কারনে অকারনে ভালোবাসি পর্ব ১৯

কারনে অকারনে ভালোবাসি পর্ব ১৯
Suraiya Aayat

মুখের একপাশে পেন গুজে একটা ইকুয়েশন মেলানোর চেষ্টা করছে আরু, পাশে সানাও অনেক চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না ৷ অন্য সময় হলে আরু ঠিকই পারতো কিন্তু এখন পারছে না কারন ওর মনোযোগ তো অন্য দিকে ৷ অরিশ অনেকখন ধরে আরুর দিকে তাকিয়ে আছে মেয়েটা মুখে কলম গুজে বসে আছে ভীষন জোরে একটা ধমক দিতে মন চাইছে, যা ভাবা তাই কাজ , একটা গগনবিরাদী চিৎকার দিয়ে ধমকের সুরে বলল

” এই মেয়ে , পারছো না কেন?”
ধমক শোনামাত্রই আরুর মুখ থেকে পেনটা পড়ে গেল আর লিখতে লিখতে ভয়ে সানার হাত থেকে পেন কেঁপে একটা এলোমেলো দাগ হয়ে গেল খাতায় ৷ আরু নিজের ওপর তিনবার ফু দিয়ে বলল
” এভাবে কেউ চেঁচায় ! আর একটু হলে যদি হার্ট অ্যাটাক করে ফেলতাম তখন কি হতো?”
আরিশ রাগান্বিত কন্ঠে বলল

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” এগুলো শেষ হয়েছে জুনের প্রথম দিকেই, এতো সহজে ভুলে যাও কি করে তুমি ?”
সানা ভয়ে ভয়ে আবার লেখা শুরু করলে আরিশ বলল
” তুই পারছিস না কেন সানা? ওর মতো তোর ও কি স্মৃতিশক্তি লোপ পেয়েছে যে পুরোনো সব পড়া ভুলে ঘেটে ঘ হয়ে গেছে ৷”
সানা মাথা নীচু করে আছে কি বলবে বুঝছে না ৷ আরুর সামনে থেকে খাতাটা টেনে আরিশ এক মিনিটের মধ্যে কতো ইজিলি সলভ করে দিলো , আরু আর সানা খুব মনোযোগ সহকারে দেখছে , আরিশের লেখা শেষ হলেই আরু তীব্র অনুশুচনার সুরে বলল
” ইইশশ্ হাও ইজি , এটা তো আমি পারতাম ৷”
আরিশ উঠে দাঁড়িয়ে বলল

” এক্সামে ঢাকা মেডিক্যাল অর স্যার সালিমুল্লাহ মেডিক্যাল এই দুটোর মধ্যে যদি নাম না আসে তো খবর আছে ৷ পানিশমেন্ট হিসাবে আরুপাখি তোমাকে আমি বাইরে বেরোতে আর শপিং একদম বন্ধ করে দেবো আর নো কফি আর সানার বিয়ে দিয়ে শ্বশুর বাড়ি পাঠিয়ে দেবো মনে থাকবে ৷”
আরু মুখ ভাঙচি দিলো, সানার বোধহয় ওর নিজের পানিশমেন্টটা খুব একটা পছন্দ হলো না তাই কিন্তু কিন্তু নিয়ে বলল
” আরুর এতো সহজ পানিশমেন্ট আর আমার পানিশমেন্টটা এমন কেন? তুই ও আরুকে ওর বাসায় পাঠিয়ে দিবি পানিশমেন্ট হিসাবে ৷”

আরু তো খুশিতে গদগদ ৷ সানাকে এপ্রিশিয়েট করতে ইচ্ছে করছে ভীষন ৷ আরিশ ধমকের সুরে বলল
” চুপ, একটাও কথা না ৷”
আরু তখন উৎফুল্লতার সাথে বলে উঠলো
” ওটা No more words হবে মিঃঅভদ্র ৷”
আরিশ আরুর দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বলল
” থামবে তোমরা দুজন, কথাটা বললাম কোথায় সিরিয়াসলি নেবে তা না তারা গবেষনা করতে বসেছে পানিশমেন্ট নিয়ে ‌৷ সত্যি বলছি ঢাকা চত্বরে যদি না পেয়েছো তো খবর আছে ৷”

কথাটা বলে আরিশ বেরিয়ে যেতেই দুজনে হাফ ছেড়ে বাঁচলো , আরিশ কফি বানাতে গেছে , আর ও শুধু এক কাপ কফিই বানাবে তা ওরা দুজনেই খুব ভালো করে জানে কারন সানা কালো হয়ে যাওয়ার ভয়ে কফি বা চা কিছুই খায় না আর আরু কফি খাওয়ার পোকা কিন্তু সবে অপারেশন হয়েছে বলে আরিশ ওকে খেতে দেবে না ৷ আরিশ চলে যেতেই সানা গাল ফুলিয়ে বলল
” আমি কিছুতেই এখন বিয়ে করবো না ৷”
আরু সানার মাথায় গাট্টা মেরে বলল
” গাধী, ওসব ছাড় এই দেখ তোর নতুন ভাবী ৷”
সানা অবাক চোখে তাকালো আর বলল

” কে এটা আরু ? আর আমার ভাবী হতে যাবে কোন দুঃখে ? আমার একটাই ভাইয়া আর তার বউ তুই ৷”
আরু বিরক্তি ভরা কন্ঠে বলল
” আরে বললাম না যে মিঃ অভদ্রর আবার বিয়ে দেবো আমি, তাই একটা মেয়ে পেয়েছি ভীষন সুন্দরী আর মেডিক্যাল এর ই স্টুডেন্ট, স্যার সালিমুল্লাহ র ৷ মিঃ অভদ্রর সাথে ভালো মানাবে ৷”
সানা রাগী রাগী চোখ করে তাকিয়ে বলল
” আরু এটা কিন্তু খুব বাড়াবড়ি হয়ে যাচ্ছে ভাইয়া জানলে ভীষন রেগে যাবে ৷”
আরু বিরক্তসূচক ভাবভঙ্গি করে বলল
” আরে ছাড় না তুই মেয়েটা কে দেখ ৷”

সানা আরুকে মেয়েটার ছবি দেখালো, সানা ফোনের দিক থেকে চোখ সরিয়ে রেগে বলল
” ইট ইজ টু মাচ আরু ,এবার সত্যিই একটু বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলছিস তুই , ভাইয়া আসলে কিন্তু এবার আমি বলে দেবো ভাইয়াকে ৷”
আরু খানিকটা ভয় পেয়ে বলল
” এই এখনই বলিস না ,যেদিন পাকা কথা হবে সেদিনই বলিস ৷”
ওদের করার মাঝে কারোর আসার আভাস পেয়ে ওরা চুপ হয়ে গেল, আরু ফোনটা পাশে রেখে দিলো ৷ আরিশ কফি নিয়ে ওদের সামনে বসেছে , সানা আরু দুজনের দিকে তাকাতাকি করলো , সানা ইশারায় বলছে যে সে আরিশকে বলে দেবে কিন্তু আরু ও ইশারায় বলছে না বলতে , আরিশ ওদের এই কাজভাজ দেখে বলল

” কি হচ্ছে টা কি ? মাত্র 2 ঘন্টা পড়াশোনা করে হয়ে গেল ?”
আরু নিরাশ হয়ে বলল
” মাত্র দুই ঘন্টা না, পুরো বিশ বছর মনে হচ্ছে ৷”
আরিশ ও আরুর শরীরের কান্ডিশানের কথা ভেবে বলল
” ওকে ঠিক আছে আমার ও একটু কাজ আছে তাই আবার সন্ধ্যায় বসবো ৷”
আরু আর সানা দুজনেই ভীষনরকম খুশি হলো ৷
সানা বইপত্র নিয়ে বেরিয়ে যেতে নিলেই আরু ও সাথে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালে আরিশ বলল
” তুমি কোথায় যাচ্ছো ? এখানে থাকো কথা আছে ৷”

সানা ও দাঁতবার করে একপ্রকার রাক্ষুসি হাসি আরুর দিকে নিক্ষেপ করে বেরিয়ে গেল, আরু বিড়বিড় করে সানাকে বেশ কথা শোনাতে লাগলো ৷
আরিশ কফিতে এক সিপ দিয়ে বলল
” দরজাটা বন্ধ করে এসো ৷”
আরু ও আর বেশি তর্কাতর্কি করলো না,দরজা বন্ধ করে দিয়ে আরিশের কাছে এসে ভদ্র মেয়ের মতো দাঁড়ালো ৷ আরিশ আরুর দিকে ঘুরে বলল
” ফোনের পাসওয়ার্ড চেন্জ করেছো কেন? বলেছিলাম তো চেন্জ করবে না ৷”
আরু মুখ বাকিয়ে বলল

” বেশ করেছি, আর করবো না ই বা কেন ? আপনি কখনও আপনার ফোনের লক খুলে আমার হাতে দিয়ে বলেছেন যে এই নাও আরুপাখি এটা আমার ফোন তুমি যতখুশি ঘাটাঘাটি করো ৷ বলেছেন কখনও ? বলেননি তো ? তাই আমিও বলবোনা ৷”
আরিশ বুঝতে পারলো আসলে যে আরু এতো সহজে বলবে না , ও আরুর ফোন চাইছে এটা দেখার জন্য যে কোনক্রমেই আরু সে নয় তো যে ডিভোর্স এর জন্য আপিল করেছে ৷ আরিশ তাই একটু থেমে বলল
” কফি খাবে ?”
আরু ভ্রু কুঁচকে বলল
” মজা করছেন?”
” একদম না ৷”
আরু এবার একপ্রকার আরিশের জামা কাপড় ধরে টানাটানি শুরু করে বলল

” আমি কফি খাবো , কফি খাবো আমি ৷”
আরিশ ওর কফির কাপটা আরুর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল
” এই নাও ৷”
আরু কফিটা নিয়ে একসিপ দিয়ে আরিশের কোলের ওপর বসে আরুশের বুকে মাথা রেখে বলল
” আহহ…কি শান্তি ৷”
আরিশ ও আরুকে জড়িয়ে ধরলো ৷ আরু আরিশের বুকে মাথা রেখে কফি খাচ্ছে আর একটা সময় আরুর চোখের কোনা বেয়ে জল গড়িয়ে পড়তেই আরিশের শার্ট ভিজলো , আরিশ বুঝতে পারলো যে আরু কাঁদছে ৷ আরিশ কিছু বলতে যাবে তখনই আরু বেশ অন্যমনস্ক হয়ে বলল

” আপনার জীবনে যদি কখনও অন্য কেউ আমার জায়গাটা নিয়ে নেয় তাহলে আপনি তাকে অনেক ভালোবাসবেন তাইনা ‌ ? আমার থেকেও বেশি ! আমি তো সারাদিন দুষ্টামি করি, আপনার কোন কথায় শুনি না, আপনার বরাবরের মতো একজন অবাধ্য ছাত্রী এবং স্ত্রী আমি , না আপনাকে অন্যদের মতো কাছে টেনে ভালোবাসতে পারি আর না আপনার কোন শখ আহ্লাদ পূরন করতে পারি উল্টে আপনি আমার সব চাওয়া পাওয়া পূর্ণ করছেন ৷ আপনি সত্যিই তাকে অনেক ভালবাসবেন তাইনা?”
কথাগুলো বলতে বলতে আরিশের বুকের শার্ট টা খামচি মেরে ধরলো,,প্রিয় মানুষকে হারাতে ভয় লাগে , নিজের জায়গাটাতে অন্য কাওকে কল্পনা করতেও কষ্ট লাগে ৷

আরিশ কিছু বললো না চুপ করেই রইলো , ও জানে আরু কি ভেবে কথা গুলো বলছে ৷ আরু কফির কাপটা রেখে আরিশের বুকের মাঝে গুটিশুটি মেরে চুপটি করে রইলো ৷আরিশ ওকে আগলে নিচ্ছে না দেখে আরু উঠে চলে যেতে নিলেই আরিশ আরুকে শক্ত করে নিজের মাঝে আবদ্ধ রেখে বলল
” ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি ভাবিনা,তা উপরওয়ালার হাতেই ছেড়ে দিয়েছে, আমরা যা পরিকল্পনা করি তিনি তার থেকে উত্তম আর ভালো কিছু পরিকল্পনা করে রাখেন , কারোর অপূর্ণতার মাঝেই তিনি রেখেছেন হাজারো সুখ তেমনি আমার আরুপাখিটাই আমার কাছে হাজারো সুখের ভান্ডার আর কখনও যদি শুনি কোন রকম কোন ঘাড় ত্যাড়ামো করে কিছু করেছো তো সেদিন আমি ভুলে যাবো তুমা আমার কাছে কি ৷ ”

মানুষের আবেগের ওপর মানুষের কোন নিয়ন্ত্রণ থাকে না , আরুর ও নেই , আরুর চোখ থেকে অনবরত জল গড়াতে লাগলো, ঠোঁট জোড়া কাঁপছে, যতোই বলুক ও আরিশের কাছে থাকতে চাইনা তা ভুল, আরিশকে নিজের থেকেও বেশি ভলোবাসে তাই তো তার ভালো থাকার পথটা আরও সুগম করে দিতে চায় ৷
আরিশ আরুকে দু হাত দিয়ে আগল নিলো ,যদি সময়টা এখানেই থেমে যেতো তাহলেই বোধহয় ভালো হতে কোন রকম কোন শর্ত ছাড়াই তার আরুপাখিকে বুকের মাঝে আগলে রাখতে পারতো ৷

sms,,,,,,
Aru:” আপু তোমার পছন্দ হয়েছে ওনাকে? ”
Papia : হমম পছন্দ হয়েছে কিন্তু তিনি কি আদতেও রাজি হবেন?
Aru : উনি তো রাজি, তোমার ছবি দেখে ওনার অনেক পছন্দ হয়েছে ৷
papia: উনি ঢাকা মেডিক্যালে পড়েন তাই বললে তাইতো?
Aru : হমম হমমম, উনি DMC তে পড়েন ৷
papia : দেখো আরু relationship হলেও একটা কথা ছিলো কিন্তু একেবারে সরাসরি বিয়ে ? ব্যাপারটা কেমন না? যদিও আমার বাসাতেও বিয়ের জন্য ছেলে খুঁজছে কিন্তু ছেলে পাচ্ছেনা ভালো তাই আর কি ৷

কারনে অকারনে ভালোবাসি পর্ব ১৮

Aru : তোমার বাসার লোক কেও পিকটা দেখাও আর ওনার সমন্ধে সব তো বললাম ৷
papia :ওনার সাথে একটু কথা বললে আগে ভালো হতো না?’
Aru : উনি একটু লাজুক স্বভাবের খুব কম কথা বলেন, গলার স্বর এতো মিষ্টি কি বলবো আহা ৷
আরু মনে মনে : সারাদিন আরুপাখি ? আরুপাখি? বলে আমার মাথাটা খেয়ে ফেলে ৷
papia : তাহলে এখন কি করবো?
Aru : তুমি তোমার বাসার লোক কে কালকে নিয়ে এসে পাকা কথা বলে যাও উনি কালকে বাসায় থাকবেন ৷
papia : আচ্ছা ৷ কিন্তু উনি তোমার কি হয় সেটা তো বললে না ৷
Aru : আমরা কাজিন? ৷
আরুর Sms টা seen করতেই পাপিয়ে বলে উঠলো
” আমি তোমার সাথে একটু পরে কথা বলছি , আম্মু ডাকছে ৷”
Aru : আচ্ছা যাও ৷

আরু ফোনটা রেখে,হাত ছড়িয়ে বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে পড়লো ৷ চোখ বন্ধ করলো,সকালে আরিশ ওকে কতো সুন্দর কথে জড়িয়ে ধরে রেখেছিলো তা চোখে ভাসছে আর কিছুদিন পর আরিশের বাহুডোরে থাকবে অন্য কেউ ৷
কথাটা মনে পড়তেই ফোন নিয়ে চটপট কল করলো ও

” আঙ্কেল ডিভোর্স পেপার রেডি ?”
” হমম কালকে পৌছে যাবে ৷”
কথাটা শুনে আরু ফোনটা কেটে দিলো ৷
কালকে পাপিয়া আসবে আর আরু ডিভোর্স পেপারে আরিশকে দিয়ে সই করাবে ৷

কারনে অকারনে ভালোবাসি পর্ব ২০