কারনে অকারনে ভালোবাসি পর্ব ২২

কারনে অকারনে ভালোবাসি পর্ব ২২
Suraiya Aayat

পিটপিট করে চোখ খুলে তাকালো আরু,জ্বরের ঘোরে শরীরটা ব্যাথায় টনটন করছে তার ওপর মাথা ব্যথা,চোখ দুটোও ব্যাথা করছে ভীষনরকম,কোনরকমে চোখটা খুলতেই হাতে হালকা টান পেতেই তাকিয়ে দেখলো আরিশ ফ্লোরে বসে আছে আর ওর হাতে হাত রেখে ড্যাব ড্যাব করে চেয়ে আছে আরুর দিকে,আরু একটু ঘাবড়ে গেল,আরিশ তাকিয়ে না থাকলে বোধহয় এতো ইতস্তত অনুভব করতো না,লজ্জা,অনুশোচনা,ভয় সবকিছু একসাথে কাজ করছে,ভয়ে চোখটা বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করলে আরিশ মৃদু কন্ঠে বলে উঠলো

“তোমার জন্য আমি এতোগুলো ঝাড়ি খেলাম তার হিসাব নিকেশ না নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ছো যে!ওপেন ইউর আইজ আরুপাখি৷”
আরু ভয়ে ভয়ে চোখ খুলে ফেললো আর বেশ আমতা আমতা সুরে বলল
“আই এম সরি প্লিজ মাফ করে দিন৷”
কথা বলার সময় আরুর কথা গুলো জড়িয়ে আসছিলো,গলা শুকিয়ে গেছে তার ওপর জ্বরে শরীরে আর শক্তি পাচ্ছেনা৷
কথাটা শোনামাত্রই আরিশ আরুর দিকে কিছুটা এগিয়ে যেতেই আরু গায়ের চাদরটা শক্ত করে খামচে ধরলো ও ভাবলো আরিশ হয়তো রেগে পুনরায় ওকে থাপ্পড় মারার জন্য এগোচ্ছে৷ আরিশকে এগোতে দেখে আরু ফুঁপিয়ে ঊঠে বলল

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” আই এম সরি,প্লিজ তাও আমাকে মারবেন না অনেক ব্যাথা পেয়েছি,আমার শরীরেও অনেক ব্যাথা৷”
কথাটা শুনে অরিশের বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠলো তখন রাগের বশে আরুকে যা নয় তাই বলেছে তারওপর আরুকে চড় ও মেরেছে আর তার ফলাফলে মেয়েটার জ্বর৷ আরিশ ওর মুখে কষ্টের কোন ছাপ প্রকাশ করলো না, নিজেকে শক্ত রেখে আরুর দিকে এগিয়ে গেলো,আরু ভয়ে কাঁদছে৷

আরিশ আরুর কাছে এগিয়ে গিয়ে আরুর গালটা সরিয়ে বামদিকের গালে একটা চুমু দিতেই আরু কেঁপে উঠলো৷ আরুর শরীরে যেন কিছুখনের জন্য শিহরন বয়ে গেল৷আরু কিছু বলছে না আর কিছু বলতেও চায় না কারন যা হচ্ছে ভালোই হচ্ছে আর দোষটা ওর ই ছিলো৷আরিশ আরুর গালে চুমু দিয়ে আরুর বুকে মাথা রাখলো,দুই হাত দিয়ে আরুকে জড়িয়ে রেখেছে আর আরুর ওপর মাথা দিয়ে রেখেছে৷ আরু আরিশের দিকে তাকালো,চোখটা মুছে ঠোঁটে একটু হাসি ফোটালো৷ দুজনের মাঝেই নিরবতা,কারোর মুখ থেকে কোন আওয়াজ বার হচ্ছে না যেন কি বলবে তা বুঝেই উঠতে পারছে না৷কিছুখন পর আরিশ বলে উঠলো

” আরুপাখি!”
আরু চমকে গেল বেশ আমতা আমতা করে বলল
” আপনি আমাকে ডাকছেন?”
আরিশ আগের মতোই গম্ভীর তবে গম্ভীরতার মাজেও একপ্রকার মিষ্টতার সুরে বলল
” এই রুমে আর কোন আরুপাখি আছে? থাকলেও আমিতো দেখতে পাচ্ছি না”
আরু চুপ হয়ে যেতেই আরিশ বলল
” চুপ করে আছো কেন?কথা বলো!”
আরু অবাক হয়ে বলল
” কি বলবো?”
“যেটা তোমার মন চায়৷”
আরু বলে উঠলো

