কুয়াশা মিলিয়ে যায় রোদ্দুরে পর্ব ১৬

কুয়াশা মিলিয়ে যায় রোদ্দুরে পর্ব ১৬
লেখায় নামিরা নূর নিদ্রা

“কুয়াশা!”
তুরাবের ডাকে পেছন ফিরে তাকায় কুয়াশা। সাফওয়ানের সাথে কথা বলার সময়ে আগমন ঘটেছে মিস্টার তুরাব তৌহিদের।
“মিস্টার তুরাব তৌহিদ আপনি এখন আমাদের সেই ক্লাবে নিয়ে যাবেন যেখানে আপনার সাথে ওই ঘটনা ঘটেছিল।”
“আমাদের মানে?”
“আমি একা তো যাব না। আমার সাথে পুলিশ অফিসারও যাবে তার বাহিনী নিয়ে।”

“আমরা কি ওখানে হা ম লা করতে যাচ্ছি?”
“আমি উকিল। পুলিশ নই। তাই তাদের সাথেই আমাকে যেতে হবে। বুঝতে পেরেছেন?”
“আচ্ছা চলো।”
“এক মিনিট। তুমি করে নয়, আপনি করে বলুন। ভুলে যাবেন না আপনার সাথে এখানে আমার কোনো ব্যক্তিগত সম্পর্ক নেই। তাই যথাযথ সম্মান দিয়ে কথা বলুন।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“নিজের বউকে এখন আপনি করে বলতে হবে?”
“কী বললাম শোনেননি? এখানে কোনো ব্যক্তিগত সম্পর্ক টানা যাবে না। আপনি কি কথা কম বোঝেন হ্যা?”
“আচ্ছা আমি দুঃখিত। পরবর্তীতে বিষয়টা খেয়াল রাখব। আশা করছি এমন আর হবে না।”
“না হলেই ভালো। সাফওয়ান চলো আমরা যাই এবার।”

“উনি কেন যাবেন?”
“উনিও উকিল তাই।”
“কিন্তু আমার কেস তো আপনি সামলাচ্ছেন।”
“এত প্রশ্ন করবেন না। সামনেই পুলিশের গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। ওদিকে চলুন।”
তুরাবকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে কুয়াশা সামনে এগিয়ে যায়। তুরাবও পেছন পেছন গাড়িতে গিয়ে বসার পর কুয়াশা তুরাবকে উদ্দেশ্য করে বলল,

“আপনি কোন ক্লাবে গিয়েছিলেন? নাম কী ক্লাবের?”
“স্কাই ভিউ ক্লাব।”
নাম শোনার পর ড্রাইভার গাড়ি চালাতে শুরু করে। আধ ঘন্টার মধ্যেই সবাই সেখানে গিয়ে উপস্থিত হয়। পুলিশকে দেখে প্রথমে ক্লাবের মানুষজন ঘাবড়ে গেলেও পরবর্তীতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য পুলিশ অফিসার বলে,
“আপনাদের ভয় পাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। আমরা এখানে একটা কেসের ব্যাপারে কথা বলতে এসেছি। আশা করছি, আপনারা আমাদেরকে সহযোগিতা করবেন।”

ক্লাবের ম্যানেজার অফিসারকে আশ্বস্ত করে বলে,
“আমরা অবশ্যই আপনাদের সহযোগিতা করব। বলুন কী সাহায্য লাগবে?”
কুয়াশা এবার নিজের মুখ খোলে।
“আপনাদের এখানে সিসি টিভি ক্যামেরা আছে তো?”
“হ্যা আছে।”
“গত মাসের ২৭ তারিখ রাতের ফুটেজ দেখতে চাই আমরা।”

“একটু অপেক্ষা করতে হবে।”
“সমস্যা নেই। আমরা অপেক্ষা করছি।”
মিনিট দশেক পর ম্যানেজার কম্পিউটারে কিছু একটা দেখিয়ে বলল,
“এই যে সেদিন রাতের ফুটেজ।”

স্ক্রিনে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে একটা মেয়ের সাথে তুরাব বেশ ঘনিষ্ঠ হয়েই নাচানাচি করছে। কিছুক্ষণ পর একজন ওয়েটার এসে তুরাবের হাতে একটা গ্লাস তুলে দিলো। যেটাতে মূলত অ্যালকোহল ছিল। তুরাব সেটা এক নিশ্বাসে খেয়ে নিয়ে হঠাৎ করেই একটা চেয়ারে বসে পড়ার পর মেয়েটা আশেপাশে তাকিয়ে তাকে নিয়ে উপরে চলে যায়। যেখানে অনেক ছেলেমেয়ে একান্তে সময় কাটায়।
এটুকু দেখার পর কুয়াশা বলে উঠল,

“আপনাদের ওই ঘরে কোনো গোপন ক্যামেরা আছে?”
ম্যানেজার আমতা আমতা করে উত্তর দেয়,
“হ্যা আছে।”
“বাহ্! সর্বত্র ক্যামেরা আছে দেখছি।”
ম্যানেজারের মুখ শুকিয়ে যাওয়া দেখে কুয়াশা হেসে বলে,

“আপাতত আপনাদের নিয়ে কথা বলব না। আপনি আমাদের ওই ঘরের ফুটেজ দেখান এখন।”
কিছুক্ষণ পর ফুটেজ হাতে পাওয়া মাত্রই সবাই খুব মনোযোগ দিয়ে ফুটেজ দেখতে শুরু করে। কুয়াশা এক জায়গায় ভিডিয়ো থামাতে বলে।

“অফিসার এই দেখুন এখানে একটু ভালো করে খেয়াল করলেই বোঝা যাবে ছেলেটার চোখ বন্ধ। তার হাত বারবার মেয়েটার শরীর থেকে পড়ে যাচ্ছে। যদিও এডিট করলে এসব বোঝা যাবে না। কিন্তু এটা তো আসল ভিডিয়ো। এতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে ছেলেটা এখানে অবচেতন অবস্থায় বিছানায় পড়ে আছে। তাহলে এই ছেলে কীভাবে মেয়েটার ইজ্জত নষ্ট করতে পারে?”

কুয়াশার কথায় পুলিশ অফিসার খানিক্ষণ ভেবে বলে,
“সত্যিই তো। এখানে তো মিস্টার তুরাবের জ্ঞান নেই।”
“মেয়েটা খুব সম্ভবত এসব সম্পর্কে জ্ঞানত নয়। যার ফলে এমন কাঁচা কাজ করে ফেলেছে। আপনি কেসটা কোর্টে তুলুন। বাকিটা আমি দেখে নিব।”

এর মধ্যেই মিহি কল দেয় পুলিশ অফিসারকে। কল দিয়ে কন্দনরত অবস্থায় জিজ্ঞেস করে,
“স্যার ওই ছেলের কি কোনো শাস্তি হবে না? আমার এত বড়ো সর্বনাশ করে সে কি স্বাধীন হয়ে ঘুরে বেড়াবে? আমাকে প্রেমের জ্বালে ফাঁসিয়ে আমার সবকিছু কেঁড়ে নিলো। কিন্তু আমাকে বিয়ে করল না। আপনারা কিছু করুন। নয়তো আমার ম রে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।”

“আপনি চিন্তা করবেন না। আমরা খুব শীঘ্রই এই কেস কোর্টে তুলব। আপনাকে কল করে আমরা সব জানিয়ে দিব।”
“ঠিক আছে। কিন্তু স্যার দেখবেন উনি যেন কোনোভাবে বেঁচে না যায়।”
“হ্যা হ্যা দেখব। আপনি এখন কলটা রাখুন।”
কথাটা বলে পুলিশ অফিসার কল কেটে দেয়। এরপর কুয়াশাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“আপনার আর কোনো সহযোগিতা লাগবে?”

“অফিসার আমার এই ফুটেজগুলো লাগবে। আপনি এই ফুটেজগুলো আমার ফোনে পাঠানোর ব্যবস্থা করুন।”
“আচ্ছা আপনি এখন বাসায় যান। বাকিটা আমরা দেখছি।”
“আসছি তাহলে।”

কুয়াশা আর সাফওয়ান কিছুটা এগিয়ে যেতেই পিছু ডাকে তুরাব।
“কুয়াশা দাঁড়াও। তোমার সাথে আমার কথা আছে।”
কুয়াশা সাফওয়ানকে ইশারায় দূরে গিয়ে দাঁড়াতে বলে। তারপর তুরাবের কাছে এসে প্রশ্ন করে,
“কী বলতে চান? বলুন।”
“তুমি কেন আমাকে এভাবে এড়িয়ে যাচ্ছ?”

“আপনাকে এড়াতে যাব কেন? কে আপনি?”
“আমি কে সেটা বারবার মনে করিয়ে দিতে হবে তোমাকে?”
“আমার মস্তিষ্ক যথেষ্ট ভালো। সবকিছুই মনে রাখতে পারি আলহামদুলিল্লাহ। আর এজন্যই আমি পুরোনো ঘটনাগুলো খুব ভালোভাবে মনে রেখেছি। এই যেমন মেয়ে নিয়ে হোটেলে গিয়ে আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন আপনি। এমন আরো অনেক ঘটনা মনে আছে আমার। আমি কিছুই ভুলিনি।”

“আমি মানছি আমি মেয়েদের সাথে অনেকবার ঘনিষ্ঠ হয়েছি। কিন্তু এতে ওই মেয়েদের আপত্তি ছিল না। আমি কারোর অনুমতি ব্যতিত কখনো কাউকে স্পর্শ করিনি।”
“বাহ্! কি সুন্দর কথা বললেন আপনি। আমার এখন ইচ্ছা করছে আপনার এই কেসটা একদম ঘুরিয়ে দিতে। বউয়ের বাপের বাড়িতে তো জামাই আদর ভালোই পেয়েছেন। এবার গারদের ভেতরে জামাই আদর পেলে খুব ভালো হবে তাই না?”

“কুয়াশা!”
“একদম চুপ করুন। আপনার মত চরিত্রহীন ছেলের সাথে কথা বলতে রুচিতে বাঁধছে আমার। কিন্তু কী করব বলুন? একজন আইনের লোক হিসেবে আমি বিনা দোষে কাউকে শাস্তি দিতে পারি না। এখানে আপনি নির্দোষ। তাই না চাইলেও আপনাকে আমার বাঁচাতে হবে। আপাতত এই মুহূর্তে আপনি দয়া করে আমার চোখের সামনে সরে যান।”
“আমার কথাটা,”

“আর একটাও কথা নয়। চলে যান আপনি। থাক, আপনার যেতে হবে না। আমিই যাচ্ছি।”
দ্রুত পায়ে রাস্তার আরেক পাশে চলে যায় কুয়াশা। যেখানে সাফওয়ান তার জন্য অপেক্ষা করছে। তুরাব দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিজ বাড়ির দিকে হাঁটা দেয়। পথিমধ্যে তুরাবের ফোন একটা কল আসে। সে ফোন হাতে নিয়ে দেখে একটা অচেনা নাম্বার থেকে তাকে কল করা হয়েছে। সে কল রিসিভ করে বলে,

“আসসালামু আলাইকুম। কে?”
“মিহি!”
মিহির নাম শুনে তুরাব রাগে চিৎকার করে ওঠে।
“কীসের জন্য কল দিয়েছ তুমি আমাকে?”
“আরে তুরাব এত রেগে যাচ্ছ কেন তুমি?”

“আমার নামে এত নোংরা কথা বলে কেস করার সময় মনে ছিল না আমি রাগ করব?”
“জানি তো তোমার রাগ হচ্ছে। কিন্তু আমি কী করব? তুমিই তো আমাকে বিয়ে করতে রাজি হলে না। এখনো সময় আছে। আমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যাও। তাহলে আমি কেসটা তুলে নিব।”
“কখনোই না। আমি বিবাহিত এটা ভুলে যেয়ো না।”
“আচ্ছা বিয়ে করতে হবে না। তাহলে আমাকে দশ লাখ টাকা দাও।”

“মানে?”
“মানে টাকা দিয়ে মামলা মিটিয়ে নাও।”
“ছিঃ মিহি! তোমার মত এত নিচ মানসিকতার মেয়ে আমি আর একটা দেখিনি।”
“দেখার কথাও না। কারণ আমি তো একজনই। আমার মত দ্বিতীয় আর কেউ হতে পারবে না।”
“তুমি টাকার জন্য নিজের ইজ্জত নিয়ে মিথ্যা বললে?”
“এত কথা না বলে কোনটা করবে সেটা বলো। এক আমাকে বিয়ে করবে। নতুবা আমাকে দশ লাখ টাকা দিবে। একটাও না করলে জেলে পঁচে ম রা র জন্য তৈরি হও।”

কুয়াশা মিলিয়ে যায় রোদ্দুরে পর্ব ১৫

“কার কি হবে সেটা তো সময় বলবে। আমার তোমার সাথে কথা বলতেও লজ্জা করছে। আর কখনো কল দিবে না আমাকে। তোমার মত মেয়েদের কিভাবে শায়েস্তা করতে হয় সেটা আমি জানি। অপেক্ষা করো তুমি। তোমার সাথে সামনে যা হবে তা কল্পনাও করতে পারবে না তুমি। বেয়াদব মেয়ে কোথাকার!”

কুয়াশা মিলিয়ে যায় রোদ্দুরে পর্ব ১৭