কাঞ্চাসোনা পর্ব ৬

কাঞ্চাসোনা পর্ব ৬
জাকিয়া সুলতানা ঝুমুর

মিনিট দশেক পরে সকাল চোখ খুলে।চোখ পিটপিট করে ধ্রুবর দিকে তাকায় ধ্রুব বিছানায় শুয়ে তাকেই দেখছে।সকাল নিজের কৃতকর্মের জন্য নিজেই লজ্জিত।আসলে তখন এতো পরিমানে ভয় পেয়েছিলো যে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে।সেই মনে হয় একমাত্র বউ যে কিনা বাসর রাতে স্বামীর ভয়ে জ্ঞান হারায়।সকাল নিজেই বিব্রত হয়ে ধ্রুবর দিকে তাকায়।ধ্রুব শান্ত চোখে সকালকেই দেখছে।সকাল চোখ নামিয়ে উঠে বসে,ধ্রুবও উঠে বসে।

“কি হয়েছে সকাল?অজ্ঞান হলে কেন?”
সকাল সত্যিটাই বললো,
“আমার খুব ভয় লাগছে।”
ধ্রুবর মনের আন্দাজ ঠিক হয়।মুচকি হেসে বললো,
“আমাকে ভয় পেতে হবে কেন?আমি কি তোমাকে মেরে ফেলবো?”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সকাল মিনমিনিয়ে বলল,
“এমনি।নার্ভাস লাগছে।”
“এখন ভালো লাগছে?”
সকাল স্পষ্ট করে বলল,
“জ্বি।”
ধ্রুব সকালের মুখোমুখি বসে বললো,

“সকাল শুনো আমাকে ভয় পেতে হবে না।আমি তোমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছুই করবো না।তুমি যেদিন ডাকবে সেদিনই কাছে আসবো,মনে করোনা অন্যদের মতো জোড় যবরদস্তি করে কাছে টানবো।”
ধ্রুবর বলা স্পষ্ট কথায় সকাল ধ্রুবর দিকে তাকায়।ঠোঁট নেড়ে বলে, “আচ্ছা।”
ধ্রুব বললো,

“আমরা তো বন্ধু হতেই পারি তাই না?”
সকাল অবাক হয়ে ধ্রুবর দিকে তাকায় এতো বড়ো ছেলে কিনা বন্ধু হতে চাইছে।তার চোখে মনের কথা ফুটে উঠে।
ধ্রুব সেদিকে তাকিয়ে বলে,
“হাজবেন্ড হয় মেয়েদের সবচেয়ে ভালো বন্ধু।দুজন দুজনকে বন্ধুর মতো বুঝলেই তো সম্পর্ক মজবুত হবে।বুঝেছো পিচ্ছি বউ।”
সকাল ছোট করে বললো,

“হ্যাঁ।”
“তাহলে আমরা?”
ধ্রুবর সোজাসাপ্টা কথায় সকাল মুগ্ধ।ধ্রুবর কথার ধরনেই তার নার্ভাসনেস অনেকটা কেটে যায়।সকাল মুচকি হেসে বলে,
“বন্ধু।”
ধ্রুব মাথা বাকিয়ে বলল,
“বন্ধুর মতো সব কথা শেয়ার করবে তো?”
“করবো।”

“আর একটা কথা আমি বাসায় থাকলে একটু আমার কাছে কাছে থাকার চেষ্টা করো কেমন।”
ধ্রুবের এমন আদেশ শুনে সকালের তলপেটে অনুভূতিরা ধাক্কাধাক্কি শুরু করে।কেমন লজ্জাও লাগে।মুখে কিছু না বলে মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়।
ধ্রুব সকালের লাল মুখের তাকিয়ে বলে,
“আচ্ছা তোমার গালদুটো কি সবসময়ই এমন টমেটোর মতো লাল হয়ে থাকে?”
সকাল কিছু বললো না।বিছানা থেকে উঠে গেল।ধ্রুব খিলখিল করে হেসে বললো,”প্রশ্ন করেছি উত্তর না দিয়ে দেশী টমেটো থেকে কাশ্মীরী টমেটো বানাচ্ছে।”

তারপর বালিশ ঠিক করে বিছানায় শুয়ে পড়ে বললো,
“সকাল আমার রুমে কোন সোফা নেই,আর আমি কোন উপন্যাস বা নাটকের নায়কও না যে সোফায় বা নিচে শুয়ে পড়বো।সুতরাং দুজনকেই বেড শেয়ার করতে হবে।”