“আমি আজকে যা করেছি আমি আর কখনো এই কাজ করবো না বিশ্বাস করুন,আমি বেবির কথাও কখনো বলবো না,কখনো আপনাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা ভাববো না,কখনো আপনাকে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবো না, সিরিয়াস কাজে কখনো আপনার অবাধ্য হবো না কিন্তু ফাজলামি আগের মতোই থাকবে,মন দিয়ে পড়াশোনা করবো, আপনার টুইটুই বউ হয়ে থাকবো,আর কখনো বেবি বেবি করে আপনার মাথা খারাপ করবো না কারন আমি ভালো হয়ে গেছি পুরো উইইইমা টুইটুই৷”
এতো সিরিয়াস মোমেন্টেও আরুর এমন কথা শুনে আরিশ না হেসে পারলো না,আরুর অজান্তেই মুচকি হাসলো তবে বেশ সিরিয়াসনেস নিয়েই বলে উঠলো

“আমি কি এসব শুনতে চেয়েছি?”
আরু হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে বলল
” সরি সরি,আপনিই যা খুশি বলতে বললেন তাই বললাম৷”
আরিশ কথা ঘুরিয়ে বলল
“আসল কথায় আসি,তোমার জন্য আম্মু আর বাবা আমাকে অনেক ঝাড়ি দিয়েছে তার পানিশমেন্ট হিসাবে তোমার কি প্রাপ্য সেটা ডিসকাস করা যাক৷”
আরু ভ্রু কুঁচকে বলল

” শ্বশুর বাবা আপনাকে বকা দিয়েছে কেন ?”
আরিশ এবার আরুর থেকে সরে এসে বলল
“তোমাকে চড় মেরে জ্বর আনার কারনে৷”
আরু উঠে বসার চেষ্টা করে সফল হলো,উঠে বসে বললো
“আপনাকে শ্বশুরবাবা ঝাঁড়ি মেরেছে?”
আরিশ একটু সরু চোখে তাকিয়ে বলল

” হমম,আর বলেছে নেক্সট টাইম এমন কাজ করলে আমাকে বাসা থেকে বার করে দেবে ,এবার তুমিই বলো তোমার পানিশমেন্ট কি পাওয়া উচিত,বলো বলো৷”
আরু ভয়ে ভয়ে তাকিয়ে বলল
” সরি সরি সরি”
“তোমাকে আমি এভাবে চড় মেরেছিলাম৷”
কথাটা বলে হাত ওঠিতে চড় মারার ভঙ্গি দেখাতে গেলে আরু ভাবলো আরিশ বোধহয় ওকে আবার মারবে তাই ভয়ে আরিশকে শক্ত করে জাপটে ধরে বলল
” মারবেন না প্লিজ,এবার চড় খেয়ে আমি হয়তো কোমায় চলে যাবো৷”
আরিশ আরুকে জড়িয়ে ধরলো৷

“এতকিছু করেও আমাকে ভোলাতে পারবেনা তুমি,পানিশমেন্ট আমি দেবোই৷ বলো কি পানিশমেন্ট নেবে তুমি?”
আরু আরিশকে জড়িয়ে ধরেই আরিশের মুখের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট ফুলিয়ে বলল
“পরে পানিশমেন্ট দিলে হয় না! আমি অসুস্থ তো,জ্বর এসেছে আপনি তো জানেন৷”
আরিশ লক্ষ করলো আরুর চোখের কোনে জল জমে এসেছে তাই আর বেশি কথা না পেঁচিয়ে আরুর অপালে হাত রেখে বলল
” কই তোমার তো আর জ্বর নেই৷”
আরু নিজের কপালে হাত রেখে বলল
” তাই তো৷”

