কারনে অকারনে ভালোবাসি পর্ব ১৬

কারনে অকারনে ভালোবাসি পর্ব ১৬
Suraiya Aayat

আরু মুখ ভাঙচি দিয়ে বলল
” পানিশমেন্ট বললেই কি পানিশমেন্ট হয় নাকি অভদ্রটা, ওপস মিঃ অভদ্র ৷ হোয়াটএভার ৷ আপনার পানিশমেন্ট আপনার পকেটে রাখুন আমি চললাম ৷”
কথাটা বলে আরু বেরিয়ে যেতে গেলেই আরিশ বলল
” যেখানে যাবে যাও তবে বাসার বাইরে এক পা ও রাখলে বুঝে নাও কি হবে ৷”
আরু চোখ মুখ কুঁচকে আরিশকে কথা শোনাতে শোনাতে বেরিয়ে গেল ৷ শাওয়ার নিচ্ছে আরিশ,রাগ লাগছে খুব ,মেয়েটা এখন জেনে গেছে এবার তো কথায় কথায় আরিশকে মুক্তির কথা বলবে আর এর একটা পরমানেন্ট শলিউশন আরিশের বার করতে হবে তাই ভাবছে আরিশ ৷

আরু সিঁড়ি দিয়ে নামছে,নীচে দেখলো ওর মা আর অনিকা খান খাবার টেবিলে খাবার সাজাচ্ছে ৷ অনিকা খানকে দেখে বললেন
” ফুপি তোমার ছেলেকে আবার বিয়ে দিচ্ছো না কেন বলোতো ৷ ”
আরুর কথা শুনে অনিকা খান আর আফসানা বেগম একে অপরের দিকে তাকালেন, অনিকা খান মুচকি হেসে বললেন
” আচ্ছা আরিশের আর কদিন পরেই তো ফাইনাল এক্সাম হবে তারপর ই তোর আর আরিশের আবার ধুমধাম করে বিয়ে দেবো ৷ সত্যিই তো তুই ঠিক বলেছিস তোদের বিয়ে হয়েছে তা তো কেউ জানেই না,এবার ধুমধাম করে বিয়েদিলে সবাই জেনে যাবে ৷”
কথাটা শুনে আরু গ্লাসে জল খেতে খেতে বলল

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” আরে ধূর, ওনাকে আমি আবার বিয়ে করতে যাবো কেন! আমি তো তোমার অন্য নতুন বউমার কথা বলছি যে তোমার বাসায় ঘর আলো করে আসবে , তার একটা ছোট বেবি হবে তাছাড়া বড়ো কথা হলো তোমার অভদ্র ছেলেটাকে বাধ্য করার মতো কেউ আসবে ৷”
কথা শোনা মাত্রই আফসানা বেগম সেখান থেকে চলে গেলেন , অনিকা খান রাগী কন্ঠে বললেন
” এরকম আজকে বলেছিস ঠিক আছে , আর কখনও বলবি না, আরিশের সামনে তো না ই না ৷ আর দেখ তোর মা ও কষ্ট পেলো, চলে গেল তোর কথা শুনে ৷ আর আরিশ তোকে অনেক ভালোবাসে তাই এসব কথা মুখেও আনবি না ৷”
আরু চোখ গরম করে উঠে চলে যেতে যেতে বলল

” ভালোবাসা না তো ছাই ৷”
কথাটা বলে পাশের ঘরে চলে গেল, গিয়ে দেখলো ওর আম্মু ফুঁপিয়ে কাঁদছে , আরুর বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠলো ওর মা কে কাঁদতে দেখে, তবুও নিজেকে সামলে বেশ হাসিমুখে ওনার সামনে গিয়ে বসলো ৷
বেশ মজা করেই বলল
” কি হলো আম্মু তুমি চলে এলে যে , জামাইয়ের আর একবার বিয়ে দেওয়ার কথা শুনে বুঝি লজ্জা পাচ্ছো ?”
আরুর মা কাঁদতে কাঁদতে বলল
” কেন এরকম বলিস আরু, তুই তো জানিস যে আরিশ এসব বলা পছন্দ করে না তার পর ও তুই ৷”
ওনার কথাটা শুনে আরুর মুখের হাসির রেখাটা ছোট হয়ে এল ৷ বেশ কিছুখন নিরব থেকে বলে উঠলো
” আম্মু চোখ মোছ ৷”

উনি আগের মতোই কাঁদছেন , কান্না থামাচ্ছেন না দেখে আরু ওনার চোখ টা মুছে দিয়ে নরম সুরে বলল
” না বলে কি করবো আম্মু তুমি বলতে পারো ? আমার সাথে সংসার করে ওনার কোন লাভ আছে বলো?লাভ নেই, উনি অনেক ভালো একজন মানুষ , অনেক ট্যালেন্টেড আর অমি ওনার ধারে কাছেও না, তা জেনেও একেই ওনার গলায় ঝুলিয়েছেন আমাকে তার ওপর আমার বেবি হবে না, উনি কখনও সন্তান সুখ পাবেন না ৷ ওনার কোন ভবিষ্যৎ নেই ৷

