কারনে অকারনে ভালোবাসি পর্ব ১১

কারনে অকারনে ভালোবাসি পর্ব ১১
Suraiya Aayat

“আরিশ কোথায় যাচ্ছো ? সবে তো এখন আসলে,আর এখনই চলে যাচ্ছো? তোমার মামা অফিস যাওয়ার আগে বলে গেছেন যাতে তুমি আসলে আজকে যেন তোমাকে বাসায় না যেতে দেওয়া হয়, যতই হোক তুমি আজ এই বাসার জামাই হিসাবে তোমার প্রথম দিন ৷”
বেশ উৎফুল্লতার সাথে কথাগুলো বললো আরুর মা ৷
আয়াশ একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে চোখে মুখে হাত দিলো ৷মাথার ভিতরটা ঝিমঝিম করছে তার ওপর আরুর কথাটা ভাবলেই ব্লাড প্রেশার লো হয়ে যাচ্ছে ৷ শার্টের কলারটা খানিকটা পিছন দিকে সরিয়ে দম ছাড়লো তারপর খানিকটা রুগ্ন কন্ঠে বলল

” আসলে মামী আমার একটা কাজ আছে ৷ তাই আরকি থাকতে গেলে হবে না ৷”
আরুর মা আফসানা বেগম উতলা হয়ে বললেন
” আরে নাহ, কাজ টাজ অন্য দিন হবে, আজ কোন কথা শুনছি না আমি ,আর তাছাড়া তুমি চলে গেলে তোমার মামু খুব রাগ করবে আর রাগের সব ঝলকানি পড়বে আমার ওপর ‌ ৷ তুমি ওপরে যাও আমি তোমার পোশাক দিচ্ছি ৷”
আরিশ আরও কিছু বলতে যাবে তখন আরু নেমে এলো, ওদের কথপোকথন খানিকটা কানে এলো ওর,বুঝতে বাকি রইলো না যে ওর মা আরিশকে থাকার কথা বলছেন তবুও না জানার ভান করে বলল

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” কি হয়েছে আম্মু? কি বলছো ওনাকে?”
উনি চোখ পাকিয়ে বললেন
” তোকে বলেও কি কোন লাভ হবে আদেও?”
আরু চোখ বাঁকিয়ে বলল
” কেন আমি আবার কি করলাম?”
উনি একটু ঝাঁঝিয়ে বললেন
” এই যে ছেলেটা দুপুরে লাঞ্চ না করে চলে যাচ্ছে তার ওপর তোর বাবা আজকে রাতটা ওকে এখানে থাকতে বলেছে কিন্তু তুই কি একবার ও ওকে আটকেছিস?”
আরু ভ্রু কুঃচকে বলল
” ওনাকে আটকানোর কি আছে , তাছাড়া উনি কি ছোট বাচ্চা নাকি যে ধরে ধরে রাখতে হবে ?”
উনি এবার রেগে গিয়ে বললেন

” এই জন্যই তো বললাম তোকে বলে আদেও কোন কাজের কাজ হবে না ৷”
আরিশ মা আর মেয়ের তুমুল তর্কাতর্কির মাঝে ফেসে গেছে, অন্য সময় হলে হয়তো ওদের ক্যাটফাইটটা এনজয় করতো কিন্তু আজকে সব দিক থেকেই ওর মন মানসিকতা কোনটাই ঠিক নেয় ৷ আরিশ ওদের ঝগড়ার মাজে তৃতীয় ব্যাক্তি হয়ে বলল
” মামী, তুমি ওকে বকোনা, ওর আর কি , আমার কাজ আছে তাই নাহলে আমি থাকতাম আমাকে এতোবার বলতে হতো না ৷”
আফসানা বেগম উনি মনে হয় আজকে না শোনার কোন ওষুধ খেয়েছেন, কোন প্রকারে উনি না শুনতে নারাজ তাই মাথা নাড়িয়ে বললেন

” উহু, একদম না, কোন কথা শুনছি না , তোমার কথায় যাকে বলে নো মোর ওয়ার্ডস ৷”
কথাটা শুনে আরু ফিক করে হেসে ফেলল, আরিশ আরুর হাসি মুখের দিকে তাকিয়ে ম্লান হাসলো , মেয়েটার মুখের হাসির দিকে তাকালেই ওর সব মন খারাপ গুলো ভালো লাগায় পরিনত হয় ,কিন্তু আজকে বুকের বা পাশে অদ্ভুত এ চিন চিনে ব্যাথা অনুভব করছে , মূলত আরুর জন্য চিন্তাগ্রস্হ , আরুর ভবিষ্যত নিয়ে আরিশের চিন্তার শেষ নেই ৷ আদতেও পেটে কি কোন সার্জারি করতে হবে নাকি তা ওষুধ খেয়ে চলবে কিছুই মাথায় আসছে না, আরিশ আরুর কনসাল্টেড ডক্টরের সাথে দেখা করতে যাবে , উনি আরিশের সিনিয়ার প্রফেসার, আরিশকে অনেক ভালোবাসেন ৷

আরুর মুখের হাসিটার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই ভাবনা গুলোর অবসান হলো ৷ এই সুযোগে পুনরায় বলে উঠলো
” আচ্ছা মামি আমি তাহলে এখন আসি ৷”
উনি চোখ পাকিয়ে রুগ্ন কন্ঠে বললেন
” খবরদার আর এ পা ও বাড়িয়েছো তো ৷”
আরিশ হাত তুলে সারেন্ডার করে বলল
” এতো সুইট শাশুড়ি + মামীটা যে এমন দারোগা দারোগা ফিল নেবে আমার কল্পনার বাইরে ছিলো ৷”
আরু এবার আরিশকে পচাতে বলল

” আসলে ওসব কাজ টাজ তো বাহানা, নানাভাই এসেছে তাই জন্য উনি ভয় পেয়ে গেছেন, আর যাই নানাভাইয়ের সাথে পায়ে পা বাড়িয়ে ঝগড়া করার ক্ষমতা তো আর ওনার নেই তাই ভয়ে পালাচ্ছেন ৷ নানাভাই 80+ আর উনি 24+ তবুও এখন আমার তো নানাভাইকে ওনার থেকেও ইয়াং মনে হচ্ছে ৷”
আরিশের ভ্রু জোড়া কুঁচকে এলো,,,,,,আরিশ ভ্রু কুঁচকে বলল
” ওই ঢাকাইয়া বুড়োর কাছে আমি হার মানবো , হাহ !”
আরু চালাকি করে বলল
” তাহলে পালাচ্ছেন কেন?”
আরিশ একটু বাকা চোখে তাকিয়ে বলল

” তা মিসেস শাশুড়ি আম্মা আপনার সেই ঢাকাইয়া বুডো বাপ টা ঠিক কতোদিন থাকবে?”
আফসানা বেগম মুচকি হেসে বললেন
” ওই তো এক সপ্তাহ মতো ৷”
আরিশ আরুর দিকে ভ্রু নাঁচিয়ে বলল
” আমিও থাকবো তাহলে এক সপ্তাহ মতো ৷”
কথাটা বলে আরিশ গটগট করে সিঁড়ি বেয়ে উঠে গেল ৷ আরু তো বোকা বনে গেল, ও একদিনের জন্য আটকাতে চেয়েছিলো আর এই ছেলে তো পুরো এক সপ্তাহ থাকার কাহিনী করে ফেলল, রাগ লাগছে ভীষন ৷ এর একটা সামঝোতা কারার জন্য ওউ আরিশের পিছন পিছন গেল ৷ রুম গিয়ে দেখলো আরিশ ওর বেডে শুয়ে পা নাচাচ্ছে, আরু ওড়নাটা ছুড়ে সোফাতে ফেলে কোমরে দু হাত রেগে সরু চোখে তাকিয়ে বলল

” এটা কি হলো?”
আরিশ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল
” কোনটা কি হলো?”
আরু বিরক্ত হয়ে বলল
” আপনার একদিন থাকার কথা ছিলো আর আপনি এক সপ্তাহের বাহানা খুজে নিলেন?”
আরিশ বিছানা থেকে উঠে বসে বলল
” তা নয়তো কি ! শ্বশুর বাড়িতে থাকবো না?”
” তাই বলে এক সপ্তাহ ?”
আরিশ ও ভ্রু নাঁচিয়ে বলল
” তুমি যে আমার বাসায় সারাজীবন থাকবে তাহলে আমিও কি এভাবে বলবো যে ” আরুপাখি তুমি আমার বাসায় কি সারা জীবন থাকবা ?”

আরুর মিমিক্রি করে বলল আরিশ ৷
আরুর বিরক্ত হয়ে গটগট করে বেরিয়ে গেল রুম থেকে,আরিশ থাকা মানে সারাদিন কানের কাছে আরুপাখি? আরুপাখি? নামের ক্যাসেড বাজবে, উঠতে গেলে আরুপাখি, বসতে গেলে আরুপাখি, উফফফ !
আরু নীচে নেমে ওর মা কে ডাকতে লাগলো
” আম্মু, আম্মু !”
আফসানা বেগম কিচেনে সবজি কাটতে কাটতে বললেন
” সেই ভাঙা রেকর্ডার ,,,সারিদন আম্মু আম্মু করে বাড়ি মাথায় করা ৷”
আরু এবার বুদ্ধি এটে বলল
” আম্মু লুঙ্গি দাও তো তাড়াতাড়ি ৷”

উনি সবজি কাটতে কাটতে হঠাৎ থেমে গেলেন তারপর বললেন
” কেন, লুঙ্গি কি হবে?”
” কি হবে আবার , পরবে ৷”
” কে পরবে? তোর নানাভাই?
আরু এবার বাকা হেসে বলল
” হাহ ?, তোমার প্রানপ্রিয় জামাই পরবে ৷ তার খুব শখ জেগেছে ৷”
উনি অবাক হয়ে বললেন
” আদেও সত্যি বলছিস তো নাকি মিথ্যা বলছিস? আরিশ কখনো লুঙ্গি পরবে? কিন্তু ও তো কখনো পরে না ৷”
আরুর কপাল কুঁচকে বললো
” তো , পরেনি তো কি হয়েছে, মানুষের কি ইচ্ছা জাগতে পারে না ? তুমি না একটু বেশিই ভেবে ফেলছো, তোমরা ওনাকে যা ভাবো আদতেও উনি তা না ৷”

আফসানা বেগম চোখ পাকিয়ে বললেন
” তাহলে কি ?”
আরু মুখ বকিয়ে বললেন
” এই যে তোমরা ওনাকে ভালো মানুষ ভাবো আদতে তিনি একটা এলিয়েন তা তোমরা জানো না, হু ৷”
আফসানা বেগম কড়া সুরে বললেন
” একটা থাপ্পড় থিবো , সারাদিন খালি ছেলেটার পিছনে লাগে ,ছেলেটা না বিয়ে করলে তোর আদতেও বিয়ে হতো কি সন্দেহ ৷”
আরু বিরক্ত সুরে বলল
” কে বলেছিলো ওনাকে করতে ? আমার পিছনে হাজারটা ছেলে পড়ে আছে ৷ আচ্ছা তোমার সন্তানটা কি আমি না উনি আগে বলো তো!”

আরুর মা তিনি সবটা জানেন তাই চুপ করে গেলেন, কেউ ই আরুকে কথাটা জানাতে চাই না কখনও , আরিশ বারন করেছে ৷
” দুজনেই, তোরা দুজনেই আমার সন্তান ৷ কিন্তু তুই আগে বল আরিশ কি আদতেও বলেছে যে লুঙ্গি পরবে?”
” হু , উনি না বললে কি আর আমার সাহস হয় যে আমি বলবো ৷”
উনি একটু ভাবতে বসে গেলেন,মূলত আরুর বলা কথাটার সত্যতা যাচাই করছেন , কেন জানি বিশ্বাস হচ্ছে না ৷
আরু ওনার মুখের ভাব ভঙ্গি লক্ষ করে বলল
” আম্মু তুমি আসলেই কি দিবা নাকি আমি ওনাকে গিয়ে বলবো যে তার এই আবদারটা তার ওয়াল্ড ফেমাস শাশুড়ি আম্মা পূরন করেনি ৷?”
উনি রেগে বললেন” আমি কি একবার ও বলেছি যে দেবোনা , দিচ্ছি চল, ছেলেটার ও যে মাঝে মাঝে কিসব ভাবনা চিন্তা মাথায় আসে ৷”

আরু সিঁড়ি দিয়ে উঠছে আর হাসতে হাসছে বলল
” দেখেছো তো এই জন্যই তো ওনাকে এলিয়েন বলি ৷”
আরুর মা মুচকি হেসে আরুর মাথায় একটা গাট্টা দিলো ৷ দুজনেই হাসছে ৷

” এই নিন, আপনার লুঙ্গি, আম্মু দিয়েছে ৷”
আরিশ অবাক হয়ে ফোনটা পাশে রেখে আরুর কাছে গিয়ে বলল
” হোয়াট, লুঙ্গি ! এটা কে পরবে?”
” কেন আপনি ৷”
” আমাকে কখনও লুঙ্গি পরতে দেখেছো যে এটা আনলে ! ”
আরু কাচুমাচু মুখ করে নাটকি ভঙ্গিমায় বললো

” আমি কি শখ করে এনেছি নাকি, আম্মু দিয়েছে ৷ আর এটাও বলেছে যে লুঙ্গি না পরে থাকতে পারলে আপনাকে বাসায় চলে যেতে ৷”
আরুর বলা শেষের কথাটাই আরিশের খটকা লাগলো ৷ বোঝা সারা যে আসল অহিনী কি ৷আরিশ যাতে লুঙ্গি না পরতে পেরে বাসায় চলে যায় সেই কারনে আরু কথাটা বলেছে ৷ আরিশ ও এবার উল্টো চাল দিতে বলল
” তোমার কয়েকটা ফ্রেন্ড আছে না ? কলেজের ফ্রেন্ড, আইমিন যারা তোমার আর সানার কমন ফ্রেন্ড ৷”
আরু বাকা চোখে তাকিয়ে বলল

” তো! ?”
” আমার সাথে তাদের পরিচয় করাবে না, আমি তোমার হাজবেন্ডবলে কথা ? ”
আরু রেগে বলল
” আপনাকে আমি আমার হাজবেন্ড মানিনা, আপনি মআঃ অভদ্র ? ৷ আর ওরা বড্ড লুচু আর গায়ে পড়া স্বভাবের ৷”
আরিশ চোখ টিপ মেরে বলল
” কি হিংসা হয়?”
আরু ঘাবড়ে গিয়ে বলল
” আজব , হিংসা হবে কেন? আর আপনাকে নিয়ে ভেবে ওদের ওপর হিংসা করতে আমার বয়েই গেছে ৷”
আরিশ মুচকি হেসে বলল
” বেশ, তাহলে আজকে বিকালে ওদেরকে বাসায় আসতে বলো না হলে ওদেরকে মিট করতে বলো ৷ আমি ট্রিট দেবো ৷”
আরু যেন আরিশের কথাতে সম্মতি প্রকাশ করতে পারলো না, হঠাৎ অরে ওর ফ্রেন্ড দের সামনে যেতে চাইছে ব্যাপারটা একটু সন্দেহ জনক ৷ চুপ করে রইলো ৷
আরিশ বলে উঠলো

” বাই দা ওয়ে আমি কিন্তু এই লুঙ্গি পরেই যাবো কফি শপে, আর ওদের সামনে ৷”
কথাটা শুনে আরু ছোট খাটো হার্ট অ্যাটাক করার মতো অবস্থা ৷ অবাক হয়ে বলল
“কিহ ! মাথার ঠিক আছে? লুঙ্গি পরে যাবেন মানে? ওরা কি ভাববে ?”
আরিশ উদাসীন হয়ে বলল
” ইউ নো কে কি ভাবলো আই ডোন্ট কেয়ার ৷আর তুমি তো আমাকে হাজবেন্ড বলে মানোনা তাই ছোমার লজ্জা লাগার কারধ তো নেই ৷ আর শাশুড়ি আম্মা ভালোবেসে দিয়েছে আমি না করি ? কেন তোমার লজ্জা লাগবে ৷”
আরু বলে উঠলো

কারনে অকারনে ভালোবাসি পর্ব ১০

” নাহ লুঙ্গি পরে যাবেন না, তাহলে আমার আর মান সম্মান থাকবে না ৷”
আরিশ আগের মতোই বলল
” আমি তো লুঙ্গি পরেই যাবো ৷”
আরু থতমত খেয়ে বলল
” আপনি ওদেরকে বলবেন যে আপনি আমার কাজিন আর আপনি এনগেজ্ড ওকে? ? আর পাত্রীর নাম জানতে চাইলে বলবেন না বুঝেছেন?”
আরিশ লুঙ্গিটা আরুর হাত থেকে নিয়ে বলল

” হ্যাঁ আমি তো চিরকালই সিঙ্গেল , আবরার আরিশ ফর অল? , এন্ড হু আর ইউ আফা ৷”
আরু রেগে বলল
” ডিভোর্স ৷”
আরিশ ওয়াশরুমের দরজা আটকে বলল
” কাজিনদের ডিভোর্স হয় না আরুপাখি, ওপস আপনি তো আমার ” হু আর ইউ আফা” ৷”
আরু চেঁচিয়ে বলল
” নাহহহহহহ ৷”
আরিশ খট করে দরজা আটকে দিলো ৷

কারনে অকারনে ভালোবাসি পর্ব ১২