কারনে অকারনে ভালোবাসি পর্ব ২১

কারনে অকারনে ভালোবাসি পর্ব ২১
Suraiya Aayat

ঘর থেকে ভাঙচুরের আওয়াজ আসতেই অরু দৌড়ে রুমের দিকে ছুটলো কোনরকমে, অনিকা খান ও কিছু বুঝতে পারলেন না যে কি হয়েছে তবে আরিশের রাগের সমন্ধে ওনার ধারনা আছে তাই আরিশ যদি আরুর ওপর কোনরকমে রেগে যায় তার ফলাফল হবে ভয়াবহ কথাটা ভেবে উনি নাস্তার প্লেটটা টেবিলে রেখে ছুটলেন ৷

আরু ধড়ফড়িয়ে রুমের সামনে যেতেই দেখলো আরিশ বেডে বসে আছে আর মেঝেতে আরিশের সবচেয়ে প্রিয় ফ্লাওয়ার ভাসটা ভেঙে পড়ে আছে, আরিশ সেটা শান্তিনিকেতন থেকে এনেছিলো, সেটা আরিশের ভীষনরকম প্রিয় ছিলো আরুকে কখনো টাচ অবধি করতে দেয়নি কারন জানে যে আরু ধরলেই ঠিক কোন না কোন ভাবে সেটা ভাঙবে তাই ৷ ফ্লাওয়ার ভাসটা গুড়োগুড়ো হয়ে না গেলেও 5 পিস টুকরো হয়ে ভেঙে গেছে ৷

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আরু শুকনো ঢোক গিললো, বুকের ভিতর ধুকধুক করছে , আরিশকে এখন কি বলে সামলাবে ও !আরু ভয়ে ভয়ে এক পা ঘরে রাখলো , আরিশ মাথা নীচু করে বসে আছে, রাগে যে ফুসছে তা বলতে আর বাকি রইলো না ৷আরিশকে দেখে আরুর ভয়টা বেড়ে গেল ৷ আরিশ বুঝতে পারছে যে আরু আসছে আর এই মুহূর্তে রাগটা কন্ট্রোল করে না পারলে বড়ো সড়ো কিছু হবে ৷ আরু এক পা দিতেই রুমের ভিতর অনিকা খান দ্রুত পায়ে হেটে আসতেই আরুর বুকের ভিতর ধক করে উঠলো ৷আরু পিছন ঘুরে তাকিয়ে দেখেন অনিকা খান ওনার মুখে আতঙ্কের ছাপ ৷ অনিকা খান শঙ্কিত কন্ঠে প্রশ্ন করে উঠলেন

” আরিশ অনেক রেগে আছে মা , ওর কাছে এখন যাস না ৷ আমি ওকে শান্ত করার চেষ্টা করছি তুই যা ৷”
আরুর চোখ দুটো ছলছল করছে, লাল হয়ে গেছে চোখ,,চোখের নীচের অংশ ও ভিজে ৷ আরু জিভ দিয়ে শুকনো ফোঁটটাকে খানিকটা ভিজিয়ে অনিকা খানের কাঁধে হাত রেখে বলল
” তুমি যাও ফুপি আমি আসছি ৷”
অনিকা খান নিম্নস্বরে হালকা ধমকে বললেন
” তুই নীচে যা আমি আসছি ৷”

তাদের দুজনের কথোপকথন আরিশের কানে খুব একটা পৌচ্ছাছে না তবে তাদের উপস্থিতি বুঝতে পারছে ৷ আরু কথাটা বলে একটু দ্রুত পায়ে আরিশের পায়ের কাছে বসে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল
” আআআমার আপনার সাথে একটু কথা আছে ৷”
কথাটা শোনা মাত্রই আরিশের কপালের শিরা গুলো দৃশ্যমান হয়ে গেল ‌৷আরু আবারো বলল
” আমার কথাটা একটু শুনুন তাহলে বুঝবেন ৷”
কথাটা শোনামাত্রই আরিশ বলে উঠলো
” আম্মু ওকে এখান আমার সামনে থেকে যেতে বলো ৷”

আরুর সমগ্র শরীর শিউরে উঠলো ৷ অনিকা খান রুমে প্রবেশ করে আরুকে ফ্লোর থেকে তোলার চেষ্টা করে বললেন
” আরু মা তুই এখন চল পরে আসবি , আরিশ এখন ঠিক নেই , পরে আয় মা ৷”
আরু মৃদু কন্ঠে জবাব দিলো
” ফুপি আমি যাবো না ওনার সাথে আমার কথা আছে তুমি যাও আমি আসছি ৷”
আরিশ আবার বললো
” গেট লস্ট ফ্রম হেয়ার ৷”
অনিকা খান আরুকে ওঠানোর চেষ্টা করে বললেন
” আরু মা জেদ করিসনা চল আমার সাথে ৷”
আরু এবার বেশ চেঁচিয়ে বলল

” বললাম তো ফুপি আমি ওনার সাথে কথা না বলে কোথাও যাবো না তুমি শুনছো না কেন ! ”
অনিকা খান থ হয়ে গেলেন, আরুর হাতটা ছেড়ে দিলেন, দুকদম পিছিয়ে যেতেই উনি কেঁদে ফেললেন ,নিশব্দে উনি ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন ৷ আরু এখনো আরিশের পায়ের কাছে বসে আছে ৷ উনি চলে যেতেই আরু উঠে গিয়ে দরজা দিয়ে এলো ৷ আরিশের পাশে বসে আরিশের হাতটা ধরে বলল
” আমার কথাটা আপনি একবার শুনুন ৷”
আরু হাত ধরা মাত্রই আরিশ আরুর দিকে তাকাতেই আরু ভয়ে হাতটা সরিয়ে নিলো ৷ আরিশের চোখ দেখেই ভয় পেয়ে গেছে ও ৷ আরু আবার সাহস নিয়ে বলল

” আই এম সরি , বিশ্বাস করুন আমি যা করেছিলাম আপনার ভবিষ্যৎ আর আপনার ভালোর কথা ভেবেই ৷”
আরিশ এবার বলে উঠলো
” আমার কোন ভালো আপনি করতে চেয়েছিলেন বিনতে আরুশি রহমান ?”
আরু ছলছল চোখে তাকিয়ে বলল
” আমি আরুশি রহমান না , আমি মিসেস আবরার আরিশ খান ৷ আর আমি আপনার ভবিষ্যতের কথা ভেবেই পাপিয়া আপুর সাথে যোগাযোগ করেছিলাম বিশ্বাস করুন, আর আপনার বিয়ে হলে আমার সাথে ডিভোর্স….”

আর কিছু বলতে পারলো না আরু , আরিশ সপাটে গায়ের সর্বশক্তি দিয়ে আরুকে একটা থাপ্পড় দিলো ৷ আরু বিছানা থেকে পড়ে গেলো, গালের বা দিকটার মাংস যেন উঠে চলে এসেছে এমন ব্যাথা অনুভুতি হচ্ছে ৷ আরু গালে হাতটা সরিয়ে মাটির দিকে নীচু করে তাকালো,,আরিশ টেনে হিছড়ে আরুকে মাটি থেকে তুলে বলল
” আমার ভালো ? আমার ভালো হমম ? কোন ভালোটা করেছো তুমি আমার যেখানে তুমিই নিজেই জানোনা আমার ভালোটা কিসে , আমার হ্যাপিনেসটা কিসে ৷ আর ভালোবাসার ! তুমি তো কখনো আমাকে ভালোই বাসোনি শুধু আমিই তোমার কথা ভেবে গেছি ৷ তোমার মানসিক চিন্তা ভাবনা খুবই নীচু ,তুমি ভীষন ছোট মনের একটা মানুষ ৷ ভালো বাসতেই জানো না তুমি কারন যে ভালোবাসতে জানে সে কখনো ভালোবাসার অপমান করেনা আর আজ তুমি আমার ভালোবাসার অপমান করলে ৷ ”

আরুর চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ছে, আরু তবুও কাঁপা কাঁপা স্বরে বলল
” আমি হয়তো ভালোবাসতে পারিনা আর জানি ও না যে কিভাবে ভালোবাসতে হয় তাই দূরে এরে যেতে চেয়েছিলাম, চেয়েছিলাম যে আপনার ভবিষ্যৎ টা যেন আমার মতো অন্ধকারে না ঢুবে যায় , আমি চেয়েছিলাম আপনি যেন বাবা হতে পারেন , আপনার যেন ভালো একটা বউ হয় যে আপনাকে ভালো রাখবে ৷”

আরিশের হাত কাঁপছে ,চোখে জল চলে এসেছে, বুকের ভিতরটাতে অসম্ভব ব্যাথা অনুভব করছে ৷ আরিশ আবার বললো
” সংসার আর বিবাহিত জীবন মানে শুধু ইন্টিমেট হওয়া না বা ফাচ্চ জন্ম দেওয়া না , তার মাঝেও সুখ শান্তি নামক জিনিস থাকে যার ধারনা তোমার নেই ৷ আর তোমার কি মনে হয় আমি তোমার শরীরটাকে পাওয়ার জন্য কাছে টেনে নিয়েছি ? তোমাকে বিয়ে করেছি ? আমার ভালোবাসার বর্ননা আমি তোমার কাছে কখনো করবো না কারন তুমি তা শোনার ই যোগ্য না , কোন রকম কারন ছাড়াই নিস্বার্থ ভাবে ভালোবাসি তোমাকে , #কারনে_অকারনে_ভালোবাসি ৷ তোমাকেই তো আমি আমার ছোট বেবি বলে মনে করি , আমি কি তোমাকে বলেছিলাম যে করেই হোক আমার বাচ্চা লাগবে? আমার মাঝে যদি কোন সমস্যা থাকতো তাহলে তুমি কি আমাকে ছেড়ে চলে যেতে ? যদি তুমি জানতে যে আমার কারনে তোমার বেবি হবে না তাহলে তুমি নিশ্চয়ই আমাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা দুবার ও ভবতে না, কি তাই না ?”

আরু আরিশকে জড়িয়ে ধরলো, আরিশের বুকে মাথা রেখে কেঁদেই চলেছে , আরিশ আরুকে আগলে নিলো না, রুক্ষ কন্ঠে বলল
“ডোন্ট টাচ মি ৷ আমার কাছে সুখ পাচ্ছো না তুমি চলে যেতে পারো,গেট লস্ট ফ্রম মাই লাইফ , ইউ ডোন্ট ডিজার্ভ লাভ , স্বার্থপর তুমি বড্ড স্বার্থপর , আমার ভালো তোমাকে ভাবতে হবে না ৷”
কথাটা বলে আরুকে ছাড়িয়ে চলে গেল আরিশ ৷
আরু একটা গলা ছেড়ে কাঁদতে শুরু করে দিলো ৷ আরিশ চোখটা মুছে বেরিয়ে গেলো ৷ সিঁড়ি বেয়ে নীচে নামতেই দেখলো ওর আম্মু প্রানহীন এর মতো করে বসে আছে , আরিশকে যেতে দেখে উনি বলে উঠলেন
” আরু কই ?”

কারনে অকারনে ভালোবাসি পর্ব ২০

আরিশ কথাটার কোন জবাব না দিয়েই বেরিয়ে গেল ৷ আরিশ চলে যেতেই উনি রুমে গিয়ে দেখলেন আরু ফ্লোরে বসে কাঁদছে , গোলুগোলু গাল দুটো লাল টকটকে বর্ন ধারন করেছে,চোখ দুটোর অবস্থা শোচনীয়, অনবরত দুই চোখ দিয়ে জল গড়াচ্ছে ৷ উনি ছুটে গিয়ে আরুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলেন

” তোকে বললাম না আমার সাথে চলে আয় , জানিস তো আরিশ রেগে গেলে ওর মাথার ঠিক থাকে না ৷”
আরু ওনাকে জড়িয়ে হাওমাও করে কেঁদে দিলো, আরু কিছু বলছে যা উনি বুঝতে পারছেন না কারন আরুর কথা গুলো জড়িয়ে জড়িয়ে যাচ্ছে ৷ উনি আরুর গালে হাত রেখে বললেন
” আরু মা আরিশ কি তোকে মেরেছে ?”
আরু কিছু বললো না কাঁদতে কাঁদতে ওনার কোলে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে কাঁদতে লাগলো আর একটা সময়ে অঞ্জান হয়ে গেল ৷

কারনে অকারনে ভালোবাসি পর্ব ২২