কারনে অকারনে ভালোবাসি পর্ব ২৩

কারনে অকারনে ভালোবাসি পর্ব ২৩
Suraiya Aayat

কম্বল মুড়ি দিয়ে আছে আরু,সকাল হয়েছে তা বুঝতে পেরেছে অনেক আগেই,সকালের ঠান্ডা বাতাসে জানালার কাছের পর্দাটা সরে সরে যাচ্ছে তাই তার ফাঁক দিয়ে আলোর ছটা এসে মুখে পড়ছে৷ আরিশ ব্ল্যঙ্কেটের ভিতর ঘুমিয়ে আছে আর আরু মুখ বার করে রেখেছে শরীরের থেকেও মনের ভিতর অসস্তি কাজ করছে ভীষন কারন আরিশ ওর উন্মুক্ত কোমর জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে,বিছানা থেকে নামবে কিন্তু লজ্জায় নামতেও পারছে না৷ এভাবেই থাকতে থাকতে বেশ 20 মিনিট আকাশ পাতাল ভাবতে ভাবতেই কাটিয়ে দিলো আরু৷

“নাহ এভাবে থাকলে হবে না অলরেডি 8.30টা বাজে,বাসার লোক কি ভাববে?”
আরুর আধোস্বরে বলা কথা গুলো শুনে আরিশ আরুর কোমরে আলতো করে স্লাইড করতে করতে বলল
” কিছু ভাববে না আরুপাখি,আর ভাবলে ভাবতে দাও কারন মানুষের ভাবনার ওপর আমাদের কোন কন্ট্রোল থাকে না৷”
হঠাৎ করে আরিশের কন্ঠস্বর শুনে আরু চমকে গেল আর চোখ মুখ কুঁচকে বলল
” আপনি জেগে আছেন?আমি ভাবলাম যে!”
আরিশ মুখ বার করে বলল
” কি ভাবলে তুমি?”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

কথাটা বলে হো হো করে হেসে উঠলো আরিশ
“দেখেছো তো প্রমান হয়ে গেল যে মানুষের ভাবনার ওপর আমাদের কন্ট্রোল থাকে না তাই যে যা ভাববে তাকে ভাবতে দাও৷”
আরু ঠোঁট ফুলিয়ে বলল
“তবুও!”
“কালকে কি হয়েছিলো তোমার মনে আছে?”
আরু কালকে রাতের কথা ভেবেই লজ্জায় কুঁকড়ে গেল,ঠোঁট চেপে লজ্জা মিশ্রিত হাসিটাকে সংযত করার চেষ্টা করতেই আরিশ আরুর মুখের হাবভাব দেখে বলল
“এই মেয়ে আমি ভাবতে বললাম কি আর ভাবছো কি? বেশি পেকে গেছো তুমি৷”
মুহূর্তেই আরুর মুখের হাসি উড়ে গেল,অবাক হয়ে বলল

“মানে?”
আরিশ আরুকে কাছে টেনে এনে আরুর গলায় মুখ ডুবিয়ে বলল
“মানে তুমি যা ভেবেছো তাই!”
আরু তো আহাম্মক বনে গেল,আরিশ ওর শরীরের সথে লেপ্টে আছে,শরীরে হরমোনের ক্রীয়া পতিক্রিয়া খুবই প্রখর৷ আরু বেশ কাঁপা কাঁপা হাতে আরিশের উন্মুক্ত পিঠটা জড়িয়ে ধরলো৷

আরিশ ঠোঁটের স্পর্শ দিচ্ছে আর ততই আরুর হাতের স্পর্শ আরিশের পুরো পিঠ জুড়ে ছড়িয়ে যাচ্ছে৷ আরিশ বলল
“তোমার আর আমার মাঝে কি হয়েছে সেটা তো আর লোকে জানবে না, তারা যতটুকু জানে ততটুকু নিয়েই ভাববে আর তারা জানে তুমি অসুস্থ, কালকে রাতে তোমার জ্বর ছিলো কিন্তু হুঠ করে নিমেষেই জ্বর কমে যাওয়ার সায়েন্স টা বুঝলাম না আরুপাখি৷”
আরু চোখ বন্ধ করে মুচকি হাসছে, আরিশের স্পর্শ গুলো পাগল করার জন্য যথেষ্ট৷ আরিশ সরে যেতে নিলেই আরু আরও শক্ত করে আরিশকে জড়িয়ে ধরলো, আরিশ আরুর সম্মতি পেয়ে আর সরে এলো না আরুতেই হারিয়ে গেল৷

