কাঞ্চাসোনা পর্ব ৭

কাঞ্চাসোনা পর্ব ৭
জাকিয়া সুলতানা ঝুমুর

ধ্রুবর কন্ঠ কেঁপে উঠে।কখনো কোন প্রেম না করা ধ্রুবর গায়ে এতোবড় অপবাদ সয় না।সকালের দিকে অবিচল তাকিয়ে বললো,
“এই মেয়ে চলে যাবে মানে কি?”
সকালের গলা কেঁপে ওঠে।অন্ধকার আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো,
“চলে যাবোনা তো কি করবো,আমি কারো প্রেমে বাধা হতে চাই না।”
ধ্রুব স্তব্ধ হয়ে বলে,

“কিসের প্রেম?লক্ষীটি এগুলো কি বলছো?”
ধ্রুবর এই মায়া লাগানো কথা সকালের সহ্য হয় না,শব্দ করে কেঁদে বলে,
“যার সাথে পাঁচ বছরের প্রেম তাকেই জিজ্ঞেস করেন।”
এবার ধ্রুব রেগে গেলো।ধমকে বললো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“তখন থেকে জিজ্ঞেস করছি কোন সঠিক উত্তর দিচ্ছো না। আমাকে না বললে বুঝবো কি করে?”
ধ্রুবর আচমকা ধমকে সকাল ঠোঁট ফুলিয়ে কাঁদে।এটা দেখে ধ্রুব জোড়ে শ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত করে। এগিয়ে এসে সকালের সামনে হাটু মুড়ে বসে।সকাল কেঁদেকেটে মুখটা লাল করে ফেলেছে।ধ্রুব লাল গালে দু’হাত রেখে ফিসফিস করে বললো,

“জানপাখি!কি হয়েছে আমাকে বলো।প্লিজ।”
সকাল ধ্রুবর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে এই ছেলেটা তাকে এতো টানে কেন?এই প্রনয় পুরুষ তার হবেনা এটাই সকাল মেনে নিতে পারছেনা।মনে বিধে থাকা কথাটা ধ্রুবকে না বলেও থাকা যাচ্ছে না।কিন্তু কান্নার চোটে মুখ দিয়ে কথাই বেরোচ্ছেনা।অনেক কষ্টে ফ্যাসফ্যাসে গলায় বললো,

“রুপা আপু বললো।”
রুপার নাম শুনেই ধ্রুবর চোখ কঠিন হয়ে এলো।রুপাকে সে কোনকালেই পছন্দ করে না।গায়েপড়া স্বভাবের নির্লজ্জ মেয়েটা হচ্ছে রুপা।এই মেয়ে কি বলে গেলো ধ্রুব সন্দিহান কন্ঠে বললো,
“কি বলেছে রুপা।”

তারপর রুপার বলা প্রতিটা কথা সকাল ধ্রুবকে বলে।ধ্রুবর চোয়াল শক্ত হয়,চোখ কঠিন থেকে কঠিনতরো করে রুপার নম্বারে ডায়াল করে লাউডস্পিকারে দেয়।
রুপা ধ্রুবর ফোন পেয়ে খুশীতে নেচে উঠে।ফোন রিসিভ করে বললো,
“আমি জানতাম ফোন দিবে।”
ধ্রুব দাতে দাত চেপে বললো,
“সকালের কাছে এগুলা বলার মানে কি?”

রুপা হয়তো ভাবেনি সকাল ধ্রুবর কাছেই বসে আছে আর এসব শুনছেও।কিটকিট করে হেসে বললো,
“আগুন লেগে গেছে?আমি জানতাম এমনটাই হবে,গ্রামের মূর্খ মেয়ে তো এসব বুজবেনা।”
“আমি তোর সাথে পাঁচ বছর প্রেম করেছি এই মিথ্যেটা কেন বলেছিস?”
রুপা বলে,”কিছু কিছু সময় আছে মিথ্যা বলেও সুখ আদায় করতে হয়।দেখ আমি মিথ্যা বলাতে তোমার বউ চলে গেছে।”
ধ্রুব ঠান্ডা মাথায় সব কথা বের করতে বললো,