পানিশমেন্টের ভয়ে আরু আরিশকে পুনরায় জড়িয়ে ধরে বলল
” প্লিজ৷”
আরিশ আরুকে বিছানায় ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতেই আরু ধপ করে পড়ে গেল,নিমেষেই যেন শরীরের ব্যাথাগুলো উধাও৷ আরিশ আরুর ঠোঁটের কাছে মুখ রেখে বলল
“সব পানিশমেন্ট টাফ হয় না,মাঝেমাঝে কিছু কিছু পানিশমেন্ট শরীরের জন্যও ভালো৷”
কথাটা বলে আরুর ঠোঁটে স্লাইড করতে লাগলো,আরুর শরীরের কম্পন বাড়ছে,সমগ্র শরীর জুড়ে শীতলতা ছড়াচ্ছে আর অন্য রকম অনুভূতি কাজ করছেন

আরিশ আরুর গা থেকে ব্ল্যাঙ্কেটটা ফেলে দিয়ে আরুর হাত দুটো বেডের সাথে চেপে ধরলো,আরুর আঙুলগুলো নিজের আঙুলের ভাজে চেপে ধরতেই আরু লজ্জায় মুখ ঘুরিয়ে নিলো৷ আরিশ গলার কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে বেশ কিছুখন আরুর গলায় গরম নিশ্বাস ফেলতেই আরু বেশ কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠলো
” আমার হাতে লাগছে৷”
আরুর কথা শুনেও আরিশ হাত ছাড়লো না,আরুর হাতটা মুঠিবদ্ধ করেই রাখলো আগের মতো৷ অবশেষে গলায় ঠোঁট ছোঁয়াতেই আরু কেঁপে কেঁপে উঠলো৷ আরিশ হাতটা ছেড়ে ঠোঁটে ঠোঁট রাখতেই আরু আরিশের শার্টটা খামচি মেরে ধরতেই আরিশের মাঝে অনুভূতিটা দৃঢ় হলো৷শার্টের বেশ কয়েকটা বোতাম খুলে আরুর ভয়ে কাচুমাচু করা মুখের দিকে তাকিয়ে বলল
” আরুপাখি নাও ইউ অর গন৷”

আরু চোখ বন্ধ করে নিলো,রাতের গভীরতা বাড়ছে আর তার সাথে বাড়ছে আরিশের ভালোবাসার গভীরতা যার কোন শেষ নেই৷
রাত3.45,,,,,
আরু কম্বলের ভিতরে পা টা ঢুকিয়ে নিয়ে মুখটাও কম্বলের ভিতর লুকালো,পাশে আরিশ ওর দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে,আরু আরিশের দিকে উঁকি মেরে তাকিয়ে দেখলো তারপর লজ্জা পেয়ে আবার মুখ লুকালো৷ আরিশ আরুকে আরও খানিকটা লজ্জা দেওয়ার জন্য বলল
“এতো ঢাকাঢাকির কি আছে? আমি কি কিছুই দেখিনা নাকি টাচ করিনা কোনটা?”
আরিশের বলা কথাটা আরুকে ঘায়েল করার জন্য যথেষ্ট৷ আরু এবার কম্বল মুড়ি দিয়ে গুটিশুটি মেরে চুপ করে বলল
“মি অভদ্র স্টপ৷”

কারনে অকারনে ভালোবাসি পর্ব ২১

আরিশ হো হো করে হেসে আরুকে ব্ল্যাঙ্কেটের ওপর থেকে জড়িয়ে ধরে বলল
” দেখো পরে আবার এটা নিয়ে তোমার শ্বশুরবাবার কাছে নালিশ দিও না তাহলে তোমার ই মান সম্মান যাবে আমার না ৷”
আরু ঘ্যান ঘ্যান করে বলল
” উফফফ থামবেন আপনি?”
“থামতে পারছিনা,পারলে থামাও৷”
আরু মুখ বার করে বলল
” নেভার এভার,এতো শখ নেই৷”
আরিশ আর কোন কথা না বাড়িয়ে হুঠ করে গম্ভীর মুড নিয়ে বলল
” আরু পাখি তুমি দিনদিন বড্ড ফাজলামি করছো,রাত হলে আমাকে ঘুমাতেই দাওনা ,সবসময় খালি,,,,”
আরু মুখ চেপে ধরে বলল
” চুপ ভি হো যাও মেরি ভাই৷”
আরিশ ভ্রু কুঁচকে বলল

” ভাই?”
আরু দাঁত বার করে হেসে বলল
“সরি,মি অভদ্র জামাই৷”
আরিশ ও আরুর সাথে হেসে ফেলল৷

কারনে অকারনে ভালোবাসি পর্ব ২৩