কারনে অকারনে ভালোবাসি পর্ব ১৩

কারনে অকারনে ভালোবাসি পর্ব ১৩
Suraiya Aayat

বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা, আজান দিয়ে দিয়েছে প্রায় 30 মিনিট আগে ৷ আরিশ আগের লুঙ্গিটাই পরে আছে আর ওপরে শুধু একটা ব্লু কালারের শার্ট পরেছে ,আয়নাতে নিজেকে পরিপাটি করে দেখছে আর আরুর দিকে তাকাচ্ছে ৷ আরু বসে বসে পা নাড়াচ্ছে, যখন ও খুব চিন্তা করে তখন বসে বসে পা নাড়ায়, ওর হাত পা স্থির থাকে না ৷আরিশ আয়নাতে নিজেকে একবার দেখে নিয়ে বলল
” রেডি হওনি যে এখনো, কি ব্যাপার !”

আরু আরিশের দিকে বিরক্তিমাখা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে নিলো ৷পুনরায় পা দোলাতে লাগলে আরিশ বলল
” এই যে আরু পাখি কি হলো,যাবে না? ওদের না 7.30টার দিকে গুলশান 1 এ লেক পার্কের কাছে আসার কথা ৷”
আরু এবার আরিশের দিকে 45 ডিগ্রি কোনে তাকিয়ে বলল
” কোন রেস্টুরেন্টে সিট বুক করেছেন? ওদেরকে তো বলতে হবে ৷”
আরিশ পারফিউমটা দিতে দিতে বলল

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” khana Khazana ” তে ৷ওদেরকে ওখানে আসতে বলো ৷”
পারফিউমের গন্ধ সারা রুম ময় ছড়িয়ে গেল, আরু হাত নাড়িয়ে গন্ধ দূর করতে করতে বলল
” ইয়াক, কি বিদঘুটে গন্ধ ‌৷ এই পারফিউম দিয়ে আপনি রেস্টুরেন্টে যাবেন ?”
আরিশ এদিক ওদিক আয়ানার দিকে তাকিয়ে বলল
” তুমি তো জনো যে কতো মেয়ে আমার জন্য পাগল ৷ জানো না?”
আরু মুখ ভাঙচি দিয়ে বিড়বিড় করে বলল
” ওনার জন্য আমাকে সারাজীবনে কেউ প্রপোস করার সাহস অবধি পেলো না আর এদিকে উনি ওনার লেডি গোপীয়া দের কথা শোনায় হাহ !”

আরিশ আরুর কাছে ঘেষে বসে বলল
” কি বড়বিড় করছো আরু পাখি? হিংসা হয় তোমাকে কেউ প্রপোস করে না বলে?”
আরু ভ্রু কুঁচকে আরিশের দিকে তাকিয়ে বলল
” সিরিয়াসলি ! আমাকে কেউ প্রপোজ করে না তাই হিংসা হবে? আর প্রপোজ করবে কি করে, আপনি কখনও তাদের আমার আশেপাশে ঘেষতে দেওয়ার সুযোগ দিতেন ?”
আরিশ হো হো করে হাসতেই আরু বলল
” ইস, এই স্মেলটা কেমন,নতুন পারফিউম ?”
আরিশ মুচকি হেসে বলল

” হম,,নতুন ৷ আর তুমি এমন বলছো ! এই পারফিউমের গন্ধে কতো মধুরমা পাগল হয়ে যবে তুমি জানো !”
আরু মুখ ভাঙচি দিলো ৷ হঠাৎ করে আরিশ বেশ উত্তেজিত হয়ে উঠলো
” ওয়েট , মধু ! মধু তো এই বাসাতে আছে , আমাদের তো ওকে একা ফেলে রেখে যাওয়া উচিত না তাইনা?”
আরিশের কথা শেষ হতে না হতেই আরু টেবিল থেকে ফলের চাকুটা নিয়ে আরিশের গলায় ধরে বলল
” ওই ইরিটেটিং পোকাটার নাম ও যদি নিয়েছেন তো আপনার খবর আছে ৷”

