কারনে অকারনে ভালোবাসি পর্ব ২৪

কারনে অকারনে ভালোবাসি পর্ব ২৪
Suraiya Aayat

“এদিকে ফেরো,ওদিকে তাকিয়ে ঘুমাতে কে বলেছে?”
বেশ কপাল কুঁচকে আদেশ দিয়ে উঠলো আরিশ৷ আরু আরিশের ধমক শুনে মুচকি মুচকি হাসছে, আরিশের দিকে ফিরলো না আরু আগের মতোই শুয়ে রইলো কারন আরিশকে বিরক্ত করতে ওর ভালোই লাগে৷
আরিশ পুনরায় ধমকের সাথে বলল

” কি হলো কথা কানে যাচ্ছে না?”
আরু এবার জোরে জোরে হেসে ফেলল,আরিশ ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করলো
” কি হয়েছে হাসছো যে?”
আরু আরিশের দিকে হাসতে হাসতে ফিরে বলল
” এমনি হাসি পাচ্ছে তাই হাসছি”
আরিশ খানিকটা ভড়কে গেল তাই পুনরায় বলল
“হাসি থামাও আর চুপচাপ ঘুমাও৷”
“ওকে৷”
কথাটা বলে আরু অন্য দিক ঘুরতেই আরিশ কোমরটা জড়িয়ে কাছে টেনে বলল

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” চেষ্টাও করবেনা একদম৷”
কিছুখনের জন্য আরুর বুকের ভিতরটা থমকে গেল যেন,বড়ো একটা শ্বাস ছেড়ে আরিশের দিকে ঘুরতে গেলেও পারলো না কারন আরিশ এতো জোরে ওকে নিজের সাথে চেপে রেখেছে যে নড়াচড়া করায় মুশকিল৷ আরু কিছু বলছে না হঠাৎ গলার আশেপাশে গরম নিশ্বাস পড়তেই হৃদস্পন্দন বেড়ে গেল আরুর৷ বেশ কিছুখন গলায় আরিশের নিশ্বাস এসে পড়তেই হঠাৎ তা থেমে গেল,আরুর চমকটা যেন কেটে গেল৷ আরিশ আরুর থেকে সরে এসে পুনরায় বালিশে মাথা রেখে আগের মতোই আরুকে জড়িয়ে রাখলো৷ এবার আরু জোরে জোরে প্রশ্বাস নিতে লাগলেই আরিশ বেশ নম্র কন্ঠে বলে উঠলো

“আরুপাখি!”
আরু বেশ গভীর অকুতি নিয়ে বলল
“হমম৷”
আরুর কথাটা শোনামাত্রই আরিশ আরুর কানে ঠোঁট ছোঁয়াতেই আরু কিঞ্চিত কেঁপে উঠলো৷ আরু নিজেকে সামলাতে না পেরে বলল
” কিছু বলবেন?”
আরিশের ঘোর কেটেও কাটছেনা ওর আরুপাখিটাই ওর কাছে নেশাময়৷ আরিশ কিছু বললো না,আরুর কাছ থেকে সরে এসে হাতের বাধন আলগা করে দিতেই আরু একটু দূরে সরে গেল৷ আরিশ প্রশ্ন করে উঠলো
“জামা কাপড় গুছিয়েছো?”

আরু উত্তর দেওয়ার ভাষা পেলো না শুধু না নাড়িয়ে সম্মতি জানালো৷ আরুর নিস্তব্ধতা মেনে নিয়ে আরিশ বলল
” বেশিদিন না একদিনের জন্য যাচ্ছি তারপর এক্সাম হয়ে গেলে আবার না হয় যাবো৷”
আরু আবার ও মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো৷ আরিশ আরুর কাছে এগিয়ে গিয়ে আরুকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিজে আরুর কাছে স্থান দখল করে বলল
” ভয় পাচ্ছো?”

