কারনে অকারনে ভালোবাসি পর্ব ১৫

কারনে অকারনে ভালোবাসি পর্ব ১৫
Suraiya Aayat

ভোর 4 টে কি 4.30 টে মতো বাজে , সময়ের ঠিকঠাক হিসাবটা কারোর কাছে নেই, আরিশ কেবিনের ভিতরে আর 3 জন কেবিনের বাইরে বসে আছে ৷ আরিশের চোখে ঘুম নেই কেবল চোখটা বন্ধ করে আছে আর অপেক্ষা করছে কখন আরুর জ্ঞান ফিরবে ৷ আরুর হাতে হাত রেখে জড়িয়ে ধরে চেয়ারে বসে বেডে মাথা রেখেছে আরিশ , আরুর জ্ঞান ফেরার সময় হয়ে এসেছে ৷ একটু হাফ ছেড়ে চোখটা আলতো ভাবে বন্ধ করতে গেলেই আরুর হাতটা কিঞ্চিত নড়ে উঠতেই আরিশ ধড়ফড় করে উঠে গেল ৷

আরুর হাতটা নড়ছে কিন্তু চোখ খোলেনি এখনো, আরিশের মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠলো ৷আরু এখনো চোখ খোলেনি ৷ আরিশ আরুর হাতটা আগের মতো করেই ধরে আছে, আরুর মুখের দিকে নিশ্পলক ভাবে তাকিয়ে রয়েছে ও, অপেক্ষা করছে কখন আরুর জ্ঞান ফিরবে ৷ নাহ আরুর জ্ঞান ফিরলো না এখনো, রাতের নিস্তব্ধতাতে ঘড়ির কাটার টিকটিক আওয়াজটা বেশ ভালোভাবে শোনা যাচ্ছে ৷ আরিশ ঘড়ির দিকে তাকালো,4.25 বাজে ৷ আরিশ অপেক্ষা করতে লাগলো কিন্তু ধৈর্য হারালো না, আরিশ বড্ড ধৈর্যশীল সবসময়ই ৷

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

একটু হাতটা নড়লো এখন তা ও নড়ছে না, আরিশ আরুর পালসটা চেক করলো, খানিকটা কম আছে পালস ৷ সময় চলেই যচ্ছে, ,দেখতে দেখতে 4.45 বেজে গেল তখনই হঠাৎ আরু একটু নড়ে উঠলো ৷ আরিশ আরুর দিকে তাকিয়ে দেখলো আরু হালকা চোখ পিটপিট করছে, তা দেখে আরিশ ওর মুখের হাসিটা আরও প্রশস্থ করে বলল
” আরুপাখি !”

আরু ভালোভাবে চোখ খুলে আরিশের দিকে খুব অল্প পরিমান ঘুরে তাকালো , সারা শরীরে ব্যাথা, ঘাড় ঘুরে তাকানোর শক্তিটাও নেই ৷ আরিশ আরুর কাছে আরও এগিয়ে গিয়ে আরুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো ৷ আরু ঠোঁট নাড়াচ্ছে মূলত আরু হয়তো কিছু বলতে চাইছে আরিশ তা বুঝলো ৷আরিশ নরম সুরে ফিকে কন্ঠে বলল
” আরুপাখি জল খাবে ?”

আরু হালকা মাথা নাড়ালো ৷আরু বেশ জোরে জোরে শ্বাস নিতে গেলেই আরিশ মুখ থেকে অক্সিজেন মাস্কটা খুলে ফেলল ৷ আরু এখন একটু ভালোভাবে শ্বাস নিয়ে খুবই নিম্নস্বরে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল
” আমি কখনও মা হতে পারবো না তাইনা ? আমার বেবি হবে না !”
কথাটা আরিশের কানে যেতেই খানিকখনের জন্য আরিশের শরীর ঝটকা খেয়ে যেন কেঁপে উঠলো, সারা শরীর দিয়ে শিহরন বয়ে গেল ‌৷ বুকের ভিতর দুরুদুরু করছে, গলা দিয়ে আওয়াজ বার হচ্ছে না ৷ যেটার ভয় পাচ্ছালো সেটাই হলো ৷ আরিশের ঠোঁট জোঁড়া কাঁপছে ৷ আরিশ কিছু বলছে না দেখে আরু আবার অনেক কষ্টে বলল