আর আমার মনে হয় না উনি আমার সাথে ভালো থাকবেন ৷ তার থেকে ভালো নই কি যে উনি নতুন করে আবার বিয়ে করুক, ওনার নতুন সংসার হোক,ওনার ফুটফুটে একটা বেবি হবে আমি তাকে কোলে নিয়ে ঘুরবো সে আমার গালে তার ছোট ছোট হাত বোলাবে আর বলবে ” ফুপি “৷

কথাটা বলতেই আরু ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো, ওর চোখ থেকে জল গড়াচ্ছে , আফসানা বেগম ও কেঁদে ফেললেন,একমাত্র আরুই জানে ওর নিজের কষ্টটা , কাওকে বলেও বোঝাতে পারবে না ৷
আফসানা বেগম আরুর চোখ মুছিয়ে বললেন
” আরিশ যখন সবটা মেনে নিয়েছে তখন তুই কেন মেনে নিতে পারবি না বলতো ! যা হওয়ার তা হয়ে ই গেছে, আর আরিশ তোকে অনেক ভালোবাসে ৷”
আরু রুক্ষ কন্ঠে বলল

” ওসব ভালোবাসা টালোবাসা কিছ্ছু না আম্মু এসব হলো ক্ষনিকের মোহ , কিছুদিন পর যখন আমার আর বেবি হবে না তখন আমাকে আর ওনার ভালো লাগবে না,আমাকে ডিভোর্স দিতে চাইবে ৷ তখন আমার কি হবে বলতে পারো ? তার থেকে বরং আমি নিজেই আগে থেকে সরে আসলেই ভালো হবে ৷”
উনি ধমকে বললেন
” আরু , কি যা তা বলছিস ! আরিশ এমনটা তোর ধারনাতেও আসলো কিভাবে ৷ ছেলেটার ভালোবাসা বুঝিস না ?”
আরু উঠে দাঁড়ালো, রুক্ষ কন্ঠে বলল

” ভালোবেসে আর কি হবে আম্মু , সেই তো আমার কখনও বেবি হবে না ৷”
আরুর চোখ দিয়ে নোনাজল টুপিয়ে টুপিয়ে পড়লো, আরু দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে গেল, আফসানা বেগম কাঁদছেন ,মেয়ের এমন ছেলেমানুষি উনি কিছুতেই মানতে পারছেন না ৷
ঘর থেকে বেরিয়ে ডাইনিং রুমে যেতেই অনিকা খানকে বেশ স্বাভাবিক কন্ঠে প্রশ্ন করলো
“ফুপি আমাকে খেতে দাও ,ক্ষুদা লেগেছে অনেক, কতোদিন বাসার খাবার খাইনা, কি রান্না করেছো ?স্পেশাল কি ?”
আরুর এই দীর্ঘ প্রশ্নের উত্তর অতি দ্রুত উপেক্ষা করে অনিকা খান বললেন
” হ্যাঁ রে আরিশ এতো রেগে আছে কেন রে? এভাবে কিছু না বলে হনহন করে বেরিয়ে গেলো যে ৷ তোর কাছেই তো যাচ্ছিল , তুই কি কিছু বলেছিস যে রেগে গেছে ?”

আরুর এক মিনিট ও সময় লাগলো না ব্যাপারটা বুঝতে যে আরিশের রেগে যাওয়ার কারন কি, ঠিক আরিশ আরুর কথা শুনতে পেয়েছে তাই রেগে বেরিয়ে গেছে ৷ আর এই রাগ যে এতো সহজে কমবে না তা আরু ভালোই জানে ৷ আরু বুঝতে পেরে বললো
” না ফুপি কোন কথা হয়নি তো ৷”
অনিকা খান আরুর খাবার বাড়তে বাড়তে বললেন
” তাহলে কি হলো আল্লাহ মালুম , ওর যা রাগ ‌৷”
আরু হঠাৎ করে উঠে গেল টেবিল থেকে, উঠে গিয়ে বলল

” ফুপি আমি ঘরে যাচ্ছি,তুমি আমার খাবার বেড়ো না,” কথাটাবলে আরু চলে গেল আর কোন কথা না বলে ৷ দ্রুত পায়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠলো , পা পিছলে পড়লেই বিপদ তা বোঝে না আরু ৷ রুমে গিয়ে দরজাটা আটকে দিলো ও ৷ কান্না পাচ্ছে ভীষন,আরিশকে ভীষন রকম বকতে ইচ্ছা করছে ৷মানুষটা এমন কেন? এমন একটা মেয়ের সাথে কেন সারজীবন কাটাতে চাচ্ছে , কেন এত মহান হতে যাচ্ছে?
কথাগুলো জোর গলায় বলে চেঁচিয়ে কেঁদে উঠলো আরু ৷ নিজের থেকেও আরিশের জন্য বেশি কষ্ট লাগছে ৷
একটা সময় শক্ত থাকার পর আরুও কেঁদে ফেললো ৷