আরিশ খানিকটা লাফ দেওয়ার মতো উঁচু হয়ে এক নিমেষে আরুর ঠোঁটে চুমু দিয়ে সরে আসতেই আরু ছিটকে সরে এলো ৷ হাত থেকে চাকুটা পড়ে গেল ৷ আরিশ আরুর দিকে গভীর দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে, আরু বেশ ঘাবড়ে গেল আর লজ্জা পেল,,তাই আর কিছু না বলে জলদি জামা নিয়ে ওয়াশরুম চলে গেল ৷
আরু ওয়াশরুম গেছে তখনই হঠাৎ মধু আর আফসানা বেগম রুমে ঢুকলেন বেশ হন্তদন্ত হয়ে,,উনি ব্যাতিব্যাস্ত হয়ে বললেন
” আরিশ আমার অনেক বড়ো ভুল হয়ে গেছে বাবা তুমি কিছু মনে করো না ৷”
মধুর মুখ সিরিয়াসনেস এ ভরা, আরিশ মধুর দিকে একবার তাকিয়ে আফসানা বেগমকে বললেন

” কোন সমস্যা হয়েছে মামী?”
উনি বেশ নিন্দিত সুরে বললেন
” আরু যে ফাজলামি করে আমার কাছ থেকে লুঙ্গি নিয়েছে এটা আমার আগেই মনে হয়েছিল তবুও কি ভেবে যে আমি ওর হাতে লুঙ্গি তুলে দিলাম ৷ ইশ তুমি নতুন জামাই আর তুমি কি না লুঙ্গি পরে ঘুরছো, মধু না বললে জানতেই পারতাম না ৷ আরুটা দিনদিন ফাজিল হয়ে যাচ্ছে বড্ড ৷”
আরিশ মধুর মুখের দিকে তাকালো , বুঝতে পারলো যে ব্যাপারটা কি, আরুকে বকার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য মধুর ঘাড়ে তো বন্দুক রাখতেই হবে ,কথাটা ভেবে আরিশ বলে উঠলো

” কই না তো, আমিই তো আরুকে বলেছিলাম লুঙ্গি আনতে , আসলে কখনও পরিনি তো তাছাড়া মামাকে পরতে দেখি তাই আমার ও এই অদ্ভুত ইচ্ছা জেগেছিলো ৷আরু মিথ্যা কিছু তো বলেনি ৷”
কথাটা শুনে উনি মধুর দিকে তাকালেন
” এই যে মধু বলল যে তুমি নাকি বলেছো তুমি নাকি পরতে চাওনা ৷”
আরিশ সন্দেহের সুরে বলল
” মধু আমি তোমাকে একথা বলেছিলাম ‌৷”
মধু মাথা নাড়িয়ে বলল

” হমম ৷”
আফসানা বেগম কনফিউজড হয়ে গেলেন, কোন তাল না পেয়ে বললেন
” আচ্ছা যাই হোক, তোমাকে এতখন অনেক অসস্তি সহ্য করতে হয়েছে, আমি এখুনি তোমার জন্য শার্ট আর প্যান্ট আনছি ৷”
আরিশ বলল
” নাহ ,আমরা একটু বাইরে যাচ্ছি ৷রাতে ডিনার বাইরে থেকে করে আসবো ৷”
মধু বলে উঠলো
” আমিও যাবো তোমাদের সাথে ৷ ‌‌”
আরিশ প্যারা বুঝে বলল
” একচুয়ালি আরুপাখির মেডিসিন আনতে আর ডক্টর দেখাতে যাচ্ছি, ফিরতে অনেক লেট হবে ৷”
কথাটা শুনে মধুর মন খারাপ হয়ে গেল ৷ আরিশ জানে মধু গেলে আরু যাবে না তাই ৷ আর এমনিতেও ফেরার পথে আরুকে নিয়ে ডক্টরের কাছে যাবে আরিশ ৷
আফসানা বেগম বললেন

” মধু তুই নীচে তোর দাদুভাইয়ের কাছে যা আমি একটু পর আসছি ৷”
মধু বেরিয়ে গেল ৷ মধু বেরিয়ে যেতেই আফসানা বেগম এদিক ওদিক তাকিয়ে ভয়ে ভয়ে বললেন
” আরু কোথায় ৷”
আরিশ ওয়াশরুমের দিকে তাকিয়ে বলল
” ওয়াশরুমে, ড্রেস আপ করতে গেছে ৷”
উনি এবার ভাঙা কন্ঠে একটু নিম্নস্বরে বললেন
” একটা কথা বলভো বলবো ভাবছি কিন্তু বলা হয়নি ৷”
আরিশ ওনার কাধে হাত রেখে বলল
” আমাকে বলতে দ্বিধা বোধ করছো ?”
উনি ছলছল চোখে তাকিয়ে বললেন

” না না আরিশ তেমনটা না আসলে যা বলবো তোমার আর আরুকে নিয়েই ৷”
আরিশ মুচকি হেসে বলল
” তো বলো, দেরি কিসের !”
” বলছিলাম কি , তুমি কেন বাবা যেচে নিজের জীবনটা নষ্ট করতে গেলে বলো ! তুমি তো সবই জানো ৷ আরু কখনও মা হতে পারবে না, তোমাদের দুজনের ভবিষ্যৎ বলতে শুধু তোমরাই ৷ তাছাড়া তোমার মতো ছেলের পিছনে হাজার হাজার মেয়ের লাইন থাকবে বিয়ে করার জন্য ৷ আমি বলছিনা আমার আরু খারাপ বা,,,,”
আরিশ গম্ভীর কন্ঠে বলল

” বা ? তারপর কি?”
উনি এবার কেঁদে ফেললেন, আরিশ চোয়াল শক্ত করে আছে ৷
” আমরা আরুর আরও ট্রিটমেন্ট করাতাম বা সব বলে কয়ে না হয় ওর জীবনের একটা গতানুগতি ঘটাতাম ৷”
উনি এটুকু বলতেই আরিশ ওনাকে থামিয়ে দিয়ে বলল

” ব্যাস,নো মোর ওয়ার্ড ৷ বিয়ে করে সন্তানসুখ লাভ করবো বলে আমি আরু পাখিকে বিয়ে করিনি, আমি ওকে বিয়ে করেছি কারন আমি ওকে ভালোবাসি , ওর বেবি হলো কি হলো না আই ডোন্ট কেয়ার ৷ তাছাড়া আমার তো আমার ফিউচার নিয়ে চিন্তা হয়না তাহলে আপনারা এত ভাবেন কেন বলুন তো ৷ আমার কোন বেবি লাগবে না, আমার যাকে প্রয়োজন ছিলো তাকে আমি পেয়ে গেছি , আর সত্যি বলতে আরুর এই পরিস্থিতি তো শুধুমাত্র আমরা জন্যই, আমার কারনেই ও অক্ষম ৷ যাই হোক আমি আরুকে নিয়ে অনেক হ্যাপি আছি,আর আপনারাও নিশ্চিন্তে থাকুন শুধু খেয়াল রাখবেন কথাগুলো যেন আরুর কান অবধি কখনও না যায় ৷”
উনি এবার আবেগে কেঁদেই ফেললেন, চোখের জল মুছে বললেন.

” বিশ্বাস করো আরু অনেক সৌভাগ্যবতী যে ও তোমার মতো স্বামী পেয়েছে ৷ আমার মেয়েটা অনেক ভালো, একটু অবুঝ কিন্তু তোমাকে অনেক ভালোবাসে তাই কষ্ট হলেও মানিয়ে নিও ৷”
.আরিশ হাসির রেখা প্রশস্ত করে বলল
” চিন্তা করো না মামী, আরু পাখিকে ভালোবাসার দায়িত্ব আমার আর ভালোরাখার ও ৷”
উনি মুচকি হেসে বেরিয়ে গেলেন ৷ আরিশ একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বসলো ৷
অনেকখন হয়ে গেল আরু ওয়াশরুণ থেকে বার হচ্ছে না দেখে আরিশ ডেকে উঠলো
” আরু পাখি, এই আরু পাখি, আর কতখন? ওয়াশরুমেই কি সারাটা সন্ধ্যা কাটিয়ে দিবা নাকি?”
ওপর পাশ থেকে আরুর কোন সাড়াশব্দ নেই,,অন্যদিন হলে আরু রেগে থাকলেও সাড়া দেই ৷ আরিশ আবার বলে উঠলো

” কি হলো, আর কতক্ষন?”
তবুও কোন সাড়া নেই দেখে আরিশ দরজার কাছে গিয়ে বললো
” হয়েছে? রেগে আছো আমার ওপর?”
আরুর গলার আওয়াজ তো দূর ,ভিতর থেকে কোন টু শব্দ অবধি পাওয়া যাচ্ছে না দেখে আরিশ দরজা ধাক্কা দিতে লাগলো,,উপায় না পেরে বেশ জোরে দরজাটা ধাক্কা দিতেই দেখলো আরু মেঝেতে পড়ে আছে,আর ফ্লোরে রক্ত ভাসছে,ব্লিডিং হচ্ছে ৷ আরিশ দেখে চেঁচিয়ে উঠলো
” আরু পাখি !”

কারনে অকারনে ভালোবাসি পর্ব ১২

রাত 1.30 টা বাজে, আরুর O- গ্রূপের রক্ত,,সারা হসপিটালে কোথাও O- নেগেটিভ রক্ত নেই, আরিশ খুঁজে খুঁজে হয়রান,এদিকে রক্ত না পেলে অপারেশন করাও সম্ভব না,অত্যাধিক মাত্রায় ব্লিডিং হওয়াই শরীরে রক্ত কমে গেছে তাছাড়া অপারেশনেও রক্তের প্রয়োজন ৷ রেকলেস ড্রাইভিং করছে আরিশ, কোন ট্রাফিক মানছে না, ঢাকা মেডিকেলে কোথাও রক্ত পাইনি,,এমারজেন্সি কাউন্টারেও কোথাও পাইনি , স্যার সালিমুল্লাম মেডিকেলে রওনা দিয়েছে অনেক আগেই, ফিরছে এখন ঢাকা মেডিকেলে, সিটে রয়েছে 2 ব্যাগ রক্ত ৷ রক্তের ব্যাগদুটোর দিকে তাকালো আরিশ , আপনা আপনিই চোখ থেকে দু ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো ৷ ফোনে ফোন আসছে, সানা ফোন করছে, ইতিমধ্যেই গোটা দশেক মিসড কল চলে এসেছে ফোন এ, সবার মুখে আতঙ্ক, মেয়েটার কিছু হয়ে না যাই রক্তের অভাবে ৷ আরিশ চোখের জলটা মুছে ঝটপট ড্রাইভ করলো,,চোখে ভাসছে আরুর সেই বিরক্তিমাখা মুখ যেখানেও আরিশ ভালোবাসা খুঁজে পেতো , কানে ভাসছে একটা কথা

” আচ্ছা আমরা একটা বেবি নিবো হ্যাঁ? আমি তার সাথে সারাদিন খেলা করবো ৷”
আরিশের গলা ধরে এলো, আজকের অপারেশনে ওর একটা টিউব কেটে ফেলা হবে যাতে করে প্রেগনেন্সির আশা খুব ক্ষীন ৷ আরুর বলা কথাগুলো কানে এসে বাজছে ৷ আরিশের কাউকে চাইনা আরু ছাড়া…কথাটা ভেবে গাড়ি থামিয়ে রক্তের ব্যাগদুটো নিয়ে ছুটলো আরিশ ওটির দিকে ৷

কারনে অকারনে ভালোবাসি পর্ব ১৪