সকাল মাথা নেড়ে ওপাশের বিছানায় গিয়ে বসে।ধ্রুবর সহয সাবলীল কথায় সকাল কিছুটা সস্থি পায়,সে ভেবেছিল অন্যসব হাজবেন্ডের মতো অধিকার আদায়ের জন্য উঠে পড়ে লাগবে।ধ্রুবর এই সময় দেয়ার ব্যাপারটা সকালের খুব ভালো লাগলো।গহীন মনে ধ্রুবর জন্য শ্রদ্ধা বেড়ে গেলো।জীবনের এই প্রথম কোন ছেলের সাথে এক বিছানায় ঘুমানো,ধুরুধুরু বুকে সকাল বিছানায় শুয়ে পড়ে।

সকাল শুয়ে পড়লে ধ্রুব হাত বাড়িয়ে বেডসুইচ টিপে লাইট নিভিয়ে দেয়।ধ্রুব অনাহারী পাখির মতো ছটফট করে,ছেলে ভুলানো কথায় তো আর গভীর রাতের বিষাক্ত অনুভূতিকে ভুলানো যায় না!আটাশ বছরের ভরা উত্তাপ সকালের সানিধ্য পেয়ে যেন দ্বিগুণ তেজি হয়ে তাপ ছড়াচ্ছে।এইতো আর একহাত দূরেই মেয়েটা শুয়ে আছে,যে সম্পূর্ণভাবে তার।হাত বাড়ালেই ছুঁয়ে দেয়া যাবে,বলিষ্ঠ বুকে শিমুল তুলোর মতো নরম শরীরটা জড়িয়ে নিশ্বাসের সাথে মাখামাখি করা যাবে,কিন্তু হাত ধরাতেই বেচারী অজ্ঞান হয়ে গেছে ইন্টিমেন্ট হতে গেলে দেখা যাবে চিৎকার চেচামেচি করে গ্রামে বাবার বাড়িতেই চলে যাবে!

যদিও ধ্রুব নিজেকে সামলাতে একটু কষ্ট হবে তারপরেও সকালকে সময় দেয়া জরুরী মেয়েটা নিতান্তই বাচ্চা।এখনো সাবালক হয় নি,আর ধ্রুব কিনা তাগড়া যুবক যার রগে রগে এন্ডোনালিরা ছুটে যায়।ধ্রুব শক্ত হয়ে বিছানায় পড়ে রইলো পুরুষালী লাল কালচে ঠোঁট বারংবার মৃদুভাবে কেঁপে ওঠে,চেপে রাখা নিশ্বাসের সাথে নাকের পাটাতন ফুলে ফেপে উঠে।জিভ দিয়ে কয়েকবার ঠোঁট ভিজিয়ে নেয়।পায়ের নখ থেকে শুরু করে সারা মুখে হরমোনেরা শিরশিরানি দিচ্ছে।ধ্রুব মরা মানুষের মতো শক্ত হয়েই বিছানায় পড়ে রইলো।পিচ্ছি বিয়ের করার শাস্তি!অথচ মেয়েটা কি দিব্যি ঘুমিয়ে আছে।ধ্রুব তার পায়ের কাছের কোলবালিশ আস্তে করে মাঝখানে দিয়ে দেয়,যেহেতু বলেছে সকালের সম্মতিতেই সব হবে তাহলে তাই হোক!

সকাল নিজেও ঘুমায়নি,ধ্রুব চাইলে আজকেই মিলন হতে পারতো।কিন্তু ধ্রুবটা অন্যরকম।এই শারীরিক মিলনের ব্যাপারটা যে সকাল বুঝে না তা নয়,প্রতিটা মেয়েই বুঝে,কেউ গভীরভাবে কেউ অল্পস্বল্প।বিছানায় শুয়ে সকালের সারা শরীর এক অজানা আকাঙ্খার ঢেউ তুলে,উপন্যাস পড়ুয়া সকালের অনুভূতি প্রখর।তার বয়স কম হলেও ধ্রুব তাগড়া যুবক।আচ্ছা ধ্রুবর কি ইচ্ছে করছে কাছে টানতে?

