কারনে অকারনে ভালোবাসি পর্ব ১৭

কারনে অকারনে ভালোবাসি পর্ব ১৭
Suraiya Aayat

বাসায় ফিরে গটগট করে সিঁড়ি বেয়ে নিজের রুমে ঢুকতেই দেখলো আরূ ঘুমিয়ে আছে, হাতটা পেটের ওপর রাখা তা দেখে আরিশের ভ্রু কুঁচকে এলো তাহলে কি মেয়েটা পেটে যন্ত্রনা নিয়েই ঘুমিয়ে পড়েছে ! আরুর ওপর কিছুখন আগের রাগটা এতখন কার্যকর ছিলো বেশ কিন্তু এখন তা অনেকটাই ক্ষীন হয়ে এসেছে , ঘুম থেকে ডাকবে কি ভাবছে ৷
আর বেশি কিছু না ভেবে আরিশ ডাকলো
” আরুপাখি ! আরুপাখি ওঠো ৷”

আজ আর কোনরকম কোন দেরি হলো না এক ডাকেই হুড়মুড়িয়ে উঠে পড়লো আরু , ঘুমন্ত চোখে পিটপিট করে আরিশের দিকে তাকালো আর আরিশ ও একটু অবাক হলো বেশ কারন এক ডাকে আরুকে ওঠানো পসিবল না ৷ আরু খানিকখন ভ্যাবলার মতো আরিশের দিকে চেয়ে রইলো ,চোখমুখের অবস্থা করুন , কাঁদতে কাঁদতেই ঘুমিয়ে পড়েছে তার ওপর কিছু খাইনি তাই মুখটা শুকিয়ে আমসি হয়ে গেছে ৷ আরিশ মুখের দিকে চেয়ে আন্দাজ করতে পারলো বেশ তাই আরুর ঘুমের রেশটা কাটাতে আর না খাওয়ার জন্য হালকা সুরে ধমক দিয়ে বলল

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” এই মেয়ে খাওনি কেন ?”
আরু একটু কেঁপে উঠলো, ঘুম থেকে না উঠলে বোধহয় ওউ আরিশকে একটু কড়া কন্ঠে বকে দিতো কিন্তু খালি পেটে আর ঘুমঘুম ভাব নিয়ে আর যাই হোক মাতঙ্গিনী হাজরার মতো যুদ্ধ তো করা যাইনা তাই আরু খানিকটা কেঁপে উঠলো ৷
আরিশ এবার একটু কড়া কন্ঠে বলল
” খাওনি কেন কিছু ?”
আরু খানিকটা ড্যাব ড্য৷ব করে আরিশের দিকে চেয়ে বলল
” ক্ষুদা নাই আমার ৷”
আরিশ আবার ধমকে বলল

” থাপ্পড় চেনো? ক্ষিদে নেই,তাহলে থাপ্পড় খেয়ে পেট ভরাও ৷”
কথাটা বলে বেরিয়ে যেতে নিলেই আরু বলে উঠলো
” আমাকে ধমক দিচ্ছেন যে , আপনিও তো কিছু না খেয়ে বেরিয়ে গেছিলেন আমি কি আপনাকে ধমকেছি একবার ও ৷”
আরিশ আর পিছন ঘুরলো না, মুখের হাসিটা প্রশস্থ করে বেরিয়ে গেল যা আরুর চোখকে ফাঁকি দিলো ৷ আরু মুখ ফুলিয়ে বসে রইলো , বিছানা থেকে নামলো ও আর আয়নার সামনে গেল কারন মনে পড়ে গেছে যে ও কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছিলো আর কাঁদলে ওর মুখটা আরও বেশি গোলুগোলু দেখায় , নিজের দুই গালে হাত রেখে ঠোঁট ফোলালো আরু , সত্তিই দেখতে গোলুগোলু লাগছে, কতো চেষ্টা করেছে ডায়েট করার তবুও রোগা হয়নি শুধু আরিশের জন্য কারন আরিশ বারবার ওর ডায়েট চার্ট টা ভেঙে দেয় কারন আরিশ নাকি এমন আরুকেই পছন্দ করে ৷