আরুকে সাইড থেকে জড়িয়ে ধরে বেশ বড়ো বড়ো নিশ্বাস ফেলছে আরিশ, আরু রিতীমতো ঘামছে, ঘরে এসি চলা সত্বেও, ঘড়ির দিকে আর তাকাতে ইচ্ছা করছে না আপাতত৷ কতো যে সময় পেরিয়ে গেছে হিসাব নেই৷ আরুর ভাবনা ভেঙে আরিশ আরুর কাধে একটা চুমু দিয়ে সরে যেতে গেলেই আরু বেশ কম্পিত স্বরে ডেকে উঠলো
” শুনুন?”
আরিশ বরাবরের মতোই ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে বলল
” হমম বলো৷”
আরু বেশ মিনতির সুরে বলল
“আমার একটা রিকোয়েস্ট রাখবেন?”

আরিশের কপালে সূক্ষ ভাঁজ, ও আশঙ্কা করছে যে আরু বোধহয় আবার বেবির কথা বলবে তাই বেশ কড়া কন্ঠে বলল
” আগে শুনে নিই কি বলবে৷”
আরু ফিচেল হেসে বলল
” আম্মু ফোন করেছিলো, বলল যে আমি যখন হসপিটালে ছিলাম তখন নানাভাই বাসায় চলে গিয়েছিলো অভিমান করে, বাবার সাথে নাকি কথা কাটাকাটি হয়েছিলো আর আপনাকেও নাকি অনেক কিছু বলেছিলো!”
আরিশের কপালের ভাজ গুলো সরে গেল৷ স্বাভাবিক ভাবে বলল
“হমম তারপর?”

আরু এবার ওঠে বসে ব্ল্যাঙ্কেটটা শরীরের সাথে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নিজেকে যথেষ্ট সম্ভব ঢেকে নিয়ে বলল
” তারপর নানাভাই মধুকে নিয়ে বাসায় চলে গেছে, ওনার রাগ এতো সহজে কমবার নয়, নাকি আম্মুর কল ও তুলছে না তাই আম্মু বলল যে আপনাকে আর আমাকে ওনার সাথে গিয়ে দেখা করতে আর এইসব মান অভিমানের পর্ব শেষ করতে যদিও আমি জানি যে সামনে আপনার এক্সাম৷”
আরাশ গম্ভীর কন্ঠে বলল
” আর তোমার ও৷”
কথাটা শুনে আরু মাথা নীচু করে নিলো৷ নির্লিপ্ত কন্ঠে বলল
“আমি আপনাকে জোর করবো না কারন আপনার ও সুবিধা অসুবিধা আছে৷ আমি আম্মুকে বারন করে দেবো, এক্সাম শেষ হলে না হয়!”

আরিশ বিছানা থেকে নেমে টাওয়ালটা কাধে রেখে বলল
“লাগেজ রেডি করে রেখো কালকে সকালে রওনা দেবো৷”
কথাটা বলে বেরিয়ে গেলো৷ আরু খুশিতে লাফিয়ে উঠতেই পেটের সেলাই করা জায়গায় হালকা টান ধরতেই দমে গেল,ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ব্যাথা সহ্য করে নিলো‌৷
তবুও আনন্দ হচ্ছে ভীষন এটা ভেবে যে আরিশ ওর প্রত্যেকটা কথার গুরুত্ব দেয় ভীষন, সব ইচ্ছা পূরন করার চেষ্টা করেন ভাবনা গুলো ভবলেই আরুর ঠোঁটের কোনে আপনা আপনিই হাসি ফুঁটে ওঠে৷

আরু আর আরিশ দুজনেই শাওয়ার নিয়ে রেডি হয়ে নীচে নামলো,আরিশ 5 মিনিট আগেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেছে আর আরু ওড়নাটা গায়ে জড়িয়ে থ হয়েই দাঁড়িয়ে আছে আর বারবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে,11.25 বাজে৷ এতো দেরি করে দুজনেই নামছে৷ তবে আর বেশিখন কিছু ভাবতে পারলো না তার আগেই নীচে থেকে ডাক এলো
” আরুপাখি নীচে নামো, ফাস্ট৷”