ধ্রুব বিছানা থেকে উঠে বসে।ধীর পায়ে উঠে লাগোয়া বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায়।সারা বিছানায় বিষ ঢালা সেখানে শুতে গেলেই বিষব্যাথা হয় ধ্রুবর পক্ষে সেখানে শোয়া সম্ভব হচ্ছে না,আস্তে-ধীরে নিজেকে স্বাভাবিক করে তারপরেই বিছানায় যায়।
এর পরের সাত দিন দুজনেই খুব স্বাভাবিক জীবন কাটায়,দুজন দুজনকে বুঝতে সময় নেয়।দুজনের মুখেই লেগে থাকে হাসির রেশ।রবিবার দিন ধ্রুবর ফুপিরা এলেন,উনারা গাজীপুরে থাকে ফ্যামিলি নিয়ে সবাই কক্সবাজার পিকনিকে গিয়েছিলো।

এসে যখন শুনতে পেলো ধ্রুব বিয়ে করে বউ নিয়ে এসেছে তখন ধ্রুবর ফুফু সাহানার মাথায় হাত।পেলেপুষে বড়ো করা ময়না যখন অন্য কেউ কথা শিখায় তখন কি মেনে নেয়া যায়?কতো আশা করেছিলো একমাত্র ভাইপোর সাথে একমাত্র মেয়ে রুপার বিয়ে দেবে।কিন্তু উনার ভারা ভাতে গোবর কে মারলো এটা দেখতে তড়িঘড়ি করে ভাইয়ের বাসায় ছুটে আসা।সোফায় সাহানা আর রুপা বসে আছে।রুপা খবরটা শুনে কেঁদে দিয়েছে,যদি যানতো ধ্রুব এভাবে হুট করে বিয়ে করে নেবে তাহলে কখনই ট্যুর দিতে যেত না।

কোন ডাইনী তার ধ্রুবকে কেড়ে নিলো এটা দেখতে মায়ের সাথে সাথে সেও ছুটে এসেছে।মনোয়ারা ব্যস্ত হয়ে ননদের কাছে আসে,সাহানা যে এই বদমেজাজি মেয়েটাকে ধ্রুবর গলায় ঝুলাতে চেয়েছিলো সেটা অবশ্য কারো অজানা নয়।অনেকবার কথায় কথায় প্রস্তাব রেখেছেন,কিন্তু মনোয়ারা ভুলেও রাজি না।মনোয়ারা কেন স্বয়ং ধ্রুবই এই মেয়েকে দেখতে পারে না,ফুফাতো বোন এই খাতিরেই মাত্র সৌজন্য কথাবার্তা হয়।

বিয়ের খবরটা এই জন্যই আগে জানায়নি বিয়ের পরে বলেছে।সোফায় বসে তিনি সকালকে ডাকে সকাল উনাদের জন্য নাস্তা নিয়ে আসে।সাহানা আর রুপা দুজনেই সকালের রুপ দেখে স্তব্ধ হয়ে গেছে।হা করে তাকিয়ে থাকা দেখে মনোয়ারা চশমা ঠিক করার উছিলায় মুখ টিপে হাসে,গলা খাকারি দিয়ে বলে “সাহানা নেও বউয়ের হাতের কলিজা সিংগাড়া।বেশ মজা খেয়ে দেখো।”

রুপা অবাক হয়ে সকালকে দেখে তার থেকেও বেশী সুন্দর,সবুজ থ্রী পিছে মোমের মতো টকটকে রুপ ছলকে বেরোচ্ছে।সুন্দরী হলে কি হবে গেয়ো ভূত,গ্রামের ক্ষেত কোথাকার।রুপা ভাবে এই ডাইনী বিদায় করতে হবে ধ্রুবকে তার যেকোনো মূল্যেই চাই।রুপা হেসে বললো,”ভাবি ভালো আছেন?”
সকাল সালাম দিয়ে কথা বললো।
সাহানা খুঁচা মেরে বললো,

“সকাল আমরা গ্রামে গেলে তোমার আব্বার ঘরে ভাত পানি খাই সেই উছিলায় তোমার আব্বা শেষমেষ আমার ভাতিজাকেই পেল?”
মনোয়ারা উনার কথায় বিব্রত হয়ে বললো,
“উনি পেতে যাবে কেন,আমিই মেয়ে এনেছি।”
সাহানা মুখ কালো করে বললো,
“আনছেন ভালো কথা।তা বউ কি দিয়েছে তোমার আব্বা।”
সকাল বুঝতে না পেরে বল,”মানে?”