“আর ছবির ব্যাপারটা,কফি হাউজে সবাই ছিল ইডিট করে আমার আর তোর ছবি আলাদা করার মানে কি?”
“ওই যে বললাম না আগুন।সেটার পরিমাণ আরো বাড়াতেই দেখিয়েছি।তোমার বউ চলে গেলে আমি তোমাকে বিয়ে করবো।নো টেনশন।”
ভদ্র,সদ্র ধ্রুব এবার নিজেকে আর সামলাতে পারলো না।চেচিয়ে বললো,

“কু ত্তার বাচ্চা।সামনে পেলে তোকে জনমের মতো বিয়ের সাধ মিটিয়ে দেবো।”
তারপর মোবাইল কেঁটে সকালের দিকে তাকায়।সকাল স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে।রুপার প্রতিটা কথা কানে ঝংকার তুলে যাচ্ছে।মেয়েটা তাকে বোকা বানালো?মেয়েটার ফালতু কথা বিশ্বাস করে সে কিনা চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলো।সকাল এবার শব্দ করে কেঁদে দিলো।

ধ্রুব ক্লান্ত কন্ঠে বললো,
“শুনলে তো!রুপা আমাকে অনেক আগে থেকেই পছন্দ করে,জেলাসি থেকে এগুলা বলেছে,যেন তুমি আমাকে ভুল বুঝে চলে যাও।আর তুমিও বোকার মতো বিশ্বাস করেছো।”
সকাল তারপরেও কাঁদে।ধ্রুব হাত ধরে বললো,
“এখন কাঁদো কেন?”

সকাল খুব আস্তে ঠোঁট নেড়ে বলে, “সরি।”
ধ্রুব সকালের চোখের পানি মুছে দেয়।মাত্র কয়েকদিন আগে বিয়ে হয়েছে এখনি স্বামীর নামে এমন কথা শুনলে সব মেয়েরই রাগ হবে।আলতো হেসে বললো,
“ইট’স ওকে জান।”
ধ্রুবর মুখে বলা জান শব্দটা সকালের জলন্ত বুকে পানি ঢালে।ধ্রুব খেয়াল করে সকালের হাতে অনেকগুলো কামড়ের দাগ।হাতগুলো উপরে তুলে বলে,

“এগুলো কি?”
সকাল ভালো বাচ্চার মতো বললো,
“কামড়ের দাগ।”
ধ্রুব অবাক হওয়া কন্ঠে বললো,
“কি করেছো এগুলো?”
সকাল মাথা ঝাকিয়ে বলে,

“খুব রাগ হচ্ছিলো,কষ্ট হচ্ছিলো নিজেকে সামলাতে পারিনি।”
ধ্রুব সকালের হাত তার গালে ধরে।সকাল আবেশে চোখ বন্ধ করে নেয়।এতো ভালোবাসা ছেড়ে সে কিনা চলে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলো।ইশ কি বোকা মেয়ে সকাল!
“তোমার দরকার ছিল আমাকে বিস্তারিত বলা।তা না করে নিজের কি হাল করেছো?ইশ আমার বউটা কতো ব্যথা পেয়েছে বলোতো!”

এখন ধ্রুবর সব কথাই সকালের কাছে সুখ সুখ লাগে।এই যে এমন আদর করে কথা বলছে এগুলো শুনে তো সুখে সকালের বুক ভার হয়ে যাচ্ছে।সকাল মিনমিন করে বললো,
“আমার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো।”
“কেন?”
সকাল সহযভাবেই বললো,

“আপনাকে হারিয়ে ফেলার ভয়ে।”
ধ্রুব মুচকি হাসে।সকালকে লজ্জা দেয়ার জন্য বলে,
“অহ!আচ্ছা।তাহলে আপনি আমাকে হারাতে চান না।”
সকাল কিছু না বলে মাথা ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকায়।
ধ্রুবই আবার বললো,