” বলুন !”
আরিশ এবার মিথ্যা একটা হাসি হেসে হো হো করে উঠে বললো
” ধূর পাগলি এসব কি কথা হ্যাঁ ৷ তুমি সুস্থ হও তারপর বলবো তোমার কি হয়েছে ৷”
আরু একটা লম্বা নিশ্বাস নিয়ে বলল
” বলুন ৷”
আরিশ এবার খানিকটা রুক্ষ কন্ঠে বলল
” নো মোর ওয়ার্ড আরুপাখি, তুমি অসুস্থ তোমার কথা বলা একেবারেই নিষেধ ৷”

আরু আরিশের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো , আরুর চোখের কোনা বেয়ে জল গড়াচ্ছে কিন্তু সহজে বোঝা যাবে না যে ও কাঁদছে তবে আরিশের চোখকে তা ফাঁকি দিলো না ৷ আরিশের মনের ভিতর একপ্রকার যুদ্ধ চলছে , মেয়েটা সত্যিই জেনে গেল !
আরুর চোখে জল দেখে আরিশের বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠলো, একহাত দিয়ে আরুর চোখটা মুছে দিয়ে বলল
” কাঁদছো কেন তুমি ? আমি কি বলেছি যে আরুপাখি আমার বেবি লাগবে নাহলে আমি তোমার সাথে থাকবো না ৷”

আরু কিছু বলল না, আরিশের দিকে চেয়ে আছে আর চোখ থেকে জল গড়াচ্ছে আর আরিশ বারবার মুছে দিচ্ছে ৷
” কি বলিনি তো ? বলিনি আর বলবো ও না ৷ আর তুমি বেবি নেবে যে তোমার বেবি নেওয়ার বয়স হয়েছে বলো ? তুমি নিজেই তো বেবি , একটা বেবি কি আর একটা বেবিকে সামলাতে পারে তুমিই বলো ?”
আরু আরিশের দিকে তাকিয়েই আছে, কি বলবে বুঝছে না, মনের ভিতর তীব্র অনুশোচনা কাজ করছে যে মানুষটা ওর জন্য কখনও বেস্ট হ্যাপিনেসটা পাবে না ৷
আরিশ আবার বললো

” তোমাকে এখনো আমাকে সামলাতে হয়, কত দুষ্টুমি করো বলোতো ৷ তুমিই আমার লিটিল বেবি ৷ ”
আরিশের কথা শোনার পর আরুর আর বলার মতো কোন মুখ নেই ৷
আরু চোখ বন্ধ করে বললো
” পাগলেও নিজের ভালো টা বোঝে শুধু আপনি বোঝেন না ৷”
আরিশ মুচকি হেসে আরুর কপালে চুমু একে বলল

” নিজের ভালো টা বুঝতে গিয়ে যদি নিজের হ্যাপিনেসটাকেই হারিয়ে ফেলি তাহলে তেমন ভালো আমি চাইনা ৷”
আরু থেমে গেল , ওর ভাবা হয়ে গেছে যে ও কি করবে ৷ ওর জন্য ও আরিশের জীবন টা তো আর এভাবে নষ্ট হতে পারে না তাই ও ভেবে ফেলেছে সব ৷
আরু চোখ বন্ধ করতেই আরিশ সুর আওরিয়ে বললো
” আমি ছিলাম তোমার পাশে,
তোমার আকাশ ভালবেসে,
সে বিশালে খুঁজেছি একটুকু ঠাই,
তাও মেলেনি তা। ”