“আরে জামাইরে দেয় না উপহার, আমিতো আমার রুপার জন্য মিরপুরে একটা ফ্লাট কিনে রাখছি মেয়েকে খালি হাতে দিবো নাকি?”
সকাল কিছু বলার আগে মনোয়ারা বলে,
“আপা আমি মেয়ে এনেছি,এখানে দেয়া নেয়ার প্রশ্ন আসছে কেন?”
সাহানা মুখ ঝামটা মেরে বলেন,

“গ্রামের মেয়ে বিয়ে করালে এমনি হয় ভাবি।এরা স্টেটাস বুঝে না।”
সকালের সামনে এসব কথা বলাতে মনোয়ারা খুবই বিব্রতবোধ করে।তখনি রুপা বলে,
“ভাবি চলেন আপনার রুমে যাই।”

সকাল হাসিমুখে রুপাকে নিয়ে রুমে যায়।রুপা মনে মনে ভাবে এই মেয়েকে এই ঘর ছাড়া করবেই।
রুপা গিয়ে সকালদের বিছানায় বসে।সারা ঘরে চোখ ভুলিয়ে ঘরের বিভিন্ন জায়গায় মেয়েলী সামগ্রী দেখে রুপার খুব হিংসা হয়।এই ঘরে তার থাকার কথা ছিল,কতো চেষ্টা করলো ধ্রুবর মন নিতে কিন্তু ধ্রুব তাকে পাত্তাই দিলো না।রুপা বললো,

“ভাবি আপনি কখনো প্রেম করেছেন?”
সকাল মাথা নেড়ে বললো,
“না না আমি এসবে একদম নেই।”
রুপা বেশ আগ্রহ নিয়ে বললো,
“আপনার হাজবেন্ড কিন্তু পাকা খেলোয়াড়।”
সকাল বললো,

“মানে?”
“আরে কতো প্রেম করেছে।”
সকাল বুকে পাথর চেপে ধরে বলে,
“কি বলেন এগুলা?”
রুপা নাক টেনে কেঁদে দিলো।চোখের পানি মুছে বললো,

“আমাদের তো পাঁচ বছরের সম্পর্ক ছিলো,আপনাকে দেখে আমাকে ভুলে গেলো।এখন আপনি প্লিজ ধ্রুবকে ছেড়ে চলে যান।ধ্রুবর ভাগ আমি কাউকে দিতে পারবো না।প্লিজ আপনি ধ্রুবকে ছেড়ে দিন।প্লিজ।”
সকাল পাথরের মতো রুপার দিকে তাকিয়ে আছে।গতো সাত দিনে তার একবারো মনে হয়নি এই পুরুষের মনে অন্য নারী ছিলো ।আসলেই কি এই মেয়ের সাথে ধ্রুবর সম্পর্ক ছিলো।সকালের দম বন্ধ হয়ে আসে,ডাগর চোখে পানি চিকচিক করে।
রুপা মনে মনে হাসে”আগুন লেগেছে এখন কেরোসিন ঢেলে আগুনের পরিমান বাড়াতে হবে।”

তারপর ব্যাস্ত হাতে মোবাইল বের করে একটা ছবি বের করে সকালের সামনে ধরে বলে,
“আমার কথা বিশ্বাস না হলে এটা দেখেন।”
সকাল ঝাপসা চোখে ছবিটার দিকে তাকায়,ধ্রুব আর রুপা সামনে কফি নিয়ে কোন রেস্টুরেন্টে বসে আছে।ধ্রুবর মুখে লেগে আছে পাগলকরা হাসি।

সকালের গাল বেয়ে দুইফোটা পানি গড়িয়ে পড়ে।রুপা সকালের হাত ধরে বলে”প্লিজ চলে যান।”
সকাল কিছু বলে না।রুপা রুম থেকে চলে গেলে সকাল ঠোঁট উল্টে কেঁদে দেয়,সে ধ্রুবর জীবনে প্রথম না এটা মানতে খুবই কষ্ট হচ্ছে,সেও যে ধ্রুবকে মনে যায়গা দিয়ে ফেলেছে।এই জন্যই কি বিয়ের পরে সকালকে দেখেও নি ধ্রুব?সকাল ফুপিয়ে কেঁদে সিধান্ত নেয় কারো ভালোবাসায় বাধা হবে না সে চলে যাবে।

ধ্রুব বাসায় আসতে আজকে একটু দেরী হয়ে যায়।হাত উল্টে সময় দেখে নিলো,সাড়ে নয়টা বাজে।সকাল কি তার অপেক্ষায় আছে,ইশ মেয়েটা নিশ্চয়ই কষ্ট পাচ্ছে।দরজা খুলে মনোয়ারা,ধ্রুব অবশ্য সকালকে আশা করেছিলো।রুমে ঢুকে দেখলো লাইট নিভানো ধ্রুব ভ্রু কুচকে লাইট জ্বালিয়ে দেখে সকাল মুখের ওপর উরনা দিয়ে শুয়ে আছে।ধ্রুব চুপচাপ ফ্রেস হয়ে আসে,সকাল এখনো শুয়ে আছে কেন?

ধ্রুব এসেছে সেটা কি টের পায়নি?কই লেবুর শরবত নিয়ে এলো না কেন?গতো সাতদিনে বেশ খুশী খুশী মনেই এসব করেছে।আজকে এক কলিগের বেবী হয়েছে এই উপলক্ষে সবাইকে ডিনার করিয়েছে।ধ্রুব বিছানায় বসে প্রান ভরে নিশ্বাস নেয়,বউটার কাছে আসলেই এক অজানা ঘ্রাণ এসে নাকে ধাক্কাদেয়।ধ্রুব টেনে সকালের ওরনা সরিয়ে দিলো।সকাল চোখ খুলে তাকায়,তার নাক মুখ লাল হয়ে আছে।চোখর পাতা এতোটা ফুলেছে যে নজরে পড়ছে।ধ্রুব ব্যস্ত হয়ে বললো,

“কি হয়েছে সকাল শরীর খারাপ লাগছে।”
ধ্রুবকে দেখে সকালের মনে হয় এই পুরুষটা তার নয়,এই পুরুষের পাগলামি তার নয়।এই পুরুষের মনে সে প্রথম নয়।আবারো বুক খামচে চোখ ভরে পানি আসে।উঠে বসে ফ্যাসফ্যাসে গলায় বললো,
“কিছু না এমনি খারাপ লাগছিলো।”

ধ্রুবর বিশ্বাস হয় না।সকালের সামনে হাটু গেড়ে বসে বলে,
“আমাকে বলোনা।প্লিজ বন্ধু মনে করে বলো।”
ধ্রুবর আদর আদর কথাগুলো সকালকে আরো কাঁদায়।ঠোঁট দিয়ে ঠোঁট চেপে কান্না আটকাতে চায় তারপরেও চোখ থেকে টপটপ কয়েকফোটা পানি পড়ে যায়।

অজানা ভয় ধ্রুবর বুক খামচে ধরে।সকালের হাত ধরে কিছু বলতে যাবে তখনি মনোয়ারা ডাকে।ধ্রুব ব্যস্ত পায়ে বেরিয়ে যায়।মনোয়ারা জানায়”সকাল ভাত খায়নি।কখন খাবে?”
ধ্রুব নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বলে,”সকালের নাকি ভালো লাগছে না,পরে খাবে।”
ধ্রুব রুমে এসে দেখে সকাল রুমে নেই।বারান্দায় গিয়ে দেখে ফ্লোরে হাটুমুড়ে বসে আছে,ধ্রুব ভাবলো হয়তো ফ্যামিলির কথা মনে হচ্ছে তাই কান্না করছে।সে সকালকে স্বাভাবিক করতে আদর করে বললো,

“আমার বউটার কি হলো?এই বউ কথা বলো,তুমি কথা না বললে আমি স্ট্রোক ফিস্ট্রোক করে ফেলতে পারি।”
সকাল হাসলো না লজ্জাও পেলো না,
গম্ভীর কন্ঠে কাটাকাটা গলায় বললো,
“আপনার জীবনে আমি প্রথম না এটা কেন বললেন না ধ্রুব? আমি চাইনা কারো ভালোবাসায় বাধা হতে।কাল সকালেই আব্বা আসবে উনার সাথে আমি চলে যাব।”

কাঞ্চাসোনা পর্ব ৫

সকাল বলতে বলতে কেঁদে দেয়।ধ্রুব আগামাথা কিছুই বুঝে না,চলে যাবে মানে কি?ধ্রুব সকালের হাত ধরতে আসলে সকাল ছিটকে দূরে সরে বলে,
“ছোবেন না।”
ধ্রুবর চোখ লাল হয়ে আসে,ধরা গলায় বলে,”কি বলছো সকাল?”

কাঞ্চাসোনা পর্ব ৭