আরু কিছুখন আরিশের মুখের দিকে তাকালো,আরিশ ওর মুখের ভাব ভঙ্গি দেখে কিভাবে যে এতো কিছু বুঝে যাই তা আরুর জানা নেই,হ্যাঁ সত্যিই ও ভয় পায় তবে তা ভালোবাসা থেকে আসে,আরিশের কাছে যেতে যতোটা বেশি লজ্জা পায় তার থেকে বেশি ভয় পায় হয়তো সময়ের সাথে সাথে সেই ভয়টাও নিমেষে দূর হয়ে যাবে৷ চোখ নামিয়ে নিলো আরু৷ আবহাওয়ার অবস্থা খুব একটা ভালো নয় তা আগেই টিভিতে খবর দেখে জানতে পেরেছে,বাইরে শো শো করে হাওয়া বইছে হয়তো গুটিকতক বৃষ্টিও হচ্ছে ঝিরঝির করে তবে তা বোঝার উপায় নেই তাই ঠান্ডাও বেশ৷ হঠাৎ কি মনে হতেই আরু আরিশের দিকে সরে গেল তারপর বেশ গুটিশুটি হয়ে আরিশের বাহুডোরে আবদ্ধ হলো৷
আরিশ আর কিছু বললো না নির্বিকার ভঙ্গিতে আরুকে জড়িয়ে ধরলো৷

“বাবা কিছু খেয়ে নাও নাহলে তোমার শরীর খারাপ করবে,এমনিতেই তো আফসানা আপুর বাসা থেকে ফেরার পর থেকে কিছুই খাচ্ছেন না,কি হয়েছে তাও বলছেন না৷”
আরুর মামীর এমন মায়াময়ী কথা শুনে আরুর নানাভাই রফিক আশরাফ বলে উঠলেন
” আমি কইছি না যে কিছু খামু না তাও তুমি বারবার খাওনের লগে এতৈ জোর করতাছো কেন? তুমি কি জানো না যে কোন কাজে এতো জোর করা আমার পছন্দ না৷”

ওনার এমন কথাতে আরুর মামী বেশ কিছুটা দমে গেলেন তবুও হাল ছাড়লেন না,হাল ছাড়লে চলবে না, ওনার শ্বশুরের দেখভাল করার দায়িত্বটা সম্পূর্ণ ওনার আর তা উনি বেশ ভালভাবেই পূরন করেন তাছাড়া ওনার যত্নতে কোনরকম কোন ক্রুটি হলে আরুর মামা আরুর মামীকে কথা শোনাতে ছাড়েন না তাছাড়া উনিও ওনার শ্বশূরকে যথেষ্ট ভালোবাসেন ও শ্রদ্ধা করেন৷ উনি থেমে না থেকে বললেন

“আমি কোন কথা শুনবো না বাবা আপনার কথা অনেক শুনেছি আর তার ফলাফল হিসাবে আপনি বিগত এক সপ্তাহ ধরে কিছু খাচ্ছেন না,প্রেশার বাড়ছে কমছে তাই আর কোন কথা না৷”
কথাটা বলে খাবারটা ওনার সামনে রাখতেই উনি রাগ করে ছুড়ে ফেলে দিলেন,আজকাল খুব সহজেই রেগে যান আর অবশেষে ওনার মৃত স্ত্রীর নাম ধরে ডেকে একা একা কথা বলতে বলতে ঘর ঢুকে দরজা দিয়ে দেন,ওনার এই অদ্ভুত আচরনের সমাধান খুঁজে পাচ্ছেনা কেউ৷ উনি খাবারটা ছুড়ে ফেলে দিতেই আরুর মামী ছিটকে দূরে সরে গেলেন ভয়ে৷ আশরাফ সাহেবের মুখের দিকে উনি তাকিয়ে রইলেন অবাক হয়ে কারন তিনি কখনো খাবারের অসম্মান বা অপচয় করতে পছন্দ করতেন না আর তিনিই খাবার ছুড়ে ফেলে দিলেন৷ উনি বেশ কাঁপা কন্ঠে বললেন

” বাবা আপনি খাবারটা ফেলে দিলেন?”
উনি লাঠিটা নিয়ে হাটতে গেলেই খানিকটা টলমল হয়ে গেলেন,খানিকটা হাপাচ্ছেন উনি৷ বেশ ঝাঁঝিয়ে উঠে বললেন
” কারোর লাগবো না আমার,আমার আফসানার মা হলেই চলবো,তোমরা কেউ আমারে বোঝো নাই৷”
কথাটা বলে উনি ঘরে ঢুকে আরুর মামীর মুখের ওপর সপাটে দরজা বন্ধ করে দিলেন৷ উনি বেশ কেঁপে উঠলেন ভয়ে,আজকাল ওনার ব্যাবহারে বেশ আতঙ্কিত উনি,কখন কি হয়ে যায় সেই ভয়টা বেশি পান৷
খাবারের প্লেটটা সৌভাগ্যবশত ভাঙেনি,উনি পড়ে থাকা খাবার গুলো তুলতে লাগলেন সেই মুহূর্তে মধু এসে এটা দেখতেই বলে উঠলো
“আম্মু খাবার নষ্ট হলো কিভাবে? জলদি উঠাও দাদাজান দেখলে কথা শোনাবেন অনেক৷”

উনি বেশ মনমরা হয়ে বললেন
” তোর দাদাজান ই ফেলেছে মধু৷”
মধু অবাক হয়ে বলল
” আম্মু তুমি এটা কি বলছো? দাদাজান খাবার ফেলতে যাবে কেন?”
উনি খাবারটা তুলে হাটতে শুরু করলেন আর মধুও ওনার পিছন পিছন হাটতে হাটতে বললো
” কি হলো আম্মু কিছু বলছো না কেন?”
“জানি না তোর দাদাজানের কি হয়েছে,ঢাকা থেকে ফেরার পর কিছু খাচ্ছে না,মেজাজ ও তিরিখ্খি হয়ে রয়েছে কিছু বললেই খালি রেগে যাচ্ছে৷”

কারনে অকারনে ভালোবাসি পর্ব ২৩

মধু বেশ নরম সুরেই বলল
“আমি কি দাদাজানের সাথে কথা বলে দেখবো?”
“নাহ দরকার নেই,তোর আব্বু বাসায় আসুক আগে তাকে বলে দেখি তিনি কি সিদ্ধান নেন৷”
মধু আর কিছু বললো না,তবে শুনে খারাপ লাগছে,ও নিজেও লক্ষ করছে বেশ কয়েকদিন ধরে এইসব তবে আজকে ওনার খাবার ফেলে দেওয়ার বিষয়টা ও যেন মানতে পারছে না কারন উনি এই কাজটা সহ্য করতে পারেননা ৷
একবার আরু খাবার নষ্ট করেছিলো বলে উনি অনেক কথা শুনিয়েছিলেন তার পর থেকে আরু আর ভয়ে খাবার নষ্ট করেনা৷ সেই কথা মধুর মনে আছে তবে খারাপ লাগছে বিষয়টা ভেবে যে আশরাফ সাহেবের মাঝে হঠাৎ এমন পরিবর্তন আসায়৷
মধু নিজের রুমে গেল,সামনেই প্রি টেস্ট এক্সাম পড়তে হবে৷

“একটু থামাবেন গাড়িটা প্লিজ?”
ব্যাস্তাতার সাথে বললো আরু৷ আরিশ চটজলদি গাড়ি থামাতেই আরু দৌড়ে ছুটে গিয়ে রাস্তার একপাশে বমি করতে শুরু করে দিলো৷ আরিশ আরুর কাছে গেল যদিও আরু হাতের ইশারায় ওর কাছে যেতে না করছে তবুও গেল আরিশ,কে শোনে কার কথা৷ আরিশ জলের বোতলটা আরুর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল

“কালকে তুমি নারিকেলের নাড়ু খেয়েছিলে?”
কথাটা শুনে আরু ভয়ে চোখ মুখ খিঁচে নিলো,আরিশের বারন করা স্বত্তেও ও খেয়েছিলো তারপর হজম হয়নি আর সকালে নাস্তায় পরোটা খেয়ে বেরোনোর দরুন আরো উল্টো রিয়েকশান হয়ে বমি হয়ে গেছে‌,আরিশ এখন ওর আচ্ছা ক্লাস নেবে এই মাঝ রাস্তায়‌ ভাবতেই আরুর মাথাটা ঝিমঝিম করে উঠলো‌৷

কারনে অকারনে ভালোবাসি পর্ব ২৫