“প্রথম দিন কি বলেছিলাম তোমার বোধহয় মনে নেই,বন্ধু ভাবতে হবে।”
সকাল মাথা নাড়ে।ধ্রুব খুব ক্লান্ত সারাদিন অফিস করে এখন বাসায় এসেও একটু বিছানায় শুতে পারেনি।সকালের হাত ধরে উঠে দাঁড়ায়।সকালের উষ্কখুষ্ক চুল পিঠময় ছড়িয়ে আছে,সকাল হাতে পেচিয়ে খোপা করে।ধ্রুব মুগ্ধ হয়ে দেখে,তার পিচ্চিটা কি সুনিপুন ভাবে হাতে পেচিয়ে চুল বাধলো।তারপর হাত ধরে বললো,

“খাবে না?”
“আপনি খাবেন না?”
ধ্রুব যদি এখন না বলে তাহলে সকালও খাবে না।তাই ধ্রুব মাথা নেড়ে বলে,
“হ্যাঁ চলো।”
দুজনে যখন একসাথে ডাইনিং টেবিলে বসে ভাত খাচ্ছিলো,ধ্রুবর দুষ্ট কথায় সকাল লাজুক লাজুক মুখ করে খাবার খাচ্ছিলো,দরজা খুলে মনোয়ারা তখন পানি নেয়ার জন্য আসছিলেন যুগলের এই মিষ্টিভোজনে আর আসলেন না।এই দৃশ্যটা দেখে উনার চোখ জুড়িয়ে যায়।আল্লাহর কাছে দোয়া করে সবসময় যেন সুখে থাকে।

সকাল আর ধ্রুব দুজনে বিছানায় শুয়ে আছে।এতোদিন দুজনে দুইপাশে ফিরে ঘুমিয়েছে আজকে দুজন মুখোমুখি শুয়েছে।ধ্রুবর হাতে সকালের বেনী।সকাল অকারনেই লজ্জা পায়।ধ্রুবর গভীর চোখের ভাষা তার একটু বোধগম্য হচ্ছে দেখেই কিনা আজকে লজ্জাটা বেশিই পাচ্ছে।ধ্রুব এক নজরে সকালের দিকে তাকিয়ে।অকারনেই লাল হওয়া গালের দিকে তাকিয়ে ধ্রুব ঘোর লাগা গলায় বললো,

“শুনোনা”
“হুম”
“একটা।কথা বললে রাখবে?”
“বলেন রাখবো।”
ধ্রুব বাচ্চাদের মতো আবদার করে বলে,
“তোমার লাল গাল দুটো’তে একটু চুমু খেতে দিবা?”

সকালের চোখের পাপড়ি লজ্জায় বুজে আসে।নাকের ডগায় লজ্জা শিরশিরানি দেয়।এতো আদর নিয়ে আবদার করলে কি ফিরানো যায়?যায় না তো।ডাগর চোখ খুলে ধ্রুবর দিকে তাকায়।জন্মউপোস ধ্রুব গ্রোগ্রাসে সেই চোখের ভাষা গিলে নেয়,একটু এগিয়ে আসে।সকালের ঠোঁট তিরতির করে কাঁপে,সে চোখ বন্ধ করে অপেক্ষা করে নতুন পরশের।

ধ্রুব সকালের নরম গাল দুটোতে তার পুরুষালী উত্তপ্ত ঠোঁট ছোয়ায়।শুধু পরশ দিয়েই থামে না নরম গালে নাকটা ঘষে,গাল’ও ঘষে দেয়।ফিসফিস করে বলে,”জান তোমাকে লাল টমেটো না বলে,লাল আপেল বলা উচিত,গাল দুটো যে আপেলের মতোই মিষ্টি।”

কাঞ্চাসোনা পর্ব ৬

প্রথম কোন পুরুষের এতো গভীর ছোঁয়ায় সকাল তখন দিশেহারা।ধ্রুবর পাগল করা কথা শুনে,নরম গালে ছোট দাড়ির খোচায় আবেশে অস্পষ্ট স্বরে ঘুঙ্গিয়ে উঠে।

কাঞ্চাসোনা পর্ব ৮