8দিন পর আজ আরুর ছুটি হয়েছে, যদিও আরু এতোদিন থাকতে চাইনি কিন্তু আরিশের জন্য থাকতে হয়েছে প্রপার ট্রিটমেন্টের মধ্যে দিয়ে ৷ এই কদিনে আরিশের সাথে আরুর খুব একটা কথা হয়নি,,নাহলে এই দিনে একবার কি দুইবার ৷ আরিশ ও আর জোর করে কথা বলতে চাইনি কারন আরুর মন খারাপ ছিলো ৷হসপিটাল থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠলো আরু , গাড়ি ড্রাইভ করছে আরিশ ৷ সবাই আরিশদের বাড়িতে অপেক্ষা করছে ৷ আরু আগের থেকে অনেকটাই সুস্থ ৷ গাড়িতে উঠে সিটের সাথে মাথা এলিয়ে বসে আছে আরু , আরিশ ড্রাইভ করছে আর মাঝে মাঝে আরুর দিকে তাকাচ্ছে ৷ হঠাৎ গাড়িটা ব্যাক নিতেই আরু আরিশের দিকে তাকিয়ে নরম সুরে বলল

” এদিকে যাচ্ছেন কেন? এদিকে তো আপনার বাসা, আমার বাসায় নিয়ে চলুন ৷”
আরিশ কোন কথা বললো না, চুপ করেই রইলো আরু বিরক্ত হয়ে পুনরায় বললো
” আপনি শুনতে পাননি কি বললাম ?”
আরিশ একটু রাগী কন্ঠে বলল
” এখন থেকে আমার বাসায় থাকবে তুমি ৷”

আরু রাগী চোখে তাকিয়ে চোখ ঘুরিয়ে নিলো ৷ কিছুখন পর আরিশদের বাড়িতে চলো এলো ওরা, বাসায় ঢুকে দেখলো সবাই সেখানে উপস্থিত আছে, আরুকে দেখে সবাই খুশি ৷ সানা সাবধানে আরুকে আরিশের ঘরে নিয়ে গেল ৷ আরু ভ্রু কুঁচকে বললো
” এখানে কেন? আমি তোর সাথে থাকবো ৷”
তখনই আরিশ রুমে ঢুকে বলল
” বিয়েটা কার সাথে করেছো? আমার সাথে নাকি সানার সাথে ?”
আরু চুপ করে গেল, কেন জানি না আরিশের সাথে কথা বলতে একদমই ইচ্ছা করছে না ওর , শুধু মনে হচ্ছে ওর জন্য আরিশের জীবনটা নষ্ট ৷হঠাৎ আরিশ বললো
” সানা একটু নীচে যা, গিয়ে দেখ গাড়িতে একটা বক্স আছে ওটা একটু আনবি ?”
সানা মাথা নাড়িয়ে বলল

” আচ্ছা আনছি ৷”
সানা বেরিয়ে যেতেই আরিশ হাতের ঘড়ি খুলতে খুলতে বলল
” সমস্যা কি?”
আরু ভ্রু কুঁচকে বলল
” same question যদি আপনাকেও করি তাহলে আপনার Ans কি হবে?”
আরিশ ঘড়িটা রেখে বলল
” I have no problem……তোমার কি সমস্যা সেটা জানতে চেয়েছি not mine….”
আরু রেগে বলল
” বিয়ে করছেন না কেন আবার ?”
আরিশ আরুর দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বলল
” চলো তাহলে আবার বিয়ে করি ধুমধাম করে, সবাই জানবে যে আবরার আরিশ বিবাহিত ৷”
আরু রেগে বলল