” একটা ডিভোর্স পেপার বানাতে পারবেন আজকের মধ্যে ?”
আরিশের এমন কথা শুনে উকিল চমকে গিয়ে বলল
” এটা কি বলছো তুমি, একদিনের মধ্যে কিভাবে ডিভোর্স পেপার বানাবো ? তাছাড়া ডিভোর্স কি অতোই সহজ বিষয় নাকি যে একদিনের মধ্যে বানানো যাবে ৷”
আরিশ কাচের টেবিলের ওপর আঘাত করে বলল
“যে করেই হোক আমার চাই , চাই মানে চাই, যতো টাকা লাগে আমি দেবো ৷”
উনি একটু হতবাক হয়ে গেলেন ‌,বেশ ভয়ে ভয়ে প্রশ্ন করে উঠলেন

” আচ্ছা আরিশ তুমি কি বিয়ে করেছো?”
কথাটা শোনার সাথে সাথে আরিশ ওনার দিকে গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকালো, আরিশের চাহনি দেখে উনি আমতা আমতা করে বললেন
” নাহ মানে তুমি বিয়ে করলে তোমার বাবা নিশ্চয়ই আমাকে বলতো তাই আর কি , তেমন তো কিছুই বলেনি তাই ভাবলাম আরকি ৷”
আরিশ আগের মতো করেই বলল
” হমম করেছি, প্রায় 10 দিন হলো ৷”
উনি আরও খানিকটা ভয় নিয়ে বললেন
” 10 দিন বিয়ে হতে না হতেই ডিভোর্স দিয়ে দিচ্ছো বাবা ?”
আরিশ মুচকি হেসে বলল
“ডিভোর্স কেন দেয় আঙ্কেল আপনি জানেন ?”
উনি খানিকটা থতমত খেয়ে বললেন

” কেন!”
আরিশ হৈ হৈ করে হেসে বলল
” আবার বিয়ে করার জন্য , সিম্পল ‌৷”
উনি বেশ ঘাবড়ে গেলেন এমন উত্তর শুনে ৷ মনে সংকোচ রেখে বললেন
” তুমি কি আবার বিয়ে করবে?”
” জ্বি, আর কদিন পর আমার ফাইনাল এক্সাম তারপর আমার বউকে ডিভোর্স দিয়ে আবার তাকেই বিয়ে করবো , বউটা বড্ড ঘাড় ত্যাড়া,সহজে বোঝে না সবকিছু ৷”
উনি আরিশের কথার আগা মাথা না বুঝে বললেন
” আচ্ছা বাবা ৷”
” আপনাকেও দাওয়াত দিবো আঙ্কেল , আসবেন ৷”
উনি মুচকি হেসে বললেন
” আচ্ছা ৷”
আরিশ উঠে যেতে যেতে বলল

” 7 দিনের মধ্যে ডিভোর্স পেপারটা রেডি করবেন আর একটা চুক্তিপত্র তৈরি করবেন যেখানে লেখা থাকবে বিনতে আরুশি রহমান আবরার আরিশ খান ছাড়া আর কারোর সাথে কোন রকম বৈবাহিক সম্পর্ক রাখতে পারবে না বেঁচে থাকা অবস্থায় কখনো বিচ্ছিন্ন ও হতে পারবেনা ৷ বুঝেছেন? বিয়ের কিছুখন আগে ডিভোর্স দিয়ে তারপর আবার বিয়ে করবো ৷ যা বললাম রেডি রাখবেন আঙ্কেল ৷ যত টাকা লাগে আমি দেবো ৷”

কারনে অকারনে ভালোবাসি পর্ব ১৫

কথাটা বলে আরিশ বেরিয়ে গেল ,উনি যেন বোকা বনে গেলেন , আবুলের মতো করে বললেন
” আজকাল কার পোলাপাইন দের ও মতিগতি বুঝিনা , বিয়েটাকে ছেলেখেলা মনে করে এরা ৷ উফফ ৷”
সানগ্লাসটা বার করে চোখে পরে নিলো আরিশ , গাড়ি স্টার্ট দিতেই ফোনের ওয়ালপেপারে তাকালো, আরুর একটা ছবি দেওয়া আছে যা আরু জানেন না, আসলে আরু কখনও আরিশের ফোনের লক খুলতে পারেনি তো ফোনে কি আছে তা দেখা দূরকি বাত যদিও আরু অনেকবার চেষ্টা করেছে লক খেলার কিন্তু পারেনি ৷ গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বলল

” আমি তোমার ইচ্ছা পূরন না করলে কে করবে বলোতো আরুপাখি, আল্লাহ আমাকে এই অধিকার টুকু আমকে দিয়েছেন ৷ জীবনে একবার হলেও তোমার ডিভোর্স পাওয়ার ইচ্ছাটা আমি পূরন করেই ছড়বো আর তোমাকে নিজের করে রাখার পারমানেন্ট বন্দোবস্ত ও করবো ৷ মাইন্ড ইট আরুপাখি ৷”

কারনে অকারনে ভালোবাসি পর্ব ১৭