কথাটা শুনে আরু দৌড়ালো আর নীচে নামলো নীচে গিয়ে দেখলো সানা সোফায় বসে কেমিস্ট্রি বই নিয়ে বসে আছে আর অনিকা খান কিচেনে রয়েছেন তবে আরিশের সামনে খাবারের প্লেট দেখে বুঝতে অসুবিধা রইলো না যে উনি এখন খাবার গুলো গরম করলেন৷ আরু এবার ধীরে ধীরে হেটে এসে আরিশের পাশের চেয়ারে বসতেই অনিকা খান অনেকটা ছুটে এলেন আরুর কাছে,আরুর কপালে হাত রেখে বললেন
“কই দেখি আরু মা তোর আর জ্বর নেই তো?”
আরু হেসে বলল
“নাহ ফুপি নেই‌৷”
উনি আরুর কপালে চুমু দিয়ে বললেন

“কালকে যা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম৷ সব আরিশের জন্য ৷ শুধু মেয়েটার ওপর জুলুম করে৷”
আরিশ রাগী স্বরে বলল
“আম্মু আমাকে ব্লেম করা বন্ধ করো৷”
উনি চোখ গরম করে বললেন
“একদম চুপ, তোর কোন কথা আমি আর শুনতে চাই না৷তোর আব্বু তো বলেই দিয়েছে যে এবার যদি আর কখনও আরুর গায়ে হাত তুলিস তুই তাহলে তোকে এই বাড়িতে আর থাকতেই দেবে না৷”
ওদের দুজনের এমন মিষ্টি ঝগড়া শুনে আরু মুচকি মুচকি হঅসছে৷ আরিশ ব্রেডে বাটার লাগাতে লাগাতে বলল
“আরুপাখি স্টপ লাফিং৷”
অনিকা খান ধমকে বললেন

” তুই চুপ কর,তোর সাহস তো কম না ,আমার সমনে আমার মেয়েকেই বকছিস৷”
আরিশ চুপ হয়ে গেল৷ আরু নিজে খেতে গেলেই উনি বললেন
“থাক তোকে আর কষ্ট করতে হবে না আমি তোকে খাইয়ে দিচ্ছি৷”
কথাটা বলে আরুকে খাইয়ে দিলো,আরিশ একটা প্রশান্তির হাসি হাসলো ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে ৷ হঠাৎ সানা পাশ থেকে বলে উঠলো

কারনে অকারনে ভালোবাসি পর্ব ২২

” ভাইয়া আরু না হয় অসুস্থ ছিলো তা তুই তো সুস্থ তুই এতখন কি করছিলি রুমে?”
আরিশ সানার দিকে ফিরে চোখ গরম করে বলল
“বউয়ের সেবা করছিলাম আর কিছু?”
কথাটা শুনতেই অরু বিষম খেলো,অনিকা খান তাড়াতাড়ি করে জুসটা আরুর দিকে এগিয়ে দিলো৷ উনি সানাকে ধমকে বললেন
” সানা চুপ কর তুই,ওরা খাচ্ছে কথা বলিস না৷”
সানা ফাজলামি করে বলল

“আম্মু তোমার ছেলে ভালোই ডিউটি করছেন , চালিয়ে যাও চালিয়ে যাও৷”
সানাকে থামানোর জন্য আরু বলে উঠলো
“ফুপি আমরা কালকে ভাবছি একটু নানু বাসায় যাবো,আসলে বুঝতেই তো পারছো৷”
“হমম,তোর আম্মু আমাকে কালকে বলেছে৷ যাস তবে তাড়াতাড়ি ফিরিস মা,তোদেরকে ছাড়া বাসা ফাঁকা ফাঁকা লাগে বড্ড৷”
আরু মুচকি হাসলো‌৷ অনিকা খান হঠাৎ ধমকের সাথে বললেন

“আর তুই আমাকে ফুপি বলছিস কেন হমম?
আমি এখনো কি তোর ফুপি?আমি তোর শাশুড়ি আম্মু না? শাশুড়ি আম্মু ছাড়া আমি তোর মা বুঝলি?”
আরু চোখ টিপ মেরে বলল
” তুমি হলে আমার মাদার ইন্ডিয়া বুঝলে শাশুড়ি আম্মু!”
উনিও হেসে উঠলেন আরুর সাথে৷

কারনে অকারনে ভালোবাসি পর্ব ২৪