো তাহলে এতক্ষণে বয়রা হয়ে যেত..!!

এলোকেশী কন্যা  সিজন ২ পর্ব ১৯+২০+২১