আরিশের পায়ের শব্দ শুনে ফোঁলানো ঠোঁটটা ছেড়ে দিলো ,আরিশ হাতে প্লেট নিয়ে ঢুকছে ,আরুকে আয়নার সামনে দেখে বলল
” যেমন আছো তেমনই থাকো,রোগা হওয়ার কথা ভেবে লাভ নেই ,ওয়েট 50 কেজি আছে তার থেকে যেন না বাড়ে আবার তার থেকে যেন না কমে ,তোমার হাইট অনুযায়ী পারফেক্ট ,এখন তাড়াতাড়ি বসো ৷”
আরু বসে গেল , আরিশ খাবার মাখছে দেখে মনে হচ্ছে একজনের খাবার তা দেখে আরু প্রশ্ন করলো
“নিজের খাবার টা নিয়ে এলেন আর আমার টা আনলেন না বাহ !”
আরিশ এক লোকমা ভাত আরুর মুখের সামনে ধরে বলল

” থাপ্পড় না খেতে চাইলে হা করো জলদি , I am hungry….”
আরু মুখ নাড়তে নাড়তে বলল
” আপনিও খান ৷”
আরিশ ভাত মাখতে মাখতে বলল
” আমি বেবিদের খাবার খাইনা ৷”
কথাটা ফলে ফিক করে হেসে ফেলল, আরু গাল ফুলিয়ে রইলো , আরিশ ওকে বেবিদের মতো করে ট্রিট করে যা আরুর ভালো লাগে না ৷

আরিশ আরুর গালে লেগে থাকা ভাতটা মুছে বলল
” জলদি মুখ নাড়ো, কারন তুমি আমাকে খাইয়ে দেবে ৷”
আরু ও চালাকি করে বলল
” বেবিরা বড়োদেরকে খাইয়ে দিতে পারে না সেটা জানেন না ৷”
আরিশ আরুর দিকে একপলক তাকিয়ে বলল
” বাহ ! আমার জালে আমাকেই ফাসানো ! যাইহোক আমি তো তাহলে বেবিকে আদর করতেই পারি তাইনা !”
আরু রেগে চোখ মুখ কুচকে বলল
” নাহ !”
আরিশ আরুর দিকে ভাত এগিয়ে দিয়ে বলল
” হা করো আর no more words…”
আরু আরিশের দিকে বাকা চোখে তাকালো ৷

” আপনার আজ ডিউটি আছে ?’
বিছানায় পা ঝুলিয়ে পা নাড়াতে নাড়াতে আরু প্রশ্ন করে উঠলো ৷
আরিশ শার্টের বোতাম লাগাতে লগাতে বলল
” হমম ৷ নাইট ডিউটি ৷”
আরু খুশি হয়ে বলল
” ওহহ তারমানে সকালে ফিরবেন নিশ্চয়ই ?”
আরিশ শার্টটা ঠিক করে বলল
” নাহ, আর এতো খুশি হওয়ার দরকার নেই , 3.30 টের দিকে চলে আসবো ৷”
আরু মুখ ভাঙচি দিয়ে বলল
” আপানার মতো ডাক্তারদের জন্য দেশের পেশেন্ট গুলোর ভবিষ্যত অন্ধকার ৷”
আরিশ হাত ঘড়িটা পরতে পরতে বলল

” ওহহ আচ্ছা, তাই নাকি মিসেস আরিশ খান !”
আরু উঠে বলল
” তা নয়তো কি , নাইট ডিউটি মানে পুরো রাত ডিউটি আর আপনি কাজে ফাঁকি দিয়ে চলে আসবেন মাঝ রাতে ?”
আরিশ আরুর দিকে তাকিয়ে বলল
” আজ আমার ডিউটি নেই তবুও যাচ্ছি কারন আজকে নাবিলা র ডিউটি ছিলো ও একটু সিক তাই আমি যাচ্ছি ৷”
আরু আরিশের মাথার চুলটা হূঠ করে টেনে দিয়ে বলল
” নাবিলা আপু কিন্তু দেখতে জোশ আপনার সাথে মানাবে আপনি ওনাকে বিয়ে করে নিলেই তো হয় ৷”
আরিশ রাগী কন্ঠে বলল
” থাপ্পড় খাবে? ইচ্ছে জাগছে ?”

আরু দাঁত বার করে হিহি করে হেসে আরিশের পিঠে গুড়ুম করে একটা কিল মেরে বলল
” আপাতত আপনাকে একটু পিটাতে ইচ্ছা করছে ৷”
আরিশকে একটা কিল মেরে আরু ছুটলো , আরিশ রেগে বলল
” আরুপাখি দৗড়াতে কে বলেছে তোমাকে , পানিশমেন্ট পাবে তুমি ডাবল বাসায় ফিরি ৷”
আরু আর শোনে কার কথা , ও ছুট ৷ রেডি হয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামলো ,নীচে সবার মাঝে আরু শান্তশিষ্ঠ বাচ্চা হয়ে বসে আছে দেখে একদমই মনে হবে না যে একটু আগে আরিশকে একটা সাংঘাতিক কিল মেরে এসেছে ৷ আরিশ আরুর দিকে সরু চোখে তাকিয়ে বলল
” আম্মু আসছি আর আরুপাখিকে একটু চোখে চোখে রেখো ,কোনরকম বাদরামি করলে আমাকে খবর দিও ৷”
কথাটা বলে বেরিয়ে যেতে নিলেই আরু মুখ ভাঙচি দিয়ে বলল

” মিঃ অভদ্র ৷”
আরিশ বেরিয়ে গেল ৷ আরিশ বেরিয়ে যেতেই সানা একটু দরজার বাইরে উঁকি দিয়ে দেখলো যে আরিশ আছে কি না তারপর যখন দেখলো যে আরিশ চলে গেছে সানা কোনরকম দৌড়ে এলো আরুর কাছে
” জানু মেডিকেল এর এক্সাম এর ডেট দিয়েছে , আর এবার সিট সংখ্যা 100 টা কমে গেছে ৷”
আরু ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল
” তো ?”
সানা রেগে বলল

” এতোটা ইজি না, এতোদিন ধরে প্রিপারেশান নিলাম আর এই কদিন তো কিছুই পড়া হয়নি যদি চান্স না হয় ৷”
আরু নিউজ পেপার নিয়ে গাট্টা মেরে বলল
” ইউ নিড এ জিনিয়াস টিচার জানু লাইক মিঃ অভদ্র, আমি 2 সপ্তাহ কি পড়েছি তা ভুলে গেছি আর এই কদিন তো পড়াই হয়নি তবে চান্স না পেলে খবর খারাপ এটুকু জানি ৷ তবে একটা কাজ করবি ?”
সানা কৌতুহল নিয়ে বলল
” চান্স পাবো ইনশাআল্লাহ তবে রেজাল্টটা একটু খারাপ করিস তাহলে দূরের কোন মেডিক্যাল এ পাবো তখন দুজনে হোস্টেল থাকবো তখন আর মিঃ অভদ্র কোন প্যারা থাকবে না ৷”
সানা মুখ ভাঙচি মেরে বলল

” হাহ এতোই সোজা ! তুই কি ভাবলি ভাইয়া তোকে দূরে কোথাও যেতে দেবে ? রেজাল্ট খারাপ হলে বেসরকারিতে ভর্তি করিয়ে দেবে তাও তোকে আর আমাকে কোথাও যেতে দেবে না ৷”
আরু রেগে বলল
” হু হু , টাকা বেশি হয়ে গেছে তো ওনার ৷ ধূর !”
কথাটা বলে বিরক্তি প্রকাশ করলো ৷ আরুর কাছে সরে বসে বলল
” দোস্ত যদি ঢাকার মধ্যে চান্স না পায় তাহলে তো ভাইয়া খেয়ে ফেলবে ৷”
আরু বাকা চোখে তাকিয়ে বলল
” পরেরটা পরে আপতত আয় একটা কাজ করি….”
সানা অবাক হয়ে বলল

” কি ?”
আরু এক্সাআটেড হয়ে বলল
” মিঃ অভদ্রর জন্য মেয়ে খুঁজি ৷ ওনার আবার বিয়ে দিবো আমি ৷”
সানা রেগে বলল
” আরুউউউউউ ৷”
আরু মুখ ভাঙচিয়ে বলল
” বিয়ে আমি দিয়েই ছাড়বো হু , আর আমি ডিভোর্সের জন্য অলরেডি আপিল করেছি কাল পরশুর মধ্যে চলে আসবে হু ৷”
কথাটা বলে সোফা ছেড়ে উঠতে গেলেই সানা রেগে বলল
” নিজের বিপদ কিন্তু নিজেই ডেকে আনছিস ,,বাসায় যদি ডিভোর্স পেপার ঢোকে ভাইয়া সব তছনছ করে দেবে ৷”আরু সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে বলল
” তা হোক , পরে তো উনি সন্তান সুখ পাবে এটাই এনাফ ৷”
কথাটা বলে চলে গেল আরু ৷
সানা মাথায় হাত দিয়ে বসে রইলো, মেয়েটার খবর আছে যদি আরিশ জানে ৷

“তুমি কি বিজি আছো?”
” জ্বি আঙ্কেল না বলুন কি বলবেন? ডিভোর্স পেপার রেডি হতে কতোদিন লাগবে?”
উকিল একটু ভাবুক সুরে বললেন
” একটা কথা তোমাকে জানানো প্রয়োজন আরিশ ৷”
” জ্বি বলুন ৷”

কারনে অকারনে ভালোবাসি পর্ব ১৬

” ইসলিমিক শরীয়ত মতে কোন স্বামী স্ত্রী তারা ডিভোর্স নেওয়ার পর তারা পুনরায় আর বিয়ে করতে পারে না যতখন না তারা আর একবার অন্য কোথাও বিয়ে করছে ৷ আই মিন তুমি ডিভোর্স নিলে তোমাকে অন্য আর একজনকে বিয়ে করে আর বৌমাকেও আবার বিয়ে করে ডিভোর্স দিয়ে তারপর তোমাকে বিয়ে করতে পারবে ৷”
কথাটা শুনে আরিশ 2 মিনিট ও সময় নিলো না ভাবতে , বলে উঠলো
” ওকে আঙ্কেল ডিভোর্সটা ক্যান্সেল করেন আর একটা মে এগ্রিমেন্ট দিয়েছিলাম ওটা করেন ৷”
উনি হাসি মুখে বললেন

” আচ্ছা ৷ আর বলোনা এখন ডিভোর্স এর পরিমান এতো বাড়ছে যে কি বলবো , এই কিছুদিন আগে ,সম্ভবত 3 দিন আগে এটা মেয়ে ফোন করে বলল যে ডিভোর্স পেপার বানাতে, কারন জিজ্ঞাসা করলে বলল ” তার হাজবেন্ডের আবার বিয়ে দেবে তাই ৷”
আরিশ ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করলো

” নাম কি তার?”
” নামটা মনে নেই আপতত ,পরে মনে পড়লে বলবো ৷”
আরিশ আর কথা বাড়ালো না, কলটা কেটে দিলো ৷ কল কাটতেই নার্স বলল
” sir মহিব sir আপনাকে 16 নং রুমে ডাকছেন ৷”
আরিশ ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে বলল
” আসছি ৷”

কারনে অকারনে ভালোবাসি পর্ব ১৮