” আমি আমার কথা বলিনি ৷”
আরিশ শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে বলল
” তো ?”
আরু এবার দৃঢ় কন্ঠে বলল
” আমি চাই আপনি আবার বিয়ে করুন, আপনার একটা নতুন সংসার হোক তখন আপনাদের ইনশাআল্লাহ বেবি হবে , একটা ভালো ফিউচার থাকবে ৷”
আরিশ শার্টটা বেডে ফেলে দিয়ে বলল
” আর তুমি ?”
আরু রেগেই বলল
” আমার আবার কি, আমি আমার মতো থাকবো আপনাদের জীবন থেকে সরে যাবো ৷ আমার সাথে থেকে আপনি কখনও সুখ পাবেন না ৷”
আরিশ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বলল

” I think i am too handsome তাইনা ? আমার পিছনে 8 কি 10 টা মেয়ে তো হামেশাই ঘুরবে তাইনা? চাইলেই 5 থেকে 10টা বিয়ে হবে তাইনা? চাইলেই 100টা বেবি পয়দা করা যাবে তাইনা…”
আরু বিরক্ত হয়ে বলল
” মজা করছেন?”
আরিশ আরুর দিকে ফিরে বলল
” নো নো নো আরুপাখি মজা করবো কেন আমি সিরিয়াস ৷”
কথাটা বলে আরুর হাত ধরে বলল

” চলো তুমি আমাকে শেখাবে যে কিভাবে সুখ পাওয়া যায়, আসো বেডে আসো , আজকে আমিও শিখবো ৷”
আরু ঝটকা মেরে আরিশের হাত ঝাড়া মেরে বলল
” ছাড়ুন , সুখ খুঁজতে গেলে বিয়ে করুন বললাম না আমার মাঝে কিছু নেই ৷”
আরিশ আরুর মুখ চেপে বলল
” তোমার মাঝে কি আছে কি নেই আমি জানতে চাইনা আর চাইনি ও কখনও , যেমন আছো তেমন থাকো, যেমন অছি ভালো আছি , আর সুখের দরকার

হলে তোমার মাঝেই খুঁজে নেবো তার জন্য আমার বিয়ে করার দরকার নেই ৷ তুমি ছিলে তুমি আছো আর থাকবে ৷ নো মোর ওয়ার্ডস ৷ আর কোন রকম এদিক বেদিক করলে আমি ভুলে যাবো যে তুমি অসুস্থ বুঝলে !”
কথাটা বলে আরুকে ছেড়ে দিলো ‌ ৷ আরু রাগে ফুসছে ৷হঠাৎ সানা রুমে ঢুকে বলল
” ভাইয়া এই নে ৷”
কথাটা বলে একটা বক্স আরাশের হাতে ধরিয়ে দিলো ৷ সানা বেরিয়ে গেল ৷ আরিশ আরুকে ইশারা করে বেডে বসতে বললো , আরু বসলো না ৷ আরিশ একটা ধমক দিতেই আরু ভয়ে বসে পড়লো ৷

কারনে অকারনে ভালোবাসি পর্ব ১৪

হঠাৎ আরিশ হাটু গেড়ে মাটিতে বসে বক্সটা খুলে সেখান থেকে দুটো জুতো বার করে আরুর পায়ে পরিয়ে দিলো ৷ জুতো দুটোতেই টেডিবিয়ার বসানো ,আরু এগুলো অনেকদিন আগে অনলাইনে অর্ডার দেওয়ার জন্য দেখেছিলো আরিশ তা লক্ষ করেছে , জুতোগুলো দেখে আরু খুশি হলো কিন্তু আরিশের ওপর রাগ ও লাগছে৷
আরিশ জুতো দুটো পরিয়ে দিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলো আর বললো

” শান্ত হয়ে বসবে আর বেডরুম অগোছালো দেখলে খবর আছে ৷”
কথাটা শুনে আরুর রাগ বাড়লো , রেগে হাতের পাশে থাকা ফ্লাওয়ার ভাসটা ফেলে দিতেই ঝটঝট করে ভেঙে গেল ‌ ৷ ভিতর থেকে আরিশ বলে উঠলো
” পানিশমেন্ট ৷”

কারনে অকারনে ভালোবাসি পর